Monday, 28 February 2022

বই চাই। বই। তুমি কেন নাই হে

জানি আমরা 
 তবু বলি 
 বই করুন  বই করুন 
 বন্ধুদের সহৃদয় আহ্বান 
 আপনার বই চাই 
 ভাবছিলাম বলা হয়     বই মানে থেকে যাওয়া 
 ভুলে যাওয়াই যেখানে অতি বড়  স্বাভাবিক 
 সেখানে 
 থেকে যাওয়া              মনে জমে ঘোলা মেঘ 
 সে যোগ্যতা আছে কিনা      কি জানি কেমন 
 ভয় জাগে 
  যাইহোক 
 আবাল্যের ভালোবাসা ছবি 
  ইলামবাজার হাটতলার মন্দিরের গায়ের
 অলংকার দেখে হাট করতে ভুলে যাই 
  কিভাবে যে মানুষ এত সুন্দর তৈরী করতে পারে 
  যাক সে কথা        সে কোন যুবক বেলার প্রারম্ভ       থেকে               কতো ছোট ছোট কাগজে লিখেছি 
 এই মাটি মানুষের কথা 
 কেউ কোন দাম দেয়নি            বুঝলেন 
  আবারও     যাক সে কথা 
 এলাম এখানে    এই মাধ্যমে   অন্তত স্মার্টফোন টা 
 দেখে গেলাম   ওহ  আমাদের  ছাত্রাবস্থায় যদি পেতাম         কলেজ জীবনে আমার খুব কাজে লাগতো 
 কেমেস্ট্রী অনার্স কি আর স্পেশাল টিউশন ছাড়া হয়        বলুন আপনারাই বলুন 
 আমি নিতে পারিনি         পয়সার অভাবে  তাহলে আর 
 কি হবে 
 মাঝ খানটা পুরো বাদ দিলাম            অনেক সময় হয়তো বৃথাই গেল 
 বিজ্ঞান নিশ্চয়ই এগুবে              অভাবনীয় উন্নতি ঘটবে 
 ন্যানো টেকনোলজি সব কিছু বদলে দেবে 

 অনেক অনেক দিন পরে এই আজকের সময়ে 
 
 এই স্মার্টফোনে  ফেসবুক কে পেলাম 
 এখানেই শুরু হল নতুন পথ চলা
 আমার ছাত্র দের কাছেই শিখলাম   বললাম 
 বাবা  এবার তোরা আমাকে শেখা 
এখনও কোন দরকারে ওরাই ভরসা 
 তো  এখানে তো কম লেখা লিখিনি
 কত অখ্যাত গাঁয়ের  কত অন্যরকম মানুষের 
 কথা আপনাদের শোনালাম          শোনালাম  
 গড় জঙ্গল এর কথা         ইছাই ঘোষের কথা 
 অজয়ের এপার ওপার       এর কত কত কথা 
 আবার এই সেই দিন  শোনালাম         পিয়াল কথা 
 সামান্য পিয়াল কে কেন্দ্র করে গোটা জঙ্গল ভূমির 
 কথা আপনারা শুনলেন 
 এখানে আপনারা   আমার লেখার পাঠকেরা 
 তাঁদের আমি ভিতর থেকে শ্রদ্ধা জানাই 
 আমার ইচ্ছা হয় যদি ছাপতে হয় তো তাঁরা 
 যে সব সুচিন্তিত  মন্তব্য করেছেন  সেসব সমেতই 
 যদি ছাপা হয় 
  আমি প্রাণিত হয়েছি  আপনাদের  মন্তব্য সমূহে 
  আনন্দ পেয়েছি    এই মাধ্যমই পরিচয় দিয়েছে 
  পরামর্শ দেবেন     এখানেই থাকল ধরুন  আমার সব লেখালেখি  তা ভবিষ্যতের জন্য থাকবে কি না   বা কিভাবে এখানে স্থায়ী ভাবে 
 থাকতে পারে   যুবক বন্ধুরা একটু বলবেন ভাই 
 আমার ব্লগ আছে  
 মাটিরপ্রদীপ। আঞ্চলিক ইতিহাস। প্রণব ভট্টাচার্য এর লেখালেখি  বলে একটা পেজ আছে  ব্লগই 
 আমার সংগ্রহ  কম নয় 
 ইউ টিউব এর কথা কেউ কেউ বলেছিলেন 
 আমি কি আর এত হ্যাঁকপ্যাক পারি 
 পারবনা ভেবে নিয়ে ই  ক্ষ্যান্ত 
 এই আপনা দিকে প্রতিদিন কথা কাহিনী শোনাচ্ছি 
 আপনারা পড়ছেন   আনন্দ পেলে মন্তব্য করছেন 
 এটা তো আমি প্রিন্ট মিডিয়া য় পাবোনা 
 সেখানে ও তো এখন আমার কম লেখা 
 বের হয়নি 
 সে না হয় একদিন তার তালিকা দেওয়া যাবে 
 আমি খুঁজে হয়রান 
 এটা এখন একটা কাজ বটে 
কি আর করা যাবে   কি যেন বলে ঐ 
 ডকুমেন্টেসন 

আমার তো হাজার হাজার ছবির সংগ্রহ 
 কম ছবি আপনাদের দেখাই নি সেই ২০১২ 
 থেকেই প্রায়   এতটা পিছিয়ে কি যাওয়া যাবে 
 কি জানি   বন্ধুরা বলবেন 
 শত শত ভগ্ন মন্দির  মন্দির টেরাকোটা 
 সেই সব ছবি ছাপাবার মুরোদ আমার নেই 
 আর্ট প্লেটে কে যে ছাপে 
  তাহলে এখানেই থাকল  থাকবে 
  সাধারণ মানুষ কে লক্ষ্য করে একেবারে 
 শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি পুস্তিকা করেছিলাম 
 ১০-১৫ টাকা দাম দিয়ে সাধারণ মানুষ যাতে কিনে 
 পড়তে পারেন   নিজের এলাকার মাটি মানুষের কথা  নিজের মাটির ইতিহাস 
 সব ফুরিয়ে গেছে 
 বইমেলা শুরু হল  বাঙ্গালী র  চৌদ্দ নং পার্বন    আরেক উৎসব 
 চারদিকে বই  সবারই বই বেরুচ্ছে 
 কোন এক বন্ধু জানতে চাইছেন এই বই মেলাতেই বই বের করার এতো ধূম কেন 
 আরে এত বড় একটা মঞ্চ  
 আর আমি নেই তাই হয়   আমিও আছি এই দ্যাখো

পিতলের রথ। বনকাটি। অতুল ঐশ্বর্য মণ্ডিত

পিতলের পাতের উপর 
 কি অসামান্য অঙ্কন। 
 এনগ্রেভিং। তার লাইন। 
 শিল্প সুষমা। অঙ্গসংস্থান। 
 এক্সপ্রেশন। দেহ সুষমা। 
  নানা বিচিত্র বিষয়ের সমাহার 
 অতুলনীয়। 
 বনকাটি। প বর্ধমান। থানা কাঁকসা।
 পানাগড় মোরগ্রাম হাইওয়ে র 
 উপর এগারো মাই ল বাসস্ট্যান্ডে নামুন 
 টোটো নিন। সোজা বনকাটি। 
 নিজের চোখে না দেখলে 
 বিশ্বাস করা শক্ত
 সে যে  কি অসামান্য পুরাকীর্তি।

পোড়ামাটির ঐশ্বর্য

পোড়ামাটি র ঐশ্বর্য
কি অসামান্য শিল্প নৈপুণ্যে 
 তাঁরা 
 আমাদের এই বাঙ্গলার সূত্রধর গণ 
 সৃষ্টি করেছিলেন এই নয়ন মনোহর 
 মন্দির অলংকরণ 
 তাঁদের নাম কোথাও নাই 
 একদিন তাঁরা ছিলেন 
 তাঁদের উদ্দেশ্যে আমার প্রণতি

Wednesday, 16 February 2022

পিয়াল কথা। শাল পিয়ালের গান

।। পিয়াল কথা।।
------------ ------------ ------------- ------------ ------------ ------------
পিয়াল। 
একলা পিয়াল!  তাই কি হয়
পিয়াল বললেই এসে যায় শালের কথা।
শাল - পিয়াল।
আমরা জোড়ে বলতেই ভালোবাসি।
পিয়ালের ডালে ডালে মুকুল মঞ্জরি।
সে দিন গড় জঙ্গল এ ঘুরছিলাম। কিছু দেখলাম।
চার দিকেই তো জঙ্গল।। 
জঙ্গল দেশের মানুষ। ছোট থেকেই জঙ্গলে ঘোরাঘুরি।
জঙ্গলের আলাদা রূপ আছে। মায়া আছে। টান আছে।
যে জানে সে ই জানে।
ইলামবাজার থেকে বোলপুরের পথে ' চৌপাহারী 'জঙ্গল।
শুকবাজার থেকে বনভিলা পর্যন্ত।
অনেক পিয়াল গাছ ছিল এই জঙ্গলে। যেমন ছিল অনেক মহুয়া। পিচ রাস্তার উপরে ঝরে পড়ে থাকত মহুয়া র ফুল।
কাঁচা খেয়ে দেখেছেন না কি। কয়েকটা খাবার পর যেন মনে হবে মাথা ঘোরঘোর। মহুয়া র নেশা।
পাকা পিয়াল। সামান্য টক মিষ্টি ছোট্ট ছোট্ট ফল।
ইলামবাজার হাই স্কুল থেকে শুক্রবারের এক ঘণ্টা টিফিনের
দিনে সাইকেল নিয়ে  দে ছুট বনে। পিয়াল তোলার মজা।এখন যেখানে কলেজ বিল্ডিং তার পিছনেই ছিল বেশ কয়েকটা গাছ। 
ছোট্ট ছোট্ট গাছে ই অনেক ফল।
আদিবাসী মেয়েরা ও তুলতে আসে। শালপাতার ঠোলায়
হাটে বেচে। আমারা যারা তুলতে যেতাম - আমাদিকেও দিত।
খুব ভালো মানুষ তো ওরা।
এগারো মাই ল এর গুসকরা বাসস্ট্যান্ডে থেকে যে রাস্তা চলে
গেছে পূর্বে সেই রাস্তার দুধারেই জঙ্গল।
উত্তর দিকের জঙ্গল  যার নাম ' নীলকুঠি র জঙ্গল '। বুঝতেই
পারছেন একদিন নীলকুঠি ছিল। সাহেব দের।
সেখানে ছিল অনেক পিয়াল গাছ।
কালিকাপুর এর জঙ্গলে ও। রাস্তার ধারেও।
দক্ষিণে জামডোবা ; পরেশ ডাঙ্গা র জঙ্গলে কাঁকর চাতালের
উপরে ছিল অনেক গাছ। অনেক কেন্দু গাছ ও। পাকা কেন্দু
কি সুন্দর খেতে।
আমাদের গ্রাম থেকে ডাঙ্গাল বসুধা যাবার পথের ধারে
যে জঙ্গল ভূমি সেখানেও ছিল লাল মোরাম মাটির উপরে
কত পিয়ালের গাছ।
আদুরিয়ার জঙ্গল। যে পথ চলে গেছে জালিকান্দর হয়ে গেঁড়াই পর্যন্ত সেই পথের দুধারের জঙ্গলে ও কত পিয়াল গাছ।
এই জঙ্গলে র ভিতরে আছে ছবির মতো আদিবাসী পল্লী
আমজারুলিয়া। ওখানের মেয়েরা তুলছিল। সেবার চাইলাম।
দিল হাত ভরে। আগে ঝুড়ি ভর্তি পাকা পিয়াল নিয়ে হাটে বেচতে আসত আদিবাসী মহিলারা। শাল পাতার ঠোঙ্গা য় দিত। তখন এসব খাওয়ার চল ছিল। তখন তো আর কিটক্যাট ;কুড়কুড়ে র ; লে ' জ এর যুগ নয়। বাদ দিন সেসব কথা।
আবার গেঁড়াই থেকে যে রাস্তা চলে গেছে জঙ্গলে র ভিতর দিয়ে ভাতকুণ্ডা হয়ে মানকরের দিকে সেই জঙ্গলে ও অনেক
পিয়াল গাছ।
পানাগড় এর পথে জঙ্গল শুরু রঘুনাথপুর থেকে। গাঁড়াদহ ; ধোবারু র জঙ্গলে - যার আবার নাম ' সাতকাটার জঙ্গল '।
সেখানে ও ছিল কত পিয়ালের গাছ।
মলানদিঘী থেকে শিবপুর রাস্তাটা চলে গেছে জঙ্গলে র ভিতর দিয়ে সেখানেও আছে অনেক পিয়াল গাছ। আছে অনেক মোরাম চাতাল ; উঁচু নীচু ঢিবি। খোয়াই।
আবার মলানদিঘী থেকে রঘুনাথপুর যে রাস্তা সেই রাস্তার
চুয়া - আন্ধারশুলী - জামডোবার জঙ্গলে  আন্ধারশুলীর দিকে আছে বেশ কিছু পিয়াল গাছ।
  পশ্চিমে র মালভূমি র পূর্ব প্রান্তীয় বিস্তৃতি  রাঢ়ের এই রাঙা
কাঁকর বা মোরাম  ; ল্যাটেরাইট মাটি। এই মাটির প্রধান বৃক্ষ
শাল। আমাদের প্রাচীণ গ্রন্থাদি তে শাল কে ' মহাবৃক্ষ ' বলা
হয়েছে। মহাবৃক্ষ রূপ সেই সব শাল ছিল দুর্গাপুর এলাকায়।
কিছু তার নমুনা এখনও আছে।
  হাণ্টার সাহেবের 'Annals of Rural Bengal "  এ এই বনভূমি র উল্লেখ আছে। মাত্র দুশো বছর আগে গুসকরা থেকে বরাকর পর্যন্ত এই বনভূমি বিস্তৃত ছিল। সে ছিল মহা অরণ্য।
কোথাও কোথাও জঙ্গল এত ঘণ যে দিনের আলো সেখানে
প্রবেশ করতে পারতনা। হিংস্র শ্বাপদের দল অবাধে সেখানে
বিচরন করত।
সেদিন যা ছিল আজ আর তা নেই। তবু আছে সেই জঙ্গল ভূমি। পূর্ব বর্ধমান জেলার আউসগ্রাম আর পশ্চিমে কাঁকসা থানা এলাকার আর কিছুটা দুর্গাপুর - ফরিদপুর এর জঙ্গল ভূমি ই বর্ধমানের জঙ্গল মহল।
পিয়াল নিয়ে বলতে বলতে কতদূরে চলে এসেছি বলুন দেখি।
  আর কথা বাড়াবনা। কত রকমের গাছপালা যে ছিল এই
বনভূমিতে - কত লতা গুল্ম ওষধি  তা বলে শেষ করা যাবেনা।
আর বলবে ই বা কে? জঙ্গলে র ধারের গ্রামগুলির সেই সব প্রাচীণ মানুষেরা আর নেই। প্রবীন আদিবাসী মানুষেরা নেই।
আমরা তাদের কাছ থেকে শিখবার কোন চেষ্টা করলামই না।
আমার স্মৃতি তে মাঝে মাঝে হারানো দিন উঁকি দেয়।
সে তো একটা সময় আসেই যখন মানুষ একটু ' ডাউন মেমোরি লেন ' ধরে হাঁটে। সেদিন পিয়ালের বকুল দেখে
মনে এলো কত কথা।  কত স্মৃতি ভিড় করে এলো।
সেই পিয়াল গাছটি কে আমি আজও ভুলতে পারিনা।
ছোট বেলায় তার ডালে চড়েছি। নীচু ডালপালা মেলা গাছ।
গাছটি ছিল আমাদের গ্রামের মোরাম রাস্তার ধারে। যেখানে
গ্রাম থেকে বেরিয়ে মাটির রাস্তাটা পাকা মোরাম রাস্তায় মিশেছে। ঠিক সেই খান টা তে।
সেই গাছ টি ও রইলনা।
এত ক্ষিদে ; এত লোভ মানুষের। এত নির্মম। -
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ শেষ করি
শাল - পিয়ালের কথা।

Sunday, 13 February 2022

আমাদের পাঁচ মাথার মোড়

।।বুঝলেন   আমাদেরও এক  পাঁচমাথার মোড় আছে।
 শ্যামবাজারে নয়। আবার শ্যামবাজারেই। 
 সে কি রকম! সে হচ্ছে এই যে ; এই এলাকার
 শ্যামবাজার মৌজাতেই সেই পাঁচ মাথার মোড়।  আমাদের অযোধ্যা - বনকাটি এলাকা। থানা - কাঁকসা। জেলা - পশ্চিম  বর্ধমান। 
 ও বাবা চিৎপুর না থাক  রবীন্দ্র সরণী ও আছে। ভাগ্যিস মনে পড়ল। 
 এলাকার প্রথম ;  নীচে মাটি র উপরে  মোরাম বোল্ডার আর উপরে ভালো মোরাম ; দুপাশে ইঁট দিয়ে বাঁধানো রাস্তা। এগারো মাইল 
 গুসকরা মোড় থেকে এ রাস্তা বেরিয়ে চলে এসেছে  সাতকাহনিয়া ডাকবাংলো পর্যন্ত।সেই সময়ের বর্দ্ধমান জিলা পরিষদের বানানো রাস্তা। শতবর্ষ হতে চলল  প্রায়।  একদিন এই রাস্তা দিয়ে দুটো বাস চলাচল করত। নরেন্দ্র বা রণেন্দ্র ট্রান্সপোর্ট। তারক বাবু ড্রাইভার। তারপর তাঁর ছাত্র নংরু ড্রাইভার)  ( অবণীভূষণ কুণ্ডু)। তিনি চালাতেন ' বৈদ্যনাথ ' বাস। ছিল ' গিল সার্ভিস '। এখন বালিখাদের ভারী ভারী ডাম্পার ; ট্রাক চলে।   
 এখানে এসে দাঁড়ান একটু। 
 চারপাশ টা চোখ বুলিয়ে নিন। 
 দেখুন। ছাতিম তলা। নীচে তার সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো বেঞ্চ। 
 বসতেই পারেন। বসুন। ভালো লাগবে। লোক চলাচল দেখুন। 
 উত্তর দিকে মুখ করে দেখুন ডান দিকে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে রাস্তা। ডাঙ্গাল - বসুধা যাওয়ার রাস্তা।  পিচ ঢালা রাস্তা তৈরী হচ্ছে এখন।  খুব ভালো। শালবনের ভিতরে হাঁটবেন। যান না। 
ঐ রাস্তা ধরেই। রাস্তার দক্ষিণে শালবন। মহুয়া ; কেন্দু ; আর কাজুবাদামের দেখা মিলবে। আছে মোরাম চাতাল। সামান্য 
 খোয়াই। খারাপ লাগবেনা। শালফুলের গন্ধে আমোদিত বসন্তে - 
এই জঙ্গল টা শেষ হয়ে গিয়েছিল প্রায়। ঝাঁটি জঙ্গলে পরিণত হয়েছিল। সে অনেক যুগ আগে শৈলেন সরকার নামে এক বনবিভাগের এক বীট অফিসার খুব যত্ন করে আবার এই জঙ্গল কে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন। লাগিয়েছিলেন কাজুবাদামের অনেক গাছ। শাল পিয়াল মুরগা এরা তো সব ছিল 
 একটা কি সুন্দর পিয়াল গাছ ছিল সাতকাহনিয়া যাবার পথের ধারে। তার পিয়াল খেয়েছি। না সেটাও  আর থাকল না। 
তখন সোনাঝুরি ; ইউক্যালিপটাস আসেনি। 
কি ছাতু ফুটত শাল পাতা পচে। কতরকমের ছাতু মানে মাসরুম। মাটির নীচে কুড়কুড়ে ছোট্ট ছোট্ট  গোল ছাতু। 
 কি তার স্বাদ। ঝাল ; ঝোল ঝোল তরকারি। 
না। এখন আর ফোটেনা। সব মাটি বিষ হয়ে গেছে। 
 উত্তরে যাবেন। যান। সামনেই ' তেপান্তর নাট্য গ্রাম' '। যদি এসেছেন আমার বলা র কিছু নেই। যদি না এসেছেন একবার ঘুরে আসুন। সামান্য কয়েক শো মিটার। নিশ্চয়ই ভালো লাগবে। অবাক ও লাগতে পারে যে এমন একটা নাটকের স্পেস আছে এখানে এই জঙ্গলে র ধারে। ভিতরে 
আবার সাতকাহনিয়া গ্রামের ভিতর দিয়ে নদী বাঁধ ধরে অজয় 
 কুলে চলে যান। অজয়কে দেখে আপনার কেমন লাগবে জানিনা। মরে যাচ্ছে। গেছে প্রায়। 
 সাতকাহনিয়ার  শতাব্দী প্রাচীন সেচ ডাকবাংলো টি দেখতে 
পারেন। খারাপ লাগবেনা। আগে ছিল খড়ের ছাউনী। 
এত বড় খড়ের ছাউনির ডাকবাংলো সারা দেশে ছিলনা প্রায়। 
  বাঁ দিকে ঘুরুন। রাস্তা চলে গেছে অযোধ্যা - বনকাটির হাটতলা হয়ে শ্যামবাজার অন্নপূর্ণা মন্দিরের পাশ দিয়ে একেবারে বনগ্রামের পাশ দিয়ে ইছাই ঘোষের দেউল পর্যন্ত। 
 এগারো মাইল বাসস্টপ থেকে বেরিয়ে এই পিচ ঢালা রাস্তা ; 
কোথাও ঢালাই অযোধ্যা গ্রামের পূর্ব মাথাকে ছুঁয়ে বাঁক নিয়ে 
এসেছে এই পাঁচ মাথার মোড়ে। 
 আমাদের পাঁচ মাথার মোড়ে কোন নেতাজী মূর্তি নেই। 
 আমাদের অনেকের খুব ইচ্ছে ছিল এখানে একটা ত্রিকোণ 
 আইল্যান্ড বানিয়ে একটা কিছু শিল্প কর্ম স্থাপনার। 
 প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার প্রকল্পে ধরা নেই বলে ওঁরা ওঁদের 
 অক্ষমতা জানিয়েছিলেন। 
 অবশ্য রাতের উন্মত্ত গাড়ির ধাক্কায় তা টিঁকত কিনা তাও ভাববার। 
 দিনে এই জায়গার এক রূপ। পিছনেই অযোধ্যা হাই স্কুলের 
 গেট। পাশেই বিস্তৃত জায়গা নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়। পিছনে ই অযোধ্যা সমবায় সমিতির বিল্ডিং। পাশেই গ্রামপঞ্চায়েতের ভবন। 
 একদিন ছিল বিশাল আমবাগান। অযোধ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের র জায়গায় ছিল একটি চারিদিকে ডাল পালা মেলা 
 বিশাল আমগাছ। গোড়া তার মাটি দিয়ে গোল করে বাঁধানো। 
 গোবর মাটি দিয়ে নিকানো গাছতলা।আলপনা দেওয়া। 
 আমরা তো ওখানেই বসেছি। চার দিকে মুখ করে চারটা 
 ক্লাস কেই বসানো যেত। বসানো হতও। " তোমারই গেহে পালিছ স্নেহে তুমি ধন্য ধন্য হে "। বা " আজি যত তারা তব আকাশে "। গাওয়া হত। শেখাতেন প্রধান শিক্ষক ; আমার মায়ের বাবা ;
 দাদু  ননীগোপাল চট্টোপাধ্যায়। কয়েক জন মেয়ে খুব ভালো গাইত। 
 এই আমতলার নাম " কবিতলার গাছ। এর চারপাশ জুড়ে ঘিরে 
 টিকিট কাটিয়ে একবার বিখ্যাত গুমানী খাঁ এবং লম্বোদর চক্রবর্তী র বিখ্যাত জুটির কবিগানের আসর বসেছিল। সেই থেকে এই নাম। 
 প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ার জন্য সেই টাকা খরচ হয়েছিল। 
 একদিন এই ডাঙা পর্যন্ত বনকাটি র পিতলের রথ টেনে আনা 
 হত। একবেলার মেলা বসত। " রথ তলার ডাঙ্গা " - তাই নাম। 
 গ্রামের বাইরে নির্জন এই জায়গা বিদ্যালয় স্থাপনার জন্য 
 উপযুক্ত ভেবেই সেই ৮০-৮৫ বছর আগের মানুষ রা স্থির 
করেছিলেন। অযোধ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৪৪ সালে সরকারি অনুমোদন পায়। 
এই তো আমাদের পাঁচ মাথার মোড়। কবীন্দ্র রবীন্দ্র  তো আছেন ই আর ' তিন বাঁড়ুজ্জে '  বিভূতিভূষণ ; তারাশঙ্কর ;
 মাণিক এবং  জীবনানন্দের নামে এই সব গ্রামীন 
 রাস্তার নামকরণ করা যায় কি না এমন  ভাবনা একবার আমাদের মাথায় এসেছিল। গ্রাম পঞ্চায়েত এর বিবিধ  সিদ্ধান্ত খাতায় তা বোধহয় লিখিত ও হয়েছিল।           এই পাঁচ মাথার মোড়ে একটা আলোক 
 স্তম্ভ ( হাই মাস্ট বাতি স্তম্ভ)  বসানো কি যায়না! এগারোমাইল বাসস্ট্যান্ড 
 থেকে অযোধ্যা হাটতলা পর্যন্ত পথবাতি বসালে খুব ভালো হয়।  শ্যামবাজার স্বাস্থ্য কেন্দ্র তো আর যেভাবে চালু হবার কথা ( প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসাবে)  তা তো আর কোন আমলেই হলনা। অথচ কি চমৎকার ছিল এর বিল্ডিং প্ল্যানিং। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা র প্ল্যান। একেবারে ইনডোর ; আউটডোর ব্যবস্থা। চমৎকার সব কোয়ার্টার। 
 বিশ্ব ব্যাংকের টাকায় ( IPP 4 স্কীমে) । সপ্তাহে দুদিন এখানে 
 হাটবার। অনেক মানুষ আসেন।  অন্ততঃ এই দুদিন একজন 
 ডাক্তার বাবু আসুন! 
 রাইটার্স বিল্ডিং পর্যন্ত বেশ কয়েকবার যাওয়া হয়েছে। 
 তৎকালীন বিধায়ক মাননীয় প্রয়াত কৃষ্ণচন্দ্র হালদারের সাথে 
 আমি গেছি। মাঝে বেশ কিছুদিন ডাক্তার বাবু নার্সরা আসতেন। সপ্তাহে তিন দিন হলেও। 
 এখন একজন ফার্মাসিস্ট বসেন। প্যারাসিটামল দেন। 
আর কে বা যায়। কেনই বা যাবে। সাধারণ মানুষের ধারণা 
 হাসপাতালের ওষুধে কোন কাজই হয়না। কয়েকজন 
ওষুধের দোকানদার বা গ্রামীণ ডাক্তার দের উপরে নির্ভর করেই চলছে প্রায় কুড়ি হাজার মানুষের জীবন। 
 এই হাসপাতালে র জন্য জমি দান করেছিলেন অযোধ্যার 
 মানুষ জন। কোয়ার্টার গুলি এখন ভগ্ন। ' ভূতেদের আখড়া '
 সব ভেঙে ফেলে সমস্ত জায়গাটায়  ফলের বাগান করা যায়। 
 ব্রাহ্মণগ্রাম বীজ খামার কে যুক্ত করে।কি হয় ওখানে! বোধ হয় বিরাট এক ' না '। 
চমৎকার করে সিমেন্ট পাচিঁল দেওয়া হয়েছে।তা না হয় হল। প্রায় ৬-৭ শো বিঘা জায়গা। কি উৎপন্ন হয় সেখানে! অপচয়! অথচ কি না ছিল সেখানে। 
 আধুনিক চাষের সব উপকরণ। এখনও পরিকল্পনা  
 করে অনেক কিছু ই করা যায়।      
 অনেক কিছুই করা যায়। শুধু শুধু পড়ে পড়ে পচছে দেখলে খারাপ লাগে। এই সব অপচয়ের জায়গা খুঁজে বের করা দরকার সরকারের। 
 তাই এ সব বলা। আশা করি প্রশাসন নজর দেবেন 

 একবার বেশি রাত্রে এখানে এসে বসুন। 
 এই পাঁচ মাথার মোড়ে। না। পঞ্চমুণ্ডি আসনে নয়। 
 ছাতিম তলের সেই বেঞ্চে। 
মাথার উপরে সপ্তপর্ণী আপনাকে প্রাণের আরাম দেবে কি না জানিনা। কিন্তু এক অনাস্বাদিত অনুভূতিতে আপনি জারিত হবেন 
 দেখবেন  কেমন এক আশ্চর্য নিস্তব্ধতা আপনাকে জড়িয়ে ধরেছে। 
 একটু গা ছম ছম করবে ই। 
 পাষাণচণ্ডী বাগানের শিয়াল গুলো ডাকছে। 
 হয়তো বা ' গুরুর বাঁধে ' জল খেতে এসেছে। 
 জামির তলার ডাঙ্গায় টাঁকসোনা দুটো পাখি ক্রমাগত ডেকে যাচ্ছে।আর লম্বা পায়ে এমাথা থেকে ওমাথা ছুটে যাচ্ছে। 
 রাত গভীর হচ্ছে। শালবাগানের উপরে  একটা তামাটে  চাঁদ 
 ঝুলে আছে এক অচেনা পৃথিবীর দিকে মুখ করে 
------------ ------------ ------------ ------------  আজ এখানেই শেষ করি