Sunday, 30 October 2022

।।বামা হনু।।

হয় গল্প। না হয়  গল্প হলেও সত্যি। 
 নাম ছিল তার বামা হনু। জন্ম আঁকুড়ে ডোমের ঘরে। পিছনে লেজের মতো একটু ছিল। বিছানায় শুতে কষ্ট হত। সে না কি গাছেই চেপে থাকত। 
 গাছেই ঘুমাত। লোকে তাকে হনু বলবে খুব স্বাভাবিক। ছিল অমিত শক্তি শালী। 
 যেমন তার চেহারা। বিশাল। যেমন লম্বা তেমন চওড়া। যেমন তার হাতে লাঠি ঘোরে - সামনে আসে সাধ্য কার। তেমনি তার তীর ধনু। গুলতি। 
 একবার একটা বট গাছের মোটা ডালকে টেনে নামিয়ে গাছের ডালপালা ভাঙ্গছে। ঘরে আছে অনেক ছাগল। খাওয়াতে হবে তো। 
 তো তার কাছে হঠাৎ ই উদয় হল এক ঘোড়ায় চাপা সৈন্য। এসেই জিজ্ঞেস করল   এই এলাকা 
 পাহারা দেয় বামা হনু র ঘর কোনদিকে? 
 বামা দেখল ততক্ষণে আরও একদল এসে হাজির হয়েছে। সব বাইরের মানুষ। পাগড়ি বাঁধা। কোমরে 
 তরোয়াল। 
 তো বামা বলল এসো কেউ। এই গাছের নামানো ডালটা একটু ধরো। আমি কটা ডালপালা ভেঙে নি। তারপর তোমাদের বামার ঘর দেখিয়ে দেব। 
একজন সৈনিক এসে ডালটা ধরেছে। আর বামা হাত ছেড়ে দিয়েছে। অমনি ডাল গেল এক ঝটকায় উপরে উঠে। সেই ব্যাটা সৈন্য মাটিতে পড়ল ছিটকে। অন্য রা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে বামার দিকে। বামা বলল দাও একটা তোমাদের ধনু। ওরা দিল। ওরা ভেবেছিল সহজে তাতে ছিলা পরাতে পারবেনা। বামা অক্লেশে ধনু বাঁকিয়ে ছিলা 
 পরিয়ে দিল। এবার বলল দাও একটা তীর। 
 আর পরপর সাতজন দাঁড়াও। আমার একটানেই 
 সাতজন কে ফুঁড়ে তীর বেরিয়ে যাবে। 
 তো তাই আর কেউ কি দাঁড়ায়! 
  তখন বামা বলল বেশ আমি তীর টা ছুঁড়ছি ঐ গাছটা লক্ষ্য করে। ছুঁড়ছি কিন্তু তীর টা তোমাদের 
 বের করে আনতে হবে তবে বুঝব তোমাদের মুরোদ। সে তীরের ফলা গাছের গুঁড়ির এতটা ভিতরে গেল যে সে টাকে বের করে সাধ্য কার। 
 সৈনিক দের দল বুঝল এ যে সে মানুষ নয়। এর ক্ষমতা মারাত্মক। 
তখন বামা বলল শুন হে আমি ই বামা। বামা হনু বলে লোকে। আমরা কালু বীরের বংশধর। 
 সেই কালু ডোম লাউসেনের সেনাপতি। ইছাই ঘোষ কে যুদ্ধে হারিয়েছিল। 
 আমি এই  গাঁয়ের পাহারাদার। আর আমার সঙ্গে আছে আমার ই মতো পাহারাদার দের দল। 
 সব কটাকে কালুবীরের থানে একহাতে বলি দিয়ে দেব। মানে মানে কেটে পড়। 
 বর্গী সৈন্য রা বুঝল এখানে ঢোকা বা লুঠপাট করা সহজ হবেনা। এক বামা তেই রক্ষে নাই। তারপর আবার তার দলবল আছে। 
বর্গী সৈন্য দল এলাকা ছেড়ে কেটে পড়ল। 
------------ ------------ ------------ © প্রণব ভট্টাচার্য 
আমাদের এই এলাকা মানে অযোধ্যা - বনকাটি এলাকায় শোনা যায় বর্গী আক্রমণে র মুখে পড়েনি। বনকাটির শ্রী অনিল কুমার রায় মশাই 
 এর কাছ থেকে শোনা। ।।বামা হনু র গল্প।।

No comments:

Post a Comment