Saturday, 22 March 2025

গা ছমছম (২ য় পর্ব)

।। গা ছমছম।।
  আমি নিজে চোখে দেখলাম। যজ্ঞ ডুমুর গাছ টার তলায় বাঁধের উপর বসে  গঁড়াই। সেই ছোট হাঁটু পর্যন্ত সাদা ধূতি।
নদীবাঁধ একটু আগেই বাঁক নিয়েছে উত্তরে।
কোনে একটা নিম গাছ।
আর একটা বড় হয়ে ওঠা কুলগাছ। তার নীচে পড়ে আছে কত ভাঙা ইঁটের টুকরো, মাটির ঢ্যালা।
জিয়ল গাছের নীচে দিয়ে পায়ে চলা পথ চলে গেছে ' গই মানে চওড়া নালা পার হয়ে  ভুলোকালী তলার বিরাট পাকুড় গাছ টার পাশ দিয়ে পুব দিকে
কয়া মাঠের দিকে। মেঘনালী নামের এক মাঠ  নালা গিয়ে মিশেছে রূপাইচণ্ডী তলার ' রূপাই দ ' য়ে। মানে দহে। সেই নালার ধারে ছিল কত কেয়া গাছের ঝাড়। কেয়া থেকে হয়ে গেছে কয়া। মাঠনাম। ভুলোকালী তলার ঐ বিশাল পাকুড় গাছ আর তার নীচে চারপাশে ঘণ কাঁটা ঝোপ।
ঐ জায়গা পার হতে গেলে - গা য়ে কাঁটা দেবেই। বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে যাবেই।
নদী বাঁধের পশ্চিম ধারে বিরাট এক শিমূল গাছ। শ্মশান।
পাশে নদী। অজয়। তার পাড়ে ঘন পলাশবন। কুলঝোপ।
পাশে ভাঙা বাঁধ। আগে বাঁধ ছিল আরও ভিতরে। ভেঙেছে সে
কোন কালে। তারপর আবার বাঁধ তৈরি হয়েছে।
পলাশ বনে ঝিঁঝিদের একঘেয়ে আওয়াজ।  কুলঝোপে জোনাকি দের মেলা। থেকে থেকে শিয়ালের হাঁক। ওরা আছে
বাঁধের আরও নীচে।
বাঁধের উপরে চোখ জ্বলজ্বল করছে। যে জানেনা সে ভয় পাবেই। গোবরথুপথুপি পাখি। কিছুতেই নড়েনা। চোখ অন্ধকারে জ্বলে। আলো পড়লে জ্বলন্ত আগুন।
পরদিন গাঁয়ে তিন চার জায়গায় জটলা জমেছে।
- না, বুঝলি। সত্যি। কাল  লেবু, ভোঁটা, পদ রা মাছ ধরতে গিয়েছিল। এই সময় ভালো মাছ ওঠে। দহে অনেক গুলো বঁড়শি ওয়ালা  তগি ফেলে। বড় দাঁড়া। মাছের ভালো চার।
বচ, একাঙ্গি, পচুই মদের তলানির ভাতের ডেলা, সব ভালো করে মাখানো।  ভালো মাছ লাগে। বড় বড় বোয়াল, বাণ, বা কেনো ও লেগে যায় কোন কোন দিন। আর কালবাউস, কাৎলা,  মিরিক, রুই সবই দ ' য়ে আছে।
ওরা গই  এর পাড় ধরে গিয়ে বাঁধে উঠতে যাবে তখনই দেখেছে।
হ্যাঁ। গঁড়াই। বসে আছে বাঁধের উপরে। গঁড়াই ই বটে।
কয়েকদিন আগে মেয়ে গঙ্গা কে একা ফেলে ভুতু কুলু পরপারে গিয়েছে। এই শ্মশানে ই তাকে দাহ করা হয়েছে।
এই জগৎ সংসারের প্রতি তার খুব মায়া ছিল। মা মরা মেয়ে
গঙ্গা। কিছুটা ল্যালাভোলা। তার মা মানে গঁড়াই এর স্ত্রী, সে তো কবেই গেছে এই ধরাধাম ছেড়ে। এখন অবস্থা ও খুব শোচনীয়। ছোট্ট একটা  মুদির ডালি  দোকান চালিয়ে কোন মতে
সংসার চালানো। কিন্তু একদিন অবস্থা মোটামুটি ভালোই ছিল। কিছু জমিজায়গা ছিল। ঘরে ঘানি ছিল। মাটির উপরকোঠা ওয়ালা ঘর ছিল। ডাঙ্গাল গ্রামে তাঁদের স্বজাতি রা আছে। কিছুটা দূর সম্পর্কের আত্মীয়তা।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া র পরে সামনের কূয়োর চাতালে বা বেড়ের উপরে বসে বিড়ি টানতে টানতে গঁড়াই কত কথা ভাবত। দু একটা গরীব ঘরের ছেলেকে পড়াত। লেখা শেখাতো। বর্ণপরিচয় এর প্রথম ভাগ বা বড়জোর দ্বিতীয় ভাগ। খাঁদি মাল তার ঘরের কাজকর্ম করে দিত। তার ছেলে পদ মানে শ্রীপদ  কিছুটা লিখতে পড়তে শিখেছিল। বিরাট লম্বা
উঁচু পুরু চেহারা হয়েছিল পদর।
- উঁহু বুঝলি জগতের মায়া কাটাতে পারেনি রে গঁড়াই।
- ঐদিকে ই তো যেতে হবে। বাঁধের উপরে বসে আছে যে -
- তা হলে এক কাজ কর দিকি। শুকনো তালপাতা বা ডালপালা খুঁজে দ্যাখ। আগুন জ্বালা।
- আগুন দেখলে  দ্যাখ কোথায় পালাবে।
শুকনো শর কাঠি এদিক ওদিক থেকে জোগাড় করে, হাতের ছোট্ট চৌকো লণ্ঠন টা থেকে আগুন জ্বালাতে গিয়ে লণ্ঠন টা ই গেল নিভে।
- না। আজ লক্ষন ভালো নয়। চল আজ ফিরে যাই।
- সে না হয় হল। ফিরেই চল। কিন্তু কাল কি খাবি
মাছ বিচেই তো কিছু চাল, ডাল, নুন ঝাল
সেই ভাবনা ভাবতে ভাবতে ই গাঁয়ের দিকে মুখ করল তারা।
  -  কিন্তু কাল যদি আবার দ্যাখা দেয়
- বুঝলি কাল বাঁধের উপরে যজ্ঞিডুমুর গাছটার তলায় চ্যাঙ মাছ পোড়া রেখে দিয়ে যাব। দেখবি ঠান্ডা হয়ে যাবে।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------
আজ দিলাম পরবর্তী অংশ। 
তারপর - 

No comments:

Post a Comment