Tuesday, 12 April 2022

জঙ্গল মহলের এক আদিবাসী পাড়া

এক আদিবাসী পাড়া। সাঁওতাল। 
মাটির বাড়ির দেওয়াল এর নীচের দিকের বাঁধুনি 
এবং মহিলার চেহারার বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করবেন। 
 ফর্সা ; নীল চোখের মণি। 
 রক্ত বড় শক্ত জিনিস 
 রক্ত কণিকায় ভাসে সুদূর অতীত 
 নিজেদের বাড়িতে ই একটা ছোট্ট ঘরে এঁরা একটা 
 চার্চ বানিয়েছেন। খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছেন। 
 মাত্র দশ বারো ঘর মানুষ। ছোট্ট এক পাড়া। 
 জঙ্গলে র মধ্যে।

মন্দির ময় বনকাটি অযোধ্যা। ৪ নং প্লাটফর্ম ওয়েব ম্যাগ এ প্রকাশিত

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2659883444142857&id=100003636821328

আমাদের প্রতিবেশী এলাকা অমরপুর - আদুরিয়া র অমরপুরের কর্মকার শিল্পী দের কাজ

একদিন তাঁরা ছিলেন খুবই বিখ্যাত। 
 অমরপুর - আদুরিয়া প্রাচীন জনপদ। 
 এখানের পিতল কাঁসার কর্মকার শিল্পী রা 
 তাঁদের কাজের জন্য ছিলেন সুখ্যাত। 
  তৈজস পত্র ছাড়াও তাঁরা তাঁদের শিল্প দক্ষতা র 
  খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল নানা দিকে।।  
  উখরার জমিদার হাণ্ডা বাবুদের পিতলের রথ 
নির্মানের প্রধান শিল্পী ছিলেন এখানকার মানুষ। 

ওরে রাঢ় মাটির আঁকড়

ওরে কাঁকর পাথর লাল রাঢ় মাটির 
আঁকড় 
তোকে কে আর চিনবে বল 
এই আমরা সব পাড়াগেঁয়ে লোক গুলো ছাড়া 
বেশ ফুটেছিস এক গাছ ডালপালা জূড়ে 
 তোর পাকা আঁশটে গন্ধের ফল গুলো 
 আমাদের কাছে ছোট বেলার আঙুর ছিল 
 আপেল আঙুর এসব আমরা জানতাম না 
  আম আতা কুল বেল তাল আঞ্জির এসবই ছিল 
  তা বলে কিনে খাওয়ার চল ছিলনা 
  পেড়ে  কুড়িয়ে সব খেতাম আমরা 
  আচ্ছা আঁকড়  এই শুকনো কঠিন লাল মোরাম 
 মাটি থেকে রস টেনে নিয়ে কিভাবে বাঁচিস 
  ঠিক তাই শক্ত মাটির মানুষের মতো  তুই ও খুব
   শক্ত 
  কাঠ তোর হলুদ        একেবারে হলুদ  এলা 
   মাটির সাথে মিলিয়ে     রঙ রে 
  গা তোর ফাটা ফাটা        আকাঁড়া চালের মতো ই 
   আমার ছোট বেলায় মনে হত কেমন যেন ম্যাপ
    আঁকা আছে   
    বাঁচিস তো অনেক দিন   কি করে যে বাঁচিস 
    ওরে  রৌঢ় দিশম  বজ্রভূমি সুহ্মভূমি লাঢ় দেশের 
     আঁকড়

 রাজনগর। বীরভূম।  পশু হাটের বিস্তৃত প্রান্তরে 
 দাঁড়িয়ে থাকা এক অতি প্রাচীন আঁকড় গাছ। 
 তার প্রাচীণত্ব ধরা আছে তার গাত্র ত্বকে 
 দেখুন 
  অনেক ঘটনার সাক্ষী এই গাছ 
 আর রাজনগর এর কথা  সে তো ফুরাবার নয়

আরস্কাইন সাহেব এবং ইলামবাজার। দ্বিতীয় পর্ব

।।  আরস্কাইন সাহেব  এবং ইলামবাজার।।
( এক খোলা চিঠি) 
আচ্ছা সাহেব তুমি কি রকম ছেলে ছিলে গো।
সতেরো কি আঠারো বছর বয়েস।
এই যে রকম বলেন অনেকে ; বাউণ্ডুলে ; বাপে খেদানো মায়ে তাড়ানো সেই রকমের ছেলে। ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর প্রথম দিকে যারা এদেশে এসেছিল তারা নাকি ঐ ধরনের সব ছেলে।
বিদেয় হলেই বাঁচি। এই রকম না কি ছিল মনোভাব তোমার
দেশের ও।
  নীলকর সাহেব দের অত্যাচারের অনেক কথা আছে।
   তুমি কি ' নীল দর্পণ ' এর কথা কি শুনেছিলে? 
  কি অত্যাচার না করেছে তোমার দেশের নীলকর সাহেব রা।
  চাষীদের ' আড়ং ধোলাই ' দিয়েছে। দাদন উশুল না হলেই। 
  তোমার বা চীপ সাহেবের সম্বন্ধে কিন্তু   - তেমন      কথা তো নাই।
  তোমাদের সঙ্গে স্থানীয় মানুষ দের ভালো সম্পর্ক ছিল।
আর জমিদার রা প্রভাবশালী তাদের কে  সঙ্গে তো  চাই ই । ভালো ব্যবসা করতে হলে এঁদের সাহায্য চাই। স্থানীয় ব্যাপার স্যাপার এরাই দেখবে। 
আর তাদের অনুগত নায়েব ; গোমস্তা ; দালাল এই ধরনের লোক  চাই। কলকাতার দর দামের ওঠানামা ; ভিনদেশী জাহাজের আনাগোনা এসবের উপর নজরদারি করার লোকগুলিকে  চাই। কত দেশীয় বাবুরা রয়েছেন।
হৌসে হৌসে ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করে  ভালোই রোজগার করেছেন।
ইলামবাজারে নীল আর গালা ব্যবসার উদ্বোধন তোমার হাতেই। হাণ্টার সাহেব বলছেন। ছিয়াত্তর এর মন্বন্তরে মরে
যাওয়া অর্থনীতি কিছুটা হলেও তোমার কুঠিবাড়ি ভিত্তিক
এই বিরাট আকারের ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। 
ইলামবাজার বিখ্যাত গঞ্জ হয়ে উঠল। যার এলেম আছে। "Trade Mart of importance " ।
দাম আছে। যেখানকার বাজারে এলেমদার লোকেরা ঘুরে বেড়ায়। নীলামের হাটে কেনা বেচা করে। তখন তুলাপট্টি তে বসত নীলামের বাজার।
তুমি অন্যদের থেকে চাষি দের বেশী টাকা দাদন দিতে নীলের চাষের জন্যে। 
যে জমিতে চাষ হয়না বা পড়ে থাকে সেই জমিতেই     মূলত নীল চাষ 
করিয়েছো। স্থানীয় ভূস্বামী দের দিয়েই। 
তোমার অধীনে প্রায় ১৫০০০ বিঘা জমিতে নীল চাষ হত।
এতগুলো কারখানা।
গালার ব্যবসা জমজমাট। এক মনের জন্য প্রায় ১০০০০ টাকা।  কম কথা নয়।
অনেক টাকা তখনকার দিনে রোজগার করেছো।
আবার শুয়েও আছো এই ইলামবাজারে র মাটির নীচে। দেশে আর ফেরা হয়নি। হবে না তাও বুঝি 
জানতে - দেশ ছাড়ার সময় 
ইলামবাজার এর জন্য তুমি কি করেছিলে?  কিছু উন্নয়ন মূলক কাজ।
যেমন চীপ সাহেব  চারটি ভালো রাস্তা বানিয়েছিলেন।
অবশ্যই ব্যবসায়িক স্বার্থে। কিন্তু মানুষের তো উপকার হল।
ইলামবাজার বোলপুর রাস্তার দু পাশে প্রচুর গাছ লাগানো
সে কি তোমাদের উদ্যোগে!
অনেক আম গাছ লাগিয়েছিলে।
ইলামবাজার এর পুবে পশ্চিমে বিশাল আমবাগান।
আমাদের স্থানীয় অনেক বাবুরাই তোমার সাথে ব্যবসা করে
বিশাল বিরাট ধনী হয়েছেন।
তাঁরা মন্দির বানিয়েছেন ; পিতলের রথ বানিয়েছেন ; পুকুর
কাটিয়েছেন
আমি তো হিসেব করে দেখলাম এখনকার যাঁরা বড়লোক মানে বনেদী বড়লোক যাদের বলে আর কি - 
তাঁরা বড়লোক হয়েছেন তোমার সাথে নীল গালা র কাপড়ের
ব্যবসা করেই। সেই সময়ের জমানো পয়সায়  যাঁদের
উত্তর পুরুষ রা পেরেছেন  এখন ভালো ব্যবসায়ী।
কিন্তু কেউ স্বীকার করেনা জানো।
এমনকি নীল বলতে চায়না বলে রঙের ব্যবসা করত আমাদের পূর্ব পুরুষ রা।
বুঝলে ; তুমি সাহেব ইলামবাজারের জন্য কিন্তু  অনেক কিছু করতে পারতে। আমার মনে হয় - 
আচ্ছা  সেই সময়কালে  আজ থেকে প্রায় আড়াইশো বছর আগে  কি কি কাজ করা যেতে পারত  সে টা ও তো ভাববার বিষয় - 
ভেবে দেখা যাক। 
না কি বল।
------------ ------------ ------------ ------------ ( পরের পর্বে। চলবে)
সমাধিস্থলের ছবি। সত্যশ্রী উকিল দার সৌজন্যে।
প্রথম পর্বের লিংক।  কমেন্ট বক্সে

আরস্কাইন সাহেব এবং ইলামবাজার । শুরু

এক ঘাট থেকে আরেক ঘাট 
সাতকাহনিয়া র শিমূল তলার ঘাট থেকে ইলামবাজার খয়েরবুনির শিমূল তলার ঘাট 
বনকাটি র গড় ঘাটা থেকে পাষাণ চণ্ডী তলার ঘাট হয়ে  নৌকো আসছে। গঙ্গাপুর এর ঘাট ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে  শিমূল তলার " সাহেব ঘাটে। "
 নামই হয়ে গিয়েছিল   ' সাহেব ঘাট। '
সব মাল     ওখানে নামছে। 
গোরুগাড়ি ; মোষের গাড়ি করে মাল চলে যাচ্ছে 
 সাহেবের কুঠিবাড়ি র       পাশের গুদামে 
 পশ্চিমে র জঙ্গল ভূমির নাম ই তখন " লা - মহল "
 লা মানে লাক্ষা বা গালা। 
 সাহেবের বিরাট কারবার। 
 নীল ; গালা র রমরমা ব্যবসা। 
 আমবাগানের ভিতরে বাংলো বাড়ি থেকে সাহেব গিন্নী দেখেন
 সার দিয়ে গোরু মহিষের গাড়ি চলেছে 
 মনে বড় আনন্দ। 
 আরস্কাইন সাহেব ইলামবাজার কেই    ঘরবাড়ি 
 ব্যবসা কেন্দ্র করেছেন। 
 এখান ছেড়ে কোথাও   আর যাননি। 
 কোথায় জন্ম আর কোথায় মৃত্যু 
 তাঁর পরিবারের নিজস্ব সমাধি স্থলে সাতটি সমাধি 
 ছিল। চারদিকে নীচু ঢেউ খেলানো পাঁচিল 
 সমাধি গাত্রে সাদা মার্বেল ফলকে লেখা 
 নাম  জন্ম  ইংল্যান্ড এর কোনও  এক  শায়ারে 
 আর মৃত্যু  ইলামবাজারে। 
 আমি ভাবতাম   সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে 
  "কোথায় জন্ম আর কোথায় মৃত্যু "
  আচ্ছা একটা আঠারো  উনিশ বছর বয়সের 
   ছেলে 
  দেশ  ছাড়ার  সময় ই কি ভেবেছিল 
   এই কি  শেষ!   আর কখনো দেশে ফেরা হবে না

 সে সমাধিস্থল আজ আর কেউ খুঁজে পাবেনা 
 সমাধির সাদা মার্বেল ফলক কবেই চুরি হয়ে গেছে 

 বিরাট সে চারদিক খোলা বারান্দা ওয়ালা  ডাকবাংলো     কুঠিবাড়ি র শেষ  ইঁটটিও খুলে নেওয়া হয়েছে।

ডেভিড আরস্কাইন সাহেবের সমাধি স্থলের ছবি 
 সত্যশ্রী উকিল দা র সৌজন্যে প্রাপ্ত