Sunday, 5 November 2017

বাবাজী বাউল বোষ্টম আখড়া সংগঠন

ঐ যে ছায়াঘন প্রাচীন তমাল তল টি। একদিন বুড়ো বাবাজী র আখড়া ছিল ওখানেই। সে তো অনেক দিন আগের কথা। কমপক্ষে দু শো বছরের। তার নাম কি ছিল? কে জানে। কে বলবে? তো ঐ বুড়ো বাবাজী। গাঁয়ের দক্ষিণে বুড়ো বট। প্রাচীন এক বটবৃক্ষ। কে তার চারা পুঁতেছিল। কে জানে। কে বলবে। নাম তার বাবাজী বটতলা। আরো দক্ষিণে গোপাল বাবাজী র আখড়া। পাশের ডোবা। নাম তার গোপাল সায়ের। আখড়ার সামনে দীর্ঘ এক খেজুর গাছ। একাই দাঁড়িয়ে আছে। সনাতন বাবাজী র বেড়া। অনেকটা জায়গা নিয়ে। নানা গাছপালা। খেজুর পলাশ। পলাশের ছোটখাটো বন। তখন সারা এলাকাজুড়েই পলাশ বন। লা মানে লাক্ষা মানে গালা র চাষ হয়। বসুধার লড়ি রা গালা বানায়। নানা রকম জিনিষ তৈরি করে। নদী মানে অজয়ের ওপারে ইলামবাজার গঞ্জ। নিলামের বাজার। তুলো রেশম গালা নীল। সাহেব দের বড় বড় কুঠি বাড়ি। যাক সে গল্প আবার অন্য সময় আবার হবে। এখন বাবাজী দের আখড়া র কথা। বয়সেও নবীন। নামেও তাই। নবীন বাবাজী র আখড়া জমে উঠল তার গানে। দেহতত্ত্ব এর সব গান। সেই গানের টানে কত জন এলো। সহজ সাধনা। দেহভান্ড ই ব্রহ্মাণ্ড।দেহসুখের মাধ্যমে চিত্তসুখের সন্ধান। তাঁর সাধন সঙ্গিনী -। না নাম জানা নেই। অনেক পরে তাঁর আখড়ায় এলেন বালকমাতা দাসী। জাত কুল হারানো এক বালবিধবা। জাতকুল না হারালে কি আর কেউ বোষ্টম হয়। এই জাত কুল মান হারানো এই মানুষ গুলো কোথায় যায় তাহলে। সমাজ আর তাদের জায়গা দিতে রাজী নয়। একেবারে পতিত। ঐ গাঁয়ের বাইরে ডোম বাগদী বাউরী মুচি পাড়ার ধারে কোনমতে একটু মাথা গোঁজার জায়গা হত। গাঁয়ের আখড়া তাই গাঁয়ের বাইরে। এই জাত কুল মান হারানো মানুষ গুলো বৌদ্ধ সহজ যানে জায়গা পেয়েছিল। জাতপাত নাই।শরীর নিয়ে শুচিবাই নাই।মান আছে। এই তো জায়গা। সমাজের তথাকথিত নীচু স্তরের মানুষ গুলো সব যোগ দিল এখানে। বাংলা র পাল রাজাদের সময় এই সহজযানী বৌদ্ধ ধর্ম বেশ ছড়াল। তারপর আবার সেন রাজাদের সময় ব্রাহ্মণ্য জাতপাত প্রবল হল। ব্রাহ্মণ রা হুঙ্কার ছাড়ল - সমাজে অনাচার বেড়ে গেছে। পরিষ্কার করতে হবে। ঠিক যে যৌন অনাচার খুবই বেড়ে গিয়েছিল। নজর পড়ল ওই মানুষ গুলোর উপরে। ন্যাড়া- নেড়ি গুলোর উপর লেলিয়ে দিল সমাজের বাকী মানুষ গুলোকে। খুব ই মার খেল। কত যে মরল। তার ঠিক নাই। কোথায় যায় এরা? পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পরে চৈতন্য মহাপ্রভু র পার্ষদ নিত্যানন্দ জীর ছেলে বীরভদ্র জী এঁদের দীক্ষা দিলেন ঠাঁই দিলেন বৈষ্ণবীয় সহজ সাধনার পরিমণ্ডলে। বীরভদ্র এর আদেশে তাঁর শিষ্যকুল ছড়িয়ে পড়লেন অজয়ের উভয় তীরদেশ এর গ্রামগুলিতে। বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারে। সহজিয়া সাধক দের আখড়া গড়ে উঠল গ্রামে গ্রামে। পারস্পরিক সংযোগে গড়ে উঠল একটা চমৎকার সংগঠন। এখনও কিছুটা বজায় আছে। পৌষসংক্রান্তি র কেন্দুলী র জয়দেব মেলায় বাবাজী মাতাজী বাউল দের দল নানা আখড়ায় বিশ্রাম নিতে নিতে পৌঁছে যান কেন্দুলী। আবার ফেরার পথে ঐ ভাবেই। আখড়া সংগঠন গত ভাবেই ঠিক করা আছে আসা যাওয়া র পথের আস্তানা। সাতকাহনিয়ার আশ্রম ফেরার পথের প্রথম বিশ্রাম স্থল।সহজ সাধনার দীক্ষাস্থল ও বটে। হাঁ। সে ছিল বটে একদিন। সারারাত দেহতত্ত্ব এর গান। বড় বড় সাধু বাবাজী দের মাঝেমাঝে হুঙ্কার গর্জন। গাঁজার নেশায় চোখ লাল। আখড়ার ঘরে গুহ্য সাধনার দীক্ষা। সহজ যোগে যদি তার সাক্ষাৎ মেলে। বাবাজী বাউল বোষ্টম আখড়া সংগঠন আঞ্চলিক ইতিহাস কাঁকসা জংগল মহল ; প: বর্ধমান প্রণব ভট্টাচার্য।

No comments:

Post a Comment