।। কোথায় জন্ম আর কোথায় মৃত্যু।
।চীপ সাহেব এবং অন্যান্যরা।
আমাকে ভাবায়।
কোথায় জন্ম আর কোথায় মৃত্যু।
আমি ভাবি তাঁদের কথা। তাঁদের মনটাকে বোঝার চেষ্টা করি। ইতিহাসের তো মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দরকার।
ধরুন আমাদের এই পর্বের কুঠিবাড়ি কেন্দ্রিক বাণিজ্যের চীপ সাহেবের কথা।
এসেছেন ধনী ঘর থেকে। সিভিল সার্ভিস এর লোক। এবং প্রশাসক হিসাবে একজন যে দক্ষ লোক তা ভবিষ্যৎ ই বলেছে।
এবং মানুষ হিসাবেও লোক টা ভবিষ্যৎকালে সকলের সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছিলেন। ভিতরের মানুষ টা ছিল সত্যিকারের মানুষের মতই।
জানিনা নিজের দেশ ছাড়ার সময় দেশে তাঁর আত্মীয় স্বজন কে কে ছিলেন।
আচ্ছা দেশ ছাড়ার সময় কি ভেবে ছিলেন 'শেষ ছাড়া '।
আর ফেরা হবেনা।
আচ্ছা ফেরার জন্য কি কোন টান আলাদা ভাবে কাজ করত।
আচ্ছা বিপুল অর্থ উপার্জন করার পর কি তাঁর দেশে ফিরতে ইচ্ছে করেনি।
সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ছিলেন। শেষ দিন পর্যন্ত কাছেই ছিলেন।তাঁদের সন্তান রা ; মেয়েরা বা ছেলে দের কথা আমার জানা নেই। তাঁরা ও এদেশে ই জীবন কাটিয়েছেন না কি অন্যত্র। না জানি না
তাঁর ও কি মনে এদেশে থেকে যাবার ই ইচ্ছে জন্মেছিল।
একের পর আরেক ব্যবসা। কত কুঠিবাড়ি র দায়িত্ব নতুন করে নিতে হয়েছে। ব্যবসার উন্নতি র জন্য আপ্রান চেষ্টা করেছেন।
রেশম এর জন্য ভালো তাঁত ইতালি থেকে
ভালো রেশম গুটিপোকা চীন দেশ থেকে
গুড় ব্যবসার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে
আনিয়েছেন।
তাঁর মাধ্যমে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি প্রভূত আয় করেছে
আর তিনি নিজে তাঁর ব্যক্তি গত ব্যবসায় বিশাল ধনী হয়েছেন।
তাঁর সাথে ব্যবসায় যেসব দেশীয় মানুষ যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা সবাই ধনী হয়েছেন।
দীর্ঘদিন কোম্পানি র চাকুরী করার পর অবসর নিয়েছেন।
কোম্পানি তাঁর কেমন সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল তা জানা নেই।
এদেশে ; বীরভূমে র মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছেন।
গুনিটিয়া র বিখ্যাত রেশম কুঠিবাড়ি তে তিনি কবরে শায়িত আছেন।
আচ্ছা এঁরা কি ছিলেন সে যুগের 'গ্লোবাল ভিলেজ' এর বাসিন্দা। কি জানি। কিন্তু আমাকে ভাবায়। নিজের দেশের মাটির প্রতি কি টান কাজ করতনা এঁদের।
শুধু চীপ সাহেব নয়। আরও অনেকে। অনেকে।
আমাদের এই চীপ সাহেব বা আরস্কাইন সাহেব এই রকম অনেকে। প্রভূত উপার্জন করেছেন। কিন্তু এঁদের ব্যক্তিগত উপার্জন তো দেশে পাঠানোর কোন খবর নেই।
চীপ সাহেব ভীষণ ই সামাজিক মানুষ ছিলেন। সুরুল গ্রামের সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন। সুরুলের পরবর্তী কালে জমিদার সরকার বাড়ির দুর্গা পূজায় যোগ দিতেন।
মানুষকে নিরাপত্তা দিতেন। চুরি ডাকাতি তো তখন প্রায় নিত্য নৈমিত্তিক। তাঁতিদের নিরাপত্তা সে হয়তো বলা হতেই পারে নিজের বা কোম্পানি র স্বার্থে। ইলামবাজার এরস্কিন বা আরস্কিন বা আরস্কাইন সাহেবের কুঠি বাড়ি বা ইলামবাজার এর শুকবাজারের তাঁতিদের নিরাপত্তা র ব্যবস্থা করেছেন।
দ্বারোন্দা কুঠির ও।
বিচারবিভাগীয় কোন ক্ষমতা তাঁর হাতে ছিলনা। কিন্তু মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বিবাদ বিসংবাদ ঝগড়া ঝাঁটি তাঁকে আপোষ মীমাংসা করে দিতে হত। মানুষ তাঁকে মান্য করতেন।
শেষের দিকে তো তিনি প্রায় দেবতুল্য মানুষ। পাদ্রী বাবা র মতো। মানুষ তাঁর দেখা পাওয়ার জন্য অধীর অপেক্ষা করত।
নীলচাষী বা তাঁতিদের তিনি সব থেকে বেশী পরিমানে দাদন দিতেন।
নীলকুঠি র ' আড়ং ধোলাই ' বলতে যা বোঝায় মানে কুঠি তে চাষী কে ধরে এনে মার। তা কিন্তু এখানে নাই। তেমন কোন খবর নাই। নীলকর সাহেবের যে অত্যাচারী চিত্র আমাদের মনে গেঁথে আছে - হয়তো এঁরা ব্যতিক্রম।
তাঁর প্রধান কীর্তি চারটি পথ নির্মান। সুরুল থেকে সাঁইথিয়া। সুরুল থেকে সিউড়ী। সুরুল থেকে বর্দ্ধমান। আর সুরুল থেকে কাটোয়া।
অন্য কোন জনহিতকর কাজের সংবাদ জানা নেই
সুদীর্ঘ ৪১ বছর রেসিডেণ্ট এর কাজ করার পর ১৮২৩ সালে অবসর নেন। ১৮২৮ সালে তিনি বিখ্যাত গুনুটিয়া রেশম কুঠি তে তিনি প্রয়াত হন। সেখানেই তাঁর সমাধি আছে।
সেই সময়ের বীরভূমের ইতিহাসে তিনি এক অবিস্মরণীয় মানুষ। বীরভূম তাঁকে কতটা মনে রেখেছে!
গ্রন্থ সহায়তা। জেলা গেজেটিয়ার। ও ' ম্যালি
রাঢ় ভাবনা পত্রিকা। সম্পা সৌরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।
কৌলাল পত্রিকা। সম্পা স্বপন ঠাকুর
নিজের লেখা প্রবন্ধ
No comments:
Post a Comment