Sunday, 5 November 2017

পরগনা - সেনপাহাড়ী

পরগনা- সেনপাহাড়ী বাংলা র সেন রাজারা ছিলেন বহিরাগত। তাঁরা ছিলেন কর্ণাটী ব্রহ্মক্ষত্রিয়। পেশায় সৈনিক বা অস্ত্রব্যবসায়ী। বাংলায় বারবার দক্ষিণী আক্রমন হয়েছে। রাজা ধ্বঙ্গ ; রাজা রাজেন্দ্র চোল বাংলা আক্রমণ করেছেন। রাঢ়াধীপ কে পরাজিত করেছেন। তাঁদের ধনরত্ন এবং স্ত্রী দের লুঠ করে নিয়ে গেছেন। খাজুরাহো মন্দির গাত্রে এবং তিরুমালায় পাহাড় গাত্রে সেসব কথা তাঁরা উৎকীর্ণ করিয়েছেন। সেন বংশের আদি কোন পুরুষ ভাগ্যান্বেষণ এ কোন এক দক্ষিণী আক্রমণ এর সাথে এই বাংলা য় এসেছিলেন। আদি বসতি তাঁরা যেখানে ই স্থাপন করুন না কেন পরে তাঁরা গঙ্গা তীরবর্তী স্থানে সরে যান। অজয় সীমান্তে পাল রাজাদের দুর্গ ছিল। সে দুর্গ পাহারার দায়িত্বে ছিলেন এক সেন। নাম - কর্ণসেন। তাঁর রাজত্ব ময়না য়।তিনি কি দক্ষিণী। রাজা ধর্ম পালের স্ত্রী দেদ্দা দেবী। মহামাত্য শ্যালক মহামদ। এঁরা তো দক্ষিণ এর মানুষ। অর্থাৎ দক্ষিণের সাথে ভাল যোগাযোগ ই গড়ে উঠেছিল। সেন রাজাদের আদি পূ র্বপুরুষ বলা হয়ে থাকে বিজয়সেন কে। গল্প -অতি দরিদ্র অবস্থা থেকে শিবের বরে তিনি রাজত্ব লাভ করেন। তিনি না কি তাঁর ও আগে অন্যকেউ এসেছিলেন? বাংলায় এসে তাঁরা অজয় এর দক্ষিণে ঘন জংগলাকীর্ণ স্থানে বসবাস শুরু করেন। সম্ভবত প্রাচীন রাঢ়া ভুমি র গড় রাজধানী ছিল বর্ত মানের আড়া গ্রাম এর সন্নিকটে। সেখানের দক্ষিণী নাগর রীতি র বিখ্যাত শিব মন্দির টি কে নির্মান করিয়ে ছিলেন জানা যায় না। আমার অনুমান সেন রাজাদের পূর্বপুরুষ দের ই কেউ করিয়ে ছিলেন। ধ্বঙ্গ বা রাজেন্দ্র চোলের অভিযান থেকে এই জায়গা সম্পর্কে একটা ধারণা তাঁদের থাকতে পারে। এই জংগল পরিবৃত স্থানে অনেক পরে বল্লাল সেন বা পরবর্তী তে লক্ষণ সেন ও বারবার এসেছেন। এই জংগল ভূমি তখন তন্ত্র সাধনার পীঠ স্থান। হিন্দু তান্ত্রিক ও বৌদ্ধ সহজিয়া সাধক রা প্রায় মিলেমিশে গেছেন। নারী সাধন সঙ্গিনী কে নিয়ে দেহভাণ্ডেই ব্রহ্মাণ্ড এর সাধনা করেন। পিতাপুত্র দুজনেই এই তন্ত্রসাধনায় মজেছিলেন। পণ্ডিত ও ছিলেন আবার নারীসঙ্গ লোলুপ ও ছিলেন। এখানেই কবি জয়দেব এর সাথে রাজা লক্ষণসেন এর দেখা হয়। ইছাই ঘোষের পূজিতা দেবী মূর্তি তে এক ই অঙ্গে শ্যম ও কালী রূপ কবি জয়দেব দেখিয়ে ছিলেন রাজা কে। তাই তখন থেকে দেবী শ্যামরূপা। শোনা যায় এখানেই রাজার অনুরোধে কবি জয়দেব লিখতে শুরু করেন শৃঙ্গার রসাসৃত অমর কাব্য গীতগোবিন্দ। এই রাঢ় মণ্ডলের একদিন রাজা ছিলেন ইছাই ঘোষ। যিনি দ্বিতীয় বারের যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হয়েছিলেন কর্ণসেনের পুত্র লাউসেন বা নবসেন এর হাতে। ধর্ম্মমঙ্গল কাব্যে আমরা তাঁকে পাই। তিনি ধর্মঠাকুর এর পুজারী। ইছাই তান্ত্রিক। ইছাই কে আমরা পাই রামগঞ্জ তাম্রশাসনে। তিনি ঈশ্বরী ঘোষ। মহামাণ্ডলিক। ' বভূব রাঢ়াধীপ লব্ধজন্মা- -' বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই রাঢ়মণ্ডল। এই জংগল ভূমি। বাংলার সেন রাজাদের নামে ই বিখ্যাত। পরগনা সেন পাহাড়ি। এখনকার থানা - কাঁকসা। প: বর্ধমান। রেনেল সাহেবের ম্যাপে ও এই সমগ্র ভূখণ্ড সেনপাহাড়ি । এখনো সরকারী খাতায় ; খাজাঞ্চি খানায় ; আবগারি দপ্তরে পরগনা - সেন পাহাড়ি। প্রণব ভট্টাচার্য

No comments:

Post a Comment