Saturday, 23 May 2020

আমার দুর্গাপুজো

পুজো এলেই মন খারাপ। আর শুধু পুজো কেন এগাঁয়ে কি আছে। সঙ্গী সাথী -। না তেমন কেউ নেই তার মনের মতো। তবু - উপায় আর কি।
মহালয়া এলে বেশী করে পুজো চলে আসে। কাছাকাছি।
মামা দাদুকে একটা রেডিও এনে দিয়েছিল। কাঠের ক্যাবিনেট এর। ভালো ভরাট আওয়াজ। যথারীতি ভোরে বেজে উঠত। মহালয়া। বীরেন্দ্রকৃষ্ণের গলায় স্ত্রোত্রপাঠ। অমোঘ এর আকর্ষণ। দিদিমা জোড় হাতে বসে শুনত।


ভোরের ঘুম। ভাঙ্গতে চাইত না। তবু ভেঙ্গে যেত। উঠে এসে বসে শুনতাম। সকাল হয়ে যেত। শঙ্খ ধ্বনিতে আগমন বার্তা তার।
দাদু কোনদিন রেডিও টা হাত ছাড়া করেনি। তার খাটের মাথার দিকে একটা সেল্ফে তার ছিল স্থায়ী আসন। মহালয়া র দিনে ভোরে মাটির ঘরের উঁচু দাওয়ায় একদিন ই সে নামত। অতি যত্নে। কাঠের একটা পিঁড়ি তে তাকে নামানো হত।
পুজো আসছে। কি করব। কি ভাবে আনন্দ হবে। ছোট্ট গাঁ। এ গাঁ য়ে পুজো নেই। না কি ছিল একদিন। ছিল লায়েক বাবু দের দুর্গাপূজা। এখানে লায়েক বাবুদের অনেক জমি জায়গা ছিল। ওঁদের আসল বাড়ি এখানে   না কি কুলটি তে। আমরা দেখেছি রতন লায়েক মশাই কে।  ধনী জোতদার হালদার বাড়িতে এসে উঠতেন। জমি জায়গার ফসলের ভাগ নিতে আসতেন। কি পেতেন শেষের দিকে তা উনি ই জানেন। পরে আর আসতেন না। অন্য কেউ ই না।


অধিকারী দের বিষ্ণু মন্দির ছিল। তাদেরও না কি দুর্গাপূজা ছিল। ঠিক জানিনা। এই অধিকারী ব্রাহ্মণ রা পরে এ গ্রাম ছেড়ে চলে যান। তাঁ্রা এখন থাকেন ছোট রামচন্দ্রপুরে। তাঁদের জমি জায়গা সব বেহাত হয়ে গিয়েছিল।
কত বড় ছিল এই গ্রাম একদিন। ভাবলে অবাক লাগে।
' কথা তার কাহন সাতেক নামটি সাতকাহন '।
       দোল দুর্গোৎসব সবই ছিল। ছিলেন ঘোষ সেন শীল কর বেনে দে বামুন বৈরাগী  মালাকার  তাম্বুলী তাঁতি কলু   কুমোর রা। আর বাউরী  কোঁড়া  মাল  হাঁড়ি রা। আর গাঁয়ের উত্তর পশ্চিমে মুসলমান রা। আর উত্তরে অজয় বয়ে যায় আপনমনে। গাঁয়ের মাঝে ' বুড়ো বট ' জেগে থাকে একা

এত বড় গ্রাম। সব শেষ হয়ে গিয়েছিল বর্ধমান জ্বর কলেরা আর প্লেগ এর মরণ কামড়ে। গাঁ ছেড়ে পালিয়েছিল যারা বেঁচেছিল।
      আর একদল মরে বেঁচে পড়ে থেকে গিয়েছিল।
      কি আর তাদের 'পরব পাল'। তার উপরে দুগগা পুজো
           কে করবে। কার ক্ষমতা।



1 comment:

  1. মনে হয় এইতো সেদিন HMV রেডিওটা বাজতো বাইরের ঘরের তাকের উপর। মনে পরে ১৯৮৪ র অক্টোবরের শেষ দিকে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার খবর শুনে বিস্মিত মা এর মুখ।

    ReplyDelete