তখন ঘরে ঘরে মুড়ি ভাজা হতো। খোলা, খাপুরী, এসব মাটির তৈরী জিনিসপত্র ছিল।
ছিল কাঠের চওড়া হাতা, চাল নাড়ার জন্য।
কাঠের উনুনে, বড় খাপুরী তে চাল কে, নুন মাখিয়ে গরম করে তারপর খোলা য় নদীর বালি দিয়ে বেশ গরম করে - হ্যাঁ, তারও তাকবাক জানতে হতো। খুব গরম বালিতে চাল দিলে পূড়ে কালো হয়ে যেতে পারে, তাই কেমন গরমে চাল দিলে পূড়বে না তা জানতে বুঝতে হত। গ্রামে কিছু অসহায় মহিলা ছিল। যাঁদের এই ঘরে ঘরে মুড়ি ভাজা ই ছিল পেশা। তাদের মুড়ি ভাজুনি বলা হত।
মরশুমে তাদের নানা ঘরে ডাক পড়ত। তাতেই পেটের ভাতের জোগাড় হত।
খোলার মুখটা কাটা থাকত। কুমোর রা বড় হোলা র গায়ে দাগ দিয়েই দিত। সেই দাগবরাবর খুব সাবধানে ভেঙে নিতে হত। হল খোলা। সে ও খুব সহজ কাজ নয়। সবাই পারেনা।
খোলায় চাল নাড়ার জন্য কুঁচি কাঠি র দরকার ছিল। নাড়াচাড়া করে কাঠি দিয়ে মুড়ি তোলার সময় সামান্য বালিও উঠে যেত। একেবারে শেষে সেই মুড়ি আবার বাঁশের চালুনি তে চেলে নিতে হত। আবার ঘরের প্রয়োজন মাফিক, হলুদ দিয়ে
রাঙানো, কুসুম বীজ, ছোলা মেশানো, কড়কড়ে মুড়ির ও বেশ কদর ছিল।
একদল গরীব ঘরের মহিলা এই কুঁচি কাঠি তুলতো। বিক্রি করে কিছু পয়সা পেতো । না হয় দু টি মুড়ি,মুড়কি কিম্বা কিছু চাল। এখন সে সবের পাট চুকে গেছে। এখন মিলের ইউরিয়া দিয়ে নোনানো বা খাবার সোডা মেশানো - না জানি আরও কত কায়দা আছে। সাদা ধবধবে নরম মুড়ি। সব মুড়ি ভাজা কলের মুড়ি সমান নয়।
আদিবাসী মহিলারা এখনও কুঁচি কাঠি তোলে।
শালপাতায় সেলাই দিতে কাজে লাগে। অনেক গুলো পাতাকে জুড়ে থালার মতো পাতা। পাতা গুলো কে জুড়তে হয়। কি অসম্ভব দক্ষতায়, দ্রুত৷ তাঁরা এই পাতা বোনে।
যাগ যজ্ঞ, হোমে এখনও এই কুঁচি কাঠি লাগে।
পুজোর মরশুমে তার চাহিদা বাড়ে।
বয়সের ভারে ছোটো খাটো চেহারাটি নুয়ে গেছে।
তবু পুরনো অভ্যেস। ঠাকুর থানে থানে কুঁচি কাঠি পৌঁছে দেওয়া। ফেলুরাণী অভ্যেস ছাড়তে পারেনি
টুকটুক করে কোমর নুইয়ে কুঁচিকাঠি তুলেছে।
তারপর শুকিয়ে সে গুলোর গোছা বাঁধছে।
যা হোক বিক্রি করে কিছু তো পাওয়া যাবে।
No comments:
Post a Comment