।। বীরভূমের " লোহামহল " ।। একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা প্রণব ভট্টাচার্য।। ১ ম পাতা
অতীতের বীরভূম যে প্রচুর পরিমানে লোহার মতো অতি প্রয়োজনীয় ধাতু উৎপাদন করত তা আর আজ আমাদের অনেকের মনে নেই।
বীরভূমের পশ্চিম প্রান্তের ডামরা ; দেউচা ; মাসড়া ; মলুটি ;
গণপুর ; মল্লারপুর ; বালিয়া ; নারায়ণপুর ইত্যাদি এলাকা
" লোহামহল " নামেই পরিচিতি লাভ করেছিল।
নিকটস্থ পশ্চিমের ল্যাটেরাইট মাটির একটু গভীরেই উৎকৃষ্ট
মানের লোহাপাথর। যে লোহাপাথরে লোহার পরিমান গড়ে
৪০%। কোথাও কোথাও ৬০% পর্যন্ত।
সেই লোহাপাথর থেকে স্থানীয় পদ্ধতিতে লোহা উৎপাদিত হত।
যে পদ্ধতি অতি প্রাচীন। " অসুর "সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই পদ্ধতিতে ই লোহা গলাতো। ডামরার কাছে অতি প্রাচীন সেই
চুল্লির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। " অসুর কাহানী " র অসুরদের নেতার নামও " লোহাসুর "। তাঁর ছোঁড়া তীর যেখানে গিয়ে পড়ত সেখানে ভালো লোহাপাথর পাওয়া যেত। এমন ই
কাহিনী। পরবর্তী সময়ে এই অসুরেরা আরও পশ্চিমে সরে যায় লোহাসুরের নেতৃত্বে । আরও ভালো লোহাপাথরের সন্ধানে। দূরে ছোটনাগপুর ; ঝাড়খণ্ডের পাহাড়ি মালভূমি র
দিকে।
রাঢ় ভূখণ্ডের এই প্রান্তীয় এলাকা পশ্চিমের মালভূমির ই পূর্বে প্রসারিত অংশ। তাই ভূ চরিত্রে মিল। রাঢ় এই শব্দটির উৎস
কোল ভাষার " রৌঢ় দিশম "। নুড়ি ; পাথর ; পাহাড়ের দেশ।
নদী ; ঝর্ণাতেও পাথর। পাথরে পাথরে ধাক্কা খেয়ে ছুটছে জলধারা। রাঢ় মানেই রুক্ষ ; কর্কশ ; শক্ত মাটি র দেশ।
" লাঢ় "। লাঢ় এই শব্দটির প্রাচীনতম সন্ধান মেলে জৈন
ধর্মগ্রন্থ " আচারাঙ্গ সূত্রে "। জৈন সাধু " নির্গ্রন্থ পুত্র " মহাবীর
এই পথহীন ; জঙ্গলাকীর্ণ দেশে পরিভ্রমণ করেছিলেন।
সে আলাদা প্রসঙ্গ।
এই এলাকার ভূত্বকের গঠন কার্য্য শেষ হয় ৪র্থ হিমযুগের শেষে - আজ থেকে প্রায় দশ হাজার বছর আগে। অজয় ;দামোদর ; ময়ূরাক্ষী ইত্যাদি নদনদীর সৃষ্টি সেই সময়েই।
কালের বর্তমান পর্বের ( cainozoic era) শেষ যুগ (epoch)
দুটি প্লাইস্টোসিন এবং হেলোসিন নামে পরিচিত। প্লাইস্টোসিন
পর্বের শুরু হয়েছিল ৩০- ৩৫ লক্ষ বৎসর পূর্বে। এবং এই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল ১০ হাজার বৎসর পূর্বে।
তারপর শুরু হয়েছে হেলোসিন পর্ব। এবং আমরা এখন বাস করছি এই পৃথিবীর বুকে সেই হেলোসিন যুগেই। বর্তমান পৃথিবীর ভূমিভাগ গঠন এই যুগেই শেষ হয়েছে। প্রাণী বা উদ্ভিদ জগতে যে সকল প্রজাতি এখন বর্তমান রয়েছে তাদের বিবর্তন ও এই প্লাইস্টোসিন যুগেই শেষ হয়েছে।
এই কালটি (epoch) আবহাওয়া তত্ত্বে " গ্রেট আইস এজ "
বা দীর্ঘতম হিমযুগ নামে পরিচিত।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ১ ম পাতা শেষ
No comments:
Post a Comment