Thursday, 26 December 2024

চলুন, গল্প করতে করতে শান্তিনিকেতনে যাই

চলুন আপনাদের সাথে গল্প করতে করতে শান্তি নিকেতনের পৌষ মেলায় যাই। এই এগারো মাইল 
নামের বাসস্ট্যান্ড থেকে আমি আপনাদের সঙ্গী হলাম। আচ্ছা বলুন এগারো মাইল নামটা বেশ অন্যরকম কি না। তাহলে এই নামের পিছনে একটা গল্প আছে। কি গল্প!  না কাঁকসা থেকে 
 ১১ মাইল দূরে এই স্থান। নাম ই হয়ে গেল  পাকাপাকি। তখন রাস্তা তৈরি হচ্ছে। কাঁকসা পানিঘর থেকে এগারো মাইল দূরে যে মোরাম রাস্তা চলে যাচ্ছে সাতকাহনিয়া ডাকবাংলো য়। এক ডাকবাংলো থেকে পরবর্তী ডাকবাংলো। ডাকবাংলোয় বিশ্রামের ব্যবস্থা আছে। আস্তাবল আছে। ঘোড়ার দানাপানির ব্যবস্থা আছে। 
সরকারি কর্মচারী দের জন্য ইংরেজ সরকারের 
ব্যবস্থা। প্রথম দিকে ডাক পরিবহনের কাজ ও চলেছে। ডাক পরিবহনের কাজের মানুষ টির জন্য আলাদা ছোট একটা কোয়ার্টার আছে। টিনের বা টালিরও ছাউনি হতে পারে। সেখানে বিশ্রামের ব্যবস্থা। মনে পড়ে গেল শের শাহ ও মোটামুটি এগারো মাইল দূরে দূরে চটি, র ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। চটি মানে যেখানে সেই বিশ্রামের ব্যবস্থা পাওয়া যাবে। আস্তাবল পাওয়া যাবে। দানাপানির ব্যবস্থা হবে। আরও কিছুরও হতে পারে। 
যাক এই তো হল এগারো মাইল কথা। 
ঐ দেখুন পূর্ব দিকে শালের জঙ্গল। আঁকাবাঁকা পিচ ঢালা পথ চলে যাচ্ছে গুসকরা বা ভেদিয়া পর্যন্ত। চমৎকার জঙ্গল পথ। 
গিয়েছেন নাকি কালিকাপুর মৌখিরা।
এই গুসকরা মোড় থেকে মাত্র চার পাঁচ কিমি দূরে ই।কালিকাপুর। সেখানের  ভগ্ন বিশাল সাত মহলা দালান। পাশাপাশি দুটি শিবমন্দির। চমৎকার টেরাকোটা অলংকরণ সমন্বিত। 
চলুন এবার চাঁদনী কে পাশে রেখে মৌখিরা যাই। 
চাঁদনী ছিল ইংরেজ সাহেবদের সাথে কালিকাপুরের জমিদার বাবুদের একসাথে আনন্দ স্ফূর্তি করার জায়গা। 
তখন জমিদার  বাবুরা, ইংরেজ দের সাথে একজোট হয়ে নীলের ব্যবসা করে বিশাল ধনী হচ্ছেন। 
মৌখিরা কে বলা যেতে পারে মন্দির নগরী। প্রাসাদ আর মন্দিরে মন্দিরে ভরা। 
শতাব্দীপ্রাচীন পুষ্পিত অশোকতরু তলে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকান। ইতিহাস আপনার মনে ফিসফিস করে কথা বলবেই। 
কল্যাণচকের এই প্রাঙ্গণে একসাথে রয়েছে অনেক গুলি মন্দির। ১২০০ বঙ্গাব্দ থেকে শুরু হয়েছে মন্দির নির্মান। এখানের বিষ্ণু মন্দিরের গায়ে চমৎকার টেরাকোটা প্যানেল আছে। 
বসুধা য় এসে বড় রাস্তা ধরে এবার উত্তর পূর্ব মুখী
সামনেই অজয়। প্রাচীন নাম যার অজাবতী বা অজমতী বা অজয়াবতী। হয়তো ঋজুপালিকা। 
অজয়ের পুরনো সেতু বয়সের ভারে ক্লান্ত হওয়ায় 
নূতন ' অজেয় সেতু ' নির্মিত হল। ১৯৬২ তে উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিধান চন্দ্র রায়। 
এই অজয়কেই  ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী কাগজে কলমে ১৮০৬ সালে বীরভূম আর বর্ধমানের প্রাকৃতিক  সীমারেখা হিসাবে গ্রহন করে। 
সেতু পার হয়ে ' বীরভূমের প্রবেশ দ্বার ' ইলামবাজার। পুরাতন বানিজ্য কেন্দ্র। নীল আর গালার পাইকারি ব্যবসা কেন্দ্র। Trade mart of importance " 
আরস্কাইন সাহেবের হাত ধরে এখানে গড়ে ওঠে 
নীল এবং গালার কুঠিবাড়ি ভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্য। বিরাট আকারে। 
ইলামবাজারে আছে তিনটি বিখ্যাত টেরাকোটা অলংকরণ শোভিত মন্দির। টেরাকোটা প্রেমী দের 
অবশ্য দ্রষ্টব্য। 
বোলপুরের রাস্তা ধরেছেন। সুখবাজার পার হয়ে শাল জঙ্গলের অপূর্ব বনপথ শুরু হল। এই জঙ্গলে র নাম চৌপাহাড়ি বা চৌপাহারি। কেন এমন নাম! 
শুনবেন। তো বেশ। হবে। না হয় 
জঙ্গল শুরু হবার মুখেই চমৎকার নৈসর্গিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে ইলামবাজার কবি জয়দেব মহাবিদ্যালয়। 
জঙ্গল পথের শেষে বনভিলা। সান্যাল বাবুর হাতে তৈরি বনলক্ষ্মী। আর এখন গড়ে উঠেছে অনেক 
লজ, রিসর্ট। চলে গেছে দক্ষিণে অজয়ের ধার পর্যন্ত। আবার দেউলী র দিকে। 
দেখেছেন দেউলী কে!  এখানে আছে পাল সেন যুগের পার্বতী মূর্তি। আছে বৈষ্ণব সাধক কবি লোচনদাসের স্মৃতিধন্য সাধন স্থল। 
বনভিলা পার হলেন রামনগরের দিঘীর পাশ দিয়ে 
কামারপাড়া। বড় রাস্তার গায়ে গড়ে উঠেছে বিরাট হোটেল। আর একপাশে আবাসনের হাই রাইজ। 
যেন শুরু হয়ে গেল বোলপুর শান্তিনিকেতন। 
কত আবাসন, লজ, স্কুল, দোকানপাট , পেশাগত শিক্ষার বিরাট প্রতিষ্ঠান। 
বাইপাস ধরে যাচ্ছেন। ঢুকলেন মাহিদাপুর হয়ে 
শ্রীনিকেতন। সুরুল। এই সুরুলের অনেক কথা। 
কালীসায়রের পাশ দিয়ে পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের পাশ দিয়ে, বিনয় ভবনের মাঠকে ডানদিকে রেখে 
শান্তিনিকেতন। 
শান্তিনিকেতনে র চারপাশে যে গড়ে উঠেছে কত 
থাকা খাওয়ার জায়গা। রিসর্ট, হোটেল ইত্যাদি। 
আছে সোনাঝুরির হাট। খোয়াই, আর কোপাই। 
শান্তিনিকেতনের আশ্রম এলাকার কথা বললাম না। 
যদি বলেন দ্বিতীয় পর্বে হবে। 
আমি এগারো মাইল থেকে শুরু করেছি। পানাগড় থেকে শুরু করলে ভালো হত। 
মেলা তো এবার জমজমাট। অনেক অনেক মানুষের ভিড়। অনেক দোকান পাতি। যেমন মেলা হয় আর কি। এবার মেলা যেন স্বমেজাজে। 

------------ ------------ ------------ ------------ ------------ 





No comments:

Post a Comment