Tuesday, 24 November 2020

আমার সকল পাঠক দের উদ্দেশ্যে

আমার লেখার পাঠক বন্ধুদের জানাই শারদোৎসব এর প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা। 
 যাঁরা নিয়মিত আমাকে ফলো করেন 
তেমন বন্ধুদের কেউ কেউ বলেছিলেন 
 পুজোর সময় বেশী বেশী পোষ্ট করতে 
 এখন কি আর নূতন লেখা  লেখা হবে 
 হোক আর নাই হোক কিছু পুরনো লেখা 
খুঁজছি। সে গুলো আবার একবার তুলে দেব। 
আর দেখি যদি বের হই তার ছবি দেব। 
সংক্ষেপে বর্ণনা। যদি পারি। যদি 
ইতিহাসিকা ই ম্যাগে নূতন লেখা আছে 
মাৎস্যন্যায় ই ম্যাগে আছে 
দু একটা ছোট পত্রিকা মুদ্রিত মাধ্যমে আছে। 
এই কদিনে এই সব গুলো ই তুলে দেব 
সবাইকে ভালোবাসা 
ও হ্যাঁ। বলা হয়নি। হয়নি নয় বলেছি আগে 
জানেন ই তো যে গড় জঙ্গল এর দেশের লোক 
হ্যাঁ। যাই। গড় জঙ্গল এর দেবী শ্যামারূপার পূজায় 
আবার যাই মৌখিরা কালিকাপুর। সে আমার বড় প্রিয়। আর  চৌপাহারী জঙ্গল পেরিয়ে যাই সুরুল 
সোনা ঝুরি  হীরালিনী দুর্গোৎসব এ। আশেপাশে। 
এবার যে কোথায় যাব  কি করব 
আমাদের এখানে এই অযোধ্যা বনকাটি এলাকায় অনেক গুলি প্রতিমা পুজো। সবই পারিবারিক। 
সেখানে যে যাই না  তা নয় তবে বাইরে ই যাই 
দেখি 

ছবি টি অসাধারণ। পারমিতা দির ( ভৌমিক) এর পোষ্ট থেকে নেবার লোভ সামলাতে পারিনি

Wednesday, 18 November 2020

শিক্ষক দিবস। ' বড় মাষ্টার '

।। শিক্ষক দিবস।। 
আমার দাদু দিদিমা আমাকে মানুষ করেছিলেন। 
আমার দাদু প্রয়াত ননীগোপাল চট্টোপাধ্যায় এর মতো আদর্শ শিক্ষক খুব কমই দেখা যায়। 
অযোধ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয় টিকে গড়ে তোলার জন্য প্রাণপাত পরিশ্রম করেছেন। 
 তখন এই অযোধ্যা বনকাটি এলাকা য় কেন আশেপাশের কোন গ্রামে বিদ্যালয়ই নাই। 
সে টা ১৯৪০ নাগাদ। 
এই এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল তাঁর নেতৃত্বে সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। 
সরকারী অনুমোদন মিলেছিল ১৯৪৪ সালে। 
আমার মা ছিলেন প্রথম ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষার প্রথম ব্যাচ। তাঁর সাথে ছিলেন আরও তিন চার জন। 
 সুখ্যাত গ্রাম্য চিকিৎসক ষষ্ঠীপদ দে এখনও বেঁচে আছেন। আমার ফুল মা পারুলবালা সাহা মারা গিয়েছেন। তিনিও সেই প্রথম ব্যাচের ছাত্রী। 
 অযোধ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা র ইতিহাস অনেক জায়গায় লিখেছি। 
 যা শিখেছি যতটুকু সব সেই তাঁর হাত ধরেই। 
আজকের এই দিনে সেই আদর্শ শিক্ষক ; এলাকায় এখনও প্রবীনদের কাছে ' বড় মাষ্টার '। 
 আর কেউ 'বড় মাষ্টার 'হন নি। 
কোন সরকারি পুরস্কার তাঁরা পাননি। কিন্তু তাঁর মতো শিক্ষক খুব কমই জন্মান। একাধারে শিক্ষক ; সঙ্গীত গুণী। এলাকায় গড়ে তুলেছিলেন এক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল। 
আজ তাঁর প্র‍্য়াণ দিবস ও।

তাঁকে এবং তার সাথে আমার সকল শিক্ষক কে 
 আজকের এই ' শিক্ষক দিবসে ' আমার প্রণাম। 
 জানিনা আমার এই স্মরণাঞ্জলী কোথায় কতদূর গিয়ে পৌঁছাবে

মৌখিরা - কালিকাপুর

কালিকাপুর।
মৌখিরা - কালিকাপুর। 
বর্দ্ধমান রাজের এক দেওয়ান 
পরমানন্দ রায় এখানে প্রতিষ্ঠা 
করেছিলেন বিখ্যাত জমিদারি র। 
মন্দির আর প্রাসাদময় মৌখিরা - কালিকাপুর। 
শত বর্ষ প্রাচীন পুষ্পিত অশোকতরু তলে দাঁড়িয়ে 
মন্দির আর প্রাসাদ রাজির দিকে তাকালে বা 
কোন পূর্ণিমা রাতে চাঁদনী র পারে দাঁড়ালে 
অতীত তার মায়া চাদর আপনার মনে বিছাবেই

আমার কিছু কথা বলে যাই আপনাদের

সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
আমার আগের পোষ্ট টির প্রেক্ষিতে। এত চমৎকার সব মন্তব্য আপনারা করেছেন। আমি কৃতজ্ঞ। 
আমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলেন। 
বেশ ভারী মন নিয়েই লেখাটি লিখেছিলাম। কিছুটা আবেগতাড়িতভাবে। 
অবশ্য আমার লুকানোর কিছু নাই। আমি এত সামান্য যে আমার আর কি আড়াল!  
এক বিশিষ্ট মানুষের মন্তব্য আমাকে এই লেখা লিখিয়েছে। 
তাঁকে ধন্যবাদ। নমস্কার। 
আবার শুরু করব। 
গল্প বলিয়ে মানুষ। আঞ্চলিক ইতিহাসের। বন্ধুরা ভালোবেসে ডাকেন সেনপাহাড়ী র কথক ঠাকুর বলে। 
কতজনকে কত কথা ও কাহিনী শুনালাম আজ পর্যন্ত। 
কত বিশিষ্ট মানুষ এলেন গেলেন থাকলেন " তেপান্তর নাট্য গ্রামে "। তাঁদের জন্য আঞ্চলিক ইতিহাস এর গল্প শোনানোর একটা সেশন থাকে। 
কত জনকে নিয়ে ঘুরলাম। তাঁদের এই এলাকার মানে আমার " সেনপাহাড়ী পরগণা " র গল্প শোনালাম। এক বন্ধু এই মাত্র জিজ্ঞেস করলেন সেনপাহাড়ী কি!  স্বাভাবিক প্রশ্ন। 
বাঙ্গলার বিখ্যাত সেন রাজা দের পূর্বপুরুষ রা কর্ণাট দেশ থেকে এসে প্রথমে এই " গড় জঙ্গল " এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। নাম তাই সেনপাহাড়ী পরগণা। 
আমার কথা নয়। পণ্ডিত প্রবর সুকুমার সেনের কথা। এখনও চালু আছে রাজস্ব দপ্তরে। বলতে পারেন মোটামুটি এখনকার কাঁকসা থানা এলাকাই 
পরগণা সেনপাহাড়ী। এই নিয়ে আমার লেখা কত জায়গায় যে আছে। 
 আমার " মাটির প্রদীপ। আঞ্চলিক ইতিহাস। প্রণব ভট্টাচার্য এর লেখালেখি। এই ফেসবুক পেজ খুলে দেখতে পারেন। 
 মাত্র দশ টাকা দামে অনেকগুলি পুস্তিকা লিখে ছাপিয়ে ছিলাম। সাধারণ মানুষের জন্য। আমি পণ্ডিত নই। পণ্ডিতদের জন্যও নই। যদিও আজকাল পি এইচ ডি  করছেন এমন অনেকে আসেন আমার কাছে। আমি বলি ভাই আমি পথে হাঁটা মেঠো মানুষ। এই জঙ্গল দেশের মানুষ। আমার কাছে!  
আমি এই ভাবেই গুণী জন সমাবেশেও  বলি। 
অধ্যাপক তমাল দাশগুপ্ত তাঁর সপ্তডিঙা ফাউন্ডেশনের পক্ষে মহাবোধি সোসাইটি হলে বক্তা হিসাবে ডেকেছেন। গেছি - বলেছি সেই আমার এই এলাকার কথা। ইছাই ঘোষের দেউল সংক্রান্ত নানা কথা। তাঁদের কে ধন্যবাদ জানাই এই অবসরে।
 বাঙ্গালী শিকড় বিচ্ছিন্ন জাত। বাঙ্গালী কে তাঁর শিকড়ে ফিরতে হবে। জানতে হবে তার গৌরবোজ্জ্বল অতীত। আজকের অনেক বাঙ্গালী কে ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর জানেন না।বাঙ্গালী নিজেকেই চেনে না।  বাংলাদেশেও দেখেছি একই অবস্থা। আমি অতীত বিলাসী নই। বা শুধু অতীত যাপন করতে চাইনা। কিন্তু আমার ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য এর প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল।  আমার অতীত কে আমি জানবনা। তমাল বাবু ভালো গবেষক। বাঙ্গালী র অতীত নিয়ে খুব ভালো  কাজ করছেন। আশার কথা এলাকার ইতিহাস নিয়ে এখন অনেকে ভালো কাজ করছেন। 
ডকুমেন্টটেশনের কাজ ভালো হচ্ছে। 
চাই মানুষ তার মাটির কথা জানুক। তার লক্ষ্যে যেখানে যে আমাকে ডাকেন আমি যাই। বলি আমার এলাকার কথা। তার প্রতিবেশী এলাকার কথা। নদীর ওপারে বীরভূম। আমাদের এক পা ওপারে আর এক পা এপারে। সীমান্ত এলাকা। 
সীমান্ত এলাকা। তাই নিত্য যাতায়াত। পারাপার। 
 আপনারা অনেকে ই জানেন গ্রামে গ্রামে ঘুরি। 
গ্রাম তো উপেক্ষিত অবজ্ঞাত। কেন্দ্র থেকে দূরে। 
 সেই গ্রামের একটা ভাঙ্গা মন্দির নিয়ে কার ই বা
আগ্রহ থাকতে পারে। 
 কিন্তু আমাকে টানে। কখন গড়ে উঠল। সেই সময় আর ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে গেল। এই সময়কাল। 
 বোঝার চেষ্টা করি তার আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি। 
 আর এখানে ছবি দিয়ে সেই গ্রামটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আপনাদের শোনাই। ধন্যবাদ জানাই এই মাধ্যম কে। এই ফেসবুকে আমার অনেক লেখা। 
 সেই ২০১২ থেকে। কত ভালো ছবি হারিয়েছি। 
 টেকনিক্যালি অতটা দক্ষ নই। নিজে নিজে শিখেছি। ছাত্রদের কাছে শিখেছি। ওরা বার বার বলে স্যার ল্যাপটপ নেন। আমি বলি আর শিখে উঠতে বোধহয় পারবনা রে। এই ভালো - 
 সব সময় সকলকে সঙ্গ দিতে পারিনা। এই যেমন সেদিন একজন  বিশিষ্ট মানুষ গেলেন অন্য আরেক জনের সঙ্গে। বললাম ইলামবাজারের দু টি মন্দির দেখে যান ঘুড়িষা। সেখানের দু টি মন্দিরের কাজ দেখুন। তারপর যান জয়দেব  কেন্দুলী। দেখুন রাধাবিনোদ মন্দিরের কাজ। 
 এবার তুলনামূলক আলোচনা করুন। 
 আমাকে অনেকে সঙ্গে চান। পারিনা। সবসময়। 
আবার সুখ্যাত ট্যুর অপারেটর অভিজিৎ বাবু (ধর চৌধুরী ঐতিহাসিক গাইড হিসাবে ডেকে নেন। 
 এই এলাকায় এলেই। 
 মৌখিরা কালিকাপুর  কত মানুষ কে নিয়ে গেছি। 
আমার নিজের খুব প্রিয় জায়গা। মন্দির আর প্রাসাদ নগরী। হেরিটেজ ভিলেজে র দাবী এখানে বারবার লিখে সরকারের নজরে আনতে চেয়েছি। 
 অযোধ্যা বনকাটি তেমনই মন্দির ময়।
 অতি বিখ্যাত অপূর্ব টেরাকোটা অলংকরণ সজ্জিত গোপালেশ্বর শিব মন্দির। ১৭৫৪ শকাব্দে নির্মিত। 
বিখ্যাত এখানকার  পিতলের রথ। তার অলংকরণ নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।। 
 ইছাই ঘোষের দেউল  যাবার পথের উপরে। 
অথচ অনেকে না জানার জন্য মিস করেন। 
হেরিটেজ ট্যুর এখন বিদেশে খুবই জনপ্রিয়। 
 সরকার একটু  ভাবুন। 
আসবেন। এই এলাকায়। যদি হাতে সময় নিয়ে আসেন বা তেপান্তর নাট্য গ্রামে থেকে ঘুরতে চান 
 হয়তো বা আমাকে সাথে পেতে পারেন। 
 না পেলে গল্পের সেশন তো থাকবেই। 
এখানে থাকা খাওয়ার খরচ শান্তিনিকেতনের আশেপাশের রিসর্ট থেকে অনেক কম। 

আসবেন। করোনা ভীতি দূর হোক। এখন সাবধান থাকাই ভালো। এখানের শান্ত পরিবেশে অবশ্য তেমন ভয় নেই। 
 বনবিভাগের উদ্যোগে গড় জঙ্গল এলাকায় ট্রেকিং এবং দিনের বেলায় থাকার ব্যবস্থা হচ্ছে। ভালো। 
আমার সব পুস্তিকা শেষ হয়ে গেছে। বারবার ছাপা হয়েছে।। ইছাইঘোষের দেউল। গড় জঙ্গল এবং দেবী শ্যামারূপা। পরগণা সেনপাহাড়ী ঃ কাঁকসা থানার সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত। 
অযোধ্যা বনকাটি সাতকাহনিয়া গ্রামের ইতিকথা। 
এই সব। 
সাধারণ মানুষ তার মাটির কথা জানুক। 
এই ছিল আমার লক্ষ্য। 
ভেবেছিলাম একটা  সিরিজ করব। 
 কি জানি আর কতটা পারব।

কুনুর কথা র অনুষ্ঠান

আজকের অনুষ্ঠানে। 
কুনুর কথা র আয়োজন। 
গুণী জন সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান। 
পুরস্কার প্রদান। ২/১১/২০। 
স্থান  সতীর ঘাট। কুনুর  পাড়ে। জামগড়া। 
 দুর্গাপুর ফরিদপুর থানা। 
লাউদোহা এলাকা। 
আর আমাকে তো চেনেন 
এক আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী। 

 আমার কথা।  আশার কথা এলাকায় এলাকায় 
আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চা ভালো হচ্ছে। 
 আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী দের একটা নেটওয়ার্ক দরকার। 
 আঞ্চলিক ইতিহাস কে শিক্ষা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত 
 করা দরকার। 
 ইতিহাস বোধ তৈরি হবে এখান থেকেই।

সে এক জন্মদিন আমার

আমাকেও স্বীকার করতে হবে 
 এই ০২/১১/৫৫ তারিখ টি কে
     আমার জন্মদিন 
    বেশ তাই হোক 
 আজ নভেম্বর এর দুই তারিখ।
এক নয় দুই 
 আমার তো সব কিছু দাদু ই 
 ভাবি তাই 
 কিভাবে যে কি হয় 
 কোন ভাবনায় বদলায়  আগামী র 
ভাবনায় 

  বাহ রে দুই 
 দুই ছাড়া কি জীবন হয় 

 আলাদা করে করে সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে 
 পারছি না। অনেকে এখন পর্যন্ত ২৮২ জন শুভেচ্ছা ভালোবাসা জানিয়েছেন। 
 সকলকে আমার অন্তরের ভালোবাসা জানাই। 
 শুভেচ্ছা জানিয়ে ইন্দ্রনীল দা( মজুমদার) 
 যে ছবি টি পাঠিয়েছেন  সে টি দিয়েই সবাই কে 
 ধন্যবাদ জানাই 
আর যা লিখেছেন সে টা আমার ই থাক

কুনুর কথা র অনুষ্ঠান

ছোট্ট কুনুর এর নামে পত্রিকা র নাম কুনুর কথা। সম্পাদক  চূণীলাল মুখোপাধ্যায়। আঠারো বছর ধরে পত্রিকা চালাচ্ছেন। কি করে যে চালাতে হয় তা যাঁরা চালান তাঁরা ভালো জানেন। এই পত্রিকা টি তিনটি  সংগ্রহ যোগ্য সংখ্যা করেছেন। একটি 'নদী '
নিয়ে আর একটি "রাঢ়ের শৈব ধর্মের 'উপরে ।আর একটি দুর্গাপুরের উপরে।  ভালো সংখ্যা। এমনটা ই আমার মনে হয় ছোট পত্রিকা র করা উচিৎ। বছরে দুটি বা তিনটি সংখ্যা।
এই পত্রিকার দপ্তরে পৌঁছায় বা পাঠাতে বলা হয় 
 দুর্গাপুর মহকুমা সহ অন্যান্য এলাকার শারদীয় 
ছোট পত্রিকা গুলিকে। 
 এঁদের এক বিচারক মণ্ডলী সেই সব পত্রিকা থেকে 
সেরা লেখা গুলিকে নির্বাচন করেন। গল্প ; কবিতা 
প্রবন্ধ থেকে। 
 খুব আন্তরিকতার সাথে কাঁকসা সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ  তাঁদের  " ডুবুরী " নামে পত্রিকা টি করেন। 
 সেই পত্রিকা আমার লেখা চায়। দিই। খুব চাপ থাকলেও  না করতে পারিনা। 
 আপনারা জানেন আমি এক আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী। আমি লিখি আঞ্চলিক ইতিহাস বিষয়ক 
প্রবন্ধ। প্রতিবার ই তাই লিখি। এবারেও তাই লিখেছি শেষ মূহুর্তে। ' প্রতিবেশী দুই এলাকার কথা' "। পরে কখনও আপনাদের শোনাব। 
 গত বারের লেখা প্রবন্ধ টির ভিত্তিতে " কুনুর কথা"
   পত্রিকা আমাকে সম্মাননা প্রদান করলেন। 
 ভালো লাগে বৈকি। সেই কুনুর এর পাড়ে আছে এক মহা শ্মশান। " সতীর ঘাট "।  জামগড়া গ্রামের এক গৃহ বধূ স্বামীর মৃত্যুর পর স্বেচ্ছায় সহ মরন 
 বরন করেন। জ্বলন্ত চিতায় ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যু বরন 
করেন। সেখানেই আয়োজন হয়েছিল অনুষ্ঠানে র।
 এই ঘটনা টা ও শোনানোর দরকার আছে। 
 এসেছিলেন অনেক বিশিষ্ট মানুষ। কবি সাহিত্যিক সহ পত্রিকা সম্পাদক গন। 
 প্রশাসনিক ব্যক্তি গন উপস্থিত ছিলেন। এলেন এলাকার বিধায়ক ও। 
 এটা নাচন প্রতাপপুর জামগড়া লাউদোহা এলাকা। 
 চূণীবাবুর বয়স হলেও মাথায় তাঁর নানা পরিকল্পনা। তা তিনি পেশ ও করলেন বিধায়ক এর কাছে। বিধায়ক  শ্রী জীতেন্দ্র তেওয়ারি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন বলে জানালেন। 
 যাঁকে বাদ দিয়ে এই এলাকার কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ভাবা যায়না সেই 'ঐক্য ' পত্রিকার সম্পাদক  শ্রী তারাপদ হাজরা। তাঁর সাথে সঞ্চালনায় ছিলেন আর এক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব 
 ভবানী ভট্টাচার্য।। 
  এলাকার বিশিষ্ট যাত্রাশিল্পী ; সংগীত শিল্পী দুজন কে  এঁরা  সম্মানিত করলেন। 
 বেশ  মনোজ্ঞ এক অনুষ্ঠান। ভালো লাগল। আজ 
 ২/১১ /২০২০। 
 ছোট এক পত্রিকার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

Sunday, 15 November 2020

কার প্রতীক্ষায়

কার প্রতীক্ষায়!  কার?  
ছিল সে এক দিন।
স্বামী রা ব্যবসার জন্য বাইরে গেছে।
কবে যে ফিরবে   কে জানে
ফিরবে তো।
উঁকি দেয় কত ভয়। দুর্ভাবনা 
মশলা পাতি ; নীলের বড়ি ; লাক্ষাগালা ; কাঠকয়লা
আরো কত কি।
জমিয়ে ব্যবসা করছে বেনে রা।
বাইরে যায়। অনেক দূরে।
বেনে বৌ। তার দিকে তাকালে যে চোখ ফেরানো যায়না। এত ফর্সা। যেন হলুদ মাখা গা।
কোথাকার মেয়ে গো তুমি বাছা 

আহা আহা মরি মরি

অযোধ্যা বনকাটি এলাকার অযোধ্যা গ্রামের ' পুরোনো হাটতলা' এলাকার বিখ্যাত মন্দির।
থানা কাঁকসা। প বর্ধমান।

ঊষহর কথা

।।ঊষহর।। 
সর্বপ্রকার ঊষরতা কে হরণ করে সে হয়েছে ঊষহর।
আহা। শ্যামলে শ্যামল তুমি নীলিমায় নীল।
ঘণ সবুজ অরণ্যানী র ভিতর দিয়ে তার কাছে পৌঁছাতে হয়।
মাটি তো নয় সোনা।
অজয়ের পলিমাটি দিয়ে গড়া তার বিস্তৃত কৃষিক্ষেত্র।
অজয়ের যে চরে একদিন ছিল নীল চাষের জমি
ছিল সাহেব ডাঙ্গা র কুঠিবাড়ি।
দ্বারোন্দায় আরস্কিন সাহেবের বিশাল কুঠিবাড়ি।
হাতি বাঁধা থাকত মোটা মোটা থামে।
সেই সাহেবডাঙ্গার সব মাঠ এখন সব্জী চাষের জন্য বিখ্যাত।
পূর্ব্ববঙ্গীয় মানুষ জনের পরিশ্রমে এখনসেখানে সোনা ফলে। 
ইলামবাজার থেকে অনেক টা ভিতরে।পূর্বদিকে। 
ঘণ জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পাকা রাস্তা
এই জঙ্গল ভুমির ভিতরে গড়ে উঠেছে নানা ফার্ম হাউস। রিসর্ট। আরও গড়ে উঠছে। গাঢ় ঘণ সবুজ আর নৈঃশব্দে ভরা।
ছোট্ট গ্রাম ঊষহর। পাশেই ধরমপুর।
ব্রাহ্মণ আচার্য পরিবারের প্রতিষ্ঠিত শিব মন্দির এর ইঁট গুলিকে আজও পরম মমতায় ধরে রেখেছে বটবৃক্ষের সহস্রবাহু।
শ্রাবনে ধূমধাম করে পূজা হয়।
সামনের পুকুর টির নাম 'লা বাঁধা ' বা লা বাঁধ।  লাক্ষারস এর স্মৃতি জেগে ওঠে। খোঁজ নিতে হবে। কে বলবে আর। 
গ্রামে র কয়েকটি ডোম সম্প্রদায়ের পরিবার। তাঁরা ১৩ ই বৈশাখ আর এক বিশাল বটতলায় কালু ডোম এর পুজা করেন।
সেই ' কালু ডোম '। ধর্মমঙ্গল কাব্যের বীর কালু।
লাউসেন এর এক সেনা পতি।এই অজয়ের দক্ষিণ তীর ধরে সে পৌঁছেছিল ' লাউসেন তলায় '।
ডোম ; বাগদী ; সাঁওতাল ; সদগোপ ; সাহা ; আর একঘর ব্রাহ্মণ কি সুন্দর মিলে মিশে আছেন। সবার জীবিকা ই কৃষিকাজ। সবাই মোটামুটি স্বচ্ছল। 
সুবল সন্ধান দিয়েছিল। সুবল কর্মকার। নানা গুণেগুণী। নামি
গৃহ শিক্ষক। আর কথা হচ্ছিল তার ই ছাত্র সদগোপ ' বাড় ' পদবীর নন্দ ; তার বাবা ; মা য়ের সাথে। সব মাটির মানুষ।
নন্দ গুণী ছেলে। রসায়নে বিশ্বভারতী তে পি এইচ ডি র গবেষক। মনে মনে বললাম     বাহ। 
  গর্ব হয় তোমাদের জন্য। এই এই গ্রাম থেকে উঠে এসেছো।
শুভেচ্ছা নন্দ তোমাকে। তোমার পরিবার কে।
   ঊষহরের মুখ উজ্জ্বল কর।
ঊষার আলোয় ভরে উঠুক ঊষার ডিহি বা ঊষহরডিহি ; থেকে
ঊষহর হয়ে  সমগ্র জঙ্গল ভূমি।
  ' চৌপাহারী ' জঙ্গল এর সব আদিবাসী পাড়ায় বেজে উঠুক মাদল।কত আদিবাসী পল্লী আছে এই জঙ্গল ভূমিতে। আর এই 'চৌপাহারী ' জঙ্গল ভূমির চারিপাশে কত স্নিগ্ধ সবুজ সব গ্রাম।দক্ষিণে অজয়। তার কোল ঘেঁষে কত গ্রাম। সব্জী ক্ষেত। আর বালিখাদ। বালি এখন সোনা। 
কত কথা আছে তাদের। আমার ক্ষমতা য় বোধহয় আর কুলাবে না। সে সব কথা শোনানো র কাজ -
ইলামবাজার। আমার প্রিয় জায়গা। তার চারপাশে আমার       বাল্যের ;  যৌবনের নানা স্মৃতি। কত কথা মনে পড়ে।  কে আর মনে রাখে। সবই তো হারায়। সব হারানোর আগে কিছু লিখে রেখে যেতে চেয়েছিলাম। বেশী দিন নয়। পঞ্চাশ বছর আগের কথা। সেই সময়কাল - 
কিছু মানুষের কথা।
দেখি যদি পারি। 

আর সাথে ছিল প্রিয়ব্রত সাহা ; আমার এক প্রিয় ছাত্র। বিশ্বভারতী র সাংবাদিকতা এবং গণজ্ঞাপণ বিভাগের মাষ্টারস এর ছাত্র। এখানে তার তোলা কিছু ছবি ব্যবহার করেছি।
দয়া করে ছবিতে শুধু লাইক দিয়ে মূল পোষ্ট থেকে ছবি কেটে বের করে দেবেননা।
আমি এখানেই লিখি। লেখা পড়ুন। এই অনুরোধ।

আমার কিছু কথা

সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
আমার আগের পোষ্ট টির প্রেক্ষিতে। এত চমৎকার সব মন্তব্য আপনারা করেছেন। আমি কৃতজ্ঞ। 
আমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলেন। 
বেশ ভারী মন নিয়েই লেখাটি লিখেছিলাম। কিছুটা আবেগতাড়িতভাবে। 
অবশ্য আমার লুকানোর কিছু নাই। আমি এত সামান্য যে আমার আর কি আড়াল!  
এক বিশিষ্ট মানুষের মন্তব্য আমাকে এই লেখা লিখিয়েছে। 
তাঁকে ধন্যবাদ। নমস্কার। 
আবার শুরু করব। 
গল্প বলিয়ে মানুষ। আঞ্চলিক ইতিহাসের। বন্ধুরা ভালোবেসে ডাকেন সেনপাহাড়ী র কথক ঠাকুর বলে। 
কতজনকে কত কথা ও কাহিনী শুনালাম আজ পর্যন্ত। 
কত বিশিষ্ট মানুষ এলেন গেলেন থাকলেন " তেপান্তর নাট্য গ্রামে "। তাঁদের জন্য আঞ্চলিক ইতিহাস এর গল্প শোনানোর একটা সেশন থাকে। 
কত জনকে নিয়ে ঘুরলাম। তাঁদের এই এলাকার মানে আমার " সেনপাহাড়ী পরগণা " র গল্প শোনালাম। এক বন্ধু এই মাত্র জিজ্ঞেস করলেন সেনপাহাড়ী কি!  স্বাভাবিক প্রশ্ন। 
বাঙ্গলার বিখ্যাত সেন রাজা দের পূর্বপুরুষ রা কর্ণাট দেশ থেকে এসে প্রথমে এই " গড় জঙ্গল " এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। নাম তাই সেনপাহাড়ী পরগণা। 
আমার কথা নয়। পণ্ডিত প্রবর সুকুমার সেনের কথা। এখনও চালু আছে রাজস্ব দপ্তরে। বলতে পারেন মোটামুটি এখনকার কাঁকসা থানা এলাকাই 
পরগণা সেনপাহাড়ী। এই নিয়ে আমার লেখা কত জায়গায় যে আছে। 
 আমার " মাটির প্রদীপ। আঞ্চলিক ইতিহাস। প্রণব ভট্টাচার্য এর লেখালেখি। এই ফেসবুক পেজ খুলে দেখতে পারেন। 
 মাত্র দশ টাকা দামে অনেকগুলি পুস্তিকা লিখে ছাপিয়ে ছিলাম। সাধারণ মানুষের জন্য। আমি পণ্ডিত নই। পণ্ডিতদের জন্যও নই। যদিও আজকাল পি এইচ ডি  করছেন এমন অনেকে আসেন আমার কাছে। আমি বলি ভাই আমি পথে হাঁটা মেঠো মানুষ। এই জঙ্গল দেশের মানুষ। আমার কাছে!  
আমি এই ভাবেই গুণী জন সমাবেশেও  বলি। 
অধ্যাপক তমাল দাশগুপ্ত তাঁর সপ্তডিঙা ফাউন্ডেশনের পক্ষে মহাবোধি সোসাইটি হলে বক্তা হিসাবে ডেকেছেন। গেছি - বলেছি সেই আমার এই এলাকার কথা। ইছাই ঘোষের দেউল সংক্রান্ত নানা কথা। তাঁদের কে ধন্যবাদ জানাই এই অবসরে।
 বাঙ্গালী শিকড় বিচ্ছিন্ন জাত। বাঙ্গালী কে তাঁর শিকড়ে ফিরতে হবে। জানতে হবে তার গৌরবোজ্জ্বল অতীত। আজকের অনেক বাঙ্গালী কে ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর জানেন না।বাঙ্গালী নিজেকেই চেনে না।  বাংলাদেশেও দেখেছি একই অবস্থা। আমি অতীত বিলাসী নই। বা শুধু অতীত যাপন করতে চাইনা। কিন্তু আমার ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য এর প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল।  আমার অতীত কে আমি জানবনা। তমাল বাবু ভালো গবেষক। বাঙ্গালী র অতীত নিয়ে খুব ভালো  কাজ করছেন। আশার কথা এলাকার ইতিহাস নিয়ে এখন অনেকে ভালো কাজ করছেন। 
ডকুমেন্টটেশনের কাজ ভালো হচ্ছে। 
চাই মানুষ তার মাটির কথা জানুক। তার লক্ষ্যে যেখানে যে আমাকে ডাকেন আমি যাই। বলি আমার এলাকার কথা। তার প্রতিবেশী এলাকার কথা। নদীর ওপারে বীরভূম। আমাদের এক পা ওপারে আর এক পা এপারে। সীমান্ত এলাকা। 
সীমান্ত এলাকা। তাই নিত্য যাতায়াত। পারাপার। 
 আপনারা অনেকে ই জানেন গ্রামে গ্রামে ঘুরি। 
গ্রাম তো উপেক্ষিত অবজ্ঞাত। কেন্দ্র থেকে দূরে। 
 সেই গ্রামের একটা ভাঙ্গা মন্দির নিয়ে কার ই বা
আগ্রহ থাকতে পারে। 
 কিন্তু আমাকে টানে। কখন গড়ে উঠল। সেই সময় আর ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে গেল। এই সময়কাল। 
 বোঝার চেষ্টা করি তার আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি। 
 আর এখানে ছবি দিয়ে সেই গ্রামটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আপনাদের শোনাই। ধন্যবাদ জানাই এই মাধ্যম কে। এই ফেসবুকে আমার অনেক লেখা। 
 সেই ২০১২ থেকে। কত ভালো ছবি হারিয়েছি। 
 টেকনিক্যালি অতটা দক্ষ নই। নিজে নিজে শিখেছি। ছাত্রদের কাছে শিখেছি। ওরা বার বার বলে স্যার ল্যাপটপ নেন। আমি বলি আর শিখে উঠতে বোধহয় পারবনা রে। এই ভালো - 
 সব সময় সকলকে সঙ্গ দিতে পারিনা। এই যেমন সেদিন একজন  বিশিষ্ট মানুষ গেলেন অন্য আরেক জনের সঙ্গে। বললাম ইলামবাজারের দু টি মন্দির দেখে যান ঘুড়িষা। সেখানের দু টি মন্দিরের কাজ দেখুন। তারপর যান জয়দেব  কেন্দুলী। দেখুন রাধাবিনোদ মন্দিরের কাজ। 
 এবার তুলনামূলক আলোচনা করুন। 
 আমাকে অনেকে সঙ্গে চান। পারিনা। সবসময়। 
আবার সুখ্যাত ট্যুর অপারেটর অভিজিৎ বাবু (ধর চৌধুরী ঐতিহাসিক গাইড হিসাবে ডেকে নেন। 
 এই এলাকায় এলেই। 
 মৌখিরা কালিকাপুর  কত মানুষ কে নিয়ে গেছি। 
আমার নিজের খুব প্রিয় জায়গা। মন্দির আর প্রাসাদ নগরী। হেরিটেজ ভিলেজে র দাবী এখানে বারবার লিখে সরকারের নজরে আনতে চেয়েছি। 
 অযোধ্যা বনকাটি তেমনই মন্দির ময়।
 অতি বিখ্যাত অপূর্ব টেরাকোটা অলংকরণ সজ্জিত গোপালেশ্বর শিব মন্দির। ১৭৫৪ শকাব্দে নির্মিত। 
বিখ্যাত এখানকার  পিতলের রথ। তার অলংকরণ নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।। 
 ইছাই ঘোষের দেউল  যাবার পথের উপরে। 
অথচ অনেকে না জানার জন্য মিস করেন। 
হেরিটেজ ট্যুর এখন বিদেশে খুবই জনপ্রিয়। 
 সরকার একটু  ভাবুন। 
আসবেন। এই এলাকায়। যদি হাতে সময় নিয়ে আসেন বা তেপান্তর নাট্য গ্রামে থেকে ঘুরতে চান 
 হয়তো বা আমাকে সাথে পেতে পারেন। 
 না পেলে গল্পের সেশন তো থাকবেই। 
এখানে থাকা খাওয়ার খরচ শান্তিনিকেতনের আশেপাশের রিসর্ট থেকে অনেক কম। 

আসবেন। করোনা ভীতি দূর হোক। এখন সাবধান থাকাই ভালো। এখানের শান্ত পরিবেশে অবশ্য তেমন ভয় নেই। 
 বনবিভাগের উদ্যোগে গড় জঙ্গল এলাকায় ট্রেকিং এবং দিনের বেলায় থাকার ব্যবস্থা হচ্ছে। ভালো। 
আমার সব পুস্তিকা শেষ হয়ে গেছে। বারবার ছাপা হয়েছে।। ইছাইঘোষের দেউল। গড় জঙ্গল এবং দেবী শ্যামারূপা। পরগণা সেনপাহাড়ী ঃ কাঁকসা থানার সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত। 
অযোধ্যা বনকাটি সাতকাহনিয়া গ্রামের ইতিকথা। 
এই সব। 
সাধারণ মানুষ তার মাটির কথা জানুক। 
এই ছিল আমার লক্ষ্য। 
ভেবেছিলাম একটা  সিরিজ করব। 
 কি জানি আর কতটা পারব।

Friday, 13 November 2020

গুনুটিয়া র বিখ্যাত রেশম কুঠির কথা। ১৫ দশ পর্ব

।। কুঠি বাড়ি ভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্য।।  ১৫ দশ পর্ব।
----------+----  --------  --------------------   ----------------------
ফ্রুসার্ড সাহেব।
জাতে ফরাসী।
দৃঢ় আত্মবিশ্বাস তাঁর। প্রচণ্ড উদ্যমী। পরিশ্রমী।
কয়েক বছরের মধ্যেই ভাগ্য লক্ষী র দেখা পাবেন এই বিশ্বাসে
এদেশে এসেছেন। ব্যবসা। ব্যবসার মাধ্যমেই তাঁকে তাঁর ভাগ্য
ফেরাতে হবে। হতে হবে ভীষণ ধনী।
অনেক চেষ্টা চরিত্র করে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি র কাছ থেকে
কমার্শিয়াল এজেন্ট হবার কাগজ হাতে পেয়েছেন।
এসেছেন বীরভূম।  'Mor' নদীর উত্তর পারে। এই গুনুটিয়া য়।
বীরভূম এর উত্তর পূর্বাংশ। অতি উর্বর জমি। সেখানের স্থানীয়
মানুষ রা রেশম গুটি পোকার চাষ করেন। রেশম উৎপন্ন করেন। রেশমের কাপড় বোনেন।
নিজের টাকায় এই রেশম কিনে কোম্পানি কে নিয়মিত ; নির্দিষ্ট দরে সরবরাহ করাই তাঁর মূল কাজ।
১৭৮৫ নাগাদ ময়ূরাক্ষী র উত্তর তীরে এই গুনুটিয়া য় রেশম
কুঠি কারখানা গড়ার জন্য তিনি ' পাইকস্ত রায়ত ' হিসাবে জমি পেয়েছেন এবং এক মি: এডওয়ার্ড হে সাহেবের কাছ থেকে ২০০০০ টাকায় একটা বিল্ডিং সমেত জায়গা কিনেছেন। বছর দুয়েক বাদে পাকাপাকি ভাবে কোম্পানি র
কমার্শিয়াল এজেন্ট হিসাবে গণ্য হয়েছেন।
প্রচণ্ড পরিশ্রমী। কিন্তু শুরু থেকেই শুরু হয়েছে নানা বিড়ম্বনা।
ময়ূরাক্ষী র প্রবল বন্যায় ভেসে গেল তাঁর কুঠিবাড়ি।
মারাত্নক ক্ষয় ক্ষতি। প্রায় ১৫০০০ টাকায় কেনা ঘর বাড়ির
অনেক গুলি ধুয়ে মুছে গেল।
  তাঁর এই ক্ষয় ক্ষতির সময় কোম্পানি র ছোটখাটো কর্তারা
তাঁর পাশে দাঁড়ালেন না। বরং নানা বাধা।
সব কিছু সামলাবার সময় স্থানীয় মানুষেরা মওকা বুঝে তাঁর
কাছ থেকে সব কিছুর জন্য চড়া দাম নিতে লাগলো।
বীরভূমের রাজার অধীনস্থ সব জমি। তাঁর কাছ থেকেই খাজনা দিয়ে জমির লীজ নিতে হবে। সেই সময় একর প্রতি
খাজনা ১২ আনা। রাজা নিলেন ৩-৪ টাকা একর প্রতি।
জঙ্গল পরিষ্কার সহ অন্যান্য কাজে তাঁর খরচ হতে লাগলো
তুলনায় বেশী।
পরে বন্যার জল আটকাতে তাঁকে নিজ খরচে বাঁধ নির্মান
এবং   কুঠি বাড়ির চারদিকে প্রাচীর নির্মান করাতে হয়।
সেখানেও অনেক টাকা তাঁকে ঢালতে হয়।
তবু হাল ছাড়েন নি এই ফ্রুসার্ড সাহেব।
লক্ষ্যে তিনি অবিচল।
কিন্তু না। ভাগ্য তাঁর সহায় নয়। বাকী বকেয়া ; রাজার খাজনা বাকী। তার জন্য তাঁর নালিশ। আবেদন নিবেদন বকেয়া মকুবের জন্য। কিন্তু কোম্পানি র কর্তারা তাঁর প্রতি সদয় ও নন। আবার রেশম সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবার আশংকা য় তাঁর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা ও নেওয়া যায়নি।
শেষ পর্যন্ত ১৭৯১ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিশ তাঁর সমস্ত বকেয়া
মকুব করে দেন। রাজাকে বলে খাজনা ও অনেক কম করিয়ে দিলে তিনি কিছুটা স্বস্তি পান। নূতন উদ্যমে আবার শুরু করেন কাজ।
ইতিমধ্যে ১০ বছর হয়ে গেছে দেশ ছাড়া। ফেরার ও আর আশা নেই। অতি সাধারন মানের জীবনযাত্রা।
  এই পরিস্থিতি তে বীরভূম কেই তিনি তাঁর স্থায়ী বসবাসের স্থান করে নিলেন।
পরে কিন্তু হয়ে উঠেছিলেন একজন প্রভাবশালী মানুষ।
জঙ্গল জমি পরিষ্কার করে ; বন্য জীবজন্তু দের তাড়িয়ে ; চোর ডাকাতদের হাত থেকে স্থানীয় মানুষদের রক্ষা করে তিনি
  জঙ্গল ভূমির গ্রাম গুলিতে  হয়ে উঠেছিলেন প্রায় রক্ষাকর্তা।
পরে হয়েছিলেন জজ ; এবং ম্যাজিষ্ট্রেট।
কুঠি বাড়ির চারপাশে র অনেক জঙ্গল' জমি পরিষ্কার করিয়ে
রেশম চাষের জন্য জমি তৈরী করে ; তুঁত চাষের ব্যবস্থা করেন। এবং রেশম শিল্পের যথেষ্ট প্রসার ঘটান।
  মি: ই ; জি ; ড্রেক - ব্রকম্যান এর গবেষণা র রিপোর্ট অনুযায়ী
১৭৯১ সাল নাগাদ সরকারের অনুরোধে বীরভূম এর রাজা তাঁকে ২৫০০ বিঘা জমি লীজ দিচ্ছেন তাঁকে ১২ বছরের জন্য বার্ষিক ১৫০০ টাকা খাজনায়। পরে ১৮০০ সাল নাগাদ
খাজনা বেড়ে হয় ৩৪১১ টাকা।
শোনা যায় তাঁর রেশম কুঠিতে তখন প্রায় ১৫০০ কর্মচারী।
সব মিলিয়ে প্রায় ৪০০০ জন কাজ করছেন তাঁর অধীনে।
বিশাল কুঠিবাড়ি র আয়তন। যেন ছোটখাটো এক শহর।
কর্মমুখর। প্রাণচঞ্চল সে কুঠি বাড়ি। গুনুটিয়া রেশম কুঠি।
  ১৮০৭ সালে তাঁর মৃত্যুর পর সুরুল কুঠির বিখ্যাত চীপ সাহেব ৩৪১৫ টাকার খাজনায় গুনুটিয়া কুঠির ইজারা নেন।
এই কুঠি থেকেই
বীরভূম জেলা র রেশম চাষ সহ অন্যান্য ব্যবসার শ্রী বৃদ্ধি ঘটান।
চীপ সাহেবের মৃত্যুর পর সেক্সপিয়ার নামে এক ইংরেজ ব্যবসায়ী  এই কুঠি র কমার্শিয়াল রেসিডেণ্ট হন।
১৮৩৫ সালের পর এই কুঠির মালিকানা চলে যায় অন্য এক
ইংরেজ কোম্পানি র হাতে। ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে
এই কুঠির কর্মকাণ্ড। ১৮৫০ নাগাদ কিছুটা জেগে উঠেও
শেষ পর্যন্ত আর কিছু দিন সচল থাকার পর বন্ধ হয়ে যায় এই
কুঠি বাড়ি।১৮৩৫ এর পর সরকার ই এখান থেকে সিল্ক উৎপাদন বন্ধ করে দেন।
  উনিশ শতকের গোড়াতেও যে কুঠি বাড়ি থেকে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকার রেশম উৎপাদিত হত ; কুঠির ভিতরে মূল কারখানা। আর আশেপাশে দেশী য় এবং ইংরেজ অধীনস্থ আরও ৬ টি কারখানা ; যে কুঠি বাড়িতে এক সময় গুটি থেকে সুতো বের করার জন্য প্রায় ২৪০০ লোকের কর্মব্যস্ততা ;
পলু ; পোকাপালন ; তূঁত চাষ সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০০০ মানুষের নিযুক্তি - -
  ' কালের অমোঘ নিয়মে ১৫ একর জায়গা নিয়ে ময়ুরাক্ষীর তীরে আজও পড়ে  আছে তার ধ্বংসাবশেষ '।
  ফ্রুসার্ড সাহেবের ব্যক্তিগত ভাবে ধনী হয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
দেশে ফেরা ও হয়ে ওঠেনি। বীরভূম এর মাটিতেই তাঁর শেষ শয্যা পাতা হয়েছে। কিন্তু বীরভূম এর বিখ্যাত রেশম শিল্পের উন্নতি তে তাঁর ভূমিকাকে অস্বীকার করা যাবে না।
--------------    -------------------    ----------- © প্রণব ভট্টাচার্য।
শেষ হল কুঠি বাড়ি ভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্য।

গ্রন্থ সহায়তা। জেলা গেজেটিয়ার। বীরভূম। ও ম্যালি। 
পত্রিকা। রাঢ় ভাবনা। সম্পা সৌরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।

Saturday, 7 November 2020

কিছু নাম। সুরুল নথি থেকে। কুঠীবাড়ি ভিত্তিক ব্যবসা বানিজ্য। ১৪ দশ পর্ব

।।  কুঠিবাড়ি ভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্য।।  সুরুল নথি থেকে কিছু
   নাম।। ১৪ দশ পর্ব।
-----------------------      ------------------+------
ভোলানাথ খুব বড় মাঝি। সে মাল সমেত নৌকা নিয়ে কলকাতা যায়। আবার ফেরার পথে সরকার বাবুদের অর্ডার অনুযায়ী নানা জিনিষ নিয়ে ফেরে। সরকার বাবুদের সে বাঁধা মাঝি। খুব দক্ষ মাঝি। গঙ্গা নদীতে নৌকা চালানো খুব সহজ কাজ নয়। নদীতে জোয়ার ভাঁটা খেলে। স্রোতের টান বাড়ে কমে। ঘূর্ণি আছে।  অনেক সময় নৌকো ডুবি হয়।
ভোলানাথ সত্যি খুব বড় মাঝি।
সে ছাড়াও আছে মস্তুলী গ্রামের বদন লোহার আর অজয় তীরের রজতপুরের নফর মেটে ও বালকরাম মুচি। এরা নৌকায় " নিলের পারওয়ারীর জন্য নৌকার চাকরির উপর দাদন " নিয়েছিলেন। এঁরা আশানন্দ বাবুর মস্তুলী কুঠির বাঁধা মাঝি।
" গড়া কাপড় " ধবধবে করে ধোয়ার জন্য তো অনেক অনেক ঘর ধোবা ছিল। তারা ও নিশ্চয়ই নানা গ্রাম থেকে এসেছিলেন।
এরকম কয়েক জনের নাম যারা কবুলতি পত্র লিখে কাজের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। নাম স্বরূপ ধোবা ; নফর ধোবা ; সনাতন ধোবা ; বক্রনাথ এবং নারায়ণ ধোবা। এদের বাড়ি ছিল সুরুল গ্রামে। তবে চিঠি তে বলা হয়েছে হাল সাকিম গোয়ালপাড়া।
কবুলতি পত্রের শেষ অংশ "-- - আপনকার পছন্দ মাফিক দিষ্টী করিয়া লইবেন আপনাকার না  পছন্দ জে হইবেক তাহা তৎক্ষনাৎফিরিয়া লইয়া পুনরায় দাস্ত তৈয়ার করিয়া দিব তাহার মুযুরির দাও য়া করিবনা - - মুযুরি ফি সও থানে ৯ নয় টাকা হিসাবে পাইব এতদার্থে আপন খুশী তে কবুলতি পত্র লিখিয়া দিলাম ইতি সন ১২২৮ সাল তারিখ ১৯ শ্রাবণ "
( বানান অপরিবর্তিত)
চুক্তির খেলাপ হলে চলবে না। সে সব ক্ষেত্রে ই। খেলাপ হলে মামলা মোকদ্দমা। যেমন তোলানি বাবদ সুপুর গ্রামের কামি তাঁতী ; শ্রী দাম পাল শ্রীনিবাস সরকার মশাই এর নিকট থেকে ৪১ টাকা দাদন নিয়েছিলেন। সেই টাকা পরিশোধ না হওয়ায়
বীরভূমের দেওয়ানী আদালতে মকদ্দমা হয়।
উভয়পক্ষের দরজবাব পত্রে শ্রী রামচন্দ্র মজুমদার মহাশয়ের নিকট বিচার প্রার্থনা করা হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত মিটে যায় আসামী হিসাব দেখে দোষ কবুল করে
বাকী টাকার কাপড় তুলে দেবার স্বীকার করার পর।
মস্তুল কুঠির মজুর দের সর্দার ছিল গোলোক ধাঙ্গর ও বদন ধাঙ্গড়। এরা ভালো মজুর সংগ্রহ করে আনত। " কুড়ি জন কোঁড়া " মজুর সংগ্রহ করে আনার জন্য ৫ টাকা দাদন নিয়েছিল। বলিষ্ঠ মজুরের মাসিক বেতন ছিল ৩ টাকা।
এরা " কুঠি মস্তুলের নিলের হাওজে ও কারখানাতে খাটিবার কারণ " নিযুক্ত ছিল।
আরও কিছু নাম জগদুর্লভ মেট্যা ; বিরু মেট্যা ; কালীচরণ মেট্যা ; দ্বারকানাথ মেট্যা ; ও বলাই মেট্যা  এরাও ১২৩৪ বঙ্গাব্দে চুক্তি করে কাজ নিয়েছিল। নিলের" কুঁড়ি ধরা- মজুর "
তিন টাকা বারো আনা এবং টেঁড়া টানা মজুর তিন টাকা চার আনা মাসিক মজুরিতে কাজ করত।
মস্তুলী কুঠির অধীনে বামনি গ্রাম এর মোনাজ শেখের কিস্তিবন্দি পত্রটিতে দেখা যায় তিনি নিল চাষের জন্য দাদন নিয়েছিলেন। তার জামিনদার ছিলেন রহিম শেখ।
মোনাজ শেখ প্রতিমাসে আট আনা করে শোধ দেবার অঙ্গীকার করেন।
"কলকাতা বন্দরে আশানন্দের গুদাম ছিল। সেখানে অনেক
লোক নিযুক্ত ছিল। যাঁরা বিদেশী বণিক দের দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করে মালের দর দাম করতেন। এই সব দালাল দের কয়েকজনের নাম রামচন্দ্র মিত্র ; তিলকচন্দ্র বসু ; যজ্ঞেশ্বর সরকার ; দেবীচরণ সরকার। আর বিদেশী রা হলেন
মেকিনটিন সাহেব ; ইষপাই সাহেব প্রমুখ এঁরা গড়াকাপড় ইত্যাদি কিনতেন।
আরও যাঁরা এঁদের সাথে আশানন্দের পক্ষে কাজ করতেন
তেমন কিছু নাম দীননাথ সরকার ; পবন ঘোষাল ; গতিনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ; শিবনাথ সিংহ ; রামকিশোর রায় ; দেবীপ্রসাদ ঘোষ ; রামকৃষ্ণ মিত্র ; গুরুপ্রসাদ ঘোষ ; রামকুমার চৌধুরী ; রামমোহন মুখোপাধ্যায় ; ভোলানাথ দাস ; রামকুমার দেবশর্মা প্রমুখ। এঁদের মধ্যে গতিনাথ এবং শিবনাথ সিংহ ছিলেন অত্যন্ত চতুর।"
মালিক আশানন্দ সরকার কে লেখা পত্র থেকে জানা যায়
বিদেশী জাহাজের আনাগোনা এবং " মাল চেনাচিনি দর জানাজানি " নিয়ে দালাল লোকেরা "ফিকির সওয়াল " করে
খারাপ মাল বিক্রি করতেন। "
  আবার আশানন্দ সরকারের পক্ষে লোক টাকা ধার করতেন
কলকাতা র মহাজন দের কাছে।
কয়েকজন মহাজনের নাম রাধামোহন মিত্র ; গোলোকচন্দ্র
বসাক প্রমুখ। পরে সুদ সমেত টাকা তাঁরা ফেরত নিতেন।
সেই সময়ের কলকাতা র অনেক ধনী মানুষ এই মহাজনী কারবার করেছেন।
বিদেশী জাহাজের বেশী আনাগোনা মানেই ভালো ব্যবসা।
মালের দরের ওঠানামা  হয় চাহিদা আর মাল সাপ্লাই এর উপর নির্ভর করে। চাহিদা আর আমদানি র নিত্যবাণিজ্যসূত্র।
  কত রকমের মাল যে ফেরত নৌকায় আসছে তার নাম লিখে শেষ করা যাবেনা।  বিলাতী কাচিম কুলুপ ; গড়গড়া র নল ; বেহালার তার ; লণ্ঠন ; গোলাপজল ; গরম মশলা ; গোলমরিচ
থেকে জরি কাপড় ; বা ঘোড়ার সাজ ; ' ডোল্লাক তালা মানে (door lock) ইষপাই কোম্পানি র ইসপাই তালা।
  সেই সময় ' গড়া কাপড়ের ৩৬ হাতা বা ৩০ হাতার দাম জানা গেছে। খুব ভালো ৩০ হাতা এক থানের দাম দু টাকা চার আনা থেকে দু টাকা দশ আনা পর্যন্ত।
  কাশীর চিনি ৯ টাকা মণ। আর সাধারন চিনি ৮ টাকা দাম
বীরভূম এর মিহি চাল আড়াই টাকা মণ। রামশাল চালের যথেষ্ঠ চাহিদা। মোটা চাল দু টাকা চার আনা  মণ।
  ভালো ইংরেজ কুঠির বাক্স বন্দী নিল আড়াই শো টাকা।
আবার খারাপ হলে ১৯০ টাকা থেকে নেমে ১৬০ টাকা পর্যন্ত।
   সুরুল সরকার বাড়ির এই সব নথিপত্র নানা বিধ তথ্যের এক বিশাল ভাণ্ডার।
এই সব নথিপত্র বিশ্বভারতী র সংগ্রহ শালাকে দেওয়া হয়।
এই সব নথি পত্র ঘেঁটে  খ্যাত " সুরুল নথি সংকলন " প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল বিশ্বভারতী গবেষণা প্রকাশন সমিতির দ্বারা ১৯৮৩ সালে। এই দুরূহ গবেষণা কাজটি করেছিলেন
বুদ্ধদেব আচার্য মহাশয়।
এই লেখার সব তথ্যই সেখান থেকে সংগৃহীত।
---------+-------------------------------------------@ প্রণব ভট্টাচার্য্য

অজয় রে তোর শিমূল তলার ঘাটে

অজয় রে 
তোর এই শিমূল তলার ঘাটে 
কোন নৌকো আজ আর লাগেনা 
অথচ একদিন এই ঘাটে কত নৌকো র 
আনাগোনা। 
সেনপাহাড়ী র জঙ্গল মহলের নাম তখন ' লা মহল' মানে লাক্ষা মহল। নদীর এপার ওপারে র নদীতীরের হাজার হাজার বিঘে জমিতে নীল চাষ।
বাবু রা সব নীল চাষ করাচ্ছেন। তবে চাষযোগ্য কিন্তু পতিত জমিতেই বেশী। ভালো নীল গাছের জন্য ভালো বীজ চাই। চীপ সাহেব ব্যবস্থা করছেন।
বিরাট তাঁর সুরুল কুঠি। ইলামবাজারে আরস্কিন সাহেবের সাথে ভালো সম্পর্ক।
দ্বারোন্দায় ভালো ব্যবসা করে ; অনেক বেশী ধনী হয়ে দ্বারোন্দার কুঠি বাড়ি ছেড়ে তিনি এসেছেন এই বাজারে।সেই কুঠিবাড়ী - যার বাইরে মোটা মোটা থামে হাতি বাঁধা থাকত। এলেন  ইলামবাজারে। অবস্থান গত সুবিধা র কথা তিনি ভেবেছেন। লাক্ষা র কথা ভেবেছেন।
সরেজমিনে দেখে গিয়েছেন বেশ কয়েক বার। ফরাসি কুঠি আছে বটে। তবে তত বড় নয়।
বড়। আরও বড়। হতে হবে সেরা। এই আরস্কিন এর মনোবাসনা। এলাকার সব জমিদার বাবুদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের কে সঙ্গে চাই 

মাল উঠছে নামছে 
যাচ্ছে ইলামবাজারে আরস্কিন সাহেবের কুঠি বাড়িতে। 
লাক্ষা মানে গালা  কাঠকয়লা ধুনো নানা বনজ দ্রব্য। আর নীলগাছ  নীল আরও কত কি। 
কুঠিবাড়ি কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য থেকে 
গড়ে উঠছে গঞ্জ ইলাম বাজার। 
এলেম বাজার। যে বাজারের এলেম আছে মানে দাম। যত সম্ভ্রান্ত মানুষ জনের আনাগোনা 
বাজারে এলাম গো। ইলামবাজার। আবার ইলম মানে ও গালা বা লাক্ষা। সেখান থেকে ও ইলামবাজার। এখানের গালাশিল্প অনেক পুরনো। 
' লরি' রা ও আজকের নয়। 
বসুধার ' লরি রাও ' খুব নামকরা ছিল। 
শুনেছি মারাত্মক ; দুর্ধর্ষ ছিল। 
ইলামবাজার। বাজার ; গঞ্জ। পাঁচ গাঁ এখানে এসে জোটে।। 
বীরভূমের প্রবেশ দ্বার। 
শুধু বীরভূমের নয় সমগ্র উত্তর বাঙ্গলার।

ইলামবাজার। এলেমবাজার। নীলাম বাজার। আরস্কাইন সাহেবের কুঠি বাড়ি

। ।এলেমবাজার। নীলামবাজার। ইলামবাজার।।। 

না। তুলাপট্টিতে কোন নীলামের বাজার আর বসেনা আজ। 
  তুলাপট্টিতে একদিন সুতা ; তুলা ; তসরের থান ; সুতী বস্ত্রের নীলামের বাজার বসত। কত এলেমদার মানুষ দের আনাগোনা। আজ যদি  বলেন যে তুলাপট্টি জায়গাটি কোথায় - ইলামবাজার এর আজকের যে কোন মানুষ চুপ করে থাকবেন। কে আর খোঁজ রাখে। কি হবে সে অতীত কে জেনে।
পুরানো থানার পাশে বিস্তৃত মাঠে সে হাট বসত একদিন।
জেলা গেজেটিয়ারে  ও' ম্যালি বলছেন। ১৯১০ সালে।
গুরুসদয় দত্ত মশাই তখন বীরভূমে র জেলা কালেক্টর।
ইলামবাজারে উদ্বোধন করছেন একটি দাতব্য চিকিৎসা লয়।
সেই মার্বেল ফলকটি কি আজকের গ্রামীন হাসপাতালে র কোন কক্ষে সংরক্ষিত হয়েছে কি না  জানিনা।
আজকের পোষ্ট অফিস গড়ে উঠেছে আরস্কিন সাহেবের কুঠি বাড়ির কিছুটা জায়গা নিয়ে। আর সেই বিরাট চারদিক খোলা বারান্দার ডাকবাংলো। আরস্কিন সাহেবের আউটহাউস।
নিশ্চিহ্ন। সেই উঁচু মোটা ভিতের মোটা থামের খোলা বারান্দার আরামদায়ক বাংলো বাড়ি। যেখানে কেন্দুলীর মেলা দেখতে যাবার পথে একরাত্রি বিশ্রাম নিয়েছিলেন সস্ত্রীক সিলভা লেভী র মতো পণ্ডিত। শান্তিনিকেতন থেকে এসেছিলেন।
সংলগ্ন এলাকার উত্তর দিকে ছিল আরস্কিন পরিবারের সমাধি স্থল। ছোট্ট কিন্তু সুন্দর। প্রত্যেকটি সমাধি। সাদা মার্বেল ফলকে লেখা নাম ; জন্ম সাল ; জন্ম স্থান ; মৃত্যু তারিখ।
কোথায় জন্ম ইংল্যান্ড এর কোন শায়ারে। আর মৃত্যু এই ইলামবাজারে। 
ছোটবেলায় ইলামবাজার হাইস্কুলে পড়তে গেলাম। ক্লাস নাইন থেকে। আমাকে কেউ বলেনি। কেউ দেখায় নি। একদিন খুঁজে পেয়েছিলাম।
কোথায় জন্ম আর কোথায় মৃত্যু!  আমার মন কেমন করত।
মাঝে মাঝে গিয়ে কবরস্থানে বসে থাকতাম।
পাশেই উত্তরে ফরাসী কুঠির একটা ভাঙ্গা দেওয়াল। দেওয়াল টি বেশ উঁচু। নিশ্চিত ভাবেই দোতালা ছিল।
  আজ সব নিশ্চিহ্ন। নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্যই নিশ্চিহ্ন। 
না আমরা রক্ষা করিনি। করার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে ই করিনি। সব ইঁট ; কাঠ ; পাথর ; সাদা মার্বেল ফলক সব ছাড়িয়ে দিনের পর দিন নিয়ে চলে গেছি।
আজকের ইলামবাজারে সেদিনের ইলামবাজার কে খোঁজা মূর্খামি।
  আজ সে এক বিরাট গঞ্জ। মিউনিসিপালিটির মতো বিস্তৃতি।
চারপাশের গ্রাম থেকে অবস্থাপন্ন মানুষেরা এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছেন। মূল ইলামবাজার কে আজ খুঁজে পাওয়া দায়।
আমাদের ছোটবেলায় ভূগোল বইয়ে কি কোথায় কিজন্য বিখ্যাত এই পর্বে লেখা থাকত- ইলামবাজার। বীরভূম জেলায়।লাক্ষা বা গালা শিল্পের জন্য বিখ্যাত কেন্দ্র।
এলেমবাজার। বাজারে এলাম গো। যে বাজারের ' এলেম ' মানে দাম আছে। কত সম্ভ্রান্ত মানুষজনের আনাগোনা।
নীলাম বাজার। হাঁকডাকের বিরাট বাজার। হতে পারে নীলাম থেকে ইলামবাজার।
আর ইলম বা ইলাম মানে ই তো লাক্ষা বা গালা। তার বাজার।
  আর আজ একঘর ' নুড়ি ' বা লরি নেই যারা গালার কাজ করেন। সব পদবী বদলে নিয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই পেশাও। 
শেষ দুই ভাই ছিলেন নেপাল আর গোপাল গুঁই।ঘাড় গুঁজে অবসন্ন চিত্তে টুকটাক কাজ করতেন। মলিন বেশ। ম্লান আলো চোখে। 
রবীন্দ্রনাথ এই দুই ভাইকে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রশিক্ষক হিসাবে শ্রীনিকেতনের শিল্প সদনে। শেষ চেষ্টা করেছিলেন।( চলবে)

আরস্কিন সাহেবের সিমেট্রি র ছবি সত্যশ্রী উকিল দার কাছ থেকে পেয়েছি। মুকুল দে মশাই এর তোলা। এ ছবি অন্য আর কারোও কাছে বোধহয় নাই।

Friday, 6 November 2020

চীপ সাহেব আর তাঁর কুঠিবাড়ি।

।। সুরুল কুঠি এবং চীপ সাহেব।। 
১৭৮২ সালে জন চীপ সাহেব সুরুলে এলেন। 
কমার্শিয়াল রেসিডেণ্ট হিসাবে। 
তিনি ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি র বেতনভুক কর্মচারী ছিলেন। 
আবার স্বাধীন ভাবে নিজস্ব ব্যবসা করার অধিকার ও তাঁর ছিল। 
সুরুল গ্রামের উত্তরে পশ্চিমের বিস্তৃর্ণ উঁচু নীচু ঢেউ খেলানো 
ডাঙ্গা জমি। মাটি লাল। কাঁকড় পাথর। ল্যাটেরাইট মাটি। 
ছোটো খাটো টিলা। সেখানেই অনেক খানি জমি ইজারা নিলেন। শুরু করলেন তাঁর কুঠি নির্মান। 
চীপ সাহেব স্থির করেই নিয়েছিলেন যে এখানেই জীবন কাটাবেন। সিভিল সার্ভিস থেকে এসেছিলেন। ধনী ছিলেন। 
  ব্যবসার মাধ্যমে বিশাল ধনী হয়েছিলেন। 
কুঠি বাড়ি তো নয়। যেন ছোট খাটো দুর্গ। 
মোটা উঁচু সীমানা প্রাচীর। ভিতরে জলাশয়। অনেক গুলি নানা আকারের বাড়ির গুচ্ছ। গুপ্তকক্ষ। সুড়ঙ্গ। বিস্তৃত বাগান। বাগানে নানা ফুল ফলের গাছ। পশু পক্ষী। বাগান পরিচর্যার জন্য অনেক মালী। 
স্বামী স্ত্রী দুইজন মানুষ। তাঁর স্ত্রীর ফরমায়েশ খাটার জন্য বেশ কয়েকজন মহিলা পুরুষ। 
বেশ রুচিবান মানুষ। 
একদিনে তৈরি হয়নি। সময় লেগেছে। জলাশয় গুলি কাটানো হয়েছে। এত এত ইঁট লেগেছে। চূণ সুরকী র গাঁথনি র জন্য '।কত মানুষের পরিশ্রম। 

কাষ্ঠ ঘূটিং '  সহ কত কি যে লেগেছে।আর কত মানুষের এর সাথে সংযুক্তি।  বিশাল তার আয়োজন।  নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত
করার জন্য পাহারাদার  সিপাই নিযুক্ত হয়েছে। 
এই কুঠিবাড়ি তে বসে প্রথমে শুরু করেছেন কাপড়ের
ব্যবসা।
" গড়া কাপড় "। নামটা নূতন ঠেকছে। স্বাভাবিক।
মোটা সুতোর ঠাস বুনন শক্ত কাপড়। টুকরো টুকুরো আবার থান। নানা মাপের। সাদা ও আছে আবার রঙিন ও আছে। 
ধোবারা মুগুর পিটিয়ে কেচে পরিষ্কার করে। ধবধবে সাদা চাই।
  চীপ সাহেব তো ব্যবসাটাকে বড় করতে ; বাণিজ্যিক ভিত্তিতে করতে চাইলেন। আশেপাশে র সব গাঁ য়েই তাঁতি রা আছে বটে। কিন্তু -।
রাইপুরের সিংহ বাবুদের পূর্বপুরুষ লালচাঁদ বাবুর ডাক পড়ল। ইতিমধ্যে ই সিংহ বাবুরা চীপ সাহেবের ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়েছেন।
তিনি তাঁদের আদি বাসস্থান মেদিনীপুর এর চন্দ্রকোনা এলাকা থেকে প্রায় হাজার ঘর তাঁতি কে নিয়ে এলেন এই এলাকায়। নানা গ্রামে তাঁদের বাসস্থান গড়ে উঠল। তাঁতিরা দাদন পেলেন। সব তাঁতিদের ই দাদন দেওয়া হত। দাদন অনুযায়ী তাঁদের কাছ থেকে গড়া কাপড় আদায় করা হত। দাদন দেওয়া বা নেওয়া বা তার জন্য কাপড় আদায় দেওয়ার জন্য তাঁতিদের কাছ থেকে লিখিত সম্মতি পত্র নেওয়া হত। 
একহাজার ঘর তাঁতিদের কাছ থেকে হাজার থান গড়া কাপড়। তাঁতিদের তাঁত ঘর থেকে সেগুলি সংগ্রহ করে চীপ সাহেবের কুঠির গুদামে পৌঁছে দেওয়া।
শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী মহাশয় তাঁর বিখ্যাত বই " বিদ্রোহ বহ্নি " তে লিখেছেন " সিংহ বাবুদের আদি বাসস্থান ছিল চন্দ্রকোনা র নতুন হাট। বাবু শ্যাম কিশোর সিংহ নতুন হাট হতে কয়েক হাজার তাঁতিদের সুরুলে নিয়ে গেছলেন। তাঁতীরা গড়া নামিত কাপড়ের থান তৈরী করবার জন্য। ঐ থান গুলি নীল কুঠির জলে রঞ্জিত করে ইংল্যান্ড এর নৌ বিভাগে নৌ সেনাদের জন্য পাঠানো হত। সে যুগে দৈনিক
১০০১  টাকা তাঁতীদের কাছ থেকে পেতেন।
শ্যামকিশোর সিংহ কে ই পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়েছে।
এবং তিনি না কি চীপ সাহেবের কুঠি র বা ব্যবসার দেওয়ান ছিলেন। বেঙ্গল পাস্ট এণ্ড প্রেজেন্ট নামে সরকারী দলিলে ( ১৯২৩) তার উল্লেখ আছে । ভল্যুম  - পঁচিশ। 
এই গড়া বা গড়ে কাপড় ছিল নানা মাপের। ছোট থেকে মাঝারি থেকে বড় থান। ৩৬ হাত বা ৭২ হাত লম্বা আর চওড়া এগারো পোয়া মানে সাড়ে তিন ফুটের মতো।
এই কাপড় গুলি ভালো ভাবে ধৌত করে নীলের সাহায্যে রঞ্জিত করে বিদেশের বাজারে পাঠানো হত। শুধু ইংল্যান্ড নয় রেঙ্গুন ; সিংহল ; মিশর এবং ইউরোপের বাজারে।
সমস্ত কাজের তদারককারী ছিলেন ইউনিয়র নিকলসন।
আর এই সব কাপড় ধোবার জন্য তাঁদের অধীনে ২২০০ ঘর ধোবা ছিলেন। গ্রামের উত্তর পূর্বের ডাঙ্গায় ( এখনকার শান্তিনিকেতনের  বিনয় ভবন এলাকা) ।
অবাক লাগে কি বিরাট মাপে ব্যবসা করতেন চীপ সাহেব।
শুধুতো এই গড়া কাপড় নয় - নীল ; গালা ; রেশম ; গুড় ; চিনি ; লোহাপাথর থেকে লোহা তাঁর ব্যবসার পরিধি ক্রমাগত বেড়েছে এবং সম্পদের পরিমান ও। ( চলবে)  
আজ এই পর্যন্ত।
---------------------------------- গ্রন্থ সহায়তা। জেলা গেজেটিয়ার। বীরভূম। ও ম্যালি।
রাঢ় ভাবনা পত্রিকা। সম্পা সৌরেন্দ্র নাথ চট্টোপাধ্যায়।
কৌলাল পত্রিকা। সম্পা  স্বপন ঠাকুর।
নিজের প্রবন্ধ। 
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন - শ্রী দুর্গাশংকর দীর্ঘাঙ্গী

আমার নিজের কিছু কথা যা না বললেই নয়

আমার যে ধারাবাহিক চলছে 
" কুঠি বাড়ি ভিত্তিক ব্যবসা বানিজ্য। সে টা থামিয়ে আজ একটু অন্য রকম কথা বলি 
 কথা তো লতার মতো। 
 আমি এর আগে আপনাদের কাছে বারবার বলেছি এই সকল কথা 
দেখুন আমি খুব সাধারণ মানুষ। লেখাপড়া তেমন হয়নি। যেমন টা হলে মনে করা যেত কিছু একটা বটি। 
 নিজের লেখা বই নাই। 
ISSN  কোন পত্রিকা র সম্পাদক ও নই 
অতি সামান্য এক সাধারণ আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী মাত্র। 
এই চর্চা আমার অনেক দিনের 
 বলতে পারেন সেই কোন বালক বেলায় আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল  অঞ্জনা নদী তীরে চন্দনীগাঁয়ে    পোড়ো মন্দির খানা গঞ্জের বাঁয়ে 
 জীর্ণ ফাটল ধরা  এককোনে তারি 
অন্ধ নিয়েছে বাসা কুঞ্জবিহারী 
আমার মন কেমন করত      ঐ ভাঙ্গা মন্দির 
 অন্ধ ভিখারি ৷    লেজ কাটা কুকুর  ---
ঐ ভাঙ্গা মন্দির টা আমার বুকে গেঁথে গেছে সেই কবে কার  বালকবেলায় 
ভাঙ্গা মন্দির দেখলে দাঁড়িয়ে পড়ি। 
 এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ছুটে যাই এখনও 
 খুঁজি তার গড়ে ওঠার ইতিহাস 
আবার আজকের করুন দশা 
 আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি টাকে বোঝার চেষ্টা করি 
পত্তন আর পতনের মাঝে তো একটি মহামুল্যবান "ত"।
তার খোঁজ পণ্ডিতেরা জানেন 
 আমি কোন পণ্ডিত নই। একাডেমিক লোক ই নই 
 গবেষক। কোন ভাবেই নই। 
 আমি চেয়েছি আমার চারপাশ টা বুঝতে
 মানুষ । মানুষ ই তো সব। 
 চাই মানুষ তার মাটির কথা জানুক। চিনুক নিজের শিকড়। শিকড় বিচ্ছিন্ন এই জাত 
 যদি সামান্যও পারি। 
কাঠবিড়ালি র মতো 
 মোটা মোটা দামী বই কোথায় পাব। 
 কেনার সামর্থ্য ছিলনা 
অনেক দামী বই  পুরনো মাটির বাড়িতে নষ্ট হয়ে গেছে 
যা গেছে তা গেছে 
আমার এই এলাকা কাঁকসা আউসগ্রাম এর জঙ্গল মহল  ইছাইঘোষ এর দেউল  অজয়ের এপার ওপার নিয়ে কুড়ি কিলোমিটার ব্যাসার্ধের জায়গায় আমার ঘোরাঘুরি 
 এখানেই এখন লিখি৷ এই ফেসবুকে র পাতায় 
কেউ আমন্ত্রণ না জানালে কোথাও লিখিনা 
আমার কোন উচ্চাশা নাই 
অনেক সময় ফেলে এসেছি। মনকে ই বলি " তুই ফেলে এসেছিস কারে - মন মন রে আমার 
 তবু আমার লেখা আপনাদের ভালো লাগে 
 চমৎকার সব মন্তব্য লিখে আমাকে প্রাণিত করেন 
 আপনাদের ধন্যবাদ 
 কি করব বলুন গবেষক এর মতো প্রতিটি বাক্যের তথ্য সূত্র দিতে পারিনা 
ভুলে গেছি কোথায় পড়েছি যেন 
রেফারেন্স বই এর খোঁজে কোথায় যাব বলুন 
 কে দেবে আমাকে বই 
এখন দিচ্ছে এই মাধ্যম। পাচ্ছি নানা পি ডি এফ 
 একবার সাময়িক সদস্য হয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের 
 সেণ্ট্রাল লাইব্রেরি তে গিয়েছিলাম দিন কতক 
 আমার দরকার ছিল  মাৎস্য ন্যায় পর্ব 
 একান্তে শুনলাম যে দামী দামী সব বই অধ্যাপক দের দখলে ই থাকে। তাই থাক 
 কোন পণ্ডিত তো আর উপেক্ষিত  অবজ্ঞাত গ্রামের ভাঙ্গা মন্দির টির কথা আপনাদের শোনাবেন না। না কোন গবেষক 
   আমি চেষ্টা করি 
আমি চেষ্টা করেছিলাম একটা পুকুরের নাম কেন 
" সন্ধান "। খুঁজে ছিলাম তার কথা কাহিনী 
 অনেক পণ্ডিত আমার লেখা পড়েন। 
লাইক ও দেননা। মন্তব্য তো দূরের কথা। ভাবি সত্যিই তো তাঁরা ওজনদার। আমার পোষ্ট তো নূতন কিছু নয়। তাতে লাইক দিয়ে নিজের ওজন কমাবেন কেন - 
 এই আপনারা এখানে যাঁরা আছেন তাঁদের ভালোবাসাই আমার পাথেয় 

কেউ কাউকে মনে রাখেনা 
 আমি চেষ্টা করেছিলাম মাত্র
এই কথাটি কাকে বলব     মনে রেখো

রয়ে গেল আরও কিছু কথা     বাকি 
 আমি যেন  সেই  বাতি ওয়ালা 
 মাটির প্রদীপ হাতে দাঁড়াই    ঘন অন্ধকারে
পথের বাঁকে

কুঠি বাড়ি ভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্য। আমার নিজের কিছু কথা।

আমার যে ধারাবাহিক চলছে 
" কুঠি বাড়ি ভিত্তিক ব্যবসা বানিজ্য। সে টা থামিয়ে আজ একটু অন্য রকম কথা বলি 
 কথা তো লতার মতো। 
 আমি এর আগে আপনাদের কাছে বারবার বলেছি এই সকল কথা 
দেখুন আমি খুব সাধারণ মানুষ। লেখাপড়া তেমন হয়নি। যেমন টা হলে মনে করা যেত কিছু একটা বটি। 
 নিজের লেখা বই নাই। 
ISSN  কোন পত্রিকা র সম্পাদক ও নই 
অতি সামান্য এক সাধারণ আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী মাত্র। 
এই চর্চা আমার অনেক দিনের 
 বলতে পারেন সেই কোন বালক বেলায় আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল  অঞ্জনা নদী তীরে চন্দনীগাঁয়ে    পোড়ো মন্দির খানা গঞ্জের বাঁয়ে 
 জীর্ণ ফাটল ধরা  এককোনে তারি 
অন্ধ নিয়েছে বাসা কুঞ্জবিহারী 
আমার মন কেমন করত      ঐ ভাঙ্গা মন্দির 
 অন্ধ ভিখারি ৷    লেজ কাটা কুকুর  ---
ঐ ভাঙ্গা মন্দির টা আমার বুকে গেঁথে গেছে সেই কবে কার  বালকবেলায় 
ভাঙ্গা মন্দির দেখলে দাঁড়িয়ে পড়ি। 
 এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ছুটে যাই এখনও 
 খুঁজি তার গড়ে ওঠার ইতিহাস 
আবার আজকের করুন দশা 
 আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি টাকে বোঝার চেষ্টা করি 
পত্তন আর পতনের মাঝে তো একটি মহামুল্যবান "ত"।
তার খোঁজ পণ্ডিতেরা জানেন 
 আমি কোন পণ্ডিত নই। একাডেমিক লোক ই নই 
 গবেষক। কোন ভাবেই নই। 
 আমি চেয়েছি আমার চারপাশ টা বুঝতে
 মানুষ । মানুষ ই তো সব। 
 চাই মানুষ তার মাটির কথা জানুক। চিনুক নিজের শিকড়। শিকড় বিচ্ছিন্ন এই জাত 
 যদি সামান্যও পারি। 
কাঠবিড়ালি র মতো 
 মোটা মোটা দামী বই কোথায় পাব। 
 কেনার সামর্থ্য ছিলনা 
অনেক দামী বই  পুরনো মাটির বাড়িতে নষ্ট হয়ে গেছে 
যা গেছে তা গেছে 
আমার এই এলাকা কাঁকসা আউসগ্রাম এর জঙ্গল মহল  ইছাইঘোষ এর দেউল  অজয়ের এপার ওপার নিয়ে কুড়ি কিলোমিটার ব্যাসার্ধের জায়গায় আমার ঘোরাঘুরি 
 এখানেই এখন লিখি৷ এই ফেসবুকে র পাতায় 
কেউ আমন্ত্রণ না জানালে কোথাও লিখিনা 
আমার কোন উচ্চাশা নাই 
অনেক সময় ফেলে এসেছি। মনকে ই বলি " তুই ফেলে এসেছিস কারে - মন মন রে আমার 
 তবু আমার লেখা আপনাদের ভালো লাগে 
 চমৎকার সব মন্তব্য লিখে আমাকে প্রাণিত করেন 
 আপনাদের ধন্যবাদ 
 কি করব বলুন গবেষক এর মতো প্রতিটি বাক্যের তথ্য সূত্র দিতে পারিনা 
ভুলে গেছি কোথায় পড়েছি যেন 
রেফারেন্স বই এর খোঁজে কোথায় যাব বলুন 
 কে দেবে আমাকে বই 
এখন দিচ্ছে এই মাধ্যম। পাচ্ছি নানা পি ডি এফ 
 একবার সাময়িক সদস্য হয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের 
 সেণ্ট্রাল লাইব্রেরি তে গিয়েছিলাম দিন কতক 
 আমার দরকার ছিল  মাৎস্য ন্যায় পর্ব 
 একান্তে শুনলাম যে দামী দামী সব বই অধ্যাপক দের দখলে ই থাকে। তাই থাক 
 কোন পণ্ডিত তো আর উপেক্ষিত  অবজ্ঞাত গ্রামের ভাঙ্গা মন্দির টির কথা আপনাদের শোনাবেন না। না কোন গবেষক 
   আমি চেষ্টা করি 
আমি চেষ্টা করেছিলাম একটা পুকুরের নাম কেন 
" সন্ধান "। খুঁজে ছিলাম তার কথা কাহিনী 
 অনেক পণ্ডিত আমার লেখা পড়েন। 
লাইক ও দেননা। মন্তব্য তো দূরের কথা। ভাবি সত্যিই তো তাঁরা ওজনদার। আমার পোষ্ট তো নূতন কিছু নয়। তাতে লাইক দিয়ে নিজের ওজন কমাবেন কেন - 
 এই আপনারা এখানে যাঁরা আছেন তাঁদের ভালোবাসাই আমার পাথেয় 

কেউ কাউকে মনে রাখেনা 
 আমি চেষ্টা করেছিলাম মাত্র
এই কথাটি কাকে বলব     মনে রেখো

রয়ে গেল আরও কিছু কথা     বাকি 
 আমি যেন  সেই  বাতি ওয়ালা 
 মাটির প্রদীপ হাতে দাঁড়াই    ঘন অন্ধকারে
পথের বাঁকে

চীপ সাহেবের কুঠি বাড়ি। কুঠিবাড়ি কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য

।। সুরুল কুঠি এবং চীপ সাহেব।। 
১৭৮২ সালে জন চীপ সাহেব সুরুলে এলেন। 
কমার্শিয়াল রেসিডেণ্ট হিসাবে। 
তিনি ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি র বেতনভুক কর্মচারী ছিলেন। 
আবার স্বাধীন ভাবে নিজস্ব ব্যবসা করার অধিকার ও তাঁর ছিল। 
সুরুল গ্রামের উত্তরে পশ্চিমের বিস্তৃর্ণ উঁচু নীচু ঢেউ খেলানো 
ডাঙ্গা জমি। মাটি লাল। কাঁকড় পাথর। ল্যাটেরাইট মাটি। 
ছোটো খাটো টিলা। সেখানেই অনেক খানি জমি ইজারা নিলেন। শুরু করলেন তাঁর কুঠি নির্মান। 
চীপ সাহেব স্থির করেই নিয়েছিলেন যে এখানেই জীবন কাটাবেন। সিভিল সার্ভিস থেকে এসেছিলেন। ধনী ছিলেন। 
  ব্যবসার মাধ্যমে বিশাল ধনী হয়েছিলেন। 
কুঠি বাড়ি তো নয়। যেন ছোট খাটো দুর্গ। 
মোটা উঁচু সীমানা প্রাচীর। ভিতরে জলাশয়। অনেক গুলি নানা আকারের বাড়ির গুচ্ছ। গুপ্তকক্ষ। সুড়ঙ্গ। বিস্তৃত বাগান। বাগানে নানা ফুল ফলের গাছ। পশু পক্ষী। বাগান পরিচর্যার জন্য অনেক মালী। 
স্বামী স্ত্রী দুইজন মানুষ। তাঁর স্ত্রীর ফরমায়েশ খাটার জন্য বেশ কয়েকজন মহিলা পুরুষ। 
বেশ রুচিবান মানুষ। 
একদিনে তৈরি হয়নি। সময় লেগেছে। জলাশয় গুলি কাটানো হয়েছে। এত এত ইঁট লেগেছে। চূণ সুরকী র গাঁথনি র জন্য '।কত মানুষের পরিশ্রম। 

কাষ্ঠ ঘূটিং '  সহ কত কি যে লেগেছে।আর কত মানুষের এর সাথে সংযুক্তি।  বিশাল তার আয়োজন।  নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত
করার জন্য পাহারাদার  সিপাই নিযুক্ত হয়েছে। 
এই কুঠিবাড়ি তে বসে প্রথমে শুরু করেছেন কাপড়ের
ব্যবসা।
" গড়া কাপড় "। নামটা নূতন ঠেকছে। স্বাভাবিক।
মোটা সুতোর ঠাস বুনন শক্ত কাপড়। টুকরো টুকুরো আবার থান। নানা মাপের। সাদা ও আছে আবার রঙিন ও আছে। 
ধোবারা মুগুর পিটিয়ে কেচে পরিষ্কার করে। ধবধবে সাদা চাই।
  চীপ সাহেব তো ব্যবসাটাকে বড় করতে ; বাণিজ্যিক ভিত্তিতে করতে চাইলেন। আশেপাশে র সব গাঁ য়েই তাঁতি রা আছে বটে। কিন্তু -।
রাইপুরের সিংহ বাবুদের পূর্বপুরুষ লালচাঁদ বাবুর ডাক পড়ল। ইতিমধ্যে ই সিংহ বাবুরা চীপ সাহেবের ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়েছেন।
তিনি তাঁদের আদি বাসস্থান মেদিনীপুর এর চন্দ্রকোনা এলাকা থেকে প্রায় হাজার ঘর তাঁতি কে নিয়ে এলেন এই এলাকায়। নানা গ্রামে তাঁদের বাসস্থান গড়ে উঠল। তাঁতিরা দাদন পেলেন। সব তাঁতিদের ই দাদন দেওয়া হত। দাদন অনুযায়ী তাঁদের কাছ থেকে গড়া কাপড় আদায় করা হত। দাদন দেওয়া বা নেওয়া বা তার জন্য কাপড় আদায় দেওয়ার জন্য তাঁতিদের কাছ থেকে লিখিত সম্মতি পত্র নেওয়া হত। 
একহাজার ঘর তাঁতিদের কাছ থেকে হাজার থান গড়া কাপড়। তাঁতিদের তাঁত ঘর থেকে সেগুলি সংগ্রহ করে চীপ সাহেবের কুঠির গুদামে পৌঁছে দেওয়া।
শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী মহাশয় তাঁর বিখ্যাত বই " বিদ্রোহ বহ্নি " তে লিখেছেন " সিংহ বাবুদের আদি বাসস্থান ছিল চন্দ্রকোনা র নতুন হাট। বাবু শ্যাম কিশোর সিংহ নতুন হাট হতে কয়েক হাজার তাঁতিদের সুরুলে নিয়ে গেছলেন। তাঁতীরা গড়া নামিত কাপড়ের থান তৈরী করবার জন্য। ঐ থান গুলি নীল কুঠির জলে রঞ্জিত করে ইংল্যান্ড এর নৌ বিভাগে নৌ সেনাদের জন্য পাঠানো হত। সে যুগে দৈনিক
১০০১  টাকা তাঁতীদের কাছ থেকে পেতেন।
শ্যামকিশোর সিংহ কে ই পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়েছে।
এবং তিনি না কি চীপ সাহেবের কুঠি র বা ব্যবসার দেওয়ান ছিলেন। বেঙ্গল পাস্ট এণ্ড প্রেজেন্ট নামে সরকারী দলিলে ( ১৯২৩) তার উল্লেখ আছে । ভল্যুম  - পঁচিশ। 
এই গড়া বা গড়ে কাপড় ছিল নানা মাপের। ছোট থেকে মাঝারি থেকে বড় থান। ৩৬ হাত বা ৭২ হাত লম্বা আর চওড়া এগারো পোয়া মানে সাড়ে তিন ফুটের মতো।
এই কাপড় গুলি ভালো ভাবে ধৌত করে নীলের সাহায্যে রঞ্জিত করে বিদেশের বাজারে পাঠানো হত। শুধু ইংল্যান্ড নয় রেঙ্গুন ; সিংহল ; মিশর এবং ইউরোপের বাজারে।
সমস্ত কাজের তদারককারী ছিলেন ইউনিয়র নিকলসন।
আর এই সব কাপড় ধোবার জন্য তাঁদের অধীনে ২২০০ ঘর ধোবা ছিলেন। গ্রামের উত্তর পূর্বের ডাঙ্গায় ( এখনকার শান্তিনিকেতনের  বিনয় ভবন এলাকা) ।
অবাক লাগে কি বিরাট মাপে ব্যবসা করতেন চীপ সাহেব।
শুধুতো এই গড়া কাপড় নয় - নীল ; গালা ; রেশম ; গুড় ; চিনি ; লোহাপাথর থেকে লোহা তাঁর ব্যবসার পরিধি ক্রমাগত বেড়েছে এবং সম্পদের পরিমান ও। ( চলবে)  
আজ এই পর্যন্ত।
---------------------------------- গ্রন্থ সহায়তা। জেলা গেজেটিয়ার। বীরভূম। ও ম্যালি।
রাঢ় ভাবনা পত্রিকা। সম্পা সৌরেন্দ্র নাথ চট্টোপাধ্যায়।
কৌলাল পত্রিকা। সম্পা  স্বপন ঠাকুর।
নিজের প্রবন্ধ। 
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন - শ্রী দুর্গাশংকর দীর্ঘাঙ্গী

কুঠি বাড়ি ভিত্তিক ব্যবসা বানিজ্য। কোথায় জন্ম আর কোথায় মৃত্যু।

।। কোথায় জন্ম আর কোথায় মৃত্যু। 
।চীপ সাহেব এবং অন্যান্যরা। 

আমাকে ভাবায়। 
কোথায় জন্ম আর কোথায় মৃত্যু। 
আমি ভাবি তাঁদের কথা। তাঁদের মনটাকে বোঝার চেষ্টা করি। ইতিহাসের তো মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দরকার। 
ধরুন আমাদের এই পর্বের কুঠিবাড়ি কেন্দ্রিক বাণিজ্যের চীপ সাহেবের কথা। 
এসেছেন ধনী ঘর থেকে। সিভিল সার্ভিস এর লোক। এবং প্রশাসক  হিসাবে একজন যে দক্ষ লোক তা ভবিষ্যৎ ই বলেছে।
এবং মানুষ হিসাবেও লোক টা ভবিষ্যৎকালে সকলের সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছিলেন। ভিতরের মানুষ টা ছিল সত্যিকারের মানুষের মতই।
জানিনা নিজের দেশ ছাড়ার সময় দেশে তাঁর আত্মীয় স্বজন কে কে ছিলেন। 
আচ্ছা দেশ ছাড়ার সময় কি ভেবে ছিলেন 'শেষ ছাড়া '।
আর ফেরা হবেনা।
আচ্ছা ফেরার জন্য কি কোন টান আলাদা ভাবে কাজ করত।
আচ্ছা বিপুল অর্থ উপার্জন করার পর কি তাঁর দেশে ফিরতে ইচ্ছে করেনি।
সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ছিলেন। শেষ দিন পর্যন্ত কাছেই ছিলেন।তাঁদের সন্তান রা ; মেয়েরা বা ছেলে দের কথা আমার জানা নেই। তাঁরা ও এদেশে ই জীবন কাটিয়েছেন না কি অন্যত্র।  না জানি না 
তাঁর ও কি মনে এদেশে থেকে যাবার ই ইচ্ছে জন্মেছিল।
একের পর আরেক ব্যবসা। কত কুঠিবাড়ি র দায়িত্ব নতুন করে নিতে হয়েছে। ব্যবসার উন্নতি র জন্য আপ্রান চেষ্টা করেছেন।
রেশম এর জন্য ভালো তাঁত ইতালি থেকে
ভালো রেশম গুটিপোকা চীন দেশ থেকে
গুড় ব্যবসার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে
আনিয়েছেন।
তাঁর মাধ্যমে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি প্রভূত আয় করেছে
আর তিনি নিজে তাঁর ব্যক্তি গত ব্যবসায় বিশাল ধনী হয়েছেন।
তাঁর সাথে ব্যবসায় যেসব দেশীয় মানুষ যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা সবাই ধনী হয়েছেন।
দীর্ঘদিন কোম্পানি র চাকুরী করার পর অবসর নিয়েছেন।
কোম্পানি তাঁর কেমন সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল তা জানা নেই।
এদেশে ; বীরভূমে র মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছেন।
গুনিটিয়া র বিখ্যাত রেশম কুঠিবাড়ি তে তিনি কবরে শায়িত আছেন। 
আচ্ছা এঁরা কি ছিলেন সে যুগের 'গ্লোবাল ভিলেজ' এর বাসিন্দা। কি জানি। কিন্তু আমাকে ভাবায়। নিজের দেশের মাটির প্রতি কি টান কাজ করতনা এঁদের।
শুধু চীপ সাহেব নয়। আরও অনেকে। অনেকে।
আমাদের এই চীপ সাহেব বা আরস্কাইন সাহেব এই রকম অনেকে। প্রভূত উপার্জন করেছেন। কিন্তু এঁদের ব্যক্তিগত উপার্জন তো দেশে পাঠানোর কোন খবর নেই।
চীপ সাহেব ভীষণ ই সামাজিক মানুষ ছিলেন। সুরুল গ্রামের সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন। সুরুলের পরবর্তী কালে জমিদার সরকার বাড়ির দুর্গা পূজায় যোগ দিতেন।
মানুষকে নিরাপত্তা দিতেন। চুরি ডাকাতি তো তখন প্রায় নিত্য নৈমিত্তিক। তাঁতিদের নিরাপত্তা সে হয়তো বলা হতেই পারে নিজের বা কোম্পানি র স্বার্থে। ইলামবাজার এরস্কিন বা আরস্কিন বা আরস্কাইন সাহেবের কুঠি বাড়ি বা ইলামবাজার এর শুকবাজারের তাঁতিদের নিরাপত্তা র ব্যবস্থা করেছেন।
দ্বারোন্দা কুঠির ও।
বিচারবিভাগীয় কোন ক্ষমতা তাঁর হাতে ছিলনা। কিন্তু মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বিবাদ বিসংবাদ ঝগড়া ঝাঁটি তাঁকে আপোষ মীমাংসা করে দিতে হত। মানুষ তাঁকে মান্য করতেন।
শেষের দিকে তো তিনি প্রায় দেবতুল্য মানুষ। পাদ্রী বাবা র মতো। মানুষ তাঁর দেখা পাওয়ার জন্য অধীর অপেক্ষা করত।
নীলচাষী বা তাঁতিদের তিনি সব থেকে বেশী পরিমানে দাদন দিতেন।
নীলকুঠি র ' আড়ং ধোলাই ' বলতে যা বোঝায় মানে কুঠি তে চাষী কে ধরে এনে মার। তা কিন্তু এখানে নাই। তেমন কোন খবর নাই। নীলকর সাহেবের যে অত্যাচারী চিত্র আমাদের মনে গেঁথে আছে - হয়তো এঁরা ব্যতিক্রম।
তাঁর প্রধান কীর্তি চারটি পথ নির্মান। সুরুল থেকে সাঁইথিয়া। সুরুল থেকে সিউড়ী। সুরুল থেকে বর্দ্ধমান। আর সুরুল থেকে কাটোয়া।
অন্য কোন জনহিতকর কাজের সংবাদ জানা নেই
সুদীর্ঘ ৪১ বছর রেসিডেণ্ট এর কাজ করার পর ১৮২৩ সালে অবসর নেন। ১৮২৮ সালে তিনি বিখ্যাত গুনুটিয়া রেশম কুঠি তে তিনি প্রয়াত হন। সেখানেই তাঁর সমাধি আছে।
সেই সময়ের বীরভূমের ইতিহাসে তিনি এক অবিস্মরণীয় মানুষ। বীরভূম তাঁকে কতটা মনে রেখেছে!  

গ্রন্থ সহায়তা। জেলা গেজেটিয়ার। ও ' ম্যালি 
রাঢ় ভাবনা পত্রিকা। সম্পা সৌরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। 
কৌলাল পত্রিকা। সম্পা স্বপন ঠাকুর 
নিজের লেখা প্রবন্ধ 
-------------------------------------------------------------------

সুপুর ফরাসী কুঠি। কুঠিবাড়ি কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য।

।।সুপুর ফরাসী কুঠি।।

সুপ্রাচীন সেই সুবাহুপুর। 
তার কথায় আজ এখন যাচ্ছিনা। 
তখন সুপুর অজয়ের উত্তর তীরে এক 
   নামী নৌবাণিজ্য কেন্দ্র। 
সুপুরের বিখ্যাত ধর্মপ্রাণ জমিদার আনন্দচন্দ্র গোস্বামী। 
  তাঁর কাছ থেকে প্রায় বারোশত বিঘা জমি 
বিঘাপ্রতি চার আনা খাজনার চুক্তিতে 
১৭৬৮ সালে মন - লি - সিনর নামে এক ফরাসী 
নীল চাষের জন্য গ্রহন করলেন। 
অজয় তীরে এবং গ্রামের মধ্যে তিনি কুঠিবাড়ি নির্মান করালেন। এবং এই কুঠিবাড়ি থেকে ই নীল চাষ এবং নীলের উৎপাদন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু করলেন। 
সুরুল কুঠিবাড়ি ও সেই সময়ের নির্মান। 
এবং সেই জমিও তিনি জমিদার আনন্দচন্দ্রের নিকট থেকেই কিনেছিলেন। মাথায় রাখতে হবে তখন সুরুলের সরকার জমিদার পরিবারের জন্ম হয় নাই। 
এঁদের কথা র আলোচনা পরের পর্বে হবে। 
শ্রী নিকেতনের মেলার মাঠের উত্তরে যে কুঠিবাড়ি সেই কুঠিবাড়ি সমেত জায়গা জমি রবীন্দ্র নাথ কিনেছিলেন। 
রাইপুরের জমিদার পরিবারের দুই ভাই ফরাসী এবং ইংরেজদের সহায়তায় ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন। পরে 'লর্ড'
হয়েছিলেন। 
সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন এবং তাঁর দাদা নরেন্দ্র প্রসন্ন। 
তখন কবিগুরু ও ইংল্যাণ্ডে ছিলেন। নরেন্দ্র কবিগুরু র নিকট থেকে আটহাজার টাকা ধার হিসাবে নিয়েছিলেন। 
পরিবর্তে ঐ কূঠি বাড়ি সমেত জায়গা কবিকে লিখে দেন। 
যদিও বিষয় টি সত্যেন্দ্র র একেবারেই মেনে নিতে পারেননি। 
কেননা রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁদের গুরুভ্রাতা। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের কাছে  ভুবনমোহন এর পুত্র প্রতাপনারায়ন সিংহ মশাই ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। 
তাই পরে সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সুদসমেত পুরো টাকা ফেরত দেন এবং কুঠিবাড়ি ও জমিজায়গা ' ব্রহ্মোত্তর ' দান হিসাবে লিখে দেন। 
বিলাত থেকে ফিরলে জাতিচ্যুত হয়ে ; কলকাতা থেকে এখানে এলে এই কুঠিবাড়ি তে ই দু ভাই উঠতেন। 
রবীন্দ্রনাথ ফেরতের  টাকায় সিংহ পরিবারের সম্মানে  শান্তিনিকেতনে ' সিংহ সদন ' নির্মান করিয়েছিলেন। 
আবার ফিরি ফরাসী কুঠির কথায়। 
  ফরাসী দের এই বাণিজ্য কেন্দ্রটিতে ফরাসী পতাকা উড়ত। 
  সবসময়ের জন্য সতর্ক প্রহরার ব্যবস্থা ছিল। 
যদিও এই ফরাসী পতাকা তোলা নিয়ে ইংরেজ দের সাথে বিবাদ বেধেছিল। ইংরেজ বা ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানিকুঠি মানবে কেন!  তারা দেশ দখল করেছে। 
আইনের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছিল। এবং পতাকা নেমেছিল। 
এই কুঠিবাড়ি থেকে নীল চাষী দের এবং তাঁতিদের দাদন দেওয়া হত। 
মন লি সিনর সাহেব তখনকার দিনে সুতো র তৈরী মোটা থান কাপড় যার স্থানীয় নাম ' গড়ে ' বা ' গড়া' কাপড় এর জন্য মোট ১২৫০০০ টাকা বিনিয়োগ করেন। প্রথম দিকে গোমস্তা বা দালাল দের মাধ্যমে তা দেওয়া হত। পরে নানা অভিযোগ আসায় সরাসরি কুঠিবাড়ি থেকে ' কাগজ ' করে ' সই সাবুদ ' বা টিপছাপ করিয়ে বা জামিনদার রেখে টাকা দাদন দেওয়া হত। ' আদায়' দিতে না পারলে কুঠিবাড়ি র নিজস্ব আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা তারা করেছিল। 
' আড়ং ধোলাই ' কথাটা এসেছে তো এখান থেকেই। স্থানীয় ভাষায় কুঠিবাড়ি মানে ' আড়ং '। আদায় দিতে না পারলেই মার। ' আড়ং ধোলাই '।
আলাদা কিছু নয় - কুঠিয়াল দের চরিত্র। দু এক জন ব্যতিক্রম মাত্র। সব সুখ তাঁরা ভোগ করতেন। ' আড়কাঠি ' র ও অভাব ছিলনা। চাষী দের উপর অত্যাচার অনেক সময় নিজেরা না করে এ দেশীয় দের দিয়েই করাতেন। 
এই বিখ্যাত ফরাসী কুঠি বাড়ি ছেড়ে মন লি সিনর ১৭৭৪ সালে কোথায় যে চলে যান। তাঁর না কি আর খোঁজ ও পাওয়া যায়নি। বেশ রহস্য জনক!  
বন্ধ হয়ে যায় সুপুর কুঠিবাড়ি।
তারপর আবার ফরাসী দের পক্ষে মি: চৌবন ; মি: আরিয়ার ( Messers Chouban and Arrear)  1777 সালে আবার কুঠি চালু করেন।
১৭৯৩ সালে ইংরেজ দের সাথে ফরাসী দের যুদ্ধ বাধল।
ইংরেজ রা সব ফরাসী কুঠির দখল নিয়ে নিল।
আবার সরকারের পক্ষ থেকে সেই মি: চীপ সাহেবের উপরেই ফরাসী কুঠি বাড়ি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হল।
  তবুও প্রায় একশো বছর চলেছিল এই সুপুর কুঠি।
    ১৮৮৭ সালে সুপুরের কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়।

এই সুপুরের অনেক কথা। বোলপুর নয়। সে তখন এক গণ্ডগ্রাম। তার কোন পরিচিতি নাই।
সুপুর আর সুরুল। এরা সুপরিচিত ; বিখ্যাত।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার।  জেলা গেজেটিয়ার। বীরভূম। ও ' ম্যালি।
পত্রিকা। রাঢ় ভাবনা। সম্পা। সৌরেন্দ্র নাথ চট্টোপাধ্যায়
পত্রিকা। কৌলাল। সম্পা স্বপন ঠাকুর। নিজস্ব প্রবন্ধ
---------------------------------------------- এই পর্ব এখানেই শেষ করি। পরের পর্বে সুরুল সরকার বাড়ি। চলবে। সাথে থাকবেন।ধন্যবাদ।
সুপুর কুঠি বাড়ির কোন ছবি দিতে পারিনি। সব ধ্বংস স্তুপ। কিছু নাই

চীপ সাহেবের কুঠি বাড়ি। কুঠীবাড়ি ভিত্তিক ব্যবসা বানিজ্য

।। সুরুল সরকার জমিদার বাড়ি।।
--------------------------------------------------

রাজা ; জমিদার ; বড়লোক ; শাসকের কথা তো বলতেই হবে। এই তো আমাদের ব্যবস্থা। 
১৯০১ সালে এই গ্রামের জনসংখ্যা ১৫৫৮ জন। 
তখন সিউড়ী মহকুমার অন্তর্গত। 
এই গ্রাম কিন্তু পরিচিতি পেয়েছে জন চীপ সাহেবেএবং তাঁর    বিখ্যাত কুঠি বাড়ি কেন্দ্রিক বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড এর জন্য।
তখনকার দিনে তাঁর কুঠিবাড়ি তা ও ছিল দর্শনীয়।
  শুধু বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ই নয়। তাঁকে দেখতে হত সাধারন মানুষের নানাবিধ সমস্যা। বিচার বিভাগীয় কোন ক্ষমতা তাঁর হাতে না থাকলেও তাঁকে আপোষ মীমাংসা র ব্যবস্থা করতে হত। তার জন্য কুঠিবাড়ি র এক প্রশস্ত কক্ষে বসত মীমাংসা সভা।
শুধু কি মীমাংসা। কেউ ধরে এনেছে কোন বুনো জীব। তাঁর চিড়িয়াখানা র জন্য। ইনাম পাবে এই আশায়।
কেউ ধরে এনেছে কোন এক ব্যাটা চোরকে।
আবার কেউ কেউ এসেছে মাঠে জল নিয়ে যাবার জন্যে নালা কাটার বিবাদ নিয়ে।
সবই তাঁকে সামলাতে হত। অর্থাৎ স্থানীয় প্রশাসন বলতে কিছু নেই। তিনি ই হয়ে উঠেছিলেন স্থানীয় প্রশাসক।
   এখানে এসেছেন ১৭৮২ সালে। কমার্শিয়াল রেসিডেণ্ট  হিসাবে। এসেছেন সিভিল সার্ভিস থেকে। ধনী ঘরের ধনী মানুষ। বিশাল সে কুঠি বাড়ি নির্মানে বিনিয়োগ করেছেন এত টাকা। বাগান ; জলাশয় ; নানা জাতের পশু পাখী নিয়ে তাঁর চিড়িয়াখানা। এত এত চাকর ; খানসামা ; নায়েব ; গোমস্তা ; কর্মচারী। ' তিনি বিরাট সাহেব'।মেমসাহেব আছেন। তাঁর ফুল বাগানে খুব শখ। নানা পশুপাখি ভালোবাসেন। অনেক গুলি ছেলে মেয়ে। বেশী  মেয়ে। ছেলে ও আছে। বিশিষ্ট এক বন্ধু মন্তব্যে জানিয়েছেন তাঁর সন্তানসংখ্যা না কি ছিল ১১ টি।
বর্তমানে জীবিত তাঁর এক বংশধর ইংল্যাণ্ডে শল্য চিকিৎসক।  চীপ সাহেব এবং তাঁর বিখ্যাত কুঠিবাড়ি নিয়ে আগের পর্বে লিখেছি। তাই এই পর্বে আর বিশদে যাবনা।
  সেই সময়কাল টা কে ভাবুন একবার। ১৭৭০ অর্থাৎ বাংলা ছিয়াত্তর এর মহা মন্বন্তর। সেই মহা দুর্ভিক্ষে ছারখার হয়ে গেছে দেশ। শুধু দু টি ভাতের অভাবে এত এত মানুষের মৃত্যু।
দেশ বিধ্বস্ত। হিগিনসনের রিপোর্ট অনুযায়ী ৬০০০ গ্রামের মধ্যে ১৫০০ গ্রাম নিশ্চিহ্ন। চাষাবাদের জমি জঙ্গলে ভরে গেছে। চাষ করার লোকেরা আর কেউ বেঁচে নেই। " বীরভূম বন্ধ্যা জনমানবহীন দেশ "। 
জঙ্গল ভরে যাচ্ছে বন্য জন্তু তে।  পশ্চিম ; দক্ষিণ পশ্চিমের জঙ্গল প্রসারিত হচ্ছে পূর্বে। একদা খ্যাত বাণিজ্য কেন্দ্র লাকরাকোন্দা প্রায় জনশূন্য। অজয়ের প্রবাহপথ জুড়ে একই দৃশ্য।
পশ্চিম থেকে নেমে আসছে পাহাড়িয়া ডাকাতদের দল। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে স্থানীয় ডাকাতেরা। সেই সব ডাকাত দলে প্রায় হাজার থেকে তিন হাজার পর্যন্ত দুর্ধর্ষ সব মানুষ। 
দিনে দুপুরে লুঠপাট চলছে। ১৭৮৯ সালে বীরভূম এর অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র ইলামবাজার ভর্তি দুপুরবেলা য় লূঠ হয়ে গেল। বীরভূম এর রাজনগর এর রাজাদের কোন ক্ষমতা ই নেই একে প্রতিহত করার।
সব কুঠিবাড়িতে ই সিপাই দিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। তাঁতিদের নিরাপত্তা র জন্য ব্যবস্থা জরুরী। ব্যবসার প্রয়োজনে ই আবশ্যিক। চীপ সাহেব সহ ইংরেজ প্রশাসন চেষ্টা করছেন।
অত্যন্ত সুরক্ষিত চীপ সাহেবের কুঠিবাড়ি। সদা সতর্ক প্রহরা।
সুরুলে র তাঁতিদের জন্য বা গ্রামের জন্য ও পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এই তাঁতিদের " গড়া কাপড় " দিয়েই তো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবসা আরম্ভ হয়েছে। অনেক তাঁতী ছিলেন। আবার রাইপুরের সিংহ বাবুরা চীপ সাহেবের সাথে ব্যবসায় যোগ দিয়ে তাঁদের আদি বাসস্থান চন্দ্রকোনা এলাকা থেকে প্রায় হাজার ঘর তাঁতিদের  এখানে এনেছেন। সুরুল ; সুপুর ; এর আশেপাশে র নানা গ্রামে তাঁরা বসতি স্থাপন করেছেন। তখনকার দিনে হাজার ঘর তাঁতিদের কাছ থেকে হাজার থান। আর ১০০১ টাকা। সেই সব থান মজুত হবে চীপ সাহেবের কুঠিবাড়ি র গুদামে। নৌ সেনা দের মজবুত পোষাক শুধু নয় ; এই ' গড়া ' কাপড় মানে মোটা সুতোর ঠাসবুনন কাপড়। জল ধরে রাখা যায় এমন ঘন ; পুরু। পাল তোলা নৌকা বা জাহাজের পাল তৈরী র জন্য এই কাপড়ের খুব চাহিদা ছিল।
এই ব্যবসার টানে ই হোক আর গুরুদেবের পরামর্শেই হোক খুব ই সাধারন অবস্থার ' কোঁয়ার' সদগোপ সরকার পরিবারের পূর্বপুরুষ ভারতচন্দ্র সরকার তাঁর গুরুদেব বাসুদেব ভট্টাচার্য মহাশয় এর নির্দেশে এই সুরুল গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করলেন। সে অষ্টাদশ শতকের প্রথম ভাগে। তাঁর স্ত্রীর নাম বিমলা। আদি পদবী ঘোষ। আদি বাসিন্দা বর্ধমানে র নীলপুরে।
তাঁর পুত্র কৃষ্ণহরি। কৃষ্ণহরি র তিন পুত্র। যাদবেন্দ্র ; মাধবেন্দ্র ; কালীচরণ। এই যাদবেন্দ্র ই বড় তরফ। মাধবেন্দ্র ছোট তরফ।
কালীচরণ বড় তরফের সাথেই যোগ দেন।যাদবেন্দ্রের দুই পুত্র।ব্রজবল্লভ আর রাজবল্লভ।  এই ব্রজবল্লভের পাঁচ পুত্র। তৃতীয় শ্রীনিবাস সরকার ই ব্যবসায়ে খুবই সাফল্য লাভ করেন। 
সুরুলের সরকার বাড়ি ও প্রথমে কাপড়ের ই ব্যবসায়ী ছিলেন। তারপর আশানন্দ সরকার ; গুরুচরণ সরকার নীল ব্যবসায়ে নামেন। আশানন্দের তিনটি নীল কুঠি ছিল। 
নীলের ব্যবসা যথেষ্ট লাভজনক। সেই লাভের আশায় আশানন্দ  যথেষ্ট বিনিয়োগ করেছিলেন। উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরী করেছিলেন। লাভপুর এর নিকটে মস্তুলী গ্রামের কুঠি টি যথেষ্ট গুরুত্ব পূর্ণ ছিল। এছাড়া ঈশ্বরপুর ( আমোদপুর) ; কুরমিঠা ; বড়জোড়া ; চিতুড়া ; ইলামবাজার প্রভৃতি গ্রামে তাঁর নীল ; চিনি ; চাল ; গড়াকাপড় উৎপাদন ও সংগ্রহ করার জন্য নিযুক্ত গোমস্তা রা কুঠিবাড়ি তে মাল গুদাম জাত করতেন।
চীপ সাহেবের সাথে ব্যবসা আবার স্বাধীন ভাবে ব্যবসা। বিদেশে মাল চালান করতেন। কলকাতা বন্দরে ; বাজারে তাঁদের নিযুক্ত দালাল ; কর্মচারী রা ছিলেন। তাঁরা ই মালের দরদাম ওঠানামা র দিকে নজর রাখতেন এবং বিক্রি করতেন।
' সুরুল সরকার বাড়ির নথিপত্রে ' আশানন্দ সরকার এবং শ্রী নিবাস সরকারের নাম বারবার এসেছে।
  বিশ্বভারতী র সংগ্রহে সরকার বাড়ির বহু নথিপত্র স্থান পেয়েছে। এবং বিশ্বভারতী গবেষণা প্রকাশন সমিতি দ্বারা
" সুরুল নথি সংকলন প্রথম খণ্ড " প্রকাশিত হয়।
সেই সময়কে ; সমাজ  ইতিহাস কে  জানতে বুঝতে এই সংকলন এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। 
সেখান থেকে অনেক কথা ই জানতে পারা যায়।
আপনাদের ও শোনানো যায় অনেক কথা।
  এত কথা। যাই হোক এ তো চলবে। দেখা যাক কতটা শোনানো যায়। এখানেই এই পর্ব শেষ করি। সাথে থাকবেন।
    ( চলবে)। --------------------------------© প্রণব ভট্টাচার্য। 

গ্রন্থ সহায়তা। জেলা গেজেটিয়ার। ও ম্যালি 
কৌলাল পত্রিকা। সম্পা স্বপন ঠাকুর 
রাঢ় ভাবনা পত্রিকা। সম্পা সৌরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় 
নিজস্ব প্রবন্ধ

কুঠি বাড়ি ভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্য।

।। কুঠি বাড়ি কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য।।
---------------      ----------------     ---------------

W.S. Sherwill সাহেবের সার্ভে রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে
বীরভূম জেলায় মোট ২১ টি নীলকুঠী ছিল।
বীরভূম এর অন্যতম ইতিহাসকার গৌরীহর মিত্র মশাই ১৭ টি নীল কুঠির সন্ধান পেয়েছিলেন।
শেরউইল সাহেবের রিপোর্ট - আকবরশাহী পরগনায় -১ টি বারবক সিংহ পরগনা য় -১ টি ; প ভুরকুণ্ডা -৩ টি ; তালুক হুকমাপুর -১টি ; তপ্পে হরিপুর - ৩ টি ; খটঙ্গা - ১ টি ; তপ্পে কুণ্ডহিত কড়েয়া -২ টি ; তপ্পে মহম্মদাবাদ -১টি  প বড়রা ১ টি
প সুপুর ১টি  পরগনা সেনভূম ৬ টি। মোট ২১ টি।
১৮৭৩ সালের রিপোর্টে পরগনা ইটাণ্ডা য় ১ টির উল্লেখ আছে। তাহলে ২২ টি হয়। আবার কোথাও কোথাও এটির উল্লেখ দেখছিনা।
আমার বিশেষ আগ্রহ পরগনা সেনভূমের ৬টি নীল কুঠি নিয়ে।  এ নিয়ে বিস্তৃত  লেখার ইচ্ছে আছে। কিছু খোঁজ খবর নেওয়া বাকী আছে।
  গৌরীহর মিত্র মশাই খয়রাশোল ; শিমূলিয়া ; হরিশকোপা ; বিষণপুর ; ইলামবাজার ; সুপুর ; দড়ি ; মৌরেশ্বর ; সেকপুর ; নূতন গ্রাম ; আলিনগর ; দ্বারোন্দা ; ভুরকুণ্ডা ;ভবানন্দপুর ; মাস্তুল ; গাঙ্গপুর ; পাঁচসোওয়া ; সিউপুর এই সব গ্রামে নীলকুঠী র সন্ধান পেয়েছিলেন।
শুরু করেছিলেন চীপ সাহেব। আর উপযুক্ত সহযোগী হিসাবে পেয়েছিলেন স্কটল্যান্ড থেকে আসা ' স্বাধীন বণিক ' আরস্কাইন সাহেব কে। বীরভূম এর নীল চাষ বা কারবারি মানে ই এই দু জন। জেলা গেজেটিয়ারে  ও' ম্যালি সাহেবের রিপোর্ট  ১৭৯৫ এ শুরু করেছিলেন চীপ সাহেব তাঁর সুরুল কুঠিতে আর আরস্কাইন সাহেবের বীরভূমে ছিল ৮ টি কারখানা আর
জেলার বাইরে আরও ১০ টি কারখানা।
সুরুল আর ইলাম বাজার এর কারখানা গুলি ই ছিল
আকারে আয়তনে বড়।
একমাত্র সুপুর কারখানা একশো  বছর ধরে চলেছিল। ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত।
  মেসার্স আরস্কিন কোম্পানি ই ছিল বীরভূমে র সবচেয়ে বড় নীল উৎপাদক কোম্পানি।
ইলামবাজার এর কারখানাতেই উৎপাদিত হত ৭৫ মন নীল।
বেজুরা আর হারমুনি তে ৭০ মন। আর সুপুরে ২০ মন।
এই এরস্কিন কোম্পানি র অধীনে ১৪৬২৫ বিঘা জমিতে নীল চাষ হতো। এর বাইরে জঙ্গলমহলে ২১২৫ বিঘা জমিতে।
এই জঙ্গল মহলে ছিল তিনটি নীলকুঠী।
এগুলির সম্পর্কে পরে লেখার ইচ্ছে আছে।
বীরভূমে সাতটি কারখানায় ৪৫ টি চৌবাচ্চায় কাজ করত ১০০ জন স্থায়ী শ্রমিক এবং ৩৯ জন অস্থায়ী মজুর।
এছাড়াও কাজের তদারকি হিসাবপত্র রাখা  কুঠির নিরাপত্তা দেখার জন্য ছিল ১ জন সরকার ৬ জন গোমস্তা  ২২ জন মুহুরি  ৩৯ জন তাগাদাদার ৩৫ জন পিওন ও চৌকিদার।
বেশী র ভাগই দেশীয় স্থানীয় মানুষ। এঁদের সব নাম গুলো যদি পাওয়া যেত! জেলা র আর্কাইভে আছে কি না জানিনা।
গবেষক রা ভেবে দেখবেন। একটা চমৎকার কাজ হতে পারে। আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি র উপরে। মাননীয় রঞ্জন গুপ্তের কাজ মাথায় রেখে ও বলছি।
  ইচ্ছে করে। কিন্তু আমার উপায় নেই।
এই কোম্পানি র কারখানা গুলো তে সর্বমোট ৩৮০ মণ নীল উৎপাদিত হত।
আগে বললাম যে নাম গুলি যদি পাওয়া যেত। একটি বড় নাম কিন্তু পাওয়া যায়। সে নাম সুরুলের বিখ্যাত আশানন্দ সরকারের ছেলে নিধিরাম সরকার। তিনি আরস্কিন সাহেবের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে জনের  কোম্পানি তে মাধাইপুর কুঠিতে গোমস্তা র কাজ করতেন। খুবই গুরুত্বপুর্ণ কাজের দায়িত্ব ছিল তাঁর উপরে।
তবু আমি ভাবি সুরুলের বিখ্যাত আশানন্দ সরকারের ছেলে নিধিরাম বাবু চাকরী করছেন ইংরেজ দের অধীনে।
ঘটনা টি তো আমার মনে হয় ইঙ্গিতবহ।
আরস্কিন কোম্পানি প্রথম থেকেই কোন চাষ জমি কেনেননি।
জমিদার দের কাছ থেকে বার্ষিক চুক্তির মাধ্যমে জমি নিয়েছেন। নীল কুঠির সমস্ত কাজ হত চুক্তি ভিত্তিক।
সরাসরি মজুর নিয়োগ ও হতনা। হত মজুর সর্দারের মাধ্যমে।
চাষী দাদন পেত। নানা কুঠিতে দাদনের রেট বিভিন্ন। ইলামবাজার কুঠি তে সব চেয়ে বেশী। বিঘাপ্রতি ৪ টাকা ৩ আনা।  চাষী দাদনই পেত। তার আবার জামিনদার ছিল।
  সব ক্ষেত্রেই চুক্তি। কাগজ কলম। চুক্তির খেলাপ হলে চলবে না।  কারখানার জ্বালানী সরবরাহের জন্য উপযুক্ত চাষী বা ব্যবসায়ী র সাথে চুক্তি। ' আউরী ' মানে খড়ের আঁটি। খড় জ্বালানী হিসাবে ব্যবহৃত হত। সাপ্লায়ারের সাথে চুক্তি।
  যারা বীজ পাহারা দার বা নীলের বড়ির কাটন দার সবার সঙ্গেই চুক্তি। আবার সব নিয়োগের পিছনে ছিল উপযুক্ত প্রভাবশালী মানুষের সুপারিশ।
  আদিবাসী সাঁওতাল ; কোঁড়া শ্রমিকদের বিশেষ কদর ছিল।
  এদের ঘরের মহিলারা ও কুঠিবাড়ি র নানা বিধ কাজে নিযুক্ত ছিল।
একটি উদাহরণ এখানে আমি দিই। পরে এ নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে।
ইলামবাজার বিরাট কুঠি। সেই কুঠিতে কাজ করার জন্য কোঁড়া  শ্রমিক। ইলামবাজার এর কাছেই পায়ের গ্রামে বিরাট কোঁড়া বসতি আছে। নীল ডাঙায় আদিবাসী সাঁওতাল পরিবার গুলির আজও বসবাস।
আচ্ছা এই যে চুক্তি প্রথা। তার কি সত্যি কোন পরিবর্তন ঘটেছে।  না । বরং বাড়ছে। আগামী তে আরও বাড়বে।
চুক্তিভিত্তি সর্বস্তরে। এবং গোটা টাই হয়ে যাবে অসংগঠিতক্ষেত্র।
আবার একটা উদাহরণ দিই। এখনকার ইঁট ভাঁটা গুলিতে সমীক্ষা চালালে বোঝা যাবে। কত চুক্তির খেলা। মজুর সর্দারের মাধ্যমে মজুর নিয়োগ। মজুরের কাছ থেকে মজুর সর্দার তার ভাগ বুঝে নেয়। তখনও নিত। এখনও নেয়।
যাঁর সুপারিশে চাষী দাদন পায়। সে চাষী র কাছ থেকে বুঝে নেয় তার ভাগ। আবার জামিনদারের যিনি জামিনদার যদিও তিনি কোথাও বাঁধা নেই। তাঁর গদিতে ঠিক নগদা পৌঁছে যায়।

যাক আর দীর্ঘ না করাই ভালো।  ইঁট ভাঁটার অর্থনীতি নিয়ে কেউ  কাজ করেছেন কি না জানিনা। কিন্তু ভালো কাজ হতে পারে। ভেবে দেখবেন নবীন গবেষক।
ইঁট ভাঁটা মালিক জানে মাটি সত্য। মাটিই টাকা। সে সঠিক বোঝে। তার ভাঁটায় মাটির অভাব হয়না। সে জানে মাটি সংগ্রহের কৌশল।  তাঁর কোন কিছুর অভাব ঘটেনা। জ্বালানী কাঠ বা কয়লা ঠিক ঠিক সংগ্রহ হয়।
এখানে ও প্রতি স্তরে চুক্তি। কত চুক্তির খেলা।
   ব্যবসা মানেই চুক্তি।
   আর চুক্তিবদ্ধ কত জীবন। এই ই জীবন।
   --+--------------------------------------------------© প্রণব ভট্টাচার্য

গ্রন্থ সহায়তা।  জেলা গেজেটিয়ার। বীরভূম। ও ' ম্যালি
রাঢ়ভাবনা পত্রিকা বিশেষ সংখ্যা। নীল গালা রেশম শিল্প।
সম্পা সৌরেন্দ্র নাথ চট্টোপাধ্যায়
কৌলাল পত্রিকার প্রথম প্রকাশন বঙ্গসংস্কৃতির অঙ্গনে
সম্পা। স্বপন ঠাকুর।
নিজস্ব প্রবন্ধ।
------------------------------------------------------------
ছবি। প্রিয়ব্রত সাহা।
বিণায়ক  দা  (সেনগুপ্ত) 
 আমার তোলা।