Sunday, 5 November 2017
অযোধ্যা - বনকাটি এলাকার কালী পূজা
( পরগণা - সেনপাহাড়ী ; জঙ্গল মহল ; বর্দ্ধমান ; বর্তমানের থানা - কাঁকসা )
প্রণব ভট্টাচার্য
জঙ্গল মানেই অন্ধকার। অন্ধকার মানেই ভয়।
যেখানে অন্ধকার যেখানে ভয় সেখানে ই
কালীপুজো।
সে কয়লা খনি হোক আর থানা ই হোক।
আর তমসার দেবীর পুজো না করে আর ডাকাত রা কবে রণে গিয়েছে। কালী শক্তি দায়িনী।
আর জঙ্গল মহল। চির বিদ্রোহী। মানে চির উপদ্রুত। তকমা ও তেমন। অপরাধ প্রবণ। সরকার বাহাদুর এর সুতীক্ষ্ণ নজর।
হলে কি হবে। চুরি ডাকাতি প্রায় প্রতি দিনে রাতে। সাতকাটার জংগলে দিনে ই কেটে দিচ্ছে। সেনপাহাড়ীর মুচি দের কথা কে না জানে। যেমন লম্বা চওড়া দেখতে।
তেমনি দুর্ধর্ষ। নাম করা সব ডাকাত।
ওদিকে জংগল এর গায়ে গায়ে গাঁ গুলো - জামডোবা - চুয়া - রক্ষিতপুর -
লোহাগুড়ি - হরিকি - মলান দিঘি
এই একটা বেল্ট। সব গাঁ য়েই ওস্তাদ রা আছে। এদের ও এলাকা ভাগ আছে।
অবশ্য ভাড়া যেতে খুব আপত্তি নেই।
যায় ও। ওদিকে কাঁটাবেড়ে র সৌ দের মদ শালে দেখা সাক্ষাত হয় বাবুদের।
শিবপুর - জামবন - বিষ্টুপুর- জাঠগড়ে র সব মাল। ওদিকের গ্রুপ টার মানে বিজড়া - শোভাপুর - ধবনি লবনাপারা - আকন্দারা ওয়ালাদের সাথে খবরাখবর চালাচালি হয়।
সৌ শুনে ও না শোনার ভান করে।
আর খুব বড় ওস্তাদ রাজহাট এর হাঁড়ি দের কর্তার সাথে ও কথা হয়।
কেউ কারো এরিয়ায় ঢোকেনা। বাঁটুল থেকে গুলি পাথর ছুঁড়ে জানান দেয়।
জামডোবা র মুচি দের ডাকাতে কালী ।
সাধন পুজন করেন ব্রহ্মচারী কালীশংকর রায়। পরে এই পুজো ই এলো অযোধ্যা গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে।
অযোধ্যা র মুচি দের বিরাট কালী।
সর্দার দের পাড়া।
বনকাটি র মুচি দের পুজো ও জাঁকালো।
এছাড়া ডোম দের আছে। বাউড়ী দের ও।
বাগদী দের ও।
ভূস্বামী পরিবার গুলির মধ্যে বনকাটি রায় পরিবারের কালী পুজো খুবই পুরোনো।
তান্ত্রিকমতে পূজা হয়।
মুচিরা ছিল রায় দের লেঠেল। বশংবদ।
তাদের আনুগত্য ধরে রাখতে রায় দের কালী র সাথে মুচিদের দুই কালীর হল বোন সম্পর্ক।
অযোধ্যা - সাতকাহনিয়ার বাউরী সমাজের সম্পর্ক আছে ভালই।
তাদের ও পুজো আছে। দু গাঁয়ের দু পাড়াতেই। সব এক রাতের কালী।
তিমির নাশিনী - তমসার দেবী। তালপাতার কুঁড়েতে তাঁর অধিষ্ঠান হয়।
সে হোত একসময়। এখন সব পাকা মন্দির। জাঁকজমক। মহোৎসব।
এই জঙ্গল মহলের কোন গ্রামে আর কালীপুজো না হয়। বিরাট বিরাট কালীমূর্তি । জামদহ ; রাজ হাট; নবগ্রাম বিদবিহার ;বিনোদপুর; প্রভৃতি গ্রামে। গ্রামগুলি বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার। আমাদের আজকের আলোচ্য
নয়। অন্যসময় হবে।
আমাদের বনকাটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অযোধ্যা - বনকাটি গ্রাম ছাড়া ও অন্যান্য গ্রাম গুলিতেও অনেক কালী পুজো।
সমাজের তথাকথিত অন্ত্যজ স্তরের মানুষেরাই এই পুজোর আয়োজক। পুজো তাঁরা নিজেরাই করেন।
বাংলায় তো এরাই যোদ্ধৃ জাতি। ডোম ; হাঁড়ি; মুচি ; বাগদী ; মাল ; বাউরী ; এরাই তো যুদ্ধ করেছে। ডোম সৈন্য রা তো খুব ই বিখ্যাত ছিল। বাইরেও যুদ্ধ করতে গেছে।
আবার ডাকাতি ও করেছে। কোন স্থানীয় রাজা র পরাজয় এর পর সৈন্য দল ভেঙ্গে গেছে। সৈনিকের মর্যাদা চলে গেছে।অনেকে চাষবাসে আর ফিরতে পারেনি।
ডাকাতি তে চলে গেছে।সামাজিক দূরবস্থাও অন্যতম কারন।
অন্ধকারের দেবী র কাছে শক্তি প্রার্থনা করেছে। লড়াই এর শক্তি ; আত্মবিশ্বাস।
আদিবাসী সাঁও তাল রাও কালী পুজো করে।
মহিষাসুর কে যেমন তারা তাদের পুর্বপুরুষ নেতা বলে মনে করে - । কালী কি তাদের ঘরের মেয়ে। একদিন কি তার ই নেতৃত্বে উগ্রচণ্ডা নারী বাহিনী তাদের রক্ষার জন্য লড়াই এ নেমেছে। গলার নরমুণ্ড মালার সাদা হলুদ রঙের মাথাগুলি কাদের?
ইতিহাস কি বলে?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment