।। আরস্কাইন সাহেব এবং ইলামবাজার।।
( এক খোলা চিঠি)
আচ্ছা সাহেব তুমি কি রকম ছেলে ছিলে গো।
সতেরো কি আঠারো বছর বয়েস।
এই যে রকম বলেন অনেকে ; বাউণ্ডুলে ; বাপে খেদানো মায়ে তাড়ানো সেই রকমের ছেলে। ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর প্রথম দিকে যারা এদেশে এসেছিল তারা নাকি ঐ ধরনের সব ছেলে।
বিদেয় হলেই বাঁচি। এই রকম না কি ছিল মনোভাব তোমার
দেশের ও।
নীলকর সাহেব দের অত্যাচারের অনেক কথা আছে।
তুমি কি ' নীল দর্পণ ' এর কথা কি শুনেছিলে?
কি অত্যাচার না করেছে তোমার দেশের নীলকর সাহেব রা।
চাষীদের ' আড়ং ধোলাই ' দিয়েছে। দাদন উশুল না হলেই।
তোমার বা চীপ সাহেবের সম্বন্ধে কিন্তু - তেমন কথা তো নাই।
তোমাদের সঙ্গে স্থানীয় মানুষ দের ভালো সম্পর্ক ছিল।
আর জমিদার রা প্রভাবশালী তাদের কে সঙ্গে তো চাই ই । ভালো ব্যবসা করতে হলে এঁদের সাহায্য চাই। স্থানীয় ব্যাপার স্যাপার এরাই দেখবে।
আর তাদের অনুগত নায়েব ; গোমস্তা ; দালাল এই ধরনের লোক চাই। কলকাতার দর দামের ওঠানামা ; ভিনদেশী জাহাজের আনাগোনা এসবের উপর নজরদারি করার লোকগুলিকে চাই। কত দেশীয় বাবুরা রয়েছেন।
হৌসে হৌসে ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করে ভালোই রোজগার করেছেন।
ইলামবাজারে নীল আর গালা ব্যবসার উদ্বোধন তোমার হাতেই। হাণ্টার সাহেব বলছেন। ছিয়াত্তর এর মন্বন্তরে মরে
যাওয়া অর্থনীতি কিছুটা হলেও তোমার কুঠিবাড়ি ভিত্তিক
এই বিরাট আকারের ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য প্রাণ ফিরে পেয়েছিল।
ইলামবাজার বিখ্যাত গঞ্জ হয়ে উঠল। যার এলেম আছে। "Trade Mart of importance " ।
দাম আছে। যেখানকার বাজারে এলেমদার লোকেরা ঘুরে বেড়ায়। নীলামের হাটে কেনা বেচা করে। তখন তুলাপট্টি তে বসত নীলামের বাজার।
তুমি অন্যদের থেকে চাষি দের বেশী টাকা দাদন দিতে নীলের চাষের জন্যে।
যে জমিতে চাষ হয়না বা পড়ে থাকে সেই জমিতেই মূলত নীল চাষ
করিয়েছো। স্থানীয় ভূস্বামী দের দিয়েই।
তোমার অধীনে প্রায় ১৫০০০ বিঘা জমিতে নীল চাষ হত।
এতগুলো কারখানা।
গালার ব্যবসা জমজমাট। এক মনের জন্য প্রায় ১০০০০ টাকা। কম কথা নয়।
অনেক টাকা তখনকার দিনে রোজগার করেছো।
আবার শুয়েও আছো এই ইলামবাজারে র মাটির নীচে। দেশে আর ফেরা হয়নি। হবে না তাও বুঝি
জানতে - দেশ ছাড়ার সময়
ইলামবাজার এর জন্য তুমি কি করেছিলে? কিছু উন্নয়ন মূলক কাজ।
যেমন চীপ সাহেব চারটি ভালো রাস্তা বানিয়েছিলেন।
অবশ্যই ব্যবসায়িক স্বার্থে। কিন্তু মানুষের তো উপকার হল।
ইলামবাজার বোলপুর রাস্তার দু পাশে প্রচুর গাছ লাগানো
সে কি তোমাদের উদ্যোগে!
অনেক আম গাছ লাগিয়েছিলে।
ইলামবাজার এর পুবে পশ্চিমে বিশাল আমবাগান।
আমাদের স্থানীয় অনেক বাবুরাই তোমার সাথে ব্যবসা করে
বিশাল বিরাট ধনী হয়েছেন।
তাঁরা মন্দির বানিয়েছেন ; পিতলের রথ বানিয়েছেন ; পুকুর
কাটিয়েছেন
আমি তো হিসেব করে দেখলাম এখনকার যাঁরা বড়লোক মানে বনেদী বড়লোক যাদের বলে আর কি -
তাঁরা বড়লোক হয়েছেন তোমার সাথে নীল গালা র কাপড়ের
ব্যবসা করেই। সেই সময়ের জমানো পয়সায় যাঁদের
উত্তর পুরুষ রা পেরেছেন এখন ভালো ব্যবসায়ী।
কিন্তু কেউ স্বীকার করেনা জানো।
এমনকি নীল বলতে চায়না বলে রঙের ব্যবসা করত আমাদের পূর্ব পুরুষ রা।
বুঝলে ; তুমি সাহেব ইলামবাজারের জন্য কিন্তু অনেক কিছু করতে পারতে। আমার মনে হয় -
আচ্ছা সেই সময়কালে আজ থেকে প্রায় আড়াইশো বছর আগে কি কি কাজ করা যেতে পারত সে টা ও তো ভাববার বিষয় -
ভেবে দেখা যাক।
না কি বল।
------------ ------------ ------------ ------------ ( পরের পর্বে। চলবে)
সমাধিস্থলের ছবি। সত্যশ্রী উকিল দার সৌজন্যে।
প্রথম পর্বের লিংক। কমেন্ট বক্সে