Tuesday, 26 June 2018

ভগ্ন মন্দির

অঞ্জনা নদী তীরে --------------------- প্রণব ভট্টাচার্য সেই কোন ছোটবেলা থেকে ই রবীন্দ্রনাথ এর এই কবিতাটি র প্রতি আমার এক আশ্চর্য দুখী ভালোবাসা আজ যখন পরিণত বয়সে কেন এই ভালোলাগা তার কারণ খুঁজি মনেরগভীরে গিয়ে মাটির প্রদীপ জ্বালি তার ক্ষুদ্র সামর্থের কুণ্ঠিত আলোয় পাঠ করি চিত্রলিপি পাণ্ডুরাজার ঢিবির তলদেশে কিম্বা চন্দ্রকেতুগড় টেরাকোটা নারী কে আদর করি এক আশ্চর্য আবেগে ভোলনি তো আমাকে আমি তো ছিলাম। এই তো আছি সব ছবি বেশ পুরোনো হয়ে এল সেতো অনেক দিন সেই সব বালিকারা অনেক খেলা সাঙ্গকরেছে নিজেদের আঙিনায় তাদের আর মনে নাই ভাঙ্গা মন্দিরের পাশে টগর গাছের তলার খেলাঘর মনে নাই পথের ধারে মন্দিরের দাওয়া থেকে বৃষ্টি শেষে পথের নদী তে জোড়া ঝাঁপ সেই পোড়ো মন্দির খানি পরপর চলচ্ছবি র মতো যেন চোখের সামনে দিয়ে চলে চলে যায়। আমার ভিতরেঅন্তর্লীন বিষাদের সাথে মিশে যায় এক ভাঙা মন্দিরের হাহাকার। বুঝি হে বিষাদ তুমিই এখানে আমাকেএনেছ।  ভাঙ্গা একটা  দেওয়াল বুকে পুরেই জন্ম যার--- তার সেই ভাঙ্গা দেওয়াল এর  কালি পড়া কুলুঙ্গি তে তবু ম্লান দীপ জ্বলে।
অতি ক্ষুদ্র সামর্থে আলো ছড়ায়।

হে অমা- মহা নিশা

তমিস্রার দেবীরপূজা : জংগল মহল বর্ধমানের জংগল মহল। পরগনা - সেনপাহাড়ী। গড় জংগল। হাজার বছর আগে ছিল মহামাণ্ডলিক ইছাই ঘোষের গড়।ঢেকুর বা ত্রিষষ্টি গড়। অনেক দিন পর প্রায় আড়াই শো বছর আগে গড়ের ধ্বংসাবশেষ এর উপর কেল্লা বানিয়েছিলেন বর্ধমানের রাজা চিত্রসেন। তিনি ই তৈরি করিয়েছিলেন দেউল। বিখ্যাত ইছাই ঘোষের দেউল। জংগল এর সীমান্তে ছোটবড় নানা গ্রাম। জামডোবা ; সরস্বতীগঞ্জ; রক্ষিতপুর; লোহাগুড়ি; হরিকি; মলানদিঘি ; কুলডিহা হয়ে আরো দক্ষিণে আড়া ; বামুনাড়া; গোপালপুর ; বান্দরা। পশ্চিমে আকন্দারা; ধবনী ; বিজড়া - শোভাপুর ; কাঁটা বেড়ে ; জামবন জাঠগোড়ে ; শিবপুর ; বিষ্টুপুর ; নবগ্রাম। উত্তরে অজয়।ওপারে কেন্দুলী। উত্তরপূর্বে বনকাটি - অযোধ্যা ; সাতকাহনিয়া ; বসুধা ; রাধামোহনপুর। জংগলের গায়ে গায়ে বনগ্রাম ; নিমটিকুরি ; কোটালপুকুর ; গৌরাঙ্গ পুর ; দামোদরপুর; খেড়োবাড়ি। জংগল ভুমি র ভিতরে ভিতরে অনেক গুলি সাঁও তাল পাড়া। জংগল মানেই গা ছমছমে ভয়। গভীর জংগল। দিনে ই আঁধার। রাত বিভীষিকা র। তন্ত্রসাধনা ; কালী সাধনার ক্ষেত্র এই জংগল ভুমি। তমসার দেবীর পূজা না করে কি আর রণে যাওয়া যায়। ডাকাত রা তার পূজা করে। সেনপাহাড়ির ডাকাত রা কুখ্যাত। হাঁড়ি;ডোম; মুচি ; মেটে ; বাগদী ; মাল ; বাউরী। যারা ছিল একদিন ইছাই ঘোষের সৈনিক। তারা ই পরে ডাকাত হল। সেনপাহাড়ির মুচি রা তো বিখ্যাত। এরা সবাই কালীর পূজা না করে ডাকাতি তে যায়না। কালীপূজা হয় না এমন কোন গ্রাম নেই এই জংগল ভূমি তে। পরে গ্রামের ভূস্বামীরা ও চালু করলেন সাড়ম্বরে আঁধারনাশিনী ; মহাতমিস্রার দেবীর পুজা। ডাকাত দের যে বশ মানাতে হবে।

গ্রাম নাম কথা

আঞ্চলিক ইতিহাস : কাঁকসা জংগল মহল। বিদবিহার : নাম কথা প্রণব ভট্টাচার্য বিদবিহার। একটি গ্রামের নাম। কয়েক ঘর মানুষের একটি ছোট্ট গ্রাম। আবার এই নামেই গোটা গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম ও। বিদবিহার নাম টি এসেছে বৌদ্ধবিহার থেকে। অপভ্রংশ। অর্থাৎ একদিন এখানে বৌদ্ধবিহার ছিল। যা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশ্য পণ্ডিত এরা বলেন ই বাংলার ইতিহাস আছে বাংলার মাটির নীচে। উত্তরে অজয়। ওপারে উত্তর রাঢ়।বজ্রভুমি। বজ্জভুমি। একদা দূর্গম লাঢ় এর জংগলাকীর্ণ রুক্ষ পথহীন পথে হেঁটেছিলেন মহাবীর স্বামী। তাঁর জৈন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। নানা ভাবে তিনি স্থানীয় রেঢ়ো মানুষ দের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। পরে কিন্তু রাঢ়দেশ জৈন দের কাছে পুণ্য ভুমি তে পরিণত হয়। রাঢ়দেশ এ জৈন ধর্ম বিকাশ লাভ করে। কথিত আছে বুদ্ধদেব বীরভূম এর উপর দিয়ে পুণ্ড্রনগর এ গিয়েছিলেন। বাংলার বিখ্যাত পাল রাজাদের সময়ে সহজযানী বৌদ্ধধর্ম রাঢ়দেশে যথেষ্ট বিস্তার লাভ করে। সাধারণ মানুষ জাতপাত হীন এই ধর্মে আকৃষ্ট হয়। প্রাচীন তন্ত্র ও বৌদ্ধতন্ত্র তখন মিলেমিশে গেছে।নানা বৌদ্ধ দেবদেবী র মূর্তি পূজিত হচ্ছে নানা মঠ বিহার স্তুপে। রাজহাট ; ঠাকুরানী বাজার ; দণ্ডেশ্বর; এসব নামে সেই যুগের প্রভাব আছে। নানা ভাঙ্গা দেব দেবী র মূর্তি একসময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। গাছতলা য় পথের ধারে। সংরক্ষণ হয়নি। প্রত্ন চোরে রা সব চুরি করে নিয়ে গেছে।

নাম কথা

আঞ্চলিক ইতিহাস : কাঁকসা জংগল মহল। বিদবিহার : নাম কথা প্রণব ভট্টাচার্য বিদবিহার। একটি গ্রামের নাম। কয়েক ঘর মানুষের একটি ছোট্ট গ্রাম। আবার এই নামেই গোটা গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম ও। বিদবিহার নাম টি এসেছে বৌদ্ধবিহার থেকে। অপভ্রংশ। অর্থাৎ একদিন এখানে বৌদ্ধবিহার ছিল। যা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশ্য পণ্ডিত এরা বলেন ই বাংলার ইতিহাস আছে বাংলার মাটির নীচে। উত্তরে অজয়। ওপারে উত্তর রাঢ়।বজ্রভুমি। বজ্জভুমি। একদা দূর্গম লাঢ় এর জংগলাকীর্ণ রুক্ষ পথহীন পথে হেঁটেছিলেন মহাবীর স্বামী। তাঁর জৈন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। নানা ভাবে তিনি স্থানীয় রেঢ়ো মানুষ দের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। পরে কিন্তু রাঢ়দেশ জৈন দের কাছে পুণ্য ভুমি তে পরিণত হয়। রাঢ়দেশ এ জৈন ধর্ম বিকাশ লাভ করে। কথিত আছে বুদ্ধদেব বীরভূম এর উপর দিয়ে পুণ্ড্রনগর এ গিয়েছিলেন। বাংলার বিখ্যাত পাল রাজাদের সময়ে সহজযানী বৌদ্ধধর্ম রাঢ়দেশে যথেষ্ট বিস্তার লাভ করে। সাধারণ মানুষ জাতপাত হীন এই ধর্মে আকৃষ্ট হয়। প্রাচীন তন্ত্র ও বৌদ্ধতন্ত্র তখন মিলেমিশে গেছে।নানা বৌদ্ধ দেবদেবী র মূর্তি পূজিত হচ্ছে নানা মঠ বিহার স্তুপে। রাজহাট ; ঠাকুরানী বাজার ; দণ্ডেশ্বর; এসব নামে সেই যুগের প্রভাব আছে। নানা ভাঙ্গা দেব দেবী র মূর্তি একসময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। গাছতলা য় পথের ধারে। সংরক্ষণ হয়নি। প্রত্ন চোরে রা সব চুরি করে নিয়ে গেছে।

বিখ্যাত সেই যাত্রার আসর

রূপাই চণ্ডী তলা : যাত্রাপালা র আসর --------------------------------------------প্রণব ভট্টাচার্য নামটা কি চেনা চেনা। হয়তো বা। কেন না এই রকম চণ্ডী তলা দিয়ে নাম তো আর ও আছে কি না। যাইহোক এই চণ্ডী তলা বসুধা মৌজা য় ; থানা- কাঁকসা ; প: বর্ধমান। এখানে দেবী চণ্ডী - রূপাইচণ্ডী। তন্ত্রমতে তাঁর পূজা। নিত্যপূজা ছাড়াও চৈত্র সংক্রান্তি তে তাঁর বার্ষিকী বিশেষ পূজা অনুষ্ঠান। বৈশাখের ৩ তারিখ থেকে কলকাতার যাত্রাদল এর পালাগান। এলাকার মানুষ সারা বছরঅপেক্ষায় থাকেন। এই যাত্রা দেখার জন্যে।চারদিক থেকে মানুষজন ছুটে আসেন।কমপক্ষে দু তিন হাজার মানুষ। চারদিকে মানুষ আর মানুষ।রূপাই দহের পাড়ে ; ঝোপের ধারে।এমন কি গাছের উপরে ও। তখন তো ঘন জংগল। বড় বড় অর্জুনগাছ। পলাশের ঝোপ।আরো কত গাছপালা। এই এখানের যাত্রা পালাগানের আসর বসছে- সে তো অনেকদিন থেকে ই। প্রায় একশ বছর হতে চলল। কে না এসেছেন এখানে? নামী কোন না দল। প্রায় সবাই। রথী - মহারথী সব যাত্রা অভিনেতা অভিনেত্রী রা। কত বড় বড় সব নাম।ছোট ফণী ; বড় ভোলা; ছোট ভোলা; পান্না চক্রবর্তী ; গুরুপদ ঘোষ; দ্বিজু ভাওয়াল;শেখর গাঙ্গুলী; জ্যোৎস্না দত্ত; গুরুদাস ধাড়া; রাখাল সিংহ;নির্মল মুখার্জী ইত্যাদি ইত্যাদি সব নাম। পৌরাণিক পালা ই বেশী হত। পরে এল সামাজিক পালাগান।ঐতিহাসিক পালা ও হয়েছে অনেক। প্রাচীন তম সত্যম্বর অপেরা র বাঁধা আসর। অত মানুষ। পেট্রোম্যাক্স; হ্যাজাক এর আলো।তখন মাইক নাই। খোলা গলা য় গান। মানুষ মন্ত্রমুগ্ধ এর মতো শুনেছে- দেখেছে।। রাত এগারো টায় শুরু হয়ে সেই ভোর রাত। সারা রাতের আনন্দ অনুষ্ঠান। এলাকার এই ঐতিহ্য এখন ও বেঁচে আছে। তবে সেই যাত্রা আর নেই।সব দিক দিয়েই তার মান নেমে গেছে। _-----+-------------------------------+-----
সিং দরজা ----------------- প্রণব ভট্টাচার্য অনেক জমি জায়গার মালিক সম্পন্ন গ্রামীণ গৃহস্থ পরিবার গুলির গৃহসমষ্টির মূল দরজা দেখেই বোঝা যেত তাদের আভিজাত্য। রাজবাড়ি র সিংহদুয়ার ই তাঁদের প্রেরণা। রাজা না হোক ছোট ;বড় ;মাঝারি ;জমিদার তো বটে। মনে তো গর্ব আছেই। হ্যাঁ - মেজাজ টা ও। তাই ঠাকুর দালান ; ঘরবাড়ি সমেত সীমানা প্রাচীরের মাঝামাঝি সিংদরজা। পশুরাজ সিংহ। সর্বময় কর্তৃত্ব তার। দরজার উপরে দুপাশে তার মূর্তি না থাকলে কি নিজেদের চেনানো যায়! অন্যরকম ও যে হতনা তা নয়। মূল পরিবার ভাঙতে ভাঙতে ; জমি জায়গা হারাতে হারাতে সেই সব পরিবার গুলির এখন জীর্ণ দশা। পুরোনো স্মৃতি ই সম্বল। ঐ দরজার দিকে তাকালে - অনেক কিছুই মনে ভিড় করে আসে তো বটে ই। -------------------_-------------------------------

আরও কতকি

আর কি হারালো -------------------------- প্রণব ভট্টাচার্য গাঁ ঘরে রাস্তা বলতে তো কিছু ছিলনা। সে তো এই চল্লিশ বছর আগে মাত্র। ছিল কুলি। তাই পথ। আবার বর্ষা য় জল যাবার চওড়া নালা। যাই হোক - তাই সই।তাতেই গাঁয়ের লোকের চলে যেত। আর না গিয়েই বা উপায় কি। গাঁয়ের ভিতরে উঁচু পাকা রাস্তা আর বানাচ্ছে কে। অতএব গরমে ধুলো ওড়া। আর বর্ষায় কাদা মাখা পা। তাই এক বালতি জল পা ধোয়ার জন্য দরজার পাশে নামানো ই থাকতো। হাঁ তবে গাঁয়ের ছেলেদের একটা ভাল খেলা হত বর্ষার সময়ে।কুলি দিয়ে অবিরল জলের স্রোত। আর পাশের শিব মন্দির এর উঁচু দাওয়া থেকে সেই জলে ঝাঁপ। পুকুর গোড়ে ভাসিয়ে জল। মাছ ও ভেসে যাচ্ছে। ওস্তাদ রা ছেড়ে দেবে। ধরছে। মাথায় চটের বস্তার টোপা চাপিয়ে মেয়েরা কুলি থেকেই জল নিয়ে যাচ্ছে। যাই হোক এ নিয়েই গাঁ ছিল। বড় রাস্তা বা কুলি র ধারে মানে ঠিক মোড়ের উপরে সম্পন্ন গৃহস্থ বাড়ি। মূল ঘর রাস্তার দিকে পিছন করে হলেও রাস্তার দিকে মুখ করে একটা বৈঠক খানা ঘর থাকতো। সামনে বারান্দা।হয়তো দু দিকে বসার জন্য বান্ধানো ধাপ। গল্প তো চাই। আড্ডা। পরচর্চা পরনিন্দা র মতো জমাটি বিষয় আরকি হতে পারে। অন্য গপ্পোও যে হতো না তা বলা যাবেনা। তাস পাশা ও হত। সন্ধ্যায় অনেকে ই গলা ভেজাতেন। হারমনিয়াম তবলা ও কোথাও কোথাও বেজে উঠত। সংগে কন্ঠসাধন। এই বৈঠক খানা গুলি ই ছিল গাঁয়ের গপ্পকথার উৎস কেন্দ্র। পরদিন সব আসর ই সব আসরের খবর নিত।খবর লেন দেন এর লোক ও ছিল ঠিকঠাক। ভালো খবরে তাদের একটু বেশী ডোজ পাওনা হতো। সারা গাঁ ই মোটামুটি সব আসরের খবরা খবর নিয়ে তারপর মেতে থাকত। এই ই ষোলআনা বিনোদন।

এপার- ওপার

এক পা এপারে তো আরেক পা ওপারে। মাঝে নদী। অজয়। যদিও সে নদ। প্রতিদিনের পারাপার। একবেলা এপার ওপার না করলে মন টা যে কেমন করে। বাজার হাট দোকান দানি গল্প গুজব রোগ অসুখ সবেতেই এপার ওপার করতে হবেই। সে কি আর আজকের কথা। এ চলে আসছে সেই কবে থেকে সে আর কে জানে। অজয় পেরিয়ে ' উত্তর রাঢ়'। বজ্জভূমি। সে কোন প্রাচীন যুগে। বক্রেশ্বর হয়ে রাঢ়িখণ্ড বা ঝাড়িখন্ডজংগলভুমি র ভিতর দিয়ে গিয়ে বৈদ্যনাথ ধাম। সব ই বীরভূম।পরেশনাথ পাহাড়ে জৈন সাধুরা তপস্যা করছেন। মহাবীর সাধু পরিক্রমা করে গেছেন। জৈন দের কাছে তাই রাঢ় পুণ্য ভূমি। এপারে বর্দ্ধমান তো তাঁর ই নামে। নির্গন্থপুত্র বর্দ্ধমান তো তাঁর ই অপর নাম। এই অজয় প্রাচীনা অজি বা অজাবতী হয়তোবা ঋজুপালিকা র তীর ধরে তিনি হেঁটেছেন অনেক অনেক পথ। সে তো অনেক কথা। যাইহোক ১৮---- সালে বর্ধমান - বীরভূমের প্রাকৃতিক সীমানা হিসাবে অজয় কে মেনে নেওয়া হল। ওপারে গঞ্জ ইলাম বাজার।রেশম ; কার্পাস; লাক্ষা ; নীল এর নিলাম কেন্দ্র। তা ছাড়া ধান চাল মুদিখানা সোনা রূপা র বাজার। এলেম আছে মানে ইজ্জত আছে তাই এলেমবাজার। আবার নিলাম এর বাজার। সেখান থেকেও হতে পারে। ভরা বর্ষায় পারাপার সহজ নয়। ওপারে খয়েরবুনি র শিমূল তলার ঘাটে নৌকো বাঁধা থাকে। পারাপার করে। অন্য সময় অল্প জল। বাঁশ কাঠ এর অস্থায়ী সাঁকো। পারাপার সহজ হয়। কোথাও হাঁটুজল।গোরু গাড়ি পার হয়ে যায়। বসুধার চাষি রা ধান চাল নানা সব্জী নিয়ে যায় ওপারের হাটে। এমনকি চলে যায় চৌপাহারী জংগল পার হয়ে বোলপুর এর আড়তে। বসুধার লড়ি বা নড়ি রা লাক্ষা বা গালা বেচে আসে ইলামবাজার এর নিলামে। এপারের নদী বাঁধ ধরে অযোধ্যা বনকাটি এলাকার মানুষ জন ইলামবাজার যায়। বারবার মাটির নদীবাঁধ ভেঙেছে। নদীবাঁধ - সে ও তো আজকের নয়। সেই কবে ১৮৪০ থেকে তৈরীর প্রস্তুতি। গৌরবাজার থেকে কাজলাডিহি। কাজলাডিহি থেকে খেড়োবাড়ি - অর্জুন বাড়ি। সাতকাহনিয়া থেকে সাগরপুতুল। বন্যার জল আটকানোর জন্য নীচু বাঁধ। তবু বর্ষা এলেই বুক দুরুদুরু। নদী তে বান এলেই বসুধা ভয়ে রাত জাগে।বারবার ডুবেছে যে। ১৯৬২ তে অজয় সেতুর উদ্বোধন হল। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের হাতে। মানুষের যাতায়াত সহজ হয়ে গেল। অনেক কাছের হয়ে গেলো এপার ওপার। ওপার ডাকে আয় আয়।আবার কাজ শেষে ঘরে ফেরা এপারে। ----------------------- এপার- ওপার। ------------------------ প্রণব ভট্টাচার্য।

এপার- ওপার

এক পা এপারে তো আরেক পা ওপারে। মাঝে নদী। অজয়। যদিও সে নদ। প্রতিদিনের পারাপার। একবেলা এপার ওপার না করলে মন টা যে কেমন করে। বাজার হাট দোকান দানি গল্প গুজব রোগ অসুখ সবেতেই এপার ওপার করতে হবেই। সে কি আর আজকের কথা। এ চলে আসছে সেই কবে থেকে সে আর কে জানে। অজয় পেরিয়ে ' উত্তর রাঢ়'। বজ্জভূমি। সে কোন প্রাচীন যুগে। বক্রেশ্বর হয়ে রাঢ়িখণ্ড বা ঝাড়িখন্ডজংগলভুমি র ভিতর দিয়ে গিয়ে বৈদ্যনাথ ধাম। সব ই বীরভূম।পরেশনাথ পাহাড়ে জৈন সাধুরা তপস্যা করছেন। মহাবীর সাধু পরিক্রমা করে গেছেন। জৈন দের কাছে তাই রাঢ় পুণ্য ভূমি। এপারে বর্দ্ধমান তো তাঁর ই নামে। নির্গন্থপুত্র বর্দ্ধমান তো তাঁর ই অপর নাম। এই অজয় প্রাচীনা অজি বা অজাবতী হয়তোবা ঋজুপালিকা র তীর ধরে তিনি হেঁটেছেন অনেক অনেক পথ। সে তো অনেক কথা। যাইহোক ১৮---- সালে বর্ধমান - বীরভূমের প্রাকৃতিক সীমানা হিসাবে অজয় কে মেনে নেওয়া হল। ওপারে গঞ্জ ইলাম বাজার।রেশম ; কার্পাস; লাক্ষা ; নীল এর নিলাম কেন্দ্র। তা ছাড়া ধান চাল মুদিখানা সোনা রূপা র বাজার। এলেম আছে মানে ইজ্জত আছে তাই এলেমবাজার। আবার নিলাম এর বাজার। সেখান থেকেও হতে পারে। ভরা বর্ষায় পারাপার সহজ নয়। ওপারে খয়েরবুনি র শিমূল তলার ঘাটে নৌকো বাঁধা থাকে। পারাপার করে। অন্য সময় অল্প জল। বাঁশ কাঠ এর অস্থায়ী সাঁকো। পারাপার সহজ হয়। কোথাও হাঁটুজল।গোরু গাড়ি পার হয়ে যায়। বসুধার চাষি রা ধান চাল নানা সব্জী নিয়ে যায় ওপারের হাটে। এমনকি চলে যায় চৌপাহারী জংগল পার হয়ে বোলপুর এর আড়তে। বসুধার লড়ি বা নড়ি রা লাক্ষা বা গালা বেচে আসে ইলামবাজার এর নিলামে। এপারের নদী বাঁধ ধরে অযোধ্যা বনকাটি এলাকার মানুষ জন ইলামবাজার যায়। বারবার মাটির নদীবাঁধ ভেঙেছে। নদীবাঁধ - সে ও তো আজকের নয়। সেই কবে ১৮৪০ থেকে তৈরীর প্রস্তুতি। গৌরবাজার থেকে কাজলাডিহি। কাজলাডিহি থেকে খেড়োবাড়ি - অর্জুন বাড়ি। সাতকাহনিয়া থেকে সাগরপুতুল। বন্যার জল আটকানোর জন্য নীচু বাঁধ। তবু বর্ষা এলেই বুক দুরুদুরু। নদী তে বান এলেই বসুধা ভয়ে রাত জাগে।বারবার ডুবেছে যে। ১৯৬২ তে অজয় সেতুর উদ্বোধন হল। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের হাতে। মানুষের যাতায়াত সহজ হয়ে গেল। অনেক কাছের হয়ে গেলো এপার ওপার। ওপার ডাকে আয় আয়।আবার কাজ শেষে ঘরে ফেরা এপারে। ----------------------- এপার- ওপার। ------------------------ প্রণব ভট্টাচার্য।

পরপৃষ্ঠা / নদীগর্ভ

পরপৃষ্ঠা অতএব নামো নদীতে।ভেবে কিছু লাভ নাই। ওসব যত পুরোনো কথা। নদী শুকনো খটখটে। নদী খাতে বালি নাই। জলের নীচে র ভাল মোটা বালি সব তুলে নিয়েছে।বালি ব্যবসায়ী চোরেরা। জল বলতে জেসিবি দিয়ে কাটা মাঝে মাঝে গভীর গর্তে। যাই হোক নদী খাত - যেখানে জলপ্রবাহ বয়।সেখানে বালি না থাকলে জল ও থাকেনা। জলতল নেমে যাচ্ছে। কে ভাবে আর এসব কথা। সে যাক। নদী খাতের মাটি কিন্তু খুবউর্বর। শীতল এঁটেল মাটি। ভালো ধান হয়। সার গোবর ছাড়াই। বিঘের পর বিঘে চাষহচ্ছে। এবার ও হয়েছে। খবর আছে কি সরকারী কোন দপ্তরের।

নদীগর্ভ

নদীগর্ভ - মাতৃ গর্ভ --------------------প্রণব ভট্টাচার্য নদী র সাথে নারী র মিল যে আছে এটা মানুষ অনেকদিন আগেই বুঝেছে। আর নারী সে তো মায়ের মতোই। লালন পালন করে।আর জলইজীবন - সে বোধ তো প্রায় সাথে নিয়েই জীব জন্মায়। আর যেদিন চাষ শিখল। বুঝলো জলের মর্ম। সারা বছর জল দেয়। বয়ে যায়। বয়ে আসে। নদী সে বড় অবাক করা ব্যাপার। নদী গর্ভ মাতৃগর্ভ এর মতো। সেখানে কর্ষণ পাপ। এই ধারনা খুব পুরোনো। মানুষ নদী গর্ভে চাষ করেনি। আজ আর সে দিন নাই। চরায় চাষ তো করছেই। এতোদিন চরা ছেড়ে নীচে নামেনি। এখন তো সেই সব চরা অতি উর্বর জমি হয়ে গেছে। তিনবার চাষ হচ্ছে। কিন্তু জমি তো বাড়েনা। মানুষ বাড়ে। আর যাদের সব ঘরে বাড়ে তারা আর কি করবে চাষ ছাড়া। যদি হাতের কাজ শিখত ; শেখানোর ব্যবস্থা থাকত; ছেলে মেয়েদের হাতে কাজ থাকত ; কল কারখানা যদি হত - অতএব সেই চাষ। এই বোরো মরশুমে ধান বর্ষা র চেয়ে ভাল হয়। কিন্তু জমি। না। সে তো আর নেই। সব বসে গেছে। কেউ ছাড়তেই চায়না। ----- পরেরপাতায়-----

শ্যাওড়া গাছে ভয়

শ্যাওড়া গাছের- --------------------- প্রণব ভট্টাচার্য কি। নামেই ভয়। আচ্ছা শ্যাওড়া গাছে ভূত পেত্নী দত্যি দানো গুলো কতদিন আগে চেপেছিল বলুন দেখি। সে কোন ঠাকুরদা - ঠাকুরমার কালে - যাইহোক চেপে কিন্তু এখন ও আছে।দিব্যি আছে।আহা থাকুক থাকুক। আরে এ বাংলায় ভূতেদের ভবিষ্যৎ বেশ ভালোই আছে। তো। গাছ গুলো সব কোথায় যে গেল। শ্যাওড়া বলেও রক্ষা পেলনা। নদীর ধারে; বাঁধের গায়ে গায়ে; মাঠের ধারে কত ছিল।ঝোঁপ ঝোঁপ। আবার লম্বা হয়ে উঠে যাওয়া কাষ্ঠল গুঁড়ির। সব প্রায় চলে গেল। এখনো যে একেবারে নেই তা নয়।আছে। শ্যাওড়া ছাড়া আসর জমে! যে গাছের তলায় সিঁদূর লেপা পাথর আর দু চারটে মাটির ঘোড়া; দুপাশে দুটো চাঁদমালা- ব্যস আসর জম জমাট। সে গাছ দিব্যি আছে। বহাল তবিয়ৎ এ। অন্য অনেক জায়গা তেই আছে। সব ই কোন না কোন ঠাকুরের থান। নানা নামে ধর্মঠাকুরের থান ই বেশী। আটন তার। প্রতি বছর ১৩ ই বৈশাখ কালুবীরের পূজা। ডোম রা করেন। মনে পড়ছে নিশ্চয় ই। ধর্ম্মমঙ্গল কাব্যের বীর কালু ডোমের কথা। কালু কে না পেলে তো লাউসেনের জেতা হতনা। লাউসেন তলা এখন ও রয়েছে। আছে অনেক গাছপালা। শ্যাওড়া তো আছেই। এই লাউসেন তলাতেই মুখোমুখি লড়াই হয়েছিল ইছাই ঘোষের সাথে লাউসেন এর। বৃদ্ধ ইছাই হেরেছিলেন। মরেছিলেন। দু পক্ষের মারাত্মক যুদ্ধে বহু সৈন্য কে মরতে হয়েছিল রক্ত গড়িয়ে গিয়েছিল ' রক্তনালা' দিয়ে। কালু বীর ও মারা গিয়েছিল। তাঁর স্মৃতি তে জয়দেব কেন্দুলি র কাছে সুগড় গ্রামের ডোম সম্প্রদায় এর মানুষজন; যাঁরা নিজেদের কালুর বংশধর মনে করেন; তাঁরা ১৩ ই বৈশাখ তাঁর স্মৃতি তে পূজা করেন আমাদের এই জংগল মহলে এই সেনপাহারী পরগনায় সব আঁকুড়ে ডোমরা নানা থানে তাঁর পুজো করেন। আর একটা বিষয় ঐ ১৩ ই বৈশাখ গ্রামের মানুষ জন একটি ছোট শ্যাওড়া ডাল ঘরের চালে গুঁজে দেন। ঘরে বাজ পড়বেনা - এই বিশ্বাস। শ্যাওড়া র সাথে আগুন এর কোন সম্পর্ক আছে নাকি। শুকনো দুটো ডালে ঘষে আগুন ধরাতে এক বৃদ্ধ আদিবাসী মানুষ কে দেখেছিলাম।সেই কোন ছেলে বেলায়। একটা ছোট্ট টুকরোর মধ্যে গর্ত।আর সেই গর্তের ভিতর আর একটা টুকরো ঢুকিয়ে দড়ির টানে ঘর্ষণ তৈরী করে আগুন জ্বালানো। শোলায় সেই আগুন কে নিয়ে নেওয়া। সেই মানুষ টি ই বোধ হয় শেষ অগ্নিহোত্রী। ---------------- ---------

শ্যাওড়া গাছে ভয়

শ্যাওড়া গাছের- --------------------- প্রণব ভট্টাচার্য কি। নামেই ভয়। আচ্ছা শ্যাওড়া গাছে ভূত পেত্নী দত্যি দানো গুলো কতদিন আগে চেপেছিল বলুন দেখি। সে কোন ঠাকুরদা - ঠাকুরমার কালে - যাইহোক চেপে কিন্তু এখন ও আছে।দিব্যি আছে।আহা থাকুক থাকুক। আরে এ বাংলায় ভূতেদের ভবিষ্যৎ বেশ ভালোই আছে। তো। গাছ গুলো সব কোথায় যে গেল। শ্যাওড়া বলেও রক্ষা পেলনা। নদীর ধারে; বাঁধের গায়ে গায়ে; মাঠের ধারে কত ছিল।ঝোঁপ ঝোঁপ। আবার লম্বা হয়ে উঠে যাওয়া কাষ্ঠল গুঁড়ির। সব প্রায় চলে গেল। এখনো যে একেবারে নেই তা নয়।আছে। শ্যাওড়া ছাড়া আসর জমে! যে গাছের তলায় সিঁদূর লেপা পাথর আর দু চারটে মাটির ঘোড়া; দুপাশে দুটো চাঁদমালা- ব্যস আসর জম জমাট। সে গাছ দিব্যি আছে। বহাল তবিয়ৎ এ। অন্য অনেক জায়গা তেই আছে। সব ই কোন না কোন ঠাকুরের থান। নানা নামে ধর্মঠাকুরের থান ই বেশী। আটন তার। প্রতি বছর ১৩ ই বৈশাখ কালুবীরের পূজা। ডোম রা করেন। মনে পড়ছে নিশ্চয় ই। ধর্ম্মমঙ্গল কাব্যের বীর কালু ডোমের কথা। কালু কে না পেলে তো লাউসেনের জেতা হতনা। লাউসেন তলা এখন ও রয়েছে। আছে অনেক গাছপালা। শ্যাওড়া তো আছেই। এই লাউসেন তলাতেই মুখোমুখি লড়াই হয়েছিল ইছাই ঘোষের সাথে লাউসেন এর। বৃদ্ধ ইছাই হেরেছিলেন। মরেছিলেন। দু পক্ষের মারাত্মক যুদ্ধে বহু সৈন্য কে মরতে হয়েছিল রক্ত গড়িয়ে গিয়েছিল ' রক্তনালা' দিয়ে। কালু বীর ও মারা গিয়েছিল। তাঁর স্মৃতি তে জয়দেব কেন্দুলি র কাছে সুগড় গ্রামের ডোম সম্প্রদায় এর মানুষজন; যাঁরা নিজেদের কালুর বংশধর মনে করেন; তাঁরা ১৩ ই বৈশাখ তাঁর স্মৃতি তে পূজা করেন আমাদের এই জংগল মহলে এই সেনপাহারী পরগনায় সব আঁকুড়ে ডোমরা নানা থানে তাঁর পুজো করেন। আর একটা বিষয় ঐ ১৩ ই বৈশাখ গ্রামের মানুষ জন একটি ছোট শ্যাওড়া ডাল ঘরের চালে গুঁজে দেন। ঘরে বাজ পড়বেনা - এই বিশ্বাস। শ্যাওড়া র সাথে আগুন এর কোন সম্পর্ক আছে নাকি। শুকনো দুটো ডালে ঘষে আগুন ধরাতে এক বৃদ্ধ আদিবাসী মানুষ কে দেখেছিলাম।সেই কোন ছেলে বেলায়। একটা ছোট্ট টুকরোর মধ্যে গর্ত।আর সেই গর্তের ভিতর আর একটা টুকরো ঢুকিয়ে দড়ির টানে ঘর্ষণ তৈরী করে আগুন জ্বালানো। শোলায় সেই আগুন কে নিয়ে নেওয়া। সেই মানুষ টি ই বোধ হয় শেষ অগ্নিহোত্রী। ---------------- ---------

এপার- ওপার

এক পা এপারে তো আরেক পা ওপারে। মাঝে নদী। অজয়। যদিও সে নদ। প্রতিদিনের পারাপার। একবেলা এপার ওপার না করলে মন টা যে কেমন করে। বাজার হাট দোকান দানি গল্প গুজব রোগ অসুখ সবেতেই এপার ওপার করতে হবেই। সে কি আর আজকের কথা। এ চলে আসছে সেই কবে থেকে সে আর কে জানে। অজয় পেরিয়ে ' উত্তর রাঢ়'। বজ্জভূমি। সে কোন প্রাচীন যুগে। বক্রেশ্বর হয়ে রাঢ়িখণ্ড বা ঝাড়িখন্ডজংগলভুমি র ভিতর দিয়ে গিয়ে বৈদ্যনাথ ধাম। সব ই বীরভূম।পরেশনাথ পাহাড়ে জৈন সাধুরা তপস্যা করছেন। মহাবীর সাধু পরিক্রমা করে গেছেন। জৈন দের কাছে তাই রাঢ় পুণ্য ভূমি। এপারে বর্দ্ধমান তো তাঁর ই নামে। নির্গন্থপুত্র বর্দ্ধমান তো তাঁর ই অপর নাম। এই অজয় প্রাচীনা অজি বা অজাবতী হয়তোবা ঋজুপালিকা র তীর ধরে তিনি হেঁটেছেন অনেক অনেক পথ। সে তো অনেক কথা। যাইহোক ১৮---- সালে বর্ধমান - বীরভূমের প্রাকৃতিক সীমানা হিসাবে অজয় কে মেনে নেওয়া হল। ওপারে গঞ্জ ইলাম বাজার।রেশম ; কার্পাস; লাক্ষা ; নীল এর নিলাম কেন্দ্র। তা ছাড়া ধান চাল মুদিখানা সোনা রূপা র বাজার। এলেম আছে মানে ইজ্জত আছে তাই এলেমবাজার। আবার নিলাম এর বাজার। সেখান থেকেও হতে পারে। ভরা বর্ষায় পারাপার সহজ নয়। ওপারে খয়েরবুনি র শিমূল তলার ঘাটে নৌকো বাঁধা থাকে। পারাপার করে। অন্য সময় অল্প জল। বাঁশ কাঠ এর অস্থায়ী সাঁকো। পারাপার সহজ হয়। কোথাও হাঁটুজল।গোরু গাড়ি পার হয়ে যায়। বসুধার চাষি রা ধান চাল নানা সব্জী নিয়ে যায় ওপারের হাটে। এমনকি চলে যায় চৌপাহারী জংগল পার হয়ে বোলপুর এর আড়তে। বসুধার লড়ি বা নড়ি রা লাক্ষা বা গালা বেচে আসে ইলামবাজার এর নিলামে। এপারের নদী বাঁধ ধরে অযোধ্যা বনকাটি এলাকার মানুষ জন ইলামবাজার যায়। বারবার মাটির নদীবাঁধ ভেঙেছে। নদীবাঁধ - সে ও তো আজকের নয়। সেই কবে ১৮৪০ থেকে তৈরীর প্রস্তুতি। গৌরবাজার থেকে কাজলাডিহি। কাজলাডিহি থেকে খেড়োবাড়ি - অর্জুন বাড়ি। সাতকাহনিয়া থেকে সাগরপুতুল। বন্যার জল আটকানোর জন্য নীচু বাঁধ। তবু বর্ষা এলেই বুক দুরুদুরু। নদী তে বান এলেই বসুধা ভয়ে রাত জাগে।বারবার ডুবেছে যে। ১৯৬২ তে অজয় সেতুর উদ্বোধন হল। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের হাতে। মানুষের যাতায়াত সহজ হয়ে গেল। অনেক কাছের হয়ে গেলো এপার ওপার। ওপার ডাকে আয় আয়।আবার কাজ শেষে ঘরে ফেরা এপারে। ----------------------- এপার- ওপার। ------------------------ প্রণব ভট্টাচার্য।

জঙ্গলমহলের শিবপূজা

পরপৃষ্ঠা রক্ষিত পুরের শিবের গাজন কথিত আছে সে প্রায় চারশো বছর আগে স্ব্ররূপ ঘোষ নামে এক ব্যক্তির গাই গোরু টি বাড়িতে দুধ দিতনা। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল সে দুধ দেয় একটি পাথরের মাথায়। স্বপ্নাদেশ পেলেন যে কাশী বিশ্বনাথের ই অংশ ইনি।তাঁকে প্রতিষ্ঠা র এবং পূজার্চনার আদেশ পেলেন। গ্রামের মানুষের সহযোগিতা য় মাটির ঘরে তাঁ্র প্রতিষ্ঠা হল। লোহাগুড়ি গ্রামের জগবন্ধু সরকার মশাই স্বপ্নাদেশ পেয়ে অতি চমৎকার আধুনিক মন্দির বানিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি ছয় সাত টি গ্রামের মানুষ এই শিবের গাজনে সাহায্য সহযোগিতা করেন। কুড়ি- পঁচিশ টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ উৎসব এ অংশ গ্রহন করেন। এখানে চরক কাঠ টি ২০-২৫ ফুট উঁচু। দড়ি বেয়ে উঠে ভক্তারা পাক খান। চরক কাঠ টি যে পুকুরে রাখা হয় সেখান থেকে সেটিকে আর পাওয়া যায়না। কলকাতার দলের যাত্রাপালা সহ গান বাজনার অনুষ্ঠান হয়। শ্রী গুরুপদ রায় এবং শ্রী তারাচরন রায় এই শিবের পুজার্চনা সহ গাজন অনুষ্ঠান টি পরিচালনা করেন। বাঙ্গালী র মূল কিন্তু তন্ত্রে। তাই তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্ম পাল রাজাদের রাজত্ব কালে বাঙ্গলায় যথেষ্ট প্রসার লাভ করেছিল।এই কদিনে শিব সবার। সকলের অধিকার।সমাজ বিন্যাসের নীচের তলার মানুষ গুলি কে আবার কাছে নেওয়া হল। এঁরা ই তো সব জাতপাত হীন বৌদ্ধধর্ম এ যোগ দিয়েছিলেন। পাল পর্বের পর বা এঁরা আবার ফিরতে বাধ্য হলেন। স্ব গোত্র ছেড়ে শিব গোত্রে নাম লেখালেন।আর শিব তো এক অসাধারণ দেবতা।তিনি সবার ই হতে পারেন।প্রাচীন ধর্ম ; ধর্মরাজ ; বুদ্ধ; শিব সবাই এই বাঙ্গলায় মিশে গেছেন। সামাজিক প্রয়োজনেই এই মিলন মিশ্রণ। আর বাঙ্গালীর সাধনা তো মিলন মিশ্রনের ই। এই আমাদের ঐতিহ্য। -----------------------------------------------

জঙ্গলমহলের শিব পূজা

শিব ঠাকুরের গাজন -------------------প্রণব ভট্টাচার্য কাছে দূরে ঢাক বাজছে। শিবমন্দির প্রাঙ্গণে। গাজন আসতে আর দেরী নাই। আমাদের এই রাঢ় বাঙলার নানা গ্রামে চৈত্র সংক্রান্তি র শিবের গাজন একটি বৈশিষ্ট্য পূর্ণ লোকায়ত উৎসব। আমাদের এই এলাকার অর্থাৎ থানা - কাঁকসা ; প: বর্ধমান জেলার অন্তর্গত বনকাটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এবং সংলগ্ন একটি গ্রামের গাজন উৎসব নিয়ে একটু আলোচনা করব। তার আগে সংক্ষেপে একটু ইতিহাস বলে নিই। হয়তো জানেন ; আউশগ্রাম এবং কাঁকসা থানা এলাকার জংগল ভূমি নিয়েই বর্ধমানের জংগল মহল। প্রাচীন গোপভূম। পরগণা - সেনপাহাড়ী। এখানে ই বিখ্যাত ' গড় - জংগল '। এই সেই ধর্ম্মমঙ্গল খ্যাত ইছাই ঘোষের প্রাচীন রাজত্বভূমি। জংগলের মধ্যে ছিল গড়। মোটামুটি হাজার বছর আগের কথা। গড় নাই। ধংসাবশেষ আছে।আছেন গড়ের দেবী শ্যামারূপা। আর আছে ইছাই এর স্মৃতি জড়িত স্থানে অবস্থিত বিখ্যাত পুরাকীর্তি ' ইছাই ঘোষের দেউল'। সীমান্ত এলাকা। উত্তরে অজয়।ওপারে বীরভূম। জয়দেব - কেন্দুলি। গঞ্জ - ইলামবাজার। তন্ত্র সাধনার পীঠস্থান বীরভূম। বনকাটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১৬ টি মৌজা। ২২-২৩ টি গ্রাম। লোক সংখ্যা আনু-২০-২১ হাজার। মোট শিবমন্দির ৩০ টি। ভগ্ন সমেত। বসুধা প্রাচীন গ্রাম।বেশ কয়েকটি শিব মন্দির ধ্বংস হয়ে গেছে।এখন রয়েছে একটি বেশ বড় সহ তিনটি ছোট মন্দির। রঘুনাথপুর গ্রামে রয়েছে টি মন্দির। অযোধ্যা- বনকাটি এই এলাকার কেন্দ্রভূমি।পুরোনো দিনের গঞ্জ। সমৃদ্ধ গ্রাম। এখানেই রয়েছে ১৯-২০ টি শিবমন্দির। সব ই পারিবারিক। দু টি ছাড়া।এই দুটি ই গ্রাম্য সর্বসাধারণ এর। বনকাটির রায়বাড়ির বিখ্যাত কালীমন্দির প্রাঙ্গণে নির্মিত হয়েছিল সর্বপ্রাচীন শিবমন্দির টি।১৭০৪ শকাব্দে। টেরাকোটা র কাজের জন্য বিখ্যাত গোপালেশ্বর শিব মন্দির টি১৭৫৪ শকাব্দে নির্মিত। ভূগর্ভ থেকে উত্থিত অযোধ্যা গ্রামের অনাদিনাথ শিবলিঙ্গ সহ মন্দির টি ও সু প্রাচীন। এটি সর্বসাধারণ এর। এই শিব কে কেন্দ্রকরেই শিবের গাজনের ধূম।যে ধূম ছিল তা আজ আর নেই। মানুষের সেই উৎসাহ নেই। বহু স্তরীয় নানা জটিলতা। নানা বিভাজন। যাই হোক তবু হয়। একটু দুরেই সংলগ্ন মলানদিঘী গ্রাম পঞ্চায়েতের রক্ষিত পুর প্রাচীন গ্রাম। ইছাই ঘোষের আমলের গ্রাম। ধন দৌলত এখানে সম্ভবত রক্ষিত থাকত। এখানের শিবের গাজন খুব ই বিখ্যাত। শুরুতে অযোধ্যা গ্রামের অনাদি নাথ শিবের গাজনের কথা।একটু বলি এই শিবলিঙ্গ টির সারা বছর পূজার্চনা এবং হোম যজ্ঞ চরক গাজন এর জন্য বর্ধমান এর রাজা রা ২৮ বিঘা জমি দান করেছিলেন। বামুন পাড়ায় পুরোহিত এবং তত্বাবধানের জন্য বাগদী পাড়ায় গাজনের ভক্তা মুচি পাড়ার ঢাকি - সবার জন্য ই কিছু জমি বরাদ্দ হয়েছিল। অতীতে এখানকার গাজন ছিল খুব ই বিখ্যাত।মন্দির প্রাঙ্গন পথ ঘাট একে বারে লোকে লোকারণ্যহয়ে যেত। গাজনের ভক্তাদের নাচ। বাণ ফোঁড়া অবস্থায়। সারা অঙ্গে ই বাণ ফোড়াঁ।অষ্ট অঙ্গে। হ্যাঁ বান ফোঁড়ার জন্য ; বাণ তৈরি র জন্য কামার দের দায়িত্ব নির্দিষ্ট ছিল।তার জন্য তাঁদেরও জমি ছিল। দুটি গোরুগাড়িকে জুড়ে তৈরি করা হত গাজনের ভক্তাদের গাড়ি। সামনে পিছনে মোটা কাঠের খুঁটি মাস্তুল এর মতো শক্ত করে বাঁধা। দুই খুঁটিতে বাঁধা আনুভূমিক লম্বা বাঁশ বা কাঠ। তাতে ঝুলছে ভক্তা রা। দোল খাচ্ছে।ফুল ছূড়ছে।পা উপরে মাথা নীচে। খুব সহজ নয়। তিন দিন চলছে উপোষ। সন্ধ্যায়সামান্য ফলজলে আর কি হয়। যাকে বলা হয় ছোট বানামো - সেদিন থেকেই শুরু।অশৌচ পালনের মতো কোড়াাকাপড় এর বস্ত্রখণ্ড পরিধান।গলায় সেই কাপড়ের গলবস্ত্র। লোহার এক চাবি তাতে বাঁধা। কার মৃত্যু জনিত শোক পালনের নিদর্শন? গ্রামে গ্রামে চলে পরিক্রমা। মাথায় মনুষ্য আকৃতি র একটি মোটা কাঠের প্রতীকী এক বস্তু। গায়ে তার অনেক কাঁটা পেরেক বা মোটা জলুই গাঁথা। এ কার মৃত দেহের প্রতীকী রূপ। গ্রাম পরিক্রমা ; গৃহস্থ মানুষজনের কাছ থেকে চাল ডাল আনাজ পাতি সংগ্রহ। মুখে জয় বাবা বাণেশ্বর - আওয়াজ। জয় বাবা ধর্মরাজ। কে এই বাণ। পুরাণ এর সেই শিবভক্ত বাণ রাজা। যাঁর নামে বাণ লিঙ্গ? দ্বিতীয় দিন বড় বানামো। নির্জলা উপোষ সারাদিন। সন্ধ্যায় একটু ফলজল। আবার সেই গ্রাম পরিক্রমা। বেশ কয়েকটি গ্রাম নিয়ে পরিক্রমণ। ক্লান্ত শরীর। তৃতীয় দিন চরক। কোথাও নাগরদোলা র মতো চরকের চরকি। চতুর্থদিন হোম ; যজ্ঞ। বিকালে নিমপাতা বাটা মেশানো বেলের সরবত।ভক্তা দের জন্য। রাত্রে ভোগ প্রসাদ। গাজনের অনুষ্ঠান শেষ। ভক্তাদের পালন শেষ। ------( পরের পাতায়) --

বীরপূজা ২

পরপৃষ্ঠা------- বীরপূজা আমরা আলাদা। আমরা বাগ; ব্যগ্রক্ষত্রিয় - বাগদী। আমরা অনেক যুদ্ধ করেছি। হয়েছিলাম রাজা। বাগদী রাজা। বিষ্ণুপুরের রাজারা আমাদের ই লোক। আমাদের জাত আলাদা। আমরা উঁচু। আমরা সেন পাহারীর মুচি। আমাদের নাম শুনলে ভয়ে জান কতজনার শুকিয়ে যেত। বলে কয়ে ডাকাতি করতাম। ছিল আমাদের বাহিনী।। আলাদা দাম ছিল তার। বিশেষ ডাক ছাড়া আমরা বেরুতাম না। আমাদের আলাদা এলেম ছিল। আমরাও তাই। আমরা হাঁড়ি।আমরাই তো সর্দার। আমাদের চেয়ে ওস্তাদ আর কে? আমরা ডোম। পাঁচ টা থাক আছে আমাদের।আলাদা দাম পেয়েছিলামআমরা সেই কবে হাজার বছর আগে। আমরাই আগে যোগ দিয়েছিলাম বৌদ্ধ ধর্মে। আমরাই হয়েছিলাম পুরোহিত। হাতে ছিল তামার বালা। আমাদের মেয়েদের ছাড়া তন্ত্র সাধনা হয়েছে না কি। সে ছিল আমাদের এক আশ্চর্য দিন। আমাদের ছাড়া যুদ্ধ করে কার সাধ্যি। আগে আমি; বাগে আমি। আগে ডোম বাগে ডোম ঘোড়াডোম সাজে। আঁকুড়ে ডোম। যূদ্ধ ই আমাদের পেশা। আমাদের চেয়ে বড় যোদ্ধা আর কারা ছিল। হ্যাঁ বাইরেও যেতাম। তেমন ডাক পেলে। খাতির চাই। সে যুদ্ধ করতে ত্রিপুরা রাজাদের ডাকে গিয়েছি। আবার বড় বড় দিঘী কাটতে ও বছরের পর বছর সেখানে থেকেছি। রাজত্ব আগলেছি। আমরা কালু ডোমের বংশধর। সেই বীর কালু। আপনারা জানেন ধর্ম্মমংগল কাব্যে আছেন।সে সহায় না হলে কি লাউসেন পারত ইছাই ঘোষ কে হারাতে। কি শেষ করতে। লাউসেন এই এলাকার বন জংগল ; পথঘাট কিবা জানত। আমি লোকজন নিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। ঐ অজি মানে অজয় নদী কে চেনা সহজ ব্যাপার নয়। বড় বড় নৌকো চলে। জল গভীর। জলে ঘূর্ণি। প্রবল টান। তো লাউসেন নদী র এপারে মানে উত্তরে আমাদের গাঁ য়ের কাছেই তাঁর শিবির পাতলেন। জয়দেব কেন্দুলী র কাছেই আমাদের গাঁ। সুগড়। পরে রাজারা গড় বানিয়েছিলেন। তো ভীষণ যুদ্ধ হল। কত সৈন্য যে মারা গেল। রক্তগঙ্গা বইল। ' রক্তনালা' দিয়ে সে রক্ত গড়িয়ে গেল। নদী পেরিয়ে যারা গিয়েছিল তারা আর কেউ ফেরেনি। ঐ' কাঁদুনে ডাঙ্গা' তেই সব শেষ। গড় পর্যন্ত আর কাউকে পৌঁছতে হয়নি। ইছাই এর গড়। সে দারুন শক্ত পোক্ত গড়। মোটা মোটা পরপর মাটির ; ইঁটের তিনটে পাঁচির। ভেতরে ঢুকি সাধ্য কার। ভিতরে ' ঢেকুর গড়'। কামারদের তৈরী। ঐ ঢোকরা কামার। যেমন ধারালো তাদের অস্ত্র। লোহাগুড়ি তে তাদের প্রধান আস্তানা। ইছাই এর গড় ভেদ করা সোজা নয়। তারপর ইছাই তন্ত্রবলে বলীয়ান। তাঁর আরাধ্যা দেবী' শ্যামারূপা'। তাঁর বর আছে। -------------- পরপৃষ্ঠায়

বীর পূজা

বীরপূজা ----------------------- প্রণব ভট্টাচার্য সমাজ বিন্যাসের নীচুতলার মানুষেরা বা তথাকথিত নিম্নবর্গীয় মানুষজন নিজেদের আত্মপরিচয় এর শিকড়ে যেন ফিরতে চাইছেন। নীচু বলে নিজেদের ভাবতে কার ভালো লাগে। অথচ এ দেশে জাতপাত তো খুব ভারী পাথর। খুব সহজে যে সে পাথর টাকে সরানো যাবেনা। তাও খুব না জানা নয়। সবাই বুঝি যে এ এক বিরাট ব্যবসা। বিরাট রাজ নীতি র খেলা আছে এখানে। অথচ কেউ মসিহা নয়।তবু- - এই সব মানুষ দের ঘর থেকে উঠে গেছে যে সব যুবকেরা - যারা শিক্ষিত হয়েছে। ডাক্তার ; বিদ্যালয় ; মহাবিদ্যালয় এর শিক্ষক হয়েছে। তাদের কারোর ই নিজেদের জাত পরিচয় দিতে ভালো ও লাগেনা। নিজেদের পদবী গুলোকে ব্যবহার করতে ও ভালো লাগেনা। না -। লাগেনা। কিন্তু কতটা আর পদবী র বানান বদলানো যায়। কার ভালো লাগবে জানিনা লিখতে পদবী- অসুর; বাগদী ; হাঁড়ি ; ডোম ; চণ্ডাল ; বাউরী ; মুচি; মাল এই সব পদবী লিখতে সত্যি ভালো লাগেনা। এমনকি আদিবাসী সাঁও তাল কোন ডাক্তারের পদবী মূর্মূ কি মাড্ডি লিখতে আর ভালো লাগেনা। 'আমি আদিবাসী সাঁওতাল ডাক্তার কি শিক্ষক - আমার নিজের মনেই প্রশ্ন কি জানি আমাকে কতটা কি মানবে ' - মধ্যবিত্ত শিক্ষিত উচ্চস্তরীয় সমাজ। অথচ উপায় ই বা কি। এখানেই আসে আত্মশ্লাঘা ; গর্ব অনুভবের একটা প্রয়াসপ্রচেষ্টা। লাগে নিজেদের সমাজের একজন বীর। এক icon। অনেক লড়াই ই তো হয়েছে। আছে বীর আছে। আমরা ও ক্ষত্রিয়।কেউ ব্যগ্রক্ষত্রিয়। কেউ বীরবংশী। কেউ বলছি রায়। কেউ বলছি বাউরী নয় ক্ষত্রিয়। মুনি র ছেলে।বাহক মুনি। আমরা ক্ষেত্রপাল।রাঢ়মণ্ডলের রাজা ছিলাম। আরে বাবা শিবের বিয়েতে পাল্কী বইছিলাম।একটু বেশি খেয়ে ফেলেছিলাম। মদ্যপান ছাড়া একাজ করা যায় নাকি। তাছাড়া বিয়েবাড়ি বলে কথা। তাছাড়া শিবের বিয়ে। তো নেশার ঘোরে ভুলভাল করে কিছুটা ফেলেছি। গেলাম অধঃ পতিত হয়ে। ------------- পরপৃষ্ঠা য়----
প্রাচীন সেই বনকাটি ------------- প্রণব ভট্টাচার্য ১৭০৪ শকাব্দ। মানে ১৭০৪+৭৮ = ১৭৮২ সাল। মানে আজ থেকে ২৩৫-৩৬ বছর আগে এখানকার মানে এই এলাকার প্রথম শিবমন্দির টি তৈরি হচ্ছে বনকাটি গ্রামে : থানা - কাঁকসা প: বর্ধমান। বিখ্যাত রায় বাড়ির কালীবাড়ি র প্রাঙ্গণে। পাশাপাশি দুটি চারচালা মন্দির। হয়তো ছোট। টেরাকোটা র কাজের বিস্তৃত অলংকরণ নাই। উত্তর মুখী। শিবলিঙ্গ ও তাই। দিক নির্দেশক ও বটে। এরপর ৫২ বছর পর নির্মিত হচ্ছে একই প্রাঙ্গণে পূর্বমুখী তিনটি বেশ বড়ো পীড়যুক্ত শিবমন্দির। স্বল্প টেরাকোটা র কাজ। কিন্তু ভালো। মন্দিরের পিছন দিক সাধারণত অলংকৃত হয়না। কিন্তু এখানে পঙ্খএর প্লাস্টার এর উপর চমৎকার লতাপাতার ফ্রেস্কোর কাজ। রংতুলি তে আঁকা। কি ডিজাইন! আহা! প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। যেটুকু বোঝা যায়- - এখানে আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগে মিস্ত্রী কারা। তাদের নাম জানার কোন উপায় নেই। ডিজাইনে মিল থাকেই। এই এলাকার অন্যান্য কয়েকটি মন্দির এরকাজের সাথে মিল আছে। মনে হয় মিস্ত্রী একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী। ঘরানার মিল। অর্থনৈতিক অবস্থা র উন্নতি ঘটল। সেই সময় টাকে ঠিক ঠাক বুঝতে চাইছি- সামগ্রিক ভাবে।

এপার- ওপার

দ্বিতীয় পাতা ---+------ আহা সত্যম্বর অপেরা। কে না এখানে এসেছেন। এত পুরোনো আসর।এখানেএকটা অন্য রকমের পরিবেশে গান শুনতে বেশ লাগে। ডাঙ্গাল গ্রামের ঘোষ বাবুরা সব দিক তদারকি করেন। সংগে অবশ্য ই বসুধা র মানুষেরা। প্রতিদিনের এপার- ওপার। এমন লোক ও এপারে আছে - যাঁদের একদিন না গেলেই চলবেনা। মানে ঐ যাকে বলে না পেটের ভাত হজম হবেনা। গোরু ছাগল কেনা বেচার হাট বসে শণিবারে সুখবাজারে।এপার থেকে অনেক মানুষ যায়। সত্যি কথা কি যে এপারের মানুষ জন না গেলে ওপারের বাজার হাট তেমন জমেনা।এপারের আদুরিয়া - অমরপুর ;মাজুরিয়া - রঘুনাথপুর ; চুয়া- রক্ষিতপুর ; অযোধ্যা- বনকাটি এতো বড় এলাকা থেকে কম মানুষ তো যায় না। আর ডাঙ্গাল- বসুধা ; অযোধ্যা- বনকাটি র মানুষের তো এক পা এপারে তো আর এক পা ওপারে। আর কালিকাপুর- মৌখিরার বাবুদের তো কাছারি বাড়ি রয়েছে। ইলামবাজারে তাঁদের অনেক সম্পত্তি। হাট বসে তাঁদের ই জায়গায়। তোলা আদায় হয়। কাছারি বাড়ী র দক্ষিণে পুকুর। দক্ষিণ পাড়ে তার তখনকার দিনের এম; ই স্কুল। প্রাইমারি স্কুল। এপার থেকেও ছেলেরা যায়। কেউ কেউ ওখানে থেকে পড়াশুনো করে। বসুধা র সব্জী ; না গেলে তো হাটে যেন কি নাই কি নাই ভাব। অবশ্য সে সব সব্জী গাড়ী বোলপুরপর্যন্ত গড়িয়ে যায়। ধান চালের গাড়িও যায়। এপারে কালিকাপুর- মৌখিরা য় বাবু দের দুর্গাপূজা দেখতে ওপারের অনেকে আসেন।তোপ দাগা হয়। নারকেল কাড়াকাড়ি খেলায় মস্ত ভিড়।ঠেলাঠেলি থেকে মারামারি নিয়মিত ঘটনা। তবু মানুষ যাবেই। আসবেই। গড়জঙ্গলে দেবী শ্যামারূপা র পূজা দেখতেও অনেকে সাইকেল নিয়ে যান। তখন গ্রামেগ্রামে শখের যাত্রাদল। ইলামবাজারের চাতোর পাড়ার যাত্রা দলেরবেশ সুনাম। স্থানীয় অভিনেতা সব। কিন্তু অভিনয় ক্ষমতা ভাল। তখনি অমর ব্যানার্জী ;দত্ত বাবু রা অভিনেতা হিসাবে ভাল নাম করেছেন।বিশাল চেহারা নিয়ে অমর দা র স্টেজ অ্যাপিয়ারেন্স ছিল দেখবার মতো। তেমনি ভরাট কণ্ঠস্বর। পেশাদার দলে গেলে খুব ই নাম করতেন। কিন্তু যান নি। এপার থেকে অনেকে যেতেন ওঁদের যাত্রা দেখতে।অযোধ্যা- বনকাটির যাত্রা দলের ও বেশ নাম ডাক। গ্রামীণ পেশাদার দলের মতো। আশেপাশের নানা গ্রামে তাদের বায়না হতো। নিজেদের সাজ পোষাক সব ই ছিল। এঁদের যাত্রা দেখতে ওঁরাও আসতেন। পরস্পর কে নিমন্ত্রণ ও করতেন তাঁরা। মানুষের দীর্ঘদিন এর আশা অজয় সেতুর কাজচলছে পুরোদমে। বিশাল কর্মযজ্ঞ। আদতে ডাঙ্গাল গ্রামের ঘোষ বাবুরা নানা মাল সরবরাহ করছেন ' চন্দ্র কোম্পানি ' কে।ঐ কোম্পানি ই সেতু তৈরি করছেন। গঁড়াই দের মুদিখানায় শ্রমিক দের ভিড় লেগেই আছে।আরো অনেকে নানা ভাবে ব্যবসা করে বেশ ধনী হয়ে উঠলেন। খুব শীঘ্র সেতু র উদ্বোধনহবে। মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিধান চন্দ্র রায় আসবেন।দিন রাত এক করে কাজ চলছে। যাতায়াত সহজ হবে। মানুষের মনে খুব আনন্দ। দুপারের সম্পর্ক আর ও সহজ ; সুন্দর ; ঘনিষ্ঠ হবে।

এপার - ওপার

ওপারের সাথে এপারের সম্পর্ক বরাবরই নিকটে র। মাঝে নদীটা অবশ্য বর্ষা য় ভোগায়। কি আর করা যাবে ।খয়েরবুনি শিমুল তলার ঘাটে অবশ্য পারাপার এর নৌকো থাকে। আর জল কমেগেলে শীতের সময়ে এপার থেকে অনেকটা ; বালি ; পাথর ; মোরাম মাটি ফেলে উঁচু রাস্তা আর জলের উপরেকাঠ বাঁশের সাঁকো। বাকী জল্টুকু মোটা মোটা পাইপের উপর অস্থায়ী বালির বস্তা ফেলে আর পাশে বাঁশের গার্ড ওয়াল - পারাপারের চমৎকার রাস্তা।আর কি চাই। ইলামবাজার যেতে তো হবেই। গঞ্জ। বাজারহাট।বেচা কেনা। ধান চাল ; মুদিখানা; সোনারূপো ; ডাক্তার খানা ; হাসপাতাল; যন্ত্রপাতি মেরামতি ; শুকবাজারের তাঁতিদের বোনা গামছা কাপড় চোপড় ; ধামা কুলো সব হাটে পাওয়া যায়।ভাল সাইকেল মেরামতি র দোকান কানাই দার। কানাই দত্ত। মজাদার মানুষ। তাঁর দোকানেই আছে তিনকড়ি মিস্ত্রী। তাঁর মতো মিস্ত্রী এ তল্লাটে আর কেউ নেই। মেয়ের বিয়ের গয়না- সে হয় সাহাবাবুদের দোকান নয় হাজি সাহেব দের দোকান। তা ছাড়া আর কোথা। সাহা বাবুরা সিনেমা হল বানিয়েছেন। সামনে পুকুর পাড়ে গোরুগাড়ির ভিড় লেগে যায়।আশপাশের গ্রাম থেকে সব মেয়ে বৌ রা আসে। চব্বিশ প্রহরের মেলার খুব ধুম। কীর্তন গানের ভালো আসর বসে।এপার থেকে দলে দলে মানুষ যায় গান শুনতে। ভাল গান হলে এপারে অযোধ্যা র আসরের বায়না হবে।ইলামবাজারের একদল মানুষ এপারে র আসরে আসেন গান শুনতে। রূপাইচণ্ডী তলার কলকাতা দলের যাত্রা শুনতে ওপারের অনেক মানুষ আসেন। নানা ভাবে নানা বাহনে।এখানের যাত্রা গান না শুনলে চলে।
এপার - ওপার : মাঝে নদী। --------------------- প্রণব ভট্টাচার্য ওপারে জয়দেব - কেন্দুলি। এপারে শিবপুর এবং চারপাশের অনেকগুলি গ্রাম। শিবপুর থেকে রাস্তা চলে যায় দুর্গাপুর। মাঝে নদী। নদ - অজয়। অজি ; অজাবতী;। নানা প্রাচীন নাম তার। ওপার থেকে এপারে আসছেন জয়দেব কবি; আসছেন কবি বিল্বমঙ্গল। আসছেন দামোদর চন্দ্র ব্রজবাসী। কেউ আসছেন সাধনার জন্য ; কেউ তাঁর প্রিয় রমণী র কাছে। কেউ জমিদারি তদারকি তে। বাউল ফকির বৈষ্ণব রা এপার ওপার করছেন ই। আর চাষি বাসি সাধারণ মানুষ তাদের তো একদিন পারাপার না করলে চলেনা। কেন্দুলি র হাটবাজার দোকান দানি। আড্ডা তো জমে ঐখানেই। তমালতলায় বাউলের আখড়ায় সন্ধ্যায় গান জমে ওঠে। আবার কদমখন্ডী মহা শ্মশান এ দাউদাউ চিতা জ্বলে।ওখানে শবদেহ দাহ হলে নাকি নিশ্চিত স্বর্গযাত্রা। মানুষের বিশ্বাস। শিবপুর গঞ্জ।ধান চালের আড়ত। দোকানপাট। অনেক পরে এখান থেকে বাস চলল বর্দ্ধমান। ভায়া উখড়া- অন্ডাল। বেশ ঘুরে ঘুরে। একবারই যায়। আসে।লাউদোহা ; মাধাইগঞ্জ এর মিষ্টি। আহা তার স্বাদ। অন্ডালের জিলিপি। মুচমুচে ভাজা। সংগে না নিয়ে ফিরলে চলে। কাঁটাবেড়ে হাটতলা জমে। বিকেলে।ঐ বিজড়ে- শোভাপুর ; ধবনী জামবন ; বড়গড়ে প্রভৃতি চারপাশের গাঁ ঘরের মানুষেরা জোটে। চা শিঙাড়া জিলিপি যোগে গল্প জমে। সাউ দের মাতালশাল ও জমে ওঠে।এলাকার সব চোরডাকাত দের ফন্দিফিকির এর ঐটিই ভালো জায়গা। রাজহাট এর হাঁড়িরা তো বিখ্যাত। ডাকাত দের মোড়ল ঐ গাঁয়েরই। ওদিকে জংগল ঘেরা গাঁ বিষ্টুপুর এর পুবের জংগল এর ভিতর দিয়ে সরু পথে অনেকটা গিয়ে তবে দেবী শ্যামারূপার থান। দিনের বেলাতেই একা যায় সাধ্যি কার। ঘোর জংগল। দিনেও মশাল জ্বালাতে হয়। গো- বাঘার ভয় আছে। সাথে লোক নিয়ে পুরোহিত ব্রাহ্মণ কে যেতে হয়। মন্দিরে পূজার ঘণ্টা বাজে। নিত্যপূজা তাঁর। জামবন এর রায় বাড়িতে গানের আসর বসে।কৃষ্ণযাত্রা র গান।কাজলাডিহি শিখতে যায় থেকেওকেউ কেউ।আর কাঁটাবেড়ে : ধবনী ; থেকে তো গায়ন বাজনদার রা আসেনই। সারা দিন রাত চর্চা চলে। ধবনীর কণ্ঠমশাই এর বিখ্যাত দল শান্তিনিকেতন এর পৌষমেলায় কৃষ্ণযাত্রা পালা কংস বধ গাইতে গেছেন। জয়দেব মেলা এলো বলে। মেলার ব,বাজনা বেজেই গেছে। মেলায় গান আছে। পালাগান। কাঙ্গাল ক্ষেপার আখড়ায় এবার। জামবন এর রায়বাড়ি তৈরি হচ্ছে জোরকদমে। নদীতে জল কমে গেছে। বাঁশখুঁটি দিয়ে নদীর উপরে সাঁকো বানানো হচ্ছে। এবার এপারওপার যাতায়াত হবে। আহা। মানুষের মনে আনন্দ। ----------------+------+--------------------
এপার - ওপার : মাঝে নদী। --------------------- প্রণব ভট্টাচার্য ওপারে জয়দেব - কেন্দুলি। এপারে শিবপুর এবং চারপাশের অনেকগুলি গ্রাম। শিবপুর থেকে রাস্তা চলে যায় দুর্গাপুর। মাঝে নদী। নদ - অজয়। অজি ; অজাবতী;। নানা প্রাচীন নাম তার। ওপার থেকে এপারে আসছেন জয়দেব কবি; আসছেন কবি বিল্বমঙ্গল। আসছেন দামোদর চন্দ্র ব্রজবাসী। কেউ আসছেন সাধনার জন্য ; কেউ তাঁর প্রিয় রমণী র কাছে। কেউ জমিদারি তদারকি তে। বাউল ফকির বৈষ্ণব রা এপার ওপার করছেন ই। আর চাষি বাসি সাধারণ মানুষ তাদের তো একদিন পারাপার না করলে চলেনা। কেন্দুলি র হাটবাজার দোকান দানি। আড্ডা তো জমে ঐখানেই। তমালতলায় বাউলের আখড়ায় সন্ধ্যায় গান জমে ওঠে। আবার কদমখন্ডী মহা শ্মশান এ দাউদাউ চিতা জ্বলে।ওখানে শবদেহ দাহ হলে নাকি নিশ্চিত স্বর্গযাত্রা। মানুষের বিশ্বাস। শিবপুর গঞ্জ।ধান চালের আড়ত। দোকানপাট। অনেক পরে এখান থেকে বাস চলল বর্দ্ধমান। ভায়া উখড়া- অন্ডাল। বেশ ঘুরে ঘুরে। একবারই যায়। আসে।লাউদোহা ; মাধাইগঞ্জ এর মিষ্টি। আহা তার স্বাদ। অন্ডালের জিলিপি। মুচমুচে ভাজা। সংগে না নিয়ে ফিরলে চলে। কাঁটাবেড়ে হাটতলা জমে। বিকেলে।ঐ বিজড়ে- শোভাপুর ; ধবনী জামবন ; বড়গড়ে প্রভৃতি চারপাশের গাঁ ঘরের মানুষেরা জোটে। চা শিঙাড়া জিলিপি যোগে গল্প জমে। সাউ দের মাতালশাল ও জমে ওঠে।এলাকার সব চোরডাকাত দের ফন্দিফিকির এর ঐটিই ভালো জায়গা। রাজহাট এর হাঁড়িরা তো বিখ্যাত। ডাকাত দের মোড়ল ঐ গাঁয়েরই। ওদিকে জংগল ঘেরা গাঁ বিষ্টুপুর এর পুবের জংগল এর ভিতর দিয়ে সরু পথে অনেকটা গিয়ে তবে দেবী শ্যামারূপার থান। দিনের বেলাতেই একা যায় সাধ্যি কার। ঘোর জংগল। দিনেও মশাল জ্বালাতে হয়। গো- বাঘার ভয় আছে। সাথে লোক নিয়ে পুরোহিত ব্রাহ্মণ কে যেতে হয়। মন্দিরে পূজার ঘণ্টা বাজে। নিত্যপূজা তাঁর। জামবন এর রায় বাড়িতে গানের আসর বসে।কৃষ্ণযাত্রা র গান।কাজলাডিহি শিখতে যায় থেকেওকেউ কেউ।আর কাঁটাবেড়ে : ধবনী ; থেকে তো গায়ন বাজনদার রা আসেনই। সারা দিন রাত চর্চা চলে। ধবনীর কণ্ঠমশাই এর বিখ্যাত দল শান্তিনিকেতন এর পৌষমেলায় কৃষ্ণযাত্রা পালা কংস বধ গাইতে গেছেন। জয়দেব মেলা এলো বলে। মেলার ব,বাজনা বেজেই গেছে। মেলায় গান আছে। পালাগান। কাঙ্গাল ক্ষেপার আখড়ায় এবার। জামবন এর রায়বাড়ি তৈরি হচ্ছে জোরকদমে। নদীতে জল কমে গেছে। বাঁশখুঁটি দিয়ে নদীর উপরে সাঁকো বানানো হচ্ছে। এবার এপারওপার যাতায়াত হবে। আহা। মানুষের মনে আনন্দ। ----------------+------+--------------------

ইছাই ঘোষ

প্রতিবাদী ইছাই ঘোষ মোটামুটি হাজার বছর আগের কথা। গৌড়ে তখন পাল রাজা দেবপাল। অজয় তীরে রাঢ়বঙ্গে সীমান্ত রক্ষার জন্য গড়। গড়ের দায়িত্বে কর্ণসেন। বাবার সাথে গড়ে যাতায়াত ছিল ইছাই এর। কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠলেন ইছাই। গড়ে তুললেন নিজস্ব সৈন্যদল। বাউরী বাগদী হাঁড়ি ডোম ঘরের যুবক ছেলে দের নিয়ে। অতর্কিত আক্রমণে গড় দখল করে নিলেন। কর্ণসেন পালিয়ে বাঁচলেন। ইছাই গড়ে তুললেন তাঁর রাজত্ব। সমগ্র গোপভূমি জুড়ে। তিনি হলেন ' মহামাণ্ডলিক'। 'রাঢ়াধীপ'। ইছাই ছিলেন তান্ত্রিক। তাঁর আরাধ্যা দেবী ভগবতী শ্যামারূপা। দুর্গা মন্ত্রে এখন ও তাঁর পুজা হয়। এই দুর্গাপূজা র সময়। তিনি ' গড়ের দেবী'। ইছাই তাঁর গড়ের নাম রেখেছিলেন শ্যামারূপা গড়। তাই ' ঢেকুর গড়' বা ত্রিষষ্টি গড়। রামগঞ্জ তাম্রশাসন এর ঈশ্বরী ঘোষ ই ইছাই ঘোষ। তাঁকে আমরা ' ধর্ম্মমঙ্গল' কাব্যেও পাব। প্রণব ভট্টাচার্য

Friday, 8 June 2018

অযোধ্যা - বনকাটি এলাকার কালী পূজা ( পরগণা - সেনপাহাড়ী ; জঙ্গল মহল ; বর্দ্ধমান ; বর্তমানের থানা - কাঁকসা ) প্রণব ভট্টাচার্য জঙ্গল মানেই অন্ধকার। অন্ধকার মানেই ভয়। যেখানে অন্ধকার যেখানে ভয় সেখানে ই কালীপুজো। সে কয়লা খনি হোক আর থানা ই হোক। আর তমসার দেবীর পুজো না করে আর ডাকাত রা কবে রণে গিয়েছে। কালী শক্তি দায়িনী। আর জঙ্গল মহল। চির বিদ্রোহী। মানে চির উপদ্রুত। তকমা ও তেমন। অপরাধ প্রবণ। সরকার বাহাদুর এর সুতীক্ষ্ণ নজর। হলে কি হবে। চুরি ডাকাতি প্রায় প্রতি দিনে রাতে। সাতকাটার জংগলে দিনে ই কেটে দিচ্ছে। সেনপাহাড়ীর মুচি দের কথা কে না জানে। যেমন লম্বা চওড়া দেখতে। তেমনি দুর্ধর্ষ। নাম করা সব ডাকাত। ওদিকে জংগল এর গায়ে গায়ে গাঁ গুলো - জামডোবা - চুয়া - রক্ষিতপুর - লোহাগুড়ি - হরিকি - মলান দিঘি এই একটা বেল্ট। সব গাঁ য়েই ওস্তাদ রা আছে। এদের ও এলাকা ভাগ আছে। অবশ্য ভাড়া যেতে খুব আপত্তি নেই। যায় ও। ওদিকে কাঁটাবেড়ে র সৌ দের মদ শালে দেখা সাক্ষাত হয় বাবুদের। শিবপুর - জামবন - বিষ্টুপুর- জাঠগড়ে র সব মাল। ওদিকের গ্রুপ টার মানে বিজড়া - শোভাপুর - ধবনি লবনাপারা - আকন্দারা ওয়ালাদের সাথে খবরাখবর চালাচালি হয়। সৌ শুনে ও না শোনার ভান করে। আর খুব বড় ওস্তাদ রাজহাট এর হাঁড়ি দের কর্তার সাথে ও কথা হয়। কেউ কারো এরিয়ায় ঢোকেনা। বাঁটুল থেকে গুলি পাথর ছুঁড়ে জানান দেয়। জামডোবা র মুচি দের ডাকাতে কালী । সাধন পুজন করেন ব্রহ্মচারী কালীশংকর রায়। পরে এই পুজো ই এলো অযোধ্যা গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে। অযোধ্যা র মুচি দের বিরাট কালী। সর্দার দের পাড়া। বনকাটি র মুচি দের পুজো ও জাঁকালো। এছাড়া ডোম দের আছে। বাউড়ী দের ও। বাগদী দের ও। ভূস্বামী পরিবার গুলির মধ্যে বনকাটি রায় পরিবারের কালী পুজো খুবই পুরোনো। তান্ত্রিকমতে পূজা হয়। মুচিরা ছিল রায় দের লেঠেল। বশংবদ। তাদের আনুগত্য ধরে রাখতে রায় দের কালী র সাথে মুচিদের দুই কালীর হল বোন সম্পর্ক। অযোধ্যা - সাতকাহনিয়ার বাউরী সমাজের সম্পর্ক আছে ভালই। তাদের ও পুজো আছে। দু গাঁয়ের দু পাড়াতেই। সব এক রাতের কালী। তিমির নাশিনী - তমসার দেবী। তালপাতার কুঁড়েতে তাঁর অধিষ্ঠান হয়। সে হোত একসময়। এখন সব পাকা মন্দির। জাঁকজমক। মহোৎসব। এই জঙ্গল মহলের কোন গ্রামে আর কালীপুজো না হয়। বিরাট বিরাট কালীমূর্তি । জামদহ ; রাজ হাট; নবগ্রাম বিদবিহার ;বিনোদপুর; প্রভৃতি গ্রামে। গ্রামগুলি বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার। আমাদের আজকের আলোচ্য নয়। অন্যসময় হবে। আমাদের বনকাটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অযোধ্যা - বনকাটি গ্রাম ছাড়া ও অন্যান্য গ্রাম গুলিতেও অনেক কালী পুজো। সমাজের তথাকথিত অন্ত্যজ স্তরের মানুষেরাই এই পুজোর আয়োজক। পুজো তাঁরা নিজেরাই করেন। বাংলায় তো এরাই যোদ্ধৃ জাতি। ডোম ; হাঁড়ি; মুচি ; বাগদী ; মাল ; বাউরী ; এরাই তো যুদ্ধ করেছে। ডোম সৈন্য রা তো খুব ই বিখ্যাত ছিল। বাইরেও যুদ্ধ করতে গেছে। আবার ডাকাতি ও করেছে। কোন স্থানীয় রাজা র পরাজয় এর পর সৈন্য দল ভেঙ্গে গেছে। সৈনিকের মর্যাদা চলে গেছে।অনেকে চাষবাসে আর ফিরতে পারেনি। ডাকাতি তে চলে গেছে।সামাজিক দূরবস্থাও অন্যতম কারন। অন্ধকারের দেবী র কাছে শক্তি প্রার্থনা করেছে। লড়াই এর শক্তি ; আত্মবিশ্বাস। আদিবাসী সাঁও তাল রাও কালী পুজো করে। মহিষাসুর কে যেমন তারা তাদের পুর্বপুরুষ নেতা বলে মনে করে - । কালী কি তাদের ঘরের মেয়ে। একদিন কি তার ই নেতৃত্বে উগ্রচণ্ডা নারী বাহিনী তাদের রক্ষার জন্য লড়াই এ নেমেছে। গলার নরমুণ্ড মালার সাদা হলুদ রঙের মাথাগুলি কাদের? ইতিহাস কি বলে?

অমানিশা র দেবীর পূজা

অযোধ্যা - বনকাটি এলাকার কালী পূজা ( পরগণা - সেনপাহাড়ী ; জঙ্গল মহল ; বর্দ্ধমান ; বর্তমানের থানা - কাঁকসা ) প্রণব ভট্টাচার্য জঙ্গল মানেই অন্ধকার। অন্ধকার মানেই ভয়। যেখানে অন্ধকার যেখানে ভয় সেখানে ই কালীপুজো। সে কয়লা খনি হোক আর থানা ই হোক। আর তমসার দেবীর পুজো না করে আর ডাকাত রা কবে রণে গিয়েছে। কালী শক্তি দায়িনী। আর জঙ্গল মহল। চির বিদ্রোহী। মানে চির উপদ্রুত। তকমা ও তেমন। অপরাধ প্রবণ। সরকার বাহাদুর এর সুতীক্ষ্ণ নজর। হলে কি হবে। চুরি ডাকাতি প্রায় প্রতি দিনে রাতে। সাতকাটার জংগলে দিনে ই কেটে দিচ্ছে। সেনপাহাড়ীর মুচি দের কথা কে না জানে। যেমন লম্বা চওড়া দেখতে। তেমনি দুর্ধর্ষ। নাম করা সব ডাকাত। ওদিকে জংগল এর গায়ে গায়ে গাঁ গুলো - জামডোবা - চুয়া - রক্ষিতপুর - লোহাগুড়ি - হরিকি - মলান দিঘি এই একটা বেল্ট। সব গাঁ য়েই ওস্তাদ রা আছে। এদের ও এলাকা ভাগ আছে। অবশ্য ভাড়া যেতে খুব আপত্তি নেই। যায় ও। ওদিকে কাঁটাবেড়ে র সৌ দের মদ শালে দেখা সাক্ষাত হয় বাবুদের। শিবপুর - জামবন - বিষ্টুপুর- জাঠগড়ে র সব মাল। ওদিকের গ্রুপ টার মানে বিজড়া - শোভাপুর - ধবনি লবনাপারা - আকন্দারা ওয়ালাদের সাথে খবরাখবর চালাচালি হয়। সৌ শুনে ও না শোনার ভান করে। আর খুব বড় ওস্তাদ রাজহাট এর হাঁড়ি দের কর্তার সাথে ও কথা হয়। কেউ কারো এরিয়ায় ঢোকেনা। বাঁটুল থেকে গুলি পাথর ছুঁড়ে জানান দেয়। জামডোবা র মুচি দের ডাকাতে কালী । সাধন পুজন করেন ব্রহ্মচারী কালীশংকর রায়। পরে এই পুজো ই এলো অযোধ্যা গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে। অযোধ্যা র মুচি দের বিরাট কালী। সর্দার দের পাড়া। বনকাটি র মুচি দের পুজো ও জাঁকালো। এছাড়া ডোম দের আছে। বাউড়ী দের ও। বাগদী দের ও। ভূস্বামী পরিবার গুলির মধ্যে বনকাটি রায় পরিবারের কালী পুজো খুবই পুরোনো। তান্ত্রিকমতে পূজা হয়। মুচিরা ছিল রায় দের লেঠেল। বশংবদ। তাদের আনুগত্য ধরে রাখতে রায় দের কালী র সাথে মুচিদের দুই কালীর হল বোন সম্পর্ক। অযোধ্যা - সাতকাহনিয়ার বাউরী সমাজের সম্পর্ক আছে ভালই। তাদের ও পুজো আছে। দু গাঁয়ের দু পাড়াতেই। সব এক রাতের কালী। তিমির নাশিনী - তমসার দেবী। তালপাতার কুঁড়েতে তাঁর অধিষ্ঠান হয়। সে হোত একসময়। এখন সব পাকা মন্দির। জাঁকজমক। মহোৎসব। এই জঙ্গল মহলের কোন গ্রামে আর কালীপুজো না হয়। বিরাট বিরাট কালীমূর্তি । জামদহ ; রাজ হাট; নবগ্রাম বিদবিহার ;বিনোদপুর; প্রভৃতি গ্রামে। গ্রামগুলি বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার। আমাদের আজকের আলোচ্য নয়। অন্যসময় হবে। আমাদের বনকাটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অযোধ্যা - বনকাটি গ্রাম ছাড়া ও অন্যান্য গ্রাম গুলিতেও অনেক কালী পুজো। সমাজের তথাকথিত অন্ত্যজ স্তরের মানুষেরাই এই পুজোর আয়োজক। পুজো তাঁরা নিজেরাই করেন। বাংলায় তো এরাই যোদ্ধৃ জাতি। ডোম ; হাঁড়ি; মুচি ; বাগদী ; মাল ; বাউরী ; এরাই তো যুদ্ধ করেছে। ডোম সৈন্য রা তো খুব ই বিখ্যাত ছিল। বাইরেও যুদ্ধ করতে গেছে। আবার ডাকাতি ও করেছে। কোন স্থানীয় রাজা র পরাজয় এর পর সৈন্য দল ভেঙ্গে গেছে। সৈনিকের মর্যাদা চলে গেছে।অনেকে চাষবাসে আর ফিরতে পারেনি। ডাকাতি তে চলে গেছে।সামাজিক দূরবস্থাও অন্যতম কারন। অন্ধকারের দেবী র কাছে শক্তি প্রার্থনা করেছে। লড়াই এর শক্তি ; আত্মবিশ্বাস। আদিবাসী সাঁও তাল রাও কালী পুজো করে। মহিষাসুর কে যেমন তারা তাদের পুর্বপুরুষ নেতা বলে মনে করে - । কালী কি তাদের ঘরের মেয়ে। একদিন কি তার ই নেতৃত্বে উগ্রচণ্ডা নারী বাহিনী তাদের রক্ষার জন্য লড়াই এ নেমেছে। গলার নরমুণ্ড মালার সাদা হলুদ রঙের মাথাগুলি কাদের? ইতিহাস কি বলে?

মন্দিরময় অয্যোধ্যা - বনকাটি

প্রাচীন সেই বনকাটি ------------- প্রণব ভট্টাচার্য ১৭০৪ শকাব্দ। মানে ১৭০৪+৭৮ = ১৭৮২ সাল। মানে আজ থেকে ২৩৫-৩৬ বছর আগে এখানকার মানে এই এলাকার প্রথম শিবমন্দির টি তৈরি হচ্ছে বনকাটি গ্রামে : থানা - কাঁকসা প: বর্ধমান। বিখ্যাত রায় বাড়ির কালীবাড়ি র প্রাঙ্গণে। পাশাপাশি দুটি চারচালা মন্দির। হয়তো ছোট। টেরাকোটা র কাজের বিস্তৃত অলংকরণ নাই। উত্তর মুখী। শিবলিঙ্গ ও তাই। দিক নির্দেশক ও বটে। এরপর ৫২ বছর পর নির্মিত হচ্ছে একই প্রাঙ্গণে পূর্বমুখী তিনটি বেশ বড়ো পীড়যুক্ত শিবমন্দির। স্বল্প টেরাকোটা র কাজ। কিন্তু ভালো। মন্দিরের পিছন দিক সাধারণত অলংকৃত হয়না। কিন্তু এখানে পঙ্খএর প্লাস্টার এর উপর চমৎকার লতাপাতার ফ্রেস্কোর কাজ। রংতুলি তে আঁকা। কি ডিজাইন! আহা! প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। যেটুকু বোঝা যায়- - এখানে আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগে মিস্ত্রী কারা। তাদের নাম জানার কোন উপায় নেই। ডিজাইনে মিল থাকেই। এই এলাকার অন্যান্য কয়েকটি মন্দির এরকাজের সাথে মিল আছে। মনে হয় মিস্ত্রী একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী। ঘরানার মিল। অর্থনৈতিক অবস্থা র উন্নতি ঘটল। সেই সময় টাকে ঠিক ঠাক বুঝতে চাইছি- সামগ্রিক ভাবে।

Friday, 1 June 2018

বীর কালু এবং নদীর এপারওপার

আজ ১৩ ই বৈশাখ। ১৪২৫ বঙ্গাব্দ। ইংরাজি ২০১৮ সাল। দ্বাদশী তিথি। সকাল থেকে আকাশ মেঘলা। সেই অসহ্য গুমোট গরম টা নেই। নদী র ওপারে ঢাক ঢোলের আওয়াজ এপারে আসছে। আর এপারের আওয়াজ ওপারে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। অজয়ের ওপারে ' লাউসেন তলা'। 'লাউসেন গোড়ে'। গাছপালা ঝোপঝাড়ে ভর্তি জায়গা। আজ সেখানে বহু মানুষের জমায়েত। মহা উৎসাহে ; বিরাট ধূমধামের সাথে সেখানে আজ পূজা হচ্ছে ' কালুবীর' এর। বাইরে থেকে আঁকুড়ে ডোম সম্প্রদায় এর শিক্ষিত মানুষেরা ও অনেকে এসেছেন। স্থানীয় আঁকুড়ে ডোম সম্প্রদায়ের মানুষেরা এসেছেন দলে দলে। জয়দেব - কেন্দুলী র কাছেই প্রাচীন ' সুগড়' গ্রাম। সেখানের ডোম সম্প্রদায়ের মানুষেরাও আজ তাঁর পূজা করছেন। যথারীতি নিজস্ব আচার অনুষ্ঠান অনুযায়ী। শেষ পর্বে ছাগ বলি রীতি। অজয়ের এপারে দক্ষিণ তীরে দুবরাজপুর মানা র উত্তরে নদী বাঁধ এর গায়েই ' বুধো রায়' এর থান। নামটি লক্ষ্য করুন। বুধো রায়। আদিতে ইনি বুদ্ধ রায়। বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েত। বিদবিহার নাম তো বৌদ্ধবিহার এর অপভ্রংশ। সেই পাল যুগে অজয়ের এপার ওপার দুপারেই তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মের দারুন প্রসার প্রভাব। ডোম সম্প্রদায় সহ সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণী র মানুষেরা এই তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মে দারুন ভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। প্রথমত জাতপাত হীন এই ধর্মে তাঁরা বিশেষ মর্যাদা পেয়েছিলেন। সমাজে বেড়েছিল তাঁদের প্রভাব প্রতিপত্তি। ডোম্ব - ডোম্বীনি দের নানা কথা তো চর্যাপদে আমরা পাচ্ছিই। নাচে গানে তাঁরা পারদর্শী। আর ' দেহভাণ্ড ই ব্রহ্মাণ্ড '। দেহসুখেই - চিত্তসুখের সন্ধান। আর সে দেহ সাধনা তো আর ডোমনী দের ছাড়া হয় না। দেহ নিয়ে অত শুচিবাই গ্রস্ততা তাদের নেই। যাই হোক একটু সরে গেছি আমাদের বিষয় থেকে। এই বুধোরায়ের তলাতে একদিন বহু বহু গ্রামের শত শত বাজুনে ডোম সম্প্রদায়ের মানুষেরা জড়ো হতেন এই ' কালু বীর' এর পুজায়।এঁরা ও ডোম সম্প্রদায় এর। তবে এঁরা বৃত্তিগত ভাবে ঢাক ঢোল এর বাজনদার। আর আঁকুড়ে রা নিজেদের পুরোনো সৈনিকবৃত্তি র কথা ভেবে গর্ব অনুভব করেন। উভয় থাকের মানুষেরা কালুবীর কে নিজেদের বলেই মনে করেন। এবার প্রশ্ন কে এই' কালু বীর'? এঁকে আমরা পাব ধর্ম্মমঙ্গল কাব্যে।ময়ূর ভট্ট; ঘণরাম; রূপরাম চক্রবর্তী ; মাণিক গাঙ্গুলী সকলের কাব্যেই তাঁকে পাই। জাতি তে ডোম। পেশা য় সৈনিক। মারাত্মক যোদ্ধা। স্ত্রী সাহসিনী লক্ষা। সে ও যুদ্ধ জানে। ইছাই ঘোষের সাথে লাউসেন এর যুদ্ধে লাউসেন এর অন্যতম সেনাপতি কালু বীর। তার সাহসে ভর করেই লাউসেন এর যুদ্ধযাত্রা। যুদ্ধবিগ্রহ ; অস্ত্রচর্চা ছাড়া আর কিছুতেই তার মন নাই। মদ্য ; মাংস ছাড়া তার চলেনা। " দেবদেবে মোর কিবা কাজ/ মদ্য মাংস না পেলে পড়ে বাজ"। আর ডোম মানে ই তো যুদ্ধের জাত। সে যেখানের ই হোক। ' তুপুস পুরের হোক আর ' সেন পাহাড়ী র ই হোক । ডোম সৈন্য দল মানেই সে ভয়ংকর। আর যুদ্ধযাত্রা মানেই " আগে ডোম বাগে ডোম ঘোড়া ডোম সাজে" কাহিনী তো মোটামুটি আমরা জানি। তবু সংক্ষেপে না হয় আবার শুনি। অজয়ের ওপারে গড় জঙ্গল। শ্যামারূপার গড়।ছিল পরিখা ঘেরা গড় বাড়ী। সীমান্ত প্রহরার জন্য। তখন গৌড়ে পাল রাজাদের রাজত্ব। তাঁদের প্রতিনিধি হয়ে দূর্গ সামলান ময়না গড়ের অধিপতি কর্ণসেন। স্থানীয় গোপ বীর ইছাই ঘোষ অতর্কিত আক্রমনে দুর্গ দখল করে নেন। কর্ণসেন পালান। সেই আক্রমনে কর্ণসেনের ছয় পুত্র নিহত হন। স্ত্রী আত্মঘাতিনী হন। বিবাগী কর্ণসেন কে সংসারে ফেরাতে পালরাজ তাঁর শ্যালিকা রঞ্জাবতী র সাথে কর্ণসেনের বিয়ে দেন। এটা না কি শ্যালক মন্ত্রী মহামদ ভালো মনে নেন নি। কর্ণসেন রঞ্জাবতী র ই সন্তান লাউসেন বা লব বা নবসেন।ধর্ম ঠাকুরের দয়ায় তাঁদের সন্তান লাভ। যুবক লাউসেন অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠলেন।তাঁর মনে জাগল পিতার হারানো রাজত্ব উদ্ধার। পিতার অপমান মায়ের আত্মহত্যা ভাইদের মৃত্যু তাকে অস্থির করে তুলল। মামা মহামদ প্রবল ভাবে উৎসাহ দিলেন। তাঁর মনে কিন্তু অন্য কথা। কালুবীর ; বিশাল সৈন্য দল ; নিয়ে লাউসেন এসে উপস্থিত হলেন অজয়ের উত্তরে। ঘাঁটি গাড়লেন সুগড়; সন্তোষপুর এ। তারপর অপেক্ষা। দিন ক্ষণ সময় বুঝে নদী পেরুনো। ইছাই এর ঢেকুর গড় বা ত্রিষষ্টি গড় আক্রমন। ইছাই এতো দিনে প্রায় বৃদ্ধ। কত টা কি পারবে- দেখা যাবে। সেদিন শণিবার। সপ্তমী। ১৩ ই বৈশাখ। লাউসেন গোড়ে ( ছোট্ট পুকুর) তে স্নান করে ধর্মঠাকুর এর পূজা করে লাউসেন চললেন নদী পার হতে। সামনে তাঁর সেনাপতি কালুবীর। কালু র হু হুঙ্কারে কাঁপছে বন জঙ্গল। ওদিকে ইছাই এর সৈন্যদল ও তৈরী। ঘণ কাঁটাবাঁশের মোটা মোটা ঝাড় দিয়ে ঘেরা গড়।প্রাকার পরিখা ও আছে। সমস্ত উঁচু ঢিবি গুলোর উপরে ইছাই এর বাউড়ি ; হাঁড়ি; বাগদী ; খাঁড়াত ; কোটাল ডোম সৈন্য রা তৈরি তীর ধনু টেঁটি খাঁড়া বল্লম ইত্যাদি অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে। নদী পেরুচ্ছে লাউসেন এর সৈন্য রা। কাঁদুনে ডাঙ্গায় বাধল মারাত্মক যুদ্ধ। রক্তে ভেসে গেল " রক্তনালা"। কালু বীর বীরবিক্রমে লড়াই চালাচ্ছে। এদিকে ইছাই এর তো নিষেধ ই ছিল " সম্মুখে সপ্তমী শণিবার বারবেলা / আজি রণে যেওনারে ইছাই গোয়ালা"। দেবী শ্যামারূপার দৈববাণী। কিন্তু উপায় ও নাই। লাউসেন তারস্বরে আহ্বান জানাচ্ছে বেরিয়ে আয় - আমার সঙ্গে মুখোমুখি লড়। যেতেই হল। আর উপাই বা কি। ঐ লাউসেন তলাতেই নাকি হয়েছিল মুখোমুখি দুজনের যুদ্ধ। বৃদ্ধ ইছাই পরাজিত এবং নিহত হলেন। ইছাই এর কাছে হারানো গড় পুনরায় দখল করলেন লাউসেন। জয় হল ধর্মঠাকুরের। সংক্ষেপে এই হল কাহিনী। এবার এরমধ্যে যেটুকু ইতিহাস। পালবংশে ই নবসেন নামে একজন কে খুঁজে পাওয়া গেছে। তিনিই লাউসেন। কেউ কেউ আবার বলছেন কালুবীর ; কালু সেন। তিনি নাকি লাউসেন এর ই বৈমাত্রেয় ভাই। লক্ষী বা লক্ষা নামের ডোম সম্প্রদায়ের মেয়েকে বিয়ে করেই তিনি এলাকার সব খবরা খবর জোগাড় করেন। যা যুদ্ধ জিততে কাজে লেগেছিল। কালু হয়ে ওঠেন ডোম সম্প্রদায়ের নেতা। কালুর স্মৃতি আজও বহমান। ইছাই বা লাউসেন এর স্মৃতি তে পুজা হয়না। কোন জমায়েত ও না। ডোম সম্প্রদায় কিন্তু বংশ পরম্পরা য় কালুবীর এর পূজা করে আসছেন। যথাসাধ্য আয়োজনে।ইতিহাস বেঁচে থাকে এই লোক সাধারনের মধ্যেই। এই আমাদের কালু বীর। নদী র ওপারের অর্থাৎ বীরভূমের দিকে র নদী তীরবর্তী গ্রাম গুলির আঁকুড়ে বা অখিরা পদবী র ডোম সম্প্রদায়ের মানুষেরা নিজেদেরকে কালু র বংশধর বলে পরিচয় দেন। আর ইছাই কে আমরা ইতিহাসে পাব ঈশ্বরী ঘোষ নামে। তিনি ' মহা মাণ্ডলিক ' রাঢ়াধীপ' ত্রিষষ্টি গড়ের অধিপতি। বর্তমান বাংলা দেশের রামগঞ্জে প্রাপ্ত তাম্রশাসন থেকে তাঁর কথা জানতে পারি। মোটামুটি হাজার বছর আগের কথা। ইছাই এর স্মৃতি বিজড়িত জায়গা য় অনেক অনেক পরে একটি দেউল নির্মিত হয়। সম্ভবত বর্ধমান এর রাজ বংশের রাজা চিত্রসেন এটি নির্মাণ করান। এটি ইছাই ঘোষের দেউল নামেই বিখ্যাত। নদীর ওপারে এই সময়ে নির্মিত হয়েছে; বা হচ্ছে লাউসেন তলায় আটন পাট মন্দির। কালুবীরএর স্মৃতিতে এবং ধর্মরাজ পূজার জন্য। এসব করছেন একদল আধুনিক ভক্ত। ডোম সম্প্রদায়ের আঁকুড়ে বা অখিরা পদবীর একদল শিক্ষিত মানুষ এর মূল উদ্যোক্তা। মনে হয় তাঁরা ' বীরপূজা' র এক icon কে কালুবীর এর মাঝে খুঁজে পেয়েছেন। ইছাই এর বিরুদ্ধে প্রবলপরাক্রমে যুদ্ধ করলেও কালু ও এই যুদ্ধে নিহত হন। তাঁর স্ত্রী লক্ষা বা লক্ষী নিশ্চয় ই এখানে নিজেদের লোকদের সাথে থেকে যান। প্রশ্ন জাগে কালু কি এখানের এই মাটির মানুষ।না কি লাউসেন এর সাথে বাইরে থেকে এসেছিলেন।যদি স্থানীয় মানুষ হন - তবে তাঁর মতো বীর যোদ্ধা কে ইছাই তাঁর সৈন্যদল এর অন্তর্ভুক্ত করলেন না কেন। কেন কালু যোগ দিলেন লাউসেন এর পক্ষে। সে যাই হোক রাঙ্গামাটি র এই রাঢ়দেশের এক অনন্য চরিত্র কালুডোম ; কালুবীর। ডোম সমাজের মাথার মণি-। ধর্মরাজ থানে তাঁর ও আটন। তিনি কালু রায় ও। ------+-+--------------------++---------------------------- ১৩ ই বৈশাখ: কালু বীরের পূজা --------------------------------- প্রণব ভট্টাচার্য।