Sunday, 6 November 2022

ইলামবাজার। এক প্রাচীন গঞ্জের কথা


।। গঞ্জ ইলামবাজার। প্রাচীন এক বানিজ্য কেন্দ্রের ইতিকথা।। প্রণব ভট্টাচার্য।
ইলামবাজার। বীরভূমের প্রবেশ দ্বার।
শুধুমাত্র বীরভূমের না। উত্তর বঙ্গের ও। পথ চলে গেছে ভায়া দুবরাজপুর   সিউড়ি হয়ে আরও উত্তরে।
আর এক পথ চলে গেছে বোলপুরের দিকে। " চৌপাহারী " জঙ্গলভূমির মধ্য দিয়ে।
আসলে ইলামবাজার এক জাংশন। তার এই অবস্থান খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণে পূর্ব বাহিনী অজয়। তার উপরে "অজয় সেতু "। ১৯৬২ তে উদ্বোধন হয়েছিল যে অজয় সেতুর  সে বয়সের ভারে দূর্বল হয়ে যাওয়ায়  রাজ্য সরকার কর্তৃক  নূতন সেতু নির্মিত হয়েছে। সম্প্রতি তার ও উদ্বোধন হল।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু এবং পানাগড় মোরগ্রাম হাইওয়ে।
  পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এই রাজ্য সড়ক খুবই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
প্রাচীন জনপদ ইলামবাজার। যে বাজারের এলেম আছে। যেখানে এলেমদার মানুষ জনের আনাগোনা। যেখানে সুতা ;
তুলা ; রেশম ; তসর এর পাশাপাশি নীল ; গালা র নীলাম বাজার বসে। তখন তার নাম " তুলাপট্টি "। সে কোন ইলামবাজার। আসব সে কথায়। সে কথায় আসতেই হবে।
ইলামবাজার এর গ্রামীণ হাট অনেক পুরনো। সেই হাটে পাওয়া যায়না এমন কোন জিনিস নাই।  সব ; সব  কিছু পাওয়া যায়।  দুমকা থেকে আদিবাসী কর্মকার রা
তাদের লোহার তৈরী জিনিসপত্র এনেও  এই হাটে বেচে।
ওপার বর্ধমানের বসুধার চাষীরা সবজি নিয়ে না এলে হাটই জমেনা। এপারের সাথে ওপারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।
যখন পাকা সেতু ছিলনা তখন ছিল অস্থায়ী কাঠ বাঁশের
পারাপারের সাঁকো। তার উপর দিয়েই ওপার বর্ধমান জেলার
কত মানুষ আসা যাওয়া করত এই ইলামবাজারে।
এটি ই নিকটতম গঞ্জ। ইলামবাজার এর হাট কে কেন্দ্র করেই
এর বৃহত্তর গঞ্জ হিসাবে গড়ে ওঠার প্রাকপ্রস্তুতি।
ময়রা ; মুদি ; কয়লা ; বাসনপত্র ; মনোহারী ;পোশাক আশাক  সবের ই গঞ্জ। আর মেয়ের বিয়ের সোনার গহনা ; তার জন্য তো যেতেই হবে সাহা বাবুদের বা হাজী সাহেব দের দোকানে।
হাট কে ঘিরেই চারদিকে পাকা  দোকান দানি। একদিকে ' লরি পাড়ার" গালার খেলনাপাতি।গলি তে বসে মেছুনী রা। টাটকা নদীর মাছ। নারানপুর ; ক্ষুদ্রপুরের চাষীরা আনে আখের গূড়।  হাটের উত্তরে গৌরাঙ্গ মন্দির। মাঝখানে এক প্রাচীন বটবৃক্ষ।
তার সামনে মাটির তৈরী নানা সামগ্রী নিয়ে বসে এপার ওপারের কুমোরে রা।
চারপাশের নানা গ্রাম থেকে মানুষ আসে এই হাটে।
হাট বসে যে জায়গায় সেই জায়গা মৌখিরা কালিকাপুর এর
জমিদার বাবুদের। তাঁদের লোকে তোলা তোলে। তাঁদের কাছারী বাড়ি আছে এখানে।
তারপর যখন সিনেমা হল তৈরী হল " চন্দ্রকুমার " বা চাঁদকুমার পুকুরের ধারে - গোরু গাড়ির ভিড় বলে দেখে যা।
সাহা বাবুরা ; ডাক্তার কালী বাবু রা উদ্যোগ নিয়েছিলেন
সিনেমা হল তৈরী তে। তার আগে দুবরাজপুরের এক ব্যবসায়ী। তিনি জয়দেব কেন্দুলী র মেলাতে ও সিনেমা দেখাতেন।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ১ ম পাতা শেষ।

গঞ্জ ইলামবাজার  কথা।।  ২ পাতা আরম্ভ।
আজ থেকে ৬০-৭০ বছর আগের প্রাথমিক বিদ্যালয় পাঠ্য
ভূগোল বইয়ে  'কি কোথায়  কি জন্য বিখ্যাত  ' নামে একটি
অধ্যায় থাকত। সেখানে ইলামবাজার এর পরিচয় " লাক্ষা বা গালা শিল্পের কেন্দ্র। একটি গঞ্জ  বীরভূম জেলা য় "
একদা  নীল ও গালা শিল্পের এক প্রধান কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠেছিল এই ইলামবাজার। এবং গঞ্জ হিসাবে তার খ্যাতিও
সেই নীল গালার ব্যবসাকেন্দ্র হিসাবে। বিখ্যাত।
"Trade mart of importance ". ইউরোপীয় যুবক মিঃ ডেভিড আরস্কাইন এর হাতে যার সূচনা। বীরভূমের প্রথম
কমার্শিয়াল রেসিডেন্ট হিসাবে সুরুলে এসে ঘাঁটি গেড়েছেন
মিঃ জন চীপ ১৭৮২ সালে। প্রায় দুর্গতুল্য কুঠিবাড়ি বানিয়েছেন। কয়েকবছর এর মধ্যেই তিনি " গড়া কাপড় "
এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নীল উৎপাদন এর ব্যবসায় প্রভূত সাফল্য লাভ করেছেন। সুরুলের সরকার বাবুরা বা রায়পুরের
সিংহ বাবু রা তাঁর সাথে ব্যবসা করেই ধনী হয়েছেন।
এই চীপ সাহেবের কাছে হাতে কলেমে কাজ শিখে ; তাঁর কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়েই  আরস্কাইন সাহেব  দ্বারোন্দা
গ্রামে তাঁর নীলকুঠি বানিয়ে জমিয়ে ব্যবসা করেছেন। প্রভূত লাভ করেছেন নীল ব্যবসায়ে। তারপর একদিন দ্বারোন্দার
পাট চুকিয়ে তিনি চলে এলেন অবস্থান গত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ  এই ইলামবাজারে। ইলামবাজারের পূর্ব দিকের
বিরাট ডাঙ্গা য় গড়ে উঠল তার বিশাল ডাকবাংলো গড়নের
কুঠিবাড়ি। গুদাম। বাসগৃহ। এমনকি নিজের পরিবারের জন্য
কুঠিবাড়ি র উত্তরে একখণ্ড জমিতে " সমাধিক্ষেত্র "।
আবার দক্ষিণে অজয়ের ধারে আমবাগানের মধ্যে তাঁর স্ত্রী র
জন্য আবাসগৃহ। অতি সুন্দর ; নির্জন সেই স্থান। মনোরম।
ইলামবাজার এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার এবং অজয়ের ওপারে
প্রভাবশালী ব্যক্তি দের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুললেন।
ইলামবাজার বা বসুধার " লরি " সম্প্রদায়ের মানুষ দের
সংগঠিত করে এক ছাদের নীচে নিয়ে এসে গালার ব্যবসা কে
সুসংগঠিত বাণিজ্যিক রূপ দিলেন।
একটা সময় তিনি স্থানীয় ভূস্বামী দের সাহায্যে প্রায় ১৪৫২৫
বিঘা জমিতে নীলের চাষ করাতেন। তাঁর দাদনের পরিমান বেশী ছিল। এবং প্রায় চেষ্টা করেছেন অনাবাদী জমিতে নীল
চাষ করানোর। কৃষক বিক্ষোভ তার জন্যই দেখা দেয়নি।
ইলামবাজার এর খয়েরবুনির শিমূল তলার ঘাটের নামই হয়ে গিয়েছিল " সাহেব ঘাট "। ছোট  নৌকা য় করে নীল গাছ ; শাল ; পলাশ ; কুসুম ; কুল ; পাকূড় গাছের সরু ডালে লাক্ষা কীটের তৈরী করা তাদের দেহ আবরণী ঘর সমেত ডাল  ; সব মাল আসে
সাহেবের গুদামে। পশ্চিমে র ঝাড়খণ্ড এর জঙ্গল ভূমি
এবং " সেনপাহাড়ী " র জঙ্গল ভূমি র নামই হয়ে গিয়েছে
" লা মহল "। লা মানে লাক্ষা।
লক্ষ লক্ষ লাক্ষা কীটের মুখের লালায় তৈরি তাদের পুঞ্জীভূত
নলাকৃতি দেহ আবরণ ; সেখান থেকেই তৈরী হয় গালা।
নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। ডাল থেকে ছাড়ানো। তাকে গুঁড়ো করা।
বড় বড় জালায় জলে ভিজিয়ে রাখা। তুলে নিয়ে গরম জলে
কার্পাস পাতা মিশিয়ে ফোটানো। তারপর থিতিয়ে গেলে উপরের জলীয় অংশ " যাবক " বা আলতা। তা দিয়েও  সুতো
রঙ করা হয়। সবশেষে নীচের অবক্ষেপিত পদার্থ কে গনগনে
আগুনে গরম করে গলিয়ে ফেলে নানা ছাঁচে ফেলা। নানা নাম
তার। চাকতি ; বোতাম ; পাতা। তারপর রোদে শুকিয়ে ঠাণ্ডা করে বস্তা বন্দী করে চালান দেওয়া। অতি চমৎকার প্রাকৃতিক
" রেজিন " এই গালা। এখনও এর বাজার মূল্য যথেষ্ট।
এবং যথেষ্ট তার চাহিদা।
এখানে ফরাসি কোম্পানির ও একটা ছোট্ট কেন্দ্র ছিল।
কিন্তু ইলামবাজার এর বিখ্যাত গঞ্জ হিসাবে গড়ে ওঠা
ডেভিড আরস্কাইন সাহেবের হাত ধরে। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর
ছেলে হেনরি  ব্যবসা চালিয়েছেন ৩৫ বছর।
তারপর তাঁদের আত্মীয় ফারকুহারসন এবং ত্রিহুত এর ক্যাম্পবেল সাহেবকে ব্যবসা বিক্রি করে দেন। তাঁরা চালালেন
১৮৮২ সাল পর্যন্ত। তারপর তাঁদের সমস্ত সম্পত্তি সহ ব্যবসা
কিনে নেন জমিদার রায় বগলানন্দ মুখার্জি। তার আগেই তিনি এবং তাঁর আত্মীয় রা স্বাধীন ভাবে আবার কোম্পানি সাথে নীল ; গালার ব্যবসা করছেন।  তিনি তাঁর আত্মীয় দের দিয়ে এই ব্যবসা চালিয়েছিলেন আরও অনেক দিন। ব্যানার্জি ; মুখার্জি ; চ্যাটার্জি ইত্যাদি পরিবার।
এছাড়াও আরও অনেকে তখন ছোট আকারে হলেও নীলের বা রঙের ব্যবসা করেছেন ভরপুর। ইলামবাজারের বারুইপুরের পাল পরিবার। অজয়ের ওপারে অযোধ্যা বনকাটি এলাকা র
বনকাটি র মুখার্জি বাবুরা গালা ব্যবসায় এতই ধনী হয়েছিলেন যে নিজেদের বসবাসের জন্য প্রাসাদ সহ নির্মান
করিয়েছিলেন  টেরাকোটা অলংকরণ যুক্ত বিখ্যাত " গোপালেশ্বর শিব মন্দির। এবং বিখ্যাত কারুকার্য মণ্ডিত
বনকাটি র পিতলের রথ।
সাহেব কোম্পানির সাথে নীলের ব্যবসা করে প্রভূত ধনী হয়ে উঠেছিলেন  মৌখিরা কালিকাপুর এর জমিদার বাবুরা।
কালিকাপুর এর সাতমহলা প্রাসাদ সহ দুটি বিখ্যাত শিবমন্দির নির্মান করিয়েছিলেন। টেরাকোটা অলংকরণ
যার অসামান্য। সম্মুখে দিঘি। তার পশ্চিমে আজও দাঁড়িয়ে আছে ভগ্ন অবস্থায় বিখ্যাত দ্বিতল " চাঁদনী "। গোটা গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে আছে কত স্থাপত্য। বিশাল এক বিষ্ণু মন্দির নির্মিত হয়েও তার প্রতিষ্ঠা হয়নি। আর মৌখিরা এক প্রাসাদ মন্দির নগরী। কত যে মন্দির আর প্রাসাদ!
ইলামবাজার এর  পাল ; দত্ত ( দালাল) ; লাহা ; সাহা; লরি ; দাস (তাঁতি) ইত্যাদি এবং কয়েক টি মুসলিম
পরিবার  যথেষ্ট ধনী হয়ে উঠেছিলেন নানাবিধ ব্যবসা য়।
ব্যবসার একটা পরিমণ্ডল গড়ে উঠেছিল সেই সময়
  সাহেব কোম্পানির কুঠিবাড়ি ভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্য কে কেন্দ্র করে।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ২ পাতা শেষ



।। গঞ্জ ইলামবাজার কথা।। ৩ নং পাতা আরম্ভ।
সেই সময়কাল ঃ  সেই  সময় কাল বড়োই উত্তাল। অস্থির।
১৭৫৭। পলাশীর যুদ্ধে সিরাজের আশ্চর্য পরাজয়। মুর্শিদাবাদ
নবাব কোষাগার রাতারাতি লুঠ হয়ে গেল।
১৭৭০ এর মহামন্বন্তর। যা বাংলা(১১৭৬) ছিয়াত্তর এর নামে কুখ্যাত।
বীরভূমের ৬০০০ গ্রামের মধ্যে প্রায় ১৫০০ গ্রাম জনশূন্য হয়ে গেছে। চাষযোগ্য জমি সব পড়ে আছে। চাষ করবে কে?  ভাত খাবার চাল নাই। যে চাল এক টাকায় ২-৩ মন পাওয়া যেত সেই চাল ৩ টাকা সের। কিন্তু কিনবে কে। লক্ষ লক্ষ মানুষ
না খেতে পেয়ে মারা গেল। এ প্রায় গণহত্যা ই।
সুপারভাইজার হিগিনসনের সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী
" বীরভূম বন্ধ্যা জনমানব হীন দেশ "।
আর ইউরোপীয় ব্যবসায়ী রা সারা বীরভূম জুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে  কোথায় কোন ব্যবসা ভালো হতে পারে সেই সম্ভাবনার সন্ধানে।    পূর্বাংশে ভালো রেশম। পরে আমরা দেখব গড়ে উঠছে বিখ্যাত
গুণুটিয়া রেশম কুঠি। সুতী ; রেশম ; তসর ; গুড় ; লোহাপাথর থেকে লোহা ; নীল ; গালা ইত্যাদি সব কিছুর ভাবনা তাদের মাথায়। ভালো ব্যবসা মানেই ভালো কর আদায়। তা না হলে
সিভিল সার্ভিস থেকে কমার্শিয়াল রেসিডেন্ট হিসাবে কি ১৭৮২ সালে জন চীপ সাহেব কে নিযুক্ত করা হয়!
সবার আগে এসেছে আর্মেনিয়ান রা। তারপর ফরাসী ; ইংরেজ ; ওলন্দাজ রা। সারা বাঙ্গলা জুড়েই ছূটে বেড়াচ্ছে
তারা। হাণ্টার সাহেবের বিবরণী তে ই আছে ' বড় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গালার এই ব্যবসার উদ্বোধন ডেভিড আরস্কাইন এর হাতেই। এবং নীল ; গালা ; কার্পাস বস্ত্র এর ব্যবসার মাধ্যমে মরে যাওয়া অর্থনীতি র কিছুটা হলেও উন্নতি হয়।
মন্বন্তর এর পর সারা জমিদারি তে ৫০ জনও ধনী মানুষ নেই।
কিন্তু কোম্পানির ট্যাক্স আদায় কিন্তু কমছেনা।
" বণিকের মানদণ্ড এবার রাজদণ্ড "।
১৭৭৯ সালে ভুখা মানুষ  ; কৃষক দের স্বাভাবিক বিক্ষোভ দেখা দিল। বিক্ষোভ প্রবল হল। প্রকাশ্যে ডাকাতি হচ্ছে।
ডাকাত (!) দের দল ক্রমশ বিশাল হচ্ছে। দলে শত শত ; হাজার হাজার   বিক্ষুব্ধ মানুষ। পশ্চিম থেকে নেমে আসছে দুর্ধর্ষ পাহাড়ি এলাকার মানুষের দল। আরস্কাইন সাহেবের কুঠিবাড়ি ( পাহারা সত্বেও) সহ গোটা ইলামবাজার দিনে দুপুরে লুঠ হল।
কুঠিবাড়ি সহ শুকবাজারের তাঁতিদের বাঁচাতে সুরুল কুঠি থেকে সেপাই পাঠানো হল। ১৭৮৯ সালে। নদীর ওপারে অযোধ্যা - বনকাটির  চট্টোপাধ্যায় পরিবারে ডাকাতি হল।
তখন এই ডাকাত দলকে সামলানো কোম্পানির কাছে এক চরম মাথাব্যথার কারণ। কেননা স্থানীয় ভূস্বামী দের সে ক্ষমতা নেই। তারা অনেকে  নিজেরাই ডাকাত দল গড়েছে বা তাদের দলে গোপনে  যোগ দিয়েছে।
এই সেই সময়।
আজ আর ইলামবাজার এ এক ঘর " লরি বা নুরী " দের খুঁজে পাওয়া যাবে না। কেউ নিজের পরিচয় দেয়না। সবাই পেশা বদল করে নিয়েছে।
অথচ একদিন অর্থাৎ ১৮৫৫ সালে প্যারিসে র এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী তে  ইলামবাজারের গালা শিল্পী দের তৈরী  শিল্পবস্তু স্থান পেয়েছে যথেষ্ট সমাদরেই।
ডেভিড আরস্কাইন সাহেবের দেশে ফেরা আর হয়নি।
তিনি শুয়ে আছেন এই ইলামবাজারে ই। তাঁর পারিবারিক সমাধিক্ষেত্রে সাতটি সমাধি ছিল। মার্বেল ফলকে লেখা ছিল
নাম ; জন্ম ;  জন্মস্থান ; মৃত্য তারিখ ; আর ইলামবাজার।
সেই সমাধি ক্ষেত্রের সব মার্বেল ফলক চুরি হয়ে গেছে।
যে কুঠিবাড়ি তে শান্তিনিকেতন থেকে জয়দেব কেন্দুলী র মেলা দেখতে যাওয়ার পথে ফরাসী পণ্ডিত সিলভা লেভী এবং
মাদাম লেভী এক রাত্রি বিশ্রাম নিয়েছিলেন সেই উঁচু ভিতের
খোলা বারান্দা র ডাকবাংলো রীতির কুঠিবাড়ি র একটি ইঁট ও
অবশিষ্ট নাই।
আমরা সংরক্ষণ করিনি। তার প্রয়োজনীয়তা অনুভবই করিনি।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ৩ নং পাতা শেষ
 

।। ইলামবাজার কথা।। ৪ নং পাতা আরম্ভ।
ইলামবাজারের তিনটি বিখ্যাত মন্দির ঃ অসামান্য টেরাকোটা অলংকরণ শোভিত তিনটি মন্দির আছে এই ইলামবাজারে।
১)   হাটতলার গৌরাঙ্গ মন্দির ২) ব্রাহ্মণ পাড়ায় রামেশ্বর শিবমন্দির এবং ৩) ব্রাহ্মণ পাড়ায় বিখ্যাত বিরাট লক্ষ্মী জনার্দন মন্দির।
গৌরাঙ্গ মন্দিরের প্রতিষ্ঠা লিপি নাই। মন্দির টিও  অসম্পূর্ণ
বলে মনে হয়। অষ্টকোনাকৃতি এই মন্দির টির কাঠের ফ্রেম করে টিনের চালা বানানো হয়েছে। মন্দির প্রেমী দের কাছে
অসাধারণ একটি মন্দির। এর টেরাকোটা র কাজ অনুপম।
যেমন জ্যামিতিক ডিজাইন ; ফুল লতা পাতার লতা তেমনি
জ্যামিতিক ডিজাইন এ  " নকল দরজা। উপরের দিকে নানা পৌরাণিক চিত্র। লম্বিত প্যানেল।মৃত্যু লতা। দুর্গা ; রাম রাবণ সহ নানা পৌরাণিক আখ্যান চিত্রায়িত।  একেবারে নীচে নানা মূর্তি।
কিছু সামাজিক চিত্রণ। নীচের দিকের অনেক টালি ক্ষয়প্রাপ্ত  হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। অতি দ্রুত নিম্নভাগের ক্ষয় হচ্ছে।
এই মন্দিরের গোড়ায় মানসিক এর নুন দেওয়া হত। এই দশার কারণ সেটা ও। কথিত আছে
মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য দেব রাঢ় ভ্রমণের সময় এখানে বটতলায়
বিশ্রাম নিয়েছিলেন এবং ভাতের সাথে একটু নুন চেয়েছিলেন।
উনি ইলামবাজার সংলগ্ন পায়ের গ্রামে ও নাকি গিয়েছিলেন।
রামেশ্বর শিবমন্দির ঃ উঁচু ভিতের উপরে দেউল রীতি র
পীরা যুক্ত মন্দির। ১৮৪৬ এর কাছাকাছি সময়ের  নির্মান। চমৎকার টেরাকোটা র কাজ। সংস্কারে সিন্থেটিক রঙের প্রলেপ পড়েছে।
তাও কাজ গুলি স্পষ্ট। দুর্গা ; জগদ্ধাত্রী আছেন দুপাশে।
সামনে র রাম-সীতার রাজ্যাভিষেক। নানাবিধ পৌরাণিক চিত্র। এবং বেশ কিছু সামাজিক চিত্রণ। যুদ্ধ যাত্রা।সৈনিক দের দল।
লক্ষ্মী জনার্দন মন্দির ঃ ১৮৪৬  খ্রীস্টাব্দে নির্মিত। ৭০ ফুট উচ্চতা। পঞ্চরত্ন মন্দির। চূড়ায় পীড়ার কাজ।
ক্ষুদিরাম বন্দ্যোপাধ্যায় এর প্রতিষ্ঠাতা।
রক্ষা পেয়েছে এর প্রতিষ্ঠা লিপি। এই মন্দিরের কাজ কে অসাধারণ বললে কম বলা হবে। এর দুর্গার চালচিত্র ; রাম রাবণের যুদ্ধ  রাসমণ্ডল সহ অন্যান্য পৌরাণিক চিত্র।প্রতিটি কাজেই শিল্পী দের অসামান্য দক্ষতার প্রকাশ।  দলিল  কিছুটা হাই রিলিফের কাজ। পটের থেকে ফিগার যেন বেরিয়ে আসছে।
ত্রিমাত্রিকতা দেবার প্রচেষ্টা। এবং অনবদ্য এর এক্সপ্রেসন।
নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস ই হবেনা। কি অসামান্য এর
শিল্পগুন সম্পন্ন টেরাকোটা ফলকের কাজ। শিল্পীদের কারিগরি দক্ষতাকে কুর্নিশ। তাদের নাম কোথাও নেই।
পাশেই আছে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের ভগ্ন প্রাসাদ এর ধ্বংসাবশেষ। তার পাশেই ছিল গালা শিল্পী দের একত্র বসে কাজ করার এক প্রাচীর ঘেরা প্রাঙ্গণ। কয়েকটি ঘর সমেত।
এই তিনটি ছাড়াও আরও কিছু মন্দির আছে।
পাল দের ছিল বিশাল এক দুর্গা দালান। সু উচ্চ তোরণ দ্বার।
ভগ্নাবশেষ দেখেও  এই দালান মন্দির এর বিশালত্ব অনুমান করা যায়। এর সম্মুখ ভাগে ছিল অপূর্ব জ্যামিতিক ডিজাইন এর পঙখের কাজ। দুই দিকে দুই প্রকোষ্ঠ। মাঝে বেদী।
সামনে ছিল লম্বা বারান্দা। বারান্দার মধ্যস্থলে ছিল কৌনিক
উচ্চ স্তম্ভ।
এটিই ইলামবাজারের প্রাচীনতম এক অতি চমৎকার দুর্গা দালান।
ইলামবাজার এর প্রাচীনত্বের নিদর্শন হিসাবে রয়েছেন বৌদ্ধ
দেবী সুহ্মেশ্বরী। দেবী মূর্তি ভগ্ন। পাদপীঠে ক্ষোদিত ছিল
বৌদ্ধ শ্লোক। " যে ধর্ম্মা হেতু প্রভবা হেতুং তেষাং তথাগতাহ্যবদৎ / তেষাঞ্চ যো নিরোধঃ এবং বাদি মহাশ্রমণঃ "
  এখানের ধর্মরাজের নাম সুহ্মরায়। সুহ্ম অতি প্রাচীন শব্দ।
  রাঢ় দেশের নামই ছিল -  সুহ্ম।
বীরভূম এর উপর দিয়ে বয়ে গেছে নানা ধর্মীয় সাধনার স্রোত।
বীরভূমি বীরভূম। বজ্রভূমি। কামকোটি।
বজ্রযানী বৌদ্ধ দের প্রভাব বিস্তৃত হয়েছিল এখানে ব্যাপক ভাবে। সমাজের নিম্নবর্গের মানুষ জন সবাই এই ধর্মে মর্যাদার সাথে স্থান পেয়েছিলেন।
অনেক জৈন নিদর্শন ও রয়েছে বীরভূমের নানা স্থানে।  ইলামবাজার
নিকট বর্তী ঘুড়িষা গ্রামে আছে জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের ভগ্ন
মূর্তি। এই সবই ইলামবাজারের প্রাচীনত্বের প্রমান। 
আজকের ইলামবাজার ঃ ১৯০১ সালে ইলামবাজার এর জনসংখ্যা ১৮১৫ জন। Sherwill সাহেবের সমীক্ষায় গালা সহ অন্যান্য শিল্পের Trade Mart ইলামবাজার এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির প্রায় ২২৩৫ জন মানুষ নিয়োজিত। যদিও তখনই
নুড়ি দের মধ্যে ভালো গালা শিল্পী মাত্র দুজন। গালার অলংকার নির্মাতা রা ছিলেন। মূল চল্লিশ টি পরিবার। আশপাশের গ্রামগুলির পরিবারগুলিকে ধরলে প্রায় দুশো
পরিবার এই শিল্পের সাথে যুক্ত।
ইলামবাজার এর শেষ দুই নামী গালা শিল্পী ছিলেন নেপাল আর গোপাল গুঁই। রবীন্দ্রনাথ তাঁদের দুই ভাইকে প্রশিক্ষক হিসাবে নিয়ে গিয়েছিলেন শ্রীনিকেতনে।
আজকের ইলামবাজার এক বিস্তৃত মিউনিসিপ্যাল এলাকা।
বৃহত্তর ইলামবাজারের সেই স্বীকৃতি পাওয়া দরকার।
কিন্তু আধুনিক ইলামবাজার ভুলেছে তার সমৃদ্ধ অতীত। তার ঐতিহ্য। তার ইতিহাস।
------------ ------------ ------------ ------------ প্রবন্ধ সমাপ্ত।
গ্রন্থ ঋণ।  জেলা গেজেটিয়ার।  এল এল এস ও ম্যালি ১৯১০
বঙ্গসংস্কৃতির অঙ্গনে। সম্পাদক  শ্রী স্বপন ঠাকুর। নিজস্ব প্রবন্ধ।
রাঢ় ভাবনা পত্রিকা। সম্পাদনা। শ্রী সৌরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়
চিত্র ঋণ। আরস্কাইন সাহেবের সমাধি ক্ষেত্র। শ্রী সত্যশ্রী উকিল।


 

 



 




 
Show quoted text

Wednesday, 2 November 2022

ইউসুফ ভাই। ইলামবাজার। গালা শিল্প

ইলামবাজার।  গালা শিল্প । অজিত গুঁই এবং তাঁর ছাত্র ইউসুফ ভাই  ও অন্যান্য কথা।
- --------৷ যাঁরা আমার ২৭/১১/২১ তারিখের সিউড়ি কর্মশালার কথা পড়েছেন। তাঁদের জন্য এবং নূতন দের জন্য। একটু ছড়িয়ে বললাম। 
 দেখুন ভালো লাগে কিনা! 

জয়দেব - কেন্দুলী ভক্তিভবন এর বন্ধু দের উদ্দেশ্যে এই পর্বটি নিবেদন করলাম।  -----------------------------------------------------------------------

আমাদের এক পা এপারে আর এক পা ওপারে।
মাঝে বয়ে যায় অজয়।
দু  বেলা পারাপার।
যখন অজয় সেতু ছিলনা ; তখন ছিল অস্থায়ী পারাপারের ব্যবস্থা। কিছুটা কাঠ বাঁশের সাঁকো। কিছুটা নৌকো। বাগুড়া
গ্রামের ভিতর দিয়ে মোরাম রাস্তা। নদী চর এর উপর দিয়ে
একেবারে সাঁকো পর্যন্ত।
  তারপর অজয় সেতু র উদ্বোধন হল ১৯৬২ সালে। মুখ্যমন্ত্রী
ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় উদ্বোধন করলেন। বহু মানুষ দেখতে গিয়েছিলেন। সবার ই খুব আনন্দ। এপার আর ওপারের যে নিবিড় সম্পর্ক। বর্ষা য় পারাপার বন্ধ হয়ে গেলে বড় কষ্ট মনে।
মাতামা ; দিদিমা র কোলে চেপে বা গোরুর গাড়ি তে সেই কবেকার ছোট বেলা থেকে ইলামবাজার যাওয়া।
দল বেঁধে হেঁটে যাওয়াই ছিল বুঝি আনন্দ।
সিনেমা দেখতে যাওয়ার আনন্দে পথ হাঁটার কষ্ট হারিয়ে যেত।
  প্রথম সিনেমা হল চালু হয়েছে ইলামবাজারে।
  বলছি যখন বলেই নি - আমার স্মৃতি তে আছে একটা ঘটনা।
  সিনেমার নাম ' মরুতীর্থ হিংলাজ '।
  রাতের অন্ধকারে পথ হাঁটছে তীর্থযাত্রীর দল। মরুভূমি র উপর দিয়ে। স্ক্রিনে সেই অন্ধকার যাত্রা।
হলের দর্শক দের চিৎকার ' আলো কই। আলো দাও  হে '।
হট্টগোল। তারপর বোধ হয় মাইকে বলা হল 'রাতের দৃশ্য '।
এমন ই হবে। '
কিছু দর্শক বোধহয় বেরিয়ে গেল।
আমাদের বাড়িতে দাদু দিদিমার ততদিনে অবধূতের সেই বিখ্যাত  বই পড়া হয়ে গেছে। সে ও কিছুটা শুনেছে।
অ্যাটলাস এর ম্যাপ বই নিয়ে বসে যায় কোথায় হিংলাজ খুঁজতে। এটা তার খুব প্রিয় ছিল। খোঁজা। কত সাল কি জানি সে আর তার  মনে নাই। তবে চণ্ডীচরণ চট্টোপাধ্যায় কোম্পানির  সে ম্যাপ বই এখনও আছে। আহা কি সুন্দর ছিল
সে ম্যাপ বই।
যাই হোক অযোধ্যা জুনিয়র হাই স্কুল থেকে ক্লাস এইট পাশ করে ইলামবাজারে গেল ক্লাস নাইন থেকে পড়তে। সে তো আরেক কাহিনী। সাইকেল চাই। নাই। দাদু চিঠি লিখল বাবাকে। বাবা একমাস পরে একটা সেকেন্ড হ্যাণ্ড সাইকেল ;
কিন্তু ভালো কন্ডিশনের  এনে দিয়ে গেল। সেন র‍্যালে কারখানার পাশ দিয়ে এলেও সে সাইকেল ছিল হারকিউলিস।
  একটু উঁচু।  সে সব কথা ' কথা - সাতকাহন ' এ কোন এক পর্বে লিখেছে সে। 
এই এলাকা থেকে যেত তারা পাঁচ জন।
  অজয়ের নদী বাঁধ ধরে। সে বাঁক গুনতে গুনতে যেত আর বাঁধের গায়ে গায়ে প্রাচীন শিমুল গাছ গুলিকে গুনতে গুনতে।
  শতাব্দী প্রাচীন সে সব গাছ। বিপুল তাদের গুঁড়ির বিস্তার ; খাঁজ।
  ইলামবাজার হাই স্কুলের দোতালায় একেবারে পূব দিকের ঘরে ক্লাস নাইন। সে ছিল বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। কিন্তু বাংলা ; ইংরেজি একসাথে। স্কুলের পিছনে গেরুয়া রঙের জলের পুকুর । তার নাম ' লরি পুকুর '। তার উত্তরে প্রাইমারি স্কুলের পিছনের পুকুর টির ও নাম ' লরি পুকুর '।পরে জেনেছে আরও আছে। মনে প্রশ্ন ' লরি পুকুর '। এমন নাম কেন?  বাস লরি জানে। তার সাথে কি সম্পর্ক! কারও কাছ থেকে তো জানতে হবে।  আরও বেশ কিছু দিন পরে মাষ্টার মশাই কিরীটী বাবুর কাছ থেকে জেনেছে ' লরি ' রা ছিল গালার কারবারি। গালার
জিনিস তৈরী র কারিগর। তারা কারা?  ' লরি ' বা ' নুড়ি ' কারা।  কেউ কিছু ই বলে না। কেমন যেন লুকোছাপা ভাব।
অনেক পরে জেনেছে ' গুঁই ' রা ' দাস ' রা 'পাল ' রা এরা সব
  'লরি '। এখন আর এরা কেউ' লরি ' বলে পরিচয় ও দেয়না।অথচ পাড়াটার পুরনো নাম ই লরি পাড়া। আর ' লরি ' দের নামে কয়েকটা ই পুকুর। 
আর পদবী বা পেশা সব বদলে নিয়েছে। এখানেও সেই জাতের প্রশ্ন। নীচু জাত। উঁচু জাত।জল   চল  অচল।  অথচ তার বেশ কয়েকজন বন্ধু রয়েছে  সেই পাড়ার। তাদের বাড়ি তে ও গেছে। কে আর সে পরিচয় দেয়। কেন ই বা দেবে। সদ্য যুবক প্রয়াত রাধাশ্যাম গুঁই
অঙ্কের শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছেন হাই স্কুলে। 
 অত্যন্ত ভালো মানুষ। শেষ জীবনে উদাসী বৈষ্ণবের মতো জীবন কাটিয়েছেন। 
এই গুঁই পরিবারের বিখ্যাত গালা শিল্পী গোপাল ও নেপাল গুঁই কে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে গিয়েছিলেন শ্রীনিকেতন শিল্প সদনে গালা শিল্পের প্রশিক্ষক হিসাবে। তাঁদের ই উত্তর পুরুষ অজিত গুঁই।
তিনিও কিছুদিন প্রশিক্ষণ দান করেছিলেন। তাঁর ই প্রত্যক্ষ ছাত্র শ্রীনিকেতন সুরুলের মসজিদ পাড়ার শেখ ইউসুফ ভাই।
তাঁরা স্বামী স্ত্রী গালা শিল্পের গুণী শিল্পী। চমৎকার তাঁদের হাতের কাজ। বীরভূম আর্টিসানি নামক সংস্থা একদিনের প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছিলেন। হাতে কলমে কাজ
শেখার জন্য। বেশ কয়েকজন শিল্পশিক্ষার্থী যোগ দিয়েছিলেন। সংস্থা র পক্ষে অভিষেক সেনগুপ্ত আমাকে বিশেষ ভাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন। বিশেষ আমন্ত্রিত ছিলেন ' রাঢ় ভাবনা ' পত্রিকার সম্পাদক মাষ্টার মশাই সৌরেন্দ্র নাথ  চট্টোপাধ্যায়। শিল্পী বিধান বিশ্বাস ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা।
ইউসুফ ভাই এর কাজ দেখলাম সারা দিন বসে। এই প্রথম
হাতে কলমে কাজ দেখা। তিনি যখন তাঁর মাষ্টার মশাই অজিত গুঁই এর কথা বলছিলেন - কৃতজ্ঞতা ফুটে উঠছিল
তাঁর চোখ মুখে। আর আমি ভাবছিলাম - না ; মরেনি। ইলামবাজার এর গালা শিল্পী রা বেঁচে আছেন ইউসুফ ভাই এর মধ্যে। কিন্তু এই কাজ করে সংসার চলেনা তাঁর। তাঁকে টোটো ও চালাতে হয়। হায় রে। আমরা কি পারিনা সম্মিলিত উদ্যোগে
এই গালা শিল্প কে বাঁচাতে। পারিনা ইলামবাজারের ' চৌপাহারী' জঙ্গল ভূমির মধ্যে বাস করা আদিবাসী পল্লী গুলির ' স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী ' গুলির মহিলা দের মাধ্যমে লাক্ষা কীটের চাষের দ্বারা  গালা র উৎপাদন করতে বা জেলা শিল্পদপ্তরের মাধ্যমে তা বাজার জাত করতে।
  ভেবেছি অনুরোধ জানাব ইলামবাজার ব্লক প্রশাসন কে ভেবে দেখার জন্য। আমার ধারণা প্রশাসন সচেষ্ট হলে এই প্রয়াস সার্থক রূপ পাবে।
-------------------------------------------------------- ©  প্রণব ভট্টাচার্য
  জীবন ই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।  জীবনই শিক্ষা অঙ্গন ।
    আজীবন ই আমি ছাত্র। মানুষের মাঝেই ছড়িয়ে আছে জীবনের প্রকৃত  শিক্ষা। সকল শিক্ষক কে আমার প্রণতি। সকল শিক্ষার্থী কে আমার ভালোবাসা।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ 
আমি কি আমার এই লেখার মাধ্যমে ইলামবাজার পঞ্চায়েত সমিতির মাননীয় সভাপতি এবং মাননীয় 
 বি ডি ও সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি। 
 এ আমার অনুরোধ। 
আমার ইলামবাজারের বন্ধুদের প্রতি অনুরোধ এই লেখাটি আমার 'আঞ্চলিক ইতিহাসের  সামান্য এক  চর্চাকারী' হিসাবে র পরিচয়ে  তাঁদের কাছে পৌঁছে দিন।
------------ ------------ ------------ ------------ ---------

কবিতা এক।

।।  ছিঃ ।। 
 প্রণব ভট্টাচার্য 

 সারা সকাল টা পান্নালাল দিয়ে ধুলাম 
 কিন্তু না  
 লাইসা আহমেদ লিসা বা ইফফাত আরা  প্রতিমা র সাথে 
 অনেক টা হাঁটলাম নিমগ্ন  নদীতীরে 
  সবুজ ঘাসের উপরে স্নিগ্ধ শিশির 
  রবীন্দ্র গান  রাজেশ্বরী 
 তবুও না 
 বাড়ল বিষাদ  যূথিকা আর বাড়াবেন না 
 আখতারী বাঈ        ফিরে যান 
 কোথায় ফিরি বেগম 
 দেবব্রত র ঘরে ঢুকলাম   বাইক টা কোথা 
 আমাকে পিছনে নিয়ে একবার ছোটাবেন 
  আর আমি হেঁকে ডেকে বলব " কেন চেয়ে আছো গো মা "
 সাইগল আপনার পিছনে চেপে ছোটার ইচ্ছে
 অনন্ত ছোটার তাড়না নিয়ে 
 " খেলা ভাঙার খেলা শুরু হোক " এবার 
 চলুন একবার গণেশ পাইনের কাছে যাই 
 জীবনানন্দ কি হাঁটছেন রাসবিহারী দিয়ে 
 পাইন আঁকুন সাতটি তারার তিমির 
  আপনিই পারেন   একমাত্র 
  আপনি চেনেন ওঁকে 
  কেউ কাউকে চিনিনা অন্ধকার অবাক 
  যাতে কেউ দেখতে না পায়     খোলস মুগ্ধ 
  সুভদ্র জন 
  এতবার এতবার ছিঃ বললাম 
  নিজের ভিতরে  ছিঃ ছিঃ 
  কিছুতেই ঠিক ছিঃ বলা হলনা 
  কোথা যাব  কোন স্থলে এই বিবমিষা নিয়ে -
 ------------ ------------ ------------ ------------ ------------ 
হয়তো কবিতা 
 না কবিতা  বা

।।অরুণ আর তার মেয়ের কথা।।


।। কথা - সাতকাহন।।
" দাদা আমি বাঁচতে চাই "। কি করুণ আর্তি। দৃশ্য টা চোখের
সামনে ভেসে উঠত।
  মেয়েটাকে দেখতে যেতাম মাঝে মাঝে।
  একবুক  হতাশা নিয়ে। কিছু না করতে পারার যন্ত্রণা।
  আমি গেলে পাশে মোড়ায় বসতাম।
  আমার দিকে তাকিয়ে দেখত। কিছু বলতনা। শুধু বড় বড়
ম্লান চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ত।
গরীব বাউরী বাপের মেয়ে। বাপের গতর টাই ভরসা। যেখানে যা পায়। মাঠের কাজে ই বেশী যায়। ভালো কোদাল পাড়তে পারে। বনকাটির সব্জি ক্ষেতে কচুর ভেলি করতে বা আখের গোড়ায় মাটি দিতে তার ই ডাক পড়ে। ঘরে একজনের ই রোজগার। পেট অনেক গুলো। বুড়ো বাবা মা আছে। তিন ছেলে মেয়ে। নিজেরা। সব মিলিয়ে সাত জনা। গোপেশ্বর আর কালীদাসী ছোট একটা কুঁড়ে তে থাকে। মাঝে সাঝে কিছু বয়সকালের ভাতা পায়।সবে গ্রামপঞ্চায়েত গড়ে উঠেছে।  কিছু চাল গমের জি আর পায়
ছোট  বেটা অরুণে র কাছেই খায়। অরুণ  রা একটা ঘর করার টাকা পেয়েছে।
তখনকার দিনের কম টাকা। কয়েক হাজার হবে।
তবে সে টাকার দাম ছিল। ঘরের কাজে কিছু লাগালো। আর কিছু রাখল বোধহয় ছোট মেয়ের বিয়ের জন্যে। ছোটটি বড়োসড়ো  হয়ে উঠছে। মনসা। ছেলে এখনও  ছোট। কাজের উপযুক্ত হয়নি।
আর বড় মেয়ে টি। মনসা মন্দিরের পিছনে ঘর। ঠাকুমা তাই নাম রেখেছিল চিন্তা। মা চিন্তামণি র নামে। গরীব বাপের মেয়ে
চিন্তা তো আছেই। মেয়ে টা বড় হয়েও যেন কেমন শুকনো।
মুখটি বড় দেখায়। চোখ দুটি আরও বড়ো।
  - উঁহু অরুণ।  একবার ভাই ডাক্তার দেখা। মানুষের উঠোনে গিয়ে মোড়া পেতে বসার একটা অভ্যেস আমার ছিল।
- দাদা একবার হাতটা ওর দ্যাখো।
- কিছুই জানিনা। তবু কিছু জানি।
হাতটা নিয়ে পালস দেখে খুব সন্দেহ লাগলো। এত দূর্বল। রিদম ও ঠিক নাই। পেস ও না।
আমি অরুণের মা কে জিজ্ঞেস করলাম হ্যাঁ গো কালুনী মাসী
ছোটতে ওর বাত হয়েছিল? 
  ভাবতেও হলনা। হ্যাঁ। বাবা। পায়ের গাঁট গুলো দ্যাখো ফোলা।
সত্যিই তাই।
  - অরুণ ভাই ভালো বুকের ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যেতে হবে।
  প্রথমে ইলামবাজার। তারপর দুর্গাপুর। বড় ডাক্তার বাবু বলে দিলেন। অসুখ গুরুতর। বাতে বুকের ধুকপুক করা যন্ত্র টা খারাপ। বড় হয়ে গেছে। আর যা বলার তা লিখে দিলেন তাঁদের
প্রেসক্রিপশনে।
আমি ভেঙে বুঝিয়ে সব বললাম অরুণ কে। একটু আড়ালে।
এ যে এখানে হবেনা ভাই। বর্ধমান। বর্ধমানে ও হবে না। যেতে হবে কলকাতা।
হার্টের সাইজ বড় হয়ে গেছে। পাম্পিং ক্ষমতা কমে গেছে।
ভালব নষ্ট। এ কি সোজা ব্যাপার। গরীবের ঘরে ঘোড়া রোগ।
বর্ধমান। কলকাতা। ভাবনার বাইরে। কে নিয়ে যাবে। যাতায়াতের খরচ। কে থাকবে ওর কাছে। ভর্তি করার সমস্যা।
এম এল এ ; এম পি র চিঠি না হয় জোগাড় করা যাবে।
কে ওকে নিয়ে ছোটাছুটি করবে। টাকা কোথা!
গরীব মানুষের গাঁ। কটা টাকাই বা মেগে যেচে আদায় করা যাবে। তাও না হয় করা গেল।
অরুণ  আত্মীয় স্বজন সবাই কে নিয়ে একবার আলোচনা কর। দ্যাখা যাক কে কি বলে।
কে কাকে দেখে। সবাই তো নিজেকে নিয়ে অস্থির। শতচ্ছিদ্র জীবন। বাঁচিয়ে টিঁকিয়ে রাখাই দায়। সে দিনের অভাব আজ আর অনেকের মনে নাই। বাবা কাকা র বয়সী দের থাকলেও
আজকের ছেলে মেয়েরা কেউ জানেই না। শোনেই নি।
বাবা কাকা রা কেউ বলেও নি। বলতে বা ভাবতে চায়না বোধহয়। ভাঙা ক্ষুদ কুঁড়ো  চালের ভাত
আর পুকুর ধারের " পেছে  ভরে  তুলে আনা শাক " এর চচ্চড়ি। সে শুশুনি হোক আর গিমে হোক আর হিঞ্চে হোক।
তাতে কুচি আলু বা সরষে পড়লে তো অনেক টা হল।
ভাদর মাসে তাল মাড়ি তেই জীবন।
অরুণ  অনেক ভাবল। কিন্তু কোন খেই পায়না। তল নাই।
অভাবের অতল কালো জল   সকাল হলে
আবার চল। পরের মাঠে খাটতে। উপায় ই বা কি। ও হচ্ছে বাঁধা মুনিষ। ওর অবশ্য প্রতিদিনের কাজ।
- দাদা। কি হবে
  - আমি ই বা কি বলি। বলি দেখি দাঁড়া আলোচনা করি।
দুর্গাপুরের ডাক্তার বাবু র পরামর্শ মতো ওষুধ ; ইঞ্জেকশন চলে। পেনিসিলিন পেনিডিওর এল এ  ১২ ; ল্যানোক্সিন বা ডিজোক্সিন এই সব আর কিছু ভিটামিন।  কিছুটা হলেও আরাম বোধ করে চিন্তা।
  ঐ ভাবেই চলে। যে ভাবে হোক অরুন মেয়ের চিকিৎসা করায়। কিন্তু এতো এতে  সুস্থ হবার নয়। প্রায়ই কাহিল হয়ে
পড়ে। একটু তেই সর্দি জ্বর কাশি। হাঁপ ধরে। কত আর দুর্গাপুর যাবে। স্থানীয় ওষুধ দোকান থেকে ওষুধ এনে খাওয়ায়।
কোন কোন দিন রাতে সমস্যা খুব বাড়লে আমার কাছে ছুটে
আসে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ঘরে থাকে কিছু ওষুধ। সবাই জানে। কি দেব?  খুঁজে পেতে যদি  অ্যাসথালিন জাতীয় কিছু
পাই । ওর কষ্ট চোখে দেখা যায়না। বুকে বালিশ গুঁজে আধশোয়া হয়ে পড়ে থাকে। মাঝে মাঝে খুব বেড়ে যায়। আবার কখনো কমে আসে। এরই মধ্যে ছোট বোনের বিয়ে টা দেখল। সে এক আশ্চর্য দৃষ্টি নিয়ে। আমি ওর মুখটা দেখছিলাম। দেখছিলাম সেখানে খেলা করছে কত রুদ্ধ
আবেগ।
  মেয়েটা চোখের সামনে শুকিয়ে  শুকিয়ে যায়। নিজে তো  মেয়ে। বড় হয়েছে। 
আমি ওদের বাড়ি গেলে  বড় বড় চোখ দুটি নিয়ে আমার দিকে বোবার মতো তাকিয়ে থাকে। ভাবে হয়তো তার এই
জ্যাঠা টা কিছু করলে করতে পারে। আমি নিশ্চুপ হয়ে থাকি।
  কেমন রয়েছিস জিজ্ঞেস করলে ঘাড় নাড়ে।
  হ্যাঁ কি না কিছুই যায়না বোঝা।
  আমি আর তাকে কি করে বলি যে আমার একার সাধ্য কি রে
বড়ো অসহায় লাগে নিজেকে। কোন ব্যবস্থা ই করে তুলতে পারিনি। পারা সম্ভব ছিলনা।
এমন জায়গায় আমরা থাকি। আর তখনকার দিনে অন্ধকার   এক গাঁয়ে। কে কার পাশে দাঁড়ায়! সব ফুটোফাটা।
মেয়েটার মুখটা খুব মনে পড়ে। মনে হয় বড় বড় চোখ দুটি নিয়ে  অব্যক্ত ভাষায় আমাকে যেন বলছে
আমাকে জ্যাঠা না বলে বড়বাবা বলত।
" বড়বাবা      আমি বাঁচতে চাই।
  মনে পড়ে। মনে পড়লে মনে মনে ই বলি ' না রে তোর জন্য কিছু করতে পারিনি  মা '
------------ ------------ ------------ ------------ ------------© প্রণব ভট্টাচার্য।




 

।।মানাই মিঞার মাঠ এবং অন্যান্য মাঠনাম

।।  মানাই মিঞার মাঠ  আর মাঠনাম নিয়ে কিছু কথা।।

ধান পাকল না কি!  কত দেরি আর -
দুবেলা টুকটুক করে হাতে ছড়ির মতো একটা ছোট লাঠি নিয়ে
মাঠ দেখতে যাওয়া চাই। মানাই মিঞা র।
গাঁয়ের সৈয়দ বংশীয় মানুষ। সৈয়দ মান্নান হোসেন।
আছে বাকি আর বিঘে চার। নীলবাড়ির মাঠ। অজয়ের পলিতে জমি খুব উর্বর। সার দিতে প্রায় হয়না। একদিন এই মাঠে নীল চাষ হত। নাম তাই নীল বাড়ির মাঠ। আর কলা বাগানের ঘাট। একেবারে দক্ষিণ থেকে রাস্তা চলে এসেছে গাঁয়ের মাঝ দিয়ে ঘাট পর্যন্ত। তাঁতি পাড়া ; কুমোর পাড়া ;মালাকার দের ঘরের পাশ দিয়ে ; কামার পাড়ার গা ঘেঁসে। কালীতলাকে পাশে রেখে। নীল ভেজানোর চৌবাচ্চা ছিল একটু দূরেই। হয়তো গোলাম পাঞ্জাতন ই এই নীল চাষ
তদারকি করতেন। এই রাস্তার পশ্চিমে থাকল অধিকারী বামুনদের বিষ্ণু দালান। আর এক পুকুর। নামটি তার "প্রেমসায়র "। না জানি কোন প্রেম কাহিনী ভেসে আছে তার কালো জলে।
চন্দ দের মাঠ । নাম তাই " চন্দের মাঠ "। এই চন্দরা যে বেণে
তাতে কোন ভুল নাই। কি ব্যবসা করতেন তাঁরা। এই গাঁয়ের ই
মানুষ। নদী ভেঙে বানের জলের তোড়ে মাঠ গেল ভেসে। সে কতদিন আগে কেউ বলার নাই। মাঠের নাম   "নদীপাথর "
মোষ ও ডুবে যায় এমন নরম কাদা মাটি। মাঠের নাম " মোষডোবা "। আবার মেঘের জল গড়িয়ে যায় দক্ষিণ থেকে
উত্তর হয়ে " রূপাই দহের " দিকে। মাঠ নামটি খুব সুন্দর
" মেঘনালা "।  সে যে কোন রসিক প্রবর - কে জানে!
একদিন তার ই ছিল। মাঠের নাম "রসিক চক "। " শালতলার মাঠ " বললে বোঝাই যায় যে দুটো শাল গাছ ছিল মাঠের আলে। আর " বারি মোল্লা "। সে কোন বারি সাহেব। তিনি আবার মোল্লা। এখানে কি কোন মোল্লা ছিলেন!  কে জানে!
একেবারে " কোঁদা য়। মানে একধারে। এককোনে। কোঁদার মাঠ "।  তার উপরে  এক মিঞার মাঠ।  নাম তার নাসু। তার চাতাল। ডাঙা জমি। জমির পাড়ে তালগাছে র সারি। দক্ষিণে ; পুবে। 
নাম তাই " নাসু মিঞা র চাতাল "।
কিছু মাঠ পশ্চিমে আর কিছু মাঠ পূর্বে। মাঝে জঙ্গল থেকে
গড়িয়ে আসা লাল জল বয়ে প্রাকৃতিক নালা দিয়ে। গাঁয়ের মানুষ বলে " গই "। এই গই বয়ে চলে গেছে সেই পূবে রূপাই দহের দিকে। পলাশ বনের ভিতর দিয়ে। এই গই এর উত্তরে
আরও কিছু জমি। মানা ধরনের। বালি মাটির মাঠ।
আর কত জমি যে অজয় খেয়েছে এই গাঁয়ের তার কোন
ঠিক হদিস নাই। অজয়ের জল জমে থাকে। তাই তার স্বাভাবিক নাম " জোল গাবা "। গাবা মানে নীচু খাল মতো জায়গা। নদীর বালি পড়ে " রাঙরে " নাম। ভিতর থেকে লাল
জল আর তেলতেলে সর ওঠে। ভালো ধান হয়না।
গাঁয়ের পশ্চিম দিকে মাঠ। আলাদা নাম নাই। " পছি মাঠ "
আবার দুফসলী জমি ; সব্জি চাষ ; আখ চাষ হয়। এর নাম
" তপল "। এই তপল মাঠের উত্তরে নালা। সেই গড়জঙ্গল থেকে " রক্তনালা " বেয়ে  " গড়ঘাটা " হয়ে "পাষাণ চণ্ডী " বাগানের ভিতর দিয়ে বয়ে এসে এই নালা  দিয়ে জল মিশে যাচ্ছে অজয়ে।
ম্যাপে তো দাগ নম্বর থাকে। কিন্তু মাঠ নাম তো আর থাকেনা।
পুকুরের নাম ও না। কিন্তু যখন ম্যাপ ছিলনা। ছিল " চৌহদ্দি "
লাঠি বা নল দিয়ে একটা চতুঃসীমা নির্ধারণ। প্রাকৃতিক উপাদান গুলিকেই ব্যবহার করা হত। বিশেষ বৃক্ষ ; জলাশয় ; পাহাড় ;পর্বত ; টিলা 
নালা ; নদী  ইত্যাদি দিয়েই সীমা নির্ধারণ করতে হবে। কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে " জনপদ নিবেশ " অধ্যায়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে গেছেন।
এখন ও কিছু আছে।কিন্তু বিশেষ বৃক্ষ গুলি যদি চলে যায়। টিলা টি হারিয়ে যায়। জলা টি বুজে যায়। পুকুর ; নালা তো সব  মজে এলো। 
বোঝা যায় কোন এক সময়  ভেলা গাছ ছিল। তাই নাম
" ভেলা ঘাটের দ " মানে অজয়ের এক দহ। পুকুরের পাড়ে
ছিল " ধব " " গাব " গাছ। মাঠের নাম ছিল " গাব তলার মাঠ "
কি  " ধব গোড়ে "। মানে ছোট পুকুর। সে সব গাছ গুলিকে রাখিনি। এই " গাব " এর ফলের রস দিয়ে ক্যাওট রা জাল
" গাবাতো "। দারুণ কষ।
ধব ; গাব ; ভেলা ; রিঠা ; বাঘলাল ; এসব আর দেখা যাবেনা।
মাঠ নাম থেকে সরে এসে আরও কিছু কথা বলতে হল।
মানাই মিঞা কে মনে পড়ে খুব। দু'বেলা তাঁর মাঠ দেখতে যাওয়া চাই। কতটুকু আর জমি। তারই মায়া। কোনদিন বাঁধের উপর থেকেই দ্যাখে। কখনও বা মাঠে নেমে ধান গাছে হাত বুলায়। 
আর ঐ টুকু জমির উপরে নির্ভর করে বেঁচে থাকা।
স্ত্রী  ছেলে মেয়ে নিয়ে কি করে যে সংসার চলে তার খবর আর কে রাখে। বড়ো কষ্ট। বড়ো অভাব। কার ও কাছে হাত পাততেও সঙ্কোচ। লজ্জা। তাও ঘরের সামনের জায়গা টুকু
দিতেই হল বেচে। স্ত্রী র চিকিৎসা হচ্ছেনা। এই টাকাতে যতটুকু হয়। জমিতে হাত পড়বে না কি সেই চিন্তা তেই অস্থির।
ছেলে মেয়ে দের ছোট রেখেই একদিন স্ত্রী চলে গেল।
ঐ মাঠ টুকুর দিকে তাকিয়ে সব কিছু ভোলার চেষ্টা করত।
  বিষাদময় গাম্ভীর্য ভরা মুখ। মাটির দিকে তাকিয়ে ;
সম্ভ্রান্ত  পদক্ষেপে   বড় ক্লান্ত  সে পথ চলা। হায়রে জীবন। 
" তাল দিঘি তে আজ আর ঘটি ও  ডোবেনা। নাম তবু যে তার  তালদিঘি "। দিঘি ছিল একদিন।
------------ ------------ ------------ ------------ -----©  প্রণব ভট্টাচার্য
।আমার লেখার পাঠক রাই আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেন। তাঁদের সকলকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। 
চেষ্টা করব এবার থেকে নতুন লেখা দেবার। আজকের টি যেমন।

।।রবিলাল আর তার বৌ এর কথা।।


।। মরব বলে আমি বিষ খাই নাই রে।।
তখকার সময়। সে অনেক দিন হল।
লোকের কাছে চেয়ে চিন্তে টাকা জোগাড় হত।
তারপর  ট্যাক্সি ডাকা। তখন একমাত্র বাবুদের বাড়িতে
ট্যাক্সি আসে। কলকাতা থেকে আত্মীয় রা আসে বেড়াতে।
দেশ দেখাতে মা কে। ছেলে রা নিয়ে আসে।
আর তাছাড়া গাঁ ঘরে আর ট্যাক্সি কোথা।
যদি আসে জানতে হবে কিছু একটা ঘটেছে।
বিপদ আপদ।
হ্যাঁ। ঠিক তাই।
হাসপাতাল নিয়ে যেতে হবে রবিলাল কে।
সে না কি বিষ খেয়েছে।
গাঁ থেকে লোক ছুটল দেখতে।
ফরেষ্ট ডিপার্মেন্টের কোয়ার্টার।
বীট বাবুর কোয়ার্টার আর বাকী গোটা চার ফরেস্ট গার্ড।
সামনে পিছনে থাকানো শাল বল্লী।
চারপাশে সুন্দর গাছপালা। মোটা শাল। সেগুন।
বীট বাবু ছূটিতে। নাই এখানে।
রবিলালের পাশে পড়ে আছে বিষের শিশি। বিচ্ছিরি গন্ধ
বলছে না কি  বিষ খায়নি।
" বিষ খাব বলে বিষ খাই নি আমি রে "
  না কি বলেছে এমন কথা। গোল করে ঘিরে থাকা
  লোকরা শুনেছে।
ট্যাক্সিতে চাপার লোকের অভাব হয়না কখনও।
  চল। রাত জাগতে হলে অসুবিধা নাই।
  মাল ঠিকই পাওয়া যাবে।
  ঝিমুনি  আসছে রবিলালের। চল চল আর দেরি নয়।
  তোলা হল ট্যাক্সি তে।
  ছেড়ে দিল ট্যাক্সি।
  আর ওর বৌ টা। সুন্দরী বৌটা কেঁদে উঠলো ফুঁপিয়ে।
   গাঁয়ের মেয়ে বৌ রা বলাবলি করতে করতে ফিরল যে
   ' মরলে মরল ঐ বৌ টা র জন্য '
  যারা ট্যাক্সিতে ওকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল তাদের কাছেও জড়ানো গলায় রবিলাল বলেছিল " শালা মরব বলে
বিষ খাইনি রে। এই আমি বিষ খাচ্ছি বলে বিষের শিশিটা খুলে মুখের কাছে ধরেছিলাম। কে জানে দু চার ফোঁটা পড়ে
গ্যাছে কি না " 
" শালা ঐ বৌ টা কে ভয় দেখাবার জন্যে রে "
" তা শালা বললে খাবে তো খাও ক্যানে - মরার যখন এত সাধ
" তো  তখন হাতটা কেঁপে গেল রে "

  হাসপাতালে ডাক্তার বাবু রা অনেক চেষ্টা চরিত্তি করলেন
  মারাত্মক বিষ। সারারাত গেল। ভোরের দিকে রবিলাল
  হ্যাঁ ; মরেই গেল।
  হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স করে রবিলালের ডেডবডি নিয়ে
  যারা গিয়েছিল তারা ফিরে এলো।
  আবার গাঁয়ের গরীব মানুষের পাড়ার লোকরা ভেঙে পড়ল
  রবিলালের কোয়ার্টার এর সামনে।
  কেউ কেউ বলতে লাগলো " সেই শালা কোথা "
মানে তারা বলছে পাশের কোয়ার্টার এর স্টাফ হরেনের ব্যাটা
টার কথা। সোম। সোমলাল। বেশ উঠতি যুবক। মেয়ে দেখলেই
ছোঁকছোঁক। অবশ্য রবিলালের বৌ এর সাথে তার বেশ ঘনিষ্ঠ
ভাব ভালোবাসার সম্পর্ক।
  সবাই জঙ্গল পাহারার ডিউটি তে বেরিয়ে গেলে ওরা একসাথে ই বাসায় কাটায়। সব সম্পর্ক ই হয়ে গেছে।
আর রবিলাল ও তা জানত।
অনেকে বলে রবিলাল টা ঠিক মরদ ছিলনা।

যাক রবিলালের বৌ টা বিধবা হল।
শোক তাপ ভোজ কাজ সব মিটে গেল। বৌটার দাদা ভাইরা এখানে এসে সব সারল।
বীট বাবু র হাতে পায়ে ধরে তাদের বোন টার যাতে একটা
ব্যবস্থা হয় তার জন্য অনেক কাকুতি মিনতি করে ; গাঁ ঘরের
মাথা দের সাথে দেখা করে একদিন তারা ফিরে গেল।
তাদের ই বা থাকলে চলে কি করে। নিজেদের সংসার আছে।
রবিলালের বৌ টা তারপর বীট বাবুর কোয়ার্টার এ রান্নার
কাজ করতে লাগলো। বীট বাবুর ওর রান্না খুব ভালো লাগে।
" তুমি তো রবিলালের চেয়েও মুরগী টা ভালো রাঁধো "
" বেশ বেশ আপাতত এটাই কর। তারপর দেখি "
রাতের রান্না সেরে আরও অনেক ক্ষণ বীট বাবুর কোয়ার্টার এ
থাকে রবিলালের বৌ  টা।
এখন তার চেহারা আরও ভালো হয়েছে। মুখে চোখে বেশ
ঝকঝকে ভাব।
সোম টা সবই দেখে। বলার কিছু নাই। একেবারে বীটবাবুর
আওতায়। কটকটে চোখে সোমের দিকে তাকায় সে।
শুধু বীটবাবু হলেই তো আর হবেনা। একজন স্টাফ কে নিয়ে
রেঞ্জ অফিস ;। রেঞ্জার মানুষ টি তাকে আপাদমস্তক দেখলেন। যেন কাপড়ের ভিতর পর্যন্ত দেখছেন।
" বেশ। বেশ পরে এসো একদিন। অনেক কাগজ পত্রের ব্যাপার আছে। সময় লাগবে। সকাল দিকে এসোনা। ওবেলায় এসো "। পারলে একাই এসো।
তারপর  একে তাকে নেতাদের ধরাধরি। রেঞ্জ বাবু এক নেতাকে ডেকে ওর সামনে ই বললেন " এর কেস টা তো একটু দেখতে হয় - না কি বলেন আপনারা "। আপনাদের ইউনিয়ন থেকে আমাকে একটা চিঠি দিন "।
- আজ্ঞে হ্যাঁ। বড়বাবু।
- রবিলালের বৌ কে নিজেদের অফিস ঘরে ডেকে নিয়ে কিছু
  কাগজ পত্রে টিপছাপ  সই করালেন সেই বাবু। নিজের নামটা লিখতে জানত রবিলালের বৌ।
আর বললেন " টাকা পয়সা কাউকে দেবে না "। বীট বাবু চেয়েছে না কি। "
রবিলালের বৌ ঘাড় নাড়ল। সে জানে কি লেগেছে।
যাক। একদিন আবার গেল রেঞ্জ অফিসে। বড়বাবুর দপ্তরে।
তাকে প্রায় বসিয়েই রাখলেন রেঞ্জ অফিসার। শেষ বিকেলে
কাজ ধরলেন। সন্ধ্যে হয়ে গেল। রেঞ্জ বাবু ফোন করে বীট বাবুকে যা বলার বললেন।
" শুনলাম তুমি না কি খুব ভালো মুরগী রাঁধো "। তা আজ আমাকে রেঁধে খাওয়াও। "
রেঞ্জ বাবু র কোয়ার্টার এ চলে গেল বাসন্তী। রবিলালের বৌ।
সেখানে সব কিছু দেখিয়ে দিল একজন মালী। মুখ টিপে হাসল। এ হাসির মানে বাসন্তী জানে।
রেঞ্জ বাবু সন্ধ্যের পর একটু পানীয় নিয়ে বসেন।
" বেশ গন্ধ বের হয়েছে। কয়েক পিস দিয়ে যাও না "
বাসন্তী দিয়ে এলো। রেঞ্জ বাবু তার হাতটা একবার চেপে দিলেন। বাসন্তী যা বোঝার বুঝল।
আজকের রাতটা রেঞ্জ বাবু র সাথে।
যাইহোক শেষ পর্যন্ত  এক দু বছর বাদে রবিলালের বৌ
বাসন্তী বালা র চাকরি টা হয়ে গেল। বাগানের মালিনী।
  বাসন্তী বালা দাস  স্বামী  লেট রবিলাল দাস। গার্ডেনার।
ডায়িং ইন হারনেস কেস।
এর মাঝখান টা বীটবাবু আর মাঝে মাঝে রেঞ্জ বাবু।
সোমলাল এই সময় টায় পাত্তা পায়নি। সুযোগ ও পায়নি।
  " অপেক্ষা কর সোম "। অপেক্ষা কর "
চাকরি টা তো হতে হত। বীটবাবু ও চলে যাবে। রেঞ্জ বাবু ও।
তারপর আমি তোর সঙ্গেই থাকব রে। তাবলে তুই আবার বিয়ে থা করে বসিস না যেন। "
" কি "!  কি বলছিস। ঠিক করে বল "।  একসাথে ই থাকব "
শালবনের অন্ধকারে র দিকে চেয়ে আছে সোমলাল। অসংখ্য
জোনাকি জ্বলছে সেই অন্ধকারে। মাথার উপরে একফালি চাঁদ।
সোমলাল কে চুপ করে থাকতে দেখে বাসন্তী বলে ওঠে
" শরীরে কি দাগ থাকে  না কি "
হটাৎ ই সেই অন্ধকারে সোমলাল বাসন্তী কে জড়িয়ে ধরে
গভীর আলিঙ্গনে।
সোমলালের আলিঙ্গনে বাঁধা থাকতে থাকতে ই বাসন্তী হু হু করে ডুকরে কেঁদে ওঠে।
------------ ------------ ------------ ------------ © প্রণব ভট্টাচার্য।।

 




 

।।বিধাতা পুরুষ।।


।।  কথা - সাতকাহন।।
বিধাতা পুরুষ।
কেমন সে বিধাতা পুরুষ! 
তাকে দেখতে হবে। আজ ষষ্ঠী। রাতের কোন প্রহরে এসে
তার ছেলের কপালে তিনি  কি লেখেন তাকে জানতে হবে।
এ মা একটু ছোট থেকেই ডাকাবুকো। ভয় ডর নাই বললেই
হয়। ছেলেদের মতো গাছে চাপা। সাঁতার কাটা। সমুদ্রের  ঢেউ নেওয়া। সবেতেই দামাল। স্বাস্থ্য ও ভালো।
আর বুদ্ধি। প্রখর। অঙ্ক কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়। তখনকার দিনে অঙ্ক। মানে পাটীগণিত। চতুর্থ শ্রেণী তেই শতকরা ; সুদকষা ; ভগ্নাংশ। সিঁড়ি ভাঙ্গা সরল। সরল কর। সে বলত
' সরল কিন্তু সরল নয়কো মোটেই '। যদিও সে সরল করত
সে যেমনই গরল হোক না কেন।
এই যে মেয়ে মা হয়েছে বেশ কিছুটা সময় পরে।
সংসারে উদাসীন স্বামী। শ্বশুর বাড়ির পরিবেশ ও তার মনোমত হয়নি। তবু যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে মানিয়ে নিতে।
  বাচ্চা হবার জন্য বাপের বাড়ি তে আসা। তখন তো বাড়িতেই
প্রসব। ধাইমা দের হাতে।
ঘরের মেঝেতে মাদুর পেতে শোয়া। পুব দিকে মাথা। মাথার কাছে জ্বলছে প্রদীপ দানিতে প্রদীপ। পাশে তার বাচ্চা। অতি ছোট খাটো একটা পুঁটলি যেন।
মা রাত জাগছে। এখন কত রাত কে জানে। ঘরের বাইরে বারান্দায় শুয়ে আছে সেই মায়ের মা।
ভোর রাতের দিকে সে যে কি দেখেছিল সে ই জানে। মুখ দিয়ে
একটা ভয়ার্ত আওয়াজ বের হয়েছিল। তারপর অজ্ঞান হয়ে
গিয়েছিল। তার পরদিন আর কারও সাথে কোন কথা বলেনি। নিজের মধ্যেই আত্মস্থ হয়ে ছিল।
তার একদিন পরে থেকে শুরু হল জ্বর আসা।
তখন এই এলাকায় ভূতনাথ দালাল। তিনি ই চিকিৎসা করেন।
জ্বর কমে। বাড়ে। দুপুরের পর জ্বর আসে।
অগত্যা ইলামবাজার এর কালীবাবু। তিনি এল ; এম ; এফ পাশ করা ডাক্তার। তাঁর চিকিৎসায় জ্বর ভালো হল কিন্তু শরীর খুবই দূর্বল।
সেই দূর্বলতা সহজে কাটলনা।
কয়েকমাস পরে ছেলেকে কোলে নিয়ে যেতে হল নিজের স্বামীর ঘরে।
নিজের মেজো বোন তখন একটু বড় হয়েছে। ছেলেকে আগলাতে পারবে। এই ভাবনায় নিজের বোনকে নিয়ে গেল সাথে করে।
শিশুর যত্ন তাও ঠিক মতো হয়না। কেউ মুখ বাঁকিয়ে বলে
" বার্লি তেই হবে  দুধ চাইনা "।
কিন্তু রোগ জ্বালা হলে ওষুধ তো চাই। গ্রামে পুইতণ্ডী ডাক্তার আছেন। যাই হোক মিকশ্চার দেন।
রান্না বান্না করার মতো শারীরিক ক্ষমতা নাই।
মেজবোন যেমন পারে তেমন করে।
তা আবার জামাইবাবুর পছন্দ হয়না। কড়া কথায় কান্না আসে
মেজ বোনের চোখে।
  সংসার ; স্ত্রী পুত্র দের বা শ্যালিকার প্রতি মন দেবার মন নাই। মন যে তার কোথায় কোনখানে তার হদিস হয়তো সে জানে কিম্বা হয়তো জানেনা।
দাদা মানুষ টি র মমত্ব আছে। ভাই কে বকাবকি করেন।
সংসারে মন দিতে বলেন। পূজা পাঠের পরেও সংসারে মন দেবার সময় অনেক আছে।
ভাসুরের ছেলে কেষ্ট   মেজবো নের বয়সী।
সে তার সাধ্যমতো সাহায্য করে।
বড়জা সুন্দরী। তার গর্ব আছে। স্বামী কুলটি কারখানায় কাজ করে। তার মাসমাহিনা আছে। পরিবারে কর্তৃত্ব প্রবল।
আর এই বাবু রাগারাগি করে কোলিয়ারীর চাকরি ছেড়েছেন।
ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের ছেলে। পূজা পাঠ নিয়েই থাকবেন।
তাতে কি আর আয় তখন!  ভালো কিছু শিষ্যবাড়িতে খাতির ছিল খুব। সেখানেই কেটে যেত বেশ কয়েকদিন।
  এদিকে তার স্ত্রী র  ; সেই মায়ের আবার জ্বর আসছে।
প্রায় প্রত্যেকদিনই কাঁথা চাপা দিয়ে পড়ে থাকা।
আর যন্ত্রণা বাড়ে এগারো বারো বছরের বোনের। এত কাজ সে পারে। চোখে জল আসে। দিদি   বলে   'কি করবি বল '
একটু কষ্ট কর। বাবাকে চিঠি লেখ। আমাকে এখান থেকে
নিয়ে যাক "।  হয়তো কোন এক চিঠি পৌঁছেছিল।
  দিদির অযত্ন ; জামাইবাবুর ব্যবহার প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ করেছিল
সেই মা য়ের ভাইকে। সে ভাই সেখানে গিয়ে রাগের মাথায়
গোটা পরিবার কে '  যা কথা শোনানোর শুনিয়ে ' রাগে গজগজ করতে করতে ; পাড়ার লোকদিকে ডেকে জানিয়ে
  বোন ; দিদি আর তার পুঁচকে বাচ্চাটা আর বাক্স প্যাঁটরা নিয়ে চলে এলো  বাপের বাড়ি তে।

সেই মা কি জানত এই তার শেষ যাওয়া!
  সে কি জ্বরগ্রস্ত শরীরে পিছন ফিরে তাকিয়েছিল!
তার স্বামী কি তাকে স্কুল মোড়ের যেখান থেকে একটি বাস ছেড়ে যায়  সেই জায়গা পর্যন্ত এসেছিল!
তাদের বিদায় জানাতে!
কে জানে!

------------ ------------ ------------ ------------ ------------ এই পর্ব শেষ।




 

।।সে এক সব হারানো গাঁ য়ের কথা।।


।।  সে এক সব হারানো গ্রামের কথা।।  প্রণব ভট্টাচার্য ।  ১ ম পাতা
সে এক গ্রামের কথা। গাঁ ঘরের কথা। আশপাশের কথা।
নদী আছে পাশে। লোকে বলে নদী। পণ্ডিতেরা বলবেন নদ।
কবিও বলেন তাই। " বাড়ি আমার ভাঙন ধরা অজয় নদের বাঁকে "। ছোট্ট কুনুর  কবির  কোগ্রামের কাছেই মিশেছে অজয়ে। ছিল এক প্রাচীন দহ। ভ্রমরাদহ। বিখ্যাত সে দহ।
সওদাগর দের নৌকা বাঁধা থাকত তার ঘাটে। সে কি আর আজকের কথা। " সপ্তডিঙা " ভাসত জলে। বাণিজ্যে যেত।
" কণ্টকদ্বীপ " কে ডান হাতে রেখে  ডিঙা গিয়ে পড়ত ভাগীরথী তে। স্রোতের টানে দক্ষিণে সাগর মুখে।
কত কথা এই অজয়ের। সে পূর্ব বাহিনী। তাই পৌরাণিক মতে
সে নদী। কত তার ঘাট। আর ঘাট মানেই তীর্থ।
আবার ঘাট মানেই ব্যবসা বাণিজ্য। ছোট বড় কত নৌকো।
মালের ওঠা নামা। পাড়ে বলদ গোরু ; মহিষ এর গাড়ি।
এ গ্রামের ঘাটের নাম " কলা বাগানের ঘাট "। দুপাশে তার কলাবাগান। মাঠের নাম 'নীলবাড়ির মাঠ '। নীলের চাষ হয়।
পাশেই নীল পচানো র মোটা ইঁটের চৌবাচ্চা। কোম্পানি র সাহেব দের পক্ষে তদারকি করেন গ্রামের সৈয়দ বংশের কোন
এক করিৎকর্মা মানুষ। হয়তো নাম তার গোলাম পাঞ্জাতন।
এঁদের পূর্বপুরুষ খুষ্টিগিরি দরগা শরীফের সুফী সাধক সৈয়দ শাহ আব্দুল্লাহ কেরমানী সাহেবের অধস্তন ৬ ষ্ঠ পুরুষ সৈয়দ
শাহ মোহাম্মদ আলী তকী সাহেবের পুত্র সৈয়দ শাহ আলী
জাওয়াদ (১৭০৭- ১৭৯০)  একদিন এসে এই গ্রামের নদী তীরে র কিছু দূরে উঁচু ঢিবির উপরে তাঁর আস্তানা স্থাপন করলেন।চারদিকে  ঘণ ঝোপ জঙ্গল। তাল ; খেজুর ; নিম ; বেল ; ডেঁয়ো মাদার ; চাকলতা গাছে ঘেরা এই মনোরম তপোবনের মতো স্থান তাঁর খুব পছন্দ হয়েছিল। এখানেই তিনি তাঁর খানকাহ্
স্থাপন করলেন। কথিত আছে গুরুপ্রদত্ত নীমের দাঁতন কাঠি
এখানে আসার পরই সবুজ সজীব মুকুলিত  হয়ে উঠেছিল।
তিনি সেই দাঁতন কাঠি পাশেই পুঁতে দিয়েছিলেন। বড় এক দিঘির পাড়ে। প্রবীণ রা বলতেন তাঁরা সেই গাছ দেখেছেন।
ভক্তি র আতিশয্যে ডাল ভেঙ্গে নিতে নিতে একদিন সেই গাছ
মারা যায়।
ইউনানি চিকিৎসা য় তিনি খুবই দক্ষ মানুষ ছিলেন। সাপের কামড়ের ভালো ওষুধ জানতেন।
বর্ধমান রাজের পেটের অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক রোগের উপশম ঘটিয়ে  তিনি নাকি প্রায় ১৪০০ বিঘা মতান্তরে ৭০০ বিঘা নিষ্কর সম্পত্তি লাভ করেন। রাজার কাছে চেয়েছিলেন মাত্র
চৌদ্দ হাত পরিমান জায়গা। রাজা দিলেন বিশাল সম্পত্তি।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ১ ম পাতা শেষ
 
।। সে এক গ্রামের কথা।। পাতা নং ২
নদী ধারের উঁচু ঢিবির উপরে হাঁড়ি পাড়া। বেলতলাতে কঞ্চি হাতে শনের মতো পাকাচুল বুড়ি পাহারা দেয়। মানুষের মাথার সাইজের বেল। আর তেমন ই মিষ্টি।
হাঁড়িকাঠে বলি দিত কি না জানা নেই। কিন্তু নদী তে নৌকা বায়। এপার ওপার করে। ওপারে নারানপুর ; উদয়পুর ; ক্ষুদ্দুপুর এমন সব গ্রামের লোক পারাপার করে। অযোধ্যা হাটে আসে। বেচা কেনা করে। মাছ ধরে। খালুই ভর্তি নদীর মাছ কেনার জন্য লোকে কাড়াকাড়ি করে।
আবার শোনা যায় ডাকাতি করতে অন্য দলের সাথে যায়।
  ভাড়া খাটে। রাজহাটের হাঁড়ি দের সাথে ভালো সম্পর্ক।
আর ওরা তো পাকা ডাকাত। পাষাণচণ্ডী বাগানে কালী র পুজো করে ওরা নদী র ওপারে যায় ডাকাতি করতে।
ডাকাতির মাল জমা রাখে লোকে বলে ; মোড়ল ঘরে ; এদিকের বেনে ঘরে।
  বনকাটি র মুখুজ্জে ; চাটুজ্জে ; রায় বাবুরা নানা রকম ব্যবসা
করে। প্রায় একসাথে জোট বেঁধে থাকা । ব্যবসা করে বেশ বড়লোক হয়েছে সবাই। তার মধ্যে মুখুজ্জে বাবুরা লাক্ষা বা গালার ব্যবসা করে খুব বড়লোক। বিরাট তাদের প্রাসাদ।
প্রাসাদে গুপ্ত কক্ষ। রায় বাবুদের প্রাসাদ সে ও দেখার মতো।
রায় বাবুদের বিরাট কালীপূজো। বিরাট তান্ত্রিক তাদের পূর্বপুরুষ রা। সেনপাহাড়ী র সেন রাজাদের কুল পুরোহিত ছিলেন না কি তাঁদের পূর্ব পুরুষ। ওপার বাংলা থেকে সেন রাজাদের সঙ্গে এসেছিলেন। কালীমন্দির। বিষ্ণু দালান ;
উত্তর মুখী দুটি শিবমন্দির। ১৭০৪ শকাব্দে নির্মিত হয়েছে
প্রথম দুটি মন্দির। তারপর আবার ১৭৫৬ শকাব্দে পাশাপাশি
তিনটি  দেউল রীতি র শিবমন্দির। সামনে টেরাকোটা র কাজ।
দুর্গা ; গণেশ ; দশমহাবিদ্যা।
চাটুজ্জে দের ও নানা ব্যবসা। তাদের ও বিরাট প্রাসাদ। গুপ্ত কক্ষ। পাশে মন্দির। তাদের পরিবারের এক বধূ তাঁর স্বামী মারা যাওয়ার পর বানিয়েছিলেন মুখোমুখি দুটি চমৎকার গড়নের শিবমন্দির। তাতে ছিল চমৎকার টেরাকোটার কাজ।
তাঁকে বলা হত ' বরানগরের দিদি '। পাঠক ভাবুন একবার কোথায় বরানগর আর কোথায় বনকাটির জঙ্গলে র দেশ।
সম্পর্ক হয়েছিল এই ব্যবসাসূত্রেই।
রায় বাড়ির আর এক শাখার নন্দকুমার রায় ; বনপাশ কামারপাড়ার মিস্ত্রি দের দিয়ে  বানিয়েছিলেন দুর্গা দালান ; বিষ্ণু দালান ; আর উত্তর মুখী দুটি শিবমন্দির। ১৭৩৯ শকাব্দে।
আর মুখুজ্জেরা সর্বাপেক্ষা ধনী। তাঁরা তাঁদের দুর্গাদালান ওয়ালা  প্রাসাদের সামনে বানিয়েছিলেন টেরাকোটা শোভিত
অসাধারণ শিবমন্দির ১৭৫৪ শকাব্দে। আর সেই গোপালেশ্বর শিব মন্দিরের গঠন অনুযায়ী ১২৪২ বঙ্গাব্দে অসামান্য অলংকৃত  পিতলের রথ। যা দেখতে ছাত্র দের নিয়ে গোরু গাড়িতে চেপে এসেছেন শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু। মুকুল দে।
অমিয় ববন্দ্যোপাধ্যায় ; গুরুসদয় দত্ত  ইত্যাদি বড় মাপের  মানুষেরা।
আজও তা রসিক  দর্শক দের মোহিত করে।
ঘোর কাপালিক রায় পরিবারের পূর্ব পুরুষ রা। কালীথানে
তাঁদের পূজার মহা আড়ম্বর। ছাগ ; মেষ ; মহিষ বলি সেদিন ও
হত। আজও হয়। তন্ত্র মতে পূজা। শ্মশান থেকে শুরু যার কৃত্যক। ঘোর অমানিশায়  তমসার দেবীর মহাপূজা।
এই রায় পরিবারের ছিল  প্রচণ্ড দাপট। মধু রায় তো দুর্ধর্ষ।
  রায় দের বাহিনী তে আছে দুর্দান্ত সেনপাহাড়ী র মুচিরা।
সেই সময়কাল যে মারাত্মক।
১৭৭০ এর মহা মন্বন্তর এর পর সব ছারখার হয়ে গেছে।
গ্রামের পর গ্রাম উজাড়। না খেতে পেয়ে মারা গেল লাখে লাখে মানুষ। যে চাল পাওয়া যেত টাকায় ২-৩ মন করে তার দাম
তিন টাকা সের। কে কিনবে। চাষের জমি সব পড়ে আছে।
কে চাষ করবে। যে করবে সে ই তো নাই। " বীরভূম তখন বন্ধ্যা জনমানব হীন এক দেশ " সরকারি রিপোর্ট। হিগিনসন সাহেবের।
পশ্চিমের পাহাড়ি এলাকা থেকে নেমে আসছে দুর্ধর্ষ ডাকাতের দল। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে যারা বেঁচে আছে তখনও। দু তিন  শো থেকে হাজার লোক দিনে দুপুরে ডাকাতি করছে।
দিনের আলোয় লুঠ হল গঞ্জ ইলামবাজার। আরস্কাইন সাহেবের কুঠিবাড়ি। এপারে অযোধ্যার জনৈক বলিনাথ  চট্টোপাধ্যায় এর বাড়িতে ডাকাতি হল। ১৭৮৯ সালে।
স্থানীয় ভূস্বামী রাও নিজেদের নিরাপত্তার জন্য পাহারার ব্যবস্থা করছেন। সোজা কথায় তারাও ডাকাতের দল গড়ে তুলছেন। সেই দল গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত লোক নিয়ে আসছেন বাইরে থেকে।


------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ২ পাতা শেষ

।। সে এক গ্রামের কথা।। ৩ নং পাতা
সে এক সাংঘাতিক পরিস্থিতি। ঠিক এই সময়কালেই চলছে বর্গী আক্রমণ। সীমাহীন তাদের অত্যাচার। গ্রামের পর গ্রাম লুঠ করে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। " সেনভূম " কে পুড়িয়ে ছারখার করে দিল। অজয় পেরিয়ে এসে সেনপাহাড়ী জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মানকরের দিকে গেল লুঠেরা দের দল।
এই এলাকার কি যে  পরিস্থিতি হয়েছিল তার আনুপূর্বিক বিবরণ নাই।
এই এলাকায় প্রাচীণতম মন্দির গড়ে উঠেছে ১৭০৪ শকাব্দে।
অর্থাৎ ১৭৮২ সালে। তারপর একের পর এক গড়ে উঠেছে পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের ও বেশী  সময় ধরে।
প্রাসাদ মন্দির ইত্যাদি গড়ে তোলার পিছনে নিজেদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি র বিষয় টি অবশ্যই আছে। কিন্তু মানুষ কে কাজ দেওয়ার বিষয়টি কেও  অগ্রাহ্য বোধ হয়  করা যাবেনা।
আবার শিবমন্দির স্থাপনার বিষয়ে যেটা শোনা যায় শিউ ভাটের নেতৃত্বে বর্গী দের দল যে গ্রামে শিবমন্দির দেখত সে গ্রাম না কি আক্রমণ করতনা। রাঢ়বঙ্গে যত শিবমন্দির আছে সারা ভারতে অন্য কোথাও নেই।
সেনপাহাড়ী ঃ  রেনেল সাহেবের ম্যাপে( ১৭৭৯) এই সমগ্র এলাকা সেনপাহাড়ী নামেই চিহ্নিত। পণ্ডিত প্রবর সুকুমার সেনের মতে বাঙ্গলার বিখ্যাত সেন রাজাদের পূর্ব পুরুষ রা বাঙ্গলায় এসে প্রথমে এখানে এই গড়জঙ্গল এলাকা য় তাদের বসতি স্থাপন করেছিলেন। নাম তাই সেনপাহাড়ী। অজয়ের ওপারে তাঁরা উত্তরে অনেক দূর পর্যন্ত গিয়েছিলেন।
ওপারে পরগণা সেনভূম।
১৭৪০-৪৪ সালের মধ্যে বর্ধমানের রাজা চিত্রসেন দিল্লির বাদশাহ  মহম্মদ শাহের ফরমান অনুযায়ী সেনপাহাড়ী পরগনার অধিকার লাভ করেন। যদিও আগেই তাঁরা এই এলাকা দখল করেছেন। ঐ সময়কালের মধ্যে রাজা চিত্রসেন
সেনপাহাড়ী পরগনার পুনর্গঠন করেন। গড়জঙ্গলের চারপাশের গ্রাম গুলির ভূস্বামী বা প্রভাবশালী ব্যক্তি দের
তিনি আনুকুল্য প্রদর্শন করেন। তাদের নিজেদের নিরাপত্তা র জন্য পাহারাদার দের দল গঠনের অনুমতি দেন। নিজে পাহারাদার ঘোড়সওয়ার এর দল তৈরী করেন। তাদের প্রশিক্ষণের জন্য " ঘোড় দৌড় " এর মাঠ আছে এলাকার দু তিন জায়গায়।
তিনি নিজে " গড়জঙ্গলের মধ্যে ইছাই ঘোষের গড় বেড়ী এলাকায় "  কেল্লা তৈরী করে কামান এনে বসান। কামানে ফার্সি ভাষায় লেখা ছিল রাজা চিত্রসেন। ঝাড়খণ্ড বিহার থেকে
" সিং " পদবী র ক্ষেত্রী যোদ্ধা দের এনে  কোটালপুকুর গ্রামে
এনে বসান। কেল্লা পাহারার জন্য। কেল্লাদার হায়ার সিং।
তখন ইংরেজ দের সাথে তাঁদের অশান্তি বেধেছে। যে কোন সময় আক্রমণ করার সম্ভাবনা। রাজা তাই নিজেদের নিরাপত্তা র জন্য বর্ধমান থেকে দূরে এই গড় জঙ্গল এর মধ্যে কেল্লা বানিয়েছিলেন।
চিত্রসেনের পর তাঁর উত্তরাধিকারী রাজা ত্রিলোকচন্দ্রের সময়
মুর্শিদাবাদ এর নবাব মীরকাসিম এবং ইংরেজ দের সাথে বিরোধ চরমে ওঠে। স্বাধীনচেতা ত্রিলোকচন্দ্র সিরাজের বিরুদ্ধে যে চক্রান্ত হয়েছিল তাতে যোগ দেননি। স্বাভাবিক ভাবে মুর্শিদাবাদ দরবারে প্রায় ব্রাত্য হয়ে গেছেন।
ইংরেজ রা উত্তরোত্তর রাজস্ব বৃদ্ধি করেই চলেছে। রাজা ও বোধহয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেক সৈন্য সংগ্রহ করছেন এমন সংবাদ ইংরেজ রা পাবার পর রাজার বিরুদ্ধে সৈন্য দল নিয়ে মেজর হোয়াইট বর্ধমান অভিমুখে রওনা হলেন।
রাজা অনুমান করেছিলেন ই।
সেনপাহাড়ী কেল্লায় রাজা অবস্থান করছেন এই সংবাদ পেয়ে
মেজর হোয়াইট সৈন্য দল নিয়ে কেল্লা আক্রমণ করেন।
  কেল্লা অবরুদ্ধ হয়। কেল্লাদার হায়ার সিং কে বন্দী করা হয়।
কামান গুলি দখল করে নেওয়া হয়।
  রাজা কে কিন্তু পাওয়া যায়নি। তিনি তার আগেই কেল্লা পরিত্যাগ করেছিলেন।
ইছাই এর সময়ের গড় আর রাজা চিত্রসেন এর কেল্লা র স্মৃতি
রয়ে গেছে এখানকার এক স্থান নামে। মৌজা - গড়কেল্লা খেড়োবাড়ি। জে এল নং - ২৭।
আর মাথা উঁচু করে গৌরাঙ্গপুর মৌজায়  জে এল নং ২৮
দাঁড়িয়ে আছে ইছাই ঘোষের দেউল। ইছাই ঘোষের স্মৃতি বিজড়িত স্থানে অবস্থিত। দেবদেউল নয়। স্মৃতি দেউল।
সেনপাহাড়ী পরগনা ই আজকের কাঁকসা থানা এলাকা।
সেনপাহাড়ী নাম এখনও সরকারি রাজস্ব দপ্তরে ব্যবহৃত হয়।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ৩ নং পাতা শেষ।

 
।। সে এক গ্রাম।।  ৪ নং পাতা আরম্ভ
সেনপাহাড়ী র জঙ্গল মহল তখন তার নামই হয়ে গেছে " লা মহল "। লা - মানে লাক্ষা বা গালা। পলাশ ; কুসুম ; কুল ; অর্জুন ; শাল ; পাকুড় এসব গাছে র ডালে বাসা বাঁধে লক্ষ লক্ষ লাক্ষা কীট। তাদের দেহনিঃসৃত রসে ই দেহ আবরণ তৈরী করে। সেই সব ডাল ভেঙ্গে আনে আদিবাসী মানুষেরা।
জঙ্গলের মধ্যে সরস্বতীগঞ্জ তখন তসর গুটিপোকার গুটি
বেচা কেনা র কেন্দ্র। খয়রা রা ভালো কাঠকয়লা তৈরী করে।
স্বর্ণকার মহলে এই কাঠকয়লার খুব কদর। আরও কত বনজ দ্রব্য। সবমাল  জঙ্গল থেকে ছোট ডিঙি নৌকো য় করে " রক্তনালা "
দিয়ে বনকাটির 'গড়ঘাটা ' হয়ে " পাষাণচণ্ডী " তলাকে বাঁয়ে রেখে সাতকাহনিয়ার কলাবাগানের ঘাটে এসে এখানে মাল তুলে চলে যায় গঙ্গাপুরের ঘাটে। তারপর ইলামবাজারের শিমুল তলার "সাহেব ঘাটে "। কখনও এ গাঁয়ের জন্য আলাদা নৌকো র ব্যবস্থা করতে হয়। ছোট খাটো গাঁ নয়। শোনা যায় ষাট ঘর তাঁতি আর ষাট ঘর কুমোর। এখানকার কুমোর দের জিনিসের কদর ই আলাদা। যেমন মাটির বোতল ; তেমনই
সব অন্যান্য জিনিস। এখানকার তাঁতিদের সব মাল যায় ইলামবাজার থেকে সুরুলে। মালাকার দের বাজি র খুব রমরমা। কি নাই এ গাঁয়ে। সব জাত আছে। কত পেশার মানুষ।
কত মানুষের আনাগোনা। মালপত্র বেচাকেনা। কারিগর দের
বিরাট গ্রাম। 
বোরেগী রা আছে। না জানি সে কোন কমললতা কি রামী র
প্রেমের স্মৃতি তে এক পুকুরের নাম " প্রেমসায়র "। পাড়ে তার
কর্মকার ; স্বর্ণকার দের পাড়া। কুমোর রা আছে গোটা গাঁয়ে ছড়িয়ে। ঘোষ ; সেন ; শীল ; কর ; বেণে ; দে ; গঁড়াই  রা আছে। আছে নানা পদবীর ব্রাহ্মনরা। লায়েক ; অধিকারী ; চক্রবর্তী ; মুখুজ্জে ; নানা পদবী। সেন বাবুরা উকিল। তাম্বুলী হালদার রা নানা ব্যবসা তাদের। ধান চাল মুড়ি মনোহারি মহাজনী।
" বুড়ো সাহেব " এর এখন বেশ নাম ডাক। প্রথম দিকে বনকাটির " রায় " দের সাথে দ্বন্দ্ব বেধেছিল। তারপর যাক আর অশান্তি হয়নি। যে সুফি সাধক এসে এগাঁয়ে আস্তানা পেতেছিলেন এখন তিনি বেশ প্রভাবশালী।তিনিই " বুড়ো সাহেব " নামে পরিচিত।  অনেক জমি পেয়েছেন বর্দ্ধমান রাজাদের কাছ থেকে। সে সব জমি চাষ করাবার জন্য আবার নিজেদের নিরাপত্তা র জন্য বিহার ঝাড়খণ্ড থেকে বেশ কয়েকঘর জোলা মোমিন কে নিয়ে এসেছেন। কয়েক পুরুষ আগেও এরা ছিল নিম্নবর্গের হিন্দু।
জাতপাতের জ্বালায় উচ্চবর্ণের অত্যাচারে ধর্মান্তরিত হয়েছে।
ভালো লাঠিয়াল ; তীরন্দাজ।
নদীর ওপারে নহনা ; কানুর ইত্যাদি গ্রামের অনেক মানুষ
এই সুফি সাহেবের ভক্ত শিষ্য হয়েছেন।  প্রতি সপ্তাহে তারা আসে।
নিম্নবর্গের এই সব মানুষেরা একদিন সহজযানী তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে মুক্তি র স্বাদ পেয়েছিলেন। তামার বলয় পরে " পোড়েল " রা হয়েছিলেন বৌদ্ধ স্তুপের পূজারী।
ডোমরা পুরোহিত। " ডোম্ব ডোম্বনী "দের তখন খুবই কদর। ডোম্বনীকে  বাদ দিয়ে তো আর "তন্ত্রের দেহসাধনা " সম্ভব নয়।
" দেহভাণ্ড ই যে ব্রহ্মাণ্ড "। দেহসুখের মাধ্যমে চিত্তসুখের সন্ধান। " সেনপাহাড়ী র জঙ্গলভূমিতে তখন তন্ত্র সাধনায় অনেকে মত্ত । তাঁদের দেবী "সুহ্মেশ্বরী "। তিনি বৌদ্ধ তারাদেবী।

তারপর সেই সহজযানী বৌদ্ধ ধর্মের শেষ অবশেষ ও মুছে গেল একদিন।
কেউ মুসলমান হলেন কেউ আউল বাউল বোষ্টম নেড়ানেড়ি র
দলে ভিড়লেন । এলেন " ধর্মঠাকুর "। এই বর্গের মানুষেরা আবার মনের মতো ঠাকুর পেলেন। বুধোরায় হলেন ধর্মঠাকুর। বা ধর্মঠাকুরের নাম হল " বুধোরায় "। শিব ও হলেন বুদ্ধেশ্বর শিব।
" সুহ্মরায় " হলেন আরেক ধর্মঠাকুর। 
ধর্মঠাকুর হয়ে উঠলেন রাঢ় দেশের সার্বজনীন দেবতা।
ধর্মঠাকুর এক অতি চমৎকার সংশ্লেষণের দেবতা। তাঁর মধ্যে মিশে গেছেন কত জন। প্রাচীন ধর্ম ; শিব ; বুদ্ধ ; যম ; সূর্য।
আবার মনে হয় তার মধ্যে ঘোড়ায় চড়া যোদ্ধা দের স্মৃতি ও
যুক্ত হয়ে গেছে।
ধর্মমঙ্গল কাব্যের বীর কালু ডোম হয়ে গেছেন কালুরায়।
১৩ ই বৈশাখ তাঁর পূজা।
অজয়ের এপার ওপার দুপার জুড়েই নানা থানে বিরাজ করছেন  মাটির ঘোড়ার স্তুপের মধ্যে বাবা ধর্মরাজ।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ৪ নংপাতা শেষ

 
।। সে এক গাঁয়ের কথা।।  ৫ নং পাতা আরম্ভ।
সে এক গাঁয়ের কথা। যার কথার কোন শেষ নাই। আর কথা কবে কমে হয়েছে। সে হয় পাঁচ না হয় সাত কাহন কথা।
" অসুর কাহানী " র মতো "সাতকাহানী। অজয় তীরের জঙ্গল ভূমিতে প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষরা বিচরণ করত। হয়তো লোহা পাথর থেকে লোহা গলিয়ে বের করার কৌশল জানা
" অসুর " জাতের লোকরা ছিল একদিন।   ।
    সাতকাহানী; সাতকাহন ;  সাতকাহনিয়া। নামেই তার মজা ভরা। কত কাহানী। সত্যি বলছি শুনে শুনে রাত কাবার হয়ে যাবে। তাই আগে নাম টা বলিনি। বললে তো অনেক কথা বলতে হয়। চারপাশের কথা না বললে ও বোঝা যায়না এ গাঁ কে।
" কাহন " -খড় গোনার এক বড় একক। চার আঁটিতে এক গণ্ডা। কুড়ি গণ্ডায় এক পন। ষোল পনে এক কাহন। মানে
১২৮০ আঁটিতে এক কাহন। এবার সাত কাহন। গল্প আছে সাত কাহন কড়ি দিয়ে কেনা এ গাঁ। কে যে কবে কার কাছ থেকে কিনেছিল তার কি আর হদিস মেলে ছাই। এত বড় ছড়ানো এ গাঁ যে সাত কাহন খড় বিছিয়েও কুলোয় না।
তিন ; পাঁচ ; আর এই সাত তো আমাদের পিছু ছাড়েনা।
সাত নিয়ে ই কত কথা। সাত পাকে বাঁধা।

গাঁয়ের মাঝখানে " বৈরাগী বটতলা "। কোন বাবাজী যে পুঁতে ছিল এর চারা সে কে বলবে! গ্রামের প্রাচীনত্বের স্মারক সে।
অতি প্রাচীন তমাল তলায় ছিল বুড়োবাবাজির আখড়া।
অনেক বাবাজী বোষ্টমের আখড়া ছিল একদিন। এখনও টিকে আছে এক আখড়া। এ গাঁ থেকে রাধারমণ বাবাজী হাতে হ্যারিকেন ঝুলিয়ে নদী পেরিয়ে যেত ওপারে ইলামবাজারে বলরাম বাবাজীর আখড়ায়। সে ও কি কম দিন হল।
এ গাঁয়ের ই মানুষ রজনীকান্ত হালদার।  তাঁর গুরু জয়দেব কেন্দুলী র কাঙ্গাল ক্ষেপাচাঁদ। সে আশ্রম ; মহোৎসব ল চলে।
" বুড়ো সাহেব "এর উত্তর পুরুষ রা সরকার কে জমি দান করেছিলেন। সেখানেই গড়ে উঠেছিল শতবর্ষ প্রাচীন " ডাকবাংলো "। অজয়ে র গতিবিধির উপরে নজর রাখার জন্য। বারবার বিধ্বংসী বন্যা  হয়েছে। সেই ১৭৮৭ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত। ' ৭৮ এর স্মৃতি এখনও এখানের অনেকের কাছে দুঃস্বপ্ন।
অজয়ের দক্ষিণে বন্যার জল আটকানোর জন্য মাটির বাঁধ
দেওয়া হয়েছে। সে ও কম দিন হল না। শত বর্ষ পার করেছে।
বারবার সে মাটির বাঁধ ভেঙ্গেছে। ভেঙ্গে বন্যার জল বয়ে গেছে
অজয়ের এক প্রাচীন খাতে। " রূপাই চণ্ডী তলার পাশে রূপাই দহ হয়ে বসুধার কালীদহ। সেখান থেকে চলে গেছে পূর্বে মৌখিরা হয়ে পাণ্ডুরাজার ঢিবির দিকে। সেখানে গিয়ে আবার
মিশে গেছে অজয়ে  এই জলধারা। রূপাই চণ্ডী তলার পাশে ই
" রাজাপোতার ডাঙ্গা "। একটা ছোট ঢিবি। দহে একবার একটা প্রাচীন মাস্তুলের টুকরো পাওয়া গিয়েছিল। বোঝা যায় একদিন ; সে অনেক পুরনো দিনে এই জলপথ ব্যবহার হত।
এই " রূপাই চণ্ডী " তলার যাত্রার আসর ছিল খুবই বিখ্যাত।
কলকাতার সব বড় যাত্রাদলের নট নটী রা এখানে যাত্রা করে
গেছেন। বিখ্যাত " সত্যম্বর অপেরা র বাঁধা আসর ছিল।
যাত্রা দেখতে গোরু গাড়ির মেলা লেগে যেত। মানুষ আর মানুষ।

গাঁয়ের পুবদিকে ছিল বিশাল আমবাগান। কত রকমের আম।
কত তার নাম। খইনাড়ু ;  তলায় ছেলেদের দুপুরের ভিড়। আর তালগাছ। যেমন লম্বা। তেমনই তার তাল। এত তাল গাছ পুকুর পাড়ে যে জলে রোদ পড়ে না সহজে। আর সেই পাকা তালের
আঁটি চুষে বা তালের মাড়িতে দুটো মুড়ি কোনমতে যোগাড় করে সেই খেয়ে দিন পার করেছে এ গাঁয়ের গরীবেরা।
সে তো এই পঞ্চাশ ষাট বছর আগের কথা।
তারপর একদিন সেই বিরাট আমবাগান কাটা পড়ে গেল। বাবুরা বেচে দিলেন। একমাস ধরে তাঁবু খাটিয়ে করাতী রা
বাগান কাটল। বাবুদের বড় লোভ। সব না কি চলে যাবে। খাস হয়ে যাবে। তার আগেই বেচে দাও। এসব কথা  পরে বোঝা।
পুকুর পাড় গুলো ফাঁকা হয়ে গেল। সেই তাল খেজুরের সারি আর রইলো না। গ্রামসীমানার বড় বড় গাছ ; নালার ধারের সব গাছ ; এমনকি পুকুর পাড়ের বট ; অশ্বত্থ ও কাটা পড়ল।
পুকুরে চান করে দিদিমা ঠাকুমা মা মাসীরা পিতলের ঘটি করে
তার গোড়ায় জল দিত। বৈশাখে জলসত্রের সময় ভিজে বুট কলাই ; একটু গূড় ও দিতে দেখেছি। সব হারিয়ে গেল।

বাউরি রা এই গাঁয়ের অনেক পুরনো। কোঁড়া দের আনানো হয়েছে। নীলকুঠি র কাজে ; পুকুর কাটানো ; বা চাষের কাজের জন্য। নদী বাঁধ তৈরী র সময় অনেক মজুর লেগেছে।
মাল রা ও  সেই ভাবে এসেছে। কি ওস্তাদ না ছিল এই মাল আর কোঁড়া রা লাঠি খেলায়। হালদার বাবু দের পাহারাদার এর কাজ ও করেছে। বাবুদের খিদমতগারী করেছে কত জনে।
আরও কত কি! সহজে কথা ফুরাবে না। এত কথা আছে।
আছে সব গাঁ ঘরেই।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ৫ নং পাতা শেষ


।। সে এক গাঁয়ের কথা।।
একদিন সবই ছিল। অধিকারী বামুনদের বিষ্ণু মন্দিরর সামনে দোল উৎসব ; লায়েক বাবুদের দুর্গাপূজা ; দশহরা ;
কোঁড়াদের মনসা পুজো ; হালদার বাবুদের সরস্বতী পুজো
আখড়ায় মহোৎসব এসব নিয়েই আনন্দে মাতত সেদিনের গ্রাম। ভরা ভরন্ত সে গ্রাম।
  তারপর একদিন বর্ধমান জ্বর ; ম্যালেরিয়া ; কলেরা ; প্লেগের
আক্রমনে গাঁ প্রায় উজাড় হয়ে গেল। যে যেদিকে পারল পালালো। কে যে কোথায় গেল! অনেক খুঁজেছি। তাঁতীরা অযোধ্যা ; ইলামবাজারের সুখবাজারে। অধিকারী ব্রাহ্মণ রা
রামচন্দ্রপুরে ; কলুরা ডাঙ্গাল বসুধায় ; মালাকাররা গুসকরায়
শীলরা ভুঁয়েরা ; লায়েক বাবুরা তাঁদের নিজেদের জায়গায়।
কুলটি চিনাকুড়ি। অনেকের কোন সন্ধান নাই। কে কার খোঁজ রাখে আর।
তবু মরেবেঁচে একদল রয়ে গেল সেই মরাগাঁয়ে। আজকের গাঁয়ের উত্তরে সে মরা গাঁ। মাটির ঘরের বাস্তুভিটা গুলো ছোট বড় ঢিপি। মোরাম চাতাল ; ডোবা ; শরঝোপ ; বৈঁচি ; বুনো কুলের ঝোপ। মাঝে মাঝে ফুটে ওঠে লতা কৃষ্ণচূড়া। ষাট তলায় বুনো বেলী ফুল ফোটে। কালীতলার লম্বা খেজুর গাছটায় থোকা থোকা খেজুর ধরে। বড় বাঁধের পাড়ে লম্বা ফলন্ত  জামগাছ টায় লম্বা রসালো টুসটুসে জাম এখনও ধরে।
বুড়ো সাহেবের আস্তানার চারপাশে লম্বা লম্বা তালগাছ গুলো
রয়ে গিয়েছে। কবরস্থান বলে।
পুরনো মানুষেরা আর কেউ নেই। সে সব গল্প বলবে কে। ডাকাতির  গল্প। মারামারি লাঠালাঠি র গল্প। বাবাজী বোষ্টমদের গল্প। বাউরী ঘরে নতুন কোন সুন্দরী বৌ এলো।
তারপর তার কথা। সরকার বাউরী ঘরের মেয়ে কে বিয়ে করল। হাঁকু মিঞা কুমোর ঘরের মেয়েকে বিয়ে করল। নাম হল তার কুলসুম। মোতি চাচা ডাকবাংলোর খালাসি। প্রতিদিন সে সাইকেল নিয়ে সাগরপুতুল পর্যন্ত যায়। তার দাপটে বাঁধে একটা গোরু ওঠার উপায় নাই। চাচা সাগরপুতুল থেকে নাগকেশর ফুল এনে দিত। কচি শ্যাওড়া ডাল থাকত তার ক্যারিয়ারে। ঘরের চালে গোঁজার জন্য সেই ডাল কত মেয়ে বৌ চেয়ে নিত। একটা নতুন র‍্যালে কোম্পানির " হাম্বার" সাইকেল
কিনে চাচা র কি আনন্দ। কাঁধে র গামছা দিয়ে সারাদিনে চার বার মোছে। বোঙ্গা কে ছেড়ে কালীদাসী কেন যে বটূর ঘর করতে গেল - যখন বটূর কুঠেরোগ ধরেছে জেনেও।
খাঁদী মাল গঁড়াই এর দোকানে খায়। তার ঘরের কাজ করে দেয়। গঁড়াই এর বৌ কবেই মরে গেছে। আছে এক মেয়ে।
তাকে নিয়ে খুব ভাবনা গঁড়াই এর।
কত কথা এসব নিয়ে। গাঁ ঘরের গল্প কথা। আর কে বলবে।
বলার বা শোনার লোক আর নাই।
   পুরনো গাঁয়ের মরা ঢিপি গুলো র উপরে ছেলেটা আনমনে ঘুরে বেড়ায়। মনে হয় এই সেই " মৃতের স্তুপ "। এর নীচেই আছে লুপ্ত সভ্যতা। মনে মনে সে রাখালদাস সাজে।
পশ্চিমের মোরাম চাতাল ই তার কাছে পামির মালভূমি।
বেণে পুকুরের উঁচু পাড় ই তার কাছে পাহাড়।
হেঁটে আসছেন হিউ য়েন সাঙ। দাদুর কাছে গল্প শোনে।
পশ্চিমে লাল সূর্য টা " পাষাণ চণ্ডী তলার বাগানের "নীচে নেমে
যায়।  ঐ পশ্চিম দিকে তাকাতে ই তার মন কেমন করে ওঠে।
ধীর পায়ে "  বাবাজী বটতলার " নীচে দিয়ে ঘরে ফিরতে হয়।
আর একটু পরেই বটগাছের প্যাঁচা গুলো ডাকবে।
  আখড়ার বালকমাতা ডেকে বলে ' এলি '?  চল তোকে ঘরে দিয়ে আসি। ও অন্নপূর্ণা  লণ্ঠন টা দে "।
দক্ষিণ থেকে কোনাকুনি একটা বাতাসের স্রোত বয়ে যায় উত্তরে। কি জানি কেন  মাতামা তার গায়ে ফুঁ দেয়। মাতামা জোড় হাত করে প্রণাম করে উপরের দিকে তাকিয়ে।
-  ও মা কাকে প্রণাম করছ
- সে তুই বুঝবিনা। চল। ওনারা যাচ্ছেন

  ঘরের বারান্দায় পানের বাটা নিয়ে দিদিমা বসে আছে।
  দাদু দেয়ালে ঠেস দিয়ে। এলাকার " বড়মাষ্টার "। ননীগোপাল চট্টোপাধ্যায়। নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন অযোধ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ এলাকার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল। যাত্রা ; নাটক ; গান বাজনা। তিনি গানের ও মাষ্টার।
  বাঁকুড়া জেলা থেকে এসে নদীতীরে র এই নিরালা গ্রামে বাসা
বেঁধেছেন। রজনীকান্ত হালদার মশাই দাদু দিদিমা কে খুব
  ভালোবাসেন। ভক্তিশ্রদ্ধা করেন।
 
  অন্ধকার রাতের আকাশে তারারা ঝিকমিক করে। মাথার উপরে কালপুরুষ। দাদু তাকে আকাশ চেনায়।পরিষ্কার  রাতের আকাশ দেখতে তার খুব ভালো লাগে। খুব ইচ্ছে করে পাশের
দালানবাড়ি র ছাদে উঠে আকাশ দেখে। তার মনে হয় ঐ আকাশে যেন কত কথা লেখা আছে।
কত কথা এ গাঁয়ের। " কথা তার কাহন সাতেক নামটি সাতকাহন "। সহজে ফুরায় না। কেউ ভোলে কেউ ভোলেনা।
রইল অনেক কথা বাকী। যেমন বাকী থেকে যায় জীবনের কত কথা।।
------------ ------------ ------------ ------------ -----------। - সমাপ্ত।
লেখক। ক্ষেত্র সমীক্ষক। প্রাবন্ধিক। লোক ইতিহাসের গবেষক


 

 
 
 

।।অন্ধকারের উৎস হতে।।

মাটির প্রদীপ। আঞ্চলিক ইতিহাস। প্রণব ভট্টাচার্য এর লেখালেখি।
আঞ্চলিক ইতিহাসের কথা ও কাহিনী

Home
Sunday, 12 December 2021
অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো
।।  " অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো "।।
   
  কে তিনি?
যে কোন প্রতিমার সামনে দাঁড়ালে ; আমার মনে জাগে সে প্রশ্ন
  আমি প্রতিমার শিল্পিত রূপ দেখি। যার প্রতি আবাল্যের টান।
  তার রঙ ; রূপ ; দু চোখ ভরে দেখি।
  এঁর শিল্প ভাবনা!  এই যে রূপ আমি দেখছি - কে প্রথম সৃষ্টি করলেন ; কার ভাবনা তে এলো এই রূপ?  বিস্মিত হয়ে ভাবি।
  বড় হয়েছি আর ক্রমাগত ভেবে গেছি  কি ইতিহাস আছে
লুকিয়ে এঁর পিছনে। কাকে জিজ্ঞেস করব। না থাক নিজেই
খুঁজি। খুঁজে ফিরি। মাতৃমূর্তি ই আমার ভালোবাসা।
  বাঙালী মাতৃভক্ত জাতি। আমার বাঙালী সত্তা আমার ভাবনা কে বিস্তৃত করে।  ' মা বলিতে প্রাণ করে আনচান '। শৈশবে মা হারানো ছেলের কাছে  ' মা ' এক আকুল আবেগ।
  কালী মূর্তির সামনে দাঁড়াই। সেই একই প্রশ্ন জাগে ইনি কে!
এই ভয়ংকরী নারী। রক্ত লোলুপা। খড়্গধারিনী। নৃমুণ্ড মালিনী। নানা রঙের নৃমুণ্ড।  পায়ের তলায় তাঁর সদা শিব।
  কে ইনি। কে ইনি। কে ইনি। ইনি কে।
' আমার কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যারে আলোর নাচন ' - বুকের ভিতরে ধাক্কা দেয়।
  আমাকে অনন্ত চিন্তার দিকে নিয়ে যায় ' অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো ' র বানী।
  এখান থেকেই আমার ভাবনা যেন গতিমুখ পায়।
যেদিন এই ব্রহ্মাণ্ড  সৃষ্টি হয়নি - এই ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বস্তু
রূপহীন। সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের ভর শক্তি রূপে ( Energy) বিরাজিত
এবং একটি বিন্দু তে নিহিত। তাহলে সে বিন্দুর ভর কত?
   ভর ই যে শক্তি তা আমরা জেনেছি মহা বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কাছ থেকে। E= mc2 ( m c square)      তার পরীক্ষাও করে ফেলেছে মানুষ। ভুল নেই।
  ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি পূর্ব যে মহা অন্ধকার যে অনন্ত অমা নিশা ইনি
কি তার ই  রূপ কল্পনা। তিনি কি অন্ধকার রূপ অসুর দের
হত্যা করে আলো র আবাহন কারিনী। আমি ভাবি যদি
physical বা chemical কোন reaction কে চিত্ররূপ দিতে হয়  কেমন হবে সে ধ্যান লব্ধ রূপ কল্পনা। তাঁরা তো সৃষ্টি র প্রতিটি পর্যায় এর রূপ কল্পনা করেছেন। আমি দেখি সেই রূপ  প্রতীক। তা সে দশ মহাবিদ্যা ই হোন আর অনন্তশয়ান বিষ্ণু ই
হোন - তাঁদের শিল্পী মন রূপের ধ্যান করেছে। রঙে ; রূপে সৃষ্টি
হয়েছে তাঁদের ধ্যান প্রতিমা। সকলি তো প্রতীক। সেই ভাবেই
আমি দেখি। দেখে আমার মন।
  সেই মহামনস্বী ব্যক্তিরা তো ধ্যান যোগে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির কথা
  ভেবেছেন। তাঁরাও তো সেই ' মহাবিন্দু ' র কথা ভেবেছেন।
সেই উপনিষদের জ্ঞান তপস্বী রা। কি অসাধারণ ছিল তাঁদের
মনীষা। সেই মহাবিশ্ব মহা ব্রহ্মাণ্ড ধারণ কারী ' মহা বিন্দু ' ( zero dimenson) ;( singularity ) কে
আপনি God particle বলবেন বা ব্রহ্ম বলবেন  সে আপনার
ব্যাপার। এই বস্তু বিশ্বের প্রতিটি ধূলিকনাতে তিনি বিদ্যমান।
তিনি মানে তো Energy.  যার রূপ আজও আমরা জানিনা।
জানি সে মহাশক্তি। ভাঙ্গো। ভাঙ্গো পরমানুর অন্তর। খুঁজে আনো আদি কণা কে। সে কি Neutrino; কোয়ার্ক ; ইলেকট্রন?  যাঁকে ই খুঁজে আনো তার  anti আছেই। দুই সত্তা। পজিটিভ আর নেগেটিভ। তাদের
মিলনে ই তো শক্তি প্রবাহ। এই জগৎ ও তো দুই সত্তা র সমন্বয়। প্রকৃতি আর পুরুষ। সৃষ্টির আনন্দ উপলব্ধি করতে তিনি তো নিজেকে বিভাজিত করেছেন। তাহলে আদিতে তো তিনি একক সত্তা। '   একমেবাদ্বিতীয়ম '।
সেই আদিসত্তার কোষরূপ ' দহর ' ব্যাপ্ত হল বহুরূপে।
  আজও আমরা খুঁজে চলেছি সেই আদি রূপকে। আদি কণা যা সবার মাঝেই ছড়িয়ে আছে। প্রাণে অপ্রাণে।  পার্থক্য তো অতি সুক্ষ্ম।
বিজ্ঞান খুঁজছে। তাই তার স্বাভাবিক ধর্ম। আর তাঁরা ; সেই মহামনীষা র অধিকারী রা চেয়েছেন " হে বিশ্বস্রষ্টা ; আমাও দাও সেই ধীশক্তি ; সেই মেধা ; সেই চেতনা যাতে মহাজগৎ কে
বুঝতে পারি '। " ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ "।
  সেই চেতনা কি " consciousness itself is fundamental if not primary " - Dr Bhoumik
তাই বুঝি ডেকার্ট বলেছিলেন " Cogito ; ergo sum " (গ্রীকভাষায়).। I think ; therefore I am ।
উপনিষদ তাই 'সারা বিশ্বব্যাপী বিরাজমান এই অখণ্ড
চৈতন্য কে ই বলছে ব্রহ্ম ' " সর্বং খলিদ্বং ব্রহ্ম তজ্জলানিতি "।। ( ছান্দোগ্য)
ব্রহ্ম ; যিনি সমস্তের আরম্ভে এবং সমস্তের শেষে। " বিচৈতি চান্তে বিশ্বমাদৌ "। ব্রহ্ম স্রষ্টা ; জগৎ সৃষ্টি। আবার ব্রহ্ম যদিও
স্রষ্টা ; বিশ্বজগতের উপাদান ও ব্রহ্ম।

স্পেস টাইম ভেঙে পড়ে। কোল্যাপস করে এমন এক বিন্দুতে
যার ডাইমেনশন ' জিরো ডাইমেনশন '। দৈর্ঘ্য ; প্রস্থ ; উচ্চতা একত্রে শূন্য।
তাহলে কি আদিকনা নয়। "আদি কোয়ান্টাম ফিল্ড। সবচেয়ে
আদি অন্তর্নিহিত ক্ষেত্র। যেমন সমস্ত electron ই সেই অন্তর্নিহিত ফিল্ডের উদ্দীপনার প্রকাশ "
কি আশ্চর্য  এই ব্রহ্মাণ্ডের  সমস্ত ইলেকট্রনই absolutely identicals ; everywhere in the universe no matter
when or where they are created. The amount of their mass ; electric charge and spin are always exactly the same "
আবার যেটা অবাক করে  এই ব্রহ্মাণ্ডের একত্রিত  পজিটিভ
+ এনার্জি  আর একত্রিত - নেগেটিভ _  এনার্জি একেবারে
  সমান সমান। তাহলে মোট এনার্জি  শূণ্য।
  শূণ্য তবু শূণ্য নয়। পাশ্চাত্যের ' Nothing ' আর আমাদের
প্রাচ্যের ' Nothingness ' এক নয়।  Nothingness  is more than Nothing '।  নয় নয় সে শূন্য নয়  পূর্ণ  পূর্ণ  পূর্ণ
  ' হে পূর্ণ তব চরণের কাছে ' -
  " All is whole ; all arises from whole and if whole is subtracted from Whole ; all that remains is Whole "
" ওঁ পূর্ণমদঃ  পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে
   পূর্ণস্য পূর্ণ মাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে "।
" অপাবৃণু "।  হে জগৎ তুমি প্রকাশিত হও। খুলে ফেলো আবরন। উন্মোচিত হোক তোমার অন্তরের সত্য। সরে যাক পর্দা। "
   আলোক হীনতাই কি অন্ধকার। না কি তার ও বিশেষ চরিত্র আছে!  বিজ্ঞান খুঁজছে। ' ব্ল্যাক ম্যাটার ' নিয়ে কাজ হচ্ছে।
  সেই ' মহাতমসাবৃত ' যে অবস্থা  সে কি সৃষ্টি পূর্ব সময়ের আগেই ছিল। সে ই কি ধারক।  তার ই অভ্যন্তর থেকে সৃষ্টি হল
  বিপুল লক্ষ কোটি সূর্যের এনার্জি!
  কাল থেকে তো কালী। সে যে মহাকাল। ঐ যে ' মহাকালের
  কোলে দোলে -- '
উৎস তুমি ই। জাগাও আলো। তোমার নৃত্য ছন্দে  শক্তি energy  প্রবিষ্ট হোক । শব থেকে পরিণত হউন  আলোক রূপী
  শিব। শিব শক্তি র মিলন ই তো সৃষ্টি।
জাগো আলো। ঈশোপনিষদের সেই আলোক বন্দনা
" হিরণ্ময়েন পাত্রেণ সত্যস্যাপিহিতং মুখম "
  ঋকবেদের গায়ত্রী মন্ত্র ~  সূর্য বন্দনা  তাও তো সেই আলোক বন্দনা যা শুধু জগৎ কে প্রকাশ করছে না মাত্র ; যুক্ত
আমাদের বোধের সাথে " তৎ সবির্তুবরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি। ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ "
   আমার প্রার্থনা শোনো  - অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে
  চলো " অসতো মা সদ্ গময় ; তমসো মা জ্যোতির্গময় "
------------ ------------ ------------ ------------ ©  প্রণব ভট্টাচার্য
পাঠক আমি একান্তই অনধিকারী। আমার ধৃষ্টতা মাফ করবেন। ' আমার মধ্যেই তোমার প্রকাশ "। তাই শুধু ভাবি মাত্র।  আমার ভাবনা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
আমার ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন।
গ্রন্থ সহায়তা।  ব্রহ্ম সত্য জগৎ সত্য ।  ডঃ মণি ভৌমিক
   Code  name God : The spiritual Odyssey of a man of Science.  Dr Monilal Bhowmik.
  উপনিষদ ঃ  গীতা প্রেস

লেখাটি কে আবার একবার ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে হল। অনেকে পড়েছেন। সুচিন্তিত মন্তব্য করেছেন। 
 সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ। 
 না হয় আর একবার পড়ুন। 

এই লেখাটি র পাঠ প্রতিক্রিয়া পাবার জন্য পাঠিয়েছিলাম বিশিষ্ট কাব্য সমালোচক 
 পারমিতা দির কাছে। পারমিতা ভৌমিক। 
তিনি তাঁর পাঠ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। 
 আমি আপ্লূত। প্রাণিত। তাঁকে আমার সশ্রদ্ধ নমস্কার জানাই। 

 
 " অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো "...প্রণব ভট্টাচার্য।
 মুগ্ধপাঠ #পারমিতা

প্রণব দা,
শ্রদ্ধা নিয়ে আপনার এই লেখা পাঠ করছি। 
পড়েই চমকে উঠেছি ! কীইই বিশাল চেতনা ধ‍রা দিয়েছে সংক্ষিপ্ত ক‍্যানভাসে।
  
আপনার অব‍্যর্থ প্রশ্নে লেখা শুরু-----
কে তিনি?
শুধু প্রশ্ন নয়, প্রশ্নকর্তার ভাব অনুষঙ্গিত হয়েছে নির্বাচিত ডিসকোর্সগুলোতে।   নিওরোমান্টিকের ভাষিক স্নায়ু যেন টানটান বুনোটে গাঁথছে যুক্তির সঙ্গে ধ্রূবধারণাকে।
গদ‍্যকার বলছেন----
যে কোন প্রতিমার সামনে দাঁড়ালে ; আমার মনে জাগে সে প্রশ্ন----- এই প্রশ্নটিই চাবিবাক‍্য।
শিল্পমনস্ক গদ‍্যকার বলেন,
  "আমি প্রতিমার শিল্পিত রূপ দেখি। যার প্রতি আবাল্যের টান।"......
  এসব তাঁর জীবনের উত্তরাধিকার। কি দেখেন তিনি?------
  তার রঙ ; 
  রূপ ; 
  দু চোখ ভরে দেখেন।
  আরও আছে----
  দেখেন, প্রতিমার শিল্প ভাবনা!  
  রূপকৃৎ প্রণবের দেখা। তিনি বলেন----
  এই যে রূপ আমি দেখছি - কে প্রথম সৃষ্টি করলেন ; কার ভাবনা তে এলো এই রূপ?  বিস্মিত হয়ে ভাবি।
  এর সঙ্গে এসে যুক্ত হল চৈতন‍্যগত ভাবৈশ্বর্য। এল নানান প্রশ্ন।
  ইতিমধ্যে কেটেছে সময়।
  প্রণবের কলম বলেছে------
  বড় হয়েছি আর ক্রমাগত ভেবে গেছি  কি ইতিহাস আছে
লুকিয়ে এঁর পিছনে। কাকে জিজ্ঞেস করব। না থাক নিজেই
খুঁজি। খুঁজে ফিরি। 
----- এই অণ্বেষণ আর অণ্বিষ্ট যখন এক হতে চায় তখন বিশ্বময়ী প্রহেলিকা দেবীরূপে নিজেকে উন্মোচন করেন। এ এক অজগতী সাধনা।
প্রণব জানিয়েছেন----
মাতৃমূর্তি ই আমার ভালোবাসা।
জানিয়েছেন একটা জাতিগত উত্তরাধিকার ও সংস্কারের কথা-----
  বাঙালী মাতৃভক্ত জাতি। আমার বাঙালী সত্তা আমার ভাবনা কে বিস্তৃত করে। 
   ' মা বলিতে প্রাণ করে আনচান '। ---- এমন উদ্ধার বোধহয় বাংলা ভাষাতেই পাওয়া সম্ভব।
   প্রণব ক্রমশঃ একাত্ম হয়ে যাচ্ছেন মন্ময়বোধের সঙ্গে বৈশ্বিক তন্ময়তায়। সেখানে তাঁর ব‍্যক্তিগত দুঃখ শ্লোক মনে হয়-----
   শৈশবে মা হারানো ছেলের কাছে  ' মা ' এক আকুল আবেগ।
  কালী মূর্তির সামনে দাঁড়াই। সেই একই প্রশ্ন জাগে ইনি কে!????
এই প্রশ্ন তাঁকে টেনে নিয়ে চলে অণ্বিষ্টের দিকে। তাঁর মনে হয়,-----
এই ভয়ংকরী নারী। রক্ত লোলুপা। খড়্গধারিনী। নৃমুণ্ড মালিনী। নানা রঙের নৃমুণ্ড।  পায়ের তলায় তাঁর সদা শিব।
  কে ইনি। কে ইনি। কে ইনি। ইনি কে।??????
তখনই তিনি তত্ত্ব ছেড়ে ফিরে যান প্রাণিক আবেগীস্রোতে যেখানে সহজসাধন ধারার রামপ্রসাদ কমলাকান্তরা আজও চির অম্লান। কান পাতেন প্রণব মাতৃবন্দনার শুদ্ধস্বরে----
' আমার কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যারে আলোর নাচন ' - 
বুকের ভিতরে ধাক্কা দেয়।
  আমাকে অনন্ত চিন্তার দিকে নিয়ে যায় ' অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো ' র বানী।
  প্রণব খোঁজেন সেই All black...সেই একান্ন পাকে ঘোরা সৃষ্টিময়ীকে। বলেন----
  এখান থেকেই আমার ভাবনা যেন গতিমুখ পায়।

কি সেই গতিমুখ?

আমরা এখন জেনে নেব সেসব প্রণবের উৎসুক সত্তার কাছে।
যেদিন এই ব্রহ্মাণ্ড  সৃষ্টি হয়নি - এই ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বস্তু ছিল রূপহীন। 
সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের ভর শক্তি রূপে ( Energy) বিরাজিত
এবং একটি বিন্দু তে নিহিত।
 তাহলে সে বিন্দুর ভর কত?
------আমিও ভাবতে শুরু ক‍রছি। বস্তুর পরিমাণ ও তার পরিমাপ হল ভর। বিন্দুলীন এনার্জির ভর তাহলে কি , কেমন এবং কতটা হতে পারে????
সেইজন‍্যই মহাকালি মা আমার All black... energy absolute....

প্রণব বলছেন আমরা শুনছি---
 ভর ই যে শক্তি তা আমরা জেনেছি মহা বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কাছ থেকে। E= mc2 ( m c square)      তার পরীক্ষাও করে ফেলেছে মানুষ। ভুল নেই।
 
  ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি পূর্ব যে মহা অন্ধকার যে অনন্ত অমা নিশা ।
  ইনি কি তারই  রূপ কল্পনা। তিনি কি অন্ধকার রূপ অসুর দের হত্যা করে আলো র আবাহন কারিনী। 

এখানে আমার কিছু প্রশ্ন থাকে----
এইখানেই কি ঐকান্তিক প্রার্থনা উঠেছিল একদিন ?---- Let there be Light and there was light....???
এইকি সেই উৎস যা অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলোর ঠিকানা দিল? 
এই কালোতে আলো ছিলনা, তাই জীবন ছিলনা কিম্বা মহাসুপ্তিতে শিবলগ্ন (Static energy) ছিল তা? মা (dynamic energy) তাই কালি মৃত‍্যুস্বরূপা ছিলেন?

আবার ফিরছি প্রণবের লেখায়----
আমি ভাবি যদি
physical বা chemical কোন reaction কে চিত্ররূপ দিতে হয়  কেমন হবে সে ধ্যান লব্ধ রূপ কল্পনা। 

তাঁরা তো সৃষ্টি র প্রতিটি পর্যায় এর রূপ কল্পনা করেছেন। আমি দেখি সেই রূপ  প্রতীক। তা সে দশ মহাবিদ্যা ই হোন আর অনন্তশয়ান বিষ্ণু ই
হোন - তাঁদের শিল্পী মন রূপের ধ্যান করেছে। রঙে ; 

রূপে সৃষ্টি
হয়েছে তাঁদের ধ্যান প্রতিমা। সকলি তো প্রতীক। সেই ভাবেই
আমি দেখি। দেখে আমার মন।
  সেই মহামনস্বী ব্যক্তিরা তো ধ্যান যোগে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির কথা
  ভেবেছেন। তাঁরাও তো সেই ' মহাবিন্দু ' র কথা ভেবেছেন।
সেই উপনিষদের জ্ঞান তপস্বী রা। কি অসাধারণ ছিল তাঁদের
মনীষা। 

সেই মহাবিশ্ব মহা ব্রহ্মাণ্ড ধারণ কারী ' মহা বিন্দু ' ( zero dimenson) ;( singularity ) কে
আপনি God particle বলবেন বা ব্রহ্ম বলবেন  সে আপনার
ব্যাপার। 

আমার একটা কথা কথা আছে প্রণবদা----- যদি ghost particle বলি? তাতেই বা কি???
দুটো বিশ্বাসই আজও অটুট। কারো কাছে নাস্তি কারো কাছে অস্তি। আর ব্রহ্ম মানে তো ever expanding....অনন্ত প্রসারণ। আজও চলেছে। আত্মিক স্তরেও ঐ এক সত‍্য।
আপনার সঙ্গে এখানে সকলেই একমত যে,
এই বস্তু বিশ্বের প্রতিটি ধূলিকনাতে তিনি বিদ্যমান।
তিনি মানে তো Energy.  যার রূপ আজও আমরা জানিনা।
জানি সে মহাশক্তি। ভাঙ্গো। ভাঙ্গো পরমানুর অন্তর। খুঁজে আনো আদি কণা কে। সে কি Neutrino; কোয়ার্ক ; ইলেকট্রন? 
আমি তার গতিও জানতে চাই প্রণবদা, সে কি ট‍্যাচিয়ন লাইক???আপনার কথায় ফিরে এলাম-----
 যাঁকে ই খুঁজে আনো তার  anti আছেই। 
 প্রণবদা, এইইই কি matter antimatter... ভাবনা? সাধক কবীরের চাদরিয়া ? মণি ভৌমিকের কাছে শোনা স্ট্রিংথিওরি???
 আপনি এদেরই কি বলছেন------
দুই সত্তা? পজিটিভ আর নেগেটিভ? 
তাদের
মিলনে ই তো শক্তি প্রবাহ। এই জগৎ ও তো দুই সত্তা র সমন্বয়। প্রকৃতি আর পুরুষ।

তাহলে প্রণবদা একথা তো ঠিক মনে হয় যে singularity তথ‍্য একমাত্র সত‍্য। চিরস্থিরের বুকে বদ্ধ ছিল যে চিরচঞ্চল তার মুক্তিই হল সৃষ্টিমূল ???

এ্যপর ঐ এক সত‍্য খুঁজতে আপনি এসেছেন বেদবিজ্ঞানে-----
সেখানেই আছে,
 সৃষ্টির আনন্দ উপলব্ধি করতে তিনি তো নিজেকে বিভাজিত করেছেন। তাহলে আদিতে তো তিনি একক সত্তা। '   একমেবাদ্বিতীয়ম '।
 পরে তিনিই তো "স দ্বিতীয়ম্ ঐচ্ছৎ"( বৃহদারণ‍্যক)
 তিনিই তো ঋষিচেতনায় ধরা দিলেন--- " সর্বখল্বিদং ব্রহ্ম" হয়ে---- সর্বম্ খলু ইদম্ ব্রহ্ম।
 প্রণবদি ঠিকই তো আপনার অনুধাবন এবং এই Divine সম্প্রয়োগ। এইই ইষ্টাপত্তি।
 আপনি অভিভাবকের মতো হাতে তুলে দিচ্ছেন সব জ্ঞাত ও অজ্ঞাত সঞ্চয়-----
 বলছেন----
সেই আদিসত্তার কোষরূপ ' দহর ' ব্যাপ্ত হল বহুরূপে।
  আজও আমরা খুঁজে চলেছি সেই আদি রূপকে। আদি কণা যা সবার মাঝেই ছড়িয়ে আছে। প্রাণে অপ্রাণে। 
  পরে এই প্রসঙ্গে মহর্ষি কণাদের কথা শুনবো আপনার কাছে। আমার বিশ্বাস কণাদের তথ‍্য থেকেই কণা কথাটি নামরূপ হিসেবে ব‍্যবহৃত হয়েছে particle কে চিহ্নিত করতে।
আপনার কথা শুনছি -----
 পার্থক্য তো অতি সুক্ষ্ম।
বিজ্ঞান খুঁজছে। তাই তার স্বাভাবিক ধর্ম। আর তাঁরা ; সেই মহামনীষা র অধিকারী রা চেয়েছেন " হে বিশ্বস্রষ্টা ; আমাও দাও সেই ধীশক্তি ; সেই মেধা ; সেই চেতনা যাতে মহাজগৎ কে
বুঝতে পারি '। " ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ "।

প্রণবদা,মন্ত্রেই তবে লুকিয়ে আছে শেষ সত‍্য?

  সেই চেতনা কি " consciousness itself is fundamental if not primary " - Dr Bhoumik
তাই বুঝি ডেকার্ট বলেছিলেন " Cogito ; ergo sum " (গ্রীকভাষায়).। I think ; therefore I am ।

প্রণবদা এখানেই কি রবীন্দ্রনাথকে আনা যায় না?
"আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ"????
এখানেই আসে নীলস বোর ম‍্যাক্স প্লাঙ্ক হাইজেনবার্গের কথা। নয় কি???
জানিনা প্রণবদা, আমার ভুল হতেও পারে। আমিও হাতড়ে বেড়াচ্ছি কুলকিনারাহীন শক্তিসায়রে। কৃষ্ণে। কৃষ্ণচৈতন‍্যে। The ultimate black hole.....
সব এলোমেলো হয়ে যায়। কোনো এক অমীমাংসিত নাথিংনেস এ।
আপনার কাছেই তবে শুনে নেব-----
উপনিষদ তাই 'সারা বিশ্বব্যাপী বিরাজমান এই অখণ্ডচৈতন্য কে ই বলছে ব্রহ্ম ' " সর্বং খলিদ্বং ব্রহ্ম তজ্জলানিতি "।। ( ছান্দোগ্য)
ব্রহ্ম ; যিনি সমস্তের আরম্ভে এবং সমস্তের শেষে। " বিচৈতি চান্তে বিশ্বমাদৌ "। ব্রহ্ম স্রষ্টা ; জগৎ সৃষ্টি। আবার ব্রহ্ম যদিও
স্রষ্টা ; বিশ্বজগতের উপাদান ও ব্রহ্ম।

স্পেস টাইম ভেঙে পড়ে। কোল্যাপস করে এমন এক বিন্দুতে
যার ডাইমেনশন ' জিরো ডাইমেনশন '। দৈর্ঘ্য ; প্রস্থ ; উচ্চতা একত্রে শূন্য।
তাহলে কি আদিকনা নয়। "আদি কোয়ান্টাম ফিল্ড। সবচেয়ে
আদি অন্তর্নিহিত ক্ষেত্র। যেমন সমস্ত electron ই সেই অন্তর্নিহিত ফিল্ডের উদ্দীপনার প্রকাশ "
কি আশ্চর্য  এই ব্রহ্মাণ্ডের  সমস্ত ইলেকট্রনই absolutely identicals ; everywhere in the universe no matter
when or where they are created. The amount of their mass ; electric charge and spin are always exactly the same "
আবার যেটা অবাক করে  এই ব্রহ্মাণ্ডের একত্রিত  পজিটিভ
+ এনার্জি  আর একত্রিত - নেগেটিভ _  এনার্জি একেবারে
  সমান সমান। 
  তাহলে মোট এনার্জি  শূণ্য।
  শূণ্য তবু শূণ্য নয়। পাশ্চাত্যের ' Nothing ' আর আমাদের
প্রাচ্যের ' Nothingness ' এক নয়।  
Nothingness  is more than Nothing '।  
নয় নয় সে শূন্য নয়  পূর্ণ  পূর্ণ  পূর্ণ
  ' হে পূর্ণ তব চরণের কাছে ' -
  " All is whole ; all arises from whole and if whole is subtracted from Whole ; all that remains is Whole "
" ওঁ পূর্ণমদঃ  পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে
   পূর্ণস্য পূর্ণ মাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে "।
" অপাবৃণু "।  হে জগৎ তুমি প্রকাশিত হও। খুলে ফেলো আবরন। উন্মোচিত হোক তোমার অন্তরের সত্য। সরে যাক পর্দা। "
   আলোক হীনতাই কি অন্ধকার। না কি তার ও বিশেষ চরিত্র আছে!  বিজ্ঞান খুঁজছে। ' ব্ল্যাক ম্যাটার ' নিয়ে কাজ হচ্ছে।
  সেই ' মহাতমসাবৃত ' যে অবস্থা  সে কি সৃষ্টি পূর্ব সময়ের আগেই ছিল। সে ই কি ধারক।  তার ই অভ্যন্তর থেকে সৃষ্টি হল
  বিপুল লক্ষ কোটি সূর্যের এনার্জি!
  কাল থেকে তো কালী। সে যে মহাকাল। ঐ যে ' মহাকালের
  কোলে দোলে -- '
উৎস তুমি ই। জাগাও আলো। তোমার নৃত্য ছন্দে  শক্তি energy  প্রবিষ্ট হোক । শব থেকে পরিণত হউন  আলোক রূপী
  শিব। শিব শক্তি র মিলন ই তো সৃষ্টি।
জাগো আলো। ঈশোপনিষদের সেই আলোক বন্দনা
" হিরণ্ময়েন পাত্রেণ সত্যস্যাপিহিতং মুখম "
  ঋকবেদের গায়ত্রী মন্ত্র ~  সূর্য বন্দনা  তাও তো সেই আলোক বন্দনা যা শুধু জগৎ কে প্রকাশ করছে না মাত্র ; যুক্ত
আমাদের বোধের সাথে " তৎ সবির্তুবরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি। ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ "
   আমার প্রার্থনা শোনো  - অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে
  চলো " অসতো মা সদ্ গময় ; তমসো মা জ্যোতির্গময় "
------------ ------------ ------------ ------------ ©  প্রণব ভট্টাচার্য
(পাঠক আমি একান্তই অনধিকারী। আমার ধৃষ্টতা মাফ করবেন। ' আমার মধ্যেই তোমার প্রকাশ "। তাই শুধু ভাবি মাত্র।  আমার ভাবনা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
আমার ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন।
গ্রন্থ সহায়তা।  ব্রহ্ম সত্য জগৎ সত্য ।  ডঃ মণি ভৌমিক
   Code  name God : The spiritual Odyssey of a man of Science.  Dr Monilal Bhowmik.
  উপনিষদ ঃ  গীতা প্রেস)
  (আপনার উল্লিখিত এই দুটো বইই আমার আছে প্রণবদা।
  পারমিতা।)

 

pranab bhattacharyya at 00:11
Share
No comments:
Post a Comment
Home
View web version
Powered by Blogger.