।। গণপুরের মন্দির।। বীরভূম।।
কি বিশাল মন্দির ই না ছিল এই মন্দির টি।
রাস্তা থেকে তার পিছন দিকটি দেখা যায়।
দেখা যায় সেই ধ্বংস স্তুপকে।
আর সামনের দিক দেখতে হলে আপনাকে অন্যের
বাসগৃহের মধ্যে যেতে হবে। দরজা খুলে।
অন্যের বাড়িতে ঢোকার জন্য ডাকাডাকি করতে
কেমন লাগে। যদি না পরিচিত কেউ সাথে থাকেন।
যাক। ভাগ্যিস এক ভদ্রমহিলা সাহায্য করলেন।
দরজা খুলে ঢুকতে তিনিই অনুমতি দিলেন।
ঢুকলাম।
মন্দিরের সামনের দিক আর নূতন ওঠা দালানের মধ্যে
দু তিন ফুটের একটা প্যাসেজ।
মন্দিরের সামনের দিকের অলংকরণ দেখে তো
অবাক হবার ই পালা। অপূর্ব সব কারুকার্য।
সবই ফুলপাথরের কাজ।
কালো ধোঁয়া র কালিতে সব মাখামাখি।
কেন? না এখানে ধান সেদ্ধ করা হয়েছে। উনুন।
লোহার কড়াই অর্থাৎ বড় পাত্র।
খড়ে ভর্তি মন্দিরের গর্ভগৃহ।
ভিতরে ঢোকার কোন উপায় নেই। সাহস ও নেই।
আলো নেমে এসেছে। আলোর বিপরীতে সম্মুখ ভাগ।
সামান্য প্যাসেজ। ছবি তোলার খুবই অসুবিধা।
এত কালি মাখা। যে ভেজা জলকাপড়ে কিছুটা ঘসে
তুলব তারও আর সময় নাই।
কোন রকমে কয়েকটি ছবি তুললাম। সাথে ছিলেন এক
পেশাদার ক্যামেরাম্যান।
এই ভ্রমণের আয়োজন করে ছিলেন " বীরভূম আর্টিসানি "র পক্ষে বাটিক শিল্পী প্রশিক্ষক শ্রী অভিষেক সেনগুপ্ত এবং কলেজ শিক্ষক রাসবিহারী গঁড়াই রা।
এই বীরভূম আর্টিসানি র কথা আলাদা করে বলতে হবে।
এখন গণপুর। বীরভূমের পশ্চিম প্রান্তের এই সব এলাকা মানে দেউচা ; মুলুটি ; মাসড়া ; গণপুর ; বালিয়া ; নারায়ণপুর
সব " লোহামহল " নামে পরিচিত।ছিল একদিন । ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী আসার আগেই এখানে দেশীয় পদ্ধতি তে কাঁচা লোহার উৎপাদন হত। " অসুর "সম্প্রদায়ের মানুষেরা জানতেন লোহা গলানো র নিজস্ব পদ্ধতি। সে তো প্রাগৈতিহাসিক যুগেই। " পাণ্ডু রাজার ঢিবি " তে তো লোহার অস্ত্র মিলেছে। আনুমানিক ৩৫০০+- বৎসর আগেই।
বীরভূমের এই লোহা শিল্পের সাথে যুক্ত একটি নাম খুবই উল্লেখ যোগ্য। ইন্দ্রনারায়ন চৌধুরী ( শর্মা) । তিনি ১৭৭৪ সালে
আধুনিক পদ্ধতি তে এই লোহার বাণিজ্যিক উৎপাদন এর উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
বীরভূমের এই লোহা মহল নিয়ে আলাদা ভাবে লেখা দরকার।
উপযুক্ত কেউ লিখুন। অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে এর সাথে।
এই গণপুরের চৌধুরী পরিবার লোহার কারবারে প্রভূত ধনী হয়ে উঠেন। এবং নির্মান করিয়েছিলেন এই সব অলংকৃত
মন্দির রাজি। মধ্য অষ্টাদশ শতকে । মন্দির ময় প্রাচীন জনপদ এই গণপুর।
কালীতলা য় ঘেরা মন্দির চত্বরে আছে ১৫/১৬ টি মন্দির।
একটি সুউচ্চে অবস্থিত অসাধারণ কারু কার্য মণ্ডিত দোল
মঞ্চ সহ।
কাছেই চৌধুরী পরিবারে ই নির্মিত আরও পাঁচটি সুন্দর অলংকৃত শিব মন্দির। কয়েক টি র সম্মুখ ভাগে র উপরে সিন্থেটিক রঙের প্রলেপ পড়েছে।
মন্দির বা মন্দির অলংকরণ ; (সে টেরাকোটাই হোক আর ফুলপাথরের হোক) প্রেমীরা গণপুর ; মল্লারপুর ; মুলুটি দেখেননি তা তো আর হয়না। অনেক গুণী মানুষ লিখেছেন।
আমি এর শিল্প সৌকর্য ; তার নান্দনিক দিক নিয়ে কিছু বলছিনা। নিজের চোখে দেখে অনুভব করুন। এই সব শিল্পকর্মের যে প্রসাদ গুন তা উপলব্ধি উপভোগ করুন। আর ভাবুন তাঁহাদের কথা ; যাঁদের নাম কোথাও নেই। সেই সব শিল্পী কারিগর দের কথা। যাদের কথা কেহ লিখে নাই। নাই কোন
উপাদান।
কিন্তু এই যে বিশালাকৃতি ভগ্ন মন্দির টি যে টির অর্ধেক টি
পারিবারিক বাসগৃহের মধ্যে - সেটির সম্মুখ ভাগ হয়তো বা
বাদ পড়ে যেতে পারে আপনার ভ্রমণ কালে। তাই বলা। অন্যান্য ২০ টি মন্দির দেখেই হয়তো ফিরে যেতে পারেন -
অসাধারণ এর সম্মুখ ভাগের কাজ। ঠিক খিলানের উপরের কাজ টি র ই ছবি দিয়েছিলাম কয়েক দিন আগে। কিছুটা এডিট করে। নিশ্চয়ই দেখেছেন। আবার দেখুন।
বারবার দেখেও যেন সাধ মেটেনা। অসাধারণ গণপুর।
------------ " ফুলপাথরের মহাকাব্য "------------
No comments:
Post a Comment