।। কথা - সাতকাহন।।
বুঝলি মহাদেব ; আজ আর কারও সে সব কথা মনে নেই।
বা সে সব কথা কেউ মনে ও আনবে না। আনবে ই বা কেন।
যে দিন গেছে সে দিন গেছে ই। মনে রেখে লাভ কি বল।
তোকে উদ্দেশ্য করে বলছি এই জন্যে যে তোর মনে আছে
সব। বরং আমার ভুল হতে পারে।
তুই আর আমি। ব্যস। আর কারও দেখা নাই। ' ও ওরা দুজনেই যথেষ্ট '।
চার পাঁচ টা রঙের কৌটো। আর একটা য় অনেক টা পাতলা
সাবু র আঁঠা। তাতে রঙ গোলা হয়। এ কাজটাও শিখতে হয়।
তুই শিখে নিয়েছিলি। গাঢ় গিরি রঙের এলামাটি ; মেটে হলুদ
পিউড়ি হলুদ ; নীল বা ব্লু আল্ট্রামেরিন ; আর কাগজের প্যাকেটে ভুসো কালি ; সামান্য একটু মিনে লাল।
এই সামান্য উপাদানেই ঝকঝক করত দেয়াল গুলো।
লেখায় ; ছবিতে। কার্টুনে। রঙে ভেজানো সুতলি ধরে লাইন সোজা করে নেওয়া হত। ভালো হত আর একজন থাকলে।
তো সে আর কাকে মিলবে বল।
যাইহোক সেবারের কৃষক সভার সম্মেলন উপলক্ষে অযোধ্যা হাই স্কুলের বাইরের পাঁচিলের নীচু দেয়াল ভরিয়ে দেওয়া হল
মনীষী দের ছবিতে। একেবারে পোর্টেট।
মার্কস ; এঙ্গেলস ; লেনিন ; স্ট্যালিন তো আছেনই। আরও আছেন বিদ্যাসাগর ; রবীন্দ্রনাথ ; রাহুল সাংকৃত্যায়ন।
পেশাদার হাতের আঁকা লেখা যেমন হয় আর কি।
স্কুলের ভিতরে প্যাণ্ডেল করে প্রতিনিধি সম্মেলন।
প্রতিনিধি রা তো এই রকমের সজ্জা ; আঁকা লেখা দেখে
একেবারে হাঁ। আগে কখনো এমন দেখেই নি প্রায়।
আর নেতারা দেখছেন কিন্তু তাঁদের তো আর ভালো লাগা বা মন্দ লাগা মুখ ফুটে প্রকাশ করতে নেই।
সাধারণ প্রতিনিধি রা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।
কাঁকসা থানা কৃষক সভার প্রথম জমাট করে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সবদিক থেকে জমাট সম্মেলন মানে নেতাদের
পদোন্নতি।
কো - অপারেটিভ চত্বরে রান্না বান্নার বিরাট আয়োজন।
ভাণ্ডারী ; রান্নার লোক ; পুরুষ ;মহিলা সহকারী সব মিলিয়ে
হৈ হৈ ব্যপার।
অবশ্য তার আগেই আমাদের কাজ শেষ হয়ে গেছে।
নেতারা সবাই এসেছেন। সেই সম্মেলনে প্রথম দেখেছিলাম
কমরেড রবীন সেন কে। রাশভারি মানুষ। সুগারের রুগী।
তিনি প্রতিদিন করলা পাতার রস খান। তার ও ব্যবস্থা হয়।
এই রান্না শালার সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব কমরেড মোহন চ্যাটার্জি র।
আর রান্না শালায় তিনি জুটিয়েছেন এমন সব মানুষ কে - সে এক বিচিত্র সমাহার। যার দখলে রয়েছে অন্যের খাস জমি
তিনিও দেখি খুন্তি ধরেছেন। সাবাস।
যার ভালো কিন্তু গোপনে সুদের কারবার সে ও জুটে গেছে।
না জুটে গেছে নয়। তাকে ভাণ্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সে মানুষ মোটেও খারাপ নয়।
আরও কত মানুষ কে জোটানো হয়েছে। সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
এত বড় একটা ব্যাপার।
কাজ সুসম্পন্ন করতে হলে অনেক কে চাই। আর অনেক কে
জোটানো টা ও একটা গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক কাজ।
মানুষ কে তো চাই।
বেশ কিছু মহিলা। তাদের তো চাই ই চাই। অযোধ্যা বনকাটি
সাতকাহনিয়া গ্রামের গরীব মানুষের ঘরের মহিলারা।
রান্না শালায় তাঁরা অনেক কাজ করেন। তাঁদের বাদ দিয়ে
হয়না। আর নানা রকমের গল্পে মাতিয়ে রাখার মতো মানুষ
কিছু লাগেই। পরিশ্রম অনেক হাল্কা হয়ে যায়।
তেমন কিছু মানুষ জুটেছেন। মেয়েদের নিয়ে চমৎকার গল্প জুড়েছেন। আগামী তে এলাকার মহিলা সমিতি র নেত্রী হবেন
তিনি খুব ব্যস্ত। তাঁর দলের মেয়েরা চা জল পরিবেশন করছেন সম্মেলন কক্ষে। খবর নিচ্ছেন ঘন ঘন। খাবার বিরতি
কখন ইত্যাদি।
বেশ একটা জমজমাট পরিবেশ।
মাঝে মাঝে নেতারা এসে দেখে যাচ্ছেন। আগামীর নেতাদের
উৎসাহ বেশী। " কি দাদা কতদূর " - । আরে বাব্বা এত্তো আয়োজন " ইত্যাদি বাক্যালাপ ।
এসব বলার জন্যেই বলা। যে বলছে আর যারা শুনছে সবাই
বোঝে -
ঐ কিছু বলা। এর ভিতরে ই লুকিয়ে থাকে প্রশংসা।
আয়োজক দের কর্তার বুক ফুলে ওঠে।
সম্মেলন শেষ হল যথা নিয়মেই। বিধি সম্মত ভাবেই।
এই সম্মেলন থেকে একাকার দুজন নেতা উঠে এলেন থানা কমিটি তে।
আগামী দিনের এখানকার রাজনীতি কোন দিকে গড়াবে তাও
স্থির হয়ে গেল এই সম্মেলন থেকে ই।
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ------------
চিত্র ঋন। ওয়াসেফ জামান
No comments:
Post a Comment