Sunday, 31 August 2025

আমার মাতামা

আমার মাতামা। বালকদাসী বৈরাগ্য। 
 আগের নাম যে কি ছিল, তা জানিনা।। 
কোনদিন জিজ্ঞেস ও করিনি। মায়ের আবার নাম কি!  মা । 
 এই সাতকাহনিয়া গ্রামে তার আসা এবং শতাব্দী প্রাচীন নবীন দাস বাবাজীর আখড়ায় স্থান পাওয়া, এক দীর্ঘ জীবন পরিক্রমা। 
আমাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন। 
ছোট তেই মা মারা গিয়েছিল। 
যেই কোলে তুলে নিত সে ই আরেকটা মা হয়ে যেত। দিদিমা কাউকে মানা করত না। 
সে তুলশী বাউরি ই হোক আর মাতামা ই হোক। 
বা অন্য কেউ হোক। গাঁয়ের হলেই হল। 
আমার মাতামা খুব কম বয়সেই এ গ্রামে এসেছিলেন। বিচিত্র জীবন। তাঁর কোলে চেপে হাটে। কিশোরী ময়রার দোকানে একটি বড় রসগোল্লা আমার বাঁধা। আবার তাঁরই সঙ্গে নারানপুর যাওয়া। নদী পেরিয়ে। কোলে নিয়ে জল পার করত। ওপারে অজয়ে এক হাঁটু জল। 
বাগদি দাদুদের দাওয়ায় বসে কাঁসার থালায় শুকনো চিঁড়ে, পাকা আম, গুড়, গাছের কলা আমার জন্য বরাদ্দ। চকচকে ঘটিতে করে জল এনে দিত সদগোপ দের একটা মেয়ে। 
বামুনের ছেলে! 
 মাতামাই কোলে করে জয়দেব কেন্দুলী র মেলা তে নিয়ে যেত। কোটরে বাবার আশ্রমে জায়গা হত। 
বড় হয়েছি। ইলামবাজার হাই স্কুলে পড়তে যাই। 
ইলামবাজার বাউরি পাড়া, শুঁড়ি পাড়ার  ধারে এক প্রাচীন আখড়া। তখন সেখানে হরেকৃষ্ণ বাবাজী 
আখড়াধারী। আমি দাদু বলতাম। কেননা আমার দাদুর সাথে বেশ সখ্য ছিল। দুজনেই বাঁকুড়া র মানুষ। পরস্পরের প্রতি টান স্বাভাবিক। সত্যিই তাই ভাবি মাটির নিজের আকর্ষণ ক্ষমতা আছে। 
ইলামবাজারের বাবাজী ছিলেন ব্রাহ্মণ ঘরের সন্তান। ছোট তেই সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। 
 সোনামুখি আশ্রমের বিখ্যাত সাধু ছিলেন তাঁর গুরু। টুকটাক তাঁর মুখ থেকে মাতামার কথা শুনতাম। মাতামা তো নিজমুখে কিছুই বলতনা। 
পরে এই আশ্রমে আসেন অন্নপূর্ণা মাসীমা। আমার মা মাসী দের বয়সী। অযোধ্যা গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের মেয়ে। মুখোপাধ্যায় পরিবারের বউ। 
অল্প বয়েসেই বিধবা। তাহলে তার আর ঠাঁই কোথা। হয় কাশী না হয় বৃন্দাবন। হয়তো মাতামার বিশেষ আকর্ষণী ক্ষমতা য়  আমার ননুমা বেছে নিয়েছিলেন এই আখড়া কেই। বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন। সঙ্গী ছিল আমার মা। মাসীরা ছোট হলেও যেন খেলার সাথী। খেলার ই তো বয়েস। 
 অনুমা থেকে ননুমা হয়ে গিয়েছিল ছোট বেলায়। তাঁর  কাছে মাতামার কথা কিছু কিছু শুনতাম। সেই গল্প মনে মনে জুড়তাম। আজও জুড়ছি। 
আর কেউ নাই এই তল্লাটে মাতামার কথা বলার। 
খুব ইচ্ছে, যদি পারি  তাঁদের জীবন কাহিনী কে অবলম্বন করে একটা বড় লেখা লিখতে। 
যদি পারি! 
এই ছবি তে মাতামার সাথে যারা বসে আছে তাদের কথা ও থাকবে বৈকি। আরও অনেকের কথা। কত মানুষ এলো, গেলো এই আখড়ায়।

No comments:

Post a Comment