।। কুঠি বাড়ি কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য।।
--------------- ---------------- ---------------
W.S. Sherwill সাহেবের সার্ভে রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে
বীরভূম জেলায় মোট ২১ টি নীলকুঠী ছিল।
বীরভূম এর অন্যতম ইতিহাসকার গৌরীহর মিত্র মশাই ১৭ টি নীল কুঠির সন্ধান পেয়েছিলেন।
শেরউইল সাহেবের রিপোর্ট - আকবরশাহী পরগনায় -১ টি বারবক সিংহ পরগনা য় -১ টি ; প ভুরকুণ্ডা -৩ টি ; তালুক হুকমাপুর -১টি ; তপ্পে হরিপুর - ৩ টি ; খটঙ্গা - ১ টি ; তপ্পে কুণ্ডহিত কড়েয়া -২ টি ; তপ্পে মহম্মদাবাদ -১টি প বড়রা ১ টি
প সুপুর ১টি পরগনা সেনভূম ৬ টি। মোট ২১ টি।
১৮৭৩ সালের রিপোর্টে পরগনা ইটাণ্ডা য় ১ টির উল্লেখ আছে। তাহলে ২২ টি হয়। আবার কোথাও কোথাও এটির উল্লেখ দেখছিনা।
আমার বিশেষ আগ্রহ পরগনা সেনভূমের ৬টি নীল কুঠি নিয়ে। এ নিয়ে বিস্তৃত লেখার ইচ্ছে আছে। কিছু খোঁজ খবর নেওয়া বাকী আছে।
গৌরীহর মিত্র মশাই খয়রাশোল ; শিমূলিয়া ; হরিশকোপা ; বিষণপুর ; ইলামবাজার ; সুপুর ; দড়ি ; মৌরেশ্বর ; সেকপুর ; নূতন গ্রাম ; আলিনগর ; দ্বারোন্দা ; ভুরকুণ্ডা ;ভবানন্দপুর ; মাস্তুল ; গাঙ্গপুর ; পাঁচসোওয়া ; সিউপুর এই সব গ্রামে নীলকুঠী র সন্ধান পেয়েছিলেন।
শুরু করেছিলেন চীপ সাহেব। আর উপযুক্ত সহযোগী হিসাবে পেয়েছিলেন স্কটল্যান্ড থেকে আসা ' স্বাধীন বণিক ' আরস্কাইন সাহেব কে। বীরভূম এর নীল চাষ বা কারবারি মানে ই এই দু জন। জেলা গেজেটিয়ারে ও' ম্যালি সাহেবের রিপোর্ট ১৭৯৫ এ শুরু করেছিলেন চীপ সাহেব তাঁর সুরুল কুঠিতে আর আরস্কাইন সাহেবের বীরভূমে ছিল ৮ টি কারখানা আর
জেলার বাইরে আরও ১০ টি কারখানা।
সুরুল আর ইলাম বাজার এর কারখানা গুলি ই ছিল
আকারে আয়তনে বড়।
একমাত্র সুপুর কারখানা একশো বছর ধরে চলেছিল। ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত।
মেসার্স আরস্কিন কোম্পানি ই ছিল বীরভূমে র সবচেয়ে বড় নীল উৎপাদক কোম্পানি।
ইলামবাজার এর কারখানাতেই উৎপাদিত হত ৭৫ মন নীল।
বেজুরা আর হারমুনি তে ৭০ মন। আর সুপুরে ২০ মন।
এই এরস্কিন কোম্পানি র অধীনে ১৪৬২৫ বিঘা জমিতে নীল চাষ হতো। এর বাইরে জঙ্গলমহলে ২১২৫ বিঘা জমিতে।
এই জঙ্গল মহলে ছিল তিনটি নীলকুঠী।
এগুলির সম্পর্কে পরে লেখার ইচ্ছে আছে।
বীরভূমে সাতটি কারখানায় ৪৫ টি চৌবাচ্চায় কাজ করত ১০০ জন স্থায়ী শ্রমিক এবং ৩৯ জন অস্থায়ী মজুর।
এছাড়াও কাজের তদারকি হিসাবপত্র রাখা কুঠির নিরাপত্তা দেখার জন্য ছিল ১ জন সরকার ৬ জন গোমস্তা ২২ জন মুহুরি ৩৯ জন তাগাদাদার ৩৫ জন পিওন ও চৌকিদার।
বেশী র ভাগই দেশীয় স্থানীয় মানুষ। এঁদের সব নাম গুলো যদি পাওয়া যেত! জেলা র আর্কাইভে আছে কি না জানিনা।
গবেষক রা ভেবে দেখবেন। একটা চমৎকার কাজ হতে পারে। আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি র উপরে। মাননীয় রঞ্জন গুপ্তের কাজ মাথায় রেখে ও বলছি।
ইচ্ছে করে। কিন্তু আমার উপায় নেই।
এই কোম্পানি র কারখানা গুলো তে সর্বমোট ৩৮০ মণ নীল উৎপাদিত হত।
আগে বললাম যে নাম গুলি যদি পাওয়া যেত। একটি বড় নাম কিন্তু পাওয়া যায়। সে নাম সুরুলের বিখ্যাত আশানন্দ সরকারের ছেলে নিধিরাম সরকার। তিনি আরস্কিন সাহেবের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে জনের কোম্পানি তে মাধাইপুর কুঠিতে গোমস্তা র কাজ করতেন। খুবই গুরুত্বপুর্ণ কাজের দায়িত্ব ছিল তাঁর উপরে।
তবু আমি ভাবি সুরুলের বিখ্যাত আশানন্দ সরকারের ছেলে নিধিরাম বাবু চাকরী করছেন ইংরেজ দের অধীনে।
ঘটনা টি তো আমার মনে হয় ইঙ্গিতবহ।
আরস্কিন কোম্পানি প্রথম থেকেই কোন চাষ জমি কেনেননি।
জমিদার দের কাছ থেকে বার্ষিক চুক্তির মাধ্যমে জমি নিয়েছেন। নীল কুঠির সমস্ত কাজ হত চুক্তি ভিত্তিক।
সরাসরি মজুর নিয়োগ ও হতনা। হত মজুর সর্দারের মাধ্যমে।
চাষী দাদন পেত। নানা কুঠিতে দাদনের রেট বিভিন্ন। ইলামবাজার কুঠি তে সব চেয়ে বেশী। বিঘাপ্রতি ৪ টাকা ৩ আনা। চাষী দাদনই পেত। তার আবার জামিনদার ছিল।
সব ক্ষেত্রেই চুক্তি। কাগজ কলম। চুক্তির খেলাপ হলে চলবে না। কারখানার জ্বালানী সরবরাহের জন্য উপযুক্ত চাষী বা ব্যবসায়ী র সাথে চুক্তি। ' আউরী ' মানে খড়ের আঁটি। খড় জ্বালানী হিসাবে ব্যবহৃত হত। সাপ্লায়ারের সাথে চুক্তি।
যারা বীজ পাহারা দার বা নীলের বড়ির কাটন দার সবার সঙ্গেই চুক্তি। আবার সব নিয়োগের পিছনে ছিল উপযুক্ত প্রভাবশালী মানুষের সুপারিশ।
আদিবাসী সাঁওতাল ; কোঁড়া শ্রমিকদের বিশেষ কদর ছিল।
এদের ঘরের মহিলারা ও কুঠিবাড়ি র নানা বিধ কাজে নিযুক্ত ছিল।
একটি উদাহরণ এখানে আমি দিই। পরে এ নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে।
ইলামবাজার বিরাট কুঠি। সেই কুঠিতে কাজ করার জন্য কোঁড়া শ্রমিক। ইলামবাজার এর কাছেই পায়ের গ্রামে বিরাট কোঁড়া বসতি আছে। নীল ডাঙায় আদিবাসী সাঁওতাল পরিবার গুলির আজও বসবাস।
আচ্ছা এই যে চুক্তি প্রথা। তার কি সত্যি কোন পরিবর্তন ঘটেছে। না । বরং বাড়ছে। আগামী তে আরও বাড়বে।
চুক্তিভিত্তি সর্বস্তরে। এবং গোটা টাই হয়ে যাবে অসংগঠিতক্ষেত্র।
আবার একটা উদাহরণ দিই। এখনকার ইঁট ভাঁটা গুলিতে সমীক্ষা চালালে বোঝা যাবে। কত চুক্তির খেলা। মজুর সর্দারের মাধ্যমে মজুর নিয়োগ। মজুরের কাছ থেকে মজুর সর্দার তার ভাগ বুঝে নেয়। তখনও নিত। এখনও নেয়।
যাঁর সুপারিশে চাষী দাদন পায়। সে চাষী র কাছ থেকে বুঝে নেয় তার ভাগ। আবার জামিনদারের যিনি জামিনদার যদিও তিনি কোথাও বাঁধা নেই। তাঁর গদিতে ঠিক নগদা পৌঁছে যায়।
যাক আর দীর্ঘ না করাই ভালো। ইঁট ভাঁটার অর্থনীতি নিয়ে কেউ কাজ করেছেন কি না জানিনা। কিন্তু ভালো কাজ হতে পারে। ভেবে দেখবেন নবীন গবেষক।
ইঁট ভাঁটা মালিক জানে মাটি সত্য। মাটিই টাকা। সে সঠিক বোঝে। তার ভাঁটায় মাটির অভাব হয়না। সে জানে মাটি সংগ্রহের কৌশল। তাঁর কোন কিছুর অভাব ঘটেনা। জ্বালানী কাঠ বা কয়লা ঠিক ঠিক সংগ্রহ হয়।
এখানে ও প্রতি স্তরে চুক্তি। কত চুক্তির খেলা।
ব্যবসা মানেই চুক্তি।
আর চুক্তিবদ্ধ কত জীবন। এই ই জীবন।
--+--------------------------------------------------© প্রণব ভট্টাচার্য
গ্রন্থ সহায়তা। জেলা গেজেটিয়ার। বীরভূম। ও ' ম্যালি
রাঢ়ভাবনা পত্রিকা বিশেষ সংখ্যা। নীল গালা রেশম শিল্প।
সম্পা সৌরেন্দ্র নাথ চট্টোপাধ্যায়
কৌলাল পত্রিকার প্রথম প্রকাশন বঙ্গসংস্কৃতির অঙ্গনে
সম্পা। স্বপন ঠাকুর।
নিজস্ব প্রবন্ধ।
------------------------------------------------------------
ছবি। প্রিয়ব্রত সাহা।
বিণায়ক দা (সেনগুপ্ত)
No comments:
Post a Comment