ওষুধ সম্পর্কে দু চার কথা যা জানি মাত্র
----------------- ---------------- ------------------
গল্প শুরু করি।
প্রতিদিন এক মদ্যপায়ী মদ্য পান সেরে এসে
প্রথম প্রথম ' র্যান ট্যাক ; জিন্ট্যাক চাইত। তারপর কম দামের মানে এক টাকার ' প্রহিবিন ' তারপর ' অ্যাসিলক ' আর তারপর এসে চায় ' ওমেজ '।
আমার কাছে নয়। ওষুধ দোকানের কাউন্টারে। কাগজের কৌটো টা দেখিয়ে দেয়। এভাবে অনেক দিন চলেছিল।
সেদিন দেখলাম অন্য একটা কৌটো দেখাল।
যার বেচা কাজ সে বেচবে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নাই।
সে নিল একটা রাবেপ্রাজোল + ডমপেরিডন + লেভোসালপিরাইড কম্বিনেশন। দাম ১৪ টাকা। মার্কেটেড বাই এক বড় কোম্পানি। ম্যানুফ্যাকচারড বাই পড়া যায়না এত ছোট লেখা। ব্যাচ নং এসব বাদ দিন। কে দেখে?
আমি বুঝি জেনেরিক প্রিপারেশন।
আমি তাকে শুধালাম হ্যাঁ রে এটা নিলি কেন?
ভাল কাজ করে। মনটা মাষ্টার ভালো থাকে।
ভাবলাম হ্যাঁ লেভো সালপিরাইডের একটা ভূমিকা আছে বটে মনের উপর। একটা ওয়েল বিয়িংনেস ভাব আনে।
আচ্ছা ইটোপ্রাইড ; লেভো সাল পিরাইড এগুলো তাহলে বাজারে আছে। সাইড এফেক্ট এর জন্য বন্ধ হবার কথা শুনেছিলাম। ভুল শুনেছিলাম হয়তো। যেমন ক্লোরামফেনিকল আছে। আরও কত যে রয়েছে। কত কম্বিনেশন। থিয়োরি অনুমোদন করেনা। করেনা তো কি। আমি কোম্পানি। আমার নিজস্ব গবেষণা আছে। তার জন্য আমাকে দাম নিতে হয়।
বাজারে দেখছি কত নতুন নতুন কোম্পানির নাম।
গুজরাট ; হরিয়ানা ; হিমাচল প্রদেশে র ঠিকানা সব।
গ্রাম গঞ্জের ওষুধের বাজার ছেয়ে গেছে জেনেরিক ওষুধে।
দাম কিন্তু বড় বড় কোম্পানি ব্র্যাণ্ডে ড ওষুধের মতোই।
তেমনই লেখা থাকে প্যাকেটে র উপর। এবার যে যেমন বেচে।
মনের উপর কাজ করে যে ওষুধ গুলো সে গুলো কাউন্টার থেকে ই বিক্রি হয়। না কি নিষেধাজ্ঞা ছিল না আছে।
বড় রাস্তার ধারে এক ওষুধ দোকানে বসেছিলাম।
মোটর বাইক নিয়ে দুজন যুবক এলো।
নামল। আঙুল দিয়ে চার দেখাল।
দুজনে দুটি করে চারটি নাইট্রোসান টেন ট্যাবলেট নিল।
দুটি করে একসাথে খেল। জলের বোতল টা কাউন্টার থেকে নিয়ে। তারপর যেমন উড়ে এসেছিল তেমনি উড়ে চলে গেল।
দাম দেয় সাত দশ দিন পরে বা সাথে সাথে।
ফেনসিডিল কফ সিরাপ খাবার জন্য গাড়ি নিয়ে আসেন এক ভদ্রলোক। তিনি ডিকিতে আগে থেকে প্যাক করে রাখা বাক্স তুলে নিয়ে বেরিয়ে যান।
আমি দেখি। তারাও দেখে।
যার বেচা কাজ সে বেচে।
ঠিক আছে। সব ঠিক আছে।
না। ঠিক নাই। ঠিক যে নাই তা অনেকেই বুঝছেন। কিন্তু -
মনোরোগ ক্রমাগত বাড়ছে। অনেক সময় তা ফেলে রাখছি। ডাক্তার এর কাছে যাব। পাগল হলাম না কি।
আরে বাবা পাগলামি সে তো অনেক দূরের পর্যায়।
তার আগে ডাক্তার বাবু র কাছে যাও।
বারবার মন খারাপে ভুগতে ভুগতে একদিন যে রোগ চেপে
বসবে। একই চিন্তা দুঃশ্চিন্তা বারবার মনে পাক খাচ্ছে।
ডাক্তার বাবু যদি মনে করেন ওষুধের দরকার আছে। তিনি লিখবেন।
মনোরোগ একদিন মহামারি র রূপ নেবে। আজ এ পৃথিবী মনোরোগাক্রান্ত।
ওষুধ। হ্যাঁ আছে। যদিও মন কে যে সব বুঝে উঠতে পেরেছি তা নয়। কিন্তু হাতে যা ওষুধ আছে তা দিয়ে অনেকটা ভালো থাকা যায়।
রোগ অসুখ আর ডাক্তার ওষুধের মাঝে তো আর কেউ নেই রে বাবা।
মনোরোগ এর ওষুধ গুলির যা দাম বাড়ল। প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি গুলির ব্র্যাণ্ডেড ওষুধ গুলির দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে -
সামান্য এমিট্রিপ্টিলিন ; ক্লোর ডায়াজিপোক্সাইড থেকে শুরু করে এসসিটালোপ্রাম ; সার্টালিন ; প্রোথিয়াডিন ; প্যারো বা ফেনোক্সেটিন আরও কত নাম - -
উদ্বেগ ; উৎকণ্ঠা দিন দিন বাড়ছে। আলপ্রাজোলাম ; ক্লোনাজিপাম ; কি লোরাজিপাম ছাড়া তো অনেকের চলছেই না। মনের মধ্যে কালো মেঘ পাক খেয়ে খেয়ে উঠছে কেবলই।
এগুলো সব গাঁগঞ্জে কাউন্টারেই পাওয়া যায়। নানা জেনেরিক প্রোডাক্ট। দাম সেই নামী ব্র্যাণ্ডের মতো ই।
বাজারে যে কত বলবর্ধক ওষুধ। নাম তাদের ফুড
সাপ্লিমেন্ট। দেশী বিদেশি কত কোম্পানি নেমেছে। এত বড় বাজার এদেশের। কার না লোভ হবে। কত দেশী বিদেশি কোম্পানির নিউট্রিশন প্রোডাক্ট।
আর কত যে টনিক। যে দোকানে ডাক্তার বাবু বসেন ; তার মালিক কে কিছু তো পাইয়ে দিতে হবে। সব জেনেরিক প্রোডাক্ট। একশো টাকার নীচে কোন দাম নেই। হ্যাঁ ডাক্তার বাবুরা লিখছেন।
সমস্যা নিয়ে ডাক্তার বাবু র কাছে যাওয়ার আগেই ওষুধের দোকান দার ধরিয়ে দিচ্ছেন সিলডেনাফিল। চারটি ট্যাবলেট এর দাম লেখা একশো র কাছাকাছি। এক দোকানদার সেদিন আমাকে বলল বীরভূমের গ্রামে গঞ্জে খুব বিক্রি। যে যা দামে পারে বেচে। বেচো বাবা বেচো।
গাঁ গঞ্জে এই সব ওষুধ দোকানের বিক্রেতা ( যদিও একটা ফার্মাসিস্ট লাইসেন্স) টাঙানো আছে সব দোকানে ই। হতে পারে সেটা ভাড়া য়। যাই হোক জ্বর জ্বালা তে এই সব মানুষেরা ই ভরসা। আর গ্রামীণ ডাক্তার যাঁরা আছেন তাঁরা ই।
কোথাও এমন গ্রামীণ ডাক্তার আছেন যাঁর একটা আর ; এম পি লাইসেন্স আছে শুধু। তাঁর পসার এবং আর্থিক প্রতিপত্তি শহরের বড় ডাক্তার দের চেয়ে বেশী। সব কাজ জানেন। দাঁত তোলা থেকে ; গর্ভপাত ; এমন কি অপারেশন।
আমি অবাক হয়ে যাই তাঁদের দুয়ারে রোগী র ভীড় দেখে।
অনেক কেই রাত্রে প্রস্টেট গ্ল্যান্ড বৃদ্ধির জন্য একটা ওষুধ নিতেই হয়। ট্যামসুলোসিন ( ব্র্যাণ্ড নাম ইউরিম্যাক্স ; ভেলটাম ; ডায়নাপ্রেস ইত্যাদি) আর তার সাথে ফেনাস্টিরাইড বা ডুটা স্টেরাইড যুক্ত থাকলে তো কথাই নেই। দাম তিন শো থেকে চলল উর্ধ্বে -
অ্যান্টি বায়োটিকের দাম ; যে ভাবে বাড়ছে গ্রামের সাধারণ মানুষ কোর্স শেষ করতে পারছে না। আর হাসপাতাল সাপ্লাই এর ওষুধে মানুষের কোন ভরসাই নেই।
তাহলে বাঁচব কিভাবে। না। টাকা না থাকলে আপনি বাঁচবেন না।
বাঙ্গালী ডাক্তার রা কি একবারও ভেবে দেখেছেন যে কেন মানুষ দক্ষিণে ছোটেন। আমাদের কাছের শহর দুর্গাপুরে অবাঙ্গালী ডাক্তার দের দাম বেশী। বিতর্ক হবে। দেখুন বিজ্ঞাপন। হার্ট বা নার্ভের জটিল অপারেশন হবে। ডাক্তারবাবু আসবেন দক্ষিণ থেকে।
হায় বাঙ্গালী তোমার দিন গিয়াছে।
একদিন সারা ভারত আসত কলকাতায়।
কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করলে ব্র্যাকেটে লেখা থাকত ক্যাল। আর আজ? সবাই নিজেকে প্রশ্ন করুন।
হঠাৎ সেদিন নজর পড়ল ' ভারতীয় জনওষধী পরিযোজনা ' নামের প্রকল্পের ওষুধ দোকানে। আলাপ হল মালিকের সাথে। তিনি ভিতরে ঢোকার অনুমতি দিলেন। আমি র্যাক গুলো তে চোখ বুলিয়ে দেখলাম প্রয়োজনীয় প্রায় সব ওষুধ ই রয়েছে।
আমি প্রথমেই ট্যামসুলোসিন ত্রিশ টি নিলাম। অবাক হলাম দাম দেখে। মাত্র ৫৪ টাকা। কাজ করবে তো! মনে প্রশ্ন।
না দেখলাম ঠিক ই তো আছে।
এখন নিয়মিত ই নিচ্ছি। আমাদের স্বামী স্ত্রী র সব ওষুধ মিলিয়ে বাজার থেকে নিলে প্রায় ৪০০০ টাকা লাগত। এখন সব ওখান থেকে নিচ্ছি। পড়ছে বারো চোদ্দ শো টাকা।
কিন্তু এই দোকান তো আর হাতের কাছে নেই।
আর আমাদের ডাক্তার বাবু রা ব্র্যাণ্ড ই লিখবেন।
আবার লিখবেন ; বদলাবেন না।
রোগী র আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি র কথা ভেবে ডাক্তার বাবুরা ওষুধ লিখছেন তো। গরীব এক সুগারের রোগী কে ওষুধ যদি লিখি ঐ গ্লিপটিন গ্রুপের। কিনে খেতে পারবেন?
কাউকে জ্ঞান দিচ্ছিনা। জ্ঞান আমি আর কি দেব।
একবার তেপান্তর নাট্য গ্রামে বাংলাদেশের এক দল এসেছিলেন নাটক নিয়ে। এক ভদ্রলোকের সাথে বসে গল্প করছিলাম। খাবার সময় হল। ভদ্রলোক পকেট থেকে বের করলেন সুগারের ওষুধ। বাংলায় লেখা ' গ্লিবিজাইড '।
বাংলায় ওষুধের নাম লেখা দেখে বাঙ্গালী হিসাবে আমার স্বাভাবিক আনন্দ হল। আবার একটু ভাবলাম। একটু পিছনের জেনারেশেন এর ওষুধ। আমি খাই ' গ্লিমেপিরাইড '।
ওঁদের দেশে সব ওষুধ ই জেনেরিক। ব্র্যাণ্ডের বহর নাই।
উনি বললেন দেখুন গরীব দেশ। কম দামের ওষুধ দিয়ে যদি রোগ ভালো হয়।
আর আমরা যেন বড়লোক।
হ্যাঁ। যারা বড়লোক তারা বড়লোক।ওখানেও তাই। কিন্তু আপামর জনগণ।
তাদের সংখ্যা টা সঠিক ভাবে নিরূপিত হোক।
আর তার বিপরীতে র সংখ্যা টা ও।
কার কত দেনা তাও প্রকাশিত হোক।
লিস্টি টাঙ্গিয়ে দেওয়া হোক।
ওষুধের বাজার টা দেখা হোক। লক্ষাধিক ব্র্যাণ্ড। কোটি কোটি মানুষ। লক্ষাধিক কোটি টাকার ওষুধ ব্যবসা।
ওষুধের মান নির্ণয়ের জন্য সংস্থা আছে। তাঁদের সত্যি কোন কাজ আছে কি না জানা নেই আমার। ওষুধের এফিকেসি বা বায়োএভেলিবিলিটি নিয়ে এত প্রশ্ন সংশয় কেন তাহলে।
হাসপাতালের ডাক্তার বাবুরা কি হাসপাতালের ওষুধ এর উপর ভরসা রাখেন! নিজের বুকে হাত দিয়ে বলুন।
তাঁরা খুব ভালই জানেন স্যাম্পেল টেস্টিং এর সময় যে মাল পাঠানো হয় আর বাজারজাত করার মাল এক নয়।
আরও অনেক কথা বলা বাকী থাকল। বলব।
আপনারা যাঁরা আমাকে জানেন চেনেন তাঁরা বলবেন আরে মশাই আপনি আবার আঞ্চলিক ইতিহাস ছেড়ে ওষুধে এলেন।
কি ব্যাপার! রঙ বদলালেন না কি। ট্র্যাক চেঞ্জ? না। না। মোটেই না। আমার অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী না হয় যেন বাবা -
আমি দেখি চারিদিকে চলে শুধু লুঠ।
রঙ বেশ জটিল ব্যাপার। লুঠের কি কোন রঙ আছে নাকি
রঙের রসায়ন আছে।
হলুদে মেটালিক ইয়োলো মেশানোর গণিত কেশব নাগে নাই।
দুধে জল মেশানোর আছে। মেনে নিয়েছি
ছিল। আছে। থাকবে।
----------- ----------- ----------- ------- © প্রণব ভট্টাচার্য। প্রথম পর্ব এখানেই শেষ করি। নমস্কার। ভালো থাকুন।
একটি আমার আঁকা ছবি
বাকী গুলির জন্য ওয়াসেফ জামান এর কাছে ঋণী