। সেই সময়কাল।
১৭৫৭। পলাশী র অবিশ্বাস্য সর্বনাশ।
হঠাৎ রাজা বেণিয়া ইংরেজ।
১৭৭০। ছিয়াত্তর এর মহা মন্বন্তর।
১৭৭১। সুপারভাইজার হিগিনসনের রিপোর্ট " বীরভূম জনমানবহীন বন্ধ্যা দেশ"।
বীরভূমের ৬০০০ গ্রামের মধ্যে ১৫০০ গ্রাম নিশ্চিহ্ন।
কৃষিজমি সব পতিত পড়ে আছে। কে করবে চাষ। চাষী কি আর বেঁচে আছে ছাই। নাই। নাই। চাল নাই। ভাত নাই। ফ্যান নাই।
যে চাল এক টাকায় ২-৩ মন পাওয়া যেত। তার দাম টাকায় ৩ সের। কে কিনবে। আর কোথায় পাবে।
না খেতে পেয়ে মারা গেল এত এত মানুষ।
গণহত্যা ই বলা উচিৎ।
সংগঠিত গণহত্যা।
অথচ সারা জেলা জুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে ইউরোপীয় বণিক দের দল। কোথায় কোন ব্যবসা ভাল হবে। এলাকা চিহ্নিত করছে।
বীরভূমের পূর্বাংশে ভালো রেশম।
পরে আমরা দেখব গুনুটিয়া য় গড়ে উঠবে রেশম কুঠি।
বিখ্যাত সে কুঠিবাড়ি।
সুতীবস্ত্র ; তসর ; রেশম ; লাক্ষা বা গালা ; নীল ;গুড় ;
লোহা পাথর - সব কিছুর ভাবনা তাদের মাথায়।
উপযুক্ত জায়গা জমি চাই। স্থানীয় সমস্যা মোকাবিলা র জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী লোক চাই।
নায়েব ; গোমস্তা ; ধরনের লোকগুলোকে চাই।
আর চাই দালাল শ্রেণী র মানুষ গুলো কে।
তাদের সাথে ব্যবসা করার জন্য স্থানীয় ধনবান দের সঙ্গে চাই। তাদিকে যুক্ত করতে হবে। জাত বেণিয়া হিসেব পাকা।
পরে আমরা দেখব সুরুলের সরকার বাড়ি ; রাইপুরের সিংহ বাবুরা বিশাল বিত্তশালী হয়ে উঠছেন ইংরেজদের সাথে ব্যবসা করে বা সহযোগিতা করে। তাঁদের সাথে ব্যবসা করেই তাঁরা জমিদার।
ফরাসী এবং ইংরেজ দের সহায়তায় সিংহ বাবুদের পরিবারের দুই সন্তান সত্যেন্দ্রপ্রসাদ এবং নগেন্দ্রপ্রসাদ বিলাত যাচ্ছেন। লর্ড হচ্ছেন।
সেই সময়ে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি র বদান্যতা য় অনেক তালুকদার ; পত্তনিদার ; জমিদার বনছেন।
মুর্শিদাবাদ নবাব দরবার থেকে নানা খেতাব জূটছে অনেকের। লুঠের ব্যবসায় সক্রিয় সহযোগিতা করে।
লক্ষ্য করার মতো বিষয় বীরভূম থেকে আদায়কৃত রাজস্ব কিন্তু কমেনি। অতএব আরও রাজস্ব আদায় করতে হবে।
বীরভূম শুধু নয় সারা বাংলা জুড়েই ছুটে বেড়াচ্ছে সাদা চামড়ার দল। সবার আগে এসেছে আর্মেনিয়ান রা তারপর ফরাসী রা ; ইংরেজ ; ডেনিশ রা।
ঠিক এই সময়েই সিভিল সার্ভিস থেকে মি: জন চীপ কে কমার্শিয়াল রেসিডেণ্ট করে বীরভূমে পাঠানো হল।
কমার্শিয়াল রেসিডেণ্ট। অর্থাৎ যাঁর প্রধান কাজই হল
বাণিজ্যের বিস্তার। এবং ব্যবসা থেকে রাজস্ব আদায়।
তিনিই প্রথম। মি: জন চীপ এলেন। ১৭৮২ সালে।
সুরুলে এলেন। পাকা পাকি ভাবে থাকা র ব্যবস্থা করলেন।
বানালেন " দুর্গতুল্য " কুঠি বাড়ি। কি চমৎকার তার বর্ণনা । ইংরেজ সাহেব দের রিপোর্ট। পরের পর্বে শোনাব।
( চলবে)
ছবি পরিচিতি। রাইপুর সিংহ বাবুদের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ। ছবি। প্রিয়ব্রত সাহা
গ্রন্থ সহায়তা। জেলা গেজেটিয়ার ও ' ম্যালি বীরভূম।
রাঢ়ভাবনা পত্রিকা। সম্পাদক সৌরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। বিশেষ সংখ্যা। নীল রেশম লাক্ষায় বীরভূম।
No comments:
Post a Comment