Sunday, 31 August 2025

।।আজ একটু অন্য কথা।।

আজ একটু অন্য রকম কথা বলি 
 কথা তো লতার মতো। 
 আমি এর আগে আপনাদের কাছে বারবার বলেছি এই সকল কথা 
দেখুন আমি খুব সাধারণ মানুষ। লেখাপড়া তেমন হয়নি। যেমন টা হলে মনে করা যেত কিছু একটা বটি। 
 নিজের লেখা বই নাই। 
ISSN  বা  পিয়ার রিভিউড কোন পত্রিকা র সম্পাদক ও নই 
অতি সামান্য এক সাধারণ আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী মাত্র। 
 আবাল্যের ভালোবাসা। ইতিহাস। 
 বলতে পারেন সেই কোন বালক বেলায় আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল  অঞ্জনা নদী তীরে চন্দনীগাঁয়ে    পোড়ো মন্দির খানা গঞ্জের বাঁয়ে 
 জীর্ণ ফাটল ধরা  এককোনে তারি 
অন্ধ নিয়েছে বাসা কুঞ্জবিহারী 
আমার মন কেমন করত      ঐ ভাঙ্গা মন্দির 
 অন্ধ ভিখারি ৷    লেজ কাটা কুকুর  ---
ঐ ভাঙ্গা মন্দির টা আমার বুকে গেঁথে গেছে সেই কবে কার  বালকবেলায় 
ভাঙ্গা মন্দির দেখলে দাঁড়িয়ে পড়ি। 
 এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ছুটে যাই এখনও 
 খুঁজি তার গড়ে ওঠার ইতিহাস 
আবার আজকের করুন দশা 
 আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি টাকে বোঝার চেষ্টা করি 
পত্তন আর পতনের মাঝে তো একটি মহামুল্যবান "ত"।
তার খোঁজ পণ্ডিতেরা জানেন 
 আমি কোন পণ্ডিত নই। একাডেমিক লোক ই নই 
 গবেষক। কোন ভাবেই নই। 
 আমি চেয়েছি আমার চারপাশ টা বুঝতে
 মানুষ । মানুষ ই তো সব। 
 চাই মানুষ তার মাটির কথা জানুক। চিনুক নিজের শিকড়। শিকড় বিচ্ছিন্ন এই জাত 
 যদি সামান্যও পারি। 
কাঠবিড়ালি র মতো 
 মোটা মোটা দামী বই কোথায় পাব। 
 কেনার সামর্থ্য ছিলনা 
অনেক দামী বই  পুরনো মাটির বাড়িতে নষ্ট হয়ে গেছে 
যা গেছে তা গেছে 
আমার এই এলাকা কাঁকসা আউসগ্রাম এর জঙ্গল মহল  ইছাইঘোষ এর দেউল  অজয়ের এপার ওপার নিয়ে ত্রিশ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের জায়গায় আমার ঘোরাঘুরি 
 এখানেই এখন লিখি৷ এই ফেসবুকে র পাতায় 
কেউ আমন্ত্রণ না জানালে কোথাও লিখিনা 
আমার কোন উচ্চাশা নাই 
অনেক সময় ফেলে এসেছি। মনকে ই বলি " তুই ফেলে এসেছিস কারে - মন মন রে আমার 
 তবু আমার লেখা আপনাদের ভালো লাগে 
 চমৎকার সব মন্তব্য লিখে আমাকে প্রাণিত করেন 
 আপনাদের ধন্যবাদ 
 কি করব বলুন গবেষক এর মতো প্রতিটি বাক্যের তথ্য সূত্র দিতে পারিনা 
ভুলে গেছি কোথায় পড়েছি যেন 
রেফারেন্স বই এর খোঁজে কোথায় যাব বলুন 
 কে দেবে আমাকে বই 
এখন দিচ্ছে এই মাধ্যম। পাচ্ছি নানা পি ডি এফ 
 একবার সাময়িক সদস্য হয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের 
 সেণ্ট্রাল লাইব্রেরি তে গিয়েছিলাম দিন কতক 
 আমার দরকার ছিল  মাৎস্য ন্যায় পর্ব 
 একান্তে শুনলাম যে দামী দামী সব বই অধ্যাপক দের দখলে ই থাকে। তাই থাক 
 কোন পণ্ডিত তো আর উপেক্ষিত  অবজ্ঞাত গ্রামের ভাঙ্গা মন্দির টির কথা আপনাদের শোনাবেন না। না কোন গবেষক 
   আমি চেষ্টা করি 
আমি চেষ্টা করেছিলাম একটা পুকুরের নাম কেন 
" সন্ধান "। কেন প্রেমসায়র!  কেন জঙ্গলের মধ্যে এক গ্রাম। নাম তার প্রেমগঞ্জ কি সরস্বতীগঞ্জ! চারিদিকে জঙ্গলের মধ্যে কোথাও কোন মুসলিম নাই। নাম তবু আলী নগর! খুঁজে ছিলাম,  এই সব কথা।  কাহিনী। আমাদের এই কাঁকসা আর আউসগ্রামের জঙ্গল মহলে শতাধিক আদিবাসী পল্লী আছে। তাদের  কথা আর তেমন করে বলা হল কই। আর কি পারব! 
 অনেক পণ্ডিত আমার লেখা পড়েন। 
লাইক ও দেননা। মন্তব্য তো দূরের কথা। ভাবি সত্যিই তো তাঁরা ওজনদার। আমার পোষ্ট তো নূতন কিছু নয়। তাতে লাইক দিয়ে নিজের ওজন কমাবেন কেন - 
 এই আপনারা এখানে যাঁরা আছেন তাঁদের ভালোবাসাই আমার পাথেয় 

কেউ কাউকে মনে রাখেনা 
 আমি চেষ্টা করেছিলাম মাত্র
এই কথাটি কাকে বলব     মনে রেখো

রয়ে গেল আরও কিছু কথা     বাকি 
 আমি যেন  সেই  বাতি ওয়ালা 
 মাটির প্রদীপ হাতে দাঁড়াই    ঘন অন্ধকারে
পথের বাঁকে

অনেক পুরনো পোষ্ট। এই পোষ্ট টি র প্রেক্ষিতে পরবর্তী পোষ্ট টি। 

আপনারা জানেন  যে এই ই আমি। আলাদা করে বলার মতো কিছু নয়। তবু  দিলাম  কেন জানেন 
 আপনারা এই মাধ্যমের বন্ধুরা না হয় আর একটু ভালো করেই চিনুন।

অনেক টা সময় পার হয়ে এলাম। এই সময়কালে অনেক কিছু বদলে গেছে। বদলের কথা বলা যাবে অন্য সময়ে।

* সাধারণ মানুষের জন্য বেশ কয়েকটি পুস্তিকা লিখেছিলাম। এই যেমন  ইছাই ঘোষের দেউল, গড় জঙ্গল কথা, গড়জঙ্গলের দেবী শ্যামারূপা, সাতকাহনিয়া অযোধ্যা বনকাটি র ইতিবৃত্ত, কাঁকসা থানার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ইত্যাদি। 
তেপান্তর মেলা থেকে সে সব পুস্তিকা বেরিয়ে গেছে। 
ইলামবাজার কে বলি আমার দ্বিতীয় ঘর। যদিও সেখানে আমার নিজের কোন ঘর নাই। কিন্তু এই ইলামবাজারের মাটি তে মিশে আছে আমার কৈশোর, যৌবনের অনেক টা সময়। 
তাই লিখেছি ইলামবাজারের অতীত ঐতিহ্য নিয়ে 
একটি ছোট বই ' এলেমবাজার নিলামবাজার ইলামবাজার '। তার প্রথম মুদ্রণের সব কপি শেষ। 
দ্বিতীয় মুদ্রনের চেষ্টা চলছে। 

#allfollowers

আয়। আয়। বড় তাড়াতাড়ি এলি

।। আয়। আয়। 
বড় তাড়াতাড়ি এলি। 
সেই নারীকে আসতে দেখে, কাপালিক মনে মনে বললেন। 
গ্রামের একেবারে শেষ, পূর্ব প্রান্তে, পাশাপাশি তিনটি পুকুর। তারপরেই চাষের মাঠ। তিনটি পুকুরের পাড়েই তিনটি বিরাট বটবৃক্ষ। 
দক্ষিণ দিকের পুকুরটি ঘোষদের। তার দক্ষিণ পাড়ে এই ঝাঁকড়া বটবৃক্ষের তলে কাপালিকের কুঁড়ে। জটাজুট ধারী। দশাসই চেহারা। গৌর বর্ণ। এখন তামাটে। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। আবার মানুষের হাড়ের মালা। সামনে মাটি দিয়ে বাঁধানো বেদী। তার উপরে বসে কাপালিক সাধনা করেন। বেদীর ভিতরে পাঁচটি মানুষের মাথার খুলি। পঞ্চমুণ্ডি আসন। সামনেই গভীর শাল জঙ্গল। 
সন্ধ্যা সমাগত প্রায়। শিবাদের দল জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসেছে। পুকুরে দল বেঁধে জল খাচ্ছে। 
পাশের বামুনপুকুরের পাড়ের বটবৃক্ষ টিতে অসংখ্য বাদুড় আর প্যাঁচার বাস। মাঠের ইঁদুর ধরে খায় আবার 
অধিকারী আমবাগান আর জঙ্গলের নানা ফলের গাছের ফল মূল ও খায়। প্যাঁচা দের দল উড়ে গেল। বাদুড়ের ঝাঁক উত্তরে খেলারামতলা হয়ে উড়ে গেল নদীর ধারে। বাঁধের ধারে বিরাট যজ্ঞডুমুরের গাছ। বড় বড় পাকা ডুমুর বেশ মিষ্টি। 
অনেকের সেখানে বাস। পাকা ডুমুরের লোভে অনেকে এসে জোটে। ভুলো কালী তলার বিশাল অশ্বত্থের কোটরে বাসা অনেক পাখির। বকেরা দল বেঁধে থাকে। এখন সব বাসার নিশ্চিন্তিতে। 
আকাশে একটা ভাঙা চাঁদ ঝুলে আছে। 
কাপালিক তাঁর আসন ছেড়ে জঙ্গলের মধ্যে চলে গেলেন। জানেন সেখানে একটা বেশ বড় ছাতিম গাছ আছে। একটা ডাল তার মাটির দিকে ঝুঁকে আছে। সেদিকেই গেছে গাঁ থেকে আসা সেই নারী। 
গায়ে তার একটা শাড়ি জড়ানো। 
বড় তাড়াতাড়ি চলে গেলি। কাপালিক মনে মনে বলেন।  ঠিকই তাই। সেই নারী কাপড়ের আঁচল দিয়ে গলায় ফাঁস জড়িয়ে ছাতিমের ডালে ঝুলে পড়েছে। কিছুক্ষণের ছটফটানি। তারপর সব শেষ। পড়ে থাকল, গাঁ ঘর। স্বামী, সংসার। 
কিসের জ্বালায় মরল এই নারী। বেনে ঘরের বৌ। 
স্বামী, শ্বশুর দের পয়সার অভাব নাই। ব্যবসার টাকা। নুনের ব্যবসা আবার গুড় থেকে লাল চিনি তৈরী র ব্যবসা।  স্বামী টি দেখতে শুনতে ফুল বাবু। এক নারীতে তার মন ভরেনা। অযোধ্যার বেনে পাড়ায় তার আরও কয়েকজন আছে। এই বৌ ভাবে তারা কি আমার চেয়েও সুন্দরী। 
আমার মতো গায়ের রঙ। এই রকম হলদে উজ্জ্বল ফর্সা। এই রকম শরীর। না হয় তার বাচ্চা কাচ্চা হয়নি বিয়ের অনেক গুলো বছর পরেও। 
গাঁ ঘরে তো নানা কথা থাকবেই। আছেও। “ আঁটকুড়ী “। তার আবার রূপের গিদের “। প্রতিদিনই শোনে। বুকের ভিতর টা জ্বলে যায়। 
কোন কোন রাতে স্বামী ঘরে ফেরেনা। 
‘’ কেন ফিরবে লো ‘’!  কি আছে তোর! ‘’ পারিসনি কেন বেঁধে রাখতে ‘’। দেখগে যা, দত্ত বাড়ির মেয়ে টাকে কি সুন্দর সোনার হার গড়িয়ে দিয়েছে। আর তোর!  ঐ তো তাঁতি ঘরের মোটা একটা শাড়ী।’’
বাউরী ঘরের পাকা  রসবতী বৌ ফুলটুসি বলে, তুই ও দেখিয়ে দে। তোকে তো খুব পছন্দ মালাকার দের 
নন্দ র। যাবি ‘’। শুনলাম তোকে  তো একদিন আটকেছিল।  পেমসায়ের থেকে চান করে উঠে আসার সময়। ভিজে গায়েই না কি জড়িয়ে ধরেছিল! তো যাবি তো বল!  সন্ধ্যে বেলায় তাঁতি বাগানের ধারে আমি থাকব। ‘’
মুখে কাপড় চাপা দিয়ে ছুটে পালিয়ে এসেছে ঘরে। বিছানায় উপুড় হয়ে কেঁদেছে। আবার আমগাছের আড়ালে  ভেজা গায়ে তাকে নন্দ র জড়িয়ে ধরা মনে পড়েছে। বুকে চিনচিনে ব্যথা ধরে গিয়েছিল। 
কতদিন গোপনে ছেলে হবার জন্যে জড়িবুটি র ওষুধ খেয়েছে তমালতলীর বুড়ি মাতামার কাছে। 
“ মাতামা বলেছিল, তোর দোষ না তোর মরদের দোষ “!  আরও অনেক কথা জিজ্ঞেস করেছিল মাতামা। সে উত্তর দিতে পারেনি লজ্জায়। 
কি দাম এ জীবনের। অনেক ভেবেছে সে। অনেক। এই তো নারীজীবন। 
একবার ভেবেছিল যাবে, ঐ কাপালিকের কাছে। 
কিন্তু প্রথমে সাহস হয়নি। ঐ নির্জনে। কাকে নিয়ে যাবে!  কাপালিক যদি ক্ষেপে যায়। শুনেছে মেয়ে দেখলে তার চোখ দুটো আগুনের গোলার মতো হয়ে যায়। সামনে ধুনি জ্বলছে। একপাশে ত্রিশূল গোঁজা মাটিতে। গলায় হাড়ের মালা। একটা নরমুণ্ডের খুলিতে ধুনো জ্বলছে। সে না কি সব খায়। বসুধা থেকে আর এক কাপালিক তাঁর সাথে মাঝে মাঝে দেখা করতে আসে। নিশ্চয়ই কাজের কথা থাকে। কিন্তু কি সে কাজের কথা কেউ জানেনা। বৃদ্ধ নদী তে চণ্ডাল রা মরা পোড়ায়। 
ডিঙি নৌকো পারাপার করে। তাহলে কি কাপালিক কে সেখানে যেতে হবে! মাল দের বলে রেখেছে। খবর দিতে। 
 তাও একদিন, অনেক সাহস সঞ্চয় করে, পাড়ার সম্পর্কে দেওর পাগলা দুলাল কে সাথে নিয়ে যাবার কথা ভাবলো। দুলাল পাগলা বটে কিন্তু মনটি খুব ভালো। সে তার বৌদি র মনের দুঃখ বোঝে। সে জানে বৌদির বর ঘরে থাকেনা। সন্ধ্যে হলেই বেরিয়ে যায়। সারা রাতে ফেরেনা। মদ আর মেয়ে এই তার নেশা। দেদার ফূর্তি ওড়ায়। 
তবু একদিন কাপালিকের কুঁড়েতে গেল। দুলাল কে সাথে নিয়ে। সাধারণত তাঁর কাছ কেউ ঘেঁসেনা। 
ওদিক মাড়ায়না। 
‘’ তোদের সাহস তো কম নয় ‘’। আমার কাছে এসেছিস! ‘’ 
হতভাগিনী সেই নারী পারুলকে কিছুই বলতে হলনা। 
কাপালিক এক এক করে সব বলে গেলেন। 
সে যা বলতে গিয়েছিল। তার মুখ থেকে কোন কথা বের হলনা। 
“ তুই তো আমার অনেক কাছে চলে এসেছিস “। 
আর কটা দিন। অমাবস্যা সামনেই। মুক্তি পেয়ে যাবি। তোর মুক্তি তে আমারও মুক্তি হবে রে মা “
যা আজ ঘরে যা। সবাই কে অবাক করে দিয়ে 
কাপালিক তাকে প্রণাম করে,  মা, মা, করে গগনবিদারী আওয়াজ করতে লাগলো। আর তার সাথে শুরু হল তার উন্মাদ নৃত্য। 
এরা নড়তেও পারছেনা। ভয়ে কেমন গুটিয়ে গেছে। মনে হল যেন কোন অদৃশ্য শক্তি তাকে জড়িয়ে  বেঁধে ফেলেছে। সে নড়তে পারছেনা। 
কিছুক্ষণ পরে কাপালিক বলে উঠলো “ যা, ঘরে যা। এই কটা দিন কাটা। শুদ্ধ ভাবে কাটাবি। অবশ্য স্বামীসংসর্গ তোর নাই। “ শরীর ঠিক আছে তো। “ 
কোন রকমে বাড়ি ফিরে এলো ওরা। কারও মুখে কোন কথা নাই। এই কদিন কারও সাথে কোন কথা বলেনি সে। 
তারপর এলো সেই দিন। ধীর পায়ে সন্ধ্যা নামছে। 
নিজের হাতেই নিজের জীবন বিসর্জন দিল সেই নারী। সেই বেনে বৌ। পারুল।
সে যেন কোন অদৃশ্য টানে। তার মন যেন শূন্য। 
মনে কোন চিন্তা, দ্বিধা দ্বন্দ্ব কিছুই নাই। শরীর টা থেকেও যেন নাই। এ শরীর কার। সে বুঝতে পারলনা কিছুই। 
কাপালিক ঝোপের আড়াল থেকে সবই দেখছিলেন। একবার, ক্ষণিকের জন্য হলেও তার মনে হল একে বাঁচানো যায়। না কাপালিকের মনে
দূর্বলতার স্থান নাই। তার নারীর শবদেহ চাই। 
তার সাধনার বাকী অংশটুকু আজই শেষ করতে হবে। আজ মহা অমাবস্যা। 
তারপর 
গাছ থেকে সাবধানে সেই নারী শবদেহ নামিয়ে 
কাঁধে তুলে নিয়ে এলো তার কুঁড়েতে।
গাছের ডালে বাঁধা থাকল তার শাড়ী র আঁচল। 
নিজেকে তৈরী করে নিল কাপালিক। 
তারপর নারী শবদেহের উপরে পদ্মাসনে বসে সারারাত চলল তার সাধনা। 
সকালে মানুষ জন এসে দেখল। কেউ কোথাও নেই। না কাপালিক। না সেই নারীর শবদেহ। 
------------ ------------ ------------ ------------

* চিত্র। অজয় তীরের এক স্থান। ঠিক সেই এলাকার ছবি নয়।

*কমেন্ট সেকশনে আমাকে ফেবারিট করার যে টেকনিক্যাল পদ্ধতি তা দেওয়া আছে।

** যাঁরা পড়েননি বা পাননি তাঁদের জন্য আবারও ফিরিয়ে দিলাম। এই সময় কালে অনেক নতুন বন্ধু যুক্ত হয়েছেন। পড়ুন। 
#allfollowerseveryone

কার এণ্ড টেগোর কোম্পানি। নারায়ণকুড়ি

কিছু আর নাই। 
কার এণ্ড টেগোর কোম্পানির রাণীগঞ্জ এলাকার নারায়নকুড়ি তে কয়লা উত্তোলন প্রকল্প। 
উদ্যোগপতি দ্বারকানাথ ঠাকুর। 
কোম্পানির অপর সহযোগী উইলিয়াম কার। 
ভারতবর্ষের মধ্যে প্রথম। 
কয়লা উত্তোলন করার উদ্যোগ নিয়েছেন, অন্য দুটি ইংরেজ কোম্পানি। 
Jeremiah Homfray  এবং Erskine brothers। 
এরা প্রতিদ্বন্দ্বী। 
ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ও চাইছিলনা কয়লা উত্তোলনে  একচেটিয়া ব্যবসা করুক 
Carr and Tagore Company. 
সেই পরিস্থিতি তে নিজেদের কোম্পানি চালাতে হয়েছে দ্বারকানাথ ঠাকুর কে। নানাবিধ পরিকল্পনা ছিল তাঁর। 

সংরক্ষিত হয়েছে মথুরাচণ্ডীর পীঠস্থান। 
 চমৎকার মন্দির। 
 পাশে শ্মশান। সামনে দামোদর। প্রায়  শুকনো।  জলধারা বইছে বাঁকুড়া র দিকে। 
 তেঁতুল গাছগুলি জানান দিচ্ছে তাদের প্রাচীণত্ব। 
 ' হলেজ " ঘর টি কে বেঁধে রেখেছে বটবৃক্ষের সহস্র বাহু। হলেজ সম্বন্ধে জানতে সাইনবোর্ড টি পড়ুন।। 
 এখানে সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজ হয়েছে। রাজ্য হেরিটেজ কমিশন দ্বারা এটি হেরিটেজ স্থাপনা হিসাবে ঘোষিত হয়েছে ।  অদূরে  দামোদর। জেটির দেওয়াল টি কিছুটা বেঁচে আছে। খণি এলাকার অফিসঘর টি চাপা পড়ে গেছে। দুটি স্তম্ভ কোনমতে দাঁড়িয়ে আছে। 
 কিছু ছবি দিলাম। দেখুন।
 কৃতজ্ঞতা। হরিনারায়ণ মণ্ডল। সাতগ্রাম

আমার মাতামা

আমার মাতামা। বালকদাসী বৈরাগ্য। 
 আগের নাম যে কি ছিল, তা জানিনা।। 
কোনদিন জিজ্ঞেস ও করিনি। মায়ের আবার নাম কি!  মা । 
 এই সাতকাহনিয়া গ্রামে তার আসা এবং শতাব্দী প্রাচীন নবীন দাস বাবাজীর আখড়ায় স্থান পাওয়া, এক দীর্ঘ জীবন পরিক্রমা। 
আমাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন। 
ছোট তেই মা মারা গিয়েছিল। 
যেই কোলে তুলে নিত সে ই আরেকটা মা হয়ে যেত। দিদিমা কাউকে মানা করত না। 
সে তুলশী বাউরি ই হোক আর মাতামা ই হোক। 
বা অন্য কেউ হোক। গাঁয়ের হলেই হল। 
আমার মাতামা খুব কম বয়সেই এ গ্রামে এসেছিলেন। বিচিত্র জীবন। তাঁর কোলে চেপে হাটে। কিশোরী ময়রার দোকানে একটি বড় রসগোল্লা আমার বাঁধা। আবার তাঁরই সঙ্গে নারানপুর যাওয়া। নদী পেরিয়ে। কোলে নিয়ে জল পার করত। ওপারে অজয়ে এক হাঁটু জল। 
বাগদি দাদুদের দাওয়ায় বসে কাঁসার থালায় শুকনো চিঁড়ে, পাকা আম, গুড়, গাছের কলা আমার জন্য বরাদ্দ। চকচকে ঘটিতে করে জল এনে দিত সদগোপ দের একটা মেয়ে। 
বামুনের ছেলে! 
 মাতামাই কোলে করে জয়দেব কেন্দুলী র মেলা তে নিয়ে যেত। কোটরে বাবার আশ্রমে জায়গা হত। 
বড় হয়েছি। ইলামবাজার হাই স্কুলে পড়তে যাই। 
ইলামবাজার বাউরি পাড়া, শুঁড়ি পাড়ার  ধারে এক প্রাচীন আখড়া। তখন সেখানে হরেকৃষ্ণ বাবাজী 
আখড়াধারী। আমি দাদু বলতাম। কেননা আমার দাদুর সাথে বেশ সখ্য ছিল। দুজনেই বাঁকুড়া র মানুষ। পরস্পরের প্রতি টান স্বাভাবিক। সত্যিই তাই ভাবি মাটির নিজের আকর্ষণ ক্ষমতা আছে। 
ইলামবাজারের বাবাজী ছিলেন ব্রাহ্মণ ঘরের সন্তান। ছোট তেই সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। 
 সোনামুখি আশ্রমের বিখ্যাত সাধু ছিলেন তাঁর গুরু। টুকটাক তাঁর মুখ থেকে মাতামার কথা শুনতাম। মাতামা তো নিজমুখে কিছুই বলতনা। 
পরে এই আশ্রমে আসেন অন্নপূর্ণা মাসীমা। আমার মা মাসী দের বয়সী। অযোধ্যা গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের মেয়ে। মুখোপাধ্যায় পরিবারের বউ। 
অল্প বয়েসেই বিধবা। তাহলে তার আর ঠাঁই কোথা। হয় কাশী না হয় বৃন্দাবন। হয়তো মাতামার বিশেষ আকর্ষণী ক্ষমতা য়  আমার ননুমা বেছে নিয়েছিলেন এই আখড়া কেই। বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন। সঙ্গী ছিল আমার মা। মাসীরা ছোট হলেও যেন খেলার সাথী। খেলার ই তো বয়েস। 
 অনুমা থেকে ননুমা হয়ে গিয়েছিল ছোট বেলায়। তাঁর  কাছে মাতামার কথা কিছু কিছু শুনতাম। সেই গল্প মনে মনে জুড়তাম। আজও জুড়ছি। 
আর কেউ নাই এই তল্লাটে মাতামার কথা বলার। 
খুব ইচ্ছে, যদি পারি  তাঁদের জীবন কাহিনী কে অবলম্বন করে একটা বড় লেখা লিখতে। 
যদি পারি! 
এই ছবি তে মাতামার সাথে যারা বসে আছে তাদের কথা ও থাকবে বৈকি। আরও অনেকের কথা। কত মানুষ এলো, গেলো এই আখড়ায়।

Saturday, 30 August 2025

।।সন্ধ্যা মাসী : এক জীবনের অপচয়

।।সন্ধ্যা মাসী : এক  জীবনের অপচয়।। 
সন্ধ্যা মাসী তুমি এলে। আমাদের ঘরে বেড়াতে। 
 তখন সন্ধ্যা নামছে। বারান্দায় কফির চনমনে গন্ধ পেলে। বললে ‘’ কফি “! 
 আমি কফি খাচ্ছিলাম। তোমাকে শুধালাম, মাসী খাবে এক কাপ। তুমি না বললে। সেদিন যেমন আজও আমার মনে হয়, এক কাপ করে দিলে তুমি খেতে। আনন্দেই। কিন্তু তোমাকে সে কফি আমার আর খাওয়ানো হয়নি। হলনা।। 
তুমি আনমনা হয়ে গেলে। আমি কল্পনায় দেখতে পেলাম, তুমি চলে গেছো অনেক দূরে। 
সুলাইপাট মাইনস এর ম্যানেজার কোয়ার্টারে র বারান্দায়। মাইনসের ম্যানেজার পিসেমশাই , আর পিসিমা তাঁরা সন্ধ্যের সময় বারান্দায় বসতেন। 
কোয়ার্টার এর সামনে একদিকে একটা বিশাল কুসুম গাছ। আর একদিকে দুই শাল তরুবর। 
পাশে তিরতির করে বয়ে যাচ্ছে একটা পাহাড়ি ঝর্ণা। পিছনে ই পাহাড়ের সারি। লোহা পাথরে
ভর্তি। 
সাজানো বাগান। কুসুমের পাতা গুলো লাল হচ্ছে। 
তুমি কফিমগে করে দুজনের কফি এনে কফি টেবিলে সযত্নে নামাতে। নিজের জন্য এককাপ নিয়ে একটু দূরত্ব রেখে বসতে। 
কফি খেতে খেতে আমার চোখের সামনে এই দৃশ্য টা ভেসে উঠলো। ভুল হল। তোমাকে এক কাপ কফি খাওয়ানো আমাদের উচিৎ ছিল গো মাসী। 
তুমি মুখে না বললেও। 
সারা জীবন অবিবাহিত থেকে গেলে। পিসিমা কে কে দেখবে, এই ভাবনাতেই তাঁকে ছেড়ে আর যেতে পারলেনা অন্য ঘরে। সুন্দরী ছিলেনা। তবু - 
তোমার বিয়ের কোন চেষ্টা সম্ভবত তোমার পিসিমা
সেভাবে করেননি। তোমার প্রতি তাঁর ও একটা নির্ভরতা এসে গিয়েছিল। তাই স্বাভাবিক। মানুষ নিজের টা তো আগে ভাবে। 
পিসেমশাই এর অকাল মৃত্যুতে ফিরে আসতে হল 
বোলপুরে। বোলপুরে তোমার বা তোমাদের পিসিমার বাপের বাড়ি। বাপের বাড়ি তে না উঠে 
একটা পুরনো বাড়ি কিনে বসবাস শুরু হল। 
তোমার পিসিমার সাথে আমাদের গ্রামে আসছো 
অনেক দিন ধরেই। বছরে কমপক্ষে দুবার। 
তোমার পিসিমা হালদার বাড়ির বৌ। রজনীকান্ত হালদারের ছোট ছেলের বৌ। আলাদা মর্যাদা ছিল। নিজের চেহারাতেও ছিল আভিজাত্য। 
এখানে এলে কাঙাল ক্ষেপাচাঁদের বাগানবাড়ি নামে খ্যাত দালান কোঠার একটা ঘরে তোমরা অস্থায়ী বাসা বাঁধতে। 
আসা মূলত নিজের ভাগের জমির ধানের ভাগ নিতে। তোমরা এলেই অযোধ্যা গ্রাম থেকে সুলতা দিদি, এসে হাজির। আর গাঁয়ের হুবি বাউরী তো সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে যেত। গাঁয়ে বেড়াবার আর জায়গা কোথায়। আমাদের বাড়িতে আসতে। 
দাদুর সাথে নানা ধরনের গল্প হত। তখন মানুষ সামাজিক সম্পর্ক তৈরী করে নিত। তোমার পিসিমা, পিসেমশাই ছিলেন দাদুর একমাত্র ছেলের ভিক্ষামা - বাবা। আমার মামা। তাঁকে নিয়ে গিয়ে  টাটা কোম্পানির কাজে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। 
আচ্ছা, সন্ধ্যা মাসী কখনও কি তোমার নিজের জন্য কোন ভাবনা আসেনি। ঘুম না আসা রাতে। 
কখনও কি মনে হয়নি পিসিমার পরে তোমার কি হবে। তোমাকে কে দেখবে। তোমার আত্মীয় স্বজন যে কেউ নেই তা নয় তবে তাঁরা আন্তরিক ছিলেন কি! তুমি ভালো জানতে। 
একদিন পিসিমা মারা গেলেন। লোকজন ডাকাডাকি করে তাঁর দাহকার্য থেকে যা কিছু পারলৌকিক কর্ম, ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী করলে। 
পাড়ার ছেলেরা সহযোগিতা করেছিল। 
তারপর অনেক দিন কাটল তোমার নিঃসঙ্গ, এক দমবন্ধ একাকী জীবন। 
নিশ্চয়ই নির্ঘুম রাতে, নির্জন বিছানায় মাথায় রাজ্যের চিন্তা এসে চাপতে লাগলো। বার্ধক্যের রোগভোগ আছে। কে দেখবে আমাকে। কে এনে দেবে ওষুধপত্র। কে করবে সেবা যত্ন। কি হয় এখানে!  যা হয় হবে। না হয় কোনভাবে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হব। কখনও ভেবেছো কোন আশ্রমে চলে যাবে। মুলুকে প্রায়ই তো যেতে। 
কিন্তু কেউ কি দায় নেবে। এমনকি টাকার বিনিময়েও নেবে! 
যাক। তোমার মৃতদেহ, পাড়ার ছেলেরা দরজা ভেঙে বের করল। কখন যে তুমি চলে গেছো কেউ জানতে পারলনা। কেমন নিঃশব্দে চলে গেলে। 
সন্ধ্যা মাসী নিজেকে নিয়ে কখনো কি ভেবেছিলে! 
স্বামী, পুত্রকন্যা, সংসার! তোমার কি একবারও মনে হয়নি একটাই জীবন। একবার ই মেলে। 
নিজের জীবন টাকে নিজের কাছেই অপচয় বলে মনে কি হয়নি তোমার। এমনি এমনিই ফুরিয়ে গেল। 

------------ ------------ ------------ ------------ 

 #allfollowers

Wednesday, 26 March 2025

গা ছমছম

।। গা ছমছম।।

কি বলছেন!  গা ছমছম করবেনা।
বসে আছেন ঝাঁকড়া বটগাছ তলায়। তাঁতি পুকুরের পাড়ে।
হয়তো একা নয়। দুজন আছেন। তখন রাতের দিকে একবার পুকুর দিকে আসা অনেকের অভ্যেস ছিল।
ঝড় নাই জল নাই শোঁ শোঁ বাতাস নাই। হঠাৎ ই একটা বটডাল ভেঙে পড়ল আপনার পায়ের কাছে।
ঝুরঝুর করে বালি পড়তে লাগল।
আর থাকা যায়। ঝাঁকড়া তেঁতুল গাছ থেকে উড়ে গেল রাতের পাখি একটা পাখা ঝটপট করে।
আর এখানে থাকা যায়।
একবার  রাজমিস্ত্রী দের দল এখানে ডেরা বেঁধেছিল। থাকতে পারেনি।

# ওটা কি রে বাবা। বিড়াল টা যেন অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে।
রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। একবার রাস্তার ওধারে যাচ্ছে।
কেমন যেন চেহারা পালটে যাচ্ছে।
আঁকুড়ে দের ধর্ম রাজ থানের বটতলা র কাছে।
আর আপনি রাস্তা পার হতে পারেন!
গলা তো শুকিয়ে কাঠ। গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছেনা। উঁহু এরাস্তা য় পার হওয়া যাবেনা।
পাশেই গাঁয়ের বাইরে উত্তর দিকে পাশাপাশি দুই পুকুর।
মাঝখানে র জায়গা মুখগ্নির। তার ও নীচে গবাদি পশু মারা গেলে ফেলার জায়গা। মুচি রা চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
তাঁতি পুকুরের পাড়ের খুব লম্বা লম্বা তালগাছ থেকে নেমে আসে শকুনেরা। মরা পশুর মাংসে তাদের মহাভোজ।
এমন এক জায়গা!
এ জায়গা পার হওয়া।

সাতকাহনিয়া গ্রামের হালদার বাড়ির দালানে গানবাজনার আসর বসেছিল। অযোধ্যার  যাত্রা দলের পালার বাজনা,
মিউজিকের রিহার্সাল হচ্ছে।  বনকাটির নবকিশোর সূত্রধর বেহালা সঙ্গত করতে গিয়েছিল । মাষ্টার মশাই ননীবাবু হারমোনিয়াম ধরে। তিনিই মোশন মাষ্টার। প্রত্যেক দৃশ্যের সাথে উপযুক্ত বাজনা চাই। 
নদীর ওপারের উদয়পুরের রাধাশ্যাম দাসএসেছে। ভালো গায়। বিবেক এর গান। বাঁকুড়া থেকে তারিণী এসেছে। ফ্লুট আর সানাই দুই ই বাজায়। ভালো দম। তবে তার জন্য বোতল লাগে।
গলায় ঢকঢক করে ঢেলে, বাইরে থেকে এসে,  ধরে ফ্লুট।  বেশ কয়েকটা দৃশ্য হতে হতেই  রাত হয়ে গেল বেশ।
সূত্রধর মশাই  আর কি  রাস্তা পেরিয়ে যেতে পারা যায়!
বেরিয়েও   ফিরে গেল সাতকাহনিয়া।  সাথে লোক নিতে হল।  হাতে হ্যারিকেন। । সারা রাস্তাই নির্জন। আঁকুড়ে পাড়া, তেঁতুল তলার বাউরি পাড়া সব ঘুমিয়ে আছে। নিঝুম সেদিনের উঁচু নীচু হাটতলা।
হাটতলার পশ্চিমে বিরাট পাকুড় গাছ । কামার দের পাকুড়, বটতলা। তার দক্ষিণে এক ডোবা। সাদা শালুক ফুটে আছে।
আকাশে সামান্য জোৎস্নার আলো।
একটা কালো সদ্যোজাত বাছুর কেবলই রাস্তার এপাশ আর ওপাশ করছে। মাঝে মাঝে যেন তার রঙ বদলে যাচ্ছে।
  চুপ করে পাকুড় তলায় দাঁড়িয়ে থাকতে হল।
একসময় সে ছানা বাছুর ডোবার জলে ঝাঁপ দিল।
এ যে বাছুর নয় কোন, বুঝতে কি আর বাকি থাকে।
শেষ পথ টুকু রাম রাম জপতে জপতে জায়গা টা পার হল
নবকিশোর। এ অন্য আরেক দিনের কথা।

# সাতকাহনিয়া আর ডাঙ্গাল আদিবাসী পাড়ার মাঝখানে
ঘণ শাল জঙ্গল। জঙ্গলের ভিতরে গোরু গাড়ি চলার পথ।
আদিবাসী পাড়ার মুখটায় চৌমাথা।
এখানে প্রায়ই লালশালু, মাটির ভাঁড়, সিঁদুর লাগানো পাতা,
কাটা মুরগী র রক্ত,কাঠের  আঙার  প্রায়ই দেখা যায়। আদিবাসী মানুষ রা
এখানে ভূত ছাড়ায়।
অত সহজ এই রাস্তায় হাঁস বা মুরগী হাতে ঝুলিয়ে কেউ
যায়। বা মাংস নিয়ে।
একবার বনকাটির রামদাস মিস্ত্রী র ডাক পড়েছে ডাঙ্গাল গ্রামের ঘোষ বাবুদের ঘরে,  কিছু ভালো কাজ হয়তো হবে।
খাসি ছাগল কাটা হয়েছিল। ভোজ হবে। প্রায় ই হয়।  কিছুটা মাংস সে পেয়েছিল।
গামছায় বেঁধে, থলিতে ভরে ফিরছে। যাবে বনকাটি। জঙ্গলের মুখে
চৌমাথার মোড় থেকে তার মনে হচ্ছে কেউ পিছু পিছু আসছে।
  আরও জোরে । পা ফেলছে। হঠাৎ ই বনকাটির পচুই মদশাল থেকে ফিরছে ঠাকুর মাঝি। হাতে লম্বা লাঠি।
দেখে চিনতে পারল। বলল যা চলে যা। আমি এই এখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমাকে কেউ ছোঁবেনা। তবে তোকে ছুঁয়েছে।
যা। ঘরে গিয়ে বুঝতে পারবি।
যাক। ঘরে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
কি ওটা!
- না, কিছুটা মাংস আছে। ভালো করে রাঁধো দিকি।
তো। তেল মসলা নুন ঝাল যেমন দেবার দিয়ে যথাসাধ্য ভালো করে রান্না করল মিস্ত্রীর  স্ত্রী।
আহা!  মাংসের ঝোল দিয়ে ভাত। আর কি লাগে!
কিন্তু  এ মা। একি!
কি হল!
খেয়ে দ্যাখো। তাহলেই বুঝতে পারবে।
সত্যিই তো। স্বাদহীন ট্যালটেলে ঝোল। কোন স্বাদই নাই। আর মাংসের টুকরো গুলো যেন মাংস নয়। যেন চালকুমড়োর ঝোল। এ কি খাওয়া যায়!
হঠাৎ ই তার মনে পড়ল ঠাকুর মাঝি র কথা। তোকে একটু ছুঁয়েছে। যা ঘরে গেলে বুঝতে পারবি। তার গা শিউরে উঠল।
খাওয়া উঠল মাথায়। ভয়ে কাঁপুনি আর থামেনা যেন।
# অযোধ্যা গ্রামের উত্তরে বিশাল আমবাগান। মোটা মোটা মোটা গুঁড়ি। মাথায় মাথায় ঠিকে আছে। দিনের বেলাতে ও
ছায়া ছায়া অন্ধকার যেন। একটা ফলন্ত জামগাছ তলা দিয়ে গোরু গাড়ি চলার বালি মাটির পথ। রাস্তা কিছুদূর গিয়ে বাঁক নিয়েছে পশ্চিমে। ডানপাশে তালগাছ ঘেরা পুকুর।
বাঁশবাগান। আর আঁকড় গাছের ঝোপ। এই রাস্তায় সহজে কেউ সন্ধ্যে বেলায় পা বাড়ায়না। দু ঘর ডোম বাস করত।
পরে উঠে যায়। রাতের বেলায় বাঁশ ঝোপে কারা যেন খেলা করে। মাঝে মাঝে মনে হয় যেন বাঁশের বনে ঝড় লেগেছে।
এই রাস্তা তেই একটা কালো বিড়াল কে দেখা যায়। কালো বিড়াল না কি অন্য কিছু। কখনও মনে হয় বিড়াল আবার কখনো মনে হয় অন্য কোন জন্তু।
আর দেখা যায় সাদা শাড়ি পরে কেউ রাস্তার ধারে বসে কাঁদছে। সরু, খনা সুরে। যেন কাউকে ডাকছে। তার চারপাশে
সেই জন্তু টা গোল করে ঘুরছে।
হঠাৎ হঠাৎ মাছ লাফিয়ে ওঠে নাপিত পুকুরে। যেন মনে হবে জাল টেনে কেউ মাছ ধরছে। কিন্তু কেউ কোথাও নেই।
ঘরের এই উত্তর দিকে মুখ মানে দরজা রক্ষিত রা  সবাই বন্ধ করে দিয়েছে।
# আর পাষাণ চণ্ডী বাগান। আমগাছে ভর্তি। নীচে নানা ঝোপ।
পাশেই কাঁদর। কাঁদরের পাড়ে বিরাট বিরাট অর্জুন, চাকলতা গাছ। আরও কত রকমের গাছ। পাশেই শ্মশান।
কাঁদরের উপর বাঁশের সেতু। ওপারে পঞ্চানন বাবু এসে শর মানা পরিষ্কার করে চাষযোগ্য জমি তৈরি করেছেন। ফল বাগিচা তৈরি করছেন। ওপারে যাওয়া টাই একটা ব্যাপার।
বাঁশের সাঁকো তে উঠলে মচমচ করে। মনে হয় ভেঙে পড়ে যাবে।
তো। এপারের ডাঙ্গার পাশে  মুচি পাড়া। আর বাঁশবাগান।
বেশ কিছু বেল গাছ। কানাই মুচি র ঘর।। মুচি পাড়া থেকে রাত পাহারা দিতে পঞ্চানন বাবু র বাগানে যায় কেউ কেউ।
আর চলে যায় শেষ বিকেলে ই। কেননা ঐ শ্মশানের পাশে ঝাঁকড়া গাছটা। কি যে গাছ, কেউ নাম জানেনা। ঐ গাছে তো তাদের আস্তানা। লম্বা লম্বা পা ঝুলিয়ে বসে থাকে সব।
তবে সেদিন হল এক কান্ড। রামা আর বামা যাচ্ছে পঞ্চানন বাবু র মাঠে। সেদিন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। অন্ধকার রাত। পশ্চিম আকাশে একফালি চাঁদ।
বাঁশের সাঁকো তে উঠতে যাবে এমন সময় দেখল খালপাড় দিয়ে  সাতকাহনার হাঁড়ি পাড়ার  দিক থেকে কেউ বোধহয় আসছে। কে তা আঁধারে বোঝা যায়না। কিছুটা কাছে এলে
বোঝা গেল এক উলঙ্গিনী। মাথায় তার মাটির হোলায় আগুন জ্বলছে। ঝাঁকড়া গাছটায় শুরু হয়ে গেল যেন হুটোপুটি।
এই দৃশ্য দেখে আর সাঁকো পার হবে কি, উল্টো দিকে, নিজেদের পাড়ার দিকে দিল ছূট। বাবা গো মা গো।
তারপর এমন জ্বর এলো যে যে সে জ্বর ছাড়ল সাত দিন পর।
রায়দের কালীথানের ওষুধ খেয়ে আর ঝাড়ফুঁকে।

# ইনি না কি তিন  মাদনাবুড়ো  বা  মহাদানার ছোট ভাই। ঝাঁকড়া শ্যাওড়া গাছের তলায় তার আটন। নিমটিকুড়ি যাবার পথে
তিনি বিচরণ করেন। তাঁকে পার হয়ে যাওয়া সহজ নয়।
কখনও তিনি বাঘের পিঠে চেপে থাকেন। আবার কখনো সাদা
বিড়াল বা গোদানা। আবার কখনো বিরাট সাপ।  রাস্তা য় এপার ওপার করছে। কতজনা যে এখানে ভিমরি খেয়ে পড়েছে তার ঠিক নেই। জয় বাবা, জয় বাবা করে এখনও পার হয় কতজনা। এ জায়গা পার হবার সময় বুক ঢিপ ঢিপ করে।
এমন কত জায়গা যে ছিল  তখন, যেখান দিয়ে যেতে গেলেই  গা ছমছম। বুক ঢিপ ঢিপ। গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠা ।
  তেনারা সব গেলেন কোথা!  না কি রয়ে গেছেন এখনও।
কোথাও থাকুন আর না ই থাকুন অনেক মানুষের মনের আঁধারে  তাঁরা থেকে যাবেনই। ভূত, প্রেত, দৈত্য, দানা,
শাঁখচুন্নি, আরও কত ভূতিনী, প্রেতিনী চরে বেড়াচ্ছে
মনের কানাগলিতে।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------  সমাপ্ত

আগামী কাল বা পরশু দ্বিতীয় অংশ। তারপর ----

ক্ষুদ্রপুরের চক্রবর্তী মশাই

চক্কোতি মশাই পইপই করে বলে দিয়েছেন, রাতে খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে ঘরে ঢুকে খিল। সারারাতের মধ্যে দরজা কিছুতেই খুলবি না। 
তা হলে আমি আর সামলাতে পারবনা কিন্তু "
কাজ হয়েছে কিনা বুঝতে যখন চাইলি, সকালেই দেখবি। নিজে চোখে। আমি আর কিছু বলছিনা। 
যা এবার। "
নদীর ওপারে মানে অজয়ের ওপারে নদীর ধারেই 
ছোট্ট গ্রাম ক্ষুদ্রপুর। লোকমুখে ক্ষুদ্দুপুর। 
সদগোপ রা আছে। মেটেরা আছে। আর এই চক্রবর্তী পরিবার। চারপাশের গাঁয়ের লোকেদের কাছে এই পরিবারের খুব নাম ডাক। 
তন্ত্র, মন্ত্র, যাগ যজ্ঞে বংশানুক্রমিক ভাবে এই পরিবারের খ্যাতি। 
নানা লোকে নিজেদের নানা সমস্যা নিয়ে এঁদের কাছে যায়। প্রায় সারাদিন কালী মন্দিরের দাওয়ায় বসে লোককে নিদান দেন। কখনও তার বাড়িতে গিয়ে তান্ত্রিক অনুষ্ঠান করতে  হয়। 
কালী থানটি মেটেদের। মেটেরাই পুজোর রাতে নিজেদের উদ্যোগে তাদের নিজেদের পুরোহিত বনকাটির চক্রবর্তী দের দিয়ে পুজো করায়। 
আর পুজোর দিনে ক্ষুদ্রপুরের চক্রবর্তী মশাই দের বাড়িতে ব্যাপক মানুষের ভিড়। সে কোন দূর দূর এলাকা থেকে ফরেদি রা আসেন। যার সমস্যার সমাধান হয়েছে, এখন ভক্ত। কেউ মনস্কামনা পূরণের পর মানসিক শোধ করতে এসেছেন। আবার কেউ সমস্যা নিয়েও এসেছেন। 
তাঁদের সবার জন্য ই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। সবই করেন চক্রবর্তী মশাই রা। 
পুজোর পরদিন থেকেই আবার দায়িত্ব এঁদের। 
একটি ছোট্ট পাকা মন্দির গড়িয়ে দিয়েছেন। 
গ্রামের দক্ষিণে। একেবারে অজয়ের বানের জল আটকানোর জন্য মাটির বাঁধের ধারে। এখন সেই বাঁধের উপরেই পাকা রাস্তা। রাস্তা চলে গেছে পশ্চিমে জয়দেব কেন্দুলী পর্যন্ত। এখানে বসবাস মানে ভাবনা বারোমাস ই। পশ্চিমে কেমন বর্ষা হবে, অজয় কি রূপ নেবে তার ঠিক নেই। বর্ষাকালে সবাইকেই সতর্ক থাকতেই হয়। বলা তো যায়না। যদিও তেমন বর্ষা এখন আর হয়না। আর 
নদীর এপারে  যা শক্ত চরা পড়েছে তাতে অনেক টা নিশ্চিন্তি। গঙ্গাপুর, ভরতপুর,নারানপুর, উদয়পুর, নহনা মোড়,  ক্ষুদ্দুপুর, সন্তোষপুর হয়ে জয়দেব কেন্দুলী পর্যন্ত এখন বাঁধের উপরে পাকা রাস্তা। 
না হয় মাঝে মাঝে ভেঙেচূরে গেছে। স্বাভাবিক। 
সে যাই হোক। আমাদের গল্প এপার ওপার জুড়েই। এপারের অযোধ্যা গ্রামের একেবারে বাইরে উত্তরে আঁকুড়ে পাড়া। আঁকুড়ে রা আলাদা মেজাজের মানুষ। বলশালী। বেশ লম্বা চেহারা। 
নিজেরাও কালুবীর এর পুজো করে। আবার কালীপুজো য় করে।  একজোট হয়ে থাকে। 
সেই পরিবারে দীর্ঘ দিন থেকে নানা রকমের অশান্তি চলছে। নানা অঘটন ঘটছে। কোন কারণ নাই চালা ঘরে আগুন লেগে যাচ্ছে। গোরুর দুধ মরে যাচ্ছে। বাঁট দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। 
গাঁয়ের উত্তরে তাঁতিপুকুরের লম্বা লম্বা তালগাছগুলোর মাথায় শকুনেরা থাকে। পাশেই ভাগাড়। শকুনের ছানা গুলো এমন কাঁদে যেন মনে হয় মানুষের বাচ্চা কাঁদছে। মনে কু ডাকে। 
আবার ঝাকড়া তেঁতুল গাছ গুলো তে  বাদুড়ের
দল ঝাঁক বেঁধে থাকে। মাঝে মাঝে ক্যাওট রা জাল পাতে। বড়পাখি মানে বাদুড় জালে পড়ে। এরা তার মাংস খায়। এটা অবশ্য আঁকুড়ে পাড়ার 
বুড়ো দাদুর পছন্দ নয়। সে ক্যাওট দের বারণ করেছে। 
সেদিন তাঁতিদের ডোবার উত্তর দিকে গাব গাছের তলায় বসে দুই বুড়োর গল্প হচ্ছিল। কেউ একজন জাল গাবাচ্ছে। এই গাবের খুব কষ। জালের দড়িতে ভালো কষ লাগে। খয়েরী কালো রঙের হয়ে যায়। জলে সুতো টেঁকে অনেকদিন। 
কাছাকাছি দুই পাড়ার এই দুই বৃদ্ধের খুব ভাব ভালো বাসা। বিকেলে, সন্ধ্যের আগে দুজনের একসাথে বসা চাই ই। দুজনে দুটি রাণীগঞ্জের 
বেশ লম্বা সুলতানী বিড়ি ধরিয়ে বসে গল্প করে। 
এমন সময় আঁকুড়ে বাড়ির ভিতর থেকে খবর এলো ঘরের একটা বৌমানুষ খোলা চুলে রক্ষিত পুকুরে খাবার জল আনতে গিয়েছিল। সে যখন জল নিয়ে আসছে তার মনে হল কেউ যেন পিছু পিছু আসছে। ঘরের দুয়ারে এসে দেখে কেউ নাই। 
তারপর সে অজ্ঞান হয়ে গেছে। চোখে মুখে জল দেবার পর কিছুটা ধাতস্থ হল বটে কিন্তু সে মুখে আর ' রা' কাড়েনা। কেমন চুপচাপ হয়ে গেল।  
ক্যাওট বুড়ো গম্ভীর মুখে আঁকূড়ে দাদুকে বলল 
" ভাই সুবিধে ঠেকছেনা "। একে তোমার সংসারে নানা অঘটন ঘটছে, তার উপরে আবার এই।"
দেরি কোরোনা। কালই, কি বার যেন,! শণিবার। 
ভালোই হল। ছোট ছেলেটাকে পাঠিয়ে দাও ক্ষুদ্দুপুর। চক্কোতি মশাই এর ওখানে। এই কদিন আগেই গো আমাদের গাঁয়ে এসেছিল। 
ছোট ছেলে গেল ক্ষুদ্দুপুর। নদী পারাপারে অসুবিধা নাই। ওপারে সামান্যই জল। যদিও উদয়পুরে হদের ( হ্রদ)  ঘাটে ছোট নৌকো চলে। 
সকালে আর বিকালে। যারা এপারে আসে তাদের ফেরার সময় দুপুরে।  আবার ওবেলায়। অনেকেই আসে। 
নেশার খোঁজে আসে। এখানেই আছে মদের দোকান। 
চক্কোতি মশাই মন্দিরের দাওয়া তে ই বসেছিলেন। 
আঁকুড়ে ছোকরা কে দেখেই বললেন, তোর সঙ্গে 
সাহা বাড়ির লোকেদের দেখা হয়নি পথে!  
হ্যাঁ। হল যে। 
ও, ওদের বাড়ির ছোট ছেলে টার অসহ্য পেট বেদনা রে। অনেক ওষুধ পত্র তে কিছু হয়নি। 
আমার কাছে এসেছিল। ও, এতক্ষণে কমে গেছে। 
গিয়ে খবর নিস তো। আমাকে জানাতে বলিস। 
তো বল!  তোর বৌ টা কেমন আছে। কথা বলবে কি, কেমন হকচকিয়ে গেল ছেলেটা। ও বলবে কি, চক্রবর্তী মশাই নিজেই বলে চললেন। যা যা বলবার জন্য ওনার কাছে গেছে। 
তারপর অনেক ক্ষণ চোখ বন্ধ করে চুপ করে থাকলেন। তারপর মন্দিরে গিয়ে ঢুকলেন। 
বেরিয়ে এসে বললেন " যা তোর কাজ হয়ে গেছে"
" কি করে জানব ঠাকুর মশাই " 
" ও, জানতে হবে? 
শোন রাতে একেবারে ঘর বন্ধ। কেউ বেরুবিনা। 
তা না হলে - ভয়ানক বিপদ। সামলাতে পারবনা। 
ঘরের উঠোনে কি কি গাছ আছে জেনে নিলেন। 
চারপাশের  গাছপালার খবর নিলেন। 
বললেন " যা, যা ইচ্ছে হবে পরে এসে মায়ের নামে পুজো দিয়ে যাবি "। 
ঘরে ফিরে এল। কোন রকমে দিনটা পার হল। 
কখন সন্ধ্যে হয়! সন্ধ্যে একটু গাঢ় হতেই খাওয়া শেষ করে সবাই ঘরে ঢুকল। ভাল করে খিল এঁটে দিল। দেয়ালের দুই পাশে গর্তের মধ্যে মোটা বাঁশের লাঠি ঢুকিয়ে দিল। 
ঘুম কি আর আসে। বৌ টা ঘরের এক কোনে চুপ করে বসে আছে। 
হঠাৎ মাঝরাতে, হ্যাঁ মাঝরাতই হবে। অনুমানে। আন্দাজে বুঝল। মনে হল বাইরে যেন শোঁ শোঁ আওয়াজ। ঝড় এলো নাকি! 
বৌটা কেমন যেন করছে। ঘাড় নাড়াচ্ছে দুদিকে। 
সামনে পিছনে। খোলা চুল। যেন ভর নেমেছে। 
একেবারে ভোরের দিকে মনে হল যেন উঠোনের 
সজনে গাছ টা মাটি থেকে শিকড় সমেত কেউ তুলে উপড়ে দিল। 
বৌ টা শান্ত, নিস্তেজ হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ল। 
সকাল হল। 
সবাই দেখল। হ্যাঁ সত্যিই তাই। কোন ঝড় ঝাপটা কিছুই রাতে হয়নি। ওদের উঠোনের সজনে গাছ টা উপড়ে পড়ে আছে। যেন কেউ তছনছ করেছে। 
সবাই মিলে দু'হাত তুলে প্রণাম করল। 
মঙ্গলবারে চক্রবর্তী মশাই এর কাছে যেতে হবে। 
 কালীথানে মানত করে এসেছে। শোধ করতে হবে। 
------------ ------------ ------------ ------------ 

** পাঠক, আমি গল্প বলিয়ে। গল্প বলছি মাত্র। 
এলাকার ইতিহাস মিশে আছে এর সাথে।

Saturday, 22 March 2025

গা ছমছম (২ য় পর্ব)

।। গা ছমছম।।
  আমি নিজে চোখে দেখলাম। যজ্ঞ ডুমুর গাছ টার তলায় বাঁধের উপর বসে  গঁড়াই। সেই ছোট হাঁটু পর্যন্ত সাদা ধূতি।
নদীবাঁধ একটু আগেই বাঁক নিয়েছে উত্তরে।
কোনে একটা নিম গাছ।
আর একটা বড় হয়ে ওঠা কুলগাছ। তার নীচে পড়ে আছে কত ভাঙা ইঁটের টুকরো, মাটির ঢ্যালা।
জিয়ল গাছের নীচে দিয়ে পায়ে চলা পথ চলে গেছে ' গই মানে চওড়া নালা পার হয়ে  ভুলোকালী তলার বিরাট পাকুড় গাছ টার পাশ দিয়ে পুব দিকে
কয়া মাঠের দিকে। মেঘনালী নামের এক মাঠ  নালা গিয়ে মিশেছে রূপাইচণ্ডী তলার ' রূপাই দ ' য়ে। মানে দহে। সেই নালার ধারে ছিল কত কেয়া গাছের ঝাড়। কেয়া থেকে হয়ে গেছে কয়া। মাঠনাম। ভুলোকালী তলার ঐ বিশাল পাকুড় গাছ আর তার নীচে চারপাশে ঘণ কাঁটা ঝোপ।
ঐ জায়গা পার হতে গেলে - গা য়ে কাঁটা দেবেই। বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে যাবেই।
নদী বাঁধের পশ্চিম ধারে বিরাট এক শিমূল গাছ। শ্মশান।
পাশে নদী। অজয়। তার পাড়ে ঘন পলাশবন। কুলঝোপ।
পাশে ভাঙা বাঁধ। আগে বাঁধ ছিল আরও ভিতরে। ভেঙেছে সে
কোন কালে। তারপর আবার বাঁধ তৈরি হয়েছে।
পলাশ বনে ঝিঁঝিদের একঘেয়ে আওয়াজ।  কুলঝোপে জোনাকি দের মেলা। থেকে থেকে শিয়ালের হাঁক। ওরা আছে
বাঁধের আরও নীচে।
বাঁধের উপরে চোখ জ্বলজ্বল করছে। যে জানেনা সে ভয় পাবেই। গোবরথুপথুপি পাখি। কিছুতেই নড়েনা। চোখ অন্ধকারে জ্বলে। আলো পড়লে জ্বলন্ত আগুন।
পরদিন গাঁয়ে তিন চার জায়গায় জটলা জমেছে।
- না, বুঝলি। সত্যি। কাল  লেবু, ভোঁটা, পদ রা মাছ ধরতে গিয়েছিল। এই সময় ভালো মাছ ওঠে। দহে অনেক গুলো বঁড়শি ওয়ালা  তগি ফেলে। বড় দাঁড়া। মাছের ভালো চার।
বচ, একাঙ্গি, পচুই মদের তলানির ভাতের ডেলা, সব ভালো করে মাখানো।  ভালো মাছ লাগে। বড় বড় বোয়াল, বাণ, বা কেনো ও লেগে যায় কোন কোন দিন। আর কালবাউস, কাৎলা,  মিরিক, রুই সবই দ ' য়ে আছে।
ওরা গই  এর পাড় ধরে গিয়ে বাঁধে উঠতে যাবে তখনই দেখেছে।
হ্যাঁ। গঁড়াই। বসে আছে বাঁধের উপরে। গঁড়াই ই বটে।
কয়েকদিন আগে মেয়ে গঙ্গা কে একা ফেলে ভুতু কুলু পরপারে গিয়েছে। এই শ্মশানে ই তাকে দাহ করা হয়েছে।
এই জগৎ সংসারের প্রতি তার খুব মায়া ছিল। মা মরা মেয়ে
গঙ্গা। কিছুটা ল্যালাভোলা। তার মা মানে গঁড়াই এর স্ত্রী, সে তো কবেই গেছে এই ধরাধাম ছেড়ে। এখন অবস্থা ও খুব শোচনীয়। ছোট্ট একটা  মুদির ডালি  দোকান চালিয়ে কোন মতে
সংসার চালানো। কিন্তু একদিন অবস্থা মোটামুটি ভালোই ছিল। কিছু জমিজায়গা ছিল। ঘরে ঘানি ছিল। মাটির উপরকোঠা ওয়ালা ঘর ছিল। ডাঙ্গাল গ্রামে তাঁদের স্বজাতি রা আছে। কিছুটা দূর সম্পর্কের আত্মীয়তা।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া র পরে সামনের কূয়োর চাতালে বা বেড়ের উপরে বসে বিড়ি টানতে টানতে গঁড়াই কত কথা ভাবত। দু একটা গরীব ঘরের ছেলেকে পড়াত। লেখা শেখাতো। বর্ণপরিচয় এর প্রথম ভাগ বা বড়জোর দ্বিতীয় ভাগ। খাঁদি মাল তার ঘরের কাজকর্ম করে দিত। তার ছেলে পদ মানে শ্রীপদ  কিছুটা লিখতে পড়তে শিখেছিল। বিরাট লম্বা
উঁচু পুরু চেহারা হয়েছিল পদর।
- উঁহু বুঝলি জগতের মায়া কাটাতে পারেনি রে গঁড়াই।
- ঐদিকে ই তো যেতে হবে। বাঁধের উপরে বসে আছে যে -
- তা হলে এক কাজ কর দিকি। শুকনো তালপাতা বা ডালপালা খুঁজে দ্যাখ। আগুন জ্বালা।
- আগুন দেখলে  দ্যাখ কোথায় পালাবে।
শুকনো শর কাঠি এদিক ওদিক থেকে জোগাড় করে, হাতের ছোট্ট চৌকো লণ্ঠন টা থেকে আগুন জ্বালাতে গিয়ে লণ্ঠন টা ই গেল নিভে।
- না। আজ লক্ষন ভালো নয়। চল আজ ফিরে যাই।
- সে না হয় হল। ফিরেই চল। কিন্তু কাল কি খাবি
মাছ বিচেই তো কিছু চাল, ডাল, নুন ঝাল
সেই ভাবনা ভাবতে ভাবতে ই গাঁয়ের দিকে মুখ করল তারা।
  -  কিন্তু কাল যদি আবার দ্যাখা দেয়
- বুঝলি কাল বাঁধের উপরে যজ্ঞিডুমুর গাছটার তলায় চ্যাঙ মাছ পোড়া রেখে দিয়ে যাব। দেখবি ঠান্ডা হয়ে যাবে।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------
আজ দিলাম পরবর্তী অংশ। 
তারপর - 

Monday, 3 March 2025

খাণ্ডারী ঃ মানকর

।।  মানকর  -  খাণ্ডারী ।। 
 
" জীবন আমার নাম, মানকরে মোর ধাম, জিলা - বর্ধমান। " ---  রবীন্দ্রনাথ 
 ' মানই যার কর - সেই গ্রাম মানকর '
 ' পরে তসর খায় ঘি, তার আবার অভাব কি ' 
 ' কদমার ভিতরে ভরা কনের বিয়ের লাল চেলি টি '
 " কেমন কারিগর, থাকেন মানকর, 
  লাল চেলি ভরা থাকে কদমার ভিতর। "
 

 ' আছেন যেথা মানিকেশ্বর, নামটি তাহার মানকর '

 প্রাচীন এক জনপদ মানকর। কত প্রাচীন?  
 জনশ্রুতি অজ্ঞাতবাসের সময় পঞ্চ পাণ্ডব না কি এখানে এসেছিলেন। অবস্থান করেছিলেন। পৌষমুনির ডাঙ্গা বা পাণ্ডব ক্ষেত্র তলার ঐতিহাসিক প্রাচীনত্ব নির্ণীত হয়নি। 
 ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সার্ভেয়ার জেনারেল রেনেল সাহেবের ম্যাপে  মানকর ( Mankur)  উল্লেখিত। প্রাচীন এক রাস্তা বর্ধমান থেকে বেরিয়ে মানকর হয়ে চলে যাচ্ছে উত্তর পশ্চিমে 
 আদুরিয়া গ্রামকে পাশে রেখে সেনপাহাড়ী পরগনার ভিতর দিয়ে অজয় পার হয়ে আরও উত্তরে রাজনগর পর্যন্ত। 
 কনৌজ ব্রাহ্মণ রাই মানকরের প্রকৃত জমিদার। 
 বর্ধমানের রাজা দের কাছ থেকে তাঁরা ব্রহ্মোত্তর হিসাবে মানকরের রাইপুর এলাকা টি পান। পরবর্তী সময়ে সেখানেই 
 নির্মান করেন জমিদার বাড়ি  ' রঙ মহল '। 
 আদিতে এঁদের পদবি দুবে। মথুরায় বৈষ্ণব রাধাবল্লভ সম্প্রদায়ের  কাছে দীক্ষা নিয়ে তারা গোস্বামী হন। 
 মূলত সংস্কৃত শিক্ষা প্রদান এবং গুরুগিরি করার উদ্দেশ্যে ই 
 তাঁদের বাঙ্গলায় আগমন। প্রথমে মেদিনীপুর এর চন্দ্রকোনা। 
 পরে  এখানে আসেন। 
  এঁরা কিন্তু মানকর থেকে  উত্তর পশ্চিমে সামান্য দূরত্বের 
 খাণ্ডারী গ্রাম টিকে বেছে নেন নিজেদের বসবাসের জন্য। 
  নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্যই কি এই সিদ্ধান্ত। 
  যে ভূমি খণ্ডে তাঁরা বসবাস স্থাপন করলেন - তাই হল খাণ্ডারী। অনুমান মাত্র। 
 মূল মানকরে তারা প্রথমে বাসা বাঁধেন নি। পরে রাইপুর এর
 জমিদারি পাবার পর মানকরে প্রাসাদ নির্মান করেন। 
 মানকর ছাড়াও ভরতপুর, খাণ্ডারী তেও ভূসম্পত্তি লাভ করেছিলেন। 
 গুরুদীক্ষা এবং গুরুদক্ষিণা ঃ  বর্ধমানের রাজা জগৎরাম এবং রাণীমা ব্রজকিশোরী দেবী কে দীক্ষা দেন পণ্ডিত শ্যামসুন্দর গোস্বামী। 
 তাঁর পুত্র ভক্তলাল গোস্বামী দীক্ষা দেন রাজা কীর্তি চাঁদ এবং তাঁর পুত্র রাজা চিত্রসেন কে। 
 গুরুদক্ষিণা স্বরূপ ১৭২২ সালে রাইপুর এলাকার জমিদারী সত্ত্ব লাভ করেন ব্রহ্মোত্তর সম্পত্তি হিসাবে। 
 রাধাবল্লভ মন্দির এবং সিংহবাহিনী মন্দির নির্মান করেন 
 ১৭২৯ সাল নাগাদ। 
 ভক্তলাল পরবর্তী বংশধর গন হলেন অজিতলাল, ব্রজলাল, 
 সেতাবলাল। 
 অজিতলালের দৌহিত্র  হিতলাল মিশ্র। এঁকে মানকরের অন্যতম রূপকার হিসাবে গণ্য করা হয়। নানা জনহিতকর কাজ তিনি করেছিলেন। আজকের হাটতলা তাঁরই পরিকল্পনা য় গড়ে ওঠে। মানকর থেকে বুদবুদ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার করেন। 
 সৌন্দর্যায়নের জন্য রাস্তার দুই পাশে তালগাছ লাগানোর ব্যবস্থা করেন। বারোটি বাঁধানো ঘাট সমেত এক বিশাল দিঘী  যার নাম  ' কৃষ্ণগঙ্গা ' খণন  করান। সেই সময় ভীষণ খাদ্যাভাব এবং জলাভাব দেখা দিয়েছিল। কৃষ্ণগঙ্গা খণনের মাধ্যমে অনেক শ্রমজীবী মানুষ কাজ পেয়েছিলেন। 
বিদ্যানুরাগী এই মানুষ টি  পুঁথি সংরক্ষণের জন্য  " ভাগবতালয় " নামে এক গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন। কয়েকটি টোল স্থাপন করেন। তাঁর সময়ের বিশিষ্ট পণ্ডিত দের মধ্যে 
গদাধর শিরোমণি, নারায়ণ চূড়ামণি, যাদবেন্দ্র সার্বভৌম, 
 প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। 
তিনি গীতা র টীকা রচনা করেছিলেন। যার প্রশংসা করেছিলেন সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র। 
 হিতলাল মিশ্র র ব্যবসায়িক বুদ্ধি ছিল প্রখর। তিনি নীলকুঠি র
  ও  মালিক ছিলেন। 
 
 অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের হিতলাল এবং তাঁর পূর্বজ ভক্তলাল গোস্বামী মুসলমানদের জন্য মসজিদ এবং খ্রিস্টান দের জন্য চার্চ নির্মান করিয়েছিলেন। 
  হিতলালের পুত্রের অকালমৃত্যু তে  দৌহিত্র রাজকৃষ্ণ দীক্ষিত, 
 জমিদার হন। তিনিই তৎকালীন সময়ের বাংলার জমিদার দের মধ্যে প্রথম, যিনি স্বদেশী আন্দোলনে (১৯০৫)  অংশগ্রহন করে 
কারারুদ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর সময়ে  রঙমহলে অনেক স্বদেশী 
 গোপনে আসতেন। আলোচনা হত। তাঁরা আর্থিক সাহায্য লাভ করতেন। 
 রাজকৃষ্ণ পুত্র রাধাকান্ত। তিনিও অকালপ্রয়াত। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী শক্তিবালা দেবী কাঞ্চন কুমার দীক্ষিত কে উত্তরাধিকারী হিসাবে গ্রহণ করেন। তিনিই ' রঙমহলের ' শেষ 
 জমিদার। 
 ------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ------------ 
 খাণ্ডারী গ্রামে এখনও কয়েকঘর কনৌজ ব্রাহ্মণ বাস করেন।
 ' অগ্নিহোত্রী ' পদবী। এই গ্রামের পঞ্চরত্ন, টেরাকোটা অলংকরণ শোভিত রাধাগোবিন্দ  মন্দির টি নির্মান করিয়েছিলেন  
 শান্তিময় তেওয়ারি র পূর্ব পুরুষ গন। আনুমানিক ১৮৫০ নাগাদ নির্মিত। 
 পাশের অষ্টকোনাকৃতি  গৌরীশ্বর শিবমন্দির টি অগ্নিহোত্রী পরিবারের। সৌগত অগ্নিহোত্রী জানালেন। 
মানকরে প্রায় ৪০-৪২ টি মন্দির। প্রায় সমসময়ে নির্মিত। 
 এই সব মন্দির কে নিয়ে আলাদা প্রবন্ধ পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত হবে। 
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ 
অতি সংক্ষেপে মানকর বা মানকরের কনৌজ ব্রাহ্মণ দের
 সম্পর্কে  এই প্রবন্ধে বলা হল।  মানকর এক প্রাচীণ জনপদ। 
 এবং যথেষ্টই বিস্তৃত। আকারে প্রকারে। অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবার। অনেক ভগ্নাবশেষ। সংরক্ষণের অভাবে ভেঙে পড়েছে। যেমন ' রঙমহল '  ' কবিরাজবাড়ি '  বিশ্বাস বাড়ি, ইত্যাদি। 
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ------------ 
©   প্রণব ভট্টাচার্য। 
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ------------

Saturday, 1 March 2025

দুবরাজপুর। মন্দির সমূহ

।। দুবরাজপুর এর মন্দির সমূহ।। 

 এরা কি বিশিষ্টতা য় উজ্জ্বল নয়? 
ইতিহাস কি এতই অনুজ্জ্বল! 
কত মণিহারে বিভূষিতা ছিলে গো মা 
বঙ্গজননী 
 আমাদের সীমাহীন অবহেলা, অক্ষমতা 
ভাবনার দীনতা  নিজেদের নিষ্ঠুর ভেঙে যাওয়া 

হায়  আমরা রক্ষা করতে পারিনি 
 ক্ষমা চাইবার  অধিকার ও  হারিয়েছি 
সে কবেই 

দুবরাজপুর
 অনেক গুলি মন্দির। সবগুলি ই ইঁটের তৈরী। 
  বক্রেশ্বর এর দক্ষিণে এই দুবরাজপুরে পাথরের কোন মন্দির নাই। অথচ পাথর খণি যে খুব দূরে ছিল তা ও নয়। তবে হয়তো পাথরের কাজ করার মিস্ত্রি ছিলনা।বোধহয় রসা - বড়রা য় ছিল। সেখানে হাঁসা পাথরের কাজ এখনও হয়। 
মাকড়া পাথরের বোল্ডার দিয়েও। না  হয়নি। 
 পাকুড়তলা বাজার বা হাটতলার কাছে  তেরো চূড়ার এক মন্দির। মন্দির টি আয়তনে বা উচ্চতায় তেমন বড় নয়। 
 অত্যন্ত ঘিঞ্জি এলাকায় মন্দির টি। একদিন মন্দিরের প্রধান দ্বারপার্শ্বে ছিল " খোদিত কারিগর গোপীনাথ হাড়ি। দুবরাজপুর। আর একজনের নাম শ্রীনন্দ বাগতি। সন ১২৯৬ 
 বা ১৭৯৬ (!) । বেশ কিছু টেরাকোটা অলংকরণ ছিল। 
 আজ সব ঢেকে গেছে সিমেন্ট প্লাস্টারে। এখানে বৃষ বাহন শিবলিঙ্গ আছে। 
 উল্লেখযোগ্য যে সমাজের নিম্নবর্গের মানুষেরা, হাঁড়ি, বাগদি রাও মন্দির নির্মানে দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন। 
 ময়রা পাড়া ঃ এখানে তিনটি মন্দির। দক্ষিণ মুখী। একটি ত্রয়োদশ রত্ন। বাকী দুটি শিখর রীতির। এখানেও সংস্কার এর কাজ হয়েছে। তবে বেশ কিছু টেরাকোটা প্লাক অবশিষ্ট আছে। 
 নায়ক পাড়া ঃ পাশাপাশি তিনটি মন্দির। একটি চালা রীতির।
 অসামান্য জ্যামিতিক ডিজাইন আছে এখানে। একটি নবরত্ন।
 অপর টি দেউল রীতি র। ধ্বংসপ্রাপ্ত। শিবের বিবাহ, কালী, মহিষাসুরমর্দিনী ইত্যাদি টেরাকোটা র কাজ  ছিল। 
 নামো পাড়া বা ওঝা পাড়ার "' পঞ্চ শিবালয় " ঃ এখানকার পাঁচটি শিবমন্দির। দুটির সিমেন্ট প্লাস্টার হয়ে গেছে। বাকী তিনটির একটি তেরো চূড়া, এবং দেউল রীতি র। 
 চমৎকার টেরাকোটা অলংকরণে সমৃদ্ধ। 
 এই ওঝা, পাণ্ডে, নায়ক রা সকলেই কেউ মৈথিলী, কেউ  কনৌজ ব্রাহ্মণ। তাঁদের ও ইতিহাস রয়েছে।

।।রাজনগর কথা।

।।  রাজনগর।। 
 নামই তার রাজনগর। 
 বা ছোট্ট করে নগর। 
 একদা বীরভূমের রাজধানী। 
 সীমান্ত এলাকা। পশ্চিমে ঝাড়খণ্ড। এই পথ দিয়ে কত 
 আক্রমণকারী ঝড়ের বেগে ঢুকেছে। স্বাভাবিক ভাবেই 
 এই সীমান্ত এলাকা সুরক্ষিত করার প্রয়োজন অনুভব করেছেন এখানকার শাসকরা। 
 রাজনগর এর ইতিহাস এর অনেক গুলি কালপর্ব। 
বীরভূমের বীর রাজাদের রাজধানী। 
এই বীর রাজাদের সম্যক পরিচয় এখনও পরিষ্কার নয়। 
 এই সেই লক্ষৌনুর। 
 বাংলার বিখ্যাত সেন রাজাদের নামাঙ্কিত। রাজা লক্ষনসেনের 
 নামে রাজা বল্লালসেন স্থাপন করেছিলেন এই নগরের। 
 গড়, গড়খাত, ইত্যাদি নির্মিত হয়েছিল। 
 হিন্দু রাজাদের পরে এখানকার শাসক হন পাঠানরা। 
 তাঁদের সময়ে বীরভূম অনেক বিস্তৃত। 
 পাঠানরাজারাও ছিলেন বিখ্যাত। 
 এই রাজনগর এর পাঠান রাজাদের উকিল, আইনী পরামর্শ দাতা, মুর্শিদাবাদ রাজদরবারের প্রতিনিধি ছিলেন 
 ধর্মমঙ্গল কাব্যের অন্যতম কবি নরসিংহ বসুর পূর্ব পুরুষ রা। 
 এঁদের পৈত্রিক বাসস্থান ছিল আমাদের এখনকার  কাঁকসা থানা  এলাকার বসুধা গ্রামে। 
  এই বসুধা ছেড়ে শাঁখারী গ্রামে চলে যান মথুরা বসু। 
 " বাঙ্গালায় বীরভূম বিখ্যাত অবণী। 
 শ্রী আসফুল্লা খান রাজা শিরোমণি "।
রাজনগর এর কথার শেষ নাই। 
 আনুমানিক ষোড়শ শতকে নির্মিত এখানকার বিখ্যাত 
 মোতি চূড় বা মোতি মসজিদ। 
 ছয় গম্বুজের এই মসজিদের গম্বুজ গুলি ভেঙে পড়েছে। 
 নির্মিত হয়েছিল চমৎকার এক ধর্মীয় স্থাপত্য। 
 অসাধারণ তার টেরাকোটা র অলংকরণ। 
 হিন্দু মুসলিম উভয় ধারার মিশ্রিত " মোটিফের "ব্যবহার হয়েছে। টেরাকোটা অলংকরণ যুক্ত কোন মসজিদ আর 
বীরভূমে নাই। 
 যদিও এই মসজিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি বা নমাজ পাঠ হয়নি। 
 এটি একটি অবহেলিত ঐতিহাসিক স্থাপত্য। 
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ 
 সকলকে আমার ঈদের শুভেচ্ছা জানাই। 
 সৌভ্রাতৃত্ব বজায় থাক। মনুষ্যত্ব ই মানুষের শ্রেষ্ঠ পরিচয়।

যাত্রাপালাগান ঃ একটি শতবর্ষ প্রাচীণ আসরের কথা

।। যাত্রাপালা গান  ঃ একটি শতবর্ষ প্রাচীণ আসরের কথা।।  প্রণব ভট্টাচার্য 
স্বাভাবিক ভাবেই লেখাটি দীর্ঘ। এলাকার ঐতিহ্য। এখানকার কথা লেখা বা বলা উচিৎ ছিল। 
ভালো লাগলে পড়বেন। 

।  ১ নং পাতা 
" আমাদের জাতীয় নাট্য বলতে যদি কিছু থাকে তা হচ্ছে যাত্রা " বলেছিলেন নাট্যাচার্য শিশির ভাদূড়ী।
আর রামকৃষ্ণ দেব বলেছিলেন যাত্রা থিয়েটারে লোকশিক্ষা হয়। যাত্রা দলের গদিতে হোক বা আসরের সাজঘরে তাঁর ছবি টাঙানো থাকেই। তাঁকে প্রণাম জানিয়েই যাত্রা শুরু হয়।
যাত্রা মানে উদ্দেশ্য নিয়েই কোথাও গমন। সে তীর্থ যাত্রা ই হোক আর আনন্দ ভ্রমণ ই হোক। যাত্রা শুভ হোক। আমাদের এই কামনা থাকে।
যদি আমরা ধরে নিই যে যাত্রাপালার প্রথম অঙ্ক থেকে পঞ্চম অঙ্ক পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহের যে বিন্যাস, তার চলন, পরিণতি র দিকে তার যে গতি প্রবাহ তাই যাত্রা। শুরু থেকে শেষ। এই যাত্রাপথের শিল্পীত রূপ ই আমাদের যাত্রা পালা গান।
আমাদের জীবন যেমন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে বিস্তৃতি তাই জীবন কাল। হাসি, কান্না, দুঃখ, বেদনা, আনন্দ,লোভ লালসা মেশানো । সব রসের সমাহার। যাত্রা পালা গানেও এই সকল রসের সমাহার। সকল রসের ধারার এক মিলিত গতি প্রবাহ।
একদিন গ্রামবাংলার অন্যতম প্রধান বিনোদনের মাধ্যম ই ছিল যাত্রা। কোথাও বিনা পয়সায় কলকাতার যাত্রা দলের যাত্রা হচ্ছে শুনলে লোক ভেঙে পড়ত সেই আসরে।
মানুষের সেই উন্মাদনা আমরা লক্ষ্য করেছি অতি বিখ্যাত এক যাত্রা পালা " নটী বিনোদিনী " তে। আমি একটি উদাহরণ দিলাম মাত্র। টিকিট কেটে যাত্রা। চারদিকের সব বেড়া খুলে দিতে বাধ্য  হতে হয়েছে আয়োজক দের। রাতের পর রাত সেই পালাগান চলেছে। তেমনই আর এক একটু পুরনো পালা
" সোনাই দিঘী "। কি অসামান্য অভিনয়। ভাবনা কাজী কে দেখার জন্য মানুষের কি উন্মাদনা।
এমন কত শত পালা। নাম লিখে বা বলে শেষ করা যাবেনা।
একে হাল্কা চোখে দেখার কোন কারণ নাই। " যাত্রা দ্যাখে ফাৎরা লোকে " বললে বুঝতে হবে কোথাও মূল্যায়নে ফাঁক থেকে যাচ্ছে।
আজ যাত্রা শিল্প অনেকটা ই মুখ থুবড়ে পড়ার মতো অবস্থায়।
কলকাতার কোন যাত্রা নয় নাটকের দল বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে ভালো আছি। না। কেউ ভালো নেই। যাত্রাও না। নাটকও না। গানের জলসাও না। সিনেমা তো নাই। সব হল বন্ধ। মাল্টীপ্লেক্স এ আর কজন যায়।
আসলে সমগ্র বিনোদন এর জগৎ টি ই সম্পূর্ণ বদলে গেছে।
টেলি সিরিয়াল ই আজ মহিলা দের আনন্দ সন্ধ্যা।
আর মোবাইলে মত্ত কিশোর যুবক দের দল।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ১ নং পাতা শেষ।  

।। যাত্রা কথা।।  ২ নং পাতা আরম্ভ।
অথচ কত দীর্ঘ পথ পার হয়ে এসেছে যাত্রা পালা গান।
সেই চৈতন্য পরবর্তী  নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায় মশাই এর কৃষ্ণ যাত্রা, থেকে  গোবিন্দ অধিকারী, মতিলাল রায় কত মানুষের
আজীবন এর সাধনার ফলশ্রুতিতে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আধুনিক যাত্রা পালা। পৌরাণিক, ঐতিহাসিক এবং সামাজিক
কত পালা। অসাধারণ অভিনেতা এবং অভিনেত্রী গণ। নারী চরিত্রে দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন চপল রাণী র মতো কত পুরুষ রাণী।
এরিস্টটল বলেছিলেন " প্রকৃত ইতিহাস লেখার চেয়ে শিল্প সম্মত ভাবে ইতিহাস কে উপস্থাপিত করা ই অধিকতর বিজ্ঞান সম্মত এবং বাস্তব। " প্রাচীন  গ্রীসের নাট্যচর্চা কে আমরা স্মরণ করতে ই পারি এই প্রসঙ্গে। সে ও এক দীর্ঘ ইতিহাস।
১৯৩৬-৩৭ সাল নাগাদ পূর্ব বঙ্গের বরিশাল থেকে শশী নট্ট,সূর্য দত্ত দের " মাচরং বৈকুন্ঠ যাত্রা সমাজ " যেদিন কলকাতার হরচন্দ্র মল্লিক স্ট্রিট এ তাঁদের গদিঘর পাতলেন সেদিন থেকেই প্রকৃত প্রস্তাবে কলকাতা বা কলকাতার চিৎপুর ধীরে ধীরে  হয়ে উঠল  যাত্রাপাড়া।
২০০৫ সালে চিৎপুরে প্রায় ৫৫ টি যাত্রা দল। সিজিনে  চার হাজার রাতের বায়না। ২০০১ এ ছোট বড় মিলিয়ে তিন শো র
মতো কোম্পানি। ২০০০০ মানুষের সংযুক্তি। লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা। এক একটি দলে সব বিভাগ মিলিয়ে প্রায় ৬০-৭০ জন মানুষ। কত বড় একটা শিল্প। এর সাথে জড়িয়ে আছে আরও হাজার হাজার মানুষ। আলো, ড্রেস,  মেক আপের দ্রব্যাদি র ব্যবসার সাথে কত মানুষ যুক্ত ছিলেন।
সবচেয়ে বেশী বায়না যেমন হত অবিভক্ত মেদিনীপুরে তেমনি মেদিনীপুর এর নন্দকুমার এবং বেলদা কে বলা হত মেদিনীপুর এর চিৎপুর। মেদিনীপুর কলকাতাকে কত শিল্পী সরবরাহ করেছে। স্টার আর্টিস্ট দের বাদ দিয়েও চরিত্র অভিনেতার ভূমিকা  একটি পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনা য় কম মূল্যবান নয়।
বীরভূমে সম্ভবত যাত্রা পালার সূচনা ১১০০ বঙ্গাব্দে।
শিশুরাম অধিকারী বা ঐ শিষ্য পরমানন্দ অধিকারী বীরভূমের রামবাটী র বাসিন্দা ছিলেন। ধবনী গ্রামের নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায় মশাই তাঁর কৃষ্ণযাত্রাকে অসম্ভব জনপ্রিয় করেছিলেন। তিনি ১৩১৮ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন।
হেতমপুরের রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে রঞ্জন অপেরা। তাকে কলকাতায় নিয়ে গেলেন ফণীভূষণ বিদ্যাবিনোদ বা বড় ফণী।
অত্যন্ত সুনামী প্রযোজক, দল পরিচালক শম্ভুনাথ ঘোষ
তাকে নব রঞ্জন অপেরায় পরিণত করলেন।
বীরভূমের শুধু নয় সমগ্র রাঢ় এলাকার পশ্চিমাংশের যাত্রা প্রীতি সুবিদিত। পরবর্তী সময়ে বায়নার জন্য যখন এজেন্ট প্রথা চালু হল প্রথম  রাণীগঞ্জের রাণীসায়ের মোড়ে গড়ে উঠল
অনিল ভাণ্ডারী মশাই এর বুকিং অফিস। তাঁকে বলা হত
" কোলিয়ারী লর্ড " বা যাত্রা লর্ড। তাঁর মাধ্যমে ই বুকিং হত।
সব দলের ই ব্যবসার তিনি ছিলেন কাণ্ডারী।
" নট্ট কোম্পানি " - নট্ট কোম্পানি ই। ছিলেন যে সূর্য দত্তের মতো মানুষ। তারপর ই নাম করতে হয় সত্যম্বর চট্টোপাধ্যায় এর " সত্যম্বর অপেরা র "। এই অপেরার সোনাই দিঘী তো ইতিহাস। ইতিহাস রচনাকারী অনেক প্রযোজনার জন্ম দিয়েছে এই অপেরা।
কত অপেরা, কত কোম্পানী। নাম লিখতে হলে উল্লেখযোগ্য অনেক নাম বাদ পরে যাবে এই ভয়। তবু কিছু নামের কথা বলার আগে বলে নেওয়া ভালো যাত্রা তখন এতই জনপ্রিয় যে
বড় গ্রাম বা গঞ্জে গড়ে উঠেছে এমেচার যাত্রা দল। শুধু ইলামবাজার এর নাম উল্লেখ আছে। ইলামবাজার রিক্রিয়েশনাল যাত্রাপার্টি। শতবর্ষের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন তার প্রবীনতম সদস্য।
সেই এমেচার দলের অভিনয় আমরাও যা দেখেছি সে ফেলে দেবার মতো নয়। অমর বন্দ্যোপাধ্যায় এর মতো চেহারা এবং অভিনয় ছিল অনবদ্য। যে কোন পেশাদার অভিনেতা র সাথে তিনি পাল্লা দিতে পারতেন। তাঁর স্ত্রী ও ছিলেন নামী অভিনেত্রী।
অযোধ্যা বনকাটি এলাকায়   পেশাদার দের মতো দল অযোধ্যায় গড়ে উঠেছিল। ননীগোপাল চট্টোপাধ্যায় এর নির্দেশনা
সঙ্গীত পরিচালনা এবং অভিভাবকত্বে। বড় বড় ট্রাঙ্কে ছিল সাজপোশাক সহ মেক আপের দ্রব্যাদি। মহিলা চরিত্রে কিন্তু পুরুষ।  গোপালপুর, বামুনাড়া, আড়া ইত্যাদি গ্রাম মিলিয়ে
শক্তি মান অভিনেতা দের সম্মিলিত প্রয়াসে গড়ে উঠেছিল
পেশাদার প্রায় যাত্রাদল। অনেকে ছিলেন তার পৃষ্ঠ পোষক।
কলকাতার যে দলটির কথা না বললেই নয় তা হল " তরুন অপেরা "। প্রধান অভিনেতা শান্তিগোপাল। তাঁর হিটলার ২০০০ রজনী অভিনীত হয়েছিল। তিনিই একমাত্র অভিনেতা তাঁর লেনিন যাত্রাপালা নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেন। এবং সোভিয়েত ল্যাণ্ড নেহরু অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছিলেন।
৭০ এর দশকে খবরের কাগজের যাত্রা সমালোচক খ্যাত ব্যক্তিত্ব প্রবোধবন্ধু অধিকারী হয়ে উঠেছিলেন যাত্রা পাড়ার
অভিভাবক পিতার মতো।
যাত্রায় উৎপল দত্তের আসা মাত্রই যাত্রা দেখল নূতন আঙ্গিক।
অভিনয়ের উৎকর্ষ। তাঁর পরিচালিত "  ফেরারী ফৌজ "
সন্ন্যাসীর তরবারি ইত্যাদি যাত্রা পালা যাত্রার ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এর মতো শক্তিমান অভিনেতা যাত্রায় এসেছিলেন। কিন্তু সাফল্য পাননি। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে
" রাবণ " পালা জনতা গ্রহণ করেনি।
আবার সিনেমা থেকে কিছু অভিনেতা অভিনেত্রী এলেন
কিন্তু তাঁদের অভিনয় ধারা ভিন্ন হওয়ায় সেভাবে দর্শক নেননি।
অনেকে যেটা বলেন যাত্রার অভিনয় চড়া মোটা দাগের।
অতি অভিনয় ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু যাত্রায় কি স্বপনকুমারের
মাইকেল মধুসূদন হয়নি!  এমন আরও অনেক নাম করা যায়।
কিছু যাত্রা দলের নাম করতেই হয়। যেমন নিউ রয়্যাল বীনাপাণি অপেরা, নিউ গণেশ অপেরা, নব অম্বিকা অপেরা
নিউ প্রভাস অপেরা, আর্য্য অপেরা, নিউ আর্য্য অপেরা,
সত্যনারায়ণ অপেরা ; ভারতী অপেরা,  লোকনাট্য, নাট্যভারতী ; মুক্তঅঙ্গন, আনন্দলোক, শিল্পীতীর্থ, অগ্রগামী
ইত্যাদি অপেরা অনেক বিখ্যাত প্রযোজনার জন্ম দিয়েছেন।
অনেক নাম বাদ গেল। লেখক ক্ষমাপ্রার্থী।
বিভিন্ন সময়ে কিছু মানুষের উজ্জ্বল ভূমিকায় আলোকিত হয়ে ওঠে প্রাঙ্গণ। তেমনি কিছু মানুষ - মাখনলাল নট্ট,  শৈলেন মোহান্ত,
তিনকড়ি গুছাইত, দীনবন্ধু গুছাইত,, অমিয় বসু, দিলীপ চট্টোপাধ্যায়, কালিপদ দাস, নীলমণি দে, দুলাল চট্টোপাধ্যায়
হৃষিকেশ মিত্র, কিষান দাশগুপ্ত, নির্মল মুখোপাধ্যায়,
রমেন মল্লিক, বৈদ্য নাথ শীল ইত্যাদি মানুষেরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
যাত্রার পালাকার ঃ প্রথমেই যে নাম সকলের মনে আসে তিনি আর কেউ নন যাত্রাপালাসম্রাট ব্রজেন দে । তার পরই
ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়, শম্ভু বাগ, সহ অনেক নাম।  যে নাম গুলিকে বাদ দিয়ে যাওয়া অপরাধ।
যাত্রার প্রধান অভিনেতা ঃ যাঁর নামেই দর্শক আসবেন তেমন অভিনেতা তো সহজে মেলেনা।
সেই বড় ফণী অর্থাৎ ফণীভূষণ বিদ্যাবিনোদ, ফণীভূষণ মতিলাল ( ছোট ফণী) । যাঁকে বলা হত যাত্রার যুবরাজ
নটসূর্য্য দিলীপ চট্টোপাধ্যায়, পঞ্চু সেন, ষষ্ঠীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফণী গাঙ্গুলি,  মাখন সমাদ্দার, অনাদি চক্রবর্তী
, স্বপনকুমার , শেখর গাঙ্গুলি,  তরুনকুমার, ভোলা পাল,
পান্না চক্রবর্তী, অভয় হালদার, অশোক কুমার, রাখাল সিংহ
শ্যামল ঘোষ, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, অসিত বসু, নির্মল মুখোপাধ্যায়।  সিনেমা থেকে এসেছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর " যমালয়ে জীবন্ত মানুষ " ভালো ব্যবসা করেছিল।
এসেছিলেন সন্তু মুখোপাধ্যায়।
অসাধারণ অভিনেতারা। আর আচার্য্য পূর্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এর নাম না করা তো অন্যায়।
এখনও প্রবীণ দের কানে ভাসছে গ্রীনরুম থেকে উদাত্ত গলায় গান ধরা বিনোদ ধাড়া বা তাঁর সুযোগ্য পুত্র গুরুদাস ধারার নাম। নট্ট কোম্পানি র খোকন বিশ্বাস প্রভৃতি র নাম খুবই উল্লেখযোগ্য। আরও অনেকে রয়েছেন যাঁদের গান ই ছিল সেই পালার সম্পদ।
অভিনেত্রী দের কথা এলেই প্রথমেই যে নাম মনে ভেসে উঠে আসে তিনি অদ্বিতীয়া জ্যোৎস্না দত্ত। অবিস্মরণীয়া বীণা দাশগুপ্ত,।  রুমা দাশগুপ্ত, বেলা সরকার,  সহ অন্যান্য অভিনেত্রী রা অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। সব নাম বলা একটি ছোট প্রবন্ধে সম্ভব নয়।
যাত্রার মিউজিক মাষ্টার,  মোশন মাষ্টার এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাদ্যযন্ত্রী দের নাম লিখতে বসলে সেটাই হয়ে যাবে
ইতিহাস।
রূপসজ্জাকার এবং তাঁর সহকারী গণ।
পেট্রোম্যাক্স, হ্যাজাক লাইটের যুগ। তাতেই আলোর কারিকুরি করেছেন শুধু রঙিন কাগজের সাহায্যে যাঁরা তাঁরাও একটা দলের অপরিহার্য অঙ্গ।
রান্নাঘর কে বাদ দিলে তো চলেই না। প্রধান অভিনেতা বা অভিনেত্রীর স্পেশাল রান্না চাই৷ কত জনের কত রকমের আবদার। সব রান্না ঘরকে মনে রাখতে হয়। এই রান্নাঘরে ই
ককপক্ষে পাঁচ সাত জন লোক। তাঁদের কথা আর কাদের মনে থাকে!
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ২ নং পাতা শেষ।

।। যাত্রা পালা গান  এবং এক শতবর্ষ প্রাচীণ যাত্রার আসর এর কথা।। ৩ নং পাতা আরম্ভ।
এমন একটা সময় ছিল " রূপাই চণ্ডী তলায় " যাত্রাকরতে যাওয়া ছিল প্রায় সব দলের কাছে তীর্থ যাত্রার মতো।
রথযাত্রার দিনে বায়নার সময় অনেকে লক্ষ্য রাখতেন ওখানে বায়না হল কি না। গদি থেকে অনেকে খবর নিতেন। লোক পাঠিয়ে।
শতবর্ষ প্রাচীণ এই যাত্রার আসর। ১২৭ বছরে পড়েছে এখানের যাত্রার আসর। সেই কৃষ্ণযাত্রা দিয়েই শুরু। তারপর পালাগান, যাত্রার আসর।
বিশাল বিশাল শিমূল,  অর্জুন গাছ, পলাশের জঙ্গল। পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে এক জলধারা। এখানে সেই জলধারা দহ র রূপ নিয়েছে। প্রাচীন কয়েক টি বন্যার স্মৃতি জড়িয়ে এই স্থান আজও টিঁকে আছে স্বমহিমায়। দেবী চণ্ডী। রূপাই চণ্ডী। দহের নাম " রূপাই দহ "। জলধারার নাম " বৃদ্ধ নদী "। দহের পাড়ে মোরাম চাতাল। আদিবাসী পাড়া। নাম " রাজাপোতার ডাঙ্গা "।
অজয় থেকে বের হয়ে একটি জলধারা এই স্রোতপথে বসুধার ভিতর দিয়ে চলে যেত পূর্বে অনেক টা। পাণ্ডুকের কাছে " পাণ্ডুরাজার ঢিবির পাশ দিয়ে আবার অজয়ে মিশত। সে স্রোতে নৌকা চলাচল করত। " রাজার পোত " থেকে পাণ্ডুরাজার ঢিবি "হয়ে অজয়ে গিয়ে নৌকা চলে যেত দূরে।
  ""রাজার পোত " থেকে রাজা পোঁতা। পাণ্ডুরাজার ঢিবির ও অপর নাম রাজা পোতার ডাঙ্গা।
তাহলে কে ছিলেন এই রাজা। আদিবাসী কোন মানুষ। না কি সদগোপ প্রাধান্যের এই এলাকায় কোন সদগোপ রাজা।
নাম কি ছিল তার রূপাই! প্রবীণেরা বলতেন এই দেবী সদগোপ দের বা এই পূজায় তাঁদের বিশেষ অংশ ছিল।   পরবর্তী সময়ে  ব্রাহ্মণ দের আনানো হয়েছিল। একসময় ডাঙ্গাল গ্রামে অনেক ব্রাহ্মণ পরিবার বাস করতেন। ডাঙ্গাল গ্রামের দু টি অংশ। 
একটি রামপুর, অপরটি ডাঙ্গাল। ডাঙ্গাল অংশে ব্রাহ্মণ বসতি ছিল। মারাত্মক কলেরা, ম্যালেরিয়া রোগে গ্রাম উজাড় হয়ে যায়। অনেকে গ্রাম ত্যাগ করেন। 
 এই দেবী চণ্ডী। রাঢ় এর মহাকাব্য মঙ্গল কাব্য গুলির অন্যতম চণ্ডীমঙ্গলের দেবী চণ্ডী যেমন বনদেবী। তিনি বনের সকল জীবের পালয়িত্রী। আদিবাসী দের " চাণ্ডী "। তিনিও
প্রকৃতি। সর্বত্র বিরাজমানা। বনভূমির কোন প্রাচীন বৃক্ষ তলে
তাঁর আবাস। তিনি বিলে আছেন, মাঠে আছেন ; জঙ্গলে লতাগুল্ম ঘেরা কোন থানে আছেন।
এই দেবী রূপাই চণ্ডী র দুর্গার ধ্যানেই তাঁর পূজা হয়। বিশেষ উল্লেখ যোগ্য চৈত্র সংক্রান্তি তে দেবীর বাৎসরিক পূজার আয়োজন হয়। শিবের গাজনের সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক।
এই পূজা উপলক্ষে ই বৈশাখের তিন চার তারিখ নাগাদ এখানে কবিগান ; কৃষ্ণযাত্রা ; এবং পরে কলকাতার যাত্রা দলের পালাগান চালু হয়েছে শতবর্ষ আগে। এখনও সেই ধারা অনুযায়ী যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বৎসর।
আগে মানুষের ভিড়ে কোথাও তিল মাত্র জায়গা থাকতো না।
ঝোপ ঝাড় পরিষ্কার করে কিছু জায়গা বের করা হত।
দূর দূর গ্রাম থেকে গোরুগাড়ি করে মানুষ জন আসতেন।
মহিলারাও আসতেন। যথেষ্ট নজরদারি র ব্যবস্থা থাকত।
উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে পার্শ্ববর্তী গ্রামসমূহের বিশিষ্ট মানুষ দের আমন্ত্রণ জানানো হত।
ডাঙ্গাল বসুধা গ্রামের ঘোষবাবুরা ( গোবিন্দ ঘোষ এবং তাঁদের  পরিবারের পূর্ব পুরুষ গন)  ও ডাঙ্গাল গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার ( ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পূর্ব পুরুষ গণ),  এঁরা ই মূলত এই পূজা এবং উৎসব, যাত্রা পালা গানের আসর বসানো ইত্যাদি র আয়োজন তথা তদারকি করতেন। বা এখনও বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার সহ অন্যান্য রা করছেন। ডাঙ্গাল বসুধা  গ্রামবাসী গণ সহযোগিতা  করেন।    জীবিত দের মধ্যে বয়স্ক মানুষ বংশী মণ্ডল রয়েছেন। তাঁর যুবক বেলায়  তিনিই বায়না করতে চিৎপুর যেতেন। প্রবীণ দের মধ্যে আর রয়েছেন, সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, শিশির বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং অন্যান্য 
গ্রামবাসী গণ। 
ঘোষ বাবুদের লিচু বাবু কাঁধে বন্দুক নিয়ে চারপাশে নজর রাখতেন। হাবল বাবু তদারকি করতেন। সাতকাহনিয়া গ্রাম থেকে হালদার বাবুরা 
যেতেন।  শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নারান মাজি র  তৎপরতা ছিল নজর কাড়া।
আরও অনেক কথা থাকা স্বাভাবিক। শতবর্ষ প্রাচীণ। অনেক গুলি পুরুষ। মানেই এক এক সময়, বা কাল পর্ব। কোন অসম্পূর্ণতা থাকতেও পারে। আরও অনুসন্ধানের প্রয়োজন থেকেই যায়। 
 বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের শ্রী শিশির বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু  আমার নজরে এনেছেন। তাঁকে ধন্যবাদ। 
 আমি সংযোজন বা সংশোধন করে নিলাম। 

------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ৩ নং পাতা শেষ। 

 

।। যাত্রা পালা গান ঃ শতবর্ষ প্রাচীণ এক যাত্রার আসর।।
৪ নং পাতা। আরম্ভ।
প্রবীণ দের মুখে শুনেছি রূপাই চণ্ডী তলায় পালাগান পরিবেশন করেননি এমন যাত্রা দল প্রায় নেই। তবে এটাও ঠিক যাঁদের বা যে সব দলের রেট কম থাকত তাদের কেই প্রথম দেখা হত। তবে রূপাই চণ্ডী তলার নাম শুনে অনেক যাত্রাদল কম পয়সা নিয়েই গান করেছে এমন উদাহরণ অনেক আছে। কোন এক দলের একবার প্রায় বায়না হচ্ছিল ই
না। এখানে গান করার পর না কি তাঁদের ভালো বায়না হয়।
একটা সময় ছিল যখন " সত্যম্বর অপেরা " মানেই ভালো যাত্রা। আর তাদের  বাঁধা  ছিল এই জঙ্গলাকীর্ণ স্থলের আসর। মানুষের মুখে মুখে ফিরত বড় বড় শিল্পী দের নাম।

মুখে মুখে ছড়িয়ে যায় এই স্থলের মাহাত্ম্য।
এমন অনেক গল্প প্রবীণ দের মুখে শোনা যেত।
মূলত রূপাই চণ্ডী তলার চারপাশে যাঁদের কৃষি জমি রয়েছে
বা বসুধা মৌজায় তাঁদের কাছ থেকেই চাঁদা নিয়ে বিনা পয়সায় কলকাতার যাত্রা দলের যাত্রা পালা গান শোনা বা দেখার সুযোগ পেতেন সাধারণ মানুষ বছরের ঐ দুটি দিন।
সারা বছর মানুষ মুখিয়ে থাকতেন এই আসরের দিকে।
অজয়ের ওপারে ইলামবাজার থেকে যাত্রামোদী মানুষেরা দলে দলে আসতেন। পার্শ্ববর্তী এলাকা মৌখিরা কালিকাপুর থেকে বা আদুরিয়া অমরপুর থেকে কি মাজুরিয়া রঘুনাথপুর থেকে বা তেলিপাড়া, এমনকি রক্ষিতপুর মলানদিঘী এলাকা থেকেও মানুষ আসতেন এখানে। তখন যাত্রা দেখার একটা
প্রবল আগ্রহ মানুষের মধ্যে ছিল। যা আজ আর নাই।
সরকারের উদ্যোগে যাত্রা উৎসব চালু করা হয়েছিল।
যাত্রা জগতের বিশিষ্ট মানুষ দের আমন্ত্রণ জানিয়ে সেখানে আনা হত। মন্মথ রায় দের মতো  মানুষ কোন  যাত্রা দেখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন,  আবার অদূর ভবিষ্যতে যাত্রাপালাগানের
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী হতে পারেননি তেননি অনেকে।
  বাংলার বাইরে যে আসাম, ঝাড়খণ্ড, বিহারের প্রবাসী বাঙালী অধ্যুষিত এলাকা থেকে একসময় অনেক বায়না হত।
সেখানেও ভাঁটা পড়েছে। সব দিক দিয়েই যাত্রা শিল্প আজ
সংকটে। অথচ এই শিল্পের সাথে জীবন জড়িয়ে ছিল কত কত পরিবারের।
তবু টিঁকে থাকবে হয়তো। একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাবেনা।
তবে পালারচনা থেকে শুরু করে, সেই মানের অভিনেতা অভিনেত্রী ; তেমন গান, গায়ক বা মিউজিক - একটা সমন্বিত শিল্প যেমন হয় তেমন মানে যাত্রা কে সাজাতে হবে।
যাত্রা কে ভালোবেসে এই শিল্পের আঙিনায় আর তেমন কেউ আসছেন না এমন আক্ষেপ গদিমালিক দের। আসছে  কিছু
  দ্রুত  উপার্জনের আশায়।
আর নিম্ন রুচির সস্তা পালাগান দিয়ে এই শিল্প বাঁচবে না।
সামগ্রিক পরিবেশের পরিবর্তন ঘটেছে। এবং একশ্রেণির
উচ্ছৃঙ্খল যুবক দের সব কিছু কে অবজ্ঞা, উপেক্ষা করার
মানসিকতা দেখা দিয়েছে। মানুষ ঘর থেকে বেরুতে চাইছেন না। মহিলাদের নিয়ে বের হওয়া তো দূরের কথা।
আর মধ্যবিত্ত স্তরের ভদ্র মানুষেরাই যদি আসরে না যান, সমঝদার মানুষ দের যদি উপস্থিতির অভাব ঘটে তাহলে শিল্পী দের ও মনে তার প্রভাব পড়ে। তাঁরা ও দেখে নেন শ্রোতা কেমন! গান ও তেমন। 
রূপাই চণ্ডী তলা জেগে ওঠে বৈশাখের ঐ কটা দিন। জেগে নিশ্চয়ই থাকবে। শুধু এই এলাকা নয় আমাদের কাঁকসাব্লকের
এত প্রাচীণ, ঐতিহ্য পূর্ণ যাত্রা পালা গানের আসর কিন্তু দ্বিতীয় টি নাই। এই ঐতিহ্য রক্ষা পাক।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ সমাপ্ত।
গ্রন্থ সহায়তা। যাত্রা শিল্পের ইতিহাস। গৌরাঙ্গ প্রসাদ ঘোষ 

 ক্ষেত্র সমীক্ষা এবং অন্যান্য লেখা

দেবীর পূজা, হোম যজ্ঞ হচ্ছে। করছেন ডাঙ্গাল গ্রামের সুনামী  পণ্ডিত শিশির বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্যান্য রা।

এলেমবাজার নিলামবাজার ইলামবাজার

।। এলেমবাজার  নিলামবাজার ইলামবাজার।। 

 বাজারে এলাম গো। এলেমবাজার।। 
 এ বাজারে এলেমদার লোকেরা ঘোরাফেরা করে। 
 নীল, গালা, সুতীবস্ত্র, তসর, রেশমের নিলামের হাট বসে। 
 প্যারিসে আন্তর্জাতিক এক প্রদর্শনী তে ইলামবাজারের 
 গালার সামগ্রী প্রদর্শিত হচ্ছে। মন্তব্যে বলা হচ্ছে " হস্তশিল্পের চমৎকার নমুনা " 
 আরস্কাইন সাহেবের কুঠিবাড়ি তে জয়দেব কেন্দুলী যাওয়ার পথে ফরাসি পণ্ডিত সিলভা লেভী এবং তাঁর স্ত্রী মাদাম লেভী 
এক রাত্রির বিশ্রাম নিচ্ছেন। 
 আচার্য্য নন্দলাল গোরুগাড়িতে চেপে ছাত্রদের নিয়ে বনকাটির পিতলের রথ দেখতে আসছেন। 
 শিল্পী মুকুল দে গোরুগাড়ি চেপে মৌখিরা যাবার পথে ইলামবাজার এর টেরাকোটা মন্দির, আরস্কাইন সাহেবের 
 সমাধিস্থলের ছবি তুলে নিচ্ছেন। 
 ব্রতচারী প্রবর্তক তৎকালীন বীরভূমের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট 
 গুরুসদয় দত্ত ইলামবাজারে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় 
 উদ্বোধন করছেন। 
 এছাড়া, সুরুলের চীপ সাহেব, সুরুলের বিখ্যাত সরকার বাড়ি, 
রায়পুরের সিংহ বাবুদের কথা 

আরও অনেক অনেক কথা, অনেক তথ্য 
ছোট্ট এই বই টি তে আছে। 
আমি জানিনা ইলামবাজারের কত জন বন্ধু আমার এই বইটি সংগ্রহ করে পড়ে দেখলেন। আশা করি খারাপ লাগবে না। 
 পড়েই দেখুন। 
ইলামবাজার এ অনেক বন্ধু। আমার অনেক ছাত্র ছাত্রী। 
 প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে গেলে দ্বিতীয় সংস্করণ টি বর্ধিত আকারে করার চেষ্টা আছে। 
 আপনাদের সহযোগিতা কাম্য। 
 আমি মাত্র পাঁচ টি বই পেয়েছি। সৌজন্য সংখ্যা। এত বন্ধু কাদের দিই! 
 বন্ধুদের উদ্দেশ্যে ই এই বই উৎসর্গ করেছি। 

আমার কাজের ক্ষেত্র অজয়ের এপার আর ওপার। ইলামবাজার আমার  দ্বিতীয় ঘরের মতো। 
বই টিতে এপারেরও  কথা কম নেই। বনকাটি, মৌখিরা, কালিকাপুর তো আছেই। আরও আছে। 

বই টি র পরিবেশক অক্ষরযাত্রা প্রকাশনী র আনন্দগোপাল হালদার। তাঁকে ফোনে অর্ডার দিলেই বাড়িতে বসে বই পেয়ে যাবেন।আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি। 
 তাঁর নম্বর  9474907307।
দাম মাত্র। ২০০/ টাকা। পেপারব্যাক দাম কম রাখার জন্য 
ইলামবাজারে জয়দুর্গা লাইব্রেরি তে ও সম্ভবত এসেছে। খোঁজ নিন।

ইলামবাজার ঃ পাঠপ্রতিক্রিয়া

ইলামবাজার। 
আমার জীবনের অনেক খানি জুড়ে। তাই ইলামবাজার কেন্দ্রিক একটা বই হোক এ ইচ্ছা আজকের নয়। 
 সেই কোন বালকবেলায় খুঁজে পেয়েছিলাম আরস্কাইন সাহেবের ভগ্ন কুঠিবাড়ি আর তাঁর পরিবারের সমাধিস্থল। 
  সেই বয়সেই আমাকে ভাবিয়েছিল 
 " কোথায় জন্ম আর কোথায় মৃত্যু "
 প্রায়ই সেই সমাধিস্থলে যেতাম। বসে থাকতাম। 
 ব্রাহ্মণ পাড়ার মন্দিরগুলোর টেরাকোটা কাজ গুলো র দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম। 
 গৌরাঙ্গ মন্দির এর কাজ দেখতে দেখতে হাট 
 করতে ভুলে যেতাম। 
  ঐ সমাধিক্ষেত্র, ভগ্ন দালান, মন্দিরের সামনে এলে আমার মনে হত ইতিহাস এর মুখোমুখি হয়েছি। 
 সেই ইতিহাস এর কিছুটা আছে  
 আমার বই ' এলেমবাজার নীলামবাজার ইলামবাজার "। 
 এবারেই কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। 
আপনারা সহযোগিতা করলে পরবর্তী সংস্করণ টি আরও শোভন, সুন্দর, বর্ধিত আকারে করতে পারব। 
 পরিবেশক  ঃ অক্ষরযাত্রা প্রকাশনী , কলাবতী মুদ্রা র পক্ষে    আনন্দগোপাল হালদার কে ফোন করুন। নিজের কপির অর্ডার দিন। বাড়িতে বসেই বই টি পাবেন।* * ফোন নং  9474907307  *
বন্ধুদের সহযোগিতা কামনা করি।

পুনঃ। কিছু কপি আনানোর চেষ্টা করছি। 
তেপান্তর নাট্য গ্রাম থেকেই পাওয়া যাবে।

মাননীয়া Suchandra Chakravarty এই বই পড়ে 
তাঁর পাঠপ্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁকে আমার  ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি 

শ্রদ্ধেয় প্রণববাবু, আপনার  সুস্থতা কামনা করি । গতকাল আপনার বইটি পেয়েছি এবং আগাগোড়া পড়েছি। অত্যন্ত সুখপাঠ্য আর আবেগপ্রবণ লেখা। ঐ অঞ্চলের মাটির প্রতি আপনার টান, আর imaginative sympathy আপনার ইতিহাস চর্চাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। Hunter, O'Malley, Birbhum Bibaran, সব আমার পড়া থাকলেও আপনার লেখনীতে আবার সরস প্রাণ পেয়েছে ঐসব ইতিহাস। সাধারণ পাঠকের কাছে এরকম গল্পচ্ছলে ইতিহাস জানা খুবই আকর্ষণীয়। আপনাকে এইজন্য অভিনন্দন জানাই। 
ইতিহাস ছাড়াও, আপনি কথায় ছবি আঁকেন। তাই ইলামবাজারের হাটের ও সেখানের গৌরাঙ্গ মন্দিরের বর্ণনা পড়ে আমার নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মেলাতে অসুবিধা হয়নি। দেড় বছর আগে গিয়েছিলাম। ইস্ তখন যদি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ হত! আরও চল্লিশ বছর আগেকার স্মৃতি উঠে এলো আপনার লেখায় শ্রীনিকেতনের কাছে নীলকুঠির ভগ্নাবশেষের কথা পড়ে। আজ কেউ ঐ 'নীলসাহেবের কুঠী'র হদিস ও জানেনা।

আরস্কাইন সাহেবের সমাধি ক্ষেত্রে র ছবি তুলেছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী মুকুল দে। এই ছবি ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন শ্রী সত্যশ্রী উকিল দা। তাঁকে ধন্যবাদ জানাই

এলেমবাজার নিলামবাজার ইলামবাজার । পাঠ প্রতিক্রিয়া

মাননীয়া Suchandra Chakravarty  মহাশয়ার
পাঠপ্রতিক্রিয়া
আমার " এলেমবাজার নিলামবাজার ইলামবাজার " বই টি পড়ে। তাঁকে আমার ধন্যবাদ জানাই। 

Pranab Bhattacharya is a familiar name to terracotta enthusiasts and those interested in the regional histories of West Bengal, particularly around Birbhum. This recently published book is an easy and interesting read, particularly for those who wish to have an introduction to the local history of the Ilambazar area near Shantiniketan. It's a collection of essays that has already appeared in other  journals. Pranabbabu has gleaned his facts largely from Hunter, O'Malley, and older local histories such as Birbhum Bibaran. What draws the reader to this slim book is the manner in which the  older histories have been  retold with a lively passion for the place and its past. He has the engaging ability of a good story teller which enables one to excuse certain editorial lapses. I read the book in one sitting ( it's not long) in spite of being familiar with all the source documents that he has cited, which speaks volumes for his ability to paint word pictures of edifices now lost to time, as well as the present environment . His description of the haat in Ilambazar took me straight back to my visit one and a half year ago; right down to the man selling earthen pots, one of which stands in my verandah. His mention of the ruins of the house of an indigo factor, which, years back locals used to refer to as 'neel shaheber kuthi' brought back memories of a visit more than forty years back. That ruin can no longer be seen and had it not been for this book, I might have believed that my memory had been playing tricks with me. 
I would definitely recommend this book to bengali reading enthusiasts new to this area and its rich heritage. The flow of goods and people along the Ajay river brought the world to its banks even before the world met in Tagore's Visva Bharati.

আমি বীরভূমের না কি বর্ধমানের

আমি থাকি অজয়ের দক্ষিণে। পশ্চিম বর্দ্ধমান জেলায়।  অজয়ই প্রাকৃতিক  সীমারেখা। উত্তরে বীরভূম। দক্ষিণে বর্ধমান। সেই কবেকার এই সীমারেখা। অজয়ের উত্তরে উত্তর রাঢ়। বজ্রভূমি, বীরভূমি - বীরভূম। ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ১৮০৬ সালে অজয় কে  প্রাকৃতিক সীমারেখা হিসাবে গ্রহণ করে। 
ওপারে ইলামবাজার। বীরভূমের প্রবেশ দ্বার। 
আমাদের নিকটতম গঞ্জ। এপার ওপারের  নিত্য যাতায়াত। সীমান্তের এই অংশের মানুষ দের বরাবরের টান ওপারের প্রতি। পানাগড়, দুর্গাপুর
যাওয়া অপেক্ষা বোলপুর যাওয়ার প্রতি একটা প্রবণতা কাজ করে। এই এলাকার অনেক সম্পন্ন
মানুষ ওপারে চলে গেছেন। ইলামবাজার বা বোলপুরে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন। 
আমারও ইচ্ছা ছিল।কিন্তু নানা কারণে হয়নি।  ইলামবাজার হাইস্কুলে পড়েছি। 
কিছুদিন পড়িয়েছি। বোলপুর কলেজে পড়েছি। 
সামাজিক, সাংস্কৃতিক নানা কর্মকাণ্ডে বীরভূমে
অনেক গুলি বছর কাটিয়েছি। বীরভূমের প্রতি 
আলাদা এক ভালোবাসা কাজ করে। সেই ভালোবাসা থেকে ই আমার সামান্য বীরভূম চর্চা। 
আমার লেখালেখির বড় অংশ জুড়েই বীরভূম। 
তাই প্রথম বই টি করতে পেরেছি ইলামবাজার কে কেন্দ্র করেই।  কুঠিবাড়ি ভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্য। 
এবং ইলামবাজারের কথা ও কাহিনী। 
অন্যান্য যে সব লেখা এই সমাজমাধ্যমে, ফেসবুক পেজে বা ব্লগে রয়েছে বা নানা পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেই সব লেখা একত্রিত করার ইচ্ছা  আছে। ইচ্ছা ই - বুক করার ও। আমি চাই আমার সব লেখা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে। 
কিনে বই খুব কম জনেই পড়ে। আমার ধারণা আগামী তে মানুষ এখানেই পড়ে নিতে চাইবে। 
 কিন্তু বইমেলায় বেশ ভিড় হয়। বই এর একটা আলাদা মূল্য আছে অস্বীকার করিনা। বই, বই ই। 
তবু অনেক কথা আছে। আমার যা অভিজ্ঞতা সে না হয় আরেক দিন বলা যাবে। 
আজ বীরভূম বিষয়ক লেখালেখির একটা  তালিকা। 
**বীরভূমের লোহা মহল 
**মুলুটির মন্দির রাজি, 
**গণপুরের মন্দির, ' ফুলপাথরের মহাকাব্য'
**মল্লারপুর 
**রাজনগর কথা 
**রসা - বড়রা র প্রস্তর দেউল 
**বীরভূমের বৈচিত্র্যময় মন্দির 
**দুবরাজপুর কথা ও কাহিনী 
**দুবরাজপুরের মন্দির 
**হেতমপুর কাহিনী। চন্দ্রনাথ মন্দির। রাজবাড়ি 
**কোটা - শীর্ষা 
**টিকরবেতার পিতল শিল্পের কথা 
**জয়দেব কেন্দুলী নিয়ে নানা লেখা 
**রাধাবিনোদ মন্দির। মোহান্ত অস্থল এর পিতলের রথ, গীতগোবিন্দম এর জয়দেব 
মানুষ জয়দেবের খোঁজে 
**ধর্মমঙ্গলের অন্যতম কবি নরসিংহ বসুএবং তাঁর  রাজনগর যোগ। 
**১৬৩৩ সালে নির্মিত ঘুড়িষার রঘুনাথজীর মন্দির এবং ১৬৩১ সালে মাসড়া গ্রামে তৈরি মন্দির। একটি তুলনামূলক আলোচনা। 
**ঘুড়িষা গ্রামের দুই বিখ্যাত মন্দির 
**ইলামবাজার। গঞ্জ ইলামবাজার কথা। 
**ইলামবাজারের মন্দির 
**ইলামবাজার কেন্দ্রিক নানা বিধ লেখা। 
**'তুলাপট্টিতে আর বসেনা নীলামের হাট '
**আনন্দবাজার পত্রিকায় বড় প্রবন্ধ। 
**সুরুল, রাইপুর, আদমপুর, চন্দনপুর, মির্জাপুর, সুপুর, ইটাণ্ডা নিয়ে নানা লেখা এবং ছবি। 
**এছাড়াও যেখানের সম্বন্ধে হয়তো লেখা হয়নি সেখানের মন্দির টেরাকোটার ছবি। 
** জয়দেব কেন্দুলী কে নিয়ে এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে আকাশবাণী কলকাতায় তিনবার বলেছি। 
** ইলামবাজার এবং এপার ওপার এর দুই টি পিতলের রথ নিয়ে আকাশবাণী শান্তিনিকেতনে কয়েকবার বলেছি। 
মনে হতে পারে নিজের ঢাক নিজেই পেটাচ্ছি। কিন্তু না। এই লেখাএক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই লিখেছি। 
বীরভূমের বিশিষ্ট বন্ধুদের ট্যাগ করেছি। 

** আপনারা জানেন মন্দির টেরাকোটা আমার অন্যতম প্রিয় বিষয়। বনকাটির মন্দির এবং ইলামবাজারের মন্দির দেখেই সেই বালক বয়সেই এই ভালোবাসার উন্মেষ। 
যেমন ইলামবাজারের আরস্কাইন সাহেবের কুঠিবাড়ির ভগ্নাবশেষ বা তাঁদের পরিবারের সমাধি ক্ষেত্র থেকেই,নীল ও গালা শিল্পের একদা বিখ্যাত কেন্দ্র সেই প্রাচীণ ইলামবাজার কে খোঁজা। **ইলামবাজারের চারপাশ কে খোঁজা। যেমন ঊষহর, ধল্লা, দ্বারোন্দা, দেউলী, ইত্যাদি স্থান সম্পর্কে লেখা। 
এখনকার এই মাধ্যমের সুবিধা হচ্ছে 
দৃশ্য শ্রাব্য মাধ্যম। এখানে আছি দীর্ঘদিন। কয়েক হাজার ছবি নষ্ট হয়ে গেলেও, এখনও আছে কয়েক হাজার। 
বিরাট বিস্তৃত ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে আমার সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখেই আমি নির্দিষ্ট একটা ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখতে চেয়েছি। 
**প্রাচীণ গোপভূমের অন্তর্ভুক্ত পরগণা সেনপাহাড়ী এবং বীরভূমের সেনভূম তথা 
অজয় তীরের দুপারের মানুষের জীবন কথা। 
আমার সীমিত সামর্থে এই কাজটুকুই মাত্র করতে পেরেছি। 
**আমার কোন উচ্চাভিলাষ নাই। আমি সামান্য এক আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী। ক্ষেত্রসমীক্ষক। কোন স্থান নিজের চোখে না দেখে, আমি কোন লেখা লিখিনা। 
আমি কোন 'মুখ' নই। যেমন " বীরভূমের মুখ "। কি "পুরুলিয়ার মুখ " বা "বাঁকুড়ার মুখ "। সে সামর্থ্য নেই। অনেক জ্ঞানী, পণ্ডিত, বিদগ্ধ লেখক  জনেরা আছেন। 
আমি আঞ্চলিক ইতিহাসের  গল্পকার, কথাকার। সমাজমাধ্যমের বন্ধুরা বলেছেন " সেনপাহাড়ীর কথাকার"
কেউ " সেনপাহাড়ীর কথক ঠাকুর " 
কেউ " জঙ্গলমহলের কথাকার "
এই রকম নানা অভিধা। যথেষ্ট। 
বাইরের বন্ধুরা জানেন আমি বীরভূমের। 
বীরভূম কি জানে কি জানি! 

যে সব সংকলন গ্রন্থে আমার বীরভূম বিষয়ক প্রবন্ধ গুলি প্রকাশিত হয়েছে 
তার একটা তালিকা যদি পারি, দেব। 
আপনাদের জ্ঞাতার্থে।  কিছু কাজ তো করেছি। ভবিষ্যৎ ই বলবে। 
অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার। 
বীরভূমের অনেক বন্ধুকে ট্যাগ করেছিলাম। 
কেউ কোন সাড়াশব্দ দেননি। 
------------ ------------ ------------ ------------ ©  প্রণব ভট্টাচার্য। 
** ইলামবাজার কেন্দ্রিক আমার ছোট্ট বই টি র 
 নাম " এলেমবাজার নিলামবাজার ইলামবাজার "
দাম মাত্র ২০০/ টাকা। বন্ধুরা ঘরে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন। পরিবেশক অক্ষরযাত্রা প্রকাশনী র আনন্দ গোপাল হালদার। ফোন নং 9474907307. ফোনে অর্ডার দিলেই হল। 
------------ ------------ ------------ ------------ 
আমাকে ফেসবুকে ই পাবেন। অনুরোধ না জানালে কোথাও লিখিনা। ফেসবুক পেজে শুধু রিলের ভীড়। ওখানে লেখা কেউ পড়েননা। 
বাংলা ব্লগের তেমন চাহিদা নাই। তবুও একটা ব্লগ আছে। 
https:// matirpradip.blogspot.com 
ফেসবুক পেজ। Pranab's canvas 
ইউ টিউব চ্যানেল খুলেছিলাম। চালাতে পারিনি। 
এই। 
------------ ------------ ------------ ------------ ----
" ভ্রমি বীরভূমের পথে  - এই রকমের নাম দিয়ে শুধু বীরভূম নিয়ে একটা বই করার ইচ্ছা। 
কোন প্রকাশক এগিয়ে আসবেন! 
------------ ------------ ------------ ------------ ------------

দুই দিদির গল্প

।। দুই দিদির গল্প।।
  কথা ও কাহিনী। ৷ ৷ প্রণব ভট্টাচার্য

  ভাবুন তো একবার। কোথায় রংপুর  আর কোথায় রাণীগঞ্জ।
  এখন কার বাংলাদেশের রংপুর। আর পশ্চিম বর্ধমানের কয়লাক্ষেত্র রাণীগঞ্জ। রংপুর থেকে রাণীগঞ্জ । এক কিশোরী বৌ হয়ে এলেন এখানকার এক গ্রামে। গ্রামের নাম সাতগ্রাম।
চারপাশে তার ছয়টি গ্রাম। মাঝে সে সাতগ্রাম। সেই সাতগ্রামের চ্যাটার্জি পরিবার। নামী দামী পরিবার। কয়লাকুঠি র কেউ ম্যানেজার তো কেউ খাজাঞ্চি। কেউ বড়বাবু। কোম্পানির বিশ্বস্ত সব লোক। তাঁদের হাতে পরিচালনার অনেক খানি। তখন কয়লা ব্যবসা খুব জনপ্রিয় হয়ে গেছে।
এখান থেকে নদী পথে সে কয়লা যায় পাবনা রংপুর।
জমিদার বাবু র কয়লা ব্যবসা। তার ম্যানেজার আমাদের এই রংপুর এর দিদির বাবা। দাদারা তাঁর সব জমিদারী ফেরেস্তায়
কাজ করে। একজন তো তখনকার আসানসোলে বাসা বেঁধেছেন। সাতগ্রামের বাবুদের সাথে ব্যবসার সূত্রেই আলাপ
যোগাযোগ। কেননা তাঁদের হাতে কয়লা পাবার কাগজ।
   বুদ্ধি খেলে যায় রংপুরের দিদির দাদার। এই চ্যাটার্জি বাড়িতে যদি বোনের বিয়ে দেওয়া যায়। কেমন হয়। এঁরা কি রাজি হবেন!  দেখাই যাক। প্রস্তাব টা পাড়া ই যাক না কেন।
সেই প্রস্তাব নিয়ে একদিন বাড়ির কর্তার নিকট একদিন এলেন তিনি। প্রস্তাব শুনে কর্তা মশাই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকবার পর  মেয়ে দেখতে রাজি হয়ে গেলেন।
সে মেয়ে কে আত্মীয় স্বজন সমেত আনানো হল আসান সোলের বাসায়। সেখানেই মেয়ে দেখার ব্যবস্থা হল। 
  মেয়ে তো দেখতে চমৎকার সুন্দরী। নানা গুণসম্পন্না।
  খুব ভালো রান্না জানে। হাতের কাজ জানে নানা রকমের।
কিছুটা লেখাপড়া ও জানে।
এই পরিবার সম্বন্ধে  রংপুরের জমিদার বাবুর সপ্রশংস  চিঠি।
   তখন ছেলেদের আর মেয়ে দেখার চল ছিলনা। তবু এখানে
ছেলে মেয়ে দেখে এলো বন্ধুবান্ধব দের নিয়ে। অপছন্দের কিছু নাই।
তারপর একদিন শুভক্ষণে  চার হাত এক হল। অগ্নি সাক্ষী করে। মহা ধূমধাম। সাতগ্রামের চ্যাটার্জি বাড়িতে মহা আয়োজন। গোরু গাড়িতে রাণীগঞ্জের বাজার থেকে মাল আসছে তো আসছে। আত্মীয় স্বজন ; কনে যাত্রী সব গোরু গাড়িতে। যেন গোরুগাড়ি র মেলা বসে গেল " রাজপুত বাড়ির ডাঙ্গায় "।
একা এই বোন নয়। এর পরপর তাঁর কয়েকজন জন বোন এসেছেন এই চ্যাটার্জি বাড়িতে। কয়েক বছরের ব্যবধানে।
  আমি ভাবি এখনও পাত্র পাত্রী বিজ্ঞাপনে থাকে রাঢ়ী য় পাত্র
রাঢ়ী য় কন্যা চাই। বারেন্দ্রী হলে চলবে না।
আর আজ থেকে কত বছর আগে। একশো বছরে র ও আগে।  তখন দুই পরিবারের মধ্যে এই প্রশ্ন তো ওঠেনি।
কে মেলালো। কিসে মিলল। এ যেন বিবাহ রাজনীতি। রাষ্ট্র নৈতিক বা কূটনৈতিক। এখানে মেলালো ব্যবসায়িক বুদ্ধি।
পরবর্তীতে দু ই পরিবারের ভীষণ ভাবে আর্থিক সমৃদ্ধি গড়ে ওঠার ইতিহাস। 

।।দুই দিদির গল্প।।  কথা ও কাহিনী। দ্বিতীয় গল্প 

  কোথায় বরানগর আর কোথায় বনকাটি।
  বন কেটে বসত শুরু কবে থেকে তা বলা সম্ভব নয়।
   প্রাচীন ' গোপভূম ' এর সেনপাহাড়ী পরগনার জঙ্গল মহলের
  একটি গ্রাম।। একেবারে ' গড় জঙ্গলের ' গায়ে গা লাগিয়ে এই গ্রাম। ' ইছাইঘোষ এর দেউলে ' চূড়া দেখা যায় গ্রামের পশ্চিম প্রান্তের উঁচু মোরাম চাতাল থেকে।
  গড় জঙ্গল। নামের ভিতরে ই " গড়' ভরা। সে ছিল একদিন।
জঙ্গলের ভিতরে ছিল গড়। পাল রাজাদের অধীনে সে গড়ের
অধিপতি ছিলেন। কর্ণসেন।  সেই সেন কে অতর্কিত আক্রমণ করে গড় দখল করে নেন ইছাই ঘোষ। এ গড়ের অনেক নাম
ঢেকুর গড় ; ত্রিষষ্ঠীগড়। দেবী শ্যামারূপা ইছাই এর আরাধ্যা দেবী। তাঁর বরে ইছাই অপ্রতিরোধ্য। ধধর্মমঙ্গল এর কাহিনী তে তাকে আমরা পাব। লাউসেন ইছাই যুদ্ধকথা। দ্বিতীয় বারের যুদ্ধে ইছাই পরাজিত এবং নিহত হন। তিনি তখন বৃদ্ধ।
আবার এই জঙ্গলের মধ্যে ইংরেজ দের আক্রমণ থেকে বাঁচতে  কেল্লা বানিয়েছিলেন বর্ধমানের রাজা চিত্র সেন।
  সে অনেক কথা। পাশেই বয়ে চলেছে অজাবতী ; অজি ; মানে অজয়। অজয়ের ওপারে বীরভূম। লোককথা এখানেই না কি কবি জয়দেব এর সাথে রাজা লক্ষ্মণ সেনের সাক্ষাৎকার ঘটেছিল। ' দেহী পদ পল্লব মুদারম ' এর  কবি তাঁর কাব্য' গীতগোবিন্দম' রচনা করেছিলেন রাজা লক্ষ্মণ সেনের অনুরোধে।
বাংলার সেন রাজাদের পূর্বপুরুষ রা কর্ণাট দেশ থেকে এদেশে এসে এখানেই না কি প্রথম তাঁদের বাসস্থান স্থির করেছিলেন।
এমন মত পণ্ডিত প্রবর সুকুমার সেন সহ আরও অনেকের।
তাই পরগণা র নাম সেনপাহাড়ী। আজও চালু মোগল আমলের পরগণা সেনপাহাড়ী।
 এই জঙ্গল মহল এলাকার অযোধ্যা - বনকাটি এলাকা।
চারপাশে নানা ছোট বড় গ্রাম। আর সব গ্রামেই রয়েছে বাগদি ; বাউরী ; ডোম ; মুচি ; খয়রা ; খাঁড়াত  আর হাঁড়ি দের
পাড়া। তারাই পাহারা দিচ্ছে গোটা জঙ্গল মহল।
সেই ইছাই ঘোষের আমল থেকে। সবাই ছিল তাঁর সৈন্য বাহিনী তে। সেনপাহাড়ীর  ডোম ; হাঁড়ি বা মুচি রা দুর্ধর্ষ। রক্তে তাদের আজও সেদিনের যুদ্ধের উন্মাদনা।
  আমাদের এই বনকাটির বাবুরা মানে রায় বাবু ; মুখোপাধ্যায় ; চট্টোপাধ্যায় বাবুরা সব মিলে মিশে পাশাপাশি থেকে একসাথে ব্যবসা করেন। যেন বারো ঘর এক উঠোন। নিশ্চয়ই ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। তবে নানা পরিবার নানা রকমের ব্যবসা করেন। 
প্রাচীণ সব বৃক্ষে ঘেরা। তপোবনের মতো।   জমজমাট ব্যবসা তাদের।
ওপারে ইংরেজ সাহেব দের কুঠিবাড়ি। ইলামবাজার তখন
গঞ্জ। লাক্ষা বা গালা ; নীল ; সুতী বস্ত্রের নীলামের বাজার।
  বাণিজ্য কেন্দ্র। ডেভিড  আরস্কিন  সাহেবের বিরাট কুঠিবাড়ি। ফরাসি দের কুঠিবাড়ি। তাঁদের সাথে এদেশীয়
সম্পন্ন মানুষেরা ভালো ব্যবসা করছেন। প্রচণ্ড ধনী হয়ে উঠছেন তাঁরা।
আমাদের বনকাটি র বাবুরা ইংরেজ দের কুঠিবাড়ি র সাথে ব্যবসা আবার স্বাধীন ভাবে ব্যবসা করেন।
  লাক্ষা বা গালা ; নানা বনজ দ্রব্য ; আর কাঠ কয়লা ; এবং কয়লা র ব্যবসা। অজয়ের জলপথেই  তখন ব্যবসা চলে।
ব্যবসায় মুখোপাধ্যায় বাবুরা সবাই কে ছাপিয়ে যাচ্ছেন। কলকাতায় ব্যবসা করেন। মাল আমদানি রপ্তানির। আবার পাইকারি ব্যবসার। 
অন্যেরাও কম কিছু না। বানাচ্ছেন নিজেদের সুরক্ষার জন্য
উপযুক্ত প্রাসাদ। ভূগর্ভস্থ কক্ষতো আছেই। রায় পরিবার  বানাচ্ছেন শিবমন্দির। ১৭০৪ শকাব্দে প্রথম। বিষ্ণু দালান ; দুর্গা দালান।
একই প্রাঙ্গনে পনেরো টি মন্দির। ১৭৫৪ ; ১৭৫৬-৫৭ শকাব্দে নির্মিত।
  মুখোপাধ্যায় বাবুরা শোনা যায় একদিনের ব্যবসার আয়ে
বানিয়েছিলেন বিখ্যাত পিতলের রথ। ১২৪২ বঙ্গাব্দে। যার গায়ের অলংকরণ
নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবেনা। তার আগে বানিয়েছেন
অপুর্ব টেরাকোটা অলংকরণ যুক্ত বিখ্যাত পঞ্চরত্ন শিবমন্দির। ১৭৫৪ শকাব্দে।  চট্টোপাধ্যায় পরিবারের বিরাট দালান। শিবমন্দির। রায় কালীবাড়ি খুবই বিখ্যাত। দ্বিতল বিষ্ণুমন্দির। দুর্গাদালান। ১৭৫৬-৫৭ তে পাশাপাশি তিনটি দেউল শিবমন্দির। কোন এক  শুভ দিনে
বরানগর থেকে এক কিশোরী বৌ হয়ে এলেন এই বনকাটি তে। যেখানে সন্ধ্যা নামলে চারদিক আলো করার জন্য মশাল জ্বালায় পাহারাদার রা। পাশেই পাষাণ চণ্ডী তলার আমবাগান।
তার পাশেই গড় জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসা " রক্তনালা "গড়ঘাটা " হয়ে বয়ে মিশে যাচ্ছে অজয়ে। এই নালা দিয়ে ছোট নৌকোয় মাল চলাচল করে। রাতে শিয়াল আর গো বাঘা দের ডাক। এদিকে ওদিকে চন্দ্রবোরাদের আনাগোনা। রাতে অজানা শিস ঘণ বাঁশ বাগানে। প্রাচীন সব তালের ডগায় শকুন ছানার ডাক। তেমনি লম্বা খেজুর গাছ গুলো। আর  বিশাল চাকলতা বা খেলকদম। কত টিয়া, চন্দনা যে থাকে সেখানে। 
তালগাছের মাথায় থাকে শকুনেরা। তাদের ছানারা কাঁদে 
ঠিক মানুষের বাচ্চার মতোই। এই সেই বনকাটি।
কোথায় বরানগর আর কোথায় এই বনকাটি।
বাবুরা তো স্বাধীন ভাবে কলকাতা র বানিজ্যিক হৌস গুলির
সাথে ব্যবসা করেন। নিশ্চিত ভাবেই সেই সুত্রেই মেয়ের বাবার আলাপ এখানকার বাবুদের সাথে। ব্যবসার জন্য জাহাজ ঘাটা থেকে শুরু করে অনেকে দালালী করে ও অনেক পয়সা করেছেন। কলকাতা র বাজারের হালচাল জানার জন্য ;
বিদেশী জাহাজে ভালো খদ্দের ধরতে পারলেই হল।
তার জন্য তাঁদের কে নিয়োগ করতেই হত।
  এই ব্যবসার সুত্রেই আলাপ মেয়ের বাবার সাথে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের কর্তার। এই ঘরে মেয়ে যাবে। সে আর বলতে।
  যোগাযোগ। দেখাশোনা। অনুমান করে নিতেই পারি।
  তারপর একদিন বিয়ে।
কেউ তাঁর নাম জানে না। বরানগর এর দিদি। দিদি মানে দিদিমার ও দিদিমা। সে কি আর আজকের কথা।
কি তাঁর স্মৃতি। শোনা যায় তাঁর স্বামীর অকাল মৃত্যু র পর
তিনি বানিয়েছিলেন মুখোমুখি দুটি শিবমন্দির। টেরাকোটা য় মোড়া ছিল সে মন্দির দ্বয়। তাকে সম্পূর্ণ বিনষ্ট করা হয়েছে।
  কিন্তু নিশীথ রাত্রে মুখোমুখি যেন কথা বলে দুই মন্দির।
   এ তাকিয়ে আছে ওর পানে।
 হু হু বাতাস বয়। সেই বাতাসে মিশে থাকে সেদিনের স্মৃতি।
----------- ----------- ----------- ----------- ----------- ২ পাতা শেষ।
  সমাপ্ত।
লেখক। প্রণব ভট্টাচার্য। সেনপাহাড়ী পরগনার আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী। অনেকে বলেন " সেনপাহাড়ী র কথাকার "

** চট্টোপাধ্যায় পরিবারের ভগ্ন দালান বাড়ি। 
মন্দিরের ছবি পেলাম না এখন।

রেডিও ঃ স্মৃতি চারণ

।।  রেডিও  ঃ  স্মৃতিচারণ।।     প্রণব ভট্টাচার্য

ভোর    ভোর হয়ে জেগে ওঠে  বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কণ্ঠে
পবিত্র সকাল   শুদ্ধ স্মরণ  তর্পণ। 
তাহার নামটি রঞ্জনা  সেই মায়াময় দুই কণ্ঠ। 
অজিতেশের  মধুসূদন  গোপাল অতি সুবোধ বালক
জীবনকে ভরিয়ে দিত  শান্তি বারি সিঞ্চনে। 
রেডিও নাটকের স্বর্ণ সম্ভারে ধনী  আকাশবাণী কলকাতা। 
  ভোলা অসম্ভব তাই ভোলা যায়নি। 
মুক্তিযুদ্ধে  ওপার বাংলার মরণপণ লড়াই
এপার থেকে প্রেরণা জোগায় দেবদুলালের ভাষ্য। 
  আমি ইডেন থেকে বলছি   যেন হাইকোর্ট প্রান্ত দৃষ্টি পথে
   ভেসে ওঠে  অজয় বসু    কমল বাবু দের  ধারাবিবরণী তে। 
   গানের ভুবন ভরা  রাগে অনুরাগে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাতে। 
   প্রকৃত পরিবেশনে  সংবাদে ছিল সিদ্ধ সার্থকতা। 
    এখানেই ছিল মানুষের আস্থা। রেডিও।
   আকাশবাণী। আকাশবীণার ঝংকার
   ছিল তো সবই  ভবন টি ও দণ্ডায়মান। 
    কিন্তু আর আমাদের ঘরে ঘরে
  মারফি ; ফিলিপস ; বুশ  দের সেট কবেই আবর্জনা
   আর কত ছিল  সন্তোষ  ইত্যাদি
   আমাদেরও বাড়িতেও অবশেষে একটা সেট এসেছিল। 
   সে টা দাদু কিছুতেই অন্যকে হাত দিতেই দিতনা। 
   একটা অবলম্বন হয়ে উঠেছিল কবে যেন
   ভালো যা কিছু শোনা   ভালোকে চিনতে শেখা
   শ্রবণ আনন্দ প্রক্রিয়া   তার প্রসাদ গুনের আস্বাদন
   যদিও তা ব্যক্তিগত অনুভব সঞ্জাত
   গরমের উঠোনে আমরা সবাই চাটাই পেতে বসে
   একসাথেই শুনতাম। 

বোলপুরের স্টেশন রোড ধরে হেঁটে যাওয়া কলেজ ছেলেরা
এক দোকান থেকে আর এক দোকানে  টেস্ট ম্যাচের স্কোর
জানতে জানতে কলেজ পৌঁছানো
কেউ স্কোর জানাতে বিরক্ত হতনা কিন্তু সে সময়

  আমাদের এই পাড়া গাঁয়ে রেডিও সে তো এক বিরাট ব্যাপার। 
বটূ কোঁড়া কি করে যে অসাধ্য সাধন করেছিল
  ফিলিপসের একটা টাইগার সেট কিনে
  কাঁধে ক্রশ করে ঝোলানো বাজাতে বাজাতে
  গ্রাম ঘুরতে বেরুত      -  'শোন হে সবে
  দ্যাখো কিনেছি আমি ' । এই ই আমার সব।
  সবাই জানে সে একা। বৌ মরে গেছে। ছেলেপুলে নাই
  সারাদিন রাত বাজত তার উঠোনের 
নারকেল গাছে পোঁতা  পেরেকের আঁংটা থেকে
  - এই নে শোন গোটা পাড়া '
কোন কিছু তার বাদ নাই কৃষি কথা কি আদিবাসী গান
দিন শুরু হত তার রেডিও তে  
রাতের আকাশের তারা দেখতে দেখতে
ঘুম না আসা পর্যন্ত ।  ঘুম আসা তো সহজ নয়
পেট পুরে তাল তাড়ি খেলে তবে কিছুটা হয়। 

নিজেকে শেষ করবই  বললে তো আর কিছু
করার থাকেনা। প্রণোদিত আত্মহত্যা করেছে
আমাদের রেডিও   আকাশবাণী কলকাতা কে
ধরা আমাদের সম্ভব নয়     না হয় দেড়শ  মাইল দূর
আকাশবাণী শান্তিনিকেতন  এই সেদিন ও কি সুন্দর
আনন্দধারায় গান শোনাতো   সে হারানো সুখস্মৃতি
বাঙলা গানের ক্রমবিবর্তন টা কে গান দিয়েই ধরুন না
জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ বা বিমান মুখোপাধ্যায় 
এর মতো মাপের 

সঙ্গীত গুণী মানুষেরা যদি বুঝিয়ে দেন
শেখা হত  জানা হত   ঋদ্ধ হতাম
একবার এক আলাপচারিতায় বলেছিলাম
  এক আধিকারিক কে। সাথে ছিল সঞ্চালিকা অপরাজিতা।
  নিজেরও  সুখস্মৃতি  - এই আকাশ বাণী শান্তিনিকেতন
  থেকেই আঞ্চলিক ইতিহাস এর এক চর্চাকারী হিসাবে
  যখন বলেছি  আর পরিচিত জনেরা বলেছেন
আপনাকে শুনলাম রেডিও তে
সে এক অন্যরকম ভালোলাগা
চমৎকার বিষয় বাছেন সঞ্চালিকা অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়।
  সে দিন বুঝি হারালো! হায়!
কিন্তু মানুষ যে আবার রেডিও তে ফিরতে চাইছেন
সারা পৃথিবী জুড়ে ই। 
দুর্যোগ বিপর্যয় মোকাবিলা য় রেডিও ই তো ভরসা।
  টিভি আজ দীন। প্রকট তার দৈনতা।
এতবড় বাংলাসাহিত্য। ব্রাত্য বাঙলা টিভি সিরিয়ালে।
সেখানে চলছে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম নামক       অপকর্ম।
বাঙালী  রুচির নিম্নগামিতা ঘটানো হচ্ছে সুকৌশলে।
ভদ্রলোকেরা মুখ ফিরিয়েছেন অনেক দিনই
ঘরের মেয়ে বৌ রা আর কি করে! চোখ মেলে থাকে
  দেখে একটা মেয়েই রবিনহুড। একা সম্পূর্ণ একাই
সব সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছে বাহান্ন জনের এক পরিবারের।
আবাসন গুলো তে বৃদ্ধ এক আর বৃদ্ধা। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

রেডিও কি আবার স্বমহিমায় ফিরতে চায়
প্রশ্ন তো নিজেকেই করতে হবে রেডিও কে
এখনও যাঁরা রেডিও কে ছাড়েন নি  বরং জড়িয়ে ধরে আছেন
তাঁদের কে তো আপনারা চেনেন না
তাঁদের কে চিনুন।
তাঁদের কথা শুনুন।
আকাশবাণী আবার বেজে উঠুক আমাদের ঘরে ঘরে।
কর্তারা ভাবুন রেডিও কে কি করে জনপ্রিয় করা যায় আবার। মতামত নিন গুণী জনদের। 
আমার ধারণা রেডিও বাঁচতে পারে তার পুরনো দিনকে অবলম্বন করেই। 
রেডিও শুনেই বড় হয়েছি। নিজের একটা ছোট সেট ছিল মার্ফি মিনি। বালিশের পাশে নিয়ে শুনেছি। 
ছোটবেলায় কলকাতা গেলে, আকাশবাণী ভবন টা আমাকে খুব টানত। যদি ভিতর টা ঘুরে দেখা যায়। কি ভাবে সব হচ্ছে! প্রবল কৌতুহল। 
কখনও ভাবিনি এই ভবনের ভিতরে যাব। 
এই বয়সে এসে আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী হিসেবে ডাক পেয়ে বড় আনন্দিত হয়েছি। 
ধন্যবাদ জানাই মাননীয় শ্রী সিদ্ধার্থ মাইতি বাবুকে। 
কয়েক বার ডাক পেয়েছি। হোক না ন মিনিটের কথিকা। বুঝেছি ন মিনিট সময় কম নয়।
আমার মনে হয় রেডিও কে আরও জনপ্রিয় করে তোলা যায়। ভাবতে হবে। হয়তো অনেকে মোবাইলেই শোনেন। আবার অনেকে পারেন না
অনেক বয়স্ক স্মৃতিকাতর মানুষ আছেন। 
তাঁদের জন্যই শোনান না যা কিছু আমাদের সম্পদ। আপনাদের ভাণ্ডারে আছে বিবিধ রতন। 

------------ ------------ ------------ ------------ ------------  সমাপ্ত।
লেখক। প্রণব ভট্টাচার্য। আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক। ক্ষেত্রসমীক্ষক। প্রাবন্ধিক।
গ্রাম। সাতকাহনিয়া। পোষ্ট। বনকাটি। ৭১৩১৪৮। থানা। কাঁকসা। জেলা। পশ্চিম বর্দ্ধমান। ফোন। ৮২৫০৭৬৭৫০৭।
#akashbanishantiniketan 
#akashbanikolokata
#akashbanimoitri
#prasarbharti