Sunday, 31 August 2025

।।আজ একটু অন্য কথা।।

আজ একটু অন্য রকম কথা বলি 
 কথা তো লতার মতো। 
 আমি এর আগে আপনাদের কাছে বারবার বলেছি এই সকল কথা 
দেখুন আমি খুব সাধারণ মানুষ। লেখাপড়া তেমন হয়নি। যেমন টা হলে মনে করা যেত কিছু একটা বটি। 
 নিজের লেখা বই নাই। 
ISSN  বা  পিয়ার রিভিউড কোন পত্রিকা র সম্পাদক ও নই 
অতি সামান্য এক সাধারণ আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী মাত্র। 
 আবাল্যের ভালোবাসা। ইতিহাস। 
 বলতে পারেন সেই কোন বালক বেলায় আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল  অঞ্জনা নদী তীরে চন্দনীগাঁয়ে    পোড়ো মন্দির খানা গঞ্জের বাঁয়ে 
 জীর্ণ ফাটল ধরা  এককোনে তারি 
অন্ধ নিয়েছে বাসা কুঞ্জবিহারী 
আমার মন কেমন করত      ঐ ভাঙ্গা মন্দির 
 অন্ধ ভিখারি ৷    লেজ কাটা কুকুর  ---
ঐ ভাঙ্গা মন্দির টা আমার বুকে গেঁথে গেছে সেই কবে কার  বালকবেলায় 
ভাঙ্গা মন্দির দেখলে দাঁড়িয়ে পড়ি। 
 এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ছুটে যাই এখনও 
 খুঁজি তার গড়ে ওঠার ইতিহাস 
আবার আজকের করুন দশা 
 আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি টাকে বোঝার চেষ্টা করি 
পত্তন আর পতনের মাঝে তো একটি মহামুল্যবান "ত"।
তার খোঁজ পণ্ডিতেরা জানেন 
 আমি কোন পণ্ডিত নই। একাডেমিক লোক ই নই 
 গবেষক। কোন ভাবেই নই। 
 আমি চেয়েছি আমার চারপাশ টা বুঝতে
 মানুষ । মানুষ ই তো সব। 
 চাই মানুষ তার মাটির কথা জানুক। চিনুক নিজের শিকড়। শিকড় বিচ্ছিন্ন এই জাত 
 যদি সামান্যও পারি। 
কাঠবিড়ালি র মতো 
 মোটা মোটা দামী বই কোথায় পাব। 
 কেনার সামর্থ্য ছিলনা 
অনেক দামী বই  পুরনো মাটির বাড়িতে নষ্ট হয়ে গেছে 
যা গেছে তা গেছে 
আমার এই এলাকা কাঁকসা আউসগ্রাম এর জঙ্গল মহল  ইছাইঘোষ এর দেউল  অজয়ের এপার ওপার নিয়ে ত্রিশ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের জায়গায় আমার ঘোরাঘুরি 
 এখানেই এখন লিখি৷ এই ফেসবুকে র পাতায় 
কেউ আমন্ত্রণ না জানালে কোথাও লিখিনা 
আমার কোন উচ্চাশা নাই 
অনেক সময় ফেলে এসেছি। মনকে ই বলি " তুই ফেলে এসেছিস কারে - মন মন রে আমার 
 তবু আমার লেখা আপনাদের ভালো লাগে 
 চমৎকার সব মন্তব্য লিখে আমাকে প্রাণিত করেন 
 আপনাদের ধন্যবাদ 
 কি করব বলুন গবেষক এর মতো প্রতিটি বাক্যের তথ্য সূত্র দিতে পারিনা 
ভুলে গেছি কোথায় পড়েছি যেন 
রেফারেন্স বই এর খোঁজে কোথায় যাব বলুন 
 কে দেবে আমাকে বই 
এখন দিচ্ছে এই মাধ্যম। পাচ্ছি নানা পি ডি এফ 
 একবার সাময়িক সদস্য হয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের 
 সেণ্ট্রাল লাইব্রেরি তে গিয়েছিলাম দিন কতক 
 আমার দরকার ছিল  মাৎস্য ন্যায় পর্ব 
 একান্তে শুনলাম যে দামী দামী সব বই অধ্যাপক দের দখলে ই থাকে। তাই থাক 
 কোন পণ্ডিত তো আর উপেক্ষিত  অবজ্ঞাত গ্রামের ভাঙ্গা মন্দির টির কথা আপনাদের শোনাবেন না। না কোন গবেষক 
   আমি চেষ্টা করি 
আমি চেষ্টা করেছিলাম একটা পুকুরের নাম কেন 
" সন্ধান "। কেন প্রেমসায়র!  কেন জঙ্গলের মধ্যে এক গ্রাম। নাম তার প্রেমগঞ্জ কি সরস্বতীগঞ্জ! চারিদিকে জঙ্গলের মধ্যে কোথাও কোন মুসলিম নাই। নাম তবু আলী নগর! খুঁজে ছিলাম,  এই সব কথা।  কাহিনী। আমাদের এই কাঁকসা আর আউসগ্রামের জঙ্গল মহলে শতাধিক আদিবাসী পল্লী আছে। তাদের  কথা আর তেমন করে বলা হল কই। আর কি পারব! 
 অনেক পণ্ডিত আমার লেখা পড়েন। 
লাইক ও দেননা। মন্তব্য তো দূরের কথা। ভাবি সত্যিই তো তাঁরা ওজনদার। আমার পোষ্ট তো নূতন কিছু নয়। তাতে লাইক দিয়ে নিজের ওজন কমাবেন কেন - 
 এই আপনারা এখানে যাঁরা আছেন তাঁদের ভালোবাসাই আমার পাথেয় 

কেউ কাউকে মনে রাখেনা 
 আমি চেষ্টা করেছিলাম মাত্র
এই কথাটি কাকে বলব     মনে রেখো

রয়ে গেল আরও কিছু কথা     বাকি 
 আমি যেন  সেই  বাতি ওয়ালা 
 মাটির প্রদীপ হাতে দাঁড়াই    ঘন অন্ধকারে
পথের বাঁকে

অনেক পুরনো পোষ্ট। এই পোষ্ট টি র প্রেক্ষিতে পরবর্তী পোষ্ট টি। 

আপনারা জানেন  যে এই ই আমি। আলাদা করে বলার মতো কিছু নয়। তবু  দিলাম  কেন জানেন 
 আপনারা এই মাধ্যমের বন্ধুরা না হয় আর একটু ভালো করেই চিনুন।

অনেক টা সময় পার হয়ে এলাম। এই সময়কালে অনেক কিছু বদলে গেছে। বদলের কথা বলা যাবে অন্য সময়ে।

* সাধারণ মানুষের জন্য বেশ কয়েকটি পুস্তিকা লিখেছিলাম। এই যেমন  ইছাই ঘোষের দেউল, গড় জঙ্গল কথা, গড়জঙ্গলের দেবী শ্যামারূপা, সাতকাহনিয়া অযোধ্যা বনকাটি র ইতিবৃত্ত, কাঁকসা থানার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ইত্যাদি। 
তেপান্তর মেলা থেকে সে সব পুস্তিকা বেরিয়ে গেছে। 
ইলামবাজার কে বলি আমার দ্বিতীয় ঘর। যদিও সেখানে আমার নিজের কোন ঘর নাই। কিন্তু এই ইলামবাজারের মাটি তে মিশে আছে আমার কৈশোর, যৌবনের অনেক টা সময়। 
তাই লিখেছি ইলামবাজারের অতীত ঐতিহ্য নিয়ে 
একটি ছোট বই ' এলেমবাজার নিলামবাজার ইলামবাজার '। তার প্রথম মুদ্রণের সব কপি শেষ। 
দ্বিতীয় মুদ্রনের চেষ্টা চলছে। 

#allfollowers

আয়। আয়। বড় তাড়াতাড়ি এলি

।। আয়। আয়। 
বড় তাড়াতাড়ি এলি। 
সেই নারীকে আসতে দেখে, কাপালিক মনে মনে বললেন। 
গ্রামের একেবারে শেষ, পূর্ব প্রান্তে, পাশাপাশি তিনটি পুকুর। তারপরেই চাষের মাঠ। তিনটি পুকুরের পাড়েই তিনটি বিরাট বটবৃক্ষ। 
দক্ষিণ দিকের পুকুরটি ঘোষদের। তার দক্ষিণ পাড়ে এই ঝাঁকড়া বটবৃক্ষের তলে কাপালিকের কুঁড়ে। জটাজুট ধারী। দশাসই চেহারা। গৌর বর্ণ। এখন তামাটে। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। আবার মানুষের হাড়ের মালা। সামনে মাটি দিয়ে বাঁধানো বেদী। তার উপরে বসে কাপালিক সাধনা করেন। বেদীর ভিতরে পাঁচটি মানুষের মাথার খুলি। পঞ্চমুণ্ডি আসন। সামনেই গভীর শাল জঙ্গল। 
সন্ধ্যা সমাগত প্রায়। শিবাদের দল জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসেছে। পুকুরে দল বেঁধে জল খাচ্ছে। 
পাশের বামুনপুকুরের পাড়ের বটবৃক্ষ টিতে অসংখ্য বাদুড় আর প্যাঁচার বাস। মাঠের ইঁদুর ধরে খায় আবার 
অধিকারী আমবাগান আর জঙ্গলের নানা ফলের গাছের ফল মূল ও খায়। প্যাঁচা দের দল উড়ে গেল। বাদুড়ের ঝাঁক উত্তরে খেলারামতলা হয়ে উড়ে গেল নদীর ধারে। বাঁধের ধারে বিরাট যজ্ঞডুমুরের গাছ। বড় বড় পাকা ডুমুর বেশ মিষ্টি। 
অনেকের সেখানে বাস। পাকা ডুমুরের লোভে অনেকে এসে জোটে। ভুলো কালী তলার বিশাল অশ্বত্থের কোটরে বাসা অনেক পাখির। বকেরা দল বেঁধে থাকে। এখন সব বাসার নিশ্চিন্তিতে। 
আকাশে একটা ভাঙা চাঁদ ঝুলে আছে। 
কাপালিক তাঁর আসন ছেড়ে জঙ্গলের মধ্যে চলে গেলেন। জানেন সেখানে একটা বেশ বড় ছাতিম গাছ আছে। একটা ডাল তার মাটির দিকে ঝুঁকে আছে। সেদিকেই গেছে গাঁ থেকে আসা সেই নারী। 
গায়ে তার একটা শাড়ি জড়ানো। 
বড় তাড়াতাড়ি চলে গেলি। কাপালিক মনে মনে বলেন।  ঠিকই তাই। সেই নারী কাপড়ের আঁচল দিয়ে গলায় ফাঁস জড়িয়ে ছাতিমের ডালে ঝুলে পড়েছে। কিছুক্ষণের ছটফটানি। তারপর সব শেষ। পড়ে থাকল, গাঁ ঘর। স্বামী, সংসার। 
কিসের জ্বালায় মরল এই নারী। বেনে ঘরের বৌ। 
স্বামী, শ্বশুর দের পয়সার অভাব নাই। ব্যবসার টাকা। নুনের ব্যবসা আবার গুড় থেকে লাল চিনি তৈরী র ব্যবসা।  স্বামী টি দেখতে শুনতে ফুল বাবু। এক নারীতে তার মন ভরেনা। অযোধ্যার বেনে পাড়ায় তার আরও কয়েকজন আছে। এই বৌ ভাবে তারা কি আমার চেয়েও সুন্দরী। 
আমার মতো গায়ের রঙ। এই রকম হলদে উজ্জ্বল ফর্সা। এই রকম শরীর। না হয় তার বাচ্চা কাচ্চা হয়নি বিয়ের অনেক গুলো বছর পরেও। 
গাঁ ঘরে তো নানা কথা থাকবেই। আছেও। “ আঁটকুড়ী “। তার আবার রূপের গিদের “। প্রতিদিনই শোনে। বুকের ভিতর টা জ্বলে যায়। 
কোন কোন রাতে স্বামী ঘরে ফেরেনা। 
‘’ কেন ফিরবে লো ‘’!  কি আছে তোর! ‘’ পারিসনি কেন বেঁধে রাখতে ‘’। দেখগে যা, দত্ত বাড়ির মেয়ে টাকে কি সুন্দর সোনার হার গড়িয়ে দিয়েছে। আর তোর!  ঐ তো তাঁতি ঘরের মোটা একটা শাড়ী।’’
বাউরী ঘরের পাকা  রসবতী বৌ ফুলটুসি বলে, তুই ও দেখিয়ে দে। তোকে তো খুব পছন্দ মালাকার দের 
নন্দ র। যাবি ‘’। শুনলাম তোকে  তো একদিন আটকেছিল।  পেমসায়ের থেকে চান করে উঠে আসার সময়। ভিজে গায়েই না কি জড়িয়ে ধরেছিল! তো যাবি তো বল!  সন্ধ্যে বেলায় তাঁতি বাগানের ধারে আমি থাকব। ‘’
মুখে কাপড় চাপা দিয়ে ছুটে পালিয়ে এসেছে ঘরে। বিছানায় উপুড় হয়ে কেঁদেছে। আবার আমগাছের আড়ালে  ভেজা গায়ে তাকে নন্দ র জড়িয়ে ধরা মনে পড়েছে। বুকে চিনচিনে ব্যথা ধরে গিয়েছিল। 
কতদিন গোপনে ছেলে হবার জন্যে জড়িবুটি র ওষুধ খেয়েছে তমালতলীর বুড়ি মাতামার কাছে। 
“ মাতামা বলেছিল, তোর দোষ না তোর মরদের দোষ “!  আরও অনেক কথা জিজ্ঞেস করেছিল মাতামা। সে উত্তর দিতে পারেনি লজ্জায়। 
কি দাম এ জীবনের। অনেক ভেবেছে সে। অনেক। এই তো নারীজীবন। 
একবার ভেবেছিল যাবে, ঐ কাপালিকের কাছে। 
কিন্তু প্রথমে সাহস হয়নি। ঐ নির্জনে। কাকে নিয়ে যাবে!  কাপালিক যদি ক্ষেপে যায়। শুনেছে মেয়ে দেখলে তার চোখ দুটো আগুনের গোলার মতো হয়ে যায়। সামনে ধুনি জ্বলছে। একপাশে ত্রিশূল গোঁজা মাটিতে। গলায় হাড়ের মালা। একটা নরমুণ্ডের খুলিতে ধুনো জ্বলছে। সে না কি সব খায়। বসুধা থেকে আর এক কাপালিক তাঁর সাথে মাঝে মাঝে দেখা করতে আসে। নিশ্চয়ই কাজের কথা থাকে। কিন্তু কি সে কাজের কথা কেউ জানেনা। বৃদ্ধ নদী তে চণ্ডাল রা মরা পোড়ায়। 
ডিঙি নৌকো পারাপার করে। তাহলে কি কাপালিক কে সেখানে যেতে হবে! মাল দের বলে রেখেছে। খবর দিতে। 
 তাও একদিন, অনেক সাহস সঞ্চয় করে, পাড়ার সম্পর্কে দেওর পাগলা দুলাল কে সাথে নিয়ে যাবার কথা ভাবলো। দুলাল পাগলা বটে কিন্তু মনটি খুব ভালো। সে তার বৌদি র মনের দুঃখ বোঝে। সে জানে বৌদির বর ঘরে থাকেনা। সন্ধ্যে হলেই বেরিয়ে যায়। সারা রাতে ফেরেনা। মদ আর মেয়ে এই তার নেশা। দেদার ফূর্তি ওড়ায়। 
তবু একদিন কাপালিকের কুঁড়েতে গেল। দুলাল কে সাথে নিয়ে। সাধারণত তাঁর কাছ কেউ ঘেঁসেনা। 
ওদিক মাড়ায়না। 
‘’ তোদের সাহস তো কম নয় ‘’। আমার কাছে এসেছিস! ‘’ 
হতভাগিনী সেই নারী পারুলকে কিছুই বলতে হলনা। 
কাপালিক এক এক করে সব বলে গেলেন। 
সে যা বলতে গিয়েছিল। তার মুখ থেকে কোন কথা বের হলনা। 
“ তুই তো আমার অনেক কাছে চলে এসেছিস “। 
আর কটা দিন। অমাবস্যা সামনেই। মুক্তি পেয়ে যাবি। তোর মুক্তি তে আমারও মুক্তি হবে রে মা “
যা আজ ঘরে যা। সবাই কে অবাক করে দিয়ে 
কাপালিক তাকে প্রণাম করে,  মা, মা, করে গগনবিদারী আওয়াজ করতে লাগলো। আর তার সাথে শুরু হল তার উন্মাদ নৃত্য। 
এরা নড়তেও পারছেনা। ভয়ে কেমন গুটিয়ে গেছে। মনে হল যেন কোন অদৃশ্য শক্তি তাকে জড়িয়ে  বেঁধে ফেলেছে। সে নড়তে পারছেনা। 
কিছুক্ষণ পরে কাপালিক বলে উঠলো “ যা, ঘরে যা। এই কটা দিন কাটা। শুদ্ধ ভাবে কাটাবি। অবশ্য স্বামীসংসর্গ তোর নাই। “ শরীর ঠিক আছে তো। “ 
কোন রকমে বাড়ি ফিরে এলো ওরা। কারও মুখে কোন কথা নাই। এই কদিন কারও সাথে কোন কথা বলেনি সে। 
তারপর এলো সেই দিন। ধীর পায়ে সন্ধ্যা নামছে। 
নিজের হাতেই নিজের জীবন বিসর্জন দিল সেই নারী। সেই বেনে বৌ। পারুল।
সে যেন কোন অদৃশ্য টানে। তার মন যেন শূন্য। 
মনে কোন চিন্তা, দ্বিধা দ্বন্দ্ব কিছুই নাই। শরীর টা থেকেও যেন নাই। এ শরীর কার। সে বুঝতে পারলনা কিছুই। 
কাপালিক ঝোপের আড়াল থেকে সবই দেখছিলেন। একবার, ক্ষণিকের জন্য হলেও তার মনে হল একে বাঁচানো যায়। না কাপালিকের মনে
দূর্বলতার স্থান নাই। তার নারীর শবদেহ চাই। 
তার সাধনার বাকী অংশটুকু আজই শেষ করতে হবে। আজ মহা অমাবস্যা। 
তারপর 
গাছ থেকে সাবধানে সেই নারী শবদেহ নামিয়ে 
কাঁধে তুলে নিয়ে এলো তার কুঁড়েতে।
গাছের ডালে বাঁধা থাকল তার শাড়ী র আঁচল। 
নিজেকে তৈরী করে নিল কাপালিক। 
তারপর নারী শবদেহের উপরে পদ্মাসনে বসে সারারাত চলল তার সাধনা। 
সকালে মানুষ জন এসে দেখল। কেউ কোথাও নেই। না কাপালিক। না সেই নারীর শবদেহ। 
------------ ------------ ------------ ------------

* চিত্র। অজয় তীরের এক স্থান। ঠিক সেই এলাকার ছবি নয়।

*কমেন্ট সেকশনে আমাকে ফেবারিট করার যে টেকনিক্যাল পদ্ধতি তা দেওয়া আছে।

** যাঁরা পড়েননি বা পাননি তাঁদের জন্য আবারও ফিরিয়ে দিলাম। এই সময় কালে অনেক নতুন বন্ধু যুক্ত হয়েছেন। পড়ুন। 
#allfollowerseveryone

কার এণ্ড টেগোর কোম্পানি। নারায়ণকুড়ি

কিছু আর নাই। 
কার এণ্ড টেগোর কোম্পানির রাণীগঞ্জ এলাকার নারায়নকুড়ি তে কয়লা উত্তোলন প্রকল্প। 
উদ্যোগপতি দ্বারকানাথ ঠাকুর। 
কোম্পানির অপর সহযোগী উইলিয়াম কার। 
ভারতবর্ষের মধ্যে প্রথম। 
কয়লা উত্তোলন করার উদ্যোগ নিয়েছেন, অন্য দুটি ইংরেজ কোম্পানি। 
Jeremiah Homfray  এবং Erskine brothers। 
এরা প্রতিদ্বন্দ্বী। 
ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ও চাইছিলনা কয়লা উত্তোলনে  একচেটিয়া ব্যবসা করুক 
Carr and Tagore Company. 
সেই পরিস্থিতি তে নিজেদের কোম্পানি চালাতে হয়েছে দ্বারকানাথ ঠাকুর কে। নানাবিধ পরিকল্পনা ছিল তাঁর। 

সংরক্ষিত হয়েছে মথুরাচণ্ডীর পীঠস্থান। 
 চমৎকার মন্দির। 
 পাশে শ্মশান। সামনে দামোদর। প্রায়  শুকনো।  জলধারা বইছে বাঁকুড়া র দিকে। 
 তেঁতুল গাছগুলি জানান দিচ্ছে তাদের প্রাচীণত্ব। 
 ' হলেজ " ঘর টি কে বেঁধে রেখেছে বটবৃক্ষের সহস্র বাহু। হলেজ সম্বন্ধে জানতে সাইনবোর্ড টি পড়ুন।। 
 এখানে সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজ হয়েছে। রাজ্য হেরিটেজ কমিশন দ্বারা এটি হেরিটেজ স্থাপনা হিসাবে ঘোষিত হয়েছে ।  অদূরে  দামোদর। জেটির দেওয়াল টি কিছুটা বেঁচে আছে। খণি এলাকার অফিসঘর টি চাপা পড়ে গেছে। দুটি স্তম্ভ কোনমতে দাঁড়িয়ে আছে। 
 কিছু ছবি দিলাম। দেখুন।
 কৃতজ্ঞতা। হরিনারায়ণ মণ্ডল। সাতগ্রাম

আমার মাতামা

আমার মাতামা। বালকদাসী বৈরাগ্য। 
 আগের নাম যে কি ছিল, তা জানিনা।। 
কোনদিন জিজ্ঞেস ও করিনি। মায়ের আবার নাম কি!  মা । 
 এই সাতকাহনিয়া গ্রামে তার আসা এবং শতাব্দী প্রাচীন নবীন দাস বাবাজীর আখড়ায় স্থান পাওয়া, এক দীর্ঘ জীবন পরিক্রমা। 
আমাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন। 
ছোট তেই মা মারা গিয়েছিল। 
যেই কোলে তুলে নিত সে ই আরেকটা মা হয়ে যেত। দিদিমা কাউকে মানা করত না। 
সে তুলশী বাউরি ই হোক আর মাতামা ই হোক। 
বা অন্য কেউ হোক। গাঁয়ের হলেই হল। 
আমার মাতামা খুব কম বয়সেই এ গ্রামে এসেছিলেন। বিচিত্র জীবন। তাঁর কোলে চেপে হাটে। কিশোরী ময়রার দোকানে একটি বড় রসগোল্লা আমার বাঁধা। আবার তাঁরই সঙ্গে নারানপুর যাওয়া। নদী পেরিয়ে। কোলে নিয়ে জল পার করত। ওপারে অজয়ে এক হাঁটু জল। 
বাগদি দাদুদের দাওয়ায় বসে কাঁসার থালায় শুকনো চিঁড়ে, পাকা আম, গুড়, গাছের কলা আমার জন্য বরাদ্দ। চকচকে ঘটিতে করে জল এনে দিত সদগোপ দের একটা মেয়ে। 
বামুনের ছেলে! 
 মাতামাই কোলে করে জয়দেব কেন্দুলী র মেলা তে নিয়ে যেত। কোটরে বাবার আশ্রমে জায়গা হত। 
বড় হয়েছি। ইলামবাজার হাই স্কুলে পড়তে যাই। 
ইলামবাজার বাউরি পাড়া, শুঁড়ি পাড়ার  ধারে এক প্রাচীন আখড়া। তখন সেখানে হরেকৃষ্ণ বাবাজী 
আখড়াধারী। আমি দাদু বলতাম। কেননা আমার দাদুর সাথে বেশ সখ্য ছিল। দুজনেই বাঁকুড়া র মানুষ। পরস্পরের প্রতি টান স্বাভাবিক। সত্যিই তাই ভাবি মাটির নিজের আকর্ষণ ক্ষমতা আছে। 
ইলামবাজারের বাবাজী ছিলেন ব্রাহ্মণ ঘরের সন্তান। ছোট তেই সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। 
 সোনামুখি আশ্রমের বিখ্যাত সাধু ছিলেন তাঁর গুরু। টুকটাক তাঁর মুখ থেকে মাতামার কথা শুনতাম। মাতামা তো নিজমুখে কিছুই বলতনা। 
পরে এই আশ্রমে আসেন অন্নপূর্ণা মাসীমা। আমার মা মাসী দের বয়সী। অযোধ্যা গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের মেয়ে। মুখোপাধ্যায় পরিবারের বউ। 
অল্প বয়েসেই বিধবা। তাহলে তার আর ঠাঁই কোথা। হয় কাশী না হয় বৃন্দাবন। হয়তো মাতামার বিশেষ আকর্ষণী ক্ষমতা য়  আমার ননুমা বেছে নিয়েছিলেন এই আখড়া কেই। বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন। সঙ্গী ছিল আমার মা। মাসীরা ছোট হলেও যেন খেলার সাথী। খেলার ই তো বয়েস। 
 অনুমা থেকে ননুমা হয়ে গিয়েছিল ছোট বেলায়। তাঁর  কাছে মাতামার কথা কিছু কিছু শুনতাম। সেই গল্প মনে মনে জুড়তাম। আজও জুড়ছি। 
আর কেউ নাই এই তল্লাটে মাতামার কথা বলার। 
খুব ইচ্ছে, যদি পারি  তাঁদের জীবন কাহিনী কে অবলম্বন করে একটা বড় লেখা লিখতে। 
যদি পারি! 
এই ছবি তে মাতামার সাথে যারা বসে আছে তাদের কথা ও থাকবে বৈকি। আরও অনেকের কথা। কত মানুষ এলো, গেলো এই আখড়ায়।

Saturday, 30 August 2025

।।সন্ধ্যা মাসী : এক জীবনের অপচয়

।।সন্ধ্যা মাসী : এক  জীবনের অপচয়।। 
সন্ধ্যা মাসী তুমি এলে। আমাদের ঘরে বেড়াতে। 
 তখন সন্ধ্যা নামছে। বারান্দায় কফির চনমনে গন্ধ পেলে। বললে ‘’ কফি “! 
 আমি কফি খাচ্ছিলাম। তোমাকে শুধালাম, মাসী খাবে এক কাপ। তুমি না বললে। সেদিন যেমন আজও আমার মনে হয়, এক কাপ করে দিলে তুমি খেতে। আনন্দেই। কিন্তু তোমাকে সে কফি আমার আর খাওয়ানো হয়নি। হলনা।। 
তুমি আনমনা হয়ে গেলে। আমি কল্পনায় দেখতে পেলাম, তুমি চলে গেছো অনেক দূরে। 
সুলাইপাট মাইনস এর ম্যানেজার কোয়ার্টারে র বারান্দায়। মাইনসের ম্যানেজার পিসেমশাই , আর পিসিমা তাঁরা সন্ধ্যের সময় বারান্দায় বসতেন। 
কোয়ার্টার এর সামনে একদিকে একটা বিশাল কুসুম গাছ। আর একদিকে দুই শাল তরুবর। 
পাশে তিরতির করে বয়ে যাচ্ছে একটা পাহাড়ি ঝর্ণা। পিছনে ই পাহাড়ের সারি। লোহা পাথরে
ভর্তি। 
সাজানো বাগান। কুসুমের পাতা গুলো লাল হচ্ছে। 
তুমি কফিমগে করে দুজনের কফি এনে কফি টেবিলে সযত্নে নামাতে। নিজের জন্য এককাপ নিয়ে একটু দূরত্ব রেখে বসতে। 
কফি খেতে খেতে আমার চোখের সামনে এই দৃশ্য টা ভেসে উঠলো। ভুল হল। তোমাকে এক কাপ কফি খাওয়ানো আমাদের উচিৎ ছিল গো মাসী। 
তুমি মুখে না বললেও। 
সারা জীবন অবিবাহিত থেকে গেলে। পিসিমা কে কে দেখবে, এই ভাবনাতেই তাঁকে ছেড়ে আর যেতে পারলেনা অন্য ঘরে। সুন্দরী ছিলেনা। তবু - 
তোমার বিয়ের কোন চেষ্টা সম্ভবত তোমার পিসিমা
সেভাবে করেননি। তোমার প্রতি তাঁর ও একটা নির্ভরতা এসে গিয়েছিল। তাই স্বাভাবিক। মানুষ নিজের টা তো আগে ভাবে। 
পিসেমশাই এর অকাল মৃত্যুতে ফিরে আসতে হল 
বোলপুরে। বোলপুরে তোমার বা তোমাদের পিসিমার বাপের বাড়ি। বাপের বাড়ি তে না উঠে 
একটা পুরনো বাড়ি কিনে বসবাস শুরু হল। 
তোমার পিসিমার সাথে আমাদের গ্রামে আসছো 
অনেক দিন ধরেই। বছরে কমপক্ষে দুবার। 
তোমার পিসিমা হালদার বাড়ির বৌ। রজনীকান্ত হালদারের ছোট ছেলের বৌ। আলাদা মর্যাদা ছিল। নিজের চেহারাতেও ছিল আভিজাত্য। 
এখানে এলে কাঙাল ক্ষেপাচাঁদের বাগানবাড়ি নামে খ্যাত দালান কোঠার একটা ঘরে তোমরা অস্থায়ী বাসা বাঁধতে। 
আসা মূলত নিজের ভাগের জমির ধানের ভাগ নিতে। তোমরা এলেই অযোধ্যা গ্রাম থেকে সুলতা দিদি, এসে হাজির। আর গাঁয়ের হুবি বাউরী তো সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে যেত। গাঁয়ে বেড়াবার আর জায়গা কোথায়। আমাদের বাড়িতে আসতে। 
দাদুর সাথে নানা ধরনের গল্প হত। তখন মানুষ সামাজিক সম্পর্ক তৈরী করে নিত। তোমার পিসিমা, পিসেমশাই ছিলেন দাদুর একমাত্র ছেলের ভিক্ষামা - বাবা। আমার মামা। তাঁকে নিয়ে গিয়ে  টাটা কোম্পানির কাজে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। 
আচ্ছা, সন্ধ্যা মাসী কখনও কি তোমার নিজের জন্য কোন ভাবনা আসেনি। ঘুম না আসা রাতে। 
কখনও কি মনে হয়নি পিসিমার পরে তোমার কি হবে। তোমাকে কে দেখবে। তোমার আত্মীয় স্বজন যে কেউ নেই তা নয় তবে তাঁরা আন্তরিক ছিলেন কি! তুমি ভালো জানতে। 
একদিন পিসিমা মারা গেলেন। লোকজন ডাকাডাকি করে তাঁর দাহকার্য থেকে যা কিছু পারলৌকিক কর্ম, ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী করলে। 
পাড়ার ছেলেরা সহযোগিতা করেছিল। 
তারপর অনেক দিন কাটল তোমার নিঃসঙ্গ, এক দমবন্ধ একাকী জীবন। 
নিশ্চয়ই নির্ঘুম রাতে, নির্জন বিছানায় মাথায় রাজ্যের চিন্তা এসে চাপতে লাগলো। বার্ধক্যের রোগভোগ আছে। কে দেখবে আমাকে। কে এনে দেবে ওষুধপত্র। কে করবে সেবা যত্ন। কি হয় এখানে!  যা হয় হবে। না হয় কোনভাবে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হব। কখনও ভেবেছো কোন আশ্রমে চলে যাবে। মুলুকে প্রায়ই তো যেতে। 
কিন্তু কেউ কি দায় নেবে। এমনকি টাকার বিনিময়েও নেবে! 
যাক। তোমার মৃতদেহ, পাড়ার ছেলেরা দরজা ভেঙে বের করল। কখন যে তুমি চলে গেছো কেউ জানতে পারলনা। কেমন নিঃশব্দে চলে গেলে। 
সন্ধ্যা মাসী নিজেকে নিয়ে কখনো কি ভেবেছিলে! 
স্বামী, পুত্রকন্যা, সংসার! তোমার কি একবারও মনে হয়নি একটাই জীবন। একবার ই মেলে। 
নিজের জীবন টাকে নিজের কাছেই অপচয় বলে মনে কি হয়নি তোমার। এমনি এমনিই ফুরিয়ে গেল। 

------------ ------------ ------------ ------------ 

 #allfollowers

Wednesday, 26 March 2025

গা ছমছম

।। গা ছমছম।।

কি বলছেন!  গা ছমছম করবেনা।
বসে আছেন ঝাঁকড়া বটগাছ তলায়। তাঁতি পুকুরের পাড়ে।
হয়তো একা নয়। দুজন আছেন। তখন রাতের দিকে একবার পুকুর দিকে আসা অনেকের অভ্যেস ছিল।
ঝড় নাই জল নাই শোঁ শোঁ বাতাস নাই। হঠাৎ ই একটা বটডাল ভেঙে পড়ল আপনার পায়ের কাছে।
ঝুরঝুর করে বালি পড়তে লাগল।
আর থাকা যায়। ঝাঁকড়া তেঁতুল গাছ থেকে উড়ে গেল রাতের পাখি একটা পাখা ঝটপট করে।
আর এখানে থাকা যায়।
একবার  রাজমিস্ত্রী দের দল এখানে ডেরা বেঁধেছিল। থাকতে পারেনি।

# ওটা কি রে বাবা। বিড়াল টা যেন অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে।
রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। একবার রাস্তার ওধারে যাচ্ছে।
কেমন যেন চেহারা পালটে যাচ্ছে।
আঁকুড়ে দের ধর্ম রাজ থানের বটতলা র কাছে।
আর আপনি রাস্তা পার হতে পারেন!
গলা তো শুকিয়ে কাঠ। গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছেনা। উঁহু এরাস্তা য় পার হওয়া যাবেনা।
পাশেই গাঁয়ের বাইরে উত্তর দিকে পাশাপাশি দুই পুকুর।
মাঝখানে র জায়গা মুখগ্নির। তার ও নীচে গবাদি পশু মারা গেলে ফেলার জায়গা। মুচি রা চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
তাঁতি পুকুরের পাড়ের খুব লম্বা লম্বা তালগাছ থেকে নেমে আসে শকুনেরা। মরা পশুর মাংসে তাদের মহাভোজ।
এমন এক জায়গা!
এ জায়গা পার হওয়া।

সাতকাহনিয়া গ্রামের হালদার বাড়ির দালানে গানবাজনার আসর বসেছিল। অযোধ্যার  যাত্রা দলের পালার বাজনা,
মিউজিকের রিহার্সাল হচ্ছে।  বনকাটির নবকিশোর সূত্রধর বেহালা সঙ্গত করতে গিয়েছিল । মাষ্টার মশাই ননীবাবু হারমোনিয়াম ধরে। তিনিই মোশন মাষ্টার। প্রত্যেক দৃশ্যের সাথে উপযুক্ত বাজনা চাই। 
নদীর ওপারের উদয়পুরের রাধাশ্যাম দাসএসেছে। ভালো গায়। বিবেক এর গান। বাঁকুড়া থেকে তারিণী এসেছে। ফ্লুট আর সানাই দুই ই বাজায়। ভালো দম। তবে তার জন্য বোতল লাগে।
গলায় ঢকঢক করে ঢেলে, বাইরে থেকে এসে,  ধরে ফ্লুট।  বেশ কয়েকটা দৃশ্য হতে হতেই  রাত হয়ে গেল বেশ।
সূত্রধর মশাই  আর কি  রাস্তা পেরিয়ে যেতে পারা যায়!
বেরিয়েও   ফিরে গেল সাতকাহনিয়া।  সাথে লোক নিতে হল।  হাতে হ্যারিকেন। । সারা রাস্তাই নির্জন। আঁকুড়ে পাড়া, তেঁতুল তলার বাউরি পাড়া সব ঘুমিয়ে আছে। নিঝুম সেদিনের উঁচু নীচু হাটতলা।
হাটতলার পশ্চিমে বিরাট পাকুড় গাছ । কামার দের পাকুড়, বটতলা। তার দক্ষিণে এক ডোবা। সাদা শালুক ফুটে আছে।
আকাশে সামান্য জোৎস্নার আলো।
একটা কালো সদ্যোজাত বাছুর কেবলই রাস্তার এপাশ আর ওপাশ করছে। মাঝে মাঝে যেন তার রঙ বদলে যাচ্ছে।
  চুপ করে পাকুড় তলায় দাঁড়িয়ে থাকতে হল।
একসময় সে ছানা বাছুর ডোবার জলে ঝাঁপ দিল।
এ যে বাছুর নয় কোন, বুঝতে কি আর বাকি থাকে।
শেষ পথ টুকু রাম রাম জপতে জপতে জায়গা টা পার হল
নবকিশোর। এ অন্য আরেক দিনের কথা।

# সাতকাহনিয়া আর ডাঙ্গাল আদিবাসী পাড়ার মাঝখানে
ঘণ শাল জঙ্গল। জঙ্গলের ভিতরে গোরু গাড়ি চলার পথ।
আদিবাসী পাড়ার মুখটায় চৌমাথা।
এখানে প্রায়ই লালশালু, মাটির ভাঁড়, সিঁদুর লাগানো পাতা,
কাটা মুরগী র রক্ত,কাঠের  আঙার  প্রায়ই দেখা যায়। আদিবাসী মানুষ রা
এখানে ভূত ছাড়ায়।
অত সহজ এই রাস্তায় হাঁস বা মুরগী হাতে ঝুলিয়ে কেউ
যায়। বা মাংস নিয়ে।
একবার বনকাটির রামদাস মিস্ত্রী র ডাক পড়েছে ডাঙ্গাল গ্রামের ঘোষ বাবুদের ঘরে,  কিছু ভালো কাজ হয়তো হবে।
খাসি ছাগল কাটা হয়েছিল। ভোজ হবে। প্রায় ই হয়।  কিছুটা মাংস সে পেয়েছিল।
গামছায় বেঁধে, থলিতে ভরে ফিরছে। যাবে বনকাটি। জঙ্গলের মুখে
চৌমাথার মোড় থেকে তার মনে হচ্ছে কেউ পিছু পিছু আসছে।
  আরও জোরে । পা ফেলছে। হঠাৎ ই বনকাটির পচুই মদশাল থেকে ফিরছে ঠাকুর মাঝি। হাতে লম্বা লাঠি।
দেখে চিনতে পারল। বলল যা চলে যা। আমি এই এখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমাকে কেউ ছোঁবেনা। তবে তোকে ছুঁয়েছে।
যা। ঘরে গিয়ে বুঝতে পারবি।
যাক। ঘরে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
কি ওটা!
- না, কিছুটা মাংস আছে। ভালো করে রাঁধো দিকি।
তো। তেল মসলা নুন ঝাল যেমন দেবার দিয়ে যথাসাধ্য ভালো করে রান্না করল মিস্ত্রীর  স্ত্রী।
আহা!  মাংসের ঝোল দিয়ে ভাত। আর কি লাগে!
কিন্তু  এ মা। একি!
কি হল!
খেয়ে দ্যাখো। তাহলেই বুঝতে পারবে।
সত্যিই তো। স্বাদহীন ট্যালটেলে ঝোল। কোন স্বাদই নাই। আর মাংসের টুকরো গুলো যেন মাংস নয়। যেন চালকুমড়োর ঝোল। এ কি খাওয়া যায়!
হঠাৎ ই তার মনে পড়ল ঠাকুর মাঝি র কথা। তোকে একটু ছুঁয়েছে। যা ঘরে গেলে বুঝতে পারবি। তার গা শিউরে উঠল।
খাওয়া উঠল মাথায়। ভয়ে কাঁপুনি আর থামেনা যেন।
# অযোধ্যা গ্রামের উত্তরে বিশাল আমবাগান। মোটা মোটা মোটা গুঁড়ি। মাথায় মাথায় ঠিকে আছে। দিনের বেলাতে ও
ছায়া ছায়া অন্ধকার যেন। একটা ফলন্ত জামগাছ তলা দিয়ে গোরু গাড়ি চলার বালি মাটির পথ। রাস্তা কিছুদূর গিয়ে বাঁক নিয়েছে পশ্চিমে। ডানপাশে তালগাছ ঘেরা পুকুর।
বাঁশবাগান। আর আঁকড় গাছের ঝোপ। এই রাস্তায় সহজে কেউ সন্ধ্যে বেলায় পা বাড়ায়না। দু ঘর ডোম বাস করত।
পরে উঠে যায়। রাতের বেলায় বাঁশ ঝোপে কারা যেন খেলা করে। মাঝে মাঝে মনে হয় যেন বাঁশের বনে ঝড় লেগেছে।
এই রাস্তা তেই একটা কালো বিড়াল কে দেখা যায়। কালো বিড়াল না কি অন্য কিছু। কখনও মনে হয় বিড়াল আবার কখনো মনে হয় অন্য কোন জন্তু।
আর দেখা যায় সাদা শাড়ি পরে কেউ রাস্তার ধারে বসে কাঁদছে। সরু, খনা সুরে। যেন কাউকে ডাকছে। তার চারপাশে
সেই জন্তু টা গোল করে ঘুরছে।
হঠাৎ হঠাৎ মাছ লাফিয়ে ওঠে নাপিত পুকুরে। যেন মনে হবে জাল টেনে কেউ মাছ ধরছে। কিন্তু কেউ কোথাও নেই।
ঘরের এই উত্তর দিকে মুখ মানে দরজা রক্ষিত রা  সবাই বন্ধ করে দিয়েছে।
# আর পাষাণ চণ্ডী বাগান। আমগাছে ভর্তি। নীচে নানা ঝোপ।
পাশেই কাঁদর। কাঁদরের পাড়ে বিরাট বিরাট অর্জুন, চাকলতা গাছ। আরও কত রকমের গাছ। পাশেই শ্মশান।
কাঁদরের উপর বাঁশের সেতু। ওপারে পঞ্চানন বাবু এসে শর মানা পরিষ্কার করে চাষযোগ্য জমি তৈরি করেছেন। ফল বাগিচা তৈরি করছেন। ওপারে যাওয়া টাই একটা ব্যাপার।
বাঁশের সাঁকো তে উঠলে মচমচ করে। মনে হয় ভেঙে পড়ে যাবে।
তো। এপারের ডাঙ্গার পাশে  মুচি পাড়া। আর বাঁশবাগান।
বেশ কিছু বেল গাছ। কানাই মুচি র ঘর।। মুচি পাড়া থেকে রাত পাহারা দিতে পঞ্চানন বাবু র বাগানে যায় কেউ কেউ।
আর চলে যায় শেষ বিকেলে ই। কেননা ঐ শ্মশানের পাশে ঝাঁকড়া গাছটা। কি যে গাছ, কেউ নাম জানেনা। ঐ গাছে তো তাদের আস্তানা। লম্বা লম্বা পা ঝুলিয়ে বসে থাকে সব।
তবে সেদিন হল এক কান্ড। রামা আর বামা যাচ্ছে পঞ্চানন বাবু র মাঠে। সেদিন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। অন্ধকার রাত। পশ্চিম আকাশে একফালি চাঁদ।
বাঁশের সাঁকো তে উঠতে যাবে এমন সময় দেখল খালপাড় দিয়ে  সাতকাহনার হাঁড়ি পাড়ার  দিক থেকে কেউ বোধহয় আসছে। কে তা আঁধারে বোঝা যায়না। কিছুটা কাছে এলে
বোঝা গেল এক উলঙ্গিনী। মাথায় তার মাটির হোলায় আগুন জ্বলছে। ঝাঁকড়া গাছটায় শুরু হয়ে গেল যেন হুটোপুটি।
এই দৃশ্য দেখে আর সাঁকো পার হবে কি, উল্টো দিকে, নিজেদের পাড়ার দিকে দিল ছূট। বাবা গো মা গো।
তারপর এমন জ্বর এলো যে যে সে জ্বর ছাড়ল সাত দিন পর।
রায়দের কালীথানের ওষুধ খেয়ে আর ঝাড়ফুঁকে।

# ইনি না কি তিন  মাদনাবুড়ো  বা  মহাদানার ছোট ভাই। ঝাঁকড়া শ্যাওড়া গাছের তলায় তার আটন। নিমটিকুড়ি যাবার পথে
তিনি বিচরণ করেন। তাঁকে পার হয়ে যাওয়া সহজ নয়।
কখনও তিনি বাঘের পিঠে চেপে থাকেন। আবার কখনো সাদা
বিড়াল বা গোদানা। আবার কখনো বিরাট সাপ।  রাস্তা য় এপার ওপার করছে। কতজনা যে এখানে ভিমরি খেয়ে পড়েছে তার ঠিক নেই। জয় বাবা, জয় বাবা করে এখনও পার হয় কতজনা। এ জায়গা পার হবার সময় বুক ঢিপ ঢিপ করে।
এমন কত জায়গা যে ছিল  তখন, যেখান দিয়ে যেতে গেলেই  গা ছমছম। বুক ঢিপ ঢিপ। গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠা ।
  তেনারা সব গেলেন কোথা!  না কি রয়ে গেছেন এখনও।
কোথাও থাকুন আর না ই থাকুন অনেক মানুষের মনের আঁধারে  তাঁরা থেকে যাবেনই। ভূত, প্রেত, দৈত্য, দানা,
শাঁখচুন্নি, আরও কত ভূতিনী, প্রেতিনী চরে বেড়াচ্ছে
মনের কানাগলিতে।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------  সমাপ্ত

আগামী কাল বা পরশু দ্বিতীয় অংশ। তারপর ----

ক্ষুদ্রপুরের চক্রবর্তী মশাই

চক্কোতি মশাই পইপই করে বলে দিয়েছেন, রাতে খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে ঘরে ঢুকে খিল। সারারাতের মধ্যে দরজা কিছুতেই খুলবি না। 
তা হলে আমি আর সামলাতে পারবনা কিন্তু "
কাজ হয়েছে কিনা বুঝতে যখন চাইলি, সকালেই দেখবি। নিজে চোখে। আমি আর কিছু বলছিনা। 
যা এবার। "
নদীর ওপারে মানে অজয়ের ওপারে নদীর ধারেই 
ছোট্ট গ্রাম ক্ষুদ্রপুর। লোকমুখে ক্ষুদ্দুপুর। 
সদগোপ রা আছে। মেটেরা আছে। আর এই চক্রবর্তী পরিবার। চারপাশের গাঁয়ের লোকেদের কাছে এই পরিবারের খুব নাম ডাক। 
তন্ত্র, মন্ত্র, যাগ যজ্ঞে বংশানুক্রমিক ভাবে এই পরিবারের খ্যাতি। 
নানা লোকে নিজেদের নানা সমস্যা নিয়ে এঁদের কাছে যায়। প্রায় সারাদিন কালী মন্দিরের দাওয়ায় বসে লোককে নিদান দেন। কখনও তার বাড়িতে গিয়ে তান্ত্রিক অনুষ্ঠান করতে  হয়। 
কালী থানটি মেটেদের। মেটেরাই পুজোর রাতে নিজেদের উদ্যোগে তাদের নিজেদের পুরোহিত বনকাটির চক্রবর্তী দের দিয়ে পুজো করায়। 
আর পুজোর দিনে ক্ষুদ্রপুরের চক্রবর্তী মশাই দের বাড়িতে ব্যাপক মানুষের ভিড়। সে কোন দূর দূর এলাকা থেকে ফরেদি রা আসেন। যার সমস্যার সমাধান হয়েছে, এখন ভক্ত। কেউ মনস্কামনা পূরণের পর মানসিক শোধ করতে এসেছেন। আবার কেউ সমস্যা নিয়েও এসেছেন। 
তাঁদের সবার জন্য ই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। সবই করেন চক্রবর্তী মশাই রা। 
পুজোর পরদিন থেকেই আবার দায়িত্ব এঁদের। 
একটি ছোট্ট পাকা মন্দির গড়িয়ে দিয়েছেন। 
গ্রামের দক্ষিণে। একেবারে অজয়ের বানের জল আটকানোর জন্য মাটির বাঁধের ধারে। এখন সেই বাঁধের উপরেই পাকা রাস্তা। রাস্তা চলে গেছে পশ্চিমে জয়দেব কেন্দুলী পর্যন্ত। এখানে বসবাস মানে ভাবনা বারোমাস ই। পশ্চিমে কেমন বর্ষা হবে, অজয় কি রূপ নেবে তার ঠিক নেই। বর্ষাকালে সবাইকেই সতর্ক থাকতেই হয়। বলা তো যায়না। যদিও তেমন বর্ষা এখন আর হয়না। আর 
নদীর এপারে  যা শক্ত চরা পড়েছে তাতে অনেক টা নিশ্চিন্তি। গঙ্গাপুর, ভরতপুর,নারানপুর, উদয়পুর, নহনা মোড়,  ক্ষুদ্দুপুর, সন্তোষপুর হয়ে জয়দেব কেন্দুলী পর্যন্ত এখন বাঁধের উপরে পাকা রাস্তা। 
না হয় মাঝে মাঝে ভেঙেচূরে গেছে। স্বাভাবিক। 
সে যাই হোক। আমাদের গল্প এপার ওপার জুড়েই। এপারের অযোধ্যা গ্রামের একেবারে বাইরে উত্তরে আঁকুড়ে পাড়া। আঁকুড়ে রা আলাদা মেজাজের মানুষ। বলশালী। বেশ লম্বা চেহারা। 
নিজেরাও কালুবীর এর পুজো করে। আবার কালীপুজো য় করে।  একজোট হয়ে থাকে। 
সেই পরিবারে দীর্ঘ দিন থেকে নানা রকমের অশান্তি চলছে। নানা অঘটন ঘটছে। কোন কারণ নাই চালা ঘরে আগুন লেগে যাচ্ছে। গোরুর দুধ মরে যাচ্ছে। বাঁট দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। 
গাঁয়ের উত্তরে তাঁতিপুকুরের লম্বা লম্বা তালগাছগুলোর মাথায় শকুনেরা থাকে। পাশেই ভাগাড়। শকুনের ছানা গুলো এমন কাঁদে যেন মনে হয় মানুষের বাচ্চা কাঁদছে। মনে কু ডাকে। 
আবার ঝাকড়া তেঁতুল গাছ গুলো তে  বাদুড়ের
দল ঝাঁক বেঁধে থাকে। মাঝে মাঝে ক্যাওট রা জাল পাতে। বড়পাখি মানে বাদুড় জালে পড়ে। এরা তার মাংস খায়। এটা অবশ্য আঁকুড়ে পাড়ার 
বুড়ো দাদুর পছন্দ নয়। সে ক্যাওট দের বারণ করেছে। 
সেদিন তাঁতিদের ডোবার উত্তর দিকে গাব গাছের তলায় বসে দুই বুড়োর গল্প হচ্ছিল। কেউ একজন জাল গাবাচ্ছে। এই গাবের খুব কষ। জালের দড়িতে ভালো কষ লাগে। খয়েরী কালো রঙের হয়ে যায়। জলে সুতো টেঁকে অনেকদিন। 
কাছাকাছি দুই পাড়ার এই দুই বৃদ্ধের খুব ভাব ভালো বাসা। বিকেলে, সন্ধ্যের আগে দুজনের একসাথে বসা চাই ই। দুজনে দুটি রাণীগঞ্জের 
বেশ লম্বা সুলতানী বিড়ি ধরিয়ে বসে গল্প করে। 
এমন সময় আঁকুড়ে বাড়ির ভিতর থেকে খবর এলো ঘরের একটা বৌমানুষ খোলা চুলে রক্ষিত পুকুরে খাবার জল আনতে গিয়েছিল। সে যখন জল নিয়ে আসছে তার মনে হল কেউ যেন পিছু পিছু আসছে। ঘরের দুয়ারে এসে দেখে কেউ নাই। 
তারপর সে অজ্ঞান হয়ে গেছে। চোখে মুখে জল দেবার পর কিছুটা ধাতস্থ হল বটে কিন্তু সে মুখে আর ' রা' কাড়েনা। কেমন চুপচাপ হয়ে গেল।  
ক্যাওট বুড়ো গম্ভীর মুখে আঁকূড়ে দাদুকে বলল 
" ভাই সুবিধে ঠেকছেনা "। একে তোমার সংসারে নানা অঘটন ঘটছে, তার উপরে আবার এই।"
দেরি কোরোনা। কালই, কি বার যেন,! শণিবার। 
ভালোই হল। ছোট ছেলেটাকে পাঠিয়ে দাও ক্ষুদ্দুপুর। চক্কোতি মশাই এর ওখানে। এই কদিন আগেই গো আমাদের গাঁয়ে এসেছিল। 
ছোট ছেলে গেল ক্ষুদ্দুপুর। নদী পারাপারে অসুবিধা নাই। ওপারে সামান্যই জল। যদিও উদয়পুরে হদের ( হ্রদ)  ঘাটে ছোট নৌকো চলে। 
সকালে আর বিকালে। যারা এপারে আসে তাদের ফেরার সময় দুপুরে।  আবার ওবেলায়। অনেকেই আসে। 
নেশার খোঁজে আসে। এখানেই আছে মদের দোকান। 
চক্কোতি মশাই মন্দিরের দাওয়া তে ই বসেছিলেন। 
আঁকুড়ে ছোকরা কে দেখেই বললেন, তোর সঙ্গে 
সাহা বাড়ির লোকেদের দেখা হয়নি পথে!  
হ্যাঁ। হল যে। 
ও, ওদের বাড়ির ছোট ছেলে টার অসহ্য পেট বেদনা রে। অনেক ওষুধ পত্র তে কিছু হয়নি। 
আমার কাছে এসেছিল। ও, এতক্ষণে কমে গেছে। 
গিয়ে খবর নিস তো। আমাকে জানাতে বলিস। 
তো বল!  তোর বৌ টা কেমন আছে। কথা বলবে কি, কেমন হকচকিয়ে গেল ছেলেটা। ও বলবে কি, চক্রবর্তী মশাই নিজেই বলে চললেন। যা যা বলবার জন্য ওনার কাছে গেছে। 
তারপর অনেক ক্ষণ চোখ বন্ধ করে চুপ করে থাকলেন। তারপর মন্দিরে গিয়ে ঢুকলেন। 
বেরিয়ে এসে বললেন " যা তোর কাজ হয়ে গেছে"
" কি করে জানব ঠাকুর মশাই " 
" ও, জানতে হবে? 
শোন রাতে একেবারে ঘর বন্ধ। কেউ বেরুবিনা। 
তা না হলে - ভয়ানক বিপদ। সামলাতে পারবনা। 
ঘরের উঠোনে কি কি গাছ আছে জেনে নিলেন। 
চারপাশের  গাছপালার খবর নিলেন। 
বললেন " যা, যা ইচ্ছে হবে পরে এসে মায়ের নামে পুজো দিয়ে যাবি "। 
ঘরে ফিরে এল। কোন রকমে দিনটা পার হল। 
কখন সন্ধ্যে হয়! সন্ধ্যে একটু গাঢ় হতেই খাওয়া শেষ করে সবাই ঘরে ঢুকল। ভাল করে খিল এঁটে দিল। দেয়ালের দুই পাশে গর্তের মধ্যে মোটা বাঁশের লাঠি ঢুকিয়ে দিল। 
ঘুম কি আর আসে। বৌ টা ঘরের এক কোনে চুপ করে বসে আছে। 
হঠাৎ মাঝরাতে, হ্যাঁ মাঝরাতই হবে। অনুমানে। আন্দাজে বুঝল। মনে হল বাইরে যেন শোঁ শোঁ আওয়াজ। ঝড় এলো নাকি! 
বৌটা কেমন যেন করছে। ঘাড় নাড়াচ্ছে দুদিকে। 
সামনে পিছনে। খোলা চুল। যেন ভর নেমেছে। 
একেবারে ভোরের দিকে মনে হল যেন উঠোনের 
সজনে গাছ টা মাটি থেকে শিকড় সমেত কেউ তুলে উপড়ে দিল। 
বৌ টা শান্ত, নিস্তেজ হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ল। 
সকাল হল। 
সবাই দেখল। হ্যাঁ সত্যিই তাই। কোন ঝড় ঝাপটা কিছুই রাতে হয়নি। ওদের উঠোনের সজনে গাছ টা উপড়ে পড়ে আছে। যেন কেউ তছনছ করেছে। 
সবাই মিলে দু'হাত তুলে প্রণাম করল। 
মঙ্গলবারে চক্রবর্তী মশাই এর কাছে যেতে হবে। 
 কালীথানে মানত করে এসেছে। শোধ করতে হবে। 
------------ ------------ ------------ ------------ 

** পাঠক, আমি গল্প বলিয়ে। গল্প বলছি মাত্র। 
এলাকার ইতিহাস মিশে আছে এর সাথে।