Friday, 29 May 2020

বাঙ্গালার ইতিহাস চাই

বঙ্কিম দুঃখ করে বলেছিলেন,"সাহেবরা যদি পাখি মারিতে যান, তাহারও ইতিহাস লিখিত হয়, বাঙ্গালার ইতিহাস নাই।"

একথা ঠিক যে বঙ্কিমের এই কথা বলার পর থেকে অনেক ইতিহাস লেখা হয়েছে বাংলার! কিন্তু সে ইতিহাস চর্চা আবর্তিত হয়েছে তার কেবল তার রাজধানীকে কেন্দ্র করে, সেখানকার রাজা,সুলতান,নবাবদের গল্প.... তাও সব রাজধানী সমান প্রচারের আলো পায় নি...বাঙালির এখনো এক বড় অংশের হাবভাব যেন রামমোহন এলেন আর বাংলা আকাশ থেকে পড়লো!

বাংলার কোনায় কোনায় ছড়িয়ে থাকা ইতিহাসের মণিমানিক্য থেকে গেল চরম অবহেলায়! আজও একটু পল্লীগ্রামের দিকে গাছতলায়  পাল-সেন যুগের হাজার বছর আগেকার মূর্তি পড়ে থাকতে দেখাটা, খুব একটা দুর্লভ নয়! প্রত্ন চোরেরা এইটাই কাজে লাগায়! ভদ্র পোশাকে তারা আসে, গ্রামে এলে গ্রামের মানুষ মনে করে, এল বোধ হয় সরকার থেকে কেউ!খাতির করে, গ্রামের কোনায় পড়ে থাকা দুর্লভ মূর্তিটারও সন্ধান দিয়ে দেয়! নিয়ে গেলে ভাবে কোনো মিউজিয়ামে বোধ হয় সংরক্ষিত হল যথাযথ ভাবে! এটা ঠিক সংরক্ষণ মূর্তিগুলো পায়, কিন্তু বিদেশের কোনো শৌখিন প্রত্নসংগ্রাহকের বৈঠকখানায়, চড়া দামে নিলামে বিকবার পর!

বাংলার এই দৈন্য ঘুচানোর উপায় কি? বঙ্কিমই বাতলেছিলেন, "বাঙ্গালার ইতিহাস চাই, নহিলে বাঙ্গালার ভরসা নাই। কে লিখিবে? তুমি লিখিবে, আমি লিখিব, সকলেই লিখিবে। যে বাঙ্গালী, তাহাকেই লিখিতে হইবে। ......এই আমাদিগের সর্ব সাধারণের মা জন্মভূমি বাঙ্গালাদেশ, ইহার গল্প করিতে কি আমাদিগের আনন্দ নাই?"

কিন্তু আমার হচ্ছে 'মুখেন মারিতংজগৎ'.....দেশোদ্ধার আমার ফেসবুকুনিতেই সীমাবদ্ধ..... কিন্তু যারা সত্যি সত্যি অতুল পরিশ্রম করে বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চা করে যাচ্ছেন প্রণববাবু( Pranab Bhattacharyya  ) তাঁদের একজন!

তাঁর ব্লগের ঠিকানা দিচ্ছি, যদিও সেই ব্লগ এখনও নির্মিয়মান তবুও সবাইকে বলবো একটু ঘুরে আসতে! লকডাউনে তো কত কিছুই আবোলতাবোল পড়ে চলেছি আমরা.....একটু বর্ধমানের দিককার অখ্যাত অনাদৃত রত্নভাণ্ডারগুলো সম্বন্ধে একজানলে তো ক্ষতি নেই....

Monday, 25 May 2020

বনকাটি


অযোধ্যা - বনকাটি।
থানা কাঁকসা জেলা পশ্চিম বর্ধমান।
সেন পাহাড়ী পরগনার সর্বোত্তম টেরাকোটা অলংকরণ সমৃদ্ধ গোপালেশ্বর শিব মন্দির
১৭৫৪ শকাব্দে নির্মিত।
এখানকার জমিদার ধনী লাক্ষা ব্যবসায়ী
মুখোপাধ্যায় পরিবার তাঁদের প্রাসাদের সম্মুখে
নির্মাণ করিয়েছিলেন এই মন্দির
এবং কয়েকবছর পর বিখ্যাত পিতলের রথ
রথের কথা অনেকে বলেছেন
আমিও বলেছি লিখেছি
কতজন কে এখানকার কত গল্প শুনিয়েছে
কথক ঠাকুর
২০১৯ জুড়ে অনেকবার
২০২০ তে আসুন। তেপান্তর নাট্যগ্রামে থেকে
ঘুরতে পারেন আশেপাশে
অনেক কিছু দেখার
গড় জঙ্গল  ইছাই ঘোষের দেউল বনকাটি অযোধ্যার মন্দির রাজি  কালিকাপুর মৌখিরার
মন্দির প্রাসাদ ঐশ্বর্য
অজয়ের ওপারে ইলামবাজার
তার আর ঘুড়িষা র মন্দির কি না দেখে পারেন
এতটাই যদি হয় জয়দেব কেন্দুলীর বিখ্যাত
রাধাবিনোদ মন্দির
নিশ্চয়ই হবে
আসবেন
আনন্দ পাবেন
সব বন্ধুকে
শুভেচ্ছা    ভালোবাসা







Sunday, 24 May 2020

বনকাটি। শ্রী অনিল কুমার রায় মহাশয়

বনকাটি। বনকাটি।
পোষ্ট বনকাটি। থানা কাঁকসা। জেলা প বর্ধমান
বন কাটা দের দল সে কবে বন কেটে পরিষ্কার করে দিল তারপর শুরু হল বসত  তা কি আর কেউ বলতে পারে
তবে বনকাটি বললে এই এলাকার মানুষ দের প্রথমেই মনে পড়বে ' রায় কালীবাড়ি '। তার কালীপূজা। আর নিশ্চিত ভাবেই রায় পরিবারের প্রধান প্রায় আশী ছুঁই ছুঁই শ্রী অনিল কুমার রায় মহাশয়ে র কথা। নানা অভিজ্ঞতা য় ভরপুর তাঁর ঝুলি। কত কথা কাহিনী র ভাণ্ডারী তিনি। গ্রামে গ্রামে এমন মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। অনেক সময় পাওয়া যাচ্ছেওনা। যাঁর কাছ থেকে সেই গ্রাম এলাকা সম্বন্ধে কিছু জানা যায়।
' গড় জঙ্গলে র গায়ে গা লাগিয়ে আমাদের এই বনকাটি '
জানেন আপনারা। গড় জঙ্গল ; ইছাই ঘোষ ; দেবী শ্যামারূপা ; ধর্মমঙ্গল কাব্যের ইছাই লাউসেন যুদ্ধের কত কথা কাহিনী আপনাদের শুনিয়েছি। এখানে বলেছি। নানা জায়গায় লিখেছি। "তেপান্তরে " বসে কত গুনী মানুষ জন শুনেছেন এই এলাকার কত কথা কাহিনী। বলাতেই আমার আনন্দ। এক ভ্রমণ পত্রিকা বলেছিল ' সেনপাহাড়ী র কথক ঠাকুর '। ভালবেসে কেউ কেউ ডাকেন এখন। আমার যেন মনে হয় আমার কাজ ই যেন এই। এই এলাকা ' সেনপাহাড়ী ' র কথা আপনাদের শুনিয়ে যাওয়া। যদি কারো মনে থাকে। এভাবেই মাটির ঋণ যদি কিছু শোধ হয়। এই মাটিতেই জন্মেছি তো।


বনকাটি র ' রায় পরিবার ' অন্যতম প্রাচীন পরিবার। এঁরা ও একদিন এখানে এসেছেন। সে কত দিন আগে। তা নিশ্চিত ভাবে বলা মুশকিল।  রায় মশাই এর মুখেই যা শোনা আপনাদের তা শোনাচ্ছি। "রায় " খেতাব তাঁরা পেয়েছিলেন
না কি মুর্শিদাবাদ নবাব দরবার থেকে। সেন রাজাদের ' তন্ত্রগুরু ' মহেশ্বর প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ' মহাশয় তাঁদের পূর্ব পুরুষ। সেন রাজাদের সাথে ই না কি এসেছিলেন এখানে। অজয়ে নৌকা যোগে। এই জঙ্গল ভুমিতে তখন অনেক তান্ত্রিক। তন্ত্র সাধনার উপযুক্ত জায়গা। মহেশ্বরপ্রসাদ এখানেই স্থায়ী হলেন। যথেষ্ট জায়গা জমি র ইজারা পেলেন।
তারপর বানালেন কালীমন্দির। পুরনো সে মন্দির নাই। পুরনো মন্দিরে র ভিতের উপর পরে আবার দালান আকৃতির মন্দির তৈরী হয়েছে। পাশের খেল কদম বা চাকলতা গাছটি ই বলে দেবে এই স্থলের প্রাচীনত্ব। কে জানে তার বয়স কত।
১৭০৪ শকাব্দে রায় পরিবার নির্মাণ করালেন এই এলাকার প্রথম দুটি শিবমন্দির। কালী র মুখোমুখি। কালীর ভৈরব।
সম্পুর্ণ তান্ত্রিক পদ্ধতি তে পূজা হয় ঘোর অমানিশা য়। পাশেই শ্মশান ভূমি। সেখান থেকেই শুরু হয় পুজার আবাহন।
তার পরবর্তী ৫০ বছর জুড়ে কত নির্মান। ১৭৫৭ তে পুর্বমুখী তিনটি শিখর রীতির শিবমন্দির। সম্মুখভাগে টেরাকোটার দশমহাবিদ্যার নানা মূর্তি।
দক্ষিণে র দ্বিতল বিষ্ণু মন্দির এর একটি দেওয়াল বিপজ্জনক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। নিজেদের বসবাসের জন্য নির্মিত প্রাসাদ ধ্বংস স্তুপ।
জমিদারী র আয়ের পাশাপাশি নানা ব্যবসা। অনেক গুলি ব্রাহ্মণ পরিবার একই প্রাঙ্গণে বসবাস করেন। তাঁরা একসাথে ব্যবসা করছেন। প্রভূত অর্থোপার্জন করছেন। বানাচ্ছেন  শিব মন্দির ; দুর্গাদালান ; বিষ্ণুমন্দির ; নিজেদের বসবাসের প্রাসাদ। চট্টোপাধ্যায় ; মুখোপাধ্যায় ; রায় পরিবার গুলি একত্রে নানা ব্যবসা করছেন।৷৷   ২য় পর্বে শেষ হবে।
ছবিতে রায় পরিবারের কর্তা শ্রী অনিল কুমার রায় মহাশয়। মন্দিরে র দাওয়ায় বসে।


Saturday, 23 May 2020

আমার দুর্গাপুজো

পুজো এলেই মন খারাপ। আর শুধু পুজো কেন এগাঁয়ে কি আছে। সঙ্গী সাথী -। না তেমন কেউ নেই তার মনের মতো। তবু - উপায় আর কি।
মহালয়া এলে বেশী করে পুজো চলে আসে। কাছাকাছি।
মামা দাদুকে একটা রেডিও এনে দিয়েছিল। কাঠের ক্যাবিনেট এর। ভালো ভরাট আওয়াজ। যথারীতি ভোরে বেজে উঠত। মহালয়া। বীরেন্দ্রকৃষ্ণের গলায় স্ত্রোত্রপাঠ। অমোঘ এর আকর্ষণ। দিদিমা জোড় হাতে বসে শুনত।


ভোরের ঘুম। ভাঙ্গতে চাইত না। তবু ভেঙ্গে যেত। উঠে এসে বসে শুনতাম। সকাল হয়ে যেত। শঙ্খ ধ্বনিতে আগমন বার্তা তার।
দাদু কোনদিন রেডিও টা হাত ছাড়া করেনি। তার খাটের মাথার দিকে একটা সেল্ফে তার ছিল স্থায়ী আসন। মহালয়া র দিনে ভোরে মাটির ঘরের উঁচু দাওয়ায় একদিন ই সে নামত। অতি যত্নে। কাঠের একটা পিঁড়ি তে তাকে নামানো হত।
পুজো আসছে। কি করব। কি ভাবে আনন্দ হবে। ছোট্ট গাঁ। এ গাঁ য়ে পুজো নেই। না কি ছিল একদিন। ছিল লায়েক বাবু দের দুর্গাপূজা। এখানে লায়েক বাবুদের অনেক জমি জায়গা ছিল। ওঁদের আসল বাড়ি এখানে   না কি কুলটি তে। আমরা দেখেছি রতন লায়েক মশাই কে।  ধনী জোতদার হালদার বাড়িতে এসে উঠতেন। জমি জায়গার ফসলের ভাগ নিতে আসতেন। কি পেতেন শেষের দিকে তা উনি ই জানেন। পরে আর আসতেন না। অন্য কেউ ই না।


অধিকারী দের বিষ্ণু মন্দির ছিল। তাদেরও না কি দুর্গাপূজা ছিল। ঠিক জানিনা। এই অধিকারী ব্রাহ্মণ রা পরে এ গ্রাম ছেড়ে চলে যান। তাঁ্রা এখন থাকেন ছোট রামচন্দ্রপুরে। তাঁদের জমি জায়গা সব বেহাত হয়ে গিয়েছিল।
কত বড় ছিল এই গ্রাম একদিন। ভাবলে অবাক লাগে।
' কথা তার কাহন সাতেক নামটি সাতকাহন '।
       দোল দুর্গোৎসব সবই ছিল। ছিলেন ঘোষ সেন শীল কর বেনে দে বামুন বৈরাগী  মালাকার  তাম্বুলী তাঁতি কলু   কুমোর রা। আর বাউরী  কোঁড়া  মাল  হাঁড়ি রা। আর গাঁয়ের উত্তর পশ্চিমে মুসলমান রা। আর উত্তরে অজয় বয়ে যায় আপনমনে। গাঁয়ের মাঝে ' বুড়ো বট ' জেগে থাকে একা

এত বড় গ্রাম। সব শেষ হয়ে গিয়েছিল বর্ধমান জ্বর কলেরা আর প্লেগ এর মরণ কামড়ে। গাঁ ছেড়ে পালিয়েছিল যারা বেঁচেছিল।
      আর একদল মরে বেঁচে পড়ে থেকে গিয়েছিল।
      কি আর তাদের 'পরব পাল'। তার উপরে দুগগা পুজো
           কে করবে। কার ক্ষমতা।



দেবী পাষাণ চণ্ডী

অজয়ে খেয়া চলে। এপারে সাতকাহনিয়া র ঘাট। ওপারে নারানপুর - উদয়পুরের ঘাট। এপারে সাতকাহনিয়া র হাঁড়ি রা ; ওপারে বাগদী রা খেয়া বায়। নদী তে মাছ ধরা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মাঝেমাঝে ঝগড়া ঝাঁটি ; লাঠালাঠি ও হয়। আবার ভাবও খুব। ওপারের মানুষ জনের তো এপারে না এলে চলেনা। হাট বাজার কেনা বেচা সবই এপারে। অযোধ্যা - বনকাটির হাট। খুব জমে ওঠে পুজোর আগে। ওপারের ঘুড়িষার বেণে পাড়া থেকে শাঁখারী রা আসে এপারে।
সাতকাহনের ঘাট থেকে বাঁশবন ; তালবন ; ডেঁয়ো মাদার তলা দিয়ে পথ চলে গেছে অযোধ্যা পর্যন্ত।
সেদিন ও শাঁখারী এসে নেমেছে। পথ আরও কম করার জন্যে ও বটে আবার বনকাটির বামুন পাড়া হয়ে যাবার জন্যে ও বটে। মনে আশা এখানে তার ভালো বেচা কেনা হবে। অনেক গুলো বামুন ঘর। আবার বড়লোক ও বটে। নানা রকম ব্যবসা আছে। বিরাট সব দালান বাড়ি। মেয়ে বৌ দের ফর্সা হাতে শাঁখা পরাতে শাঁখারী র খুব ভালো ও লাগে। সব মেয়ের মতো।


শাঁখারী আপনমনে হাঁটছে। এমন সময় আম বাগানের ভিতর থেকে যে রাস্তা গাঁ য়ে ঢুকেছে সেই রাস্তা দিয়ে দহে চান করে এক অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে এসে দাঁড়াল শাঁখারী র সামনে। ' আমাকে শাঁখা পরিয়ে দাও '। বিমুগ্ধ বিস্ময়ে অভিভূত শাঁখারী শাঁখা পরিয়ে দিল উজ্জ্বল হাত দু খানি তে।
' যাও অযোধ্যার ঘটক পাড়ার অভয়ের ঘরে। দাম নিয়ে নিও। আমি তার মেয়ে '। শাঁখারী পথ ধরতেই -  সে মেয়ে যে কোথায় গেল!
অভয়পদ বললেন তাঁর যে কোন মেয়ে নেই।
শাঁখারী তাঁকে সব ঘটনা বললেন।
তারপর শাঁখারী কে সাথে নিয়ে অভয়পদ
চললেন সেই স্থানে।
অতি নির্জন সেই স্থান। আম অর্জুন  জাম চাকলতা আর নানা লতা পাতায় ঢাকা। পাশেই ' দহ '। গভীর তার জল। কাজল কালো। নামতেই  ভয়।
সেখানে গিয়ে ই শাঁখারী ডাকতে লাগলেন। মা মা বলে।
দেখা দাও মা। তা না হলে যে মিথ্যাবাদী হয়ে যাই।
ব্রাহ্মণ কে যে আমি বলেছি হ্যাঁ তুমি সত্যি আমার কাছে শাঁখা পরেছ মা '।
আমাকে মিথ্যাবাদী সাজিও না মা।
অভয়পদ র অন্তর ডেকে উঠল।
সে ও উচ্চস্বরে মা মা বলে কেঁদে কেঁদে ডাকতে লাগল।

হঠাৎ ই দহের মাঝখানে কোথা থেকে ভেসে এলো এক রক্তিম শতদল। আর শাঁখা পরা দু খানি হাত তুলে তিনি দেখা দিলেন বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত দুই ভক্ত কে।
পাষাণ মূর্তি তার।
তিনি ' পাষাণ চণ্ডী। দেবী চণ্ডিকা  ভগবতী।
আজ ও তাঁর পূজা হয়। নবমী পুজা এখানে এই পাষাণ চণ্ডী থানে।অভয়পদ বৃদ্ধ হলেন।  মা এতটা হেঁটে আর তোর পুজো করতে আসতে পারছি না। আমার ঘর কে চল মা '
অনুমতি মিলল অন্তরে তার ধ্বনি তে
দুর্গামূর্তি তে তার পুজার আয়োজন  আজ ও অযোধ্যা ঘটক পাড়ায় হয়ে চলেছে।
প্রায় সাতপুরুষ ধরে।


---------------------------------------------------------------------
( অনেক কথার ভাণ্ডারী ; পৌরোহিত্য ই যার প্রধান পেশা ;
কথা বলেছি সেই হারু ঘটকের সাথে.)
কিছু ছবি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত। যাঁদের পোষ্ট থেকে নেওয়া তাঁদের পরিচিতি দিতে না পারার জন্য দুঃখিত

পারুল মা


 পারুলবালা আমার ফুল মা একজন কাননবালা আর অপরজন পারুলবালা। দুই বন্ধু। সখী। ফুল পাতানো সই। সে তো ইতিহাস। কে তার খোঁজ রাখে। কার আর মনে আছে। অযোধ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণী র শেষে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষার দুই জন ছাত্রী। মোট চার জন। গোরুর গাড়িতে চেপে কোনাকুনি পথে দুর্গাপুরে সগড়ভাঙ্গা হাই স্কুলে পরীক্ষা দিতে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সংগে দুই অভিভাবক আর প্রধান শিক্ষক ' বড়মাষ্টার ' ননীগোপাল চট্টোপাধ্যায়। সাল ১৯৪৬.।বিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে ১৯৪৪ নাগাদ। '৪০ থেকে এই বিদ্যালয় স্থাপনা র প্রচেষ্টা। ' বড় মাষ্টার ' তাঁর দেশের বাড়ির সবকিছু ছেড়ে এখানে এসেছেন। এলাকার গ্রাম মুখ্য ব্যক্তিদের অনুরোধে স্কুল গড়ে তোলার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। প্রাণপাত পরিশ্রম করে গড়ে তুলেছেন এই অযোধ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়। অনেক কথা আছে। নানা পত্র পত্রিকায় লিখেছি এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা র ইতিহাস।
সেই সময় আশপাশের ২৫/৩০ টি গ্রামে কোথাও কোন স্কুল নাই। কোন কিছু গড়ে তোলা যে কি কঠিন কাজ সে যাঁরা গড়েছেন তাঁরা ই জানেন। যাই হোক স্বাধীনতা দিবসের প্রভাত ফেরী। সদ্য স্বাধীন দেশ। মানুষ আবেগাপ্লুত। প্রভাতফেরী বেরিয়েছে। সামনে সেই দু বালা শঙখ বাজাচ্ছে। বড় মাষ্টার গানের ও মানুষ। গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়েছেন। পাশে লক্ষীনারায়ন চক্রবর্তী। গান মুক্তির মন্দির সোপান তলে তো আছেই আর ' চক্র শোভিত ওড়ে নিশান ;নবভারতের বাজে বিষাণ" উদ্বেলিত দু পাশের মানুষ। ছাত্র বৃত্তি পরীক্ষার দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র প্রয়াত নির্মল চট্টোপাধ্যায় এর স্মৃতি তে সে দিনের কথা ছিল উজ্জ্বল। আর এখনও বলতে গেলে আবেগরুদ্ধ হয়ে যান প্রথম ব্যাচের ছাত্র ষষ্ঠীপদ দে। আজ চলে গেলেন আমার ফুল মা পারুলবালা সাহা। বাবা তাঁর ধ্বজাধারী সাহা। ছিলেন একজন উদ্যোগী। কানন বালা চলে গেছেন অনেক অনেক দিন আগেই। হ্যাঁ কাননবালা আমার মা। ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষার ' জলপানি ;পাওয়া মেয়ে। তাঁর বাবা ননীগোপাল চট্টোপাধ্যায়। আমার দাদু। এলাকার প্রবীনেরা তাঁকে ' বড়মাষ্টার' ই বলেন। কপালে হাত ঠেকান। সেই প্রজন্ম শেষ হয়ে এল। একটা অধ্যায়। এই লেখার মাধ্যমে আমি স্মরণ করলাম আমার ' ফুল মা কে। আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য।



অজয়ের নদী বাঁধ


অজয়ের উত্তরে উত্তর রাঢ়। বজ্রভূমি। দক্ষিণে দক্ষিণ রাঢ়। সুহ্ম ভূমি। বা সুহ্ম। চোল রাজ রাজেন্দ্র চোল রাঢ় আক্রমণ করেছিলেন। তাঁর তিরুমালায় গিরিলিপি তে এই উত্তর রাঢ় এবং দক্ষিণ রাঢ় এর কথা আছে। তিনি রাঢ়দেশ জয় করেছিলেন। রাঢ় বা লাঢ় দেশের কথা জৈন ধর্মগ্রন্থ আচারাঙ্গ সুত্র তে সর্বপ্রথম পাওয়া যায়। অর্থাৎ অজয় সেই প্রাচীন কাল থেকেই প্রাকৃতিক সীমারেখা।


 আর প্রাকৃতিক সীমারেখা কে গ্রহন করার নির্দেশ তো কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্র এর ' জনপদ নিবেশ ' অধ্যায়ে ই দিয়েছেন। ইংরেজ শাসনে ১৮০৬ সালে অজয় বীরভুম এবং বর্ধমান এর সীমারেখা হিসাবে গৃহীত হয়। চীনের হোয়াংহো বা এদেশের দামোদর এর মতো অজয় ' দুঃখের নদী ' হিসাবে আখ্যা না পেলেও অজয়ের প্রবল বন্যায় বারবার দুপাশ ভেসেছে। বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১৯৭৮ এর ভয়ংকরী বন্যা র স্মৃতি তো এখনো ক্ষতের মতো জেগে আছে অজয় পারের মানুষ দের মনে। তার আগে ১৯৩৫;৪৩; ৫৬ এই সব সালের বন্যা ও ছিল প্রবল। ১৮৬৬-৬৭ এবং ১৮৭৩ সালের Bengal Embankment Act অনুযায়ী ১৮৭৩ সালে অজয়ের দক্ষিণ পাড়ে গোরা বাজার বা গৌরবাজার থেকে কাজলদিঘী পর্যন্ত ৭মাইল ৩৯৪০ ফুট মাটির বাঁধ নির্মান করানো হয়। পরে পরে ই বিষ্ণু পুর থেকে অর্জুন বাড়ি পর্যন্ত ৪ মাইল এবং তারপরে সাতকাহনিয়া থেকে সাগরপুতুল পর্যন্ত বাঁধ তৈরি হয়। নীচে র দিকে বেশ কিছুটা জমিদারী বাঁধ ছিল। বন্যার জলের তোড়ে বার বার মাটির বাঁধ ভেঙ্গেছে। আবার কিছুটা দক্ষিণে পূর্বে সরে গিয়ে নূতন বাঁধ নির্মিত হয়েছে।


এ বাঁধের ইতিহাস ও তাই উপেক্ষার নয়। বিষ্ণুপুরের বাঁধের গায়ের শতাব্দী প্রাচীন শিমূল গাছ গুলিকে দেখলে বোঝা যায় তাদের প্রাচীনত্ব। নদী বাঁধের দু ধারে ই পরিকল্পিত ভাবে এই সব গাছ লাগানো হয়েছিল। শিমূল ; যজ্ঞডুমুর ; অর্জুন এই সব গাছ। বেশ কিছু আছে। অনেক নাই। সাতকাহনিয়া থেকে অর্জুনতলা পর্যন্ত বাঁধের গায়ের প্রাচীন গাছ গুলি ৭৮ এর বন্যায় উপড়ে ভেসে যায়। বাঁধের সেই সৌন্দর্য ও নষ্ট হয়ে যায়। এই নদী বাঁধের উপর দিয়েই সারাদিন ই মানুষের যাতায়াত। এটা একটা প্রধান পথ ও বটে। অযোধ্যা বনকাটি সাতকাহনিয়া বসুধা এলাকার মানুষ জনের নিকটবর্তী গঞ্জ ইলামবাজার যাবার এটাই প্রধান পথ। ------------------------------------ ------------ ----------------------------------- ( সাতকাহনিয়া ডাক বাংলো র কথা পরে হবে)

Saturday, 16 May 2020

ইছাইঘোষের দেউল ২য়পর্ব

ইছাই ঘোষের দেউল।
১০ ই এপ্রিলের আমার পোষ্ট প্রয়োজনে একটু দেখে নেবেন।
 ' রামগঞ্জ তাম্রশাসনে ' র শুরুতেই ' বভূব রাঢ়াধীপ  লব্ধজন্মা ' ইত্যাদি
অর্থাৎ তিনি রাঢ়ে র অধিপতি।
তাঁর রাজত্বের সীমানা?  জানি না
তিনি ' ত্রিষষ্টি গড়ের ' অধিপতি।
ত্রিষষ্টি মানে কি ৬৩ সংখ্যক গড়ের অধিপতি
না কি তার গড়ের নামই তাই।
অতি প্রাচীন এক অশ্বত্থের তলে ' গড় বেড়ি ' এলাকায় ভগ্ন ধ্বংস প্রাপ্ত এক মন্দিরের নাম স্থানীয় প্রাচীন মানুষেরা বলতেন ' ষষ্ঠীতলা ' 
সমগ্র গড়বেড়ী এলাকা ছিল মোটা মাটির প্রাচীর ঘেরা। আর ছিল দুর্ভেদ্য কাঁটাবাঁশের বেড়া।
অনেক নীচে পরিখা।
কোথায় ছিল ' রাঢ়াপুরী '
বিখ্যাত ' রাঢ়েশ্বর শিবমন্দির ' এর কেন্দ্র করে
এমন অনুমান অনেকের।
বিখ্যাত চোল রাজা রাজেন্দ্র চোল রাঢ় আক্রমন করেছিলেন। তাঁর তিরুমালাই গিরিলিপি থেকেই আমরা উত্তর রাঢ় আর দক্ষিণ রাঢ় এর কথা জানতে পারি। রণশূর ছিলেন দক্ষিণ রাঢ়ের রাজা।
বিজিত রাজাদের মধ্যে ঈশ্বরী ঘোষের নাম নেই
সময় কাল নিয়ে তো বিতর্ক আছে ই। থাকবেই
আবার ধঙ্গদেব আক্রমন করেছিলেন রাঢ়দেশ।
তাঁর আক্রমনেই কি শেষ হয়ে যায় ইছাই এর বংশ।
খর্জূরবাহক লিপি তে আক্রমনের কথা খোদিত।
রাণী কে ও না কি বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
সেখানে ও রাঢ়াধীপ' এর নাম নেই।
অনেক আলো আঁধারী।
মধ্য রাঢ়ে র এই কেন্দ্রমধ্যে পণ্ডিত জনেরা আলো ফেলুন। আমরা আলোকিত হই।
( চলবে কি? ) 
 1940 সালের ইছাইঘোষের দেউলের ছবিটি পেয়েছি ASI এর আধিকারিক মাননীয় শুভ মজুমদারের সৌজন্যে। তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।
অনেক বিশিষ্ট মানুষ এসে দেখে গেছেন। যতটা পেরেছি সঙ্গ দিয়েছি। বারবার বলি সামান্য মানুষ।
আসবেন। দেখবেন এই অসাধারন পুরাকীর্তি।
বনকাটি। বনকাটি। থানা কাঁকসা। প বর্ধমান।
পানাগড় মোরগ্রাম হাইওয়ে। এগারো মাইলে নামুন। টোটো নিন। দেউল।
তবে এখন নয়। বিপদ কাটুক। এখন ঘরে থাকুন।

সামান্য কিছু নিজের কথা

নিজের কথা
সে আর কি বলব বলুন
সামান্য মানুষ। আঞ্চলিক ইতিহাস
আমার চর্চাক্ষেত্র। বৃহত্তর পরিধিতে নয়
পরগনা সেনপাহাড়ীর কাঁকসা জঙ্গল মহল
এখনকার থানা কাঁকসা। পশ্চিম বর্ধমান।
এবং প্রতিবেশী এলাকা আউসগ্রাম এর জঙ্গল মহল
আমাদের উত্তরে অজয়। আমাদের এক পা এপারে
আর এক পা ওপারে। একদিন এপার ওপার করতে না পারলে যে কি কষ্ট - সে অন্যেরা বুঝতেই পারবেনা। যেমন আমাদের ই শিবপুর নবগ্রাম আর ওপারে জয়দেব কেন্দুলী। একদিন পারাপার না করতে পারলে কত যে অসুবিধা। এই আমরা এই
অযোধ্যা বনকাটি এলাকার মানুষেরা - আমাদের ওপারে ইলামবাজার। হাট বাজার। নিকটতম গঞ্জ।
বিকালে আমরা কত জনাই বেড়াতে যাই। আমাদের টান তো বীরভূমের প্রতি ই। আমরা বোলপুরে র দিকে ই বেশী যাই। পড়াশোনা বাজার।
পানাগড় দুর্গাপুর যে আমরা যাইনা তা নয়। প্রায়ই যাই। কিন্তু দিন প্রতিদিনের জন্যে আমাদের ইলামবাজার।
মোটামুটি আমার এই অযোধ্যা বনকাটি এলাকা এবং তার কুড়ি কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এর এলাকা নিয়ে ঘোরাফেরা করি। অখ্যাত গ্রামের কোন ভগ্ন স্থাপত্য
খুঁজে বেড়াই। খুঁজি তার ইতিহাস। এখানেই আপনাদের শোনাই। খুব পরিচিত জায়গা গুলি নিয়ে তো অনেক লেখা পত্তর। নানা ব্লগ। সুন্দর সব ছবি। আমি সামান্য। সামান্যের প্রতি ই আমার আকর্ষণ। যাকে কেউ চেনে না। জানে না।
খুব ছোটো তেই আমার মনের গভীরে গেঁথে গেছে
' অঞ্জনা নদীতীরের সেই ভাঙা মন্দির খানি। আর আত্মীয় হীন সেই অন্ধ ভিখারি আর তার সঙ্গী ভক্ত লেজ কাটা কুকুর।
আর জন্মেছি সব হারানো এক গ্রামে। মাটিতে যার বিষাদ। বিষাদ বালক এক পথ হাঁটি কুয়াশা মাখা অতীতে।
অনেক নূতন বন্ধু এই সময় কালে যুক্ত হয়েছেন।
তাঁরা চেনেন না। তাই এই যৎসামান্য।
সকলকে শুভেচ্ছা। ভালোবাসা।

ইছাইঘোষের দেউল ১ ম পর্ব

ইছাই ঘোষের দেউল।
বিখ্যাত পুরাকীর্তি।
পাতলা টালির মতো ইঁটের তৈরি সু উচ্চ দেউল।
বিতর্ক এর সর্বাঙ্গ জুড়ে।
কে ইছাই ঘোষ? বিখ্যাত রামগঞ্জ তাম্রশাসনের রাঢ়াধীপ' মহামাণ্ডলিক' ঈশ্বরী ঘোষ। ত্রিষষ্টিগড়ের অধিপতি। সেখানে তাঁর পিতার নাম ধবল ঘোষ।
ধর্মমঙ্গল কাব্যে তিনি ইছাই ঘোষ। পিতা  সোম ঘোষ।  অনেকে বলেন একই ব্যক্তি। কেউ কেউ  ' না '। 
সুদূর রামগঞ্জ। বাংলাদেশে। সেখানে কি করে গেল তাম্রলিপি। এতো বড় রাজা তো তিনি নন। ইত্যাদি
কে নির্মান করালেন এই দেউল?  
নির্মান কাল নিয়ে নানা মত। বিতর্ক।
এটি কি কোন দেব দেউল?  গর্ভগৃহে কোন বেদী নাই। ছিলনা।'  অনুমিত হয় দেবী ভগবতী 'র মন্দির হিসাবে এটির নির্মান মধ্য অষ্টাদশ শতকে। ' বলছেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। আগে ছিল মধ্য পঞ্চদশ শতক।
এখন যে শিবলিঙ্গ দেখবেন তা স্থাপিত হয়েছে ৫০/৬০ বছর আগে। কেন অনুমতি দেওয়া হল?  
কেউ জানিনা।

বারবার সংস্কার হয়েছে বা হচ্ছে। তবু শীর্ষদেশ এর অশ্বত্থের চারা বার বার জন্মায়। বেড়ে ওঠে।
আরও অনেক কথা। পণ্ডিত নই। সামান্য এক আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী। সে ও তো অনেক দিন হল।
নানা জায়গায় বলেছি। সারস্বত সমাজে ই।
কত লিখেছি। কত জায়গায়।
একটি পুস্তিকা লিখেছিলাম। আর একটি ও নাই।
দু তিন বার ছাপা হয়েছিল। তেপান্তর মেলা থেকে ই অনেকে সংগ্রহ করেছিলেন।
মানুষ তাঁর এলাকার ইতিহাস জানুক। এই উদ্দ্যেশেই ছোট ছোট পুস্তিকা। মাত্র ১০/ টাকা দাম।
নিশ্চয়ই পণ্ডিতেরা আলোকপাত করবেন।
আমি সমৃদ্ধ হব।
এই আশা নিয়ে শেষ করি।