।। " অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো "।।
কে তিনি?
যে কোন প্রতিমার সামনে দাঁড়ালে ; আমার মনে জাগে সে প্রশ্ন
আমি প্রতিমার শিল্পিত রূপ দেখি। যার প্রতি আবাল্যের টান।
তার রঙ ; রূপ ; দু চোখ ভরে দেখি।
এঁর শিল্প ভাবনা! এই যে রূপ আমি দেখছি - কে প্রথম সৃষ্টি করলেন ; কার ভাবনা তে এলো এই রূপ? বিস্মিত হয়ে ভাবি।
বড় হয়েছি আর ক্রমাগত ভেবে গেছি কি ইতিহাস আছে
লুকিয়ে এঁর পিছনে। কাকে জিজ্ঞেস করব। না থাক নিজেই
খুঁজি। খুঁজে ফিরি। মাতৃমূর্তি ই আমার ভালোবাসা।
বাঙালী মাতৃভক্ত জাতি। আমার বাঙালী সত্তা আমার ভাবনা কে বিস্তৃত করে। ' মা বলিতে প্রাণ করে আনচান '। শৈশবে মা হারানো ছেলের কাছে ' মা ' এক আকুল আবেগ।
কালী মূর্তির সামনে দাঁড়াই। সেই একই প্রশ্ন জাগে ইনি কে!
এই ভয়ংকরী নারী। রক্ত লোলুপা। খড়্গধারিনী। নৃমুণ্ড মালিনী। নানা রঙের নৃমুণ্ড। পায়ের তলায় তাঁর সদা শিব।
কে ইনি। কে ইনি। কে ইনি। ইনি কে।
' আমার কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যারে আলোর নাচন ' - বুকের ভিতরে ধাক্কা দেয়।
আমাকে অনন্ত চিন্তার দিকে নিয়ে যায় ' অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো ' র বানী।
এখান থেকেই আমার ভাবনা যেন গতিমুখ পায়।
যেদিন এই ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়নি - এই ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বস্তু
রূপহীন। সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের ভর শক্তি রূপে ( Energy) বিরাজিত
এবং একটি বিন্দু তে নিহিত। তাহলে সে বিন্দুর ভর কত?
ভর ই যে শক্তি তা আমরা জেনেছি মহা বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কাছ থেকে। E= mc2 ( m c square) তার পরীক্ষাও করে ফেলেছে মানুষ। ভুল নেই।
ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি পূর্ব যে মহা অন্ধকার যে অনন্ত অমা নিশা ইনি
কি তার ই রূপ কল্পনা। তিনি কি অন্ধকার রূপ অসুর দের
হত্যা করে আলো র আবাহন কারিনী। আমি ভাবি যদি
physical বা chemical কোন reaction কে চিত্ররূপ দিতে হয় কেমন হবে সে ধ্যান লব্ধ রূপ কল্পনা। তাঁরা তো সৃষ্টি র প্রতিটি পর্যায় এর রূপ কল্পনা করেছেন। আমি দেখি সেই রূপ প্রতীক। তা সে দশ মহাবিদ্যা ই হোন আর অনন্তশয়ান বিষ্ণু ই
হোন - তাঁদের শিল্পী মন রূপের ধ্যান করেছে। রঙে ; রূপে সৃষ্টি
হয়েছে তাঁদের ধ্যান প্রতিমা। সকলি তো প্রতীক। সেই ভাবেই
আমি দেখি। দেখে আমার মন।
সেই মহামনস্বী ব্যক্তিরা তো ধ্যান যোগে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির কথা
ভেবেছেন। তাঁরাও তো সেই ' মহাবিন্দু ' র কথা ভেবেছেন।
সেই উপনিষদের জ্ঞান তপস্বী রা। কি অসাধারণ ছিল তাঁদের
মনীষা। সেই মহাবিশ্ব মহা ব্রহ্মাণ্ড ধারণ কারী ' মহা বিন্দু ' ( zero dimenson) ;( singularity ) কে
আপনি God particle বলবেন বা ব্রহ্ম বলবেন সে আপনার
ব্যাপার। এই বস্তু বিশ্বের প্রতিটি ধূলিকনাতে তিনি বিদ্যমান।
তিনি মানে তো Energy. যার রূপ আজও আমরা জানিনা।
জানি সে মহাশক্তি। ভাঙ্গো। ভাঙ্গো পরমানুর অন্তর। খুঁজে আনো আদি কণা কে। সে কি Neutrino; কোয়ার্ক ; ইলেকট্রন? যাঁকে ই খুঁজে আনো তার anti আছেই। দুই সত্তা। পজিটিভ আর নেগেটিভ। তাদের
মিলনে ই তো শক্তি প্রবাহ। এই জগৎ ও তো দুই সত্তা র সমন্বয়। প্রকৃতি আর পুরুষ। সৃষ্টির আনন্দ উপলব্ধি করতে তিনি তো নিজেকে বিভাজিত করেছেন। তাহলে আদিতে তো তিনি একক সত্তা। ' একমেবাদ্বিতীয়ম '।
সেই আদিসত্তার কোষরূপ ' দহর ' ব্যাপ্ত হল বহুরূপে।
আজও আমরা খুঁজে চলেছি সেই আদি রূপকে। আদি কণা যা সবার মাঝেই ছড়িয়ে আছে। প্রাণে অপ্রাণে। পার্থক্য তো অতি সুক্ষ্ম।
বিজ্ঞান খুঁজছে। তাই তার স্বাভাবিক ধর্ম। আর তাঁরা ; সেই মহামনীষা র অধিকারী রা চেয়েছেন " হে বিশ্বস্রষ্টা ; আমাও দাও সেই ধীশক্তি ; সেই মেধা ; সেই চেতনা যাতে মহাজগৎ কে
বুঝতে পারি '। " ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ "।
সেই চেতনা কি " consciousness itself is fundamental if not primary " - Dr Bhoumik
তাই বুঝি ডেকার্ট বলেছিলেন " Cogito ; ergo sum " (গ্রীকভাষায়).। I think ; therefore I am ।
উপনিষদ তাই 'সারা বিশ্বব্যাপী বিরাজমান এই অখণ্ড
চৈতন্য কে ই বলছে ব্রহ্ম ' " সর্বং খলিদ্বং ব্রহ্ম তজ্জলানিতি "।। ( ছান্দোগ্য)
ব্রহ্ম ; যিনি সমস্তের আরম্ভে এবং সমস্তের শেষে। " বিচৈতি চান্তে বিশ্বমাদৌ "। ব্রহ্ম স্রষ্টা ; জগৎ সৃষ্টি। আবার ব্রহ্ম যদিও
স্রষ্টা ; বিশ্বজগতের উপাদান ও ব্রহ্ম।
স্পেস টাইম ভেঙে পড়ে। কোল্যাপস করে এমন এক বিন্দুতে
যার ডাইমেনশন ' জিরো ডাইমেনশন '। দৈর্ঘ্য ; প্রস্থ ; উচ্চতা একত্রে শূন্য।
তাহলে কি আদিকনা নয়। "আদি কোয়ান্টাম ফিল্ড। সবচেয়ে
আদি অন্তর্নিহিত ক্ষেত্র। যেমন সমস্ত electron ই সেই অন্তর্নিহিত ফিল্ডের উদ্দীপনার প্রকাশ "
কি আশ্চর্য এই ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত ইলেকট্রনই absolutely identicals ; everywhere in the universe no matter
when or where they are created. The amount of their mass ; electric charge and spin are always exactly the same "
আবার যেটা অবাক করে এই ব্রহ্মাণ্ডের একত্রিত পজিটিভ
+ এনার্জি আর একত্রিত - নেগেটিভ _ এনার্জি একেবারে
সমান সমান। তাহলে মোট এনার্জি শূণ্য।
শূণ্য তবু শূণ্য নয়। পাশ্চাত্যের ' Nothing ' আর আমাদের
প্রাচ্যের ' Nothingness ' এক নয়। Nothingness is more than Nothing '। নয় নয় সে শূন্য নয় পূর্ণ পূর্ণ পূর্ণ
' হে পূর্ণ তব চরণের কাছে ' -
" All is whole ; all arises from whole and if whole is subtracted from Whole ; all that remains is Whole "
" ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে
পূর্ণস্য পূর্ণ মাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে "।
" অপাবৃণু "। হে জগৎ তুমি প্রকাশিত হও। খুলে ফেলো আবরন। উন্মোচিত হোক তোমার অন্তরের সত্য। সরে যাক পর্দা। "
আলোক হীনতাই কি অন্ধকার। না কি তার ও বিশেষ চরিত্র আছে! বিজ্ঞান খুঁজছে। ' ব্ল্যাক ম্যাটার ' নিয়ে কাজ হচ্ছে।
সেই ' মহাতমসাবৃত ' যে অবস্থা সে কি সৃষ্টি পূর্ব সময়ের আগেই ছিল। সে ই কি ধারক। তার ই অভ্যন্তর থেকে সৃষ্টি হল
বিপুল লক্ষ কোটি সূর্যের এনার্জি!
কাল থেকে তো কালী। সে যে মহাকাল। ঐ যে ' মহাকালের
কোলে দোলে -- '
উৎস তুমি ই। জাগাও আলো। তোমার নৃত্য ছন্দে শক্তি energy প্রবিষ্ট হোক । শব থেকে পরিণত হউন আলোক রূপী
শিব। শিব শক্তি র মিলন ই তো সৃষ্টি।
জাগো আলো। ঈশোপনিষদের সেই আলোক বন্দনা
" হিরণ্ময়েন পাত্রেণ সত্যস্যাপিহিতং মুখম "
ঋকবেদের গায়ত্রী মন্ত্র ~ সূর্য বন্দনা তাও তো সেই আলোক বন্দনা যা শুধু জগৎ কে প্রকাশ করছে না মাত্র ; যুক্ত
আমাদের বোধের সাথে " তৎ সবির্তুবরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি। ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ "
আমার প্রার্থনা শোনো - অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে
চলো " অসতো মা সদ্ গময় ; তমসো মা জ্যোতির্গময় "
------------ ------------ ------------ ------------ © প্রণব ভট্টাচার্য
পাঠক আমি একান্তই অনধিকারী। আমার ধৃষ্টতা মাফ করবেন। ' আমার মধ্যেই তোমার প্রকাশ "। তাই শুধু ভাবি মাত্র। আমার ভাবনা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
আমার ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন।
গ্রন্থ সহায়তা। ব্রহ্ম সত্য জগৎ সত্য । ডঃ মণি ভৌমিক
Code name God : The spiritual Odyssey of a man of Science. Dr Monilal Bhowmik.
উপনিষদ ঃ গীতা প্রেস
লেখাটি কে আবার একবার ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে হল। অনেকে পড়েছেন। সুচিন্তিত মন্তব্য করেছেন।
সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
না হয় আর একবার পড়ুন।
No comments:
Post a Comment