Friday, 26 July 2024

কথা- সাতকাহন। সেই ছেলেটা ভেলভেলেটা


।।  সেই ছেলেটা  ভেলভেলেটা ।।  কথা সাতকাহন।

ছেলেটা কাঁদছে তো কাঁদছেই।
মা তো শুয়ে আছে ভিতরে র বারান্দায় এককোনে।
তার না আছে ক্ষমতা। বুকে দুধ নাই। বুকের কাছটিতে ছোট্ট পুঁচকে টা কে টেনে নেবার অধিকার ও নাই। ডাক্তার বাবুর নিষেধ। কোন রকমে বলে ' ও মা দ্যাখো, কাঁদছে খুব '।
রান্নাঘর থেকে দিদিমা এসে মুখে দুমুখ ওয়ালা কাঁচের মাইপোশ ধরিয়ে দেয়। ঘরের গোরুর দুধ। চুষতে চুষতে আবার ঘুমিয়ে যায়।
  গরীব মানুষ দের ছোট্ট গাঁ। একটু বড় হলে, অনেকে তুলে নিয়ে যায়। নিজের বুকের দুধ ও খাওয়ায় কেউ কেউ। যেমন
তুলসী। জাতে বাউরি। নিজের ছেলেকে খাইয়েও, এ ছেলেকে
খাওয়ায়। দিদিমা বলে নিয়ে যা। নিয়ে যা। তোদের কোলেই বড় হোক।
এ ছেলে বাঁচতে কি না,  বড় হবে কিনা সে দুশ্চিন্তা দাদু দিদিমা র মনে পাক খায় অবিরত। মেয়ে যে বাঁচবে না তা যেন মনে গেঁথে গেছে। চিকিৎসা!  আর চিকিৎসা। কম তো হলনা।
ইলামবাজার থেকে কালী বাবু আসেন। ইঞ্জেকশন দেন।
এই ইঞ্জেকশন কিনতে কিনতেই প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে।
এত দাম। ফাঁকা শিশি গুলো কেও যেন ফেলে দিতে পারা যায়না।
গোয়াল ঘরের মাচা থেকে একটা বেশ পুরনো ঢাকনা ওয়ালা
বেতের ঝুড়ি নামিয়ে পরিষ্কার করে, সেই মেয়ের চিকিৎসার যত শিশি, বোতল, ইঞ্জেকশন এর শিশি ছিল এক কোনে জড়ো করা  দাদু সব এই ঝুড়িতে রেখে দেয়।
---- এগুলো জমিয়ে কি হবে । ধুয়ে জল খাবে? 
--- দাদু কোন উত্তর দেয়না।
  বিকেলের রোদে দড়ির খাটিয়া টা বারান্দা থেকে উঠোনে বের
করে দেওয়া হয়। সকাল বিকেলের রোদ গায়ে মাখতে বলা হয়েছে। বুক পর্যন্ত একটা চাদর ঢাকা।
সেই খাট থেকে মেয়ে আকাশ দেখে। ঘরের পিছনে লম্বা তালগাছ দেখে।উঠোনের সজনে গাছে  কাঠবেড়ালী গুলো লেজ তুলে তুলে ওঠা নামা করছে। খেলছে। একদৃষ্টিতে সে  তাকিয়ে থাকে।
সামনের জয়ন্তী গাছটায় অনেক ফুল এসেছে। দুর্গাপূজার সময় অনেকে নিতে আসে। স্থলপদ্ম গাছটা ফুলে ফুলে ভরে গেছে।
আকাশে একফালি রাঙা মেঘ ভেসে যায়।
আখড়া থেকে মাতামা এসে মাথার কাছে একটা মোড়ায় বসে
বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়ে।
---  আজ কি তিথি গো মাষ্টারবাবা?
   কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে  বলেন  পাঁজি দেখতে হবে।
সেই রোগগ্রস্ত মেয়ে বলে ওঠে  তিথি  বারে কি হবে গো মাতা!
অশ্লেষা, মঘা কিছু দেখার দরকার নাই "
  ---  কি হবে এসব দেখে
  বৈষ্ণবী মাতামা চুপ করে থাকেন
এক অজানা আশংকায় সারা উঠোনে জড়ো হয় এক
আশ্চর্য  নিস্তব্ধতা। একটা হিম বাতাসের স্রোত বয়ে যায়
দক্ষিণ থেকে উত্তরে। মাতামা হাতজোড় করে প্রণাম করেন।

আগের লেখাটি র লিঙ্ক।  বিধাতা পুরুষ।

https://www.facebook.com/share/p/ZeZWK9LufV1ptFwx/?mibextid=অফডক্নক
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ------------



 
 

No comments:

Post a Comment