।। কুঠি বাড়ি কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য।। পর্ব - ১০
---------------- -------------------- ----------
দুর্গা পুজো বলে কথা।
ব্যাপার সামান্য নয়। কত শত আয়োজন। তা হোক
কুঠি বাড়িতে তো কম নয় স্থানীয় কর্মচারী।
সবাই চাইছে। চীপ সাহেব ও ফেলতে পারলেননা।।
সবার অনুরোধ।
ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে। মন্দা মানেই নানা আশংকা।
দুর্গাপুজো হোক। যদি পুজোয় সন্তুষ্ট হয়ে মা মন্দা কাটিয়ে দেন।
আয়োজন হল চীপ সাহেবের কুঠি বাড়িতে দুর্গাপূজা র।
আয়োজনের কোন ঘাটতি নেই।
সাড়ম্বরেই পুজা অনুষ্ঠিত হল।
খরচ হল মোট ১৭ টাকা।
সময়টা আঠারো শতকের শেষদিক।
সতেরো টাকা মানে খুব কম নয়।
টাকায় দু মন চাল পাওয়া যেত সে সময়।
আর নীল চাষে লাভ। ৩ টাকা বিনিয়োগ করে ১০ টাকা আয়।
বীরভূমের অন্যতম প্রাচীন পুজো বলা যেতে পারে।
এ তো গেল কুঠিবাড়ি র পুজো।
এবার যাই সুরুলের সরকার বাড়ির পুজোয়।
যে বাড়ির ঐতিহ্যপূর্ণ পুজো দেখতে হাজার হাজার
মানুষ আসেন। জমিদার বাড়ির পুজো বলে কথা।
গুরুদেব বাসুদেব ভট্টাচার্য মহাশয়ের নির্দেশে
ভারতচন্দ্র সুরুলে এসে পাকাপাকিভাবে বসতি
স্থাপন করেছেন। আসার পর থেকে একটু থিতু হয়েই
শুরু করেছেন কাপড়ের ব্যবসা। ধীরে ধীরে জমে উঠেছে ব্যবসা। তাঁর ছেলে কৃষ্ণহরি সরকার। তাঁর অনুমতি নিয়েই
সরকার বাড়িতে শুরু হল দুর্গাপূজা।
তখন মাটির ঘর। সেই সময়কাল অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি। পরবর্তী সময়ে এই বংশের সর্বাপেক্ষা সফল
ব্যবসায়ী শ্রীনিবাস সরকার মশাই নির্মান করেন পাকা দুর্গাদালান। প্রাথমিক খরচ ১৮০০০ টাকা বেড়ে দাঁড়ায়
প্রায় দুই লক্ষ টাকায়। জমিদার বাড়ি তৈরী হল।
বিরাট সে প্রাসাদ। গোবিন্দ নামে মিস্ত্রী নির্মান করলেন।
আসল বেলজিয়াম গ্লাসের ঝাড়বাতি এল। যা এখনও ঝোলানো হয়। দেবী মূর্তির নানা আয়ূধ ; অলংকারাদি
এখনও প্রতিমাকে পরানো হয়। সবই সেই কালের।
একটি ট্রাস্টি বডি তৈরী হয়েছিল অনেক আগেই।
সেই ট্রাস্টি বডির মাধ্যমেই পূজা অনুষ্ঠিত হয় আজও।
মৌখিরা - কালিকাপুরএর জমিদার বাড়ির সাথে বৈবাহিক
সম্পর্ক ছিল সরকার বাড়ির। আমি মৌখিরার ' বুড়ো বাবু ' --
আমরা দাদা বলতাম। দাদা বৌদি খুব ভালো মানুষ। অনেক কথা তাঁদের কাছ থেকে শুনেছি। ভাল নাম তাঁর স্মরজিৎ রায়। বিশ্বভারতী র প্রথম যুগের ছাত্র শিবদাস বাবু তাঁর বাবা।
শিবদাস বাবুর কথা বলছি। তার আগে বলে নিই এই
মৌখিরা র রায় পরিবারের মেয়ে রাখালদাসী ছিলেন সরকার বাড়ির বৌ। একা এই মহিলা সিউড়ী যাতায়াত করে ডি;এম
সাহেব কে মাঝে রেখে এই ট্রাষ্টি বডি তৈরী করেছিলেন।
কতখানি দূরদৃষ্টি। আজও তাই পূজা চলছে।
এই শিবদাস বাবুর মাধ্যমে ই শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতন এর অনেক জায়গা জমি সরকার বাবুদের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে
পাওয়া গিয়েছিল।
ব্রাহ্ম বলে নাকি ঠাকুর দের জমি দিতে রাজী ছিলনা সরকার বাড়ি। আরও কত কথা হয়তো জানতে পারতাম। কিন্তু
আকস্মিক ভাবে ই ' বুড়ো দা ' মারা গেলেন।
আগের দু টি পর্বে ই বলেছি এই সরকার বাবুদের কথা।
শ্রী নিবাস সরকার ই এই বংশের সর্বাপেক্ষা সফল ব্যবসায়ী।
এবং বিপুল অর্থ তিনি রোজগার করেছিলেন।
মাতৃ শ্রাদ্ধে যিনি লক্ষাধিক টাকা খরচ করতে পারেন।
জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আসেন হাতির পিঠে চেপে। আর চীপ সাহেব তো আছেনই। পরামর্শ দাতা। নানা ভাবে সাহায্যকারী।
পরিবারের অন্যতম ঘনিষ্ঠজন।
এই সরকার পরিবার অন্যান্য অনেক ধনী পরিবারের মতো
জমিদারি কিনেছিলেন। মনোহরশাহী পরগনায় ; বারবাক সিংহ পরগনায় ; চম্পানগরী পরগনা সহ অন্যান্য জায়গায়।
' কুখ্যাত সূর্যাস্ত আইনে ' খাজনার টাকা মেটাতে না পারলে ই
জমিদারি গেল। আর নূতন ধনী ; রাজকর্মচারী রা কিনলেন।
জমিদার হয়ে গেলেন।
১৭৯৩ সালের ' চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ' আইনের কথা আমরা জানি। বেশী বলার দরকার ও নেই।
১৭৯৫ সালেই বীরভূমে র রাজাকে মানে রাজনগরের রাজা
মহম্মদ উজ জামান কে বকেয়া খাজনার দায়ে বন্দী করা হয়।
রাজাকে সম্পূর্ণ অযোগ্য ঘোষণা করে তাঁর বিশাল জমিদারীর
দায়িত্ব দেওয়া হয় T H Earnest কে। তিনি বীরভূমএর জমিদারি কে ১৭৯৯ সালের মধ্যেই ৪২ টি পরগনা এবং ২২২ টি মহলে ভাগ করে ফেলেন। এবং এই সংখ্যা বাড়তেই থেকেছে। ছোট বড় নানা স্তরের নূতন নূতন জমিদার তৈরী হচ্ছেন। কোম্পানি র সাথে যাঁদের খাতির ভালো নানা খেতাব বিলি হচ্ছে। খাতির ভালো মানে ঘুষ। কর্তাদের পকেটে ঢুকছে। বেনামে কোম্পানি র কর্তারা ও জমিদারী কিনছেন।
একদিকে পুরানো জমিদারী র অংশ বিক্রি। তার টাকা। উপঢৌকন এর টাকা। আর খাজনা বৃদ্ধি। টাকা। টাকা।
টাকার খিদে যেন মিটছেনা ইংরেজ প্রভু ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির। লুঠের খিদে কি আর মেটে। কবে আর কার মিটেছে।
---------------------- ---------------- --------------© প্রণব ভট্টাচার্য।
তথ্য সহায়তা। জেলা গেজেটিয়ার। বীরভূম। ও ম্যালি।
রাঢ় ভাবনা পত্রিকা। সম্পা সৌরেন্দ্র নাথ চট্টোপাধ্যায়।
কৌলাল পত্রিকা। সম্পা। স্বপন ঠাকুর। বঙ্গ সংস্কৃতির অঙ্গনে তে নিজস্ব প্রবন্ধ।
---------------------- ------------------------- ---------------------------
ছবি। প্রিয়ব্রত সাহা। সহায়তা দেবরূপ সরকার।
No comments:
Post a Comment