Saturday, 1 March 2025

রেডিও ঃ স্মৃতি চারণ

।।  রেডিও  ঃ  স্মৃতিচারণ।।     প্রণব ভট্টাচার্য

ভোর    ভোর হয়ে জেগে ওঠে  বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কণ্ঠে
পবিত্র সকাল   শুদ্ধ স্মরণ  তর্পণ। 
তাহার নামটি রঞ্জনা  সেই মায়াময় দুই কণ্ঠ। 
অজিতেশের  মধুসূদন  গোপাল অতি সুবোধ বালক
জীবনকে ভরিয়ে দিত  শান্তি বারি সিঞ্চনে। 
রেডিও নাটকের স্বর্ণ সম্ভারে ধনী  আকাশবাণী কলকাতা। 
  ভোলা অসম্ভব তাই ভোলা যায়নি। 
মুক্তিযুদ্ধে  ওপার বাংলার মরণপণ লড়াই
এপার থেকে প্রেরণা জোগায় দেবদুলালের ভাষ্য। 
  আমি ইডেন থেকে বলছি   যেন হাইকোর্ট প্রান্ত দৃষ্টি পথে
   ভেসে ওঠে  অজয় বসু    কমল বাবু দের  ধারাবিবরণী তে। 
   গানের ভুবন ভরা  রাগে অনুরাগে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাতে। 
   প্রকৃত পরিবেশনে  সংবাদে ছিল সিদ্ধ সার্থকতা। 
    এখানেই ছিল মানুষের আস্থা। রেডিও।
   আকাশবাণী। আকাশবীণার ঝংকার
   ছিল তো সবই  ভবন টি ও দণ্ডায়মান। 
    কিন্তু আর আমাদের ঘরে ঘরে
  মারফি ; ফিলিপস ; বুশ  দের সেট কবেই আবর্জনা
   আর কত ছিল  সন্তোষ  ইত্যাদি
   আমাদেরও বাড়িতেও অবশেষে একটা সেট এসেছিল। 
   সে টা দাদু কিছুতেই অন্যকে হাত দিতেই দিতনা। 
   একটা অবলম্বন হয়ে উঠেছিল কবে যেন
   ভালো যা কিছু শোনা   ভালোকে চিনতে শেখা
   শ্রবণ আনন্দ প্রক্রিয়া   তার প্রসাদ গুনের আস্বাদন
   যদিও তা ব্যক্তিগত অনুভব সঞ্জাত
   গরমের উঠোনে আমরা সবাই চাটাই পেতে বসে
   একসাথেই শুনতাম। 

বোলপুরের স্টেশন রোড ধরে হেঁটে যাওয়া কলেজ ছেলেরা
এক দোকান থেকে আর এক দোকানে  টেস্ট ম্যাচের স্কোর
জানতে জানতে কলেজ পৌঁছানো
কেউ স্কোর জানাতে বিরক্ত হতনা কিন্তু সে সময়

  আমাদের এই পাড়া গাঁয়ে রেডিও সে তো এক বিরাট ব্যাপার। 
বটূ কোঁড়া কি করে যে অসাধ্য সাধন করেছিল
  ফিলিপসের একটা টাইগার সেট কিনে
  কাঁধে ক্রশ করে ঝোলানো বাজাতে বাজাতে
  গ্রাম ঘুরতে বেরুত      -  'শোন হে সবে
  দ্যাখো কিনেছি আমি ' । এই ই আমার সব।
  সবাই জানে সে একা। বৌ মরে গেছে। ছেলেপুলে নাই
  সারাদিন রাত বাজত তার উঠোনের 
নারকেল গাছে পোঁতা  পেরেকের আঁংটা থেকে
  - এই নে শোন গোটা পাড়া '
কোন কিছু তার বাদ নাই কৃষি কথা কি আদিবাসী গান
দিন শুরু হত তার রেডিও তে  
রাতের আকাশের তারা দেখতে দেখতে
ঘুম না আসা পর্যন্ত ।  ঘুম আসা তো সহজ নয়
পেট পুরে তাল তাড়ি খেলে তবে কিছুটা হয়। 

নিজেকে শেষ করবই  বললে তো আর কিছু
করার থাকেনা। প্রণোদিত আত্মহত্যা করেছে
আমাদের রেডিও   আকাশবাণী কলকাতা কে
ধরা আমাদের সম্ভব নয়     না হয় দেড়শ  মাইল দূর
আকাশবাণী শান্তিনিকেতন  এই সেদিন ও কি সুন্দর
আনন্দধারায় গান শোনাতো   সে হারানো সুখস্মৃতি
বাঙলা গানের ক্রমবিবর্তন টা কে গান দিয়েই ধরুন না
জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ বা বিমান মুখোপাধ্যায় 
এর মতো মাপের 

সঙ্গীত গুণী মানুষেরা যদি বুঝিয়ে দেন
শেখা হত  জানা হত   ঋদ্ধ হতাম
একবার এক আলাপচারিতায় বলেছিলাম
  এক আধিকারিক কে। সাথে ছিল সঞ্চালিকা অপরাজিতা।
  নিজেরও  সুখস্মৃতি  - এই আকাশ বাণী শান্তিনিকেতন
  থেকেই আঞ্চলিক ইতিহাস এর এক চর্চাকারী হিসাবে
  যখন বলেছি  আর পরিচিত জনেরা বলেছেন
আপনাকে শুনলাম রেডিও তে
সে এক অন্যরকম ভালোলাগা
চমৎকার বিষয় বাছেন সঞ্চালিকা অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়।
  সে দিন বুঝি হারালো! হায়!
কিন্তু মানুষ যে আবার রেডিও তে ফিরতে চাইছেন
সারা পৃথিবী জুড়ে ই। 
দুর্যোগ বিপর্যয় মোকাবিলা য় রেডিও ই তো ভরসা।
  টিভি আজ দীন। প্রকট তার দৈনতা।
এতবড় বাংলাসাহিত্য। ব্রাত্য বাঙলা টিভি সিরিয়ালে।
সেখানে চলছে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম নামক       অপকর্ম।
বাঙালী  রুচির নিম্নগামিতা ঘটানো হচ্ছে সুকৌশলে।
ভদ্রলোকেরা মুখ ফিরিয়েছেন অনেক দিনই
ঘরের মেয়ে বৌ রা আর কি করে! চোখ মেলে থাকে
  দেখে একটা মেয়েই রবিনহুড। একা সম্পূর্ণ একাই
সব সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছে বাহান্ন জনের এক পরিবারের।
আবাসন গুলো তে বৃদ্ধ এক আর বৃদ্ধা। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

রেডিও কি আবার স্বমহিমায় ফিরতে চায়
প্রশ্ন তো নিজেকেই করতে হবে রেডিও কে
এখনও যাঁরা রেডিও কে ছাড়েন নি  বরং জড়িয়ে ধরে আছেন
তাঁদের কে তো আপনারা চেনেন না
তাঁদের কে চিনুন।
তাঁদের কথা শুনুন।
আকাশবাণী আবার বেজে উঠুক আমাদের ঘরে ঘরে।
কর্তারা ভাবুন রেডিও কে কি করে জনপ্রিয় করা যায় আবার। মতামত নিন গুণী জনদের। 
আমার ধারণা রেডিও বাঁচতে পারে তার পুরনো দিনকে অবলম্বন করেই। 
রেডিও শুনেই বড় হয়েছি। নিজের একটা ছোট সেট ছিল মার্ফি মিনি। বালিশের পাশে নিয়ে শুনেছি। 
ছোটবেলায় কলকাতা গেলে, আকাশবাণী ভবন টা আমাকে খুব টানত। যদি ভিতর টা ঘুরে দেখা যায়। কি ভাবে সব হচ্ছে! প্রবল কৌতুহল। 
কখনও ভাবিনি এই ভবনের ভিতরে যাব। 
এই বয়সে এসে আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী হিসেবে ডাক পেয়ে বড় আনন্দিত হয়েছি। 
ধন্যবাদ জানাই মাননীয় শ্রী সিদ্ধার্থ মাইতি বাবুকে। 
কয়েক বার ডাক পেয়েছি। হোক না ন মিনিটের কথিকা। বুঝেছি ন মিনিট সময় কম নয়।
আমার মনে হয় রেডিও কে আরও জনপ্রিয় করে তোলা যায়। ভাবতে হবে। হয়তো অনেকে মোবাইলেই শোনেন। আবার অনেকে পারেন না
অনেক বয়স্ক স্মৃতিকাতর মানুষ আছেন। 
তাঁদের জন্যই শোনান না যা কিছু আমাদের সম্পদ। আপনাদের ভাণ্ডারে আছে বিবিধ রতন। 

------------ ------------ ------------ ------------ ------------  সমাপ্ত।
লেখক। প্রণব ভট্টাচার্য। আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক। ক্ষেত্রসমীক্ষক। প্রাবন্ধিক।
গ্রাম। সাতকাহনিয়া। পোষ্ট। বনকাটি। ৭১৩১৪৮। থানা। কাঁকসা। জেলা। পশ্চিম বর্দ্ধমান। ফোন। ৮২৫০৭৬৭৫০৭।
#akashbanishantiniketan 
#akashbanikolokata
#akashbanimoitri
#prasarbharti

No comments:

Post a Comment