Wednesday, 2 November 2022

।।রবিলাল আর তার বৌ এর কথা।।


।। মরব বলে আমি বিষ খাই নাই রে।।
তখকার সময়। সে অনেক দিন হল।
লোকের কাছে চেয়ে চিন্তে টাকা জোগাড় হত।
তারপর  ট্যাক্সি ডাকা। তখন একমাত্র বাবুদের বাড়িতে
ট্যাক্সি আসে। কলকাতা থেকে আত্মীয় রা আসে বেড়াতে।
দেশ দেখাতে মা কে। ছেলে রা নিয়ে আসে।
আর তাছাড়া গাঁ ঘরে আর ট্যাক্সি কোথা।
যদি আসে জানতে হবে কিছু একটা ঘটেছে।
বিপদ আপদ।
হ্যাঁ। ঠিক তাই।
হাসপাতাল নিয়ে যেতে হবে রবিলাল কে।
সে না কি বিষ খেয়েছে।
গাঁ থেকে লোক ছুটল দেখতে।
ফরেষ্ট ডিপার্মেন্টের কোয়ার্টার।
বীট বাবুর কোয়ার্টার আর বাকী গোটা চার ফরেস্ট গার্ড।
সামনে পিছনে থাকানো শাল বল্লী।
চারপাশে সুন্দর গাছপালা। মোটা শাল। সেগুন।
বীট বাবু ছূটিতে। নাই এখানে।
রবিলালের পাশে পড়ে আছে বিষের শিশি। বিচ্ছিরি গন্ধ
বলছে না কি  বিষ খায়নি।
" বিষ খাব বলে বিষ খাই নি আমি রে "
  না কি বলেছে এমন কথা। গোল করে ঘিরে থাকা
  লোকরা শুনেছে।
ট্যাক্সিতে চাপার লোকের অভাব হয়না কখনও।
  চল। রাত জাগতে হলে অসুবিধা নাই।
  মাল ঠিকই পাওয়া যাবে।
  ঝিমুনি  আসছে রবিলালের। চল চল আর দেরি নয়।
  তোলা হল ট্যাক্সি তে।
  ছেড়ে দিল ট্যাক্সি।
  আর ওর বৌ টা। সুন্দরী বৌটা কেঁদে উঠলো ফুঁপিয়ে।
   গাঁয়ের মেয়ে বৌ রা বলাবলি করতে করতে ফিরল যে
   ' মরলে মরল ঐ বৌ টা র জন্য '
  যারা ট্যাক্সিতে ওকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল তাদের কাছেও জড়ানো গলায় রবিলাল বলেছিল " শালা মরব বলে
বিষ খাইনি রে। এই আমি বিষ খাচ্ছি বলে বিষের শিশিটা খুলে মুখের কাছে ধরেছিলাম। কে জানে দু চার ফোঁটা পড়ে
গ্যাছে কি না " 
" শালা ঐ বৌ টা কে ভয় দেখাবার জন্যে রে "
" তা শালা বললে খাবে তো খাও ক্যানে - মরার যখন এত সাধ
" তো  তখন হাতটা কেঁপে গেল রে "

  হাসপাতালে ডাক্তার বাবু রা অনেক চেষ্টা চরিত্তি করলেন
  মারাত্মক বিষ। সারারাত গেল। ভোরের দিকে রবিলাল
  হ্যাঁ ; মরেই গেল।
  হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স করে রবিলালের ডেডবডি নিয়ে
  যারা গিয়েছিল তারা ফিরে এলো।
  আবার গাঁয়ের গরীব মানুষের পাড়ার লোকরা ভেঙে পড়ল
  রবিলালের কোয়ার্টার এর সামনে।
  কেউ কেউ বলতে লাগলো " সেই শালা কোথা "
মানে তারা বলছে পাশের কোয়ার্টার এর স্টাফ হরেনের ব্যাটা
টার কথা। সোম। সোমলাল। বেশ উঠতি যুবক। মেয়ে দেখলেই
ছোঁকছোঁক। অবশ্য রবিলালের বৌ এর সাথে তার বেশ ঘনিষ্ঠ
ভাব ভালোবাসার সম্পর্ক।
  সবাই জঙ্গল পাহারার ডিউটি তে বেরিয়ে গেলে ওরা একসাথে ই বাসায় কাটায়। সব সম্পর্ক ই হয়ে গেছে।
আর রবিলাল ও তা জানত।
অনেকে বলে রবিলাল টা ঠিক মরদ ছিলনা।

যাক রবিলালের বৌ টা বিধবা হল।
শোক তাপ ভোজ কাজ সব মিটে গেল। বৌটার দাদা ভাইরা এখানে এসে সব সারল।
বীট বাবু র হাতে পায়ে ধরে তাদের বোন টার যাতে একটা
ব্যবস্থা হয় তার জন্য অনেক কাকুতি মিনতি করে ; গাঁ ঘরের
মাথা দের সাথে দেখা করে একদিন তারা ফিরে গেল।
তাদের ই বা থাকলে চলে কি করে। নিজেদের সংসার আছে।
রবিলালের বৌ টা তারপর বীট বাবুর কোয়ার্টার এ রান্নার
কাজ করতে লাগলো। বীট বাবুর ওর রান্না খুব ভালো লাগে।
" তুমি তো রবিলালের চেয়েও মুরগী টা ভালো রাঁধো "
" বেশ বেশ আপাতত এটাই কর। তারপর দেখি "
রাতের রান্না সেরে আরও অনেক ক্ষণ বীট বাবুর কোয়ার্টার এ
থাকে রবিলালের বৌ  টা।
এখন তার চেহারা আরও ভালো হয়েছে। মুখে চোখে বেশ
ঝকঝকে ভাব।
সোম টা সবই দেখে। বলার কিছু নাই। একেবারে বীটবাবুর
আওতায়। কটকটে চোখে সোমের দিকে তাকায় সে।
শুধু বীটবাবু হলেই তো আর হবেনা। একজন স্টাফ কে নিয়ে
রেঞ্জ অফিস ;। রেঞ্জার মানুষ টি তাকে আপাদমস্তক দেখলেন। যেন কাপড়ের ভিতর পর্যন্ত দেখছেন।
" বেশ। বেশ পরে এসো একদিন। অনেক কাগজ পত্রের ব্যাপার আছে। সময় লাগবে। সকাল দিকে এসোনা। ওবেলায় এসো "। পারলে একাই এসো।
তারপর  একে তাকে নেতাদের ধরাধরি। রেঞ্জ বাবু এক নেতাকে ডেকে ওর সামনে ই বললেন " এর কেস টা তো একটু দেখতে হয় - না কি বলেন আপনারা "। আপনাদের ইউনিয়ন থেকে আমাকে একটা চিঠি দিন "।
- আজ্ঞে হ্যাঁ। বড়বাবু।
- রবিলালের বৌ কে নিজেদের অফিস ঘরে ডেকে নিয়ে কিছু
  কাগজ পত্রে টিপছাপ  সই করালেন সেই বাবু। নিজের নামটা লিখতে জানত রবিলালের বৌ।
আর বললেন " টাকা পয়সা কাউকে দেবে না "। বীট বাবু চেয়েছে না কি। "
রবিলালের বৌ ঘাড় নাড়ল। সে জানে কি লেগেছে।
যাক। একদিন আবার গেল রেঞ্জ অফিসে। বড়বাবুর দপ্তরে।
তাকে প্রায় বসিয়েই রাখলেন রেঞ্জ অফিসার। শেষ বিকেলে
কাজ ধরলেন। সন্ধ্যে হয়ে গেল। রেঞ্জ বাবু ফোন করে বীট বাবুকে যা বলার বললেন।
" শুনলাম তুমি না কি খুব ভালো মুরগী রাঁধো "। তা আজ আমাকে রেঁধে খাওয়াও। "
রেঞ্জ বাবু র কোয়ার্টার এ চলে গেল বাসন্তী। রবিলালের বৌ।
সেখানে সব কিছু দেখিয়ে দিল একজন মালী। মুখ টিপে হাসল। এ হাসির মানে বাসন্তী জানে।
রেঞ্জ বাবু সন্ধ্যের পর একটু পানীয় নিয়ে বসেন।
" বেশ গন্ধ বের হয়েছে। কয়েক পিস দিয়ে যাও না "
বাসন্তী দিয়ে এলো। রেঞ্জ বাবু তার হাতটা একবার চেপে দিলেন। বাসন্তী যা বোঝার বুঝল।
আজকের রাতটা রেঞ্জ বাবু র সাথে।
যাইহোক শেষ পর্যন্ত  এক দু বছর বাদে রবিলালের বৌ
বাসন্তী বালা র চাকরি টা হয়ে গেল। বাগানের মালিনী।
  বাসন্তী বালা দাস  স্বামী  লেট রবিলাল দাস। গার্ডেনার।
ডায়িং ইন হারনেস কেস।
এর মাঝখান টা বীটবাবু আর মাঝে মাঝে রেঞ্জ বাবু।
সোমলাল এই সময় টায় পাত্তা পায়নি। সুযোগ ও পায়নি।
  " অপেক্ষা কর সোম "। অপেক্ষা কর "
চাকরি টা তো হতে হত। বীটবাবু ও চলে যাবে। রেঞ্জ বাবু ও।
তারপর আমি তোর সঙ্গেই থাকব রে। তাবলে তুই আবার বিয়ে থা করে বসিস না যেন। "
" কি "!  কি বলছিস। ঠিক করে বল "।  একসাথে ই থাকব "
শালবনের অন্ধকারে র দিকে চেয়ে আছে সোমলাল। অসংখ্য
জোনাকি জ্বলছে সেই অন্ধকারে। মাথার উপরে একফালি চাঁদ।
সোমলাল কে চুপ করে থাকতে দেখে বাসন্তী বলে ওঠে
" শরীরে কি দাগ থাকে  না কি "
হটাৎ ই সেই অন্ধকারে সোমলাল বাসন্তী কে জড়িয়ে ধরে
গভীর আলিঙ্গনে।
সোমলালের আলিঙ্গনে বাঁধা থাকতে থাকতে ই বাসন্তী হু হু করে ডুকরে কেঁদে ওঠে।
------------ ------------ ------------ ------------ © প্রণব ভট্টাচার্য।।

 




 

No comments:

Post a Comment