Saturday, 28 May 2022

গণপুর । এখানের মন্দিরের ফুলপাথরের কাজ

কি অসামান্য এখানকার ফুলপাথরের কাজ। 
 কি অপুর্ব সেই সব শিল্পী দের দক্ষতা। 
 শিল্পের প্রসাদগুণ তো উপলব্ধি র। 
 সেই আনন্দ তো ভিতরের। তাকে কি  শব্দে প্রকাশ করা যায় 
এটি গণপুরের দোল মঞ্চ 
কি মনোরম এর অলংকরণ 
  

বনকাটি র পিতলের রথ। পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকা

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মুখপত্র 
'পশ্চিমবঙ্গ '
অনেক ধন্যবাদ সম্পাদক সুপ্রিয়া রায় এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে।
 মার্চ - অক্টোবর ২০২১ সংখ্যায় ছাপা হয়েছে 
 আমার লেখা ' বনকাটির পিতলের রথ '। 
 আপনারা জানেন  যেখানে সুযোগ পাই 
 যে বা যাঁরা ই আমন্ত্রণ জানান আমি আমার এলাকার মানে প্রাচীন গোপভূম ; সেনপাহাড়ী পরগনা ; ইছাইঘোষ এবং তাঁর দেউল   ; কাঁকসা এবং আউসগ্রাম এর জঙ্গল 
মহলের মাটি মানুষের কথা এবং অজয়ের ওপারে ইলামবাজার 
 জয়দেব কেন্দুলী এবং সংলগ্ন এলাকার ইতিহাস 
 ঐতিহ্য কে তুলে ধরার চেষ্টা করি। লেখা য় বা বলায়। অনেকে আঞ্চলিক ইতিহাস এর গল্প শুনতে 
 ডাকেনও তো। 
 ধন্যবাদ সোমা ভট্টাচার্য কে। উনিই কলকাতা থেকে  পত্রিকা টি এনে দিয়েছেন আমার হাতে। 
 কি সুন্দর ছাপা। এবং ছবি গুলিও ছাপা হয়েছে 
 চমৎকার। 
 আপনারা যাঁরা এখানে এই সমাজ মাধ্যমে আমাকে নিয়মিত দেখেন ; আমার লেখা পড়েন 
 তাঁরা জানেন ছবি আমার লেখার প্রাণ। 
গ্রামের শোভা ; প্রাচীণ মন্দির ;  মন্দির টেরাকোটা আমার অন্যতম প্রিয় বিষয়। 
 অখ্যাত অবজ্ঞাত কত গ্রামের কথা আপনাদের শুনিয়েছি। সেই গ্রামের প্রাচীণ বা হয়তো প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া  তেমন মন্দিরের কত ছবি আপনারা দেখেছেন। 
 যেমন সাথে আছেন ; থাকবেন। 
 সম্ভব হলে পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকার এই সংখ্যাটি তে 
বনকাটির বিখ্যাত পিতলের রথ  প্রবন্ধ টি পড়ে 
 দেখবেন - এই অনুরোধ। 
 আবারও ধন্যবাদ পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকার সাথে যুক্ত 
 সকলকে।
 পুনঃ।  আমারই ভুল। এই লেখায় - কি করে যে হল   
 বনকাটি  জে এল নং হবে ৩৩। ভুল করে ৩২ হয়ে গেছে।
 যদি কারও ভালো লাগে গোটা পোষ্ট টা ই শেয়ার করতে পারেন। আলাদা করে এক একটা পাতা বা ছবি না করে। এতে হয় কি সামগ্রিকতা টা নষ্ট হয়ে যায়। ভেঙে যায়।

Friday, 27 May 2022

ঘুড়িষা এবং মাসড়া

ঘুড়িষা রঘুনাথ জী র মন্দির। জেলার প্রাচীণতম মন্দির বলে কথিত। এটির স্থাপনাকাল ১৫৫৫ শকাব্দ। ১৬৩৩ খ্রীস্টাব্দে। অসামান্য এর টেরাকোটা অলংকরণ। এরও ক্ষয় হচ্ছে। কালের নিয়মে। আগে একবার সংস্কার হয়েছে। তবে আনন্দের বিষয় যে সিন্থেটিক রঙের প্রলেপ পড়েনি। 

কিন্তু রামপুরহাট থানা অন্তর্গত  মাসড়া গ্রামের শিবমন্দির টি ১৫৩৩ শকাব্দে অর্থাৎ ১৬৩১ খ্রীস্টাব্দে নির্মিত। 
মাসড়া তখন মুলুটির রাজাদের অধীনস্থ। 
মন্দির টি ' রাজলোহাপাল ' সিতবদাস তাঁর মা সিদ্ধেশ্বরী র নামে প্রতিষ্ঠা করেন। 
 এই মন্দিরের অলংকরণ ছিল ফুলপাথরের। 
 ফুলপাথর স্থানীয় ভাবে প্রাপ্ত নরম লাল পাথর। জলে ভিজিয়ে রেখে এতে ভালো খোদাই এর কাজ করা যায়। এই এলাকার প্রায় সব মন্দিরে ই ফুল পাথরের কাজ। 
 সংস্কারের নামে সিন্থেটিক রঙের প্রলেপে ঢেকে গেছে প্রাচীণ কারুকার্যের সৌন্দর্য। 
 এই মন্দিরের প্রাচীণ প্রতিষ্ঠা লিপি টি এইরূপ - 
 শ্রী শ্রী রামাই ১৫৫৩ সেবক রাজলোহাপাল। ৪২৩ ××× সিতবদাস কর্মকারের মাতা শ্রী মতী সিদ্ধর শ্রী ঈশ্বর শিব স্থাপনাকারি ×××   ×××  
 মুলুটি নিকট বর্তী এই মাসড়া গ্রাম ছিল লোহা কেনাবেচা র এক কেন্দ্র। প্রাচীণ পদ্ধতিতে লোহা গলানো হত। কর্মকার রা প্রভূত ধনী হয়ে উঠেছিলেন। 
 পরবর্তী তে এই সকল এলাকা ' লোহামহল ' নামে  ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর ইজারার মধ্যে আসে। 
 গ্রামে ঝামার স্তুপে এখনও অনেক লোহামল বা slag পাওয়া যায়। 
 মাসড়া গ্রামের এই ছোট্ট শিবমন্দির টি প্রতিষ্ঠাকালীন হিসাব অনুযায়ী বীরভূম জেলার প্রাচীণতম মন্দির।

তথ্য সহায়তা। প্র‍্য়াত গোপালদাস মুখোপাধ্যায় এর বই। ' নানকার মলুটী '।
প্রথম ছবি। ঘুড়িষা রঘুনাথ জী র মন্দির। এবং শেষ ছবি ও তাই। 
পাশে দ্বিতীয় ; তৃতীয় ; চতুর্থ  মাসড়ার।

মলুটি নিয়ে দু চার কথা

মলুটি নিয়ে কিছু কথা লিখতে হবে। বন্ধুরা বলছেন। নূতন কথা তো কিছু বলার নেই। 
অনেক বিদগ্ধ মানুষ লিখেছেন। যাই হোক ; তবু -। 
বীরভূমের এই সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে আমার খুবই আগ্রহ। ঐতিহাসিক ভাবেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। 
চেষ্টা করছি। সে টা বড় লেখা হবে। মুদ্রন মাধ্যমে 
 দিলেও  এখানে তার সংক্ষিপ্ত একটা রূপ আপনারা পাবেন। বন্ধুরা একটু অপেক্ষা করবেন। 
 নিজেকে নিয়েই মজা লাগে। বীরভূম দেশ টাকে আমি ভালোবাসি। বীরভূম নিয়েই আমার কত লেখালেখি।  কিন্তু কাগজে কলমে আমি 
পশ্চিম বর্দ্ধমান এর লোক। সীমান্ত এলাকা। 
 আমি প্রায় ই কথাটা  বলি। এই আমাদের  এক পা অজয়ের উত্তরে  বীরভূমে  ইলামবাজারে 
আর এক পা দক্ষিণে পশ্চিম বর্দ্ধমানে গড় জঙ্গল এর দেশে। সেনপাহাড়ী পরগনায়। এখনকার কাঁকসা থানা এলাকা। অযোধ্যা - বনকাটি এলাকা। সাতকাহনিয়া গ্রাম। " বাড়ি আমার ভাঙন 
ধরা অজয় নদের বাঁকে " ই। 
 সদর সিউড়ি বা রামপুরহাট অনেক দূর। আমাকে তেমন  কেউ চেনেননা। আবার এদিকে বর্ধমান ; আসানসোল বহু দূর। কাছের দুর্গাপুর সে ও যেন দূর। 
 ওপারে জয়দেব কেন্দুলী র বন্ধুরা জানেন চেনেন 
ভালোবাসেন। আর ও অনেকে আছেন। আন্তরিক। 
তা ছাড়াও অনেক ভালো বন্ধু ছড়িয়ে আছেন। এদিকে ওদিকে। অনেক বন্ধু -। আর আজ এই জায়গা টা ও কেমন ঘোলা হয়ে গেছে। এই সোস্যাল মিডিয়া আর কি! 
আর এই সাংস্কৃতিক জগৎ! 
' কে যে কবে বন্ধু আর ------------।  যাক। বাদ দিন। 
এই অজয়ের উভয় পার নিয়েই অনেক কথা। 
 আর বীরভূমের পশ্চিম সীমান্ত নিয়ে আমার আগ্রহের কথা আপনাদের বললাম। দেখি বন্ধুদের সাহায্য নিতে হবে। 
 মাসড়া ; মলুটি ; গণপুর ; মল্লারপুর ;  ডামরা ; দেউচা ; বালিয়া নারায়ণ পুর এইএলাকা সেই সময়ের " লোহামহল " নিয়ে একটা পোষ্টে কিছু বলেছি। 
 মলুটি। মন্দির ময় মলুটি। মহুলটি। গুপ্তকাশী
মলুটি। একদা ১০৮ শিবমন্দির ছিল এখানে। 
 এখন প্রায় ৭২ টি আছে। তার মধ্যে অলংকৃত 
মোটামুটি ৩০ টির মতো। এখনও যা আছে সে যে রত্ন ভাণ্ডার। রত্নহারবিভূষিতা মলুটি।
এখন ঝাড়খণ্ডে।
এই বীরভূম 
এই ঝাড়খণ্ড 
 বীরভূমের পশ্চিম সীমান্ত এলাকা
 একবার ম্যাপ টা দেখুন

Wednesday, 18 May 2022

গণপুর।। ফুল পাথরের মহাকাব্য

।। গণপুরের  মন্দির।। বীরভূম।।
কি বিশাল মন্দির ই না ছিল এই মন্দির টি।
রাস্তা থেকে তার পিছন দিকটি দেখা যায়।
দেখা যায় সেই ধ্বংস স্তুপকে।
আর সামনের দিক দেখতে হলে আপনাকে অন্যের
বাসগৃহের মধ্যে যেতে হবে। দরজা খুলে।
অন্যের বাড়িতে ঢোকার জন্য ডাকাডাকি করতে
কেমন লাগে। যদি না পরিচিত কেউ সাথে থাকেন।
যাক। ভাগ্যিস এক ভদ্রমহিলা সাহায্য করলেন।
দরজা খুলে ঢুকতে তিনিই অনুমতি দিলেন।
ঢুকলাম।
মন্দিরের সামনের দিক আর নূতন ওঠা দালানের মধ্যে
দু তিন ফুটের একটা প্যাসেজ।
মন্দিরের সামনের দিকের অলংকরণ দেখে তো
অবাক হবার ই পালা। অপূর্ব সব কারুকার্য।
সবই ফুলপাথরের কাজ।
কালো ধোঁয়া র কালিতে সব মাখামাখি।
কেন?  না  এখানে ধান সেদ্ধ করা হয়েছে। উনুন।
লোহার কড়াই অর্থাৎ বড় পাত্র। 
খড়ে ভর্তি মন্দিরের গর্ভগৃহ।
ভিতরে ঢোকার কোন উপায় নেই। সাহস ও নেই। 
আলো নেমে এসেছে। আলোর বিপরীতে সম্মুখ ভাগ।
সামান্য প্যাসেজ। ছবি তোলার খুবই অসুবিধা।
এত কালি মাখা। যে ভেজা জলকাপড়ে কিছুটা ঘসে
তুলব তারও আর সময় নাই। 

কোন রকমে কয়েকটি ছবি তুললাম। সাথে ছিলেন এক
পেশাদার ক্যামেরাম্যান।
এই ভ্রমণের আয়োজন করে ছিলেন  " বীরভূম আর্টিসানি "র পক্ষে বাটিক শিল্পী প্রশিক্ষক শ্রী অভিষেক সেনগুপ্ত এবং কলেজ শিক্ষক রাসবিহারী গঁড়াই রা।
এই বীরভূম আর্টিসানি র কথা আলাদা করে বলতে হবে।

এখন গণপুর। বীরভূমের পশ্চিম প্রান্তের এই সব এলাকা মানে দেউচা ; মুলুটি ; মাসড়া ; গণপুর ; বালিয়া ; নারায়ণপুর
সব " লোহামহল " নামে পরিচিত।ছিল একদিন । ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী আসার আগেই এখানে দেশীয় পদ্ধতি তে কাঁচা লোহার উৎপাদন হত। " অসুর "সম্প্রদায়ের মানুষেরা জানতেন লোহা গলানো র নিজস্ব পদ্ধতি। সে তো প্রাগৈতিহাসিক যুগেই। " পাণ্ডু রাজার ঢিবি " তে তো লোহার অস্ত্র মিলেছে। আনুমানিক ৩৫০০+- বৎসর আগেই। 
বীরভূমের এই লোহা শিল্পের সাথে যুক্ত একটি নাম খুবই উল্লেখ যোগ্য। ইন্দ্রনারায়ন চৌধুরী ( শর্মা) । তিনি ১৭৭৪ সালে
আধুনিক পদ্ধতি তে  এই লোহার বাণিজ্যিক উৎপাদন এর উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
বীরভূমের এই লোহা মহল নিয়ে আলাদা ভাবে লেখা দরকার।
উপযুক্ত কেউ লিখুন। অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে এর সাথে।
এই গণপুরের চৌধুরী পরিবার লোহার কারবারে প্রভূত ধনী হয়ে উঠেন। এবং নির্মান করিয়েছিলেন এই সব অলংকৃত
মন্দির রাজি। মধ্য অষ্টাদশ শতকে ।  মন্দির ময় প্রাচীন জনপদ এই গণপুর।
কালীতলা য় ঘেরা মন্দির চত্বরে আছে ১৫/১৬ টি মন্দির।
একটি সুউচ্চে অবস্থিত অসাধারণ কারু  কার্য মণ্ডিত দোল
মঞ্চ সহ।
কাছেই চৌধুরী পরিবারে ই নির্মিত আরও পাঁচটি সুন্দর অলংকৃত শিব মন্দির। কয়েক টি র সম্মুখ ভাগে র উপরে সিন্থেটিক রঙের প্রলেপ পড়েছে।
মন্দির বা মন্দির অলংকরণ ; (সে টেরাকোটাই হোক আর ফুলপাথরের হোক)  প্রেমীরা গণপুর ; মল্লারপুর ; মুলুটি দেখেননি তা তো আর হয়না। অনেক গুণী মানুষ লিখেছেন।
আমি এর শিল্প সৌকর্য ; তার নান্দনিক দিক নিয়ে কিছু বলছিনা। নিজের চোখে দেখে অনুভব করুন। এই সব শিল্পকর্মের যে প্রসাদ গুন তা উপলব্ধি উপভোগ  করুন। আর ভাবুন তাঁহাদের কথা ; যাঁদের নাম কোথাও নেই। সেই সব শিল্পী কারিগর  দের কথা। যাদের কথা কেহ লিখে নাই। নাই কোন 
উপাদান। 

কিন্তু এই যে বিশালাকৃতি ভগ্ন মন্দির টি যে টির অর্ধেক টি
পারিবারিক বাসগৃহের মধ্যে - সেটির সম্মুখ ভাগ হয়তো বা
বাদ পড়ে যেতে পারে আপনার ভ্রমণ কালে। তাই বলা। অন্যান্য ২০ টি মন্দির দেখেই হয়তো ফিরে যেতে পারেন - 
অসাধারণ এর সম্মুখ ভাগের কাজ। ঠিক খিলানের উপরের কাজ টি র ই ছবি দিয়েছিলাম কয়েক দিন আগে। কিছুটা এডিট করে। নিশ্চয়ই দেখেছেন। আবার দেখুন।
বারবার দেখেও যেন সাধ মেটেনা। অসাধারণ গণপুর।
------------ " ফুলপাথরের মহাকাব্য "------------

পুনঃ। আমার আগের পোষ্ট গুলি দেখুন। এই গণপুরের উপরেই