পারুলবালা আমার ফুল মা একজন কাননবালা আর অপরজন পারুলবালা। দুই বন্ধু। সখী। ফুল পাতানো সই। সে তো ইতিহাস। কে তার খোঁজ রাখে। কার আর মনে আছে। অযোধ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণী র শেষে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষার দুই জন ছাত্রী। মোট চার জন। গোরুর গাড়িতে চেপে কোনাকুনি পথে দুর্গাপুরে সগড়ভাঙ্গা হাই স্কুলে পরীক্ষা দিতে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সংগে দুই অভিভাবক আর প্রধান শিক্ষক ' বড়মাষ্টার ' ননীগোপাল চট্টোপাধ্যায়। সাল ১৯৪৬.।বিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে ১৯৪৪ নাগাদ। '৪০ থেকে এই বিদ্যালয় স্থাপনা র প্রচেষ্টা। ' বড় মাষ্টার ' তাঁর দেশের বাড়ির সবকিছু ছেড়ে এখানে এসেছেন। এলাকার গ্রাম মুখ্য ব্যক্তিদের অনুরোধে স্কুল গড়ে তোলার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। প্রাণপাত পরিশ্রম করে গড়ে তুলেছেন এই অযোধ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়। অনেক কথা আছে। নানা পত্র পত্রিকায় লিখেছি এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা র ইতিহাস।
সেই সময় আশপাশের ২৫/৩০ টি গ্রামে কোথাও কোন স্কুল নাই। কোন কিছু গড়ে তোলা যে কি কঠিন কাজ সে যাঁরা গড়েছেন তাঁরা ই জানেন। যাই হোক স্বাধীনতা দিবসের প্রভাত ফেরী। সদ্য স্বাধীন দেশ। মানুষ আবেগাপ্লুত। প্রভাতফেরী বেরিয়েছে। সামনে সেই দু বালা শঙখ বাজাচ্ছে। বড় মাষ্টার গানের ও মানুষ। গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়েছেন। পাশে লক্ষীনারায়ন চক্রবর্তী। গান মুক্তির মন্দির সোপান তলে তো আছেই আর ' চক্র শোভিত ওড়ে নিশান ;নবভারতের বাজে বিষাণ" উদ্বেলিত দু পাশের মানুষ। ছাত্র বৃত্তি পরীক্ষার দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র প্রয়াত নির্মল চট্টোপাধ্যায় এর স্মৃতি তে সে দিনের কথা ছিল উজ্জ্বল। আর এখনও বলতে গেলে আবেগরুদ্ধ হয়ে যান প্রথম ব্যাচের ছাত্র ষষ্ঠীপদ দে। আজ চলে গেলেন আমার ফুল মা পারুলবালা সাহা। বাবা তাঁর ধ্বজাধারী সাহা। ছিলেন একজন উদ্যোগী। কানন বালা চলে গেছেন অনেক অনেক দিন আগেই। হ্যাঁ কাননবালা আমার মা। ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষার ' জলপানি ;পাওয়া মেয়ে। তাঁর বাবা ননীগোপাল চট্টোপাধ্যায়। আমার দাদু। এলাকার প্রবীনেরা তাঁকে ' বড়মাষ্টার' ই বলেন। কপালে হাত ঠেকান। সেই প্রজন্ম শেষ হয়ে এল। একটা অধ্যায়। এই লেখার মাধ্যমে আমি স্মরণ করলাম আমার ' ফুল মা কে। আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য।
শ্রদ্ধা রইল।
ReplyDelete