Saturday, 8 January 2022

তেপান্তর নাট্য গ্রাম

#বাংলার_একমাত্র_নাট্য_গ্রাম "তেপান্তর" (গড় জঙ্গল, কাঁকসা)
---বিশ্বনাথ মিত্র

আপনারা অনেকেই হয়তো তেপান্তর নাট্য গ্রাম বা তেপান্তর থিয়েটার ভিলেজ এর নাম শুনে থাকবেন । কয়েকদিন আগে পর্যন্ত আমি এদের বিষয়ে জানতে পারতাম না যদি না গবেষক এবং প্রাবন্ধিক Pranab Bhattacharyya এর সঙ্গে আলাপ না হত । সদ্য ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বরে সেখানে পৌষ মেলায় তিনি সাদরে আমন্ত্রিত জানালেও বিশেষ কারণ হেতু যেতে পারিনি । কিন্তু পেয়েছি অনুষ্ঠানের সুন্দর সুন্দর ছবি ও বর্ণনা । এই দু'দিন অতিথিরা এসেছেন, থেকেছেন এবং  নিজেদের মতো করে সময় কাটিয়েছেন । বাউল গান, আদিবাসী নাচ বা নাটকের অংশ বিশেষ  অভিনয় করে তাঁদের দেখানো হয়েছে। ছিল হস্তশিল্পের স্টলে, খাবার স্টল । সব গ্রামবাসীরাই করেছেন ।

বাংলার বাইরে এই রকম নাট্য গ্রাম থাকলেও সমগ্র বঙ্গদেশে এইরকম গ্রাম আর দেখা যাবে না #কিন্তু_কী_এই_নাট্য_গ্রাম ? সবুজ বৃক্ষ রঙ বাহারি ফুল কিংবা মেঠো রাস্তাপথে ধান, পুকুর, চালের ঘর এইসবের সমন্বয়ে সাতকাহানিয়া নামে একটি গ্রামের ভিতর গ্রামবাসীরা একসঙ্গে থাকেন, একসঙ্গে নাটক করেন এবং একসঙ্গে  তাঁদের রোজগার করা । অনন্য এক বাংলার ঐতিহ্য ।
#নাট্যকর্মী_কল্লোল_ভট্টাচার্য (প্রণববাবুর পুত্র) ১৯৯৪ সালে এই সাতকাহানিয়ায় খোলা আকাশের নীচে হ্যারিকেনের আলোয় অল্টারনেটিভ লিভিং থিয়েটার এর পরিচালক প্রবীর গুহ'র ওয়ার্কশপ থেকে উৎসাহীত হয়ে, অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের এলাকায় নিজেদের মতো করে প্রায় ৩০ জন মিলে একটি নাট্যদল গড়ে থিয়েটার চর্চা শুরু করেন শহর ছেড়ে এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে । ১৯৯৯ থেকে প্রায় ৪ একর জমির ওপর তা পুরোদমে একটি নাট্য আন্দোলনের সূচনা হয় । ক্রমশ কেটে গেছে ২৭ বছর। এই ২৭ বছরে তাঁরা কাজ করেছেন দেশের সেরা থিয়েটার এর মানুষদের সাথে। কে.এন. পানিককর, এস রামানুজম, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, বি জয়শ্রী, শমীক বন্দোপাধ্যায়, চন্দ্রদশন সহ স্যার রতন থিয়াম এবং অনেকের সাথে ।
এই ২৭ বছরে কল্লোলবাবুরা ভারত রঙ্গ মহোৎসব, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল অফ কেরল সহ দেশের প্রায় সব সেরা থিয়েটার ফেস্টিভ্যালগুলিতে নাট্য-সকল মঞ্চস্থ করেছেন তাঁরা । বহু দেশ বিদেশ থেকেও নানা নাট্য দল এখানে প্রায়শ নাটক বা থিয়েটার মঞ্চস্থ করে থাকে । 
 ২৫০ দর্শক আসন বিশিষ্ট ব্ল্যাক বক্স থিয়েটার, একটি ওপেন এয়ার থিয়েটার, একটি ইন্টিমেট স্পেস, কয়েকটি প্রাকৃতিক মঞ্চ, একসাথে ১২০ জন থাকার মতো কটেজ, ডরমিটরী গড়ে তুলেছেন এর ভিতর । এছাড়াও এখানে রয়েছে পোল্ট্রি, আমের বাগান, পুকুর, মাঠ ইত্যাদি। গত বারো বছর ধরে এখানে শীতের সময় নাট্য উৎসব, দোলের সময় তেপান্তর মেলা হয় ।এছাড়াও এখানে সারা বছর ধরে নানা কর্মশালা, ট্রেনিং, নানা ধরনের থিয়েটার, নানা পারফরম্যান্স এর আয়োজন করে চলেছেন । এখানে সারা দেশের প্রায় সকল পরিচিত নাট্য ব্যক্তিত্ব রাই এসেছেন। কাজ করেছেন। কাজ দেখিয়েছেন। 
বর্তমানে তেপান্তরে প্রায় ২০-২৫ জন সক্রিয় কর্মী আছে । যাদের ভিতর আবার অনেকে কৃষক পরিবারের সন্তান । পাশাপাশি এই গ্রামের বাসিন্দারা প্রায় সবাই নাট্যকর্মী । এদের সংসারে নিত্য অর্থাভাব থাকলেও নাটকই তাদের জীবন। বেঁচে থাকার তাগিদে থিয়েটার ভিলেজের ফার্মের নিয়ন্ত্রণাধীন পোলট্রি, মাছ চাষ বা ফলের বাগানে তারা কাজ করে । বাকি সময় নাটকের অনুশীলন, প্রশিক্ষণ আর অভিনয় ।  পর্যটকদেরও আকর্ষণ জাগায় এই সব মুরগির ফার্ম বা ফুল ফলের চাষ ।
তাঁরা আরও এগিয়ে যেতে চান । শুধু চায় আপনাদের শুভেচ্ছা এবং প্রেরণা ।

তথ্য ঋণ :
প্রণব ভট্টাচাৰ্য
কল্লোল ভট্টাচাৰ্য

No comments:

Post a Comment