সাতকাহনিয়া নবীন দাস বাবাজী র আশ্রমে
৩ রা মাঘের মহোৎসব।
----------------------------------------------------
২ তারিখের বিকেল নাগাদ অনেকে এসে গেছেন।
ছাউনির তলায় ; খড়ের কুঁড়েতে যে যার মতো আটন পেতে নিয়েছেন। নবীন দাস বাবাজী র সমাধি মন্দিরের সামনে একদল ধুনি জ্বালিয়েছেন। বটগাছের গোড়ায় আরেকদল।
মাঝামাঝি জায়গায় আর এক দল। মোট তিনটি ধুনি জ্বলেছে। আঁকড় গাছের গোড়া র কাঠ। খুব শক্ত। তাপও ভালো। তাতেই শীত পালাচ্ছে অনেকটা। গায়ে প্রায় সবারই মোটা কম্বল। অবশ্য যার যেমন জোটে। মাঝামাঝি জায়গায় দক্ষিণ দিকে মুখ করে একা বসেন এক দীর্ঘ দেহী জটাজুট ধারী। গায়ে প্রায় কিছু নাই। তার জন্য ভ্রূক্ষেপ ও নাই। ধূনির সামনে বসে কলকের পর কলকে গাঁজা খাচ্ছেন। আর মাঝে মাঝে হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন। সব আসরেই গাঁজা চলছে। বাবাজী দের জন্য সে সব জোগাড় করতেই হয়। না পেলে গোঁসা হয় খুব। দক্ষিণ দিকে মন্দার গাছের তলায় এক বাবাজী মাতাজী
গুনগুন করে গান ধরেছেন। আওয়াজ ক্রমশ বাড়ছে। গলার স্বর চড়ছে। হুংকার দিয়ে উঠে সেই দীর্ঘ দেহী বাবাজী নাচ আরম্ভ করলেন। শরীরে প্রায় কিছুই নাই। একসময় একেবারে উলঙ্গ। সে প্রায় তাণ্ডব নৃত্য। তাঁর নাচের সাথে শুরু হয়েছে বেশ উচ্চস্বরে দেহতত্ত্বের গান। একতারা দোতারা খঞ্জনী ঝনঝন বাজে। একসময় সবাই উঠে দাঁড়িয়ে নাচ গান শুরু করেন। সে এক দৃশ্য। অবাক চোখে সে সব দেখে। এখন দুদিন পড়াশোনা থেকে ছুটি।
সেই নাচ গান থামাতে হয় মাতামা কে উঠোনে নেমে।
বাবারা এবার থামুন। রাত অনেক হল। রান্না শাল থেকে খবর আসে খাবার প্রস্তুত। ডোবার পাড়ে রান্না শালা। গাঁয়ের মেয়ে বৌরা সব এসে কাজে লাগে। তারাই সব সব্জি কেটে দেয়। দিনে ই কেটে দিয়েছে। আবার কালকের মচ্ছবের জন্য এখন কাটছে। ওরা আমতলার দিকে তালপাতার তালাই এর উপরে
সব্জী কাটছে। বাঁধাকপি ; ফুলকপি ; শাক ; বেগুন ; আলু ; বিলাতী বেগুন ; যা জোগাড় হয়েছে আর কি। সব মিলিয়ে মিশিয়ে একটা তরকারি।
রান্না ঘরের সরঞ্জাম এর তার ঘর থেকে চেয়ে চিন্তে আনতে হয়েছে। মেয়ে বৌরা নিজের নিজের ঘর থেকে বঁটি এনেছে।
কাজের তদারকি করার লোক নান্দু মামা ; অন্নপূর্ণা মাসীমা র ভাই আর ফণী বাউরী রা। রান্নার লোক ; কাজের লোক ; সবই গাঁ ঘরের মানুষ জন। অযোধ্যা আর নারানপুর এর কর্মী কিছু মানুষ। এত সব হচ্ছে কিন্তু রামানন্দ মামা আখড়ার বারান্দায় বসে একমনে নাম জপ করছে। মাতামা তার দড়ির খাটিয়ায়।
অন্নপূর্ণা মাসীমা কেই সামলাতে হচ্ছে নানা দিক। নানা জনের নানা আবদার।
তখন ডেকোরেটার ব্যবসার যুগ নয়। রান্নার সরঞ্জাম থেকে সবকিছু মানে একটা হ্যাসাক লাইট জোগাড় করতে ও অনেক ছোটাছুটি করতে হয়। জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ - সে এক সমস্যা। যাই হোক তবু শেষ পর্যন্ত হয়ে যায়। জামডোবা জঙ্গলের মাঝে এক গ্রাম। সেখান থেকেই জ্বালানী কাঠ আসে।
ওদিকে রান্নাশাল থেকে ডাক আসছে। আবার কালকের জন্য
আজ রাতে বেশ কিছু আয়োজন সেরে রাখতে হয়।
ওখান টাই তো আসল। রান্না ঘরের কর্মী রা কিছু সেরে রেখে ভোর রাত থেকে উঠে রান্নার কাজে লাগেন।
অন্নপূর্ণা মাসীমা হাত জোড় করে সবাইকে অন্ন গ্রহনের জন্য
অনুরোধ জানালেন।
মুখোমুখি দু লাইনে সবাই বসলেন। পাতা পড়ল। পরিবেশন কারীরা শুরু করলেন পরিবেশন করতে।
সবার পাতায় অন্ন পড়ার পর মুখে তোলার আগে আওয়াজ
উঠলো ' প্রেমানন্দে সবাই একবার হরি হরি বলো '
(ক্রমশ) ৫ ম পর্ব।
© প্রণব ভট্টাচার্য।
No comments:
Post a Comment