Thursday, 2 January 2025

চলুন ঘুরি চারপাশ। মেলা দেখা তার সাথে একটা হেরিটেজ ট্যুর

।। মজাটা কি জানেন।। 
 মজাটা এখানেই যে যতই শপিং মলে যাই,মেলার এক আলাদা আকর্ষণ আছে। মেলা মেলাই। মেলার বিকল্প মেলা। মানুষে মানুষে মেলা। মেলার মাল বলে  কেনাকাটা হয়তো তেমন করিনা।  আবার দেখুন শান্তি নিকেতনে এলে সোনাঝুরি র হাটে যাওয়া, কেনাকাটা করায় বেশ মজা। 
 আমাদের আনন্দ কিন্তু হাটে, মেলায়, ফুটপাতের কেনা কাটায়। গড়িয়াহাটের ফুটে কি না পাওয়া যায়। যে ক্যানভাসের থলি টা পঞ্চাশ টাকায় কিনতে পাওয়া যায় 
সেই ধরনের , পাতলা মার্কিন কাপড়ের থলে, । এই ধরুন ছোট খোকা বলে অ, আ। হামাগুড়ি দিচ্ছে বাচ্চাটা। নন্দলালের বিখ্যাত আঁকা। তার প্রিন্ট
আছে ব্যাগের উপরে। নন্দন মেলায় তার দাম  দেড়শ দুশো টাকা। বলে দিলেই হচ্ছে। নন্দন মেলা বলে কথা। এসেছেন না কি নন্দন মেলায়। হয় ডিসেম্বরের ১ এবং ২ তারিখে। 
 এখানে দামটা বড় নয়। মেলার স্মারক। কিন্তু আমরা অনেকে কিনতে পারিনা। ক্যালেন্ডার, কিছুই নাই, একটা আঁকাও  পছন্দ না হলেও তার দাম দুশো, আড়াইশো। কি করে কিনব। ইচ্ছে থাকলেও পারিনা। শান্তিনিকেতনের মেলায় জিনিসের বড়ো দাম। অনেকে বলেন। আমিও বলি। মেলা দেখা নিশ্চয়ই হয়ে গেছে। তবে চলুন। 
আর কেন এসব নিয়ে কচকচ করা - 

 যাক এসব কথা বাদ দিন। আসি অন্য কথায়। 
শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা দেখতে এসে চারপাশে একটা হেরিটেজ ট্যুর সেরে অনেকে ফেলেন। নিজেদের গাড়ি থাকলে কথাই নেই। তা না হলে অটো, টোটো, ভাড়া গাড়ি। যে যেমন পারে টাকা নিয়ে নেয়। 
 একটা রেট থাকা দরকার। আমাদের সকলেরই মনোভাব, আরে বাবা , ঠিক আছে, বছরের এই সময়টা তো মাত্র। দু পয়সা বাড়তি রোজগার করুক 
 সুরুল সরকার জমিদার বাড়ি,রাইপুর সিংহ বাবুদের ভগ্ন প্রাসাদ, সুরথেশ্বর শিব তলা হয়ে, বিশ্ববাংলা কে পাশে রেখে সুপুরের টেরাকোটা অলংকরণ যুক্ত মন্দির, করে ইটাণ্ডা পর্যন্ত অনেকে সেরে ফেলেন। এই সব স্থানের তো অনেক গল্প কথা আছে। আছে ইতিহাস। ইতিহাস টা জানা থাকলে 
বেড়ানো  আনন্দ টা  বেড়ে যায়। আর আমি বা আমাদের মতো আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী রা চাই 
আপনারা ইতিহাস টা জানুন। সব মাটির নিজস্ব ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাস উপেক্ষার নয়। 
মাটিকে না জানলে মানুষ কে চেনা যাবেনা। 
যাক। এই হল আমার শুরুর কথা। সারা জীবন এই কাজ করে গেলাম। কোন প্রাপ্তির আশা ছাড়া। 
যদি এই সব স্থানের কথা কাহিনী শুনতে চান তবে আমাকে ফলো করবেন। 
আজ তবে ইটাণ্ডার কথা বলি। শুদ্ধসত্ত্ব বাবু বলেছেন। 
 তাঁকে ধন্যবাদ। আমার সাথে এগারো মাইল থেকে 
মেলা পর্যন্ত এসেছেন। চলুন যাওয়া যাক ইটাণ্ডা। 
 
 ।।  ইটাণ্ডা র কথা ও কাহিনী।। 
 নদী সরে গেছে অনেক দক্ষিণে। নদীপাড়ে অঢেল সব্জি। 
 উর্বর পলি মাটি। একদা এই নদী বইত উত্তরে বাজারের গা ঘেষে। কত মালের ওঠানামা। নীল, গালা,  সুতী বস্ত্র ( গড়া কাপড়)  হাড়ের চিরুনি, মশলাপাতি, পিতল কাঁসার তৈজস পত্র প্রভৃতি দ্রব্যাদি সওদাগরি নৌকায় চেপে চালান যেত নানা জায়গায়। ইটাণ্ডা ছিল এক নদী তীর বর্তী জমাট বাণিজ্য কেন্দ্র। বলছি নদী কিন্তু নদ। অজয়। 
 তখন কোথায় বোলপুর! 
 অনেকে বলেন  ইষ্ট ইণ্ডিয়া র অপভ্রংশ ইটাণ্ডা। 
 তাহলে কি তার আগে ইটাণ্ডা ছিলনা। বা কি ছিল তার নাম! প্রশ্ন জাগে। 
 তখনকার বিখ্যাত  জায়গা সুপুর,  সুরুল, ইটাণ্ডা। 
 ইটাণ্ডা ছিল অজয়ের দক্ষিণে। বর্ধমানের দিকে। এখন সেই মজা নদীখাত এক নোংরা খাল মাত্র। 
 আজ আর সেই ইটাণ্ডা নাই। ইটাণ্ডার কথা বলার মতো বয়স্ক মানুষ ও হয়তো নাই। 
 একদিনের বনেদী ব্যবসায়ী পরিবারের কর্তা পীযুষ কান্তি  সাধু র সাথে কথা বলছিলাম। এঁরা তো ছিলেন সাধু খাঁ। খাঁ টাকে কখন যে ত্যাগ করলেন। বেণে পরিবার। যথেষ্ট সম্পন্ন, এবং প্রভাবশালী পরিবার ছিলেন নিশ্চিত ভাবেই। খাঁ  উপাধি পেয়েছিলেন। 
 ইটাণ্ডা মন্দির টেরাকোটা প্রেমী দের কাছে খুবই জনপ্রিয়। 
 এখানকার  জোড়বাংলা রীতি র কালীমন্দির এর টেরাকোটা অলংকরণ 
 অনবদ্য। জোড়বাংলা রীতি র এমন মন্দির কমই দেখা যায়। 
 দ্বিতল বিষ্ণু দালান। তার স্তম্ভে খিলানে ঐশ্বর্য। আর অতি চমৎকার  কলমকারি র ( স্টাকো) কাজ তার দেওয়ালে। 
 উপরের ছাদ ভেঙে পড়ছে। সংস্কার করার ক্ষমতা বা ইচ্ছা কোনটাই সাধু পরিবারের নাই। নানা শরিকের নানা মত। 
 ১২২২ এবং ১২৩৫ সালে নির্মিত শিবমন্দির দুটি। কালীমন্দির 
 নির্মান ও সমসাময়িক। বিশাল অশ্বত্থ তলে সম্ভবত প্রাচীন কোন নির্মানের উপরে নির্মিত হয়েছিল প্রাচীণ এক মন্দির। 
 অশ্বত্থের মায়া বাঁধনে বাঁধা। বাউরি পাড়ায় একটি ছোট চালা রীতি র শিবমন্দির। একেবারে ই ভেঙে পড়ার অবস্থা। 
  বীরভূমে বর্গীর আক্রমণ এবং অত্যাচার ছিল প্রবল। 
 সিউড়ি র কাছে কেন্দুয়াডাঙ্গায় ছিল তাদের প্রধান ঘাঁটি। 
বারবার তারা ইটাণ্ডা কে লুঠ করেছে। 
 এক জোড়াল খাঁ হিন্দু মুসলমান সকলকে একত্রিত করে 
মাটির গড় বানিয়ে, সৈন্য দল তৈরি করে বর্গী আক্রমণ প্রতিরোধ করেছিলেন। কিন্তু তিন বারের লুঠে ইটাণ্ডা তার হৃতগৌরব আর ফিরে পায়নি। অনেক ব্যবসায়ী এখান ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। 
 সুপুরে ও আনন্দ চন্দ্র গোস্বামীও বর্গী দের রুখে দিয়েছিলেন। 
  ১২০০ বঙ্গব্দের আশেপাশে র সময় কাল দুর্যোগের ঘনঘটায় 
 আচ্ছন্ন।। সেই সময়কাল। ছিয়াত্তর এর মন্বন্তর, মন্বন্তর পরবর্তী  পরিস্থিতি। ডাকাত দলের অবাধ ডাকাতি। বর্গী আক্রমণ , ইউরোপীয় বণিকগন। খুব সং ক্ষেপে তাকে একটা প্রবন্ধে ধরা কঠিন ই কাজ। তবু লিখেছি ছোট কাগজে।   সেই সময়কাল নিয়ে অনেক গুণী মানুষ কাজ করেছেন। তাঁদের সাহায্য ছাড়া কাজ করা যায়না। 
 অজয়ের এপার ওপার  আমার কাজের ক্ষেত্র। আপনারা জানেন। এপারে দক্ষিণে সেনপাহাড়ী আর ওপারে উত্তরে সেনভূম। মাঝে বয়ে চলে অজয়। প্রাচীনা অজাবতী। 
 ------------ ------------- ------------ ------------ ------------ ------------ 
 বোলপুর থেকে সহজেই যাওয়া যায়। বোলপুর পালিতপুর রাস্তার নিমতলা মোড় থেকে দক্ষিণে কয়েক কিমি।
সাথে ছিল - অঙ্কুশ দাস। গবেষক। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments:

Post a Comment