Monday, 20 November 2017

গ্রাম - অযোধ্যা পো: বনকাটি প: বর্ধমান । কার্তিক পূজা।

অযোধ্যা গ্রামের অধিকারী বটতলার কার্তিক পূজা। ---------------------------- প্রণব ভট্টাচার্য ---- গৌর নাপিত। তাঁর সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায়না। পেশা তার ক্ষৌরকর্ম। কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য নিশ্চয় ই ছিল। তা না হলে একটা পুকুর কাটানো সম্ভব হতনা। পুকুরের নাম নাপিত পুকুর। পুকুর পাড়ে ছোট্ট মাটির ঘর। খড়ের ছাউনি। সম্ভবত একা মানুষ। সংসার নেই। কিম্বা হয়তো স্ত্রী ছিলেন।ছেলেপুলে ছিলনা। ধর্মপ্রাণ মানুষ। চারদিকে ঝোপঝাড়। মাঝে এক প্রাচীন বট। তার নীচে র জংগল পরিষ্কার করে আনলেন কার্তিক পূজা। সেই শুরু। তারপর শেষ বয়সে এই পূজার দায়িত্ব ভার তুলে দিলেন তাম্বুলি পরিবারের উপর।সাথে দিলেন জমি জায়গা পুকুর ডাঙ্গা। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শ্যাম সুন্দর এরযুগল মুর্তি। তার দায়িত্বও তুলে দিলেন তাম্বুলি পরিবারের উপর।পরে তাঁরা চক্রবর্তী পরিবার কে পুরোহিত এর দায়িত্ব দেন। অযোধ্যা গ্রামের ( পোষ্ট - বনকাটি জেলা- প: বর্ধমান) সেই কার্তিক পুজা এখনো চলছে।কমপক্ষে একশো বছরের পুরনো। শ্যামসুন্দর ও নিত্য পূজা পাচ্ছেন। উৎসাহী যুবকেরা ধূমধামের সাথে ঐ পূজা করছেন। অনেক মানুষ কে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানোর আয়োজন হয়।গান বাজনার আসর ও বসে। এর উদ্যোক্তা পাড়ার ছেলে বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সুনীল রক্ষিত। তবে সমস্যা একটা ই। তা আর্থিক।তাই সব বৎসর আয়োজন হতে পারেনা। সকলের অধিকার। এই পূজার সং কল্প সকলের নামেই হয়। তাই অধিকারী বটতলার পূজা। প্রায় শত বর্ষ প্রাচীন পুজাকে কেন্দ্র করে এই সব আনন্দ অনুষ্ঠান যেন বন্ধ না হয়। এগুলি গ্রামের ঐতিহ্য। একে রক্ষা করতে হবে। --------+----------+---------+--------------

Sunday, 5 November 2017

তমিস্রা র দেবীর পূজা

তমিস্রার দেবীরপূজা : জংগল মহল বর্ধমানের জংগল মহল। পরগনা - সেনপাহাড়ী। গড় জংগল। হাজার বছর আগে ছিল মহামাণ্ডলিক ইছাই ঘোষের গড়।ঢেকুর বা ত্রিষষ্টি গড়। অনেক দিন পর প্রায় আড়াই শো বছর আগে গড়ের ধ্বংসাবশেষ এর উপর কেল্লা বানিয়েছিলেন বর্ধমানের রাজা চিত্রসেন। তিনি ই তৈরি করিয়েছিলেন দেউল। বিখ্যাত ইছাই ঘোষের দেউল। জংগল এর সীমান্তে ছোটবড় নানা গ্রাম। জামডোবা ; সরস্বতীগঞ্জ; রক্ষিতপুর; লোহাগুড়ি; হরিকি; মলানদিঘি ; কুলডিহা হয়ে আরো দক্ষিণে আড়া ; বামুনাড়া; গোপালপুর ; বান্দরা। পশ্চিমে আকন্দারা; ধবনী ; বিজড়া - শোভাপুর ; কাঁটা বেড়ে ; জামবন জাঠগোড়ে ; শিবপুর ; বিষ্টুপুর ; নবগ্রাম। উত্তরে অজয়।ওপারে কেন্দুলী। উত্তরপূর্বে বনকাটি - অযোধ্যা ; সাতকাহনিয়া ; বসুধা ; রাধামোহনপুর। জংগলের গায়ে গায়ে বনগ্রাম ; নিমটিকুরি ; কোটালপুকুর ; গৌরাঙ্গ পুর ; দামোদরপুর; খেড়োবাড়ি। জংগল ভুমি র ভিতরে ভিতরে অনেক গুলি সাঁও তাল পাড়া। জংগল মানেই গা ছমছমে ভয়। গভীর জংগল। দিনে ই আঁধার। রাত বিভীষিকা র। তন্ত্রসাধনা ; কালী সাধনার ক্ষেত্র এই জংগল ভুমি। তমসার দেবীর পূজা না করে কি আর রণে যাওয়া যায়। ডাকাত রা তার পূজা করে। সেনপাহাড়ির ডাকাত রা কুখ্যাত। হাঁড়ি;ডোম; মুচি ; মেটে ; বাগদী ; মাল ; বাউরী। যারা ছিল একদিন ইছাই ঘোষের সৈনিক। তারা ই পরে ডাকাত হল। সেনপাহাড়ির মুচি রা তো বিখ্যাত। এরা সবাই কালীর পূজা না করে ডাকাতি তে যায়না। কালীপূজা হয় না এমন কোন গ্রাম নেই এই জংগল ভূমি তে। পরে গ্রামের ভূস্বামীরা ও চালু করলেন সাড়ম্বরে আঁধারনাশিনী ; মহাতমিস্রার দেবীর পুজা। ডাকাত দের যে বশ মানাতে হবে।

ইছাই ঘোষ -ঐতিহাসিক ব্যক্তি

প্রতিবাদী ইছাই ঘোষ মোটামুটি হাজার বছর আগের কথা। গৌড়ে তখন পাল রাজা দেবপাল। অজয় তীরে রাঢ়বঙ্গে সীমান্ত রক্ষার জন্য গড়। গড়ের দায়িত্বে কর্ণসেন। বাবার সাথে গড়ে যাতায়াত ছিল ইছাই এর। কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠলেন ইছাই। গড়ে তুললেন নিজস্ব সৈন্যদল। বাউরী বাগদী হাঁড়ি ডোম ঘরের যুবক ছেলে দের নিয়ে। অতর্কিত আক্রমণে গড় দখল করে নিলেন। কর্ণসেন পালিয়ে বাঁচলেন। ইছাই গড়ে তুললেন তাঁর রাজত্ব। সমগ্র গোপভূমি জুড়ে। তিনি হলেন ' মহামাণ্ডলিক'। 'রাঢ়াধীপ'। ইছাই ছিলেন তান্ত্রিক। তাঁর আরাধ্যা দেবী ভগবতী শ্যামারূপা। দুর্গা মন্ত্রে এখন ও তাঁর পুজা হয়। এই দুর্গাপূজা র সময়। তিনি ' গড়ের দেবী'। ইছাই তাঁর গড়ের নাম রেখেছিলেন শ্যামারূপা গড়। তাই ' ঢেকুর গড়' বা ত্রিষষ্টি গড়। রামগঞ্জ তাম্রশাসন এর ঈশ্বরী ঘোষ ই ইছাই ঘোষ। তাঁকে আমরা ' ধর্ম্মমঙ্গল' কাব্যেও পাব। প্রণব ভট্টাচার্য

এলাকার দুর্গা পূজা

অযোধ্যা - বনকাটি এলাকার ( থানা- কাঁকসা : প বর্ধমান) দুর্গোৎসব অনেকগুলি ই পূজা। সব ই পারিবারিক। বা পাড়াগত। অযোধ্যা গ্রামের ঘটক বাড়ি ; মুখোপাধ্যায় ; চট্টোপাধ্যায় পরিবারে র প্রতিমা পূজা। বন্দোপাধ্যায় পরিবারে ঘট পূজা। তাঁতি পাড়ার প্রতিমা পূজা। একসময় স্বর্ণকার দের পূজা ধুমধামের সাথে হত। এখন ঘট পুজা হয়। তেমন ই আর একটি ঘট পূজা হত। এখন সেটা উঠে গেছে। একটি ছোট কিন্তু সুন্দর ধাতুমূর্তি র দুর্গাপূজা হয় ঘটক পাড়ার প্রান্তে। নবমী র দিন বনকাটির শ্মশান জঙ্গলে দেবী পাষাণচণ্ডী থানে ছাগ বলি হয়। ঘটক রা পুরোহিত। বনকাটি গ্রামে - মুখোপাধ্যায় ( ঘোষাল) চট্টোপাধ্যায় ; রায় বা ড়ি ; কর্মকার ; স্বর্ণকার পরিবারে প্র তিমা পূজা হয়। এক সময় দেড় দু শ বছর আগে এখানকার তাঁতি ; স্বর্ণকার ;কর্মকার দের আর্থিক অবস্থা যথেষ্ট ভাল ছিল। ব্রাহ্মণেরা উপনিবিষ্ট হয়েছিলেন। জমি জায়গা লাভ করেছিলেন। পূর্বপুরুষ এরা চালু করেছিলেন দুর্গাপূজা। কিন্তু আজ আর সে অবস্থা নাই।গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতি বিপর্যস্ত। পারিবারিক পূজা গুলি আজ প্রায় দায়।

বর্ধমানের রাজা চিত্রসেন এবং তাঁর কেল্লা

বর্ধমানের রাজা চিত্রসেন এবং তাঁর কেল্লা পরগনা সেনপাহাড়ী। আবার সেই জংগল মহল। বীরভুম সীমান্ত পাহারা দেওয়া খুব জরুরী। একদিকে বর্গী আক্রমণ। লুঠতরাজ। অন্যদিকে বীরভুম জমিদারের আক্রমণ ভীতি। ইছাই ঘোষের গড় এর ধ্বংসাবশেষ এর উপর রাজা তৈরী করালেন সুরক্ষিত কেল্লা। কামান এনে বসালেন। কেল্লাদার হায়ার বা হায়াত সিং। রাজা চিত্রসেন এর উত্তরাধিকারী রাজা ত্রিলোক চাঁদ ছিলেন স্বাধীন চেতা। ইংরেজ দের তাঁর সম্পর্ক মোটেই ভাল ছিলনা। সিরাজের বিরুদ্ধে যে চক্রান্ত হয়েছিল তাতে তিনি যোগ দেন নি। শেষ পর্যন্ত ইংরেজ দের সাথে যুদ্ধ বাধল ই। রাজা আশ্রয় নিলেন দূরে গভীর জংগলের মধ্যে সেই কেল্লায়। ইংরেজ সেনাপতি মেজর হোয়াইট কেল্লাদ্বারে একদিন হাজির হলেন। ত্রিলোকচাঁদ অবশ্য তার আগে ই কেল্লা ছেড়ে পালিয়েছেন। ইংরেজ রা দখল করল কেল্লা। নিয়ে গেল কামান আর বহু ধনরত্ন। মৌজার নাম গড়কেল্লা খেরোবাড়ি। লক্ষ্য করুন গড় এবং কেল্লা মানে fort এক ই শব্দবন্ধে। ইতিহাসের দুটি সময় কাল। মানুষের স্মৃতি তে থেকে গেছে।

পরগনা - সেনপাহাড়ী

পরগনা- সেনপাহাড়ী বাংলা র সেন রাজারা ছিলেন বহিরাগত। তাঁরা ছিলেন কর্ণাটী ব্রহ্মক্ষত্রিয়। পেশায় সৈনিক বা অস্ত্রব্যবসায়ী। বাংলায় বারবার দক্ষিণী আক্রমন হয়েছে। রাজা ধ্বঙ্গ ; রাজা রাজেন্দ্র চোল বাংলা আক্রমণ করেছেন। রাঢ়াধীপ কে পরাজিত করেছেন। তাঁদের ধনরত্ন এবং স্ত্রী দের লুঠ করে নিয়ে গেছেন। খাজুরাহো মন্দির গাত্রে এবং তিরুমালায় পাহাড় গাত্রে সেসব কথা তাঁরা উৎকীর্ণ করিয়েছেন। সেন বংশের আদি কোন পুরুষ ভাগ্যান্বেষণ এ কোন এক দক্ষিণী আক্রমণ এর সাথে এই বাংলা য় এসেছিলেন। আদি বসতি তাঁরা যেখানে ই স্থাপন করুন না কেন পরে তাঁরা গঙ্গা তীরবর্তী স্থানে সরে যান। অজয় সীমান্তে পাল রাজাদের দুর্গ ছিল। সে দুর্গ পাহারার দায়িত্বে ছিলেন এক সেন। নাম - কর্ণসেন। তাঁর রাজত্ব ময়না য়।তিনি কি দক্ষিণী। রাজা ধর্ম পালের স্ত্রী দেদ্দা দেবী। মহামাত্য শ্যালক মহামদ। এঁরা তো দক্ষিণ এর মানুষ। অর্থাৎ দক্ষিণের সাথে ভাল যোগাযোগ ই গড়ে উঠেছিল। সেন রাজাদের আদি পূ র্বপুরুষ বলা হয়ে থাকে বিজয়সেন কে। গল্প -অতি দরিদ্র অবস্থা থেকে শিবের বরে তিনি রাজত্ব লাভ করেন। তিনি না কি তাঁর ও আগে অন্যকেউ এসেছিলেন? বাংলায় এসে তাঁরা অজয় এর দক্ষিণে ঘন জংগলাকীর্ণ স্থানে বসবাস শুরু করেন। সম্ভবত প্রাচীন রাঢ়া ভুমি র গড় রাজধানী ছিল বর্ত মানের আড়া গ্রাম এর সন্নিকটে। সেখানের দক্ষিণী নাগর রীতি র বিখ্যাত শিব মন্দির টি কে নির্মান করিয়ে ছিলেন জানা যায় না। আমার অনুমান সেন রাজাদের পূর্বপুরুষ দের ই কেউ করিয়ে ছিলেন। ধ্বঙ্গ বা রাজেন্দ্র চোলের অভিযান থেকে এই জায়গা সম্পর্কে একটা ধারণা তাঁদের থাকতে পারে। এই জংগল পরিবৃত স্থানে অনেক পরে বল্লাল সেন বা পরবর্তী তে লক্ষণ সেন ও বারবার এসেছেন। এই জংগল ভূমি তখন তন্ত্র সাধনার পীঠ স্থান। হিন্দু তান্ত্রিক ও বৌদ্ধ সহজিয়া সাধক রা প্রায় মিলেমিশে গেছেন। নারী সাধন সঙ্গিনী কে নিয়ে দেহভাণ্ডেই ব্রহ্মাণ্ড এর সাধনা করেন। পিতাপুত্র দুজনেই এই তন্ত্রসাধনায় মজেছিলেন। পণ্ডিত ও ছিলেন আবার নারীসঙ্গ লোলুপ ও ছিলেন। এখানেই কবি জয়দেব এর সাথে রাজা লক্ষণসেন এর দেখা হয়। ইছাই ঘোষের পূজিতা দেবী মূর্তি তে এক ই অঙ্গে শ্যম ও কালী রূপ কবি জয়দেব দেখিয়ে ছিলেন রাজা কে। তাই তখন থেকে দেবী শ্যামরূপা। শোনা যায় এখানেই রাজার অনুরোধে কবি জয়দেব লিখতে শুরু করেন শৃঙ্গার রসাসৃত অমর কাব্য গীতগোবিন্দ। এই রাঢ় মণ্ডলের একদিন রাজা ছিলেন ইছাই ঘোষ। যিনি দ্বিতীয় বারের যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হয়েছিলেন কর্ণসেনের পুত্র লাউসেন বা নবসেন এর হাতে। ধর্ম্মমঙ্গল কাব্যে আমরা তাঁকে পাই। তিনি ধর্মঠাকুর এর পুজারী। ইছাই তান্ত্রিক। ইছাই কে আমরা পাই রামগঞ্জ তাম্রশাসনে। তিনি ঈশ্বরী ঘোষ। মহামাণ্ডলিক। ' বভূব রাঢ়াধীপ লব্ধজন্মা- -' বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই রাঢ়মণ্ডল। এই জংগল ভূমি। বাংলার সেন রাজাদের নামে ই বিখ্যাত। পরগনা সেন পাহাড়ি। এখনকার থানা - কাঁকসা। প: বর্ধমান। রেনেল সাহেবের ম্যাপে ও এই সমগ্র ভূখণ্ড সেনপাহাড়ি । এখনো সরকারী খাতায় ; খাজাঞ্চি খানায় ; আবগারি দপ্তরে পরগনা - সেন পাহাড়ি। প্রণব ভট্টাচার্য
অযোধ্যা - বনকাটি এলাকার কালী পূজা ( পরগণা - সেনপাহাড়ী ; জঙ্গল মহল ; বর্দ্ধমান ; বর্তমানের থানা - কাঁকসা ) প্রণব ভট্টাচার্য জঙ্গল মানেই অন্ধকার। অন্ধকার মানেই ভয়। যেখানে অন্ধকার যেখানে ভয় সেখানে ই কালীপুজো। সে কয়লা খনি হোক আর থানা ই হোক। আর তমসার দেবীর পুজো না করে আর ডাকাত রা কবে রণে গিয়েছে। কালী শক্তি দায়িনী। আর জঙ্গল মহল। চির বিদ্রোহী। মানে চির উপদ্রুত। তকমা ও তেমন। অপরাধ প্রবণ। সরকার বাহাদুর এর সুতীক্ষ্ণ নজর। হলে কি হবে। চুরি ডাকাতি প্রায় প্রতি দিনে রাতে। সাতকাটার জংগলে দিনে ই কেটে দিচ্ছে। সেনপাহাড়ীর মুচি দের কথা কে না জানে। যেমন লম্বা চওড়া দেখতে। তেমনি দুর্ধর্ষ। নাম করা সব ডাকাত। ওদিকে জংগল এর গায়ে গায়ে গাঁ গুলো - জামডোবা - চুয়া - রক্ষিতপুর - লোহাগুড়ি - হরিকি - মলান দিঘি এই একটা বেল্ট। সব গাঁ য়েই ওস্তাদ রা আছে। এদের ও এলাকা ভাগ আছে। অবশ্য ভাড়া যেতে খুব আপত্তি নেই। যায় ও। ওদিকে কাঁটাবেড়ে র সৌ দের মদ শালে দেখা সাক্ষাত হয় বাবুদের। শিবপুর - জামবন - বিষ্টুপুর- জাঠগড়ে র সব মাল। ওদিকের গ্রুপ টার মানে বিজড়া - শোভাপুর - ধবনি লবনাপারা - আকন্দারা ওয়ালাদের সাথে খবরাখবর চালাচালি হয়। সৌ শুনে ও না শোনার ভান করে। আর খুব বড় ওস্তাদ রাজহাট এর হাঁড়ি দের কর্তার সাথে ও কথা হয়। কেউ কারো এরিয়ায় ঢোকেনা। বাঁটুল থেকে গুলি পাথর ছুঁড়ে জানান দেয়। জামডোবা র মুচি দের ডাকাতে কালী । সাধন পুজন করেন ব্রহ্মচারী কালীশংকর রায়। পরে এই পুজো ই এলো অযোধ্যা গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে। অযোধ্যা র মুচি দের বিরাট কালী। সর্দার দের পাড়া। বনকাটি র মুচি দের পুজো ও জাঁকালো। এছাড়া ডোম দের আছে। বাউড়ী দের ও। বাগদী দের ও। ভূস্বামী পরিবার গুলির মধ্যে বনকাটি রায় পরিবারের কালী পুজো খুবই পুরোনো। তান্ত্রিকমতে পূজা হয়। মুচিরা ছিল রায় দের লেঠেল। বশংবদ। তাদের আনুগত্য ধরে রাখতে রায় দের কালী র সাথে মুচিদের দুই কালীর হল বোন সম্পর্ক। অযোধ্যা - সাতকাহনিয়ার বাউরী সমাজের সম্পর্ক আছে ভালই। তাদের ও পুজো আছে। দু গাঁয়ের দু পাড়াতেই। সব এক রাতের কালী। তিমির নাশিনী - তমসার দেবী। তালপাতার কুঁড়েতে তাঁর অধিষ্ঠান হয়। সে হোত একসময়। এখন সব পাকা মন্দির। জাঁকজমক। মহোৎসব। এই জঙ্গল মহলের কোন গ্রামে আর কালীপুজো না হয়। বিরাট বিরাট কালীমূর্তি । জামদহ ; রাজ হাট; নবগ্রাম বিদবিহার ;বিনোদপুর; প্রভৃতি গ্রামে। গ্রামগুলি বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার। আমাদের আজকের আলোচ্য নয়। অন্যসময় হবে। আমাদের বনকাটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অযোধ্যা - বনকাটি গ্রাম ছাড়া ও অন্যান্য গ্রাম গুলিতেও অনেক কালী পুজো। সমাজের তথাকথিত অন্ত্যজ স্তরের মানুষেরাই এই পুজোর আয়োজক। পুজো তাঁরা নিজেরাই করেন। বাংলায় তো এরাই যোদ্ধৃ জাতি। ডোম ; হাঁড়ি; মুচি ; বাগদী ; মাল ; বাউরী ; এরাই তো যুদ্ধ করেছে। ডোম সৈন্য রা তো খুব ই বিখ্যাত ছিল। বাইরেও যুদ্ধ করতে গেছে। আবার ডাকাতি ও করেছে। কোন স্থানীয় রাজা র পরাজয় এর পর সৈন্য দল ভেঙ্গে গেছে। সৈনিকের মর্যাদা চলে গেছে।অনেকে চাষবাসে আর ফিরতে পারেনি। ডাকাতি তে চলে গেছে।সামাজিক দূরবস্থাও অন্যতম কারন। অন্ধকারের দেবী র কাছে শক্তি প্রার্থনা করেছে। লড়াই এর শক্তি ; আত্মবিশ্বাস। আদিবাসী সাঁও তাল রাও কালী পুজো করে। মহিষাসুর কে যেমন তারা তাদের পুর্বপুরুষ নেতা বলে মনে করে - । কালী কি তাদের ঘরের মেয়ে। একদিন কি তার ই নেতৃত্বে উগ্রচণ্ডা নারী বাহিনী তাদের রক্ষার জন্য লড়াই এ নেমেছে। গলার নরমুণ্ড মালার সাদা হলুদ রঙের মাথাগুলি কাদের? ইতিহাস কি বলে?

বাবাজী বাউল বোষ্টম আখড়া সংগঠন

ঐ যে ছায়াঘন প্রাচীন তমাল তল টি। একদিন বুড়ো বাবাজী র আখড়া ছিল ওখানেই। সে তো অনেক দিন আগের কথা। কমপক্ষে দু শো বছরের। তার নাম কি ছিল? কে জানে। কে বলবে? তো ঐ বুড়ো বাবাজী। গাঁয়ের দক্ষিণে বুড়ো বট। প্রাচীন এক বটবৃক্ষ। কে তার চারা পুঁতেছিল। কে জানে। কে বলবে। নাম তার বাবাজী বটতলা। আরো দক্ষিণে গোপাল বাবাজী র আখড়া। পাশের ডোবা। নাম তার গোপাল সায়ের। আখড়ার সামনে দীর্ঘ এক খেজুর গাছ। একাই দাঁড়িয়ে আছে। সনাতন বাবাজী র বেড়া। অনেকটা জায়গা নিয়ে। নানা গাছপালা। খেজুর পলাশ। পলাশের ছোটখাটো বন। তখন সারা এলাকাজুড়েই পলাশ বন। লা মানে লাক্ষা মানে গালা র চাষ হয়। বসুধার লড়ি রা গালা বানায়। নানা রকম জিনিষ তৈরি করে। নদী মানে অজয়ের ওপারে ইলামবাজার গঞ্জ। নিলামের বাজার। তুলো রেশম গালা নীল। সাহেব দের বড় বড় কুঠি বাড়ি। যাক সে গল্প আবার অন্য সময় আবার হবে। এখন বাবাজী দের আখড়া র কথা। বয়সেও নবীন। নামেও তাই। নবীন বাবাজী র আখড়া জমে উঠল তার গানে। দেহতত্ত্ব এর সব গান। সেই গানের টানে কত জন এলো। সহজ সাধনা। দেহভান্ড ই ব্রহ্মাণ্ড।দেহসুখের মাধ্যমে চিত্তসুখের সন্ধান। তাঁর সাধন সঙ্গিনী -। না নাম জানা নেই। অনেক পরে তাঁর আখড়ায় এলেন বালকমাতা দাসী। জাত কুল হারানো এক বালবিধবা। জাতকুল না হারালে কি আর কেউ বোষ্টম হয়। এই জাত কুল মান হারানো এই মানুষ গুলো কোথায় যায় তাহলে। সমাজ আর তাদের জায়গা দিতে রাজী নয়। একেবারে পতিত। ঐ গাঁয়ের বাইরে ডোম বাগদী বাউরী মুচি পাড়ার ধারে কোনমতে একটু মাথা গোঁজার জায়গা হত। গাঁয়ের আখড়া তাই গাঁয়ের বাইরে। এই জাত কুল মান হারানো মানুষ গুলো বৌদ্ধ সহজ যানে জায়গা পেয়েছিল। জাতপাত নাই।শরীর নিয়ে শুচিবাই নাই।মান আছে। এই তো জায়গা। সমাজের তথাকথিত নীচু স্তরের মানুষ গুলো সব যোগ দিল এখানে। বাংলা র পাল রাজাদের সময় এই সহজযানী বৌদ্ধ ধর্ম বেশ ছড়াল। তারপর আবার সেন রাজাদের সময় ব্রাহ্মণ্য জাতপাত প্রবল হল। ব্রাহ্মণ রা হুঙ্কার ছাড়ল - সমাজে অনাচার বেড়ে গেছে। পরিষ্কার করতে হবে। ঠিক যে যৌন অনাচার খুবই বেড়ে গিয়েছিল। নজর পড়ল ওই মানুষ গুলোর উপরে। ন্যাড়া- নেড়ি গুলোর উপর লেলিয়ে দিল সমাজের বাকী মানুষ গুলোকে। খুব ই মার খেল। কত যে মরল। তার ঠিক নাই। কোথায় যায় এরা? পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পরে চৈতন্য মহাপ্রভু র পার্ষদ নিত্যানন্দ জীর ছেলে বীরভদ্র জী এঁদের দীক্ষা দিলেন ঠাঁই দিলেন বৈষ্ণবীয় সহজ সাধনার পরিমণ্ডলে। বীরভদ্র এর আদেশে তাঁর শিষ্যকুল ছড়িয়ে পড়লেন অজয়ের উভয় তীরদেশ এর গ্রামগুলিতে। বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারে। সহজিয়া সাধক দের আখড়া গড়ে উঠল গ্রামে গ্রামে। পারস্পরিক সংযোগে গড়ে উঠল একটা চমৎকার সংগঠন। এখনও কিছুটা বজায় আছে। পৌষসংক্রান্তি র কেন্দুলী র জয়দেব মেলায় বাবাজী মাতাজী বাউল দের দল নানা আখড়ায় বিশ্রাম নিতে নিতে পৌঁছে যান কেন্দুলী। আবার ফেরার পথে ঐ ভাবেই। আখড়া সংগঠন গত ভাবেই ঠিক করা আছে আসা যাওয়া র পথের আস্তানা। সাতকাহনিয়ার আশ্রম ফেরার পথের প্রথম বিশ্রাম স্থল।সহজ সাধনার দীক্ষাস্থল ও বটে। হাঁ। সে ছিল বটে একদিন। সারারাত দেহতত্ত্ব এর গান। বড় বড় সাধু বাবাজী দের মাঝেমাঝে হুঙ্কার গর্জন। গাঁজার নেশায় চোখ লাল। আখড়ার ঘরে গুহ্য সাধনার দীক্ষা। সহজ যোগে যদি তার সাক্ষাৎ মেলে। বাবাজী বাউল বোষ্টম আখড়া সংগঠন আঞ্চলিক ইতিহাস কাঁকসা জংগল মহল ; প: বর্ধমান প্রণব ভট্টাচার্য।