।।সুপুর ফরাসী কুঠি।।
সুপ্রাচীন সেই সুবাহুপুর।
তার কথায় আজ এখন যাচ্ছিনা।
তখন সুপুর অজয়ের উত্তর তীরে এক
নামী নৌবাণিজ্য কেন্দ্র।
সুপুরের বিখ্যাত ধর্মপ্রাণ জমিদার আনন্দচন্দ্র গোস্বামী।
তাঁর কাছ থেকে প্রায় বারোশত বিঘা জমি
বিঘাপ্রতি চার আনা খাজনার চুক্তিতে
১৭৬৮ সালে মন - লি - সিনর নামে এক ফরাসী
নীল চাষের জন্য গ্রহন করলেন।
অজয় তীরে এবং গ্রামের মধ্যে তিনি কুঠিবাড়ি নির্মান করালেন। এবং এই কুঠিবাড়ি থেকে ই নীল চাষ এবং নীলের উৎপাদন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু করলেন।
সুরুল কুঠিবাড়ি ও সেই সময়ের নির্মান।
এবং সেই জমিও তিনি জমিদার আনন্দচন্দ্রের নিকট থেকেই কিনেছিলেন। মাথায় রাখতে হবে তখন সুরুলের সরকার জমিদার পরিবারের জন্ম হয় নাই।
এঁদের কথা র আলোচনা পরের পর্বে হবে।
শ্রী নিকেতনের মেলার মাঠের উত্তরে যে কুঠিবাড়ি সেই কুঠিবাড়ি সমেত জায়গা জমি রবীন্দ্র নাথ কিনেছিলেন।
রাইপুরের জমিদার পরিবারের দুই ভাই ফরাসী এবং ইংরেজদের সহায়তায় ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন। পরে 'লর্ড'
হয়েছিলেন।
সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন এবং তাঁর দাদা নরেন্দ্র প্রসন্ন।
তখন কবিগুরু ও ইংল্যাণ্ডে ছিলেন। নরেন্দ্র কবিগুরু র নিকট থেকে আটহাজার টাকা ধার হিসাবে নিয়েছিলেন।
পরিবর্তে ঐ কূঠি বাড়ি সমেত জায়গা কবিকে লিখে দেন।
যদিও বিষয় টি সত্যেন্দ্র র একেবারেই মেনে নিতে পারেননি।
কেননা রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁদের গুরুভ্রাতা। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের কাছে ভুবনমোহন এর পুত্র প্রতাপনারায়ন সিংহ মশাই ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন।
তাই পরে সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সুদসমেত পুরো টাকা ফেরত দেন এবং কুঠিবাড়ি ও জমিজায়গা ' ব্রহ্মোত্তর ' দান হিসাবে লিখে দেন।
বিলাত থেকে ফিরলে জাতিচ্যুত হয়ে ; কলকাতা থেকে এখানে এলে এই কুঠিবাড়ি তে ই দু ভাই উঠতেন।
রবীন্দ্রনাথ ফেরতের টাকায় সিংহ পরিবারের সম্মানে শান্তিনিকেতনে ' সিংহ সদন ' নির্মান করিয়েছিলেন।
আবার ফিরি ফরাসী কুঠির কথায়।
ফরাসী দের এই বাণিজ্য কেন্দ্রটিতে ফরাসী পতাকা উড়ত।
সবসময়ের জন্য সতর্ক প্রহরার ব্যবস্থা ছিল।
যদিও এই ফরাসী পতাকা তোলা নিয়ে ইংরেজ দের সাথে বিবাদ বেধেছিল। ইংরেজ বা ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানিকুঠি মানবে কেন! তারা দেশ দখল করেছে।
আইনের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছিল। এবং পতাকা নেমেছিল।
এই কুঠিবাড়ি থেকে নীল চাষী দের এবং তাঁতিদের দাদন দেওয়া হত।
মন লি সিনর সাহেব তখনকার দিনে সুতো র তৈরী মোটা থান কাপড় যার স্থানীয় নাম ' গড়ে ' বা ' গড়া' কাপড় এর জন্য মোট ১২৫০০০ টাকা বিনিয়োগ করেন। প্রথম দিকে গোমস্তা বা দালাল দের মাধ্যমে তা দেওয়া হত। পরে নানা অভিযোগ আসায় সরাসরি কুঠিবাড়ি থেকে ' কাগজ ' করে ' সই সাবুদ ' বা টিপছাপ করিয়ে বা জামিনদার রেখে টাকা দাদন দেওয়া হত। ' আদায়' দিতে না পারলে কুঠিবাড়ি র নিজস্ব আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা তারা করেছিল।
' আড়ং ধোলাই ' কথাটা এসেছে তো এখান থেকেই। স্থানীয় ভাষায় কুঠিবাড়ি মানে ' আড়ং '। আদায় দিতে না পারলেই মার। ' আড়ং ধোলাই '।
আলাদা কিছু নয় - কুঠিয়াল দের চরিত্র। দু এক জন ব্যতিক্রম মাত্র। সব সুখ তাঁরা ভোগ করতেন। ' আড়কাঠি ' র ও অভাব ছিলনা। চাষী দের উপর অত্যাচার অনেক সময় নিজেরা না করে এ দেশীয় দের দিয়েই করাতেন।
এই বিখ্যাত ফরাসী কুঠি বাড়ি ছেড়ে মন লি সিনর ১৭৭৪ সালে কোথায় যে চলে যান। তাঁর না কি আর খোঁজ ও পাওয়া যায়নি। বেশ রহস্য জনক!
বন্ধ হয়ে যায় সুপুর কুঠিবাড়ি।
তারপর আবার ফরাসী দের পক্ষে মি: চৌবন ; মি: আরিয়ার ( Messers Chouban and Arrear) 1777 সালে আবার কুঠি চালু করেন।
১৭৯৩ সালে ইংরেজ দের সাথে ফরাসী দের যুদ্ধ বাধল।
ইংরেজ রা সব ফরাসী কুঠির দখল নিয়ে নিল।
আবার সরকারের পক্ষ থেকে সেই মি: চীপ সাহেবের উপরেই ফরাসী কুঠি বাড়ি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হল।
তবুও প্রায় একশো বছর চলেছিল এই সুপুর কুঠি।
১৮৮৭ সালে সুপুরের কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়।
এই সুপুরের অনেক কথা। বোলপুর নয়। সে তখন এক গণ্ডগ্রাম। তার কোন পরিচিতি নাই।
সুপুর আর সুরুল। এরা সুপরিচিত ; বিখ্যাত।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার। জেলা গেজেটিয়ার। বীরভূম। ও ' ম্যালি।
পত্রিকা। রাঢ় ভাবনা। সম্পা। সৌরেন্দ্র নাথ চট্টোপাধ্যায়
পত্রিকা। কৌলাল। সম্পা স্বপন ঠাকুর। নিজস্ব প্রবন্ধ
---------------------------------------------- এই পর্ব এখানেই শেষ করি। পরের পর্বে সুরুল সরকার বাড়ি। চলবে। সাথে থাকবেন।ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment