।। আমাদের ছোট্ট নদী
নাম তার টুমনি।
দেখেছেন না কি! না হয়তো দেখা হয়নি
ইছাই ঘোষের দেউল এসেছেন। বেড়াতে
কিন্তু কোন দিকে কতটা গিয়েছেন জানিনা
বলেছিলাম আগের লেখায়
অজয়ের ওপার থেকে অর্থাৎ বীরভূম জেলা থেকে যদি
গাড়ি নিয়ে এসেছেন বা ভায়া শিবপুর নদী বাঁধ ধরে
কাজলাডিহি হয়ে যদি এসেছেন বা ফিরে গেছেন
কখন হুস করে পার হয়ে গেছেন খেয়ালই করেননি।
আচ্ছা এই জঙ্গলে র দেশে মিনি হাওড়া ব্রীজটা কে
দেখেন নি! হয়তো হ্যাঁ বা হয়তো নয়
যে মাটির তৈরী নদী বাঁধের উপর দিয়ে গেছেন সেই বাঁধের
ধারের শতবর্ষ প্রাচীন বিশাল কয়েকটি শিমূল কে দেখেছেন
যাদের গোড়ায় চার পাঁচ জনের তাঁবু পাতা যায়।
এই যে নদী বাঁধ এর ইতিহাস আছে।
সে প্রায় ১৯০০ সালের প্রথম দশক।
গোরাবাজার ( গৌরবাজার) থেকে কাজলদিঘী ( কাজলাডিহি) পর্যন্ত প্রথম দফায়
তারপরে বিষ্টুপুর থেকে অর্জুনবাড়ি পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে
তারপর। হ্যাঁ তারও পর আছে।
সাতকাহনিয়া থেকে বাগুড়া অর্জুনতলা তারপর আরও পূর্বে
অনেক গুলো মৌজার উপর দিয়ে সেই ভেদিয়া পর্যন্ত
তারপর ও আছে -
নদী র চরে মানায় গড়ে উঠল পূর্ব বঙ্গের উদ্বাস্তু মানুষ দের
কলোনি। অজয় পল্লী। নিজেদের পরিশ্রমে সেই জমিকে
তাঁরা করে তুললেন সোনা।ফলালেন সোনার ফসল।
সে '৮০ র দশক। বাম আমল। কি কষ্টে তাঁরা গড়ে তুলেছেন
আজকের এই ' অজয় পল্লী '। সমস্যা ছিল টুমনী পারাপারের।
কাঠ বাঁশের অস্থায়ী সেতু বেঁধে কাজ চলত। এখানে টুমনী
বেশ গভীর। বর্ষায় ভেসে যায় প্রায় ই। একবার একটা কুমির উঠে এলো টুমনী থেকে।
পশ্চিমে র জামদহ ' র বিল। তারও পশ্চিমের নানা স্থান থেকে বর্ষার জল গড়িয়ে আসে। বেশ কয়েক টি নালা বা ' জোড় ' আছে। জল এসে জমে বিলের জলাভূমি তে। বিল থেকেই টুমনী বেরিয়ে সামান্য কিছু পথ পেরিয়ে অজয়ে গিয়ে মেশে।
এই টুমনি র উপর বাম আমলে তৈরী হল মিনি হাওড়া ব্রীজ।নাম তার পণ্ডিত রঘুনাথ মূর্মূ সেতু।
উদ্বোধন করেছিলেন মাননীয়া মন্ত্রী বিলাসীবালা সহিস। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের টাকায় নির্মান।
লোহার সেতু। পারাপারের আর অসুবিধা রইল না।
খেড়োবাড়ি গ্রামের অনেক মানুষ জয়দেব কেন্দুলী র হাটে যায় এই সেতুর উপর দিয়ে। ছোট গাড়ি ; মিনিবাস চলাচল করে।
ইছাই ঘোষের দেউল দেখেন। এই গুলিও দেখার।
বিশাল দিঘী। রাণীসায়র। নিশ্চয়ই দেখেছেন। এখন প্রশ্ন
কোন রাণী র নামে এই সায়র। কে কাটালেন এই বিরাট দিঘী।
গৌরাঙ্গপুর মৌজায়। একদিন এখানে গ্রাম ছিল।
নদী র চরে জমিতে নীল চাষ হত। নীলের বড় বড় চৌবাচ্চা ছিল সায়রের পূর্ব পাড়ে। ইলামবাজার কুঠী র অধীনে নীলের কারবার ছিল এখানে।
গৌরাঙ্গপুর মৌজার টিউবওয়েল এর জল খেয়ে দেখবেন।
কি মিষ্টি পাতলা জল। ডিয়ার পার্কের হরিণ গুলি বেশ বড়
হয়েছে। সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
আর ময়ূর গুলি সংখ্যায় এত বেড়েছে যে ওরা অনেক দূরে দূরে চলে যাচ্ছে। মাঠে মাঠে পোকামাকড় ; ছোট সাপ খেতে খেতে চলে যাচ্ছে বনকাটি মাঠ হয়ে সাতকাহনিয়া পর্যন্ত।
ওদিকে পশ্চিমে চলে যায় শিবপুরের দিকে ও।
ভয় হয় পাছে না মানুষ মেরে দেয়!
সেবার অনেক গুলো বন শূকর মাঠের ফসল নষ্ট করছিল রাত্রে।
গড় জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে।
আদিবাসী রা শিকার করে ফেলল। তারপর মহাভোজ।
শিয়াল ; হেঁড়োল বা হুড়াল দের দেখা মিলছে এখন বেশ। কিন্তু খাবে কি? জঙ্গলে ওদের খাদ্য নেই। ছিল কিছু খরগোশ। আদিবাসী দের ' শিকের '। সব মেরে খেয়ে ফেলেছে। সেদিন একটা সজারু কে মেরে খেয়েছে। সজারু র কাঁটা টা দেখলাম। কি চমৎকার।
' হেঁড়োলবাঁধি ' মানে হেঁড়োল দের জল খাবার বাঁধ।
দামোদর পুরে। এখন আর সেই ছোট্ট গ্রাম নেই। উঠে গেছে। চুরি ডাকাতি। ৭০ এর দশকের পরিস্থিতি। সে আরও অনেক কথা। উঠে গেলো
বনের ধারে গ্রাম বনগ্রামে। বা কোটালপুকুরে।
কিন্তু রয়ে গেছে জঙ্গলে ঢুকতেই পাশাপাশি দুটি
ধর্মরাজ থানের মতো বেদী। ' মাতনা বা মাদনা বুড়ো ' মহাদানা থেকে মাদনা বুড়ো।এঁর তো আলাদা গল্প। সে পরে হবে কখনো। 'এক্ষেন দিনে 'তো সবাই পূজা পান। পথের ধারের গোল শিলাখণ্ড ও এক পাতা পান। সব পূজার পূজারী
সমাজের নিম্নবর্গের মানুষ জন। বাউরী ; বাগদী ; ডোম ; এঁরা সব গাছতলায় সবাই কে পূজা দেন।
যে যেখানে আছো - আমাদের পূজা নাও।
ভাববেন - সর্ব্ববস্তুতেই তিনি বিদ্যমান। এই ধারণা কতো প্রাচীন। এই ই মানুষের ধর্মবোধ।
কত কথা আছে এই সব গ্রামের। পরে শুনবেন।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ শেষ করি আজকের মতো।