Thursday, 8 September 2022

।। এলেমবাজার নীলামবাজার ইলামবাজার

। ।এলেমবাজার। নীলামবাজার। ইলামবাজার।।। 

না। তুলাপট্টিতে কোন নীলামের বাজার আর বসেনা আজ। 
  তুলাপট্টিতে একদিন সুতা ; তুলা ; তসরের থান ; সুতী বস্ত্রের নীলামের বাজার বসত। কত এলেমদার মানুষ দের আনাগোনা। আজ যদি  বলেন যে তুলাপট্টি জায়গাটি কোথায় - ইলামবাজার এর আজকের যে কোন মানুষ চুপ করে থাকবেন। কে আর খোঁজ রাখে। কি হবে সে অতীত কে জেনে।
পুরানো থানার পাশে বিস্তৃত মাঠে সে হাট বসত একদিন।
জেলা গেজেটিয়ারে  ও' ম্যালি বলছেন। ১৯১০ সালে।
গুরুসদয় দত্ত মশাই তখন বীরভূমে র জেলা কালেক্টর।
ইলামবাজারে উদ্বোধন করছেন একটি দাতব্য চিকিৎসা লয়।
সেই মার্বেল ফলকটি কি আজকের গ্রামীন হাসপাতালে র কোন কক্ষে সংরক্ষিত হয়েছে কি না  জানিনা।
আজকের পোষ্ট অফিস গড়ে উঠেছে আরস্কিন সাহেবের কুঠি বাড়ির কিছুটা জায়গা নিয়ে। আর সেই বিরাট চারদিক খোলা বারান্দার ডাকবাংলো। আরস্কিন সাহেবের আউটহাউস।
নিশ্চিহ্ন। সেই উঁচু মোটা ভিতের মোটা থামের খোলা বারান্দার আরামদায়ক বাংলো বাড়ি। যেখানে কেন্দুলীর মেলা দেখতে যাবার পথে একরাত্রি বিশ্রাম নিয়েছিলেন সস্ত্রীক সিলভা লেভী র মতো পণ্ডিত। শান্তিনিকেতন থেকে এসেছিলেন।
সংলগ্ন এলাকার উত্তর দিকে ছিল আরস্কিন পরিবারের সমাধি স্থল। ছোট্ট কিন্তু সুন্দর। প্রত্যেকটি সমাধি। সাদা মার্বেল ফলকে লেখা নাম ; জন্ম সাল ; জন্ম স্থান ; মৃত্যু তারিখ।
কোথায় জন্ম ইংল্যান্ড এর কোন শায়ারে। আর মৃত্যু এই ইলামবাজারে। 
ছোটবেলায় ইলামবাজার হাইস্কুলে পড়তে গেলাম। ক্লাস নাইন থেকে। আমাকে কেউ বলেনি। কেউ দেখায় নি। একদিন খুঁজে পেয়েছিলাম।
কোথায় জন্ম আর কোথায় মৃত্যু!  আমার মন কেমন করত।
মাঝে মাঝে গিয়ে কবরস্থানে বসে থাকতাম।
পাশেই উত্তরে ফরাসী কুঠির একটা ভাঙ্গা দেওয়াল। দেওয়াল টি বেশ উঁচু। নিশ্চিত ভাবেই দোতালা ছিল।
  আজ সব নিশ্চিহ্ন। নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্যই নিশ্চিহ্ন। 
না আমরা রক্ষা করিনি। করার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে ই করিনি। সব ইঁট ; কাঠ ; পাথর ; সাদা মার্বেল ফলক সব ছাড়িয়ে দিনের পর দিন নিয়ে চলে গেছি।
আজকের ইলামবাজারে সেদিনের ইলামবাজার কে খোঁজা মূর্খামি।
  আজ সে এক বিরাট গঞ্জ। মিউনিসিপালিটির মতো বিস্তৃতি।
চারপাশের গ্রাম থেকে অবস্থাপন্ন মানুষেরা এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছেন। মূল ইলামবাজার কে আজ খুঁজে পাওয়া দায়।
আমাদের ছোটবেলায় ভূগোল বইয়ে কি কোথায় কিজন্য বিখ্যাত এই পর্বে লেখা থাকত- ইলামবাজার। বীরভূম জেলায়।লাক্ষা বা গালা শিল্পের জন্য বিখ্যাত কেন্দ্র।
এলেমবাজার। বাজারে এলাম গো। যে বাজারের ' এলেম ' মানে দাম আছে। কত সম্ভ্রান্ত মানুষজনের আনাগোনা।
নীলাম বাজার। হাঁকডাকের বিরাট বাজার। হতে পারে নীলাম থেকে ইলামবাজার।
আর ইলম বা ইলাম মানে ই তো লাক্ষা বা গালা। তার বাজার।
  আর আজ একঘর ' নুড়ি ' বা লরি নেই যারা গালার কাজ করেন। সব পদবী বদলে নিয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই পেশাও। 
শেষ দুই ভাই ছিলেন নেপাল আর গোপাল গুঁই।ঘাড় গুঁজে অবসন্ন চিত্তে টুকটাক কাজ করতেন। মলিন বেশ। ম্লান আলো চোখে। 
রবীন্দ্রনাথ এই দুই ভাইকে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রশিক্ষক হিসাবে শ্রীনিকেতনের শিল্প সদনে। শেষ চেষ্টা করেছিলেন।( চলবে)

আরস্কিন সাহেবের সিমেট্রি র ছবি সত্যশ্রী উকিল দার কাছ থেকে পেয়েছি। মুকুল দে মশাই এর তোলা। এ ছবি অন্য আর কারোও কাছে বোধহয় নাই।

অজয়ের উত্তরে উত্তর রাঢ়

অজয়ের উত্তরে উত্তর রাঢ়। বজ্রভূমি। বীরভূমি - বীরভূম। 
দক্ষিণে দক্ষিণ রাঢ়। সুহ্ম ভূমি। বা সুহ্ম।
চোল রাজ রাজেন্দ্র চোল রাঢ় আক্রমণ করেছিলেন।
তাঁর তিরুমালায় গিরিলিপি তে এই উত্তর রাঢ় এবং দক্ষিণ রাঢ় এর কথা আছে। তিনি রাঢ়দেশ জয় করেছিলেন।
রাঢ় বা লাঢ় দেশের কথা জৈন ধর্মগ্রন্থ আচারাঙ্গ সুত্র তে সর্বপ্রথম পাওয়া যায়।
অর্থাৎ অজয় সেই প্রাচীন কাল থেকেই প্রাকৃতিক সীমারেখা।
আর প্রাকৃতিক সীমারেখা কে গ্রহন করার নির্দেশ তো কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্র এর ' জনপদ নিবেশ ' অধ্যায়ে ই দিয়েছেন।
ইংরেজ শাসনে ১৮০৬ সালে অজয়  বীরভুম এবং বর্ধমান এর সীমারেখা হিসাবে গৃহীত হয়।
চীনের হোয়াংহো বা এদেশের দামোদর এর মতো অজয় ' দুঃখের নদী ' হিসাবে আখ্যা না পেলেও অজয়ের প্রবল বন্যায়
বারবার দুপাশ ভেসেছে। বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
১৯৭৮ এর ভয়ংকরী বন্যা র স্মৃতি তো এখনো ক্ষতের মতো
জেগে আছে অজয় পারের মানুষ দের মনে।
তার আগে ১৯৩৫;৪৩; ৫৬ এই সব সালের বন্যা ও ছিল প্রবল।
১৮৬৬-৬৭ এবং ১৮৭৩ সালের Bengal Embankment Act অনুযায়ী ১৮৭৩ সালে অজয়ের দক্ষিণ পাড়ে গোরা বাজার বা গৌরবাজার থেকে কাজলদিঘী পর্যন্ত ৭মাইল ৩৯৪০ ফুট মাটির বাঁধ নির্মান করানো হয়। পরে পরে ই
বিষ্ণু পুর থেকে অর্জুন বাড়ি পর্যন্ত ৪ মাইল এবং তারপরে
সাতকাহনিয়া থেকে  সাগরপুতুল পর্যন্ত বাঁধ তৈরি হয়।
নীচে র দিকে বেশ কিছুটা জমিদারী বাঁধ ছিল।
বন্যার জলের তোড়ে বার বার মাটির বাঁধ ভেঙ্গেছে। আবার
কিছুটা দক্ষিণে পূর্বে সরে গিয়ে নূতন বাঁধ নির্মিত হয়েছে।
এ বাঁধের ইতিহাস ও তাই উপেক্ষার নয়। বিষ্ণুপুরের বাঁধের
গায়ের শতাব্দী প্রাচীন শিমূল গাছ গুলিকে দেখলে বোঝা যায়
তাদের প্রাচীনত্ব।
নদী বাঁধের দু ধারে ই পরিকল্পিত ভাবে এই সব গাছ লাগানো
হয়েছিল। শিমূল ; যজ্ঞডুমুর ; অর্জুন এই সব গাছ।
বেশ কিছু আছে। অনেক নাই।
সাতকাহনিয়া থেকে অর্জুনতলা পর্যন্ত বাঁধের গায়ের প্রাচীন গাছ গুলি ৭৮ এর বন্যায় উপড়ে ভেসে যায়। বাঁধের সেই সৌন্দর্য ও নষ্ট হয়ে যায়।
এই নদী বাঁধের উপর দিয়েই সারাদিন ই মানুষের যাতায়াত।
এটা একটা প্রধান পথ ও বটে।
অযোধ্যা বনকাটি সাতকাহনিয়া বসুধা এলাকার মানুষ জনের
নিকটবর্তী গঞ্জ ইলামবাজার যাবার এটাই প্রধান পথ।
------------------------------------     ------------ -----------------------------------
সংযোজন। আজ রবিবার। ১২/৭ /২০ 
সাতকাহনিয়া সেচ অফিসে বর্তমানে কোন অফিসার আছেন কি না জানিনা। আগে অফিসার দের দেখতাম সাইকেল নিয়ে বাঁধ পরিদর্শন করতে।
একটা গোরু র বাঁধে ওঠার ও অধিকার ছিলনা।
গোরুর গাড়ি তো দূর অস্ত
আর এখন - 
সে কথা সবাই জানে। কিন্তু জানে না
যাইহোক কিছু বাঁধা কনট্রাকটর আছেন এই দপ্তরে।
এই সেকশন এর এক বিশেষ নাম আছে
ঠিক বর্ষা নামার আগে বাঁধের খানা খন্দ ভরাট করার জন্য ট্রাকটারে করে কিছু বালি মাটি নামানো হয়।
অফিসার ভদ্রলোক কে আমার অনুরোধ একবার অর্জুনতলা পর্যন্ত ঘুরে আসুন। এক পশলা বৃষ্টির পর। 
এইটাই আমাদের ইলামবাজার যাবার কাছের পথ।
এই পথটাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেবেন না। একান্ত অনুরোধ। 
( সাতকাহনিয়া ডাক বাংলো র কথা পরে হবে)

পুরনো পোষ্ট। ভালো লাগলে পড়ুন।

ইলামবাজার এক গঞ্জের কথা

হয়তো পড়েছেন। 
হয়তো অনেকের নজরে আসেনি। 
পড়ুন এক প্রাচীন জনপদের ইতিহাস 
আরও অনেক কথা কাহিনী আছে এই জনপদের। 
বিস্তৃত লেখার ইচ্ছা আছে। 
 বন্ধুদের সাহায্য চাই। 
 ইলামবাজার ব্লক প্রশাসনের ও।

তোমার তুলনা তুমি।।

ইলামবাজার। লক্ষ্মী জনার্দন মন্দির। 
 মন্দির গাত্রের এই টেরাকোটা কাজ টি দেখুন। 
  তুলনাহীনা। 
  " তোমার তুলনা তুমিই তো গো মা "
 নমস্য সেই সব শিল্পী রা। 

সাতকাহনিয়ার সাতকাহন কথা

কথা - সাতকাহন।। প্রথম পর্ব। প্রথম অধ্যায় 
কত কথা তার।কথার কি আর শেষ আছে নাকি। লতার মতো বেড়েই যায়। বয়সে র কি গাছ পাথর আছে না কি এ গাঁয়ের। 
'" কথা তার কাহন সাতেক  নামটি সাতকাহন "
সাতকাহন কড়ি দিয়ে কে যে কবে এ গাঁয়ের চৌহদ্দি   কিনেছিল তার হদিস কে দেবে গো আর। সাত কাহন খড় বিছিয়ে ও শেষ হয়না যে। এ গাঁ এত বড়। এত ছড়ানো।
তিনটি তার অংশ। সাতটি পাড়া। নাই এমন কোন জাত নাই।
গাঁ য়ে যে কত পুকুর আর ডোবা। ঘোষ ; বেনে ; মালাকার ; সেন ; শুঁড়ি ; বামুন ; দে ; শীল ; এই সব পদবী নামে পুকুর ডোবা তো আছেই। আছে গোলাম পুকুর ;। কিন্তু কে বলবে কেন পুকুরের নাম ' প্রেমসায়র '। ছিল অনেক বাবাজী বোষ্টম।
ছিল তাদের আখড়া। আছে বোরেগী গোড়ে। ছিল গোপাল সায়ের। গাঁয়ের মাঝে বিশাল সে বটবৃক্ষ। বৃক্ষ তুমি বট হে বটবৃক্ষ। নাম তার বাবাজী বটতলা। আছে অনেক পুরনো কালো তমাল। অতি শীতল তার ছায়া। বুড়ো বাবাজীর আখড়া নাকি ছিল সেখানে। গোটা গাঁ জুড়েই কুমোর আর তাঁতিদের বাস। কামার কুমোর ; ছুতোর ; মালাকার ; স্যাকরা ; বেণে কে নেই।তামুলী রা এসেছে। নানাবিধ ব্যবসা করে। পরবর্তী সময়ে এই তাম্বুলী বংশের রজনী কান্ত হালদার  কেন্দুলীর কাঙ্গাল ক্ষেপা চাঁদের প্রধান ভক্ত শিষ্য হয়ে নিজ পরিবারকে যথেষ্ট প্রভাবশালী হিসাবে গড়ে তোলেন।  অজয়ের দক্ষিণ পাড়ে কারিগর দের জমজমাট গাঁ।
এত তালগাছ যে মাটিতে রোদই পড়েনা। গা ছমছম পুকুর পাড়। নদী ধারে নীলের ক্ষেত। বাবাজী আখড়া। কলাবাগানের ঘাটে ছোট নৌকোর আনাগোনা। হাঁড়িরা খেয়া বায়। ওপারে নারানপুর। উদয়পুর ; ক্ষুদ্দুপুর ; ভরতপুর নানা গাঁ।গাঁয়ের দুদিকে দুটো ঘাট। উঁচু ডিবি র উপর হাঁড়িপাড়া। মানুষের মাথার সাইজের বেল গাছ ছিল পাড়ার মাঝে। আর ডেঁয়ো মাদারের গাছ। 
খেয়াতো বায় ই। আবার ডাকাতি তে ও যায়। ভাড়া খাটে। কোথায় যে গেল তারা। ছোট বেলাতেও দেখেছি। 
 এপার ওপার নিতি যাতায়াত। নীলক্ষেতে চাষের জন্যে কোঁড়া রা এসেছে। মাল রা আছে। কি তাদের শক্তপোক্ত চেহারা।কি তাদের লাঠিখেলা। 
বাউরী রা আছে। আদি কয়েকঘর। ভালো ঘরামি। একেবারে সোজা মাটির দেয়াল তোলে। ঘর ছায়। খড়ের নৌকো চাল ওরা ছাড়া আর কে ছাইবে।

কুলুরা আছে। ঘরে ঘানি। ক্যাওট রা আছে। নদীতে মাছ ধরে।আর মা মনসার পুজো করে। দশহরায়।
এত পুকুর। মাছ চাষ করে। সবাই কে নিয়ে ভরা ভর্তি গাঁ।
  এই রকম নদী ধারের ছায়া শীতল এক গাঁ য়ে আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে নদী পার হয়ে এলেন এক সুফি সন্ত।
নাম তার সৈয়দ শাহ জাওয়াদ আলী পিতা   সৈয়দ শাহ তকী। ইরানের কেরমানি প্রদেশে তাঁদের আদি  বাড়ি। সেখান থেকে এসেছেন আজমেঢ়ে। সঙ্গী হয়েছেন মির্জা পদবীর এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। শোনা যায় উচ্চ বর্ণের হিন্দু ঘরের মানুষ। সুফি সাধকের প্রভাবে সুফি ধর্মমত গ্রহন করেছেন।
সেখান থেকে নানা দেশ ঘুরে বীরভূমের খুস্টিগিরি। খুশ বা কুশ টিকুরী থেকে এমন নাম।
খুস্টিগিরি তখন সুফী সাধক দের অন্যতম কেন্দ্র। সেখান থেকেই নানা জন ছড়িয়ে পড়েন নানা দিকে।
এই গাঁয়ে এসে নদীর ধারে আস্তানা পাতলেন সৈয়দ শাহ তকী।  এখানে এসেই তাঁর গুরু প্রদত্ত নিমের কাঠি তে পাতা গজিয়েছিল। যেখানে পাতা গজাবে সেখানেই আস্তানা গাড়বে। আর নিম কাঠিটি মাটিতে পুঁতে দেবে। গাছ হবে।
তিনি ইউনানি চিকিৎসা খুব ভালো জানতেন। সাপের কামড় ; পেটের অসুখ ইত্যাদি ভালো করতে পারতেন।
পরবর্তী কালে বর্ধমানের রাজা র মারাত্মক পিত্তশূল ভালো করে দিয়ে অনেক জমি জায়গা লাভ করেন। খ্যাতি তাঁর ছড়িয়ে পড়ে নানা দিকে। অনেকে তাঁর ভক্ত শিষ্য হন।
নদীর ওপারে এপারে। তিনি সেই সময় অত্যন্ত প্রভাব শালী মানুষ হয়ে ওঠেন।
  তাঁর স্ত্রী কি তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন! জানা নেই।
তাঁর ২/৩ পুত্র। এক পুত্র সম্ভবত নিঃ সন্তান ছিলেন।
সেই বংশের গোলাম পাঞ্জাতনের দুই পুত্র। সাহামত আলী  এবং ঈশাহক আলী। সাহামত আলী র পুত্র  সামসুজ্জোহা বিশেষ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। শ্বেত শুভ্র পোষাক।
স্বল্প ভাষী। ইশাহক এর পুত্র আহম্মহ রেজা পরবর্তী জীবনে খুবই নামী হোমিও চিকিৎসক হয়েছিলেন।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা র একটা পরম্পরা তাঁদের পরিবারে এখনও আছে।
সামসুজ্জোহা র দুই পুত্র। বদরুদ্দোজা এবং সাদরে আলা।
বদরুদ্দোজা র স্ত্রী বীরভূমের রাজনগর এর এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। অত্যন্ত সুন্দরী ; ব্যক্তিত্বময়ী মহিলা। বদাই মিঞা র গোলদারি দোকান একসময় খুব চালু হয়েছিল। বদরুদ্দোজা র  ডাক নাম বদাই। স্বল্প কথার ভালো মানুষ। 
তাঁর স্ত্রী র  বাবা ও ছিলেন ডাক্তার। ইব্রাহিম ডাক্তার। মা কিন্তু এই গ্রামের।  সায়রা বিবি এবং রাবিয়া বিবি দুই বোন।
এঁরা বুড়ো সাহেবের আদি বাড়িতে থাকতেন। অত্যন্ত ব্যক্তিত্বময়ী  মহিলা। চেহারা ও তেমন। পারিবারিক বিবাদ বিরোধের নিষ্পত্তি করতেন দক্ষতার সাথে। 
তখন কার সময়ে মাটির দেওয়ালের দোতালা বালাগাছি বাড়ি
যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ এর পরিচায়ক। টিনের ছাউনি হলে তো কথাই নেই।
সামসুজ্জোহা মহাশয়ের পূর্বমুখী দোতালা বালাগাছি বাড়িতে
দোতলার বারান্দায় ছিল অনেক দামী বই। আমার ছিল সেই বাড়িতে অবাধ যাতায়াত। সেখানেই আমি খুঁজে পাই বাংলায় লেখা ভাই  গিরীশ চন্দ্র সেনের মহাগ্রন্থ ' কোরান শরিফ "।সেই বই নিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। উপলব্ধি তো সহজ নয়। তবু চেষ্টা করি। বয়স তো তখন অল্প। তবু কিছু জ্ঞান লাভ করি।
সৈয়দ মহম্মদ এর বাবার ছিল অনেক বাঁধানো বই। তাঁরা অবশ্য সেই আলমারী তে কাউকে হাত দিতে দিতেন না।সৈয়দ মহম্মদ কে আমি ডাকতাম ' পীর মামু ' বলে। লোকে ' কালো পীর ' বলতো। অত্যন্ত পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। অযোধ্যা হাটে কাপড়ের ব্যবসা করেছেন। সাথে হোমিও ওষুধ। যোগেশ মাষ্টার মানে চানু বাবু খুব বন্ধু ছিলেন। হাটে তাঁর চালায় বসে দুজনে চা খেতেন। শেষ বয়সে হজ করে এলেন। গুণী মানুষ ছিলেন। তাঁদের বাড়িতে বই অনেক ছিল আলমারি ভর্তি কিন্তু বাংলা বই কমই ছিল। সে সব বই এর হদিস পাচ্ছিনা। 
আরবী ; ফার্সি ; বা উর্দুতে লেখা তাঁর বাবার অনেক বই ছিল। 
ইসলামি শাস্ত্রে তাঁর বাবার  ছিল অগাধ জ্ঞান। উত্তর প্রদেশ থেকে
পড়াশোনা করা মানুষ। অত্যন্ত রাশভারি মানুষ।  পরবর্তী জীবনে সৈয়দ মহম্মদ ইউনানি এবং হোমিও চিকিৎসা য় দক্ষতা লাভ করেছিলেন। নিজেও ছিলেন ইসলামি শাস্ত্রে সুপণ্ডিত।
অপর শাখার অর্থাৎ বুড়ো সাহেবের বড় ছেলের বংশ ধর মহম্মদ আলী। তাঁর পুত্র আয়ুব আলী। আয়ুব আলী র পুত্র আনোয়ারুল হক। আমরা ফণী মামু বলতাম।খুব ভালো মানুষ। স্বল্প ভাষী। চিন্তাশীল। তাঁদের ছিল টিনের ছাউনি র বালাগাছি দোতালা মাটির বাড়ি। বড় তরফের বলে তাঁদের বিশেষ মর্যাদা বোধ ছিল। তাবিজ ; কবজ দিতেন। 
আবার ননী মামু বলতাম যাঁর ভালো নাম মহম্মদ কাশেম। শনিবারে সুখবাজার পশু হাটে তাঁর যাওয়া চাই ই চাই। অবশ্য তাঁকে দরকার ছিল। তাঁর আত্মীয়ের  ব্যবসার কাজে। দক্ষ মানুষ ছিলেন।  মিষ্টভাষী। কালো আফগানী জ্যাকেট টি পরে সাইকেল নিয়ে হাটে যেতেন। তাঁর 
পিতা - সৈয়দ মহম্মদ মুসা। পিতা র পিতা ঐ একই ব্যক্তি মহঃ আলী।
সৈয়দ মহম্মদ এর কথা আগে বলেছি। তাঁর বাবার নাম সৈয়দ মহম্মদ ইয়াসিন। এঁরা বাইরে থেকে এসেছিলেন। সরাসরি বুড়ো সাহেবের বংশধর এঁরা নন।বিহারে র বোকারো এলাকা থেকে এসেছিলেন। 
বড় তরফের আর একজন ছিলেন। তাঁর এক বংশধর সৈয়দ মহম্মদ আমিন। বাবলু ছিল ডাকনাম। সে মারা গেছে। তার ভাই বেঁচে আছে। অন্যত্র থাকে।

সরু গলি রাস্তার দুই পাশে সারি দিয়ে সব বাড়ি। সবই বুড়ো সাহেব বা শাহ তকী র বংশধর দের। মসজিদ পর্যন্ত সরু রাস্তা চলে গেছে। মসজিদের পিছনে বুড়ো সাহেবের সমাধি মন্দির। তা আজ বহুদিন ভগ্ন স্তুপ। তালবন আর নানা গাছের ভিড়ে তাঁর সেই সমাধি। যে নিমডাল তিনি পুঁতেছিলেন তা পরে বৃক্ষ হয়েছিল। প্রবীণ রা তা দেখেছিলেন। পরে গাছটি মারা যায় অত্যাচারে। স্মারক হিসাবে সেই গাছের ছাল ছাড়িয়ে নিতে নিতে।
  আমাদের গ্রামের এই সম্ভ্রান্ত সৈয়দ বংশীয় রা প্রাপ্ত জমি চাষের জন্য এবং নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বর্তমানের ঝাড়খণ্ড থেকে কয়েকটি মোমিন মুসলিম পরিবার কে নিয়ে আসেন। সংখ্যায় আজ তাঁরা অনেকটা বেড়েছেন। পরিশ্রমী মানুষ। নিজেদের পরিশ্রমে আর্থিক অবস্থা র যথেষ্ট উন্নতি ঘটিয়েছেন তাঁরা।
বরং তাঁদের আনয়ন কারী সৈয়দ বংশীয় রা নানা কারণে আর্থিক ভাবে দূর্বল হয়ে গেছেন।
কিন্তু এঁদের মধ্যে আছে সেই পুরনো মর্যাদা বোধ। সম্ভ্রান্ততা।
বূড়ো সাহেবের সাথে যে মীর্জা উপাধি র সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি এখানে কিছু দিন বসবাস করার পর  ঘুড়িষা গ্রামে বসবাস করার পর
স্থায়ী হন মুলুক নিকটস্থ এক নদী তীরবর্তী গ্রামে।
আমার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ মোল্লা আহাসান কামাল দা তাঁদের সেই পূর্বপুরুষ এর তথ্যানুসন্ধান করার জন্য বলেছিলেন ।  কামাল দা এক অসামান্য সর্বশাস্ত্র বিদ পিতার সুযোগ্য পুত্র।
তাঁর পিতা মহান শিক্ষক মোল্লা আবদুল হালিম সাহেবের ধর্ম বিষয়ক বক্তৃতা যে না শুনেছেন তিনি বুঝতে পারবেননা যে কোন উচ্চতা র মানুষ ছিলেন তিনি।তাঁর উপনিষদের ব্যাখ্যা - আহা অসামান্য। 
  আমার সে সন্ধান জারি আছে। যেতে হবে নানা জায়গায়।
এই করোনা কাল আমাদের অনেক সময় কেড়ে নিল।
করারই বা কি আছে। কোথাও যে বের হব সে সাহস পাচ্ছিনা।
  জানিনা কবে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরব।
  অনেক কাজ যে বাকী রয়ে যায়।
 কি জানি আর কতটা পারব! 

এ মাটিতে মিশে থাক আমার প্রণতি।
" বাড়ি আমার ভাঙ্গন ধরা অজয় নদের বাঁকে। 
জল যেখানে সোহাগ ভরে স্থল কে ঘিরে রাখে। "
 এ মাটিতেই মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নিয়ে স্থান পেয়েছি। এ মাটি কে ই মা বলে জেনেছি। 
 ' মাটি' মোর রক্তে মিশেছে ' 
---------------- ----------- ----------- ----------- ----------- ©  প্রণব ভট্টাচার্য। ১৯/৫/২১
তথ্য সহায়তা।  সৈয়দ হোসনে জামাল। সুখ্যাত আমিন।
বুড়ো সাহেবের উত্তর পুরুষ।

।। মাতামার সাথে বনে জঙ্গলে নদীধারে।।

শুনুন। শুনুন
আমি এই মাটির মানুষ। জন্মেছি এই রাঢ় মাটিতে। অজয়ের কুলে
জল জঙ্গলের দেশের মানুষ।
ছোট থেকেই ঘুরে বেড়াই একা একা। হেঁটে হেঁটে বা 
বড় হলে  সাইকেলে।
যখন ছোট      পাহাড় তো দেখিনি। অথচ ভূগোল বইয়ে পড়ি।
তো আমার গাঁয়ে ' বেণে পুকুরের " উঁচু পাড়ে উঠে ভাবতাম        এই বুঝি পাহাড়।
দাদু গল্প বলতেন     হিউয়েন সাঙ হেঁটে আসছেন পামির মালভূমি র উপর দিয়ে     মরুভূমি র মধ্যে দিয়ে।
আমার গাঁয়ের পশ্চিমে মোরাম চাতাল। উঁচু নীচু খোয়াই। খাদ। বর্ষায় প্রবল বেগে গিরি লাল জল নামে।
আমি হেঁটে বেড়াতাম সেই চাতালের উপরে।সেই চাতাল ই আমার   পামির  
বৃষ্টি বন্ধ হলেই দে ছুট।
দেখতে হবে না জলের ছুটে যাওয়া
' মাতা মা ' সাথে করে নিয়ে যেত    জঙ্গলে।   লতা পাতা চিনতাম। এই বৈষ্ণবী আমাকে কোলে পিঠে মানুষ করেছে।     কত ওষুধের গাছ লতা পাতা চিনেছি তার কাছ থেকে। 
শাল পাতা পচে ছাতু ফোটে। কত রকমের ছাতু।
কোনটা খায়। কোনটা খায়না-
মাটির নীচে ফোটে ' কুড়কুড়ে ' গোল গোল ছাতু। 
তুলতে যেতাম। মা মানে মাতামা র সাথে। আহা কি স্বাদ। উই ঢিবির উপরে ছাতু। খড়ের 'পোয়াল ' গাদায় ছাতু।
তার ঝাল। কি স্বাদ তার।
এই জঙ্গল ই আমার কাছে      কঙ্গো র জঙ্গল।
 চেনেন কি " আঁতমোচড়ানো " কি " বৃহৎ গজদন্ত পিপুল " কি " বাঁদুরে কলা "।বানর রা চেনে হুপিং কাশির মতো কাশি হলে ওরা খুঁজে খায়। কি ঝাল! 
 সাপ আর বেজীর লড়াই দেখেছেন। 
 একবার একটা ঝোপের আড়াল থেকে দেখছিলাম। কোনও   ভাবে বেজী টা বিষধর এর কামড় খেয়ে ছুটে ঢুকে পড়ল জঙ্গলে র একটা ঝোপে। কি একটা মূল তুলে চিবিয়ে    খেয়ে নিল। 
 আমি আর ভয়ে সেই ঝোপে ঢুকতে পারিনি। 
 মাতামা কে দেখিয়ে দিলাম সেই ঝোপ । মাতামা সংগ্রহ করে 
 আমার হাতে তাগার মতো করে একটুকরো বেঁধে ফুঁ দিল। জঙ্গলে ভয় " পাতাশী " র। শাল পাতারনীচে থাকে বিষাক্ত পোকা। কি জ্বলন! 
 আর ফুলে যায়। " অনন্ত মূলের " শিকড় খোঁজো। 
 তার রসে জ্বালা কমে যায়।
 " আঙ্গারে " নামে একটা কালচে খয়েরী রঙের ছাতু ছিল। কি স্বাদ তার। মাংসের মেটের মতো। 
 আর ছিল নদী ধারে বুনো " ঘি কল্লা " র কত ঝোপ। সেই ঘি করলা তুলে এনে তার ঝাল ; পোস্ত।
 আহা কি ছিল তার স্বাদ। কত " শতমূলের কাঁটা ঝোপ "। ফুলের কি মিষ্টি গন্ধ। 
এই অজয় ই আমার আমাজন। কি ভীষণ বর্ষায় তার বেগ।
' নামো পাড়া '। মানে গাঁয়ের উত্তর পশ্চিম দিকের মরে যাওয়া ' পোড়ো ' গ্রাম। অজয়ের বন্যায় আর 
 ম্যালেরিয়া ; কলেরায় সেই বড় গাঁ কবেই শেষ হয়ে গেছে। পড়ে আছে  কত না মাটির ঢিবি। গলে ক্ষয়ে যাওয়া তবু টিঁকে থাকা দেয়ালের কোনা। 
তার মনে হত এই তার ' মহেঞ্জোদারো '। সেই ঢিবি গুলোর উপরে নির্জন দুপুরে ঘুরে বেড়াতাম। 
 মনে সাধ -খুঁড়তে হবে। রাখালদাস -
একটু বড় না হওয়া পর্যন্ত " গড় জঙ্গল " এ ঢুকতে পারিনি। তখন ঘন ঘোর অরণ্যানী। দুর্গম।' আর ' আলকুশি'র জ্বলুনি।  ইছাইঘোষের দেউল। সন্ধ্যে নামলেই গো বাঘা দের জ্বলজ্বলে চোখ। মশাল জ্বালিয়ে লোক যায়। দামোদরপুরে ' হেঁড়োল বাঁধি'। 
 হেঁড়োল গুলো সব জল খায় এখানে। জঙ্গলে র ভিতরে  পুকুর। নাম তার ' চৌদল্লা'। চতুর্দোলা থেকে। এখন সেখানে যে ঢুকি - সাধ্য কার! 
জঙ্গলের ভিতরে আছে গ্রাম। গ্রাম নাম তার সরস্বতী গঞ্জ। ভাবুন একবার - গঞ্জ। আছে অনেক আদিবাসী পাড়া। নাম আলী নগর। ভাবুন নামটা।
 আছে। আছে। আছে বই কি অনেক কথা 
আছে 'রক্তনালা' টুমনী নদী। হ্যাঁ বর্ষায় একবার কুমির উঠে এলো। এখানে বেশ গভীর। 
আছে বাঁধে র গায়ে শত বর্ষে র ও বেশী প্রাচীন সব শিমুল। কি সব তাদের গোড়া। খাঁজে ভাঁজে বড় তাঁবু। পাঁচ ছ জন ঢুকে যাবে আরাম করে। 
আছে বিরাট " রাজার দিঘী ' 
গড় কেল্লা খেড়োবাড়ি। নামটা দেখুন
'গড় কেল্লা '। গড় মানেও দুর্গ। কেল্লা মানেও দুর্গ।
গড় কেল্লা। আছে  ' ঘোড় দৌড় 'এর মাঠ। 
সময় কালের ব্যবধান প্রায়  হাজার বছরের।
সে কথা অনেক  শুনে ছেন আমার কাছে। কথা আর কাহিনী তে মেশানো। না হয়  আবার শুনবেন। 
অনেক গল্প অনেকে শোনাচ্ছেন। শোনাবেন বই কি! 
আপনারা ও শুনবেন। 
কিন্তু
আমার গল্প কথা। সে আমার ই। 
 " পাষাণ চণ্ডী তলার বাগানের " ওপারে সূর্য অস্ত যায়। আর আমি " গোপাল সায়েরের " পাড়ে একলা নির্জন এক দীর্ঘ খেজুর গাছের তলায় 
দাঁড়িয়ে তাকেই বলি  " বল     আমার গল্প আমারই  কি না "
 ' যে জন জানে    সে জন ই জানে '

।। চল ফিরে চল কেউ তো এলোনা।।

ঐ যে
  নদী বাঁক নিয়ে হারিয়ে যায় দূর পশ্চিমে 

  শিমূল তলার ঘাট একেবারে  চুপচাপ হয়ে যায় 
  চল ঘরে চল         জল জলের মতো বয়ে চলে   
  মোরাম চাতালের ওপারে পাষাণচণ্ডী থানের 
  আমবাগানের উপর থেকে লাল সূর্য টা নীচে নেমে         গেলে 
  বেণে পুকুরের উঁচু পাড় থেকে ধীরে নেমে আসে সে 
  শেষ বাস চলে এলো   রথ তলার ডাঙ্গায় আজ আর 
  দাঁড়ালো না   হর্ণ দিয়ে জানান দিল  এলাম  কাল আবার যাব 
  না কেউ তো এলো না             চল ফিরে চল 
  বাবাজী বটতলায়  রাতের পাখি গুলো গুছিয়ে নিচ্ছে বাসা 
  উড়ে গেল বাদুড়ের দল    একঝাঁক   প্যাঁচা রা বের হবে 
   বটতলার নীচে আঁধার  ঘণাবে এবার 
    গাছের  কোটর টা      তার গুহা মানুষের  কোটর  গাঢ়  রহস্য অন্ধকার জমে থাকে সেখানে 
   শাঁখ বেজে ওঠে    টিমটিম লণ্ঠন     হ্যারিকেন জ্বলে ওঠে কোথা 
    গরীব গাঁয়ে  সন্ধ্যের আখার পাশে বসে লাল গুড়ের চা 
     খায় সন্ন্যাসী  ফণী  
     আখড়ার মাতামার     গুনগুন নাম গান     করতাল বাজে 
     মাটির কুটির    খড় পচে জল পড়ে     বারান্দার খাটিয়ায় 
    বিছানা ভিজে যায়       তালাই ঢেকে  দেয়  তার ননু মা 
     গঙ্গা কোথা গেলি         লণ্ঠন টা তোল দেখি 
     পনা  ঘর এলি       চল ডুমুর তলাটা তোকে পার 
     করে দিয়ে আসি    গায়ে তার কেন যে  ফুঁ দেয় মাতামা 
     কেন যে দেরী করিস      মুখ আঁধারী      সাঁঝের বেলা      কেন গো মা  কি হবে 
      সে কাউকে বলতে পারেনা        অস্তগামী সূর্য্য       টার দিকে সে 
      তাকিয়েই থাকে    জানেনা   কেন তার মন 
      কেমন  করে    ছোট্ট বুকের      গোপন কুলুঙ্গি তার
    খোঁজ জানে হয়তো বা 

     তবু সে পশ্চিম ই দেখে  প্রতিদিন দেখে  আর 
     খালি হাতে ফেরে   দু হাতে মাখা ধোঁয়া রঙ বিষাদ নিয়ে 
     
       আজও সে পশ্চিম আকাশে তাকায় 
       এক পশ্চিম তার     বিদায় বেলা নিয়ে জেগে থাকে 
     
  ------------ ------------ ------------ ------------ ------------ © প্রণব ভট্টাচার্য।

।। সাতকাহনিয়া র ভাদু তুসু গান।।

কথা - সাতকাহন।
লোকে তাকে বলত ' মাষ্টার '।
ছেলে বেলায় কিছুতেই বুঝতে পারতাম না কেন যে লোকে তাকে বলে ' মাষ্টার '। পরণে একটা হাফ প্যান্ট এর উপর গামছা জড়ানো। আর কাঁধে বা গায়ে একটা গেঞ্জি। ছোট খাটো চেহারা।এই লোকটা মাষ্টার! তার দাদু ছাড়া গাঁয়ে তো কেউ মাষ্টারী করেনা। স্কুলে পড়ায় না। তবে -।
আবার ভাদ্দর মাস এলে মানুষ টার দাম বেড়ে যেত।
  আসলে সে ভাদু গানের দলের মাষ্টার। ছোট একটা হারমোনিয়াম বাজিয়ে সুর তুলত। আর দলের বাকী দের মধ্যে
যার যেমন মনে আসত কথা বসাত। ভাদু গান তৈরী হত।
সন্ধ্যের পর বাউরী পাড়ার কারো না কারো উঠোনে বসত
ভাদু গানের মহলার আসর। তালাই পেতে বসত সবাই গোল হয়ে। মাঝখানে সে। তো মানুষ টার নাম চণ্ডী। চণ্ডী বাউরী।
গোবর্ধন বাউরী র ছেলে। তার বাবা ডাকবাংলো র সেচ অফিসের খালাসি। কিন্তু নিজে তেমন কোন কাজ করত না।
তখন গাঁ য়ে আর তেমন কি কাজ! লোকের বাড়ির মুনিষ খাটা। না হলে শর পাতার ঝাঁটা বাঁধা। বা তাল পাতার তালাই ; চাটাই বোনা। না। সে সবে তার মন নাই। মন তার বাঁধা আছে হারমোনিয়াম এর বাঁশী তে।
ভক্তি কোঁড়া ভালো বাঁশের বাঁশী বাজায়। তার ডাক পড়ে। দলে যোগ দিলে গান ভালো জমে। ষষ্ঠী বাউরী র খুব উৎসাহ।
  সে ই মূল গায়েনের হাল ধরে। সুঠাম চেহারা। অন্ন চিন্তা নাই।
তার বাবা ভালো কাজের মানুষ। অমূল্য বাউরী ; সুধন বাউরী দের সুন্দর নিকোনো উঠোনে ই সন্ধ্যেতে আসর বসে। কাঁঠাল গাছের তলায়। ডাক বাংলা র একটা হ্যারিকেন মাঝে।
অমূল্য বাউরী লোকটি স্বতন্ত্র। কম কথার লোক। ঐ ডাক বাংলা র খালাসি। কিন্তু তার দাম আলাদা। তার ছোট ছেলে। নাম তার মন্ত্রী। তার ও খুব উৎসাহ। সে ও দলে আছে। কোঁড়া পাড়া থেকে বটু ও আসে। সে একটু জানে বোঝে। একটু মাতব্বর ভাব তার আছে। তবে কথা বুনতে পারে।
গোপাল বাউরী ভালো হারমোনিয়াম বাজায়। চণ্ডী না পারলে
তার শরণাপন্ন হয়। বয়সে এদের থেকে বড় আর বেশ চুপচাপ ভালো মানুষ। কারো সাথে তার বিবাদ নাই। মিষ্টি ধীর কথা।
তার বাবা ও ডাকবাংলা র খালাসি। সতন বাউরী। ঘরে ভাত আছে। 
সে ও কথা বসিয়ে সুর তুলে দেয়। ওপাড়া মানে পূবপাড়া থেকে
এ পাড়াতেও মাঝে মাঝে আসে শ্রীধর বাউরী র কাছে। সে ভালো হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইতে পারে। গোপাল আর শ্রীধর আমার দাদুর কাছে কিছুদিন শিখেছিল। তারপর নিজে নিজে চর্চা করে মোটামুটি ভালোই। চণ্ডী গোপালেরই ছাত্র। আর ছোট খাটো চেহারার গোপাল মাল ভালো নাচে। সেই নাচনী।
  মোটামুটি আট দশ জনের দল দাঁড়িয়ে যেত। গাঁয়ে গাঁয়ে দল
ভাদু নাচাতে যেত। অযোধ্যা বা আদুরিয়া বা মাজুরিয়া ছুতোর ঘর থেকে ভাদু প্রতিমা আনত। বেশ মিষ্টি মুখের গোল বা পানপাতা মুখের প্রতিমা। মেয়ে ভদ্রেশ্বরী। মা ভদ্রেশ্বরী। তাকে
নিয়েই ; তাকে উদ্দেশ্য করেই গান। সে গানে গরীব গ্রাম সমাজের  জীবনের নানা কথা।  ' ভাত নাই গো সবার ঘরে / ও ভাদু মা চল যাই দূরে '। গাঁ ছেড়ে আর কোথায় যাবি। ভাত নাই সবার ঘরে। ভাদর মাসে ' রাজার ভাড়াঁর খালি ' ভেবেই সান্ত্বনা। তাল আঁটি চুষে ই কত জনে পেট ভরায়। " ঘরে নাইকো চাল ; গাছে আছে তাল। "  তালের মাড়ি ; চারটি মুড়ি ; আর একটু গুড়। মেখে খেয়েই দিন কাটে।
পরনে ট্যানা জোটেনা। ভাদুকে নিয়ে রাণীগঞ্জের বা দুবরাজপুরের বাজারে যাবার ইচ্ছে। লাল শাড়ি কেনার জন্যে।
আর কাঁচের চুড়ি ; গন্ধ তেল ; স্নো ; পাউডার ;আলতা ; সিঁদুর । আর খাবার তো খুব  ইচ্ছে  লেডিকেনি ; পান্তুয়া ; মিহিদানা ; সীতা ভোগ।

কোন গাঁয়ে না দল ছিল। প্রায় সব গাঁ য়ে। বাউরী ; বাগদী ; মেটে  ; মাল ; কোঁড়া ঘরের যুবক ছেলেরা দল গড়ে। দলে নাচনী থাকে। বাজনদার থাকে। আর মাষ্টার ; মূল গায়েন তো
আছেই। কোন গাঁয়ের কোন দলের গান বেশ জমাটি হলে সেটা সব দলেই ছড়িয়ে যায়। কথার সামান্য অদল বদল ঘটিয়ে। সাতকাহনিয়া ; অযোধ্যা ; ডাঙ্গাল ; মাজুরিয়া ; রঘুনাথপুর ; আদুরিয়া ; শ্রীচন্দ্রপুরের ভালো দল ছিল।
  গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে ঘুরে ভাদু নাচানো। চাল ; আলু ; পয়সা যা জোটে। বাবুদের বাড়িতে বেশীক্ষন নাচ গান চলে। বেশী কিছু পাবার আশায়। এক এক দিন এক এক দল এক এক দিকে যায়। সে বোঝাপড়া থাকে।
সব দলের প্রথম গান ' নম নম নম ভাদু ; নমি তোমার চরণে /
  কাল পূজেছি সাদা ফুলে আজকে  হলুদ বরনে। "
  " ভাদু আমার ছুট্ট / মোড়ে মেয়ে ; কাপড় পরতে জানেনা। "
কাপড় ই নাই তো পরবে আবার কি! 
  সাতকাহনিয়া গ্রামের প্রাচীন বটগাছের তলায় একবার আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম ; সেই প্রথম এলাকায় ; চারপাশের
গ্রামের ভাদু দল গুলিকে এক জায়গায় করে ভাদু গানের আসর বসানো র। হয়েছিল। ' ৭৬ - ৭৭ সাল হবে। সে কথা আজ আর কার ও মনে নেই। না থাকার ই কথা। এ আর এমন কি ব্যাপার যে মনে থাকবে!
পরে বাম সরকারের সময়ে কৃষক সভার উদ্যোগে শুরু করা হয়েছিল " শ্রমজীবী সাংস্কৃতিক উৎসব "। ভাদু ; তুসু ; বাউল ; ফকিরী ইত্যাদি লোক গানের অনুষ্ঠান।
পরে তা ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের উদ্যোগ লাভ করে।সাক্ষরতা কে কেন্দ্র করে উৎসব চালু হয়।  নূতন উৎসাহ। কৃষক আন্দোলনের  সাফল্যে গরীব গ্রামের পাড়া গুলি জাগছে ; জেগেছে। যেন প্রাণ ফিরে এসেছে। অভাব নিয়েও আনন্দ।
গ্রাম গুলি জেগেছিল। তখন আর পুরনো রা প্রায় নেই। বা তাদের উৎসাহ নেই। আমাদের মধ্যে যারা পারে তারা হাল ধরেছিল। গান লিখে দল গুলিকে তৈরী করে দেওয়া হয়েছিল।
কোন গ্রামের মেয়েরা তুসু গান ভালো গায় তো - কোন গ্রামের দল ভাদু। তারপর শুরু হল প্রতিযোগিতা। পুরস্কার।পাড়ায় পাড়ায় নতুন উৎসাহ উদ্দীপনা। কাঁকসা জুড়ে ই। নানা জায়গায় গরীব পাড়ার মেয়েদের গান লিখে দিচ্ছেন ; পরেশ ; স্বরাজ দা পরশুকরেশ দা রা  ; বিলাস দা ; শান্তি দা রা সুর করে দিচ্ছেন। নব ; নারান ;পবিত্র রা বাঁশি তে প্রাণমাতানো সুর তুলছে।ভরত রা ফকিরী গানে মাতিয়ে দিচ্ছে।  সব নাম এই মুহূর্তে  মনে আসছেনা। পরে তুলে নেব। 
আমার এ গ্রামের ভাদু দল কে দাঁড় করানো আর  যায়নি। অযোধ্যা গ্রামের ভাদুর দল টা দাঁড়িয়েছিল। কুমাই বাগদি। ভালো চেহারা। মূল গায়েন। রামপ্রসাদ ভালো গান লেখে।পালা  লেখে।  একটা কবি গানের দল ও ভালো হয়েছিল। কুমাই আর স্বভাব অভিনেতা দীনবন্ধু মানে চাঁপু চ্যাটার্জি দুজন দুপক্ষের মূল গায়েন। এরাও অনেক দূর গিয়েছিল। আরও অনেকে সেই সময় মঞ্চে চেপে ঢাক ঢোল ; পাতার বাঁশী ; বাউল গান শুনিয়েছে মানুষ কে। অনেক নাম  পবন ; হরবিলাস ; অশোক ; নিরঞ্জন ; অষ্ট ; সন্তোষ ; লখু ; দুলাল 
 এমন আরও কতো নাম। বনকাটি তখন এগিয়ে। 
 বনকাটি মানে বনকাটি গ্রাম পঞ্চায়েত। 
 প্রতিবারেই কোন না কোন দল জেলা বা রাজ্য স্তরে যাচ্ছে। পুরস্কার আনছে। একবার তো পানাগড়ে মিত্র সংঘের মাঠে বোধহয় জেলা স্তর প্রতিযোগিতার আসর বসল। মূল মঞ্চ  বিদ্যাসাগরের নামে। তাছাড়া আরও অনেক গুলি মঞ্চ। সব মঞ্চ ই বিখ্যাত মনীষী দের নামে। তাঁদের প্রতিকৃতি মঞ্চে টাঙানো। সব প্রতিকৃতি আমি এঁকেছিলাম। তাছাড়া ও ছিল মঞ্চ সজ্জার কাজ। 
 অনেকে নেমেছিল সে কাজে। দিন  রাত কাজ চলেছিল। 
এ গাঁয়ের মেয়ে রা তুসু গানে অনেক দূর এগিয়েছিল। সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা র প্রয়োজনে  গানের শীর্ষক
( টপিক)  বলে দেওয়া হত। সেবার ছিল ' মেয়েদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ' বিষয়ক তুসু গান। গাঁয়ের গরীব ঘরের মেয়ে দের ডেকে
জড়ো করত উদয়। উদয় বাউরী। ওর খুব উৎসাহ ছিল।
আমার ঘরের বারান্দায় বসত ওদের আসর। গান লিখে দিতে
হত আমাকে। গান লেখা আমার তেমন হয়না। তবু ওদের জন্য পারতে হত। ব্লক স্তর পর্যন্ত আমাদের গাঁয়ের মেয়েরা এগুতে পারত। দুবার গেছে জেলা স্তর পর্যন্ত।আমার মেয়েটাও যেত ওদের সঙ্গে।  জেলা থেকেও পুরস্কার নিয়ে ফিরেছে। সব সার্টিফিকেট আমার কাছে আজও  জমা।
ঘর গেরস্থালী র প্রয়োজনীয় ভালো স্টেনলেস স্টিলের জিনিস পত্র প্রাইজ হিসাবে দলের প্রত্যেকে পেত। তাদের কাজে লাগত। সে সব মেয়েরা আজ গিন্নীবান্নি। হয়তো দিদিমা ঠাকুমা হয়ে গেছে। সে সব গান ও কোথায়  হারিয়ে গেছে।
তাদের জীবনে ও বোধহয় আর গান নেই।
কি জানি তাদের আর মনে আছে কি না যে 'হ্যাঁ ; আমরাও পারি '। আমরা ও স্টেজে চেপে গান গাইতে পারি। পুরস্কার পেতে পারি। তারা যখন ফিরত পুরস্কার নিয়ে তাদের সেই
ঝকঝকে আনন্দ উজ্জ্বল মুখ চোখ গুলো শুধু আমার মনে রয়ে গেছে।
------------ ------------ ------------ ------------ ----©  প্রণব ভট্টাচার্য।
পুনঃ।  চারপাশের গ্রাম গুলিতে কোথাও আর ভাদু গানের দল
  বেঁচে নাই। বড় রাস্তায় ট্রাক গুলির সামনে নাচনী নাচ নেচে আর ঝমাঝম বাজনা বাজিয়ে ; পয়সা আদায় করত একটা দল। হ্যাঁ। ছোট একটা ভাদু প্রতিমা ও থাকত বটে।

ভারতী বাবা। মেণকা দাসী। বাবাজী বৈষ্ণব বাউল আখড়া

বাবাজী বৈষ্ণব আখড়া। ভারতী বাবা।
-------------------------------------------------------  ১০ ম পর্ব
  বলা যায় হঠাৎ ই একদিন এই অযোধ্যা আশ্রমে এলেন ভারতী বাবা। নিয়ে এসেছিলেন সুধীর মণ্ডল। সাধারনের কাছে সুধীর বাবাজী। তাঁর মধ্যেও আধ্যাত্মিক চেতনা ছিল। গৈরিক বসন। শ্মশ্রু মণ্ডিত মুখমণ্ডল। বেশ উজ্জ্বল চোখ। কাঁধে বেশ বড়ো ঝোলা। তাতে একটা বড় মাপের ডায়েরী। গ্রাম ঘোরেন।শিক্ষিত বিশিষ্ট মানুষদের সাথে আলাপ করেন।  আমাদের বাড়িতে এসে দাদুর সাথে গল্প করেন। এ বাড়িতে তো সবারই যাতায়াত। কারো কোন বাধা নেই। তখন গ্রামজীবন তো তাই ই ছিল। আজকের মতো জটিল মুখগোমড়া ভাব তো ছিলনা।
তাঁকে  চারপাশ টা ঘুরিয়ে দেখান ; কোনদিন মেনকা দাসী কোনদিন দীনবন্ধু দাস বৈরাগ্য।
শেষপর্যন্ত তিনি স্থির করলেন স্থায়ী ভাবে এই আশ্রমেই থাকবেন। কিন্তু থাকবেন কোথায়। প্রথম দিকে ঘর ভাড়া চেয়েছিলেন। তো তা মেলা তো আর সহজ নয় এই গ্রাম গঞ্জে। যাই হোক আশ্রমের উত্তর দিকে অনুমতি সাপেক্ষে ই শুরু করলেন মাটির দেওয়ালের উপরকোঠা বাড়ি। তার আগেই বানিয়ে নিলেন পাকা বাথরুম এবং পায়খানা। এখানেই তাঁর রুচির পরিচয়। তখন এখানের কোন বাড়িতেই ওসব নেই।
একদিন সেই বাড়ি সম্পূর্ণ হল। নিজের কিছু উপার্জনের জন্য ঠিক করলেন  হাইস্কুলের ছেলেমেয়েদের টিউশন পড়াবেন। কিন্তু সম্পূর্ণ অপরিচিত এক মানুষের কাছে পড়াতে দিতে অভিভাবক দের আপত্তি ছিল। তবু কিছু ছেলে মেয়ে তাঁর কাছে পড়তে এলো। তাতে আর কি হয়।
অথচ আমি তাঁর ডায়েরী দেখেছি। ইংরেজি তে নানা নোট। ইংরেজি এবং সংস্কৃত সাহিত্যে তাঁর যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। আমাদের বাড়িতে গল্পে গল্পে বলেছিলেন যে তিনি কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টারস। সেখানে না কি পড়িয়েওছেন। জানিনা ঠিক।আবার পূজা পাঠ পদ্ধতি প্রকরণ গত জ্ঞান ছিল যথেষ্ট। রঘুনাথপুর গ্রামের দুর্গাপূজা করেছেন। 
পূর্বজীবন এর কথা এঁরা বলেন না। জানতে চাওয়া ও হয়তো ঠিকও নয়। তবু মানুষের কৌতুহল তো মেটেনা। নানা চোখ নানা ভাবে দেখে।
'বাঃ। ভালো জুটল বাপু। আখড়ার কেমন উন্নতি হচ্ছে। দোতালা মাটির ঘর হল। পাকা পায়খানা বাথরুম হল। কি জানি আর ও কত কি হবে '
দীনুর কপাল খুলে গেল। এ তো বেশ টাকা পয়সা ওয়ালা লোক '। অবাক চাহনি মানুষের। নানা কথা। নানা প্রশ্ন। কত সন্দেহ।
  তারপর ধীরে ধীরে মেনকা দাসীর সাথে গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরতে লাগলেন। মেনকা মাধুকরী করে। উনি তো তা পারেন না। মানুষ যদি তাঁকে ভালোবেসে কিছু দিলে আপত্তি ও করেন না।
আবার মাঝে মাঝে মেনকা র সাথে মনোমালিন্য ও হয়।
হঠাৎ ই একদিন ঠিক করলেন এই এলাকা ছেড়ে চলে যাবেন। কিন্তু কোথায় যাবেন। মেনকা র উপর নির্ভরতা জন্মে গেছে। ত্রিলোকচন্দ্রপুরের আশ্রমে গিয়ে একদিন উঠলেন। সেখানে তখন দীনবন্ধু র মেয়ের বিয়ে হয়েছে বৈরাগী ঘরের ছেলের সাথে। ছেলেটি ভালো। এবার এখানে ঘর বাঁধা। ঐ এলাকা য় ত্রিলোকচন্দ্রপুরের আশেপাশে নানা গ্রামে ঘোরেন।
মেণকার সাথেই। মেণকা ই সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। একটা ভালো পরিচিতি গড়ে ওঠে তাঁর।
  মাঝে মাঝে বৈষ্ণবীয় অনুষ্ঠানাদিতে অযোধ্যা আখড়ায় আসেন। কয়েকদিন থাকেন।
মেণকা দাসী ছিলেন বাস্তববাদী। তিনি জানতেন ভাই ; বা ভাই বৌ এর সাথে একসাথে থাকা যাবেনা।
হয়তো আরো কিছু সমস্যা ছিল।
ভাই দীনবন্ধু তখন বেশ কিছুদিন বনকাটি আশ্রমে বসবাস করছেন। প্রথমা স্ত্রীকে নিয়ে।

তাই নিজে থেকেই সরে যাবার পরিকল্পনা করেন।
ভারতী বাবা কে তো ফেলে যাওয়া যায়না।
সাথেই নিয়ে যান।
তিনিও ততোদিনে মেনকা র উপরে নির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন।
এই মানুষটি অনেকের কাছেই অচেনা অধরা রয়ে গেলেন। অথচ পরে জেনেছি শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তান। মুর্শিদাবাদ এর কান্দি এলাকার সিংহ রায় পরিবারের সন্তান।তাঁর ভাই রেলে কাজ করতেন। অফিসার ছিলেন। রেলের পাসে প্রায় সারা ভারত ঘুরেছেন ভারতী বাবা। মানসিক শান্তি খুঁজেছেন।
সংসার ত্যাগের কারন  - অজানা ই।
তাঁর মৃত্যুর পর সংবাদ পেয়ে তাঁর দুই মেয়ে এসে তাঁর মরদেহ নিয়ে যান। তখনই কিছুটা হলেও জানা যায়। মেনকা দাসীর সমাধি অযোধ্যা আশ্রমের সমাধি চত্বরেই আছে।
স্বপন দাসবৈরাগ্য স্বীকার করেন যে ' ভারতী দাদু আমাদের জন্য অনেক করেছেন - তাঁর অবদান অনেক'
  সেই মানুষ টি কে খুব মনে পড়ে। লক্ষ্মীনারায়ণ ভারতী। 
চেনা হয়নি। চেনা যায়নি। মানুষকে কি সহজে চেনা বোঝা যায়।!
---------------------------   ---------------© প্রণব ভট্টাচার্য।

।। জানি না আমার এই স্মরণ কতদূর পৌঁছাবে।।

।। জানিনা  কতদূর পৌঁছাবে আমার এই স্মরণাঞ্জলি।।

তোমাকে আমি স্মরণ করব সেটা খুব স্বাভাবিক কিন্তু
তোমার তো ছাত্র  ছাত্রী অগণন
সে অবশ্য অনেক দিনের কথা
আমাদের মা মাসী বাবা কাকা দের বয়সী পুরনো
তোমার সহ শিক্ষকেরা তাঁরাও অবশ্য স্মরণযোগ্য
  কিন্তু এই সময়ে তোমাদের কথা কার ও মনে নেই
  বেশ সুন্দর রঙিন বেলুনের গেট হয়েছে এখন জানো
  কত সাজানো গোছানো
   ছেলে মেয়েরা কত কত উপহার এনেছে
   এসব তোমরা ভাবতেই পারতে না
   তোমরা তো অনেক অনেক দূর
    আমরাই যেন বেশ প্রাচীণ       প্রবীনহয়েছি  কবেই 
কিন্তু না      আমি ভাবছি    অন্য কথা
যতই বলা হোকনা কেন        ভিত শক্ত মজবুত চাই
আমাদের তাঁদের কথা         মনে থাকেনা যে 
 যাঁরা  ভিত  গড়ে  দেন 
যাঁরা যত্ন করে হাতের লেখা শেখাতেন     বা  বানান
শ্রী দূর্গা বস্ত্রালয় লেখা দেখে বললাম বাবা  দূর্গা যে দুর্গা রে
ছেলেটি   থেমে গেল তবু বলল না    দ এ ঊ  ই বটে
তর্ক না করে বললাম অভিধান দেখে নিস
সে আবার অস্ফুটে এক শিক্ষকের কথা বলল
আজ হাতের লেখা দেখলে হাসব না কাঁদব ভাবি
ক্লাস রুমে বোর্ডে কচ্চিৎ কদাচিৎ লেখা দেখি
  ভূগোল এর ক্লাসে ম্যাপ টাঙানো দেখিনা
  লাইনের  পরে লাইনের  রিডিং পড়ানো    এই কি  ইতিহাস ক্লাস 
 চেয়ারে বসে থেকে কি ক্লাস করা হয় 
  এ আর এমন কি কথা    হারালো ভালোবাসা 
  মাথায় স্নেহের হাত রাখার মতো স্নিগ্ধ হাত -
 আজ হারালো 
  আমার ছাত্র বা ছাত্রী    যে ছেলে বা মেয়ে টি
  বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায়  খুব ভালো ফল করেছে
   তাকে  শুভেচছা  অভিনন্দন জানালাম 
   একজন  শিক্ষক  হিসাবে  ছেলে মেয়ে দের সাফল্যে  মন ভরে যায়    সে হতে পারে বা না পারে
 আমার  প্রত্যক্ষ  ছাত্র ছাত্রী 

  সে কাকে   স্মরণ  করবে       তোমাকে কি   নিশ্চয়ই    না   সে  এখন  অনেক উচ্চে  বিশ্ববিদ্যালয়    অনেক ধাপ পেরিয়েছে  ভূমি থেকে অনেক উচ্চে     তার কি আর আমাদের কথা মনে আছে   না  থাকে 
 তবু ও 
  সেদিন  ইলামবাজারের রাস্তায় এক প্রাক্তন ছাত্র হঠাৎ ই বলল    না  হঠাৎ  নয়  তার সাবজেক্ট  নিয়েই কথা হচ্ছিল
ব্রাইট  ছাত্র ছিল   একটু  মনে করাতেই বললাম তুমি তো
খুব  ভালো ছিলে গো  কেমেস্ট্রী তে    এখন
  বড়  চাকরি  করে   কেমিস্ট
সে বলল স্যার  কালীমূর্তি  দেখলে আপনার কথা
মনে পড়ে যায়
সেই  যে আপনি বলেছিলেন  কালী মানেই  কালো 
যা কালো  তাই কার্বন রে 
কালীর  কটা  হাত           চার টি  তাই না
চার হাতে চার অস্ত্রের মতো  ধরো  চার টি হাইড্রোজেন ধরে আছে     তাহলে ই হয়ে গেল শুরু  কালী মানে কার্বন  কেমেস্ট্রী
কার্বনের  যোজ্যতা  চার  
কি মনে থাকবে      এই হল   সি এইচ ফোর   মিথেন
ভুলিনি স্যার     আমি কার্বন কেমেস্ট্রী নিয়েই কাজ করি
  শুরু টা ভুলিনি
  আমি আমার সেই ছাত্রের মুখের  দিকে তাকিয়ে থাকলাম
  কিছুক্ষণ
   চোখ  জ্বালা  করছিল

  দাদু। আমার শিক্ষক। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।
  এবং তাঁর সহশিক্ষক  যাঁরা  আমারও শিক্ষক
   তাঁদের  সকলকে  আমার শ্রদ্ধা  প্রণাম।
  " বড় মাষ্টার " ননীগোপাল চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর সময়ের
  সকল সহশিক্ষক  চণ্ডীরাম মুখোপাধ্যায় ; রুধির কুমার সাহা
  সুভাষ চট্টোপাধ্যায় ; যোগেশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ভিত তো তাঁরা ই গড়ে দিয়েছিলেন। 
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ------------

।। বুড়ির বাঁধ।।

।। বুড়ির বাঁধ ।। 
সে এক বুড়ি। 
 দিয়েছিল জমি। 
 সেই জমির মাটি নিয়ে তৈরী হয়েছিল অনেকটা নদী বাঁধ। সাতকাহনিয়া গ্রাম থেকে। 
 আর বুড়ির সেই জায়গায় হয়েছিল একটা লম্বা জলাশয়। 
 নাম হয়েছিল মানুষের মুখে মুখে ' বুড়ির বাঁধ '। 
 কোন সে  বুড়ি। কি তার নাম। তার আর কোন হদিস নেই। তাই কি থাকে! সে প্রায় দেড়শো বছর আগের কথা। 
  সে যে কোন সেন বাবুরা কাটালেন পুকুর। না তার ও কোন হদিশ নাই। হতে পারে সেন বাবুদের জায়গার থেকে বাঁধ তৈরীর মাটি নেওয়া হয়েছিল। 
 হল ' সেনপুকুর '। 
 শোনা যায় এক সেন বাবু না কি ছিলেন উকিল। 
  আজ আর কোন সেন বাবু আর মাছের ভাগ নিতে আসেন না 
  তাঁদের ' সেন পুকুরে ' মাছ ধরানো হলে। 
 আছে ' শীল পুকুর ' ' বামুন পুকুর ' ঘোষ পুকুর ' ' কর পুকুর ' 
  ' বেণে পুকুর '  ' দে পুকুর ' ' বামুন পুকুর ' বামুন গোড়ে ' শুঁড়ি
 গোড়ে ' মালি গোড়ে ' বৈরাগী গোড়ে ' 
  গাঁয়ের মানুষের দায় পড়েছে বৈরাগী বলতে। সোজা কথায় 
 'বোরেগী গোড়ে'। 
  আছে ' বড় বাঁধ '। ছোট বাঁধ। 
   নাম তার ' গোলাম পুকুর '। ছিল একদিন গোলাম মিঁয়া র। 
 সৈয়দ বংশের গোলাম পাঞ্জাতন। তিনি যে কিভাবে হারালেন 
 পুকুরের মালিকানা। যথেষ্ট প্রভাবশালী মানুষ ছিলেন। করিতকর্মা।  নীলকুঠি র নীল চাষ তদারকি করতেন। এই গাঁয়ে তো বটেই। আবার অজয়ের ওপারে 
 নহনা ; কানুর  এই সব গ্রামে ও। সুরুল নথি তে তাঁর নাম পেয়েছি।অবশ্য যদি তিনিই সেই ব্যক্তি হন।  তারপর শুনেছি নানা মামলা মোকদ্দমা য় জড়িয়ে 
গিয়েছিলেন। আর তার খরচ মেটাতে ই সম্পত্তি হাতছাড়া। 
  অযোধ্যা গ্রামের বেণে রা যথেষ্ট ধনী। সোনার কারবার তো 
 বটেই। আরও কত কারবার। ঘরে তাদের কতো রূপোর মোহর। ঝুড়ি ভর্তি করে গুপ্ত ঘর থেকে বার করে ; ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকোতে দিত। দত্ত ; কর ; চন্দ রা বিরাট বড়লোক। 
 এ গাঁয়ে যে বেণে পুকুর তা কি ওঁদের। চন্দের মাঠ কি ঐ চন্দ দের। কর পুকুর কি  কর দের।  না কি তাঁরা তখন এ গাঁয়ে বাস করত। 
 এ গাঁ তো কারিগর দের বিশাল গ্রাম। তাঁতি ; কামার ; কুমোর ;
 কলু ; মালাকার  আরও কত জাত। বাউরী ; মাল ; কোঁড়া ; হাঁড়ি ; চণ্ডাল  রা আছে। বামুন ; কায়েত ; তাম্বুলী রা আছে। ঘোষ রা সদগোপ না কি গোয়ালা। সন্ধান নেই। 
 নদী ধারের গাঁ। অজয়ের জলপথে ছোট ছোট নৌকো য় কত মাল যাচ্ছে আসছে। এখানের মাটির বোতল না কি ছিল খুব 
 বিখ্যাত। মাটির তৈরী হরেক জিনিস। তাঁতিদের তাঁতের খটাখট  শব্দ সারা গাঁ জুড়ে। সাহেব বাবুদের নীল চাষ। 
 নীল বাড়ি র মাঠ আজও আছে। আর আছে অজয়ের তিনটে 
ঘাট। কলাবাগানের ঘাটের বেশ নাম ডাক। সেখান থেকেই মাল 
 ওঠানামা করে। সে তো অনেক কথা। নদী ধারে বোরেগী আখড়া। এ গাঁয়ে অনেক বৈরাগী বাবাজী। গোপাল বাবাজী র 
 ' গোপাল সায়ের ' মজে সমতল হয়ে গেছে। বাড়ি ঘর সব হয়ে গেল। শুধু নাম টা আছে। আর আছে এক প্রাচীন খেজুর একা 
 দাঁড়িয়ে। তার পাশেই না কি ছিল গোপাল বাবাজী র আখড়া। 
 গাঁয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন এক বটবৃক্ষ। বৈরাগী বটতলা। সে ই এই গাঁয়ে র প্রাচীনত্বের স্মারক। 
  এ গাঁয়ের অনেক কথা। কথা সহজে ফুরাবে না। সাত কাহন কথা তার। নাম তার সাতকাহনিয়া। 
 আজ শুরু করেছি পুকুর দিয়ে। এত পুকুর ; ডোবা ; গোড়ে। 
 নাই আজ অনেক কিছু। কিন্তু ছিল একদিন। ছিল বিশাল 
 আমবাগান। গাঁয়ের পূব দিকে। নাম ছিল তার অধিকারী আম 
 বাগান। গোলাম পুকুর এর পাড়ে তাঁতিদের ছোট আমবাগান। 
 খই নাড়ু আমগাছ টা কে খুব মনে পড়ে। কি সুন্দর গোল গোল 
 নাড়ু র মতো মিষ্টি সে আম। গাছ টা যে দিন কাটা পড়ল। 
মনে পড়ে ছুটে গিয়েছিলাম তার কাছে। লাল রঙের আম আঁঠা র গড়ানো রস আমার মনে হয়েছিল যেন রক্ত। 
 সারাদিন খুব মন খারাপ। কেন কাটল?  কেন?  কি ক্ষতি করছিল গাছ টা - !  গাছটা বেচে সেই টাকায়  সংসারের কোন 
 খরচ মেটানো হচ্ছে  সে সব বোঝার বয়স তখন  নয়। 
দেখতে দেখতে এক এক করে বিশাল আমবাগান টা শেষ হয়ে 
 গেল। গাছ গুলো কে কাটার জন্য বাগানে তাঁবু খাটিয়ে করাতি রা ছিল কতদিন। গোলাম পুকুর পাড়ের খুব উঁচু উঁচু 
তালগাছ। উত্তর পাড়ে এক টা গাছ। চার আঁটি তাল। কালো 
 কুচকুচে। আর কি মিষ্টি তার ' মাড়ি '। সব কেটে দিল। 
 বেনে পুকুরের পাড়ে সেই পাকুড় গাছটা। যার গোড়াতে সে 
 গাঁয়ের মা মাসী দের দিদিমা ঠাকুমা দের পিতলের ঘটি করে 
 জল ঢালতে দেখেছে। গরমের দিনে জল সত্রের সময় ভিজে 
 বুটকলাই আর একটু গুড় দিয়ে প্রণাম করতে ও দেখেছে। 
 দাদুর সঙ্গে চান করতে গিয়ে দাদু পদ্ম পাতা তুলে এনেছে। 
 পদ্ম ফুল আর পদ্মের টাঁটি। তার ভিতরের বীজ টা খেতে কি সুন্দর। আর পদ্ম পাতায় ভাত। কি সুন্দর একটা ভিজে নরম 
 গন্ধ। গোলাম পুকুরে কোন দিন পদ্ম দেখেনি। আলো করে ফুটে থাকতো সাদা ; আর লাল শালুক। 
 এ শুধু এই গাঁয়ের কথা নয়। সব গাঁয়ের। সব পুকুর পাড়ের। 
 যত পুরাতন তাল গাছ ; আমবাগান ছিল সব বাবুরা কেটে 
 বেচে দিল। বাবুদের বড়ো টাকার লোভ। আর ভয় কে জানে 
 কখন বেহাত হয়ে যায়। কি সব আইন আসছে যেন!  
 যত তাড়াতাড়ি পারল সব কেটে বেচে দিল। 
  ছোট থেকে ঝোপেঝাড়ে ;মোরাম চাতালে ; আর উঁচু নীচু মাটির ঢিবিগুলোর উপরে ঘুরে বেড়ানো ; আর কল্পনায় সেই পুরনো গাঁ টা কে 
 খুঁজে যাওয়া  ছেলেটা ই কেবল ভুলতে পারেনা। বাকী সবাই 
 ভুলেছে। মনে রেখে তো কোন লাভ নেই। কোন কাজে ই আসেনা। 
 কোথায় যে গেল। এত এত মানুষ। এত জাতের। কতো পদবীর
 কে যে কোন দিকে ছড়িয়ে গেল। অনেক খুঁজেছে সে। রোগের ভয়ে যে যেদিকে পেরেছে চলে গেছে। 
  মালাকার রা গুসকরা ; শীল রা ভুঁয়েরা ; লায়েক বাবুরা কুলটি চিনাকুড়ির লোক ছিলেন। এখানে এসে জমিজায়গা কিনে বসতি স্থাপন করেছিলেন। কয়লা ব্যবসার জন্য। 
 নদী পথে কয়লা আসত। বনকাটির রায় বাবুরা কয়লার ব্যবসা করতেন। কয়লা যেত ভেদিয়ার কাছে বক্সীবাজারে। 
 কাটোয়া পর্যন্ত। 
   খোঁজ। খোঁজা বুঝি এক নেশা। আজও সে খুঁজে যায়। 
 এ গাঁ কে খুঁজতে খুঁজতে কত গাঁ য়ে গিয়ে উঠেছে। 
  আরও কত জায়গায় যেতে হবে। কত কাজ বাকী। 
 কথা দেওয়া আছে কামাল দা কে। খুঁজে দেব। সে কাহিনী বলেছি। আবারও বলব। 
   আজ পুকুরের কথা। ঘোষ ; সেন ; কর ; বেনে ; দে ; শীল পুকুর বোঝা যায় কাদের কাটানো। আবার বামুন পুকুর বললে তো বোঝা যায়না কোন বামুনের। কত নাম পাচ্ছি। লায়েক ; চক্রবর্তী ; মুখোপাধ্যায় ; অধিকারী এই সব পদবী। একশো বছরের ও আগের দলিলে। অনেক দিন আগেই সব হাতবদল হয়ে গেছে। অতএব আধুনিক কালের রেকর্ডে কিছু পাওয়া যাবেনা। আর কি ভাবে যে পাওয়া যাবে -  
  পুকুরের নাম যদি হয় ' প্রেমসায়র '। 
  কি ভাবে যে এমন  নাম হল পুকুরের!  
  আমার মনে যে ভাসছে একটা বেশ সুন্দর কাহিনী। ' রাধা ' কে মনে পড়ে। ' কমললতা ' উঁকি দিয়ে যায় মনে। 
 গাঁয়ে এত বাবাজী বোষ্টমের আখড়া। 
   কি জানি সে কোন বাবাজী চণ্ডীদাস আর রামী ধোপানী! 
  না কি অন্য কোন প্রেম ভেসে আছে প্রেমসায়রের কালো জলে! কি জানি। 
  খুঁজছি। কিন্তু অতীত বড়ো নীরব। 
   বড়ো অন্ধকার সেই কালগর্ভ । 

গ্রাম। সাতকাহনিয়া। জে এল নং ৩৪। পোঃ বনকাটি । জেলা পশ্চিম বর্দ্ধমান। 
।গ্রামের পুকুর ডোবা জলাশয় বৃক্ষাদির কথা। 
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ------- শেষ করি।