পটের বিবি ঃ নতুন বৌ
নতুন বৌ এর রূপের আলোয় ঘরের উঠোন একেবারে ঝলমল করছে। ফাগুন বিকেলের আলোতে সে রূপ যেনতপ্ত সোনা। পাড়া ঘরের মেয়ে বৌ দের পলক যেন পড়েনা।
এত ফর্সা। চোখ ছাই ছাই নীল। গোটা গাঁ জেনে গেল সুন্দরী বৌ একটা এসেছে বটে। অভিজ্ঞ মহিলারা মুখ টিপে হাসছে।
আর কমবয়সী কালো মেয়ে গুলোর মনে হচ্ছে গায়ে হাত দিয়ে একবার দেখে।
গাঁয়ের বয়স্কা মহিলারা টুকটুক করে কথায় কথায় বের করে
নিল ঠিকুজি কুলুজী। বৌ এর বাপের বাড়ির লোকরা এ গাঁয়ের কারও কারও আত্মীয়। তারা তো কিছুটা জানেই।
শেষ মেশ জানা গেল নতুন বৌ এর ঠাকুমার মা না তার মা
সাহেবদের নীল কুঠী তে কাজ করত। রক্ত বড় শক্ত জিনিস।
জানে সর্বজনে। শুধু জানেনা কেমন করে কি হয়। বাপের মতো বেটা হয়। বা মায়ের মতো মেয়ে হয়। মানুষ অনুভবে কিছু বোঝে। বলে একেবারে মায়ের মতো মুখটি হয়েছে বা বাপের মতো লম্বা চওড়া।
আবার দোষ গুনের সময় ও বলে। দেখতে হবেনা কার বেটা।
" বাপকা বেটা আর সওয়ার কা ঘোড়া "
বা মা যেমন মেয়ে তেমন। এসব কথা কি আজকের। সে যে কত দিনের পুরনো তা কে জানে।
তা হ্যাঁ গো মেটে ঘরে এমন সুন্দরী বৌ। সাহেব দের মতো
ফর্সা। সামলে সুমলে রেখো বাপু। নজর তো পড়বেই।
স্বামী ছেলে টি ও খুব সৌখিন। চুলের টেরি বাগাতেই তার অনেক সময় লাগে। বেশ খাঁজ ওয়ালা চুল। কায়দা করে কিছুটা কপালের উপর নামানো। বাপের সরকারি চাকরি।
হোক খালাসি। রাস্তার কাজ তদারকিও করে। পাকা পিচের
রাস্তা হচ্ছে গ্রামের পাশ দিয়ে। জঙ্গলের ভিতরে।
নতুন বৌ চান করতে গেলে শাশুড়ী সঙ্গে যায়। একটু দূরেই
বাবুদের কাটানো টলটলে জলের পুকুর। পুকুর নয় দিঘি।
দিঘির ওপারে বাবুদের বিরাট দালান। দালানের জানলা থেকে
বাবুদের ঘরের ছেলেরা মেয়েদের চান করা দেখে বোধহয়।
মেয়েরা গায়ে কাপড় জড়িয়েই চান করে।
কি একটা যন্ত্র আছে আবার ওদের। দূরের জিনিস কে কাছে দেখা যায়। শিকার করতে যাবার সময় সাথে নেয় সে যন্ত্র।
বাবুদের একটা বাগান বাড়ি আছে। সেটাও দোতালা দালান।
সামনে পুকুর। বাঁধানো ঘাট। চারদিকে ফুল ফলের গাছ ।
কত রকমের আম গাছ যে আছে সেখানে। চাঁদনি রাতে সেখানে না কি নাচ গানের আসর বসে। বাবুরা থাকেন। আসেন
ইংরেজ সাহেব বাবুরা। তাঁরা ও শিকার করতে যান। আদিবাসী সাঁওতাল যুবক দের সঙ্গে নেন তাঁরা। ছোট ছোট
ছেলে মেয়েরা গুলির খোল গুলো কুড়িয়ে এনে দিলে তাদের
ফুটো তামার পয়সা দেয় সাহেব বাবুরা।
তো একদিন নতুন বৌ এর বর দুলাল এর ডাক পড়ল বাবুদের কাছে। তাকে খবর দিল পাড়ার এক মাঝবয়সী বৌ।
তাকে তো সবাই চেনে জানে। তার কি কাজ সবাই জানে। এক সময় দেখতে ভালো ই ছিল। এখনও খুব মন্দ নয়। ভালো বাঁধন ।
মুখ ফুটে কেউ কিছু বলেনা। জানে বাবুদের আড়কাঠি। তিনি নন্দরাণী। তার চোখে মুখে কথা।
কত রকমের ছলাকলা।
তো বাবু ছিলেন বাগানবাড়িতে তেই। দুলাল হাজির হল। নন্দ রাণী র সাথে। মনে তার কু ডাকছে। পা যেন চলতে চাইছেনা।
-- আয়। আয় দুলাল। বস। বস। দুলাল দাঁড়িয়ে ই আছে। আরে বোস না। নন্দ রাণী কোন আড়ালে যেন গেল
--- শোন তোরা আমার প্রজা তো। না কি।
দুলাল হাত জোড় করে আছে।
শোন কদিন পরেই এখানে এক অনুষ্ঠান। অনেক বাবু আসবেন। সাহেব সুবো রা আসবে। তাদের সব কিছু দেখা শোনার ভার আমি দেব আমার জমিদারির সব সুন্দরী মেয়েদের। শুনলাম তোর বৌ টা না কি বেশ সুন্দরী। তা কোথা থেকে আনলি রে। এই বাগানবাড়িতে সেদিন বাঈজী রা আসবে। তার একদিন আগে থেকেই কার কি কাজ হবে সব বুঝিয়ে দেওয়া হবে। কি বুঝলি। তোর বৌ টা কে পাঠিয়ে দিবি।
নন্দরাণী নিয়ে আসবে।
দুলাল হ্যাঁ না কিছুই বলতে পারেনা। বাবু তার হাতে একটা টাকা দিলেন। একটা গোটা টাকা!
--- বৌ টা কে দিবি। যা এবার। আরে বাবা তোর বৌ তোর ই
থাকবে। যা । এই নান্দী -
ঘরে ফিরে এলো দুলাল। কিন্তু মুখে তার কথা নাই। কি যে বলবে নিজের বৌ কে।
ঠিক সন্ধ্যেতেই নন্দরাণী এসে হাজির। দাওয়ায় জমিয়ে বসে
নতুন বৌ কে ইনিয়ে বিনিয়ে কত কথা বলল। এমন করে বলল যে মনে হবে বাবু বাড়ির অনুষ্ঠানে নেমতন্ন।
মেয়ের মন। নতুন বৌ কিন্তু যা বোঝার বুঝে গেল কি হতে চলেছে ---
নন্দরাণী সব শেষে ওঠার আগে বলল " বুঝলি জলে বাস করে কি কুমিরের সঙ্গে বিবাদ করা যায় "
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ১ ম পাতা শেষ।
।।পটের বিবি ঃনতুন বৌ ।। ২ নং পাতা আরম্ভ
যেতেই হল। একবার ভেবেছিল বাপের ঘর চলে যাবে। কিন্তু আবার এখানেই তো ফিরতে হবে। সে না গেলে যদি জমিদার বাবুর রাগ পড়ে স্বামী শ্বশুর এর উপরে।
নিয়ে যেতে সেই নান্দী ই। সে ই তো সবাইকে নিয়ে যায়। আরও আছে দু তিন জন। লক্ষ্মীরাণী ; পদ্মারাণী। অন্য সব গাঁয়ে ও আছে এই রকমের মেয়েরা। আদিবাসী সাঁওতাল পাড়ায় গোলাপি। অবশ্য ওদের ধরন আলাদা। বেশ স্বাধীন মনোভাব। নিজের শরীর নিয়েও। তো কি! মনে কোন দাগই যেন পড়েনা ওদের। কোন প্রকাশ ও নাই।
কজন আদিবাসী কম বয়সী মেয়ে নাচ মহলে কাজ করছিল।
উপর তলা তে ও কাজ চলছিল। ঝাড় মোছ। বাঈজী দের আনতে না কি গাড়ি গেছে। আসছে। বারমহলে থাকবে ওরা।
ওদের কাছে রাতে থাকবে ক টা মেয়ে। ফাই ফরমাস খাটার জন্যে। নতুন বৌ দেখল তার তেমন কাজ নাই। এদিকে সন্ধ্যে হয়ে এলো। নন্দরাণী তাকে নিয়ে গেল দোতালায়। একটা খুব সাজানো ঘরে। এমন ঘর জীবনে কোন দিন দেখেনি সে।
" কি রে নান্দী কান্না কাটি করবে না তো আবার "
বাবু বোতল খুলে বসলেন। নান্দী একটু হবে না কি। লে লে।
দ্যাখ যদি খায় একটু। তো দে। আলাদা একটা গ্লাস নিয়ে এলো নান্দী। নিজে খেল। ওকে বলল খেয়ে দ্যাখ। এত ভালো জিনিস তো আর দেখিসনি। ওর স্বামী ; শ্বশুর রা ও খায়।
বাপের ঘরে ও দেখেছে। নিজের ঠাকুমার সঙ্গে সাহেব বাবুর ঘরে ও দেখেছে। ওর ঠাকুমা ও খেত। সাহেব বাবুর সাথে।
ওর ঠাকুমা ও সাহেব বাবুর ঘরে মেয়ে নিয়ে যেত শুঁড়ি পাড়া থেকে। দলুই পাড়া থেকে। নতুন বৌ তখন ছোট। তবে বুঝত।
মেয়ের মন। একেবারে আনাড়ি তা নয়।
এখানে সে তো বুঝেই গেছে তার কি কাজ। দিতে হবে। জমিদার বাবুকে তার শরীর টা নেবে । সে ও নন্দ রাণী র কাছ থেকে নিয়ে একটু
খেয়ে দেখল। ভালোই তো। আর একটু।
একসময় নন্দরাণী নীচে চলে গেল।
জমিদার বাবু র তর সইছিল না আর।
যা হবার সবই হল।
ছাড়তেই চায়না। পারলে সারা রাত ই যেন -
কতক্ষণ পরে ছাড়া পেয়েছিল কে জানে
যাই হোক। বাবু ইনাম দিলেন। চকচকে গোল চাকতি।
--- আজ যা। কাল কিন্তু সাহেব বাবুদের মন ভরিয়ে দিতে হবে। ঠিক সময়ে চলে আসবি।
নন্দরাণী তাকে নিয়ে নিজেদের পাড়ায় চলল।
যেতে যেতে বলছে " আগে তো সুন্দরী নতুন বৌ এলে আগে
বাবুদের কাছেই আসতে হত "।
" তা তুই তো এলি বেশ কিছু দিন পরে লো। "
" কাল ভালো করে মন জুগিয়ে দিবি। তোর কপাল খুলে যাবে
- আর তোমার?
-" আমার ও কিছু হবে। আর তো তোদের মতো বয়েস নাই -
আমাদিকে আর কে ছোঁবে বল দিকি "
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ২ নং পাতা শেষ
যেতেই হল। একবার ভেবেছিল বাপের ঘর চলে যাবে। কিন্তু আবার এখানেই তো ফিরতে হবে। সে না গেলে যদি জমিদার বাবুর রাগ পড়ে স্বামী শ্বশুর এর উপরে।
নিয়ে যেতে সেই নান্দী ই। সে ই তো সবাইকে নিয়ে যায়। আরও আছে দু তিন জন। লক্ষ্মীরাণী ; পদ্মারাণী। অন্য সব গাঁয়ে ও আছে এই রকমের মেয়েরা। আদিবাসী সাঁওতাল পাড়ায় গোলাপি। অবশ্য ওদের ধরন আলাদা। বেশ স্বাধীন মনোভাব। নিজের শরীর নিয়েও। তো কি! মনে কোন দাগই যেন পড়েনা ওদের। কোন প্রকাশ ও নাই।
কজন আদিবাসী কম বয়সী মেয়ে নাচ মহলে কাজ করছিল।
উপর তলা তে ও কাজ চলছিল। ঝাড় মোছ। বাঈজী দের আনতে না কি গাড়ি গেছে। আসছে। বারমহলে থাকবে ওরা।
ওদের কাছে রাতে থাকবে ক টা মেয়ে। ফাই ফরমাস খাটার জন্যে। নতুন বৌ দেখল তার তেমন কাজ নাই। এদিকে সন্ধ্যে হয়ে এলো। নন্দরাণী তাকে নিয়ে গেল দোতালায়। একটা খুব সাজানো ঘরে। এমন ঘর জীবনে কোন দিন দেখেনি সে।
" কি রে নান্দী কান্না কাটি করবে না তো আবার "
বাবু বোতল খুলে বসলেন। নান্দী একটু হবে না কি। লে লে।
দ্যাখ যদি খায় একটু। তো দে। আলাদা একটা গ্লাস নিয়ে এলো নান্দী। নিজে খেল। ওকে বলল খেয়ে দ্যাখ। এত ভালো জিনিস তো আর দেখিসনি। ওর স্বামী ; শ্বশুর রা ও খায়।
বাপের ঘরে ও দেখেছে। নিজের ঠাকুমার সঙ্গে সাহেব বাবুর ঘরে ও দেখেছে। ওর ঠাকুমা ও খেত। সাহেব বাবুর সাথে।
ওর ঠাকুমা ও সাহেব বাবুর ঘরে মেয়ে নিয়ে যেত শুঁড়ি পাড়া থেকে। দলুই পাড়া থেকে। নতুন বৌ তখন ছোট। তবে বুঝত।
মেয়ের মন। একেবারে আনাড়ি তা নয়।
এখানে সে তো বুঝেই গেছে তার কি কাজ। দিতে হবে। জমিদার বাবুকে তার শরীর টা নেবে । সে ও নন্দ রাণী র কাছ থেকে নিয়ে একটু
খেয়ে দেখল। ভালোই তো। আর একটু।
একসময় নন্দরাণী নীচে চলে গেল।
জমিদার বাবু র তর সইছিল না আর।
যা হবার সবই হল।
ছাড়তেই চায়না। পারলে সারা রাত ই যেন -
কতক্ষণ পরে ছাড়া পেয়েছিল কে জানে
যাই হোক। বাবু ইনাম দিলেন। চকচকে গোল চাকতি।
--- আজ যা। কাল কিন্তু সাহেব বাবুদের মন ভরিয়ে দিতে হবে। ঠিক সময়ে চলে আসবি।
নন্দরাণী তাকে নিয়ে নিজেদের পাড়ায় চলল।
যেতে যেতে বলছে " আগে তো সুন্দরী নতুন বৌ এলে আগে
বাবুদের কাছেই আসতে হত "।
" তা তুই তো এলি বেশ কিছু দিন পরে লো। "
" কাল ভালো করে মন জুগিয়ে দিবি। তোর কপাল খুলে যাবে
- আর তোমার?
-" আমার ও কিছু হবে। আর তো তোদের মতো বয়েস নাই -
আমাদিকে আর কে ছোঁবে বল দিকি "
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ২ নং পাতা শেষ
।। পটের বিবি ঃনতুন বৌ ।। ৩ নং পাতা আরম্ভ।
তারপরের দিনের সন্ধ্যা।
ঝাড়বাতি র আলো য় ঝলমল করছে নাচ মহল। সুগন্ধি ছড়ানো হয়েছে। আসরের মাঝখানে বাঈজী আলো করে বসে আছে। তার চারপাশে তার সাগরেদ রা। বেহালা ; সারেঙ্গী ; তবলা।
বর্ধমান না কলকাতা থেকে এই বাঈজী এসেছে।
নাচমহলের চারদিকে বাবুরা বসে আছেন চেয়ারে। সাহেব বাবুদের আলাদা চেয়ার। লাল গদি আঁটা।
আজ অনেক মেয়েকে জুটিয়ে এনেছে নন্দ ; পদ্ম ; লক্ষ্মী রা।
নতুন বৌ সবাইকে দেখছে। তার চেয়ে কি কেউ বেশি সুন্দরী!
না তেমন তো মনে হচ্ছে না। তবে সাঁওতাল মেয়ে গুলো বেশ
সেজেছে। তারাই সব পরিবেশন করছে। অঢেল পানীয়। লাল
সাদা। আর কষা মাংস। মাংসের পকোড়া।
গানও চলছে। বাজনা ও। বাঈজী মাঝে একবার নাচ ধরল।
ঘাঘরা ঘুরল চক্রাকারে।ঘুঙুর এর তালে তালে বাজনা।
সেলাম ঠুকে ইনাম আদায়।
কত রকমের বাহবা।। হাততালি।
শেষ মেশ বাবু রা ও নেমে পড়ল নাচে। বাঈজীর সাথে। আর এই বার
বাকী সব মেয়ে রাও চারদিকে গোল করে হাতে হাত ধরে ঘুরতে লাগলো।
বাবুদের যার ভাগে যে পড়ল। তাকেই বগল দাবা করে নাচ।
নতুন বৌ এর দিকে নজর সবার। কিন্তু সবাই জানে ও আজ সাহেব বাবুর জন্যে। সাহেব বাবু তো এমন জড়িয়ে ধরল!
তাকে বগল দাবা করে প্রথমে ই চলে গেল দোতালায়।
- তুমি তো বহুত সুন্দরী আছে। তোমাকে আমি কলকাতা নিয়ে যাবে। তোমাকে আমি রাখবে। " " আমাদের রক্ত আছে তোমার শরীরে "। বহুত খুব
সাহেব তো তাকে ছাড়তেই চায়না। রাত পার না করে ছাড়বে বলে মনে হচ্ছে না। ক্ষমতা আছে বটে। শেষ করে ও শেষ হয়না
আবার আদর।
সাহেব তাকে অনেক ইনাম দিল। সাহেবকে জমিদার বাবু আগেই জানিয়ে দিয়েছিল " আপনার জন্য চমৎকার চীজ থাকবে "।
আর এক সাহেব তার নজর ও ছিল ওরদিকেই। তবে বড় সাহেবকে বাদ দিয়ে তো আর তার ভাগে আসবে না।
মনে মনে ইচ্ছে অন্য কোন বারে।
বাকী রা যে যেখানে পেরেছে জায়গা নিয়েছে।
বাবুর ঘরে বাঈজী।
নাচমহলে আজ নরক গুলজার।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ৩ নং পাতা শেষ
তারপরের দিনের সন্ধ্যা।
ঝাড়বাতি র আলো য় ঝলমল করছে নাচ মহল। সুগন্ধি ছড়ানো হয়েছে। আসরের মাঝখানে বাঈজী আলো করে বসে আছে। তার চারপাশে তার সাগরেদ রা। বেহালা ; সারেঙ্গী ; তবলা।
বর্ধমান না কলকাতা থেকে এই বাঈজী এসেছে।
নাচমহলের চারদিকে বাবুরা বসে আছেন চেয়ারে। সাহেব বাবুদের আলাদা চেয়ার। লাল গদি আঁটা।
আজ অনেক মেয়েকে জুটিয়ে এনেছে নন্দ ; পদ্ম ; লক্ষ্মী রা।
নতুন বৌ সবাইকে দেখছে। তার চেয়ে কি কেউ বেশি সুন্দরী!
না তেমন তো মনে হচ্ছে না। তবে সাঁওতাল মেয়ে গুলো বেশ
সেজেছে। তারাই সব পরিবেশন করছে। অঢেল পানীয়। লাল
সাদা। আর কষা মাংস। মাংসের পকোড়া।
গানও চলছে। বাজনা ও। বাঈজী মাঝে একবার নাচ ধরল।
ঘাঘরা ঘুরল চক্রাকারে।ঘুঙুর এর তালে তালে বাজনা।
সেলাম ঠুকে ইনাম আদায়।
কত রকমের বাহবা।। হাততালি।
শেষ মেশ বাবু রা ও নেমে পড়ল নাচে। বাঈজীর সাথে। আর এই বার
বাকী সব মেয়ে রাও চারদিকে গোল করে হাতে হাত ধরে ঘুরতে লাগলো।
বাবুদের যার ভাগে যে পড়ল। তাকেই বগল দাবা করে নাচ।
নতুন বৌ এর দিকে নজর সবার। কিন্তু সবাই জানে ও আজ সাহেব বাবুর জন্যে। সাহেব বাবু তো এমন জড়িয়ে ধরল!
তাকে বগল দাবা করে প্রথমে ই চলে গেল দোতালায়।
- তুমি তো বহুত সুন্দরী আছে। তোমাকে আমি কলকাতা নিয়ে যাবে। তোমাকে আমি রাখবে। " " আমাদের রক্ত আছে তোমার শরীরে "। বহুত খুব
সাহেব তো তাকে ছাড়তেই চায়না। রাত পার না করে ছাড়বে বলে মনে হচ্ছে না। ক্ষমতা আছে বটে। শেষ করে ও শেষ হয়না
আবার আদর।
সাহেব তাকে অনেক ইনাম দিল। সাহেবকে জমিদার বাবু আগেই জানিয়ে দিয়েছিল " আপনার জন্য চমৎকার চীজ থাকবে "।
আর এক সাহেব তার নজর ও ছিল ওরদিকেই। তবে বড় সাহেবকে বাদ দিয়ে তো আর তার ভাগে আসবে না।
মনে মনে ইচ্ছে অন্য কোন বারে।
বাকী রা যে যেখানে পেরেছে জায়গা নিয়েছে।
বাবুর ঘরে বাঈজী।
নাচমহলে আজ নরক গুলজার।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ৩ নং পাতা শেষ
।।পটের বিবি ঃ নতুন বৌ।। ৪ নং পাতা আরম্ভ।
নতুন বৌ এর রক্তেই ছিল বিদেশি নাগিন কন্যার বিষ।
নিজেকে বুঝতে তার একদম ই সময় লাগেনি।
যা পার ; যতটা পার আদায় করে নাও জমিদার বাবুদের কাছ থেকে। সাহেব বাবু দের কাছ থেকে। গুছিয়ে নাও।
তার স্বামী কে ও খুশী করে দিল টাকা দিয়ে। সেই টাকা তে সে বাবুয়ানি করে। ফুটানি মারে। দামী মাল খায়। তার র্যালা দেখে কে! তেমনি পোষাক । সাটিনের জামা। আর বোলচাল!
জমিদার বাবুর বাঁধা মেয়ে মানুষ হয়ে গেল সে।
আবার সাহেব বাবুরা আছে। বড় সাহেব ; ছোট সাহেব।
সবাই কে সে খুশী করে দিল।
জমিদার বাবু তার স্বামী কে কাজ দিয়ে দিল। প্রায়ই বাইরে যেতে হয় খাজনা আদায়কারী র সঙ্গে।
বড় সাহেব তাকে নিয়ে একবার দিন কয়েকের জন্যে কলকাতা নিয়ে গেল। সেখানে ও কত সাহেবকে মজিয়ে দিল।
রোজগার করল দু হাতে।
সে বুঝেছে টাকা থাকলে কেউ কিছু বলতে পারবেনা। কে আর কি বলবে। সে জমিদার বাবুর মেয়ে মানুষ।
টাকা থাকলে ই হল। শরীরে কি দাগ থাকে না কি। টাকাতে সব মুছে যায়। জমিদার বাবু তাকে জমি দিয়েছে। ঘর করে দিয়েছে। সাহেব বাবু তাকে সোনার চেন দিয়েছে। তার এমন
চকচকানি। যখন পরে বেরোয় লোকে জুলজুল করে দ্যাখে।
এখন নন্দ ; পদ্ম ; লক্ষ্মীরাণীরা তার কাছে হাত পাতে।
জমিদার গিন্নী মা তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
সে বোঝে জমিদার গিন্নী র চোখে আগুন। মনে আগুন।
সে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কিন্তু সে কি করবে। সে তো আর আগুন নিভাতে পারবে না।
তার রূপ আছে। শরীর আছে। সে বিক্রি করেছে।
বাবুরা কিনেছে। বাবুদের টাকা আছে।
না। তার মনে কোন বিকার নেই। কোন আফসোস নাই।
তাকে ভোগ করল বাবুরা। সে ও ভোগ করল। কত জনকে চিনল ভিতরে বাইরে।
কত কি দেখল।
কলকাতা গেল।
আরও কত জায়গায় গেল।
কত কুঠী বাড়িতে রাত কাটাল।
কত সাহেব বাবুর সাথে ।
তার ছেলে মেয়ে রাও জন্মেছে কত রকমের রক্ত নিয়ে।
সে একমাত্র জানে। কোন টা কার।
কিন্তু সে সব থেকে ভালোবাসে সবচেয়ে ফর্সা ছেলেটাকে।
ওর শরীরে সাহেব বাবুর রক্ত।
সাহেব বাবু তাকে চার্চের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে।
তাহলে আর কি সে করতে পারে।
সব তো করেছে এই শরীর টা র থেকেই। এটাই তার মূলধন।
তার যা বেচার ছিল বেচেছে।
সবাই তো বাজারে এসেছে বেচার জন্যেই।
এ জগৎ এক বিরাট বাজার।
আবার সে জানে তাকে সাহেব বাবুদের কাছে পাঠিয়ে জমিদার বাবু কম রোজগার ; কম সুবিধা ভোগ করেনি।
এ দুনিয়ায় দেওয়া আর নেওয়া র ই খেলা।
এ খেলা চলছে ই।
এ খেলা চলবেই।
অতএব -
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ৪ নং পাতা শেষ। সমাপ্ত।
এই নতুন বৌ এর নাম কি ছিল কেউ জানেনা। সব নামই কাল্পনিক। সে কি আর আজকের ঘটনা। কে বলবে সে সব কথা। এক চুল পাকা বুড়ি মা বয়েস তার কত সে জানেনা।
আমাকে বলেছিল। কম বয়সে তারা শুনেছিল। ইংরেজ সাহেবদের দেখেছিল। নীল চাষ করাতো। শিকার করতে যেত
নীলকুঠির জঙ্গলে। তিতির ; খরগোশ ; হাঁস মারত।
গুলির খোল কুড়িয়ে এনে দিলে মাঝখানে গোল ফুটো তামার পয়সা দিত সাহেব বাবুরা।
সে ছিল এক পটের বিবি।
আর বাবা ঐ বাঈজী আর এই রকম রাক্ষসী মেয়ে দের জন্যই ধ্বংস হয়ে গেল বাবুদের সব। এক বাবু যে কি করে
মরেছিল কেউ জানে না। অনেকে তখন নানা রকম কথা বলত
বলত রাণী মা ই না কি বিষ খাইয়ে মেরে দিয়েছিল।
কে জানে কি! আর কি সব মনে আছে বাবা। সে সব হারিয়ে গেছে । আর মনে পড়ে না৷
নতুন বৌ এর রক্তেই ছিল বিদেশি নাগিন কন্যার বিষ।
নিজেকে বুঝতে তার একদম ই সময় লাগেনি।
যা পার ; যতটা পার আদায় করে নাও জমিদার বাবুদের কাছ থেকে। সাহেব বাবু দের কাছ থেকে। গুছিয়ে নাও।
তার স্বামী কে ও খুশী করে দিল টাকা দিয়ে। সেই টাকা তে সে বাবুয়ানি করে। ফুটানি মারে। দামী মাল খায়। তার র্যালা দেখে কে! তেমনি পোষাক । সাটিনের জামা। আর বোলচাল!
জমিদার বাবুর বাঁধা মেয়ে মানুষ হয়ে গেল সে।
আবার সাহেব বাবুরা আছে। বড় সাহেব ; ছোট সাহেব।
সবাই কে সে খুশী করে দিল।
জমিদার বাবু তার স্বামী কে কাজ দিয়ে দিল। প্রায়ই বাইরে যেতে হয় খাজনা আদায়কারী র সঙ্গে।
বড় সাহেব তাকে নিয়ে একবার দিন কয়েকের জন্যে কলকাতা নিয়ে গেল। সেখানে ও কত সাহেবকে মজিয়ে দিল।
রোজগার করল দু হাতে।
সে বুঝেছে টাকা থাকলে কেউ কিছু বলতে পারবেনা। কে আর কি বলবে। সে জমিদার বাবুর মেয়ে মানুষ।
টাকা থাকলে ই হল। শরীরে কি দাগ থাকে না কি। টাকাতে সব মুছে যায়। জমিদার বাবু তাকে জমি দিয়েছে। ঘর করে দিয়েছে। সাহেব বাবু তাকে সোনার চেন দিয়েছে। তার এমন
চকচকানি। যখন পরে বেরোয় লোকে জুলজুল করে দ্যাখে।
এখন নন্দ ; পদ্ম ; লক্ষ্মীরাণীরা তার কাছে হাত পাতে।
জমিদার গিন্নী মা তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
সে বোঝে জমিদার গিন্নী র চোখে আগুন। মনে আগুন।
সে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কিন্তু সে কি করবে। সে তো আর আগুন নিভাতে পারবে না।
তার রূপ আছে। শরীর আছে। সে বিক্রি করেছে।
বাবুরা কিনেছে। বাবুদের টাকা আছে।
না। তার মনে কোন বিকার নেই। কোন আফসোস নাই।
তাকে ভোগ করল বাবুরা। সে ও ভোগ করল। কত জনকে চিনল ভিতরে বাইরে।
কত কি দেখল।
কলকাতা গেল।
আরও কত জায়গায় গেল।
কত কুঠী বাড়িতে রাত কাটাল।
কত সাহেব বাবুর সাথে ।
তার ছেলে মেয়ে রাও জন্মেছে কত রকমের রক্ত নিয়ে।
সে একমাত্র জানে। কোন টা কার।
কিন্তু সে সব থেকে ভালোবাসে সবচেয়ে ফর্সা ছেলেটাকে।
ওর শরীরে সাহেব বাবুর রক্ত।
সাহেব বাবু তাকে চার্চের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে।
তাহলে আর কি সে করতে পারে।
সব তো করেছে এই শরীর টা র থেকেই। এটাই তার মূলধন।
তার যা বেচার ছিল বেচেছে।
সবাই তো বাজারে এসেছে বেচার জন্যেই।
এ জগৎ এক বিরাট বাজার।
আবার সে জানে তাকে সাহেব বাবুদের কাছে পাঠিয়ে জমিদার বাবু কম রোজগার ; কম সুবিধা ভোগ করেনি।
এ দুনিয়ায় দেওয়া আর নেওয়া র ই খেলা।
এ খেলা চলছে ই।
এ খেলা চলবেই।
অতএব -
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ৪ নং পাতা শেষ। সমাপ্ত।
এই নতুন বৌ এর নাম কি ছিল কেউ জানেনা। সব নামই কাল্পনিক। সে কি আর আজকের ঘটনা। কে বলবে সে সব কথা। এক চুল পাকা বুড়ি মা বয়েস তার কত সে জানেনা।
আমাকে বলেছিল। কম বয়সে তারা শুনেছিল। ইংরেজ সাহেবদের দেখেছিল। নীল চাষ করাতো। শিকার করতে যেত
নীলকুঠির জঙ্গলে। তিতির ; খরগোশ ; হাঁস মারত।
গুলির খোল কুড়িয়ে এনে দিলে মাঝখানে গোল ফুটো তামার পয়সা দিত সাহেব বাবুরা।
সে ছিল এক পটের বিবি।
আর বাবা ঐ বাঈজী আর এই রকম রাক্ষসী মেয়ে দের জন্যই ধ্বংস হয়ে গেল বাবুদের সব। এক বাবু যে কি করে
মরেছিল কেউ জানে না। অনেকে তখন নানা রকম কথা বলত
বলত রাণী মা ই না কি বিষ খাইয়ে মেরে দিয়েছিল।
কে জানে কি! আর কি সব মনে আছে বাবা। সে সব হারিয়ে গেছে । আর মনে পড়ে না৷
No comments:
Post a Comment