Thursday, 8 September 2022

।। এলেমবাজার নীলামবাজার ইলামবাজার

। ।এলেমবাজার। নীলামবাজার। ইলামবাজার।।। 

না। তুলাপট্টিতে কোন নীলামের বাজার আর বসেনা আজ। 
  তুলাপট্টিতে একদিন সুতা ; তুলা ; তসরের থান ; সুতী বস্ত্রের নীলামের বাজার বসত। কত এলেমদার মানুষ দের আনাগোনা। আজ যদি  বলেন যে তুলাপট্টি জায়গাটি কোথায় - ইলামবাজার এর আজকের যে কোন মানুষ চুপ করে থাকবেন। কে আর খোঁজ রাখে। কি হবে সে অতীত কে জেনে।
পুরানো থানার পাশে বিস্তৃত মাঠে সে হাট বসত একদিন।
জেলা গেজেটিয়ারে  ও' ম্যালি বলছেন। ১৯১০ সালে।
গুরুসদয় দত্ত মশাই তখন বীরভূমে র জেলা কালেক্টর।
ইলামবাজারে উদ্বোধন করছেন একটি দাতব্য চিকিৎসা লয়।
সেই মার্বেল ফলকটি কি আজকের গ্রামীন হাসপাতালে র কোন কক্ষে সংরক্ষিত হয়েছে কি না  জানিনা।
আজকের পোষ্ট অফিস গড়ে উঠেছে আরস্কিন সাহেবের কুঠি বাড়ির কিছুটা জায়গা নিয়ে। আর সেই বিরাট চারদিক খোলা বারান্দার ডাকবাংলো। আরস্কিন সাহেবের আউটহাউস।
নিশ্চিহ্ন। সেই উঁচু মোটা ভিতের মোটা থামের খোলা বারান্দার আরামদায়ক বাংলো বাড়ি। যেখানে কেন্দুলীর মেলা দেখতে যাবার পথে একরাত্রি বিশ্রাম নিয়েছিলেন সস্ত্রীক সিলভা লেভী র মতো পণ্ডিত। শান্তিনিকেতন থেকে এসেছিলেন।
সংলগ্ন এলাকার উত্তর দিকে ছিল আরস্কিন পরিবারের সমাধি স্থল। ছোট্ট কিন্তু সুন্দর। প্রত্যেকটি সমাধি। সাদা মার্বেল ফলকে লেখা নাম ; জন্ম সাল ; জন্ম স্থান ; মৃত্যু তারিখ।
কোথায় জন্ম ইংল্যান্ড এর কোন শায়ারে। আর মৃত্যু এই ইলামবাজারে। 
ছোটবেলায় ইলামবাজার হাইস্কুলে পড়তে গেলাম। ক্লাস নাইন থেকে। আমাকে কেউ বলেনি। কেউ দেখায় নি। একদিন খুঁজে পেয়েছিলাম।
কোথায় জন্ম আর কোথায় মৃত্যু!  আমার মন কেমন করত।
মাঝে মাঝে গিয়ে কবরস্থানে বসে থাকতাম।
পাশেই উত্তরে ফরাসী কুঠির একটা ভাঙ্গা দেওয়াল। দেওয়াল টি বেশ উঁচু। নিশ্চিত ভাবেই দোতালা ছিল।
  আজ সব নিশ্চিহ্ন। নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্যই নিশ্চিহ্ন। 
না আমরা রক্ষা করিনি। করার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে ই করিনি। সব ইঁট ; কাঠ ; পাথর ; সাদা মার্বেল ফলক সব ছাড়িয়ে দিনের পর দিন নিয়ে চলে গেছি।
আজকের ইলামবাজারে সেদিনের ইলামবাজার কে খোঁজা মূর্খামি।
  আজ সে এক বিরাট গঞ্জ। মিউনিসিপালিটির মতো বিস্তৃতি।
চারপাশের গ্রাম থেকে অবস্থাপন্ন মানুষেরা এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছেন। মূল ইলামবাজার কে আজ খুঁজে পাওয়া দায়।
আমাদের ছোটবেলায় ভূগোল বইয়ে কি কোথায় কিজন্য বিখ্যাত এই পর্বে লেখা থাকত- ইলামবাজার। বীরভূম জেলায়।লাক্ষা বা গালা শিল্পের জন্য বিখ্যাত কেন্দ্র।
এলেমবাজার। বাজারে এলাম গো। যে বাজারের ' এলেম ' মানে দাম আছে। কত সম্ভ্রান্ত মানুষজনের আনাগোনা।
নীলাম বাজার। হাঁকডাকের বিরাট বাজার। হতে পারে নীলাম থেকে ইলামবাজার।
আর ইলম বা ইলাম মানে ই তো লাক্ষা বা গালা। তার বাজার।
  আর আজ একঘর ' নুড়ি ' বা লরি নেই যারা গালার কাজ করেন। সব পদবী বদলে নিয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই পেশাও। 
শেষ দুই ভাই ছিলেন নেপাল আর গোপাল গুঁই।ঘাড় গুঁজে অবসন্ন চিত্তে টুকটাক কাজ করতেন। মলিন বেশ। ম্লান আলো চোখে। 
রবীন্দ্রনাথ এই দুই ভাইকে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রশিক্ষক হিসাবে শ্রীনিকেতনের শিল্প সদনে। শেষ চেষ্টা করেছিলেন।( চলবে)

আরস্কিন সাহেবের সিমেট্রি র ছবি সত্যশ্রী উকিল দার কাছ থেকে পেয়েছি। মুকুল দে মশাই এর তোলা। এ ছবি অন্য আর কারোও কাছে বোধহয় নাই।

No comments:

Post a Comment