Thursday, 11 February 2021

সাতকাহনিয়া নবীন দাস বাবাজী র আখড়া য় ৩রা মাঘের মহোৎসব

সাতকাহনিয়া নবীন দাস বাবাজী র আশ্রম 
 ৩রা মাঘের মহোৎসব। ৫ ম পর্ব। 

 মনে অনেককে পড়ে।  সব নাম আজ আর  মনে পড়েনা যে। 
 কত মানুষ। এলো। গেলো। জগৎ চলছে। 
 দিগনগরের সুবল দাস বাবাজী। গৃহী বৈষ্ণব। তাঁর স্ত্রী। নাম গুরুদাসী। মাতামা তাকে বড় ভালোবাসতো। মেয়ের মতো। আবার সে আমাকে খুব ভালোবাসতো। মাতামা র
 সাথে রথের মেলার সময় একবার গিয়েছি। 
 তাঁদের দিগনগর আখড়ায়। সুবল দাস কি সুন্দর সব খেলনা বানাত। রথের মেলায় বেচার জন্য। কাগজের চরকি ফুল  কুমীর আরও কতকি। মাটির নানা খেলনা। আমার চোখ চকচক করত। 
 মাতামা আমাকে দিয়ে চিঠি লেখাত। ৩ রা মাঘ আসার জন্য। 
 ' আমাকে একবার দেখে যা '। ' আয়  গুরুদাসী '। যত দিন
পেরেছিল এসেছিল। তারপর আর -
 খুব মনে পড়ে ধরম দাস বাবাজী কে। 
 কি উজ্জ্বল কৃষ্ণবর্ণের ত্বক। আর সত্য সাঁই বাবার মতো মাথার চুল। চোখে মুখে আলাদা জ্যোতি। 
 সোনামুখি র বিখ্যাত ' বাঁড়ুজ্জ্যে আশ্রম 'থেকে আসত। আমাকে খুব ভালো বাসতো। আমি তুমি করে ই ডাকতাম। 
 সামান্য গাঁজায় তার পোষাতনা।  আমাকে বলত ' ওরে খেতে জানতে হয় '
 তার সাধনার জোর ছিল। 
 এই আশ্রমে তাদের মালাচন্দন হয়েছিল। ললিতা হয়েছিল তার সাধন সঙ্গিনী। তাদের মালা চন্দনে আমার দাদু দিদিমা কে সাক্ষী রেখেছিল।  আমার দিদিমা ললিতাকে 'ভিক্ষে মেয়ে'  করেছিল। ললিতার মা ও আসতেন। 
আমার দাদু দিদিমা কে বাবা মা এর মতো তারা শ্রদ্ধা করত। 
  কিন্তু ধরম দাস ' বিন্দু ধারনে ' অসমর্থ হয়েছিল প্রথম বার। 
 ইশারায় ঘাড় নেড়ে অন্নপূর্ণা মাসীমা কে জানিয়েছিল। 
 আখড়ার কুঠুরি থেকে বেরিয়ে। 
 সে বয়সে সব বুঝিনি। পরে বুঝেছি। জেনেছি। 

  ' দেহভাণ্ড ই ব্রহ্মাণ্ড '। এই দেহেই সব। তাকে জাগাতে হবে। 
 সে একবার আমাকে বলছিলেন তন্ময় হয়ে ইলামবাজারে র বাবাজী। সাধক। ব্রহ্মচারী। বলতে বলতে হঠাৎ থেমে গিয়েছিলেন। ' যা ঘর যা '। 
 আমি বলি 'বল না দাদু '। 
 'ঘর যা '। 'সময় হয়নি '। ' হলে বলব '.... 
 হায়রে সময় কি আর বলে কয়ে আসে। 
 আমার মা কে কোলে পিঠে নিয়েছেন। বাঁকুড়া র মানুষ। 
 আমার দাদুর সাথে সেই বাঁকড়ি টান। বন্ধুত্ব। 
 যখন তাঁর ১০১ কি ১০২ তখনও আমি তাঁকে দি হাতে দূটো বালতি তে সাহাপাড়ার নলকূপ থেকে জল আনতে দেখেছি। 
 ছোট কুড়ুল দিয়ে কাঠ কাটতে দেখেছি। 
  এত দ্রুত হাঁটতেন। সাতকাহনিয়া থেকে ইলামবাজার পর্যন্ত হেঁটে যেতে বোধহয় পনেরো মিনিট ও লাগতো না। 
 তাঁদের এক পালিতা কন্যা ছিল। 
  তাঁদের বললাম এই জন্য যে তাঁর ও এক সাধন সঙ্গিনী ছিলেন। তিনি কি ছিলেন তাঁর স্ত্রী। সাধন মার্গের স্ত্রী র মর্যাদা দিয়েছিলেন তাঁকে। 
 নানা ভাষায় অসাধারণ বুৎপত্তি ছিল তাঁর। 
 ছিল অনেক বই পুঁথি। লাল শালু দিয়ে বাঁধা। 
 " দাদু বই গুলো কি হবে " 
 - সমাধি তে থাকবে। 
 - কত বয়েস হল দাদু? 
 - বয়েস নিয়ে কি হবে  বল 
  - না। এমনি জানতে চাইছি। 
   আবার সেই কথা।  ' ওরে আমার গুরুর কোন শিষ্য একশো পার না করে মরবে না রে '। আমার এখন একশো দুই টুই হবে। 
  আর ক টা দিন ------"
 "মাতামা বড় কষ্ট পাচ্ছে যে '। 
  -হ্যাঁ তোর মাতা বড় কষ্ট পাচ্ছে তা তো জানি রে  কিন্তু - 
 - কি কিন্তু দাদু!  অনেকক্ষণ কোন কথা নেই তারপর অস্ফুটে  একশো  এক। '   
সংস্কৃত তামিল তেলেগু উড়িয়া হিন্দি তে স্বচ্ছন্দ। 
একবার শান্তি নিকেতন যাবার পথে শেষ বাস ফেল করে এক যুবক তাঁর আশ্রমে আশ্রয় নিয়েছিল। সে তামিল। তাকে অবাক করে দিয়ে তার সাথে সমানে তামিলে কথা বলে গিয়েছিলেন। 

 পরদিন যখন গেলাম আমাকে বললেন " দ্যাখ আমার একটা ছবি এঁকেছে "। 
 আমি দেখলাম পেন্সিলে আঁকা প্রোফাইল পোট্রেট। সুন্দর। 
 তাঁদের এক পালিতা কন্যা ছিল। তার নাম আর মনে নাই। 
 আসলে তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন আশ্রমে। 
 তাঁরও ছিল এক মেয়ে। সে তখন বড় হয়ে উঠছে। বয়েস বারো তেরো হবে। বড় বড়  ভারী পাতার চোখে সে আমার দিকে তাকাতো। তার নামও আর মনে নাই। ভুলে গেছি। অথচ - -
   মনে গেঁথে আছে তার মুখচ্ছবি। ' ভুলে গেছি তব পরিচয় ' 
 ' কিন্তু তোমারে তো ভুলি নাই ------------
(ক্রমশ)  ৫ ম পর্ব। 
 কেমন লাগছে যদি সবাই জানান। আমার ভালো লাগে। 
© প্রণব ভট্টাচার্য।https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2275583972572808&id=100003636821328

No comments:

Post a Comment