Saturday, 1 March 2025

গোপভূম কথা।। কাঁ কসা রাজবংশ

গোপভূম কথা ও কাহিনী।।
কাঁকসা রাজবংশ -
এই বংশের আদিপুরুষ  রাজপুতনা থেকে আগত শিবভক্ত
কঙ্কসেন রায় বা রাও। তাঁর পুত্র কনকসেন। ঐ পুত্র প্রতাপাদিত্য। প্রতাপাদিত্য র সাত পুত্র। তিনজনের নাম পাওয়া যায়। তাঁরা  যথাক্রমে  ভবাণিপতি ; পৃত্থ্বীধর ; শত্রুভাল।
ভবাণীপতির পুত্র সুরেন্দ্রনাথ রায়।

পৃত্থ্বীধরের সাত পুত্র। অন্যতম পরমানন্দ রায়।
কাঁকসা রাজবংশ বহিঃশত্রুর, সম্ভবত সৈয়দ মহম্মদ বুখারীর হাতে পরাজিত এবং বিনষ্ট হয়।
বংশের বিভিন্ন শাখা নানা দিকে ছড়িয়ে পড়েন।
রাজকুসুম নিকটবর্তী জঙ্গলের মধ্যে যে গড় ছিল যার নাম উৎগড়। সেখানে এক পরিবার বাস করতেন। এই জঙ্গলে আক্রমণ কারী দের দ্বারা উপুর্যুপরি
সাতজন নিহত হয়েছিলেন।  তাই জঙ্গলে র এই অংশের নাম " সাতকাটা জঙ্গল "।
পৃত্থ্বীধরের সাত পুত্র ই পরমানন্দ সহ দেরিয়াপুর
গ্রামে তাঁদের বসতি স্থাপন করেন।
এই পরমানন্দ রায় ; বর্ধমানের রাজা দের এক দেওয়ান ছিলেন। তিনি তাঁর কর্মদক্ষতা র জন্য
পত্তনিদারী লাভ করে  মৌখিরা কালিকাপুর এর জমিদারি পত্তন করেন। পরে ইংরেজ দের সাথে নীলের ব্যবসা এবং অপর শাখা কয়লা র ব্যবসায় প্রভূত ধন অর্জন করেছিলেন।
পরমানন্দ তাঁর পুত্রের নামে মৌখিরা থেকে দক্ষিণের জঙ্গল লাগোয়া উচ্চ ভূমির উপরে
কালিকাপুর এর দুর্গাদালান সমন্বিত  সাতমহলা প্রাসাদ সহ ; দিঘি খণন ; শিবমন্দির নির্মান করান।
বিখ্যাত কালুঘোষের সাত পুত্রের এক পুত্রের কন্যা  শৈব্যা। শৈব্যাকে সম্প্রদান করা হয় রাজা ভল্লুপাদ কে। এঁরা দেরীপুর গ্রামে বসবাস করতেন। শৈব্যার পিতা পরবর্তী সময়ে বৈদ্যনাথ ধাম গিয়ে সেখানে নিজ রাজত্ব তৈরী করেন।
শৈব্যার বংশধরেরা " রায় " পদবী লাভ করেন।
এঁরা সৎমৌলিক হিসাবেই পরিচিত।
কালিকাপুর মৌখিরা র জমিদার বংশের ক্ষয়িষ্ণু উত্তরাধিকারী গণ " রায় " পদবী ই ব্যবহার করেন।
কালিকাপুর মৌখিরা র জন্য প্রসঙ্গ আলাদা প্রবন্ধ দাবী করে। মন্দির এবং প্রাসাদ ময় এমন
যুগ্ম গ্রাম ' হেরিটেজ ভিলেজ " এর মর্যাদার দাবী
রাখে। 
কাঁকসায় কাঁকসা রাজবংশের কোন নির্মানের অবশেষ নাই। কঙ্কেশ্বর শিব মন্দির আছে। মজে যাওয়া, প্রায় পরিত্যক্ত জীবিত কুণ্ড আছে।
সৈয়দ বুখারী , যাঁর দ্বারা কাঁকসা রাজবংশ আক্রান্ত হয়। তাঁর সমাধি আছে কাঁকসার প্রয়াগপুরে।
দিঘি ছাড়া ভালকি তে ও কোন নির্মানের অবশেষ নাই। অমরারগড় থেকে মানকর পর্যন্ত রয়েছে অনেক গুলি জলাশয়।
অমরারগড়ের উত্তরে পরিখা প্রাচীর এর ভগ্নাবশেষ প্রাচীণেরা দেখেছেন। আজ আর কিছু নাই। আছেন দেবী শিবাক্ষ্যা। আর আছে ঘোষ পরিবারের  প্রাচীর বেষ্টিত মন্দির রাজি।
কাঁকসা রাজবংশ ধ্বংস হবার পর নানা দিকে ছড়িয়ে গিয়েছিলেন বিভিন্ন শাখার বংশধরেরা।
বর্তমান প্রজন্ম তাঁদের পূর্বপুরুষ দের নাম ই জানেন না। ইতিহাস তো দূরের কথা।
কেউ কেউ এখন নিজেদের ইতিহাস খোঁজ করছেন। কিন্তু একজন ক্ষেত্রসমীক্ষক হিসাবে দেখেছি উপাদানের অভাব প্রকট।
নিজেদের ঠিকুজি কুলজী ও নাই।
কালিকাপুর মৌখিরা সাক্ষ্য দিচ্ছে অতীত গৌরব
কে। কিন্তু সেখানেও সেই একই সমস্যা।
নাই বংশ লতিকা। নাই প্রাচীণ কোন দলিল।
আনুঃ দুশো বছর আগের ইতিহাস। কেননা মৌখিরা গ্রামের প্রথম শিবমন্দির টি ১২০০ বঙ্গাব্দ নাগাদ নির্মিত হয়। পরবর্তী সময়ে নানা বিধ নির্মান হয়েছে। প্রাসাদ, মন্দির,  জলাশয়,
বাগানবাড়ি ' চাঁদনী ' প্রভৃতি।

অর্থাৎ কাঁকসা রাজবংশের সাথে একটা সম্পর্ক থেকে যাচ্ছে এই জমিদার বংশের।
কাঁকসা রাজবংশের সাথে জড়িত রা কোঙার বা কুমার, এবং রায় পদবী ব্যবহার করেন।
বিনয় ঘোষ বলেছেন " গোপভূম এর সদগোপ রাজবংশের ইতিহাস রাঢ়ের এক গৌরব ময় যুগের ইতিহাস। আজও সেই অতীতের স্মৃতি চিহ্ন
ভালকী, অমরারগড়, কাঁকসা, গৌরাঙ্গপুর প্রভৃতি অঞ্চলে রয়েছে। বাংলার সংস্কৃতির ইতিহাসে
সদগোপ দের দানের গুরুত্ব নির্ণয় করা হয়নি। "
" অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে গোপভূমে যে সদগোপ রাজা রাজত্ব করছিলেন তাঁর নাম শতক্রতু।
১৭১৮ সাল নাগাদ তিনি মারা গেলে তাঁর পুত্র মহেন্দ্র রাজা হন। মহেন্দ্র নিজ রাজ্য বহু দূর প্রসারিত করে ছিলেন। নবদ্বীপাধিপতি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের জীবন চরিতে রাজা মহেন্দ্রর কথা
বিস্তৃত ভাবে লেখা আছে। যখন জগৎ শেঠের
বাড়িতে বাঙ্গলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে সভা আহুত হয়, তখন রাজা মহেন্দ্র একজন
প্রধান উদ্যোগী ছিলেন। নবাবের বিপক্ষে, বিরোধী হবার জন্য তাঁর রাজ্য বর্ধমানের রাজা কর্তৃক আক্রান্ত হয় এবং তিনি পরাজিত হন "।
কুলজি গ্রন্থে র ঐতিহাসিকতায় অনেকে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেননা। জনশ্রুতি ও তাই।
তবু যেখানে ঐতিহাসিক উপাদানের অভাব সেখানে  জনশ্রুতি কে কিছু মূল্য দিতেই হয়।
" ন্যাহ্যমূল্যা জনশ্রুতি "। ইতিহাস লুকিয়ে থাকে তারই মধ্যে। খুঁজে নিতে হয়।
এই প্রবন্ধে মোক্ষদাপ্রসাদ রায় চৌধুরী র " সদগোপ কুলীন সংহিতা " নামক একটি প্রাচীন
পুস্তকের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এই মানুষ টি
ও ' ম্যালি সাহেবের অধীনে জনগণনার কাজ করেছেন। মূলত ethnological। তিনিও সেই সময়েই উপাদানের অভাবে ভুগেছেন।
" সদগোপ " জাতিকে তিনি বর্ণ হিসাবে ' বৈশ্য ' বলেছেন। শাস্ত্র থেকে নানা উদ্ধৃতি দিয়েছেন।
প্রকাশকাল। ১৩২২ বঙ্গাব্দ।
এছাড়া বিনয় ঘোষ এর পশ্চিম বঙ্গের সংস্কৃতি বা
ডঃ অতুল সুর এর " বাঙলা ও বাঙালীর বিবর্তন
পুস্তক টির সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
------------ ------------ ------------ ------------ সমাপ্ত।
লেখক। প্রণব ভট্টাচার্য। আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী।
*- আমার লেখা ' এলেমবাজার নিলামবাজার ইলামবাজার " বই টি তে বিস্তৃত রয়েছে। 
বই টি যদি সংগ্রহ করেন বা পড়েন, দেখবেন নানাবিধ তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। যা একটা ছোট্ট বই এ সাধারণত পাওয়া যায়না। 
হয়তো আপনারা ভাবছেন অজয়ের উত্তরে বীরভূমের ইলামবাজার। তার সাথে কি সম্পর্ক এপারের গোপভূমির। 
মৌখিরা কালিকাপুর এর জমিদার পরিবার নিয়ে বলতেই হত। আর তা বলতে গিয়েই, বাড়তে হয়েছে। 
ইলামবাজার বই টি সংগ্রহ করতে পারেন। অক্ষর যাত্রা প্রকাশনীর আনন্দগোপাল হালদার কে ফোনে অর্ডার দিলেই বাড়িতে বসে বই টি সংগ্রহ করতে পারবেন। তাঁর নং 9474907307. 

* আশা করছি  ' ইছাই ঘোষের দেউল ঃ কথা ও কাহিনী " বই টি ও আগামী বাংলা বর্ষে প্রকাশিত হবে। অনেক কথা আর কাহিনী।

* আসলে কি জানেন এই জায়গা তো খোলা হাট। 
কতভাবে কতজন যে আমার লেখা থেকে তথ্য নিয়ে কত প্রবন্ধ লিখলেন! কোথাও আমার নাম মাত্র উল্লেখ নাই। একজন লিখলেন স্থানীয় এক লেখক। কিন্তু বললেন না সেই লেখকের লেখা থেকেই টুকছি। এই সব নানা কথা। তাই এখানে কি, কতটুকু, লিখব বা বলব ভাবতে হচ্ছে। 
যাই হোক। বাদ দিন

No comments:

Post a Comment