Tuesday, 26 June 2018

এপার- ওপার

এক পা এপারে তো আরেক পা ওপারে। মাঝে নদী। অজয়। যদিও সে নদ। প্রতিদিনের পারাপার। একবেলা এপার ওপার না করলে মন টা যে কেমন করে। বাজার হাট দোকান দানি গল্প গুজব রোগ অসুখ সবেতেই এপার ওপার করতে হবেই। সে কি আর আজকের কথা। এ চলে আসছে সেই কবে থেকে সে আর কে জানে। অজয় পেরিয়ে ' উত্তর রাঢ়'। বজ্জভূমি। সে কোন প্রাচীন যুগে। বক্রেশ্বর হয়ে রাঢ়িখণ্ড বা ঝাড়িখন্ডজংগলভুমি র ভিতর দিয়ে গিয়ে বৈদ্যনাথ ধাম। সব ই বীরভূম।পরেশনাথ পাহাড়ে জৈন সাধুরা তপস্যা করছেন। মহাবীর সাধু পরিক্রমা করে গেছেন। জৈন দের কাছে তাই রাঢ় পুণ্য ভূমি। এপারে বর্দ্ধমান তো তাঁর ই নামে। নির্গন্থপুত্র বর্দ্ধমান তো তাঁর ই অপর নাম। এই অজয় প্রাচীনা অজি বা অজাবতী হয়তোবা ঋজুপালিকা র তীর ধরে তিনি হেঁটেছেন অনেক অনেক পথ। সে তো অনেক কথা। যাইহোক ১৮---- সালে বর্ধমান - বীরভূমের প্রাকৃতিক সীমানা হিসাবে অজয় কে মেনে নেওয়া হল। ওপারে গঞ্জ ইলাম বাজার।রেশম ; কার্পাস; লাক্ষা ; নীল এর নিলাম কেন্দ্র। তা ছাড়া ধান চাল মুদিখানা সোনা রূপা র বাজার। এলেম আছে মানে ইজ্জত আছে তাই এলেমবাজার। আবার নিলাম এর বাজার। সেখান থেকেও হতে পারে। ভরা বর্ষায় পারাপার সহজ নয়। ওপারে খয়েরবুনি র শিমূল তলার ঘাটে নৌকো বাঁধা থাকে। পারাপার করে। অন্য সময় অল্প জল। বাঁশ কাঠ এর অস্থায়ী সাঁকো। পারাপার সহজ হয়। কোথাও হাঁটুজল।গোরু গাড়ি পার হয়ে যায়। বসুধার চাষি রা ধান চাল নানা সব্জী নিয়ে যায় ওপারের হাটে। এমনকি চলে যায় চৌপাহারী জংগল পার হয়ে বোলপুর এর আড়তে। বসুধার লড়ি বা নড়ি রা লাক্ষা বা গালা বেচে আসে ইলামবাজার এর নিলামে। এপারের নদী বাঁধ ধরে অযোধ্যা বনকাটি এলাকার মানুষ জন ইলামবাজার যায়। বারবার মাটির নদীবাঁধ ভেঙেছে। নদীবাঁধ - সে ও তো আজকের নয়। সেই কবে ১৮৪০ থেকে তৈরীর প্রস্তুতি। গৌরবাজার থেকে কাজলাডিহি। কাজলাডিহি থেকে খেড়োবাড়ি - অর্জুন বাড়ি। সাতকাহনিয়া থেকে সাগরপুতুল। বন্যার জল আটকানোর জন্য নীচু বাঁধ। তবু বর্ষা এলেই বুক দুরুদুরু। নদী তে বান এলেই বসুধা ভয়ে রাত জাগে।বারবার ডুবেছে যে। ১৯৬২ তে অজয় সেতুর উদ্বোধন হল। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের হাতে। মানুষের যাতায়াত সহজ হয়ে গেল। অনেক কাছের হয়ে গেলো এপার ওপার। ওপার ডাকে আয় আয়।আবার কাজ শেষে ঘরে ফেরা এপারে। ----------------------- এপার- ওপার। ------------------------ প্রণব ভট্টাচার্য।

No comments:

Post a Comment