Friday, 23 August 2019
আমার গ্রামের দশহরা উ ৎসব
অজয় এখানে বাঁক নিয়েছে পশ্চিম থেকে উত্তরে।
গাঁয়ের উত্তরে অজয়। গাঁয়ের নাম সাতকাহনিয়া। এখানকার দশহরা র ধূম জমজমাট। সে অনেক কাল আগে থেকেই। তখন নদী তে জল গড়াত।দু তিন ফুট জল।সে ছিল অন্য নদী। সে নদী আর নাই। ঠাকুর চান করাতেনদী যায়। সংগে সংগে ভক্তাদের দল। ধীবর দেয়াসী রা ঠাকুর কোলে করে নিয়ে যায়। ভর নামে তাদের। আরও কারো কারো। আর আমরা সবার আগে ছুটে ছুটে। খালি পায়ে। পায়ের তলা পুড়ে যায়। তো কি।
গিয়েই জলে ঝাঁপ। নীলবাড়ি র কলাবাগানের ঘাট থেকে শিমুল তলার ঘাট পর্যন্ত। চি ৎ সাঁতার। জল ই টেনে নিয়ে যায়। আমরা গাঁয়ের ছেলে। পুকুরে চান। কমবয়েস থেকেই জল খেয়ে খেয়ে সাঁতার শিখেছি। আমাদের আর ভয় কি। এই রকম দু তিনবার। তবে মাঝে মাঝে নদী র পশ্চিম দিকে একবার আর একবার পুব দিকে তাকাতাম।কোন দিক থেকে যে মা গঙ্গা কুমীরের মতো হাঙ্গরের না মকরের পিঠে চেপে ভেসে আসবে।
তারপর জল থেকে উঠে হালদার বাড়ি র বিরাট গামলায় চিঁড়ে প্রসাদ। মাঠে তখনও চলছে বটূ কোঁড়া ভোঁটা মাল ষষ্ঠী বাউরী দের দলের ষোট খেলা। তাল তাড়ির দম। গায়ে অসুরের শক্তি যেন। চারপাশে অনেক মানুষ। খেলা দেখছে। ওব্বো ওব্বো দিচ্ছে।
ঠাকুরের নদী স্নান পর্ব প্রায় দু ঘণ্টার। বেলা গড়ালে নদী থেকে ফেরা। পথে নানা জায়গায় থামা। মনস্কামনা পূরণের জন্য পথের উপর কেউ হত্যে দিয়ে পড়ে আছে।
সে মায়ের জবাব ভর এসেছে যে দেয়াসী র তার মুখ থেকে না শুনে পথ ই ছাড়েনা। আরও জোরে ঢাক ঢোল কাঁসর বাজে। ফুল পড়ে।
তারপর সেই বৈরাগি বটতলায়। সেখানেই তো মেলা। বহু লোকের ভীড়। দু চারটে দোকান।
এখানে বাণ ফুঁড়েছে একদল ভক্তা। তাদের তদারকি তদ্বির করছে ওস্তাদেরা।
মূল মন্দিরের সামনে আটচালায় চলছে মনসা মঙ্গলের পালা গান। দ্বিজ বংশী দাস ; ক্ষেমানন্দ দের পদ।
এখন বনকাটি গ্রামের সন্তোষ চক্রবর্তী আর তার দল ভালো গান করেন। আগে ডাঙ্গাল গ্রামের বৈরাগি দের দল গাইত। আগের রাত থেকে গান আরম্ভ হয়।
কমপক্ষে বারো চৌদ্দ বা কোনবার তার ও বেশী ছাগ বলি হয়। অনেকের মানত থাকে। আশেপাশে র পাঁচ সাতটা গ্রাম থেকে মানুষ জন আসে।মেয়ে রাই যে বেশী। ওরা না এলে কি মেলা পুজো কিছু জমে।
মেলা তলা জমে ওঠে নানা পসরায়।
একদিনের আয়োজন উৎসব পুজো। শেষ বিকেল পর্যন্ত চলে। রাতে সব ফাঁকা। আবার
কখনও কখনও চেষ্টা হয়েছে দু দিনের পরব করার। যাত্রা গান। ফাংশান এসব করার। পয়সা র অভাব। গরীব মানুষের গাঁ। কে দেবে এত পয়সা। তবে এবার কমবয়সী ছেলেরা উদ্যোগ নিয়েছে। নানা গাঁ য়ে ঘুরে চাঁদা আদায় করেছে। কাল রাতে জলসা হবে। এবার বাড়তি ঢাক ঢোল আনিয়েছে। নারানপুর উদয়পুরের ঢাক মাজুরিয়া র ঢাক ঢোল এসেছে। অযোধ্যা গ্রামের বাগদী পাড়ার দক্ষ ছেলেরা বাণ ফোঁড়ার আয়োজন করেছে।
আর এইসব মানুষ জনের আপ্যায়ন খাওয়া দাওয়া র দিক দেখতে তো লোক চাই। এমনি এমনি তো আর সব কিছু হয়ে যাবেনা।
সে সব দেখছে মাধব মধু কেষ্ট বাউরী রা।
আখড়ায় তার আয়েশ জমজমাট।
----------------৷ ৷ -------------------------------------
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment