Thursday, 11 February 2021

সাতকাহনিয়া নবীন দাস বাবাজী র আখড়া। মাতামা আর অন্নপূর্ণা দেব্যা আর সে

সাতকাহনিয়া নবীন দাস বাবাজী র আখড়া। 
 বালক মাতা দাসী আর অন্নপূর্ণা দেব্যা 
--------------------------------------------------------
আশ্রমের  ৩ রা মাঘের মহোৎসব এর প্রস্তুতি 

 পায়ে হেঁটে হেঁটে ঘুরতে হয় চার পাশের নানা গ্রামে। 
 ঘুরতে হয় সব আশ্রম আখড়ায়। 
 বৈষ্ণবী র ঝোলা। কর্তাল। নামগান। মাধুকরী। আমন্ত্রণ। 
 আদুরিয়া  অমরপুর   জিজিরা  পদুমা  লবণ ধার  পরিশা 
 দেবশালা দোমড়া তিলকচাঁদপুর  জামডোবা  রঘুনাথপুর 
 মাজুরিয়া শ্রীচন্দ্রপুর  ডাঙ্গাল বসুধা বাগুড়া। 
 অযোধ্যা বনকাটি তো ঘর ই। 
 অজয়ের ওপারে নারানপুর উদয়পুর ক্ষুদ্রপুর ভরতপুর 
   ইত্যাদি সব গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে আছে ভক্তবৃন্দ। 
তাদের কাছে একবার তো পৌঁছাতে হবে। 
 তারপর তারা না হয় যার যা সামর্থ্য চাল ডাল আলু সব্জি শালপাতা  জ্বালানী কাঠ পৌঁছে দেবে। 
 অনেক কাজ। আখড়ার ছোট্ট ঘর টা ছাইতে হবে। ছোট ছোট কুঁড়ে ঘর বাঁশ খড় দিয়ে বানাতে হবে। ছাউনি করতে হবে। 
 আয় বাবা আয় বাবা করে লোক ডেকে ডেকে  করাতে হবে। 
খড় বাঁশ না হয় চেয়ে চিন্তে জোগাড় হবে। 
 হালদার বাবুরা কিছু খড় বাঁশ  চাল দেন। গাঁয়ের লোক যে যেমন পারে দেয়। কাঁসার থালায় এক থালা চাল গোটা চার আলু। তার বেশি আর সাধ্য নেই কারও। গরীবের গাঁ। 
 এক আধ কাঠা চাষের জমি নিজের কারও নেই। 
 হালদার বাবু দের জমি চাষ করে যে চাষীরা তারা কিছু বেশী দেয়। তবে কি আর বেশী!  
 বরং নারানপুর থেকে বেশ ভালো আসে। যে রেণুপদ পরে দীক্ষা নিয়ে রামানন্দ হয় তার বাড়ি থেকে ভালো পরিমান চাল ডাল আলু আসে।  মাতামার 'বাগদী বাবাদের' ঘরের ছেলেরা নানা কাজের জন্য কদিন আগে থেকেই এসে লাগে। এরা খুব ভালো মানুষ। মাতামার সঙ্গে নারানপুর গেলে বামুনের ছেলে বলে ওরা আমাকে কাঁসার থালায় চিঁড়ে গুড় দুধ খেতে দিত। 
 পাকা আমের সময় খুব মজা। আম কলা দুধ চিঁড়ের 'ফলার '।  এই নারানপুরের ধর্মরাজ পুজো খুব বিখ্যাত। এ আজকের পুজো নয়। এপারে ' ধর্মমঙ্গল ' এর বিখ্যাত ' কালু ডোম ' এর 
 'ধর্মরাজের থান। ' লাউসেন তলা ' কাছেই। 
 পাশেই 'উদয় পুর '। যেখানে পূবের সূর্য উত্তরে উঠেছিল। 
 ধর্মমঙ্গল এর আখ্যান। 
 মাতামা প্রায়ই নারানপুর যায়। আর সাথে সে।
 নদীর বালিতে পা ডুবিয়ে হাঁটতে কষ্ট আবার মজা। 
  জল তো মা কোলে করে পার করে। 
 ধর্মরাজ পুজো র সময় তো যায় ই। এই থানের মাটি মাখলে বাত ভালো হয়ে যায় এমনই লোকবিশ্বাস। এ গাঁ য়ে অনেক ডোম সম্প্রদায়ের মানুষ আছেন। আদিতে পুজো তাঁদেরই। 
 জয়দেব কেন্দুলীর মেলায় যাবার সময় অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তির অনেক আগে থেকেই সাধু বাবাজী বৈষ্ণব রা 
 নানা আখড়া য় বিশ্রাম নিতে নিতে কেন্দুলী পৌঁছান। 
 সংক্রান্তি র ভোরে সাধু সন্ন্যাসী রা অজয় - গঙ্গা য় স্নান সারেন। তাঁরা লগ্ন দেখে স্নান সারেন। সে নিজে ভোর তিন টে তে এক জটাজুট ধারী সন্ন্যাসীকে স্নান সেরে উঠতে দেখেছে । তখন অবশ্য সে বড় হয়েছে।  কানুর সাথে কাঙ্গাল ক্ষেপার আখড়ায় থেকেছে। আর ছিল দীনু ; ধনেশ্বর। একটা বেশ বন্ধুদের দল। 
 মেলা আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হয় ২ তারিখে। ২রা মাঘ। তখন মেলা চালাতেন  মোহান্ত অস্থলের মোহান্ত মহারাজ। 
 এঁরা নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের। বৃন্দাবন থেকে মোহান্ত মহারাজ আসেন কেন্দুলীর গদিতে। এই ' অস্থল ' সম্পর্কে আলাদা করে বলতে হবে ই। মোহান্ত অস্থলের আমন্ত্রণ পত্রটি র কোন বদল ঘটেনি। " পৌষসংক্রান্তি র দিবস হইতে ভগবৎকুল তিলক কবিকুল চূড়ামণি ভূদেবোপম শ্রী শ্রী ঁজয়দেব গোস্বামী মহাত্মা র তিরোধান উপলক্ষে জয়দেব - কেন্দুবিল্ব ধামে মহোৎসব আরম্ভ হইয়া ২ রা মাঘ তারিখে ধূলট হইবে "। 
 এবার ফেরার পালা। সাধু সন্ন্যাসী বাবাজী বৈষ্ণব রা 
 আশ্রমে আশ্রমে বিশ্রাম সহ নানা বৈষ্ণবী য় অনুষ্ঠান এবং 
নানা গুহ্য সাধনার ক্রিয়া প্রকরণ প্রণালী শিক্ষা সহ দীক্ষা দান  
 করতে করতে উপস্থিত হন দধিয়া বৈরাগী তলার বৈষ্ণব সমাবেশে। 
  আমার এই  সাতকাহনিয়া আশ্রমের ইতিহাস শতাব্দী প্রাচীন।
 অনেক ঘটনা র সাক্ষী ' বৈরাগী বটতলা '। আজ আর মাতা মা বা আমার ' ননু মা ' মানে অন্নপূর্ণা মাসীমা রা কেউ নেই। 
 যেমন নেই সোনামুখি আশ্রমের বা ইলাম বাজার আশ্রমের বাবাজী রা। যাঁদের আলাদা এক আসন ছিল বৈষ্ণব মণ্ডলী তে। আমি তাঁদের যতটা দেখেছি যতটুকু পারি বলে যাই।
  সাধু সন্ন্যাসী বাবাজী বৈষ্ণব রা আসছেন ২ রা মাঘ সন্ধ্যায় সাতকাহনিয়া আশ্রমে। বটতলার প্রবেশদ্বারে  দাঁড়িয়ে আগে 
 নানা নাম ধ্বণি। নামধ্বণিতে মুখরিত হয়ে ওঠে আশ্রমের উঠোন। মাতামা আর তাঁর শিষ্যা অন্নপূর্ণা জোড় হাতে দাঁড়ান। 
                        মুখে হরিবোল। 
( ক্রমশঃ)  ৪ র্থ পর্ব শেষ। 
 ©   প্রণব ভট্টাচার্য

No comments:

Post a Comment