Wednesday, 24 February 2021

বাবাজী বৈষ্ণব আখড়া। গৌরী মা

বাবাজী বাউল বৈষ্ণব আখড়া আশ্রম। পর্ব - ৮
-----------------------   --------------  -------------------
  মাত্র চার দিন আগে বলেছিলেন
  ' আমাকে একবার অযোধ্যা আশ্রমে বেড়াতে নিয়ে যাবি '
জীবিত অবস্থায় বেড়াতে আসা আর হলনা। আনা হল তাঁর মৃতদেহ। এই আশ্রমের সমাধি চত্বরে বৈষ্ণবীয় রীতি অনুযায়ী সমাধিস্থ করা হল ' ভাব সাগর' বিশ্বনাথ দাস বাউলের মরদেহ। তাঁর দুই সুপুত্র বিশিষ্ট বাউল গায়ক আনন্দদাস বাউল এবং ভাই নির্দিষ্ট কিছুদিন পরে আয়োজন করলেন ব্রাহ্মণ ; বৈষ্ণব ; বাবাজী বাউল এবং গ্রামবাসী দের জন্য  তাঁদের পিতা এবং গুরু র স্মরণে এক ভোজসভা র। বহু মানুষ এসেছিলেন।
বাইরে থেকে অনেক বাউল ; বৈষ্ণব। দু তিন দিন ধরে চলেছিল মহোৎসব।
বোলপুরে শুঁড়িপাড়ায় বিশ্বনাথ দাস বাউলের বাড়ি এবং আশ্রম। সেখানেই তাঁর স্ত্রী পদ্মা দাসী এবং অন্যান্য দের সমাধি। বিশ্বনাথ চিরনিদ্রায় শায়িত থাকলেন অযোধ্যা আশ্রমের মাটিতে।
এই মাটিতেই শায়িতা আছেন তাঁর শাশুড়ি মাতা গৌরীবালা দাসী ; তাঁর পুত্র দীনবন্ধু দাস বৈরাগ্য এবং আরও কয়েকজনের নশ্বর দেহ।
এই অযোধ্যা আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা ব্রজবাসী ; বৃন্দাবন থেকে আগত বলভদ্র দাস মোহান্ত। বা বলাই দাস বাবাজী। কিভাবে তিনি এখানে এলেন বা এখানে আশ্রম গড়ে তুললেন তা জানার আর কোন উপায় নেই। জয়দেব কেন্দুলী র নিম্বার্ক আশ্রমের মোহান্ত দের সাথে  তাঁর কি কোন যোগাযোগ ছিল! কি জানি।
কোন সূত্র পাইনি।
সাতকাহনিয়া আশ্রমের মাতামা বালক দাসী র সাথে খুব ছোটবেলা থেকেই অযোধ্যা আশ্রমে যাই।
খুব মনে পড়ে গৌরী মা কে। আমি গৌরী মা ই বলতাম। বলাই দাস বাবাজী কে আমার মনে পড়েনা।
শ্রী বাস দাস বাবাজী কে মনে পড়ে। কিন্তু সব ছাপিয়ে গৌরী মা কে। মুখ জুড়ে তার সদাপ্রসন্ন এক মাতৃভাব।
কোথাও একফোঁটা  ক্লেশ মালিন্য নেই। আর কি মিষ্টি ছিল তার বচন। আমার খুব ভালো লাগত।
তখন তো ছোট। কিছুই জানিনা। কিন্তু বড় হয়ে যখন শুনেছি -
কি আশ্চর্য তাঁর জীবন। কত ঝড় বয়ে গিয়েছিল সে জীবনের উপরে। তার কোন ছাপ আমি অন্ততপক্ষে সেই ছোটবেলায় লক্ষ্য করিনি। কিন্তু পরে অনেক ভেবেছি।
গৌরী বালার গর্ভজাত তিন পুত্র কন্যা। মেণকা দাসী ; দীনবন্ধু দাস ; পদ্মা দাসী।
এই গৌরী বালা সূত্রধর পরিবারের মেয়ে। তাঁর বাবা এই অযোধ্যা - বনকাটি ছেড়ে পাশের গ্রাম মাজুরিয়া য়
বাসা বেঁধে ছিলেন। কাজের খোঁজেই। বয়স একটু বাড়লেই গৌরী র বিয়ে হয়ে যায় অজয়ের ওপারে কেন্দুলী র পথে আকম্বা গ্রামে। সূত্রধর পরিবারেই।
বিবাহিত জীবন তাঁর সুখের হয়নি। সেখানের পরিবেশে তিনি নিজেকে মানাতে পারেন নি।
অযোধ্যা গ্রামের তাম্বুলী পরিবারের ব্যবসায়ী ভোলানাথ রক্ষিতের সাথে তাঁর সম্ভবত পূর্বপ্রণয় সম্পর্ক ছিল। ভোলানাথ মনোহারী দ্রব্যের ব্যবসা করতেন। সাইকেল নিয়ে মনোহারী দ্রব্যের   কাঁচ লাগানো বাক্স নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরতেন। আকম্বাও
যেতেন। গৌরী  র সাথে দেখা হত। নিশ্চয়ই কথা ও হত। তাঁদের সম্পর্কের কথা রটতে গ্রাম জীবনে বেশী সময় লাগলো না।
  তারপর একদিন ভোলানাথের সঙ্গে গৌরী স্বামী র ঘর ছাড়লেন।
----------------------------------© প্রণব ভট্টাচার্য।
( চলবে)
তথ্য সহায়তা। স্বপন দাস বৈরাগ্য। পিতা। প্রয়াত দীনবন্ধু দাস বৈরাগ্য
অযোধ্যা আশ্রম। পো বনকাটি থানা। কাঁকসা। জেলা। প বর্ধমান

No comments:

Post a Comment