Thursday, 6 August 2020

৪র্থ পর্ব। ইছাই ঘোষ। ( ধারাবাহিক)


' জটোদয়া '। 

ননীগোপাল মজুমদার মশাই এর পাঠে ' জটোদায়াং'। 

অক্ষয় কুমার মৈত্র মশাই বলেছেন যা গঙ্গার নামান্তর। 

কালিকাপুরাণ এ ' জটোদা ' নদীর উল্লেখ আছে। 

বসু মশাই আসাম বা প্রাচীন কামরূপে এই নদীর ধারে ' ঢেক্করী ' র অবস্থান বলেছেন।

  এই রকমের আর এক মতের উল্লেখ করছি। 

আমার পোষ্টে র মন্তব্যে মাননীয় মলয়শংকর ভট্টাচার্য মশাই বলেছেন  ' এই স্রোতস্বিনী জলপাইগুড়ি র ময়নাগুড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। নিকটেই বিখ্যাত শৈবতীর্থ জটেশ্বর। 

গ্রীয়ারসন সাহেবের ' লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে তে ' কোচবিহার ; রংপুর ; ধুবড়ি ; জলপাইগুড়ি ; দিনাজপুর এলাকা নিয়ে যে জোন তার নাম  ' ঢেক্করী '। 

  এই ঢেক্করী র  ' Chieftain 'ঈশ্বরী ঘোষ রাজা রামপাল কে সাহায্য করেছিলেন। (কৈবর্ত বিদ্রোহের সময়?) 

রাজধানী রামাবতীর ( উত্তর দিনাজপুর)  নিকটবর্তী রামগঞ্জ।

যেখানে পাওয়া গিয়েছিল ' ঢেক্করী থেকে প্রচারিত ঈশ্বরী ঘোষের তাম্রশাসন '।

নীহাররঞ্জন এর মতো ঐতিহাসিক আবার ঢেক্করী র অবস্থান বলেছেন কাটোয়া নিকটবর্তী।


  ভুলে যাচ্ছি তিনি ' রাঢ়াধীপ'। ' বভুব রাঢ়াধীপ' লব্ধজন্মা '।

ভুলে যাচ্ছি রামচরিত এর প্রতাপসিংহ ' ঢেক্করী রাজ '।

এবং ' মহামাণ্ডলিক'ঈশ্বরী  ঘোষ এই ঢেক্করী থেকেই তাম্রশাসন খানি প্রচার করেন। উভয় ঢেক্করী এক এবং অভিন্ন।

ধর্মমঙ্গল কাব্যে ইছাই এর গড়ের নাম ঢেকুর গড়।

আর আজও মানুষ পৌষ সংক্রান্তি তে ' অজয় ' এ স্নান করেন।

মনে করেন  ওই দিন গঙ্গা আসেন অজয়ে।

আর এই দক্ষিণ  অজয় তীরে উচ্চভূমি তে ' ইছাইঘোষের গড়বেড়ী '।

আর অদূরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে ' ইছাইঘোষের দেউল '।

  ইছাই এর স্মৃতি সহজে মুছে যাওয়ার নয়।

কেননা তাঁর সময়কালের কয়েক শতক পরে ও তাঁর স্মৃতি বেঁচে থাকে। যা অবলম্বন করে কবিরা রচনা করেন ধর্মমঙ্গল।

-------------------------------------------------------------------


৩ য় পর্ব। ইছাইঘোষ। ( ধারাবাহিক

ভাবুন একবার। 

কোথায় 'রামগঞ্জ ' আর কোথায় 'রাঢ়াপুরী '

বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার রাণীসঙ্কৈল থানা র অন্তর্গত একটি গ্রাম রামগঞ্জ। 

সেখানে পাওয়া গেল এই তাম্রশাসন। মানে তামার প্লেটে উৎকীর্ণ লিপি।  ভাষা তার সংস্কৃত। লিপি সেন পূর্ব যুগের। 

  অক্ষয়কুমার মৈত্র মশাই ; বারেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটি র মুখপত্রে ননীগোপাল মজুমদার মশাই এটি প্রকাশ করেন। 

বাচ্চা ঝা মশাই ও পাঠোদ্ধার করেছিলেন কিন্তু প্রকাশ করেননি। স্থানে স্থানে পাঠে ভিন্নতা আছে। তা থাক কিন্তু মূল কথা বোঝা গেছে। 

   এটি সেই সময়ের  এক অমূল্য ঐতিহাসিক নিদর্শন। 

এক ব্রাহ্মণ নির্বোক শর্মা কে কিছু ভূমি দান করা হচ্ছে। 

  মহাপরাক্রমশালী ঈশ্বরী ঘোষ বংশপরিচয় দিচ্ছেন। 

'ঘোষ কুলোদ্ভব '। নানা বিশেষণে বিভূষিত তাঁর পূর্বপুরুষ গন। মহা কীর্তি মান ধূর্ত ঘোষ ; তাঁর পুত্র নানা যুদ্ধে শত্রু দের পরাস্ত কারী বাল ঘোষ ; তাঁর পুত্র ধবল ঘোষ  সূর্যকিরণে র মতো যাঁর খ্যাতি প্রচারিত হয় ।

সীতা ও পদ্মা র মতো তাঁর স্ত্রী সদ্ভাবার গর্ভে ঈশ্বরী ঘোষের জন্ম। 

  অবাক লাগে পাল রাজাদের আমলে যত রাজকর্মচারী পদ আছে ; প্রায় তেমনই পঞ্চাশ এর অধিক রাজ কর্মচারী পদের নাম। অর্থাৎ এঁরা সব ঈশ্বরী ঘোষের অধীনস্থ। রাজ কার্যে এঁদের প্রয়োজন হয়। 

অর্থাৎ ছোটখাটো রাজা নয়। তাবলে এতো বড়। একেবারে ' গোপভূম ' থেকে আসাম কামরূপ পর্যন্ত?  

  স্বাভাবিক সন্দেহ জাগে। 

অনেকে মানতেই চাননা। 

যেমন ঈশ্বরী ঘোষ ই যে ইছাই ঘোষ তা মানতেও আপত্তি। 

  এই তাম্রশাসনে কোন সন তারিখ নাই। তবে ঈশ্বরী ঘোষ তাঁর ৩৫ তম রাজ্যাঙ্কে অর্থাৎ তার আগে তিনি ৩৫বছর রাজত্ব করেছেন।

সে টা ও কম কথা নয়। তিনি পরাক্রান্ত। 

মার্গ শীর্ষ সংক্রান্তি তে ' জটোদয়া ' নদীতে স্নান করে তিনি 

এই পুণ্য কর্ম সম্পাদন করছেন

২য় পর্ব ইছাই ঘোষের দেউল

 ইছাই ঘোষের দেউল।

গতকালের আমার পোষ্ট প্রয়োজনে একটু দেখে নেবেন।

 ' রামগঞ্জ তাম্রশাসনে ' র শুরুতেই ' বভূব রাঢ়াধীপ  লব্ধজন্মা ' ইত্যাদি

অর্থাৎ তিনি রাঢ়ে র অধিপতি।

তাঁর রাজত্বের সীমানা?  জানি না

তিনি ' ত্রিষষ্টি গড়ের ' অধিপতি।

ত্রিষষ্টি মানে কি ৬৩ সংখ্যক গড়ের অধিপতি

না কি তার গড়ের নামই তাই।

অতি প্রাচীন এক অশ্বত্থের তলে ' গড় বেড়ি ' এলাকায় ভগ্ন ধ্বংস প্রাপ্ত এক মন্দিরের নাম স্থানীয় প্রাচীন মানুষেরা বলতেন ' ষষ্ঠীতলা ' 

সমগ্র গড়বেড়ী এলাকা ছিল মোটা মাটির প্রাচীর ঘেরা। আর ছিল দুর্ভেদ্য কাঁটাবাঁশের বেড়া।

অনেক নীচে পরিখা।

কোথায় ছিল ' রাঢ়াপুরী '

বিখ্যাত ' রাঢ়েশ্বর শিবমন্দির ' এর কেন্দ্র করে

এমন অনুমান অনেকের।

বিখ্যাত চোল রাজা রাজেন্দ্র চোল রাঢ় আক্রমন করেছিলেন। তাঁর তিরুমালাই গিরিলিপি থেকেই আমরা উত্তর রাঢ় আর দক্ষিণ রাঢ় এর কথা জানতে পারি। রণশূর ছিলেন দক্ষিণ রাঢ়ের রাজা।

বিজিত রাজাদের মধ্যে ঈশ্বরী ঘোষের নাম নেই

সময় কাল নিয়ে তো বিতর্ক আছে ই। থাকবেই

আবার ধঙ্গদেব আক্রমন করেছিলেন রাঢ়দেশ।

তাঁর আক্রমনেই কি শেষ হয়ে যায় ইছাই এর বংশ।

খর্জূরবাহক লিপি তে আক্রমনের কথা খোদিত।

রাণী কে ও না কি বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

সেখানে ও রাঢ়াধীপ' এর নাম নেই।

অনেক আলো আঁধারী।

মধ্য রাঢ়ে র এই কেন্দ্রমধ্যে পণ্ডিত জনেরা আলো ফেলুন। আমরা আলোকিত হই।

( চলবে কি? ) 

 1940 সালের ইছাইঘোষের দেউলের ছবিটি পেয়েছি ASI এর আধিকারিক মাননীয় শুভ মজুমদারের সৌজন্যে। তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।

অনেক বিশিষ্ট মানুষ এসে দেখে গেছেন। যতটা পেরেছি সঙ্গ দিয়েছি। বারবার বলি সামান্য মানুষ।

আসবেন। দেখবেন এই অসাধারন পুরাকীর্তি।

বনকাটি। বনকাটি। থানা কাঁকসা। প বর্ধমান।

পানাগড় মোরগ্রাম হাইওয়ে। এগারো মাইলে নামুন। টোটো নিন। দেউল।

তবে এখন নয়। বিপদ কাটুক। এখন ঘরে থাকুন।


গতকালের পর দ্বিতীয় অংশ।

আর চালাব কি না বলবেন।

কথা বা কাহিনী র শেষ নেই।

ইছাই নেই। আছে তার স্মৃতি দেউল।

১ম পর্ব ইছাই ঘোষের দেউল। বিখ্যাত পুরাকীর্তি

 ইছাই ঘোষের দেউল।

বিখ্যাত পুরাকীর্তি।

পাতলা টালির মতো ইঁটের তৈরি সু উচ্চ দেউল।

বিতর্ক এর সর্বাঙ্গ জুড়ে।

কে ইছাই ঘোষ? বিখ্যাত রামগঞ্জ তাম্রশাসনের রাঢ়াধীপ' মহামাণ্ডলিক' ঈশ্বরী ঘোষ। ত্রিষষ্টিগড়ের অধিপতি। সেখানে তাঁর পিতার নাম ধবল ঘোষ।

ধর্মমঙ্গল কাব্যে তিনি ইছাই ঘোষ। পিতা  সোম ঘোষ।  অনেকে বলেন একই ব্যক্তি। কেউ কেউ  ' না '। 

সুদূর রামগঞ্জ। বাংলাদেশে। সেখানে কি করে গেল তাম্রলিপি। এতো বড় রাজা তো তিনি নন। ইত্যাদি

কে নির্মান করালেন এই দেউল?  

নির্মান কাল নিয়ে নানা মত। বিতর্ক।

এটি কি কোন দেব দেউল?  গর্ভগৃহে কোন বেদী নাই। ছিলনা।'  অনুমিত হয় দেবী ভগবতী 'র মন্দির হিসাবে এটির নির্মান মধ্য অষ্টাদশ শতকে। ' বলছেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। আগে ছিল মধ্য পঞ্চদশ শতক।

এখন যে শিবলিঙ্গ দেখবেন তা স্থাপিত হয়েছে ৫০/৬০ বছর আগে। কেন অনুমতি দেওয়া হল?  

কেউ জানিনা।

বারবার সংস্কার হয়েছে বা হচ্ছে। তবু শীর্ষদেশ এর অশ্বত্থের চারা বার বার জন্মায়। বেড়ে ওঠে।

আরও অনেক কথা। পণ্ডিত নই। সামান্য এক আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী। সে ও তো অনেক দিন হল।

নানা জায়গায় বলেছি। সারস্বত সমাজে ই।

কত লিখেছি। কত জায়গায়।

একটি পুস্তিকা লিখেছিলাম। আর একটি ও নাই।

দু তিন বার ছাপা হয়েছিল। তেপান্তর মেলা থেকে ই অনেকে সংগ্রহ করেছিলেন।

মানুষ তাঁর এলাকার ইতিহাস জানুক। এই উদ্দ্যেশেই ছোট ছোট পুস্তিকা। মাত্র ১০/ টাকা দাম।

নিশ্চয়ই পণ্ডিতেরা আলোকপাত করবেন।

আমি সমৃদ্ধ হব।

এই আশা নিয়ে শেষ করি।


আগামী কাল থাকবে দ্বিতীয় অংশ।

যাঁরা আমার পোষ্ট দেখেন তাঁদের অনুরোধ ফলো করবেন। মন্তব্য করবেন। এখানেই

আগামী কাল ও ফলো করবেন। 

সকলের সব জিজ্ঞাসা র উত্তর দেব একেবার শেষে 

কমেণ্ট বক্সে।