।। পিয়াল কথা।।
------------ ------------ ------------- ------------ ------------ ------------
পিয়াল।
একলা পিয়াল! তাই কি হয়
পিয়াল বললেই এসে যায় শালের কথা।
শাল - পিয়াল।
আমরা জোড়ে বলতেই ভালোবাসি।
পিয়ালের ডালে ডালে মুকুল মঞ্জরি।
সে দিন গড় জঙ্গল এ ঘুরছিলাম। কিছু দেখলাম।
চার দিকেই তো জঙ্গল।।
জঙ্গল দেশের মানুষ। ছোট থেকেই জঙ্গলে ঘোরাঘুরি।
জঙ্গলের আলাদা রূপ আছে। মায়া আছে। টান আছে।
যে জানে সে ই জানে।
ইলামবাজার থেকে বোলপুরের পথে ' চৌপাহারী 'জঙ্গল।
শুকবাজার থেকে বনভিলা পর্যন্ত।
অনেক পিয়াল গাছ ছিল এই জঙ্গলে। যেমন ছিল অনেক মহুয়া। পিচ রাস্তার উপরে ঝরে পড়ে থাকত মহুয়া র ফুল।
কাঁচা খেয়ে দেখেছেন না কি। কয়েকটা খাবার পর যেন মনে হবে মাথা ঘোরঘোর। মহুয়া র নেশা।
পাকা পিয়াল। সামান্য টক মিষ্টি ছোট্ট ছোট্ট ফল।
ইলামবাজার হাই স্কুল থেকে শুক্রবারের এক ঘণ্টা টিফিনের
দিনে সাইকেল নিয়ে দে ছুট বনে। পিয়াল তোলার মজা।এখন যেখানে কলেজ বিল্ডিং তার পিছনেই ছিল বেশ কয়েকটা গাছ।
ছোট্ট ছোট্ট গাছে ই অনেক ফল।
আদিবাসী মেয়েরা ও তুলতে আসে। শালপাতার ঠোলায়
হাটে বেচে। আমারা যারা তুলতে যেতাম - আমাদিকেও দিত।
খুব ভালো মানুষ তো ওরা।
এগারো মাই ল এর গুসকরা বাসস্ট্যান্ডে থেকে যে রাস্তা চলে
গেছে পূর্বে সেই রাস্তার দুধারেই জঙ্গল।
উত্তর দিকের জঙ্গল যার নাম ' নীলকুঠি র জঙ্গল '। বুঝতেই
পারছেন একদিন নীলকুঠি ছিল। সাহেব দের।
সেখানে ছিল অনেক পিয়াল গাছ।
কালিকাপুর এর জঙ্গলে ও। রাস্তার ধারেও।
দক্ষিণে জামডোবা ; পরেশ ডাঙ্গা র জঙ্গলে কাঁকর চাতালের
উপরে ছিল অনেক গাছ। অনেক কেন্দু গাছ ও। পাকা কেন্দু
কি সুন্দর খেতে।
আমাদের গ্রাম থেকে ডাঙ্গাল বসুধা যাবার পথের ধারে
যে জঙ্গল ভূমি সেখানেও ছিল লাল মোরাম মাটির উপরে
কত পিয়ালের গাছ।
আদুরিয়ার জঙ্গল। যে পথ চলে গেছে জালিকান্দর হয়ে গেঁড়াই পর্যন্ত সেই পথের দুধারের জঙ্গলে ও কত পিয়াল গাছ।
এই জঙ্গলে র ভিতরে আছে ছবির মতো আদিবাসী পল্লী
আমজারুলিয়া। ওখানের মেয়েরা তুলছিল। সেবার চাইলাম।
দিল হাত ভরে। আগে ঝুড়ি ভর্তি পাকা পিয়াল নিয়ে হাটে বেচতে আসত আদিবাসী মহিলারা। শাল পাতার ঠোঙ্গা য় দিত। তখন এসব খাওয়ার চল ছিল। তখন তো আর কিটক্যাট ;কুড়কুড়ে র ; লে ' জ এর যুগ নয়। বাদ দিন সেসব কথা।
আবার গেঁড়াই থেকে যে রাস্তা চলে গেছে জঙ্গলে র ভিতর দিয়ে ভাতকুণ্ডা হয়ে মানকরের দিকে সেই জঙ্গলে ও অনেক
পিয়াল গাছ।
পানাগড় এর পথে জঙ্গল শুরু রঘুনাথপুর থেকে। গাঁড়াদহ ; ধোবারু র জঙ্গলে - যার আবার নাম ' সাতকাটার জঙ্গল '।
সেখানে ও ছিল কত পিয়ালের গাছ।
মলানদিঘী থেকে শিবপুর রাস্তাটা চলে গেছে জঙ্গলে র ভিতর দিয়ে সেখানেও আছে অনেক পিয়াল গাছ। আছে অনেক মোরাম চাতাল ; উঁচু নীচু ঢিবি। খোয়াই।
আবার মলানদিঘী থেকে রঘুনাথপুর যে রাস্তা সেই রাস্তার
চুয়া - আন্ধারশুলী - জামডোবার জঙ্গলে আন্ধারশুলীর দিকে আছে বেশ কিছু পিয়াল গাছ।
পশ্চিমে র মালভূমি র পূর্ব প্রান্তীয় বিস্তৃতি রাঢ়ের এই রাঙা
কাঁকর বা মোরাম ; ল্যাটেরাইট মাটি। এই মাটির প্রধান বৃক্ষ
শাল। আমাদের প্রাচীণ গ্রন্থাদি তে শাল কে ' মহাবৃক্ষ ' বলা
হয়েছে। মহাবৃক্ষ রূপ সেই সব শাল ছিল দুর্গাপুর এলাকায়।
কিছু তার নমুনা এখনও আছে।
হাণ্টার সাহেবের 'Annals of Rural Bengal " এ এই বনভূমি র উল্লেখ আছে। মাত্র দুশো বছর আগে গুসকরা থেকে বরাকর পর্যন্ত এই বনভূমি বিস্তৃত ছিল। সে ছিল মহা অরণ্য।
কোথাও কোথাও জঙ্গল এত ঘণ যে দিনের আলো সেখানে
প্রবেশ করতে পারতনা। হিংস্র শ্বাপদের দল অবাধে সেখানে
বিচরন করত।
সেদিন যা ছিল আজ আর তা নেই। তবু আছে সেই জঙ্গল ভূমি। পূর্ব বর্ধমান জেলার আউসগ্রাম আর পশ্চিমে কাঁকসা থানা এলাকার আর কিছুটা দুর্গাপুর - ফরিদপুর এর জঙ্গল ভূমি ই বর্ধমানের জঙ্গল মহল।
পিয়াল নিয়ে বলতে বলতে কতদূরে চলে এসেছি বলুন দেখি।
আর কথা বাড়াবনা। কত রকমের গাছপালা যে ছিল এই
বনভূমিতে - কত লতা গুল্ম ওষধি তা বলে শেষ করা যাবেনা।
আর বলবে ই বা কে? জঙ্গলে র ধারের গ্রামগুলির সেই সব প্রাচীণ মানুষেরা আর নেই। প্রবীন আদিবাসী মানুষেরা নেই।
আমরা তাদের কাছ থেকে শিখবার কোন চেষ্টা করলামই না।
আমার স্মৃতি তে মাঝে মাঝে হারানো দিন উঁকি দেয়।
সে তো একটা সময় আসেই যখন মানুষ একটু ' ডাউন মেমোরি লেন ' ধরে হাঁটে। সেদিন পিয়ালের বকুল দেখে
মনে এলো কত কথা। কত স্মৃতি ভিড় করে এলো।
সেই পিয়াল গাছটি কে আমি আজও ভুলতে পারিনা।
ছোট বেলায় তার ডালে চড়েছি। নীচু ডালপালা মেলা গাছ।
গাছটি ছিল আমাদের গ্রামের মোরাম রাস্তার ধারে। যেখানে
গ্রাম থেকে বেরিয়ে মাটির রাস্তাটা পাকা মোরাম রাস্তায় মিশেছে। ঠিক সেই খান টা তে।
সেই গাছ টি ও রইলনা।
এত ক্ষিদে ; এত লোভ মানুষের। এত নির্মম। -
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ শেষ করি
No comments:
Post a Comment