Tuesday, 25 February 2025

বীরভূমের বৈচিত্র্যময় মন্দির

বীরভূম কে বলা হয় ' ধর্মসাধনার জাদুঘর "। নানা ধর্মীয় আন্দোলনের স্রোত বীরভূমের উপর দিয়ে বয়ে গেছে।  
 তৈরি হয়েছে নানা মন্দির মসজিদ। 
 সমগ্র রাঢ়বঙ্গ তো দূর গোটা বীরভূম কে আলোচনায় ধরা সম্ভব নয়। সংক্ষিপ্ত এক রূপরেখা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। 
 জৈন ধর্ম বীরভূমের উপর নেমে এসেছে। কোন জৈন মন্দির এখানে যদিও নাই কিন্তু ছিল। ঘুড়িষা গ্রামে জৈন তীর্থঙ্কর সর্পছত্রধারী পার্শ্বনাথ জীর মূর্তি পথের ধারে পড়ে আছে। 
 গ্রামে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা নানা জৈন মূর্তি ছোট বেলায় দেখেছি। ভগ্ন। ভাঙ্গা যে হয়েছে কঠিন আঘাতে তা পরিষ্কার বোঝা যায়। 
 জাতক কাহিনীতে সত্যতা যদি কিছু মাত্র থাকে তাহলে বলা যায় বুদ্ধদেব বীরভূমের উপর দিয়ে হেঁটে পুণ্ড্রবর্ধনে গিয়েছিলেন। ইলামবাজার নিকট বর্তী দেবীপুর গ্রামে 
 দেবী সুহ্মেশ্বরী র ভগ্ন মূর্তির পাদদেশে খোদিত ছিল 
 " যে ধর্মের  হেতু হইতে উৎপত্তি, ------------  " যে ধর্ম্মা  হেতু 
 প্রভবা হেতুং তেষাং তথাগতহ্যবদৎ। তেষাঞ্চ যো নিরোধঃ
এবং বাদি মহাশ্রমণঃ " 
এখানের ধর্মরাজের নাম " সুহ্মরায় "। সুহ্ম অতি প্রাচীণ শব্দ। 
 রাঢ়দেশের প্রাচীণ নাম ই " সুহ্ম "। মহাভারতের টীকাকার নীলকন্ঠ বলেছেন " সুহ্মঃ  রাঢ়া " 

 তাছাড়া ' বুদ্ধরায় ' বা বুধোরায় বা বুদ্ধেশ্বর শিবের নামে বেঁচে আছে বুদ্ধের স্মৃতি। কোন বৌদ্ধ স্তুপ বা মন্দিরের নিদর্শন নাই। 
 হয়তো ছিল। বা হয়ত এখনও মাটির নীচে। 
 বাঙ্গলার ইতিহাস তো অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাটির নীচে ই। 
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ 

 বৈচিত্রময় বীরভূম ঃ  বৈচিত্র্য এর ভূ প্রকৃতি তে। মাটিই তো কথা বলে। মানুষের রক্তে। তার শরীরে, মনে। 
 বিচিত্র এই বীরভূম। মননের বৈচিত্র্য। সেই বৈচিত্র্য থেকেই 
 মন্দির স্থাপত্য রীতি র এত বিচিত্রতা বীরভূম ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায়না। বীরভূম কে বলা হয় " ধর্মসাধনার জাদুঘর "। নানা ধর্মীয় আন্দোলনের স্রোত বয়ে গেছে বীরভূমের উপর দিয়ে। 
জৈন, সহজিয়া বৌদ্ধ, শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণবীয় এবং ইসলাম। সুফীবাদের প্রভাব। নানা ধর্মীয় স্রোত। মানুষের মনোজগতে এর সুগভীর প্রভাব আছে। 
 চালা, রত্ন, শিখর, দেউল সহ ভিত্তিভূমি থেকে কৌণিক ভাবে 
 উপরে উঠে যাওয়া রীতি  সহ নানা রীতির সমাবেশ বীরভূমে। 
 প্রস্তর নির্মিত, ল্যাটেরাইট বোল্ডার ( কামানো পাথর ও বলা হয়) । ছাড়া বাকী সব মন্দির ই ইঁটের তৈরী। নিকট বর্তী 
ছোট নাগপুর মালভূমি থেকে পাথর এনে তাকে নির্দিষ্ট রূপ দেওয়ার জন্য যে অর্থ বিনিয়োগ দরকার তা এখানে খুব কমই হয়েছে। স্থানীয় ভূস্বামী বা ধনী ব্যবসায়ী বা রাজকর্মচারী রাই বা পণ্ডিত রা 
মন্দির গুলি নির্মান করিয়েছিলেন। 

বীরভূমের মন্দির স্থাপত্য এবং তার অলংকরণ বাঙ্গলার মন্দির স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। 
বাঙ্গলার সমাজ বিবর্তনের ও বাঙালির মনস্বিতার ও ভাবপ্রবনতা র চিত্র এই মন্দির ভাস্কর্যের মধ্যে প্রতিফলিত। 
মঙ্গলকাব্য সমূহের সমাজ চিত্রণের কথাকে মাথায় রেখেও বলতে হচ্ছে " পটভূমির প্রসারে, কল্পনার বিস্তারে, এবং শিল্প সৃষ্টির দক্ষতায় বাঙ্গলার মন্দির শিল্পকে সমসাময়িক যুগের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম দলিল বলে অভিহিত করা চলে। "
 " বাঙ্গলার মন্দির বাঙ্গালীর জাতীয় তীর্থ। "
বাঙ্গালী র আন্তরহৃদয়ের পরিচয় দিতে, তার স্পর্শশীলতার, তার আনন্দ বেদনার এবং সর্বোপরি তার আধাত্মিক অনুভূতির ইঙ্গিতে বাংলার দেবদেউল গুলি একান্তই অপ্রতিদ্বন্দ্বী। " ( কল্যাণ কুমার গাঙ্গুলি)  
  
প্রস্তর নির্মিত দেউল ঃ রসা বড়রা,  কবিলাসপুর, পাঁচড়া, মহুলা, রসা, পারশুণ্ডি । নাগর রীতি র 
 ল্যাটেরাইট বোল্ডার নির্মিত, ভিত্তি  ঃ দুবরাজপুর, মল্লারপুর, বক্রেশ্বর  ইত্যাদি। এখন সিমেন্ট প্লাষ্টার পড়ায় আর ঠিক বোঝা যায়না। 
 কোথাও ভিত্তি  ল্যাটেরাইটের,  উপরিভাগ ইঁটের। চূণ সুরকির গাঁথনি। এবং চূনের প্লাষ্টার।।
রসার প্রস্তর নির্মিত দেউল খুবই বিখ্যাত। সংস্কার হয়েছে। কিন্তু আমলকের কাজ করা যায়নি। 
শৈব এবং শাক্ত সাধনার স্থল। এখানের বিশাল বটবৃক্ষের বাহু বন্ধনে রয়েছে আরও কয়েকটি ছোট মন্দিরের ধংসাবশে্ষ। শোনা যায় বর্ধমানের সর্পি গ্রামের জমিদার অর্জুন রায় চৌধুরী এই মন্দির গুলির নির্মাতা। 
 উচ্চতার দিক দিয়ে ঃ ভাণ্ডীরবন। ( এখানে বিতর্ক আছে 
 পুরাতত্ত্ব বিভাগ বলেছেন প্রস্তর নির্মিত কিন্তু অন্য বিশেষজ্ঞ রা ম্যাককাচ্চন সাহেব সহ বলেছেন ইঁট নির্মিত) 
 প্রাচীন মন্দিরের ভিতের উপরে দেওয়ান রামনাথ ভাদুড়ি কর্তৃক নির্মিত। সংস্কারে সংস্কারে মূল চেহারায় পরিবর্তন যা আসা স্বাভাবিক তাই হয়েছে। 
 ১৭৫৪ খ্রীস্টাব্দে নির্মিত। প্রায় ৪৫ ফুট উচ্চ। 
* কলেশ্বর।  ঢেকার রামজীবন রায় কর্তৃক নির্মিত শিবমন্দির। 
* ডাবুক। ডাবুকেশ্বর শিবমন্দির। সর্বোচ্চ শিখর দেউল।
** অসামান্য ফুলপাথরের অলংকরণ সমন্বিত। 
গণপুর। গণপুর কে বলা হয় এখানে ফুলপাথরের মহাকাব্য রচিত হয়েছে। অসাধারণ এখানের মন্দিরের কাল। মণ্ডল বাড়ি সহ কালীতলার  মন্দির গুচ্ছ । আসামান্য অলংকৃত এখানের দোলমঞ্চ টি। 
মুলুটি, মাসড়া, গণপুরের মন্দিররের অন্যতম  বৈশিষ্ট্য এখানে চালা রীতি র মন্দিরের আর্চের  উপরে মন্দিরলিপি সমূহ। যা নিয়ে আলাদা কাজ করা যায়। 
** অনুপম ফুলপাথরের অলংকরণ সমন্বিত মন্দিরের অন্যতম সিউড়ি সোনাতোড় পাড়ার চালা রীতি র রঘুনাথ জীর মন্দির। অসামান্য এর অলংকরণ। শোনা যায় এক ঘণশ্যাম দাস বাবাজী ভিক্ষালব্ধ অর্থে এই মন্দির নির্মান করিয়েছিলেন। 
বিগ্রহ হীন। চুরি হয়ে গেছে। 
* দুবরাজপুর এর মন্দির। নায়ক পাড়ার মন্দিরে চমৎকার জ্যামিতিক ডিজাইন এর কাজ আছে। 
এছাড়া ওঝা পাড়ার মন্দিরদুটি র কাজ চমৎকার। 
* হেতমপুর এর চন্দ্রনাথ মন্দির। একটি ব্যতিক্রমী মন্দির। এখানের টেরাকোটা কাজের মাধ্যমে বিদেশি জীবন চিত্রের ছবি আছে। 
*বিশালাকৃতি। নবরত্ন মন্দির। ৮০ ফুট উচ্চ। ২৫ ফুট বর্গের বিশাল মন্দির। সামনের অংশের টেরাকোটার অলংকরণ, মূলতঃ রামায়ণ কাহিনী র 
রাম রাবণ এর যুদ্ধ।বানর সেনাদের ভূমিকা চমৎকার ফুটেছে। এছাড়াও আছে সামাজিক চিত্রন। বর্ধমানের রাজা কীর্তিচাঁদ জননী ব্রজকিশোরী দেবী এই মন্দির নির্মান করিয়েছিলেন 
 জেলা গেজেটিয়ার অনুযায়ী - 
* ঘূড়িষা রঘুনাথ জীর মন্দির। ১৬৩৩ সাঃ অব্দে। নির্মিত। জেলার  প্রাচীণতম।! অসাধারণ সুক্ষ্ম এর টেরাকোটা অলংকরণ।স্বর্ণালংকারের সৌন্দর্য এর দেওয়াল জুড়ে। পণ্ডিত রঘুত্তম আচার্য এর নির্মাতা। অতি প্রাচীণ শিলালেখ আছে। 
* ঘুড়িষা বেণেপাড়ার ক্ষেত্রনাথ দত্ত কর্তৃক নির্মিত 
লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির। হাই রিলিফের অতি চমৎকার কাজ এখানে রয়েছে। চৈতন্য লীলা, ত্রিপুরাসুন্দরীর অসাধারণ প্যানেল। মধ্য অষ্টাদশ শতকের নির্মান। 
* ইলামবাজারের তিনটি বিখ্যাত মন্দির। 
অষ্টকোনাকৃতি গৌরাঙ্গ মন্দির। হাটতলায়। আসামান্য এর জ্যামিতিক ডিজাইন। নকল দরজা। 
এবং ফুলপাতার নক্সা। 
* ব্রাহ্মণ পাড়ার  বিষ্ণু দালান। উচ্চ বেদীর উপরে  বৃহদাকৃতির পঞ্চরত্ন মন্দির। অসাধারণ এর টেরাকোটা র কাজ। রাসমণ্ডল, দুর্গাপ্যানেল, চৈতন্য লীলা এর কাজ। হাই রিলিফের কাজ ভাস্কর্যটি দিকে গেছে। ক্ষুদিরাম বন্দ্যোপাধ্যায় এর নির্মাতা। নির্মানকাল মধ্য অষ্টাদশ শতক। 
* রামেশ্বর শিবমন্দির।  রামধন চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শিবমন্দির। ছোট্ট ফলকে আসামান্য বিভঙ্গে রাধাকৃষ্ণ।হাইরিলিফে জগদ্ধাত্রী এবং দুর্গামূর্তি এর অন্যতম প্রধান কাজ। 
* সুরুলের মন্দির। জমিদার সরকার বাড়ির ছোট তরফের শিবমন্দির এর টেরাকোটা অলংকরণ ছিল অসাধারণ। যথাযথ ভাবেই সংস্কার হয়েছে। 
* সুপুরের জোড়া মন্দির।  অষ্টকোনাকৃতি মন্দির এবং দেউল রীতি র মন্দির এবং তার টেরাকোটার কাজ চমৎকার। 
* বীরভূমের অন্যতম জোড়বাংলো মন্দির রীতি র মন্দির রয়েছে ইটাণ্ডা য়। এই মন্দির এবং সাধুখান পাড়ার শিবমন্দিরের টেরাকোটা কাজ দৃষ্টি নন্দন। 

**
ঘুড়িষা রঘুনাথ জী র মন্দির। জেলার প্রাচীণতম মন্দির বলে কথিত। এটির স্থাপনাকাল ১৫৫৫ শকাব্দ। ১৬৩৩ খ্রীস্টাব্দে। অসামান্য এর টেরাকোটা অলংকরণ। 
কিন্তু রামপুরহাট থানা অন্তর্গত  মাসড়া গ্রামের শিবমন্দির টি ১৫৩৩ শকাব্দে অর্থাৎ ১৬৩১ খ্রীস্টাব্দে নির্মিত। 
মাসড়া তখন মুলুটির রাজাদের অধীনস্থ। 
মন্দির টি ' রাজলোহাপাল ' সিতবদাস তাঁর মা সিদ্ধেশ্বরী র নামে প্রতিষ্ঠা করেন। 
 এই মন্দিরের অলংকরণ ছিল ফুলপাথরের। 
 সংস্কারের নামে সিন্থেটিক রঙের প্রলেপে ঢেকে গেছে প্রাচীণ কারুকার্যের সৌন্দর্য। 
 এই মন্দিরের প্রাচীণ প্রতিষ্ঠা লিপি টি এইরূপ - 
 শ্রী শ্রী রামাই ১৫৫৩ সেবক রাজলোহাপাল। ৪২৩ ××× সিতবদাস কর্মকারের মাতা শ্রী মতী সিদ্ধর শ্রী ঈশ্বর শিব স্থাপনাকারি ×××   ×××  
 মুলুটি নিকট বর্তী এই মাসড়া গ্রাম ছিল লোহা কেনাবেচা র এক কেন্দ্র। প্রাচীণ পদ্ধতিতে লোহা গলানো হত। কর্মকার রা প্রভূত ধনী হয়ে উঠেছিলেন। 
 পরবর্তী তে এই সকল এলাকা ' লোহামহল ' নামে  ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর ইজারার মধ্যে আসে। 
 গ্রামে ঝামার স্তুপে এখনও অনেক লোহামল বা slag পাওয়া যায়। 
 মাসড়া গ্রামের এই ছোট্ট শিবমন্দির টি প্রতিষ্ঠাকালীন হিসাব অনুযায়ী বীরভূম জেলার প্রাচীন তম মন্দির। 
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ 
অনেক বন্ধুর সেদিনের আমার কথিকা,আকাশবাণী  শান্তিনিকেতনে শোনা হয়নি। 
অনেকে শুনেছেন। 
সঞ্চালক ছিলেন কমলেশ্বর চট্টোপাধ্যায় 
তাঁদের জন্যই এই লেখা। মোটামুটি এই লেখার ভিত্তিতে।

Saturday, 15 February 2025

গোপভূম কথা (২) অংশ

।। গোপভূম ঃ  কাঁকসা রাজবংশ ঃ  কথা ও কাহিনী।।  ১ ম পাতা।  ------------  প্রণব ভট্টাচার্য
প্রাচীণ  ' গোপভূম '।  অজয় দামোদর উপত্যকা ভূমির  বিস্তীর্ন
ভূভাগ   গোপভূম  নামেই প্রাচীণকাল থেকেই পরিচিত।
প্রাচীণ। কিন্তু কত প্রাচীণ এই নাম। অন্তত বাঙ্গলার পাল - সেন রাজাদের সময়কাল থেকে। না কি তার ও আগে।
পাল - সেন যুগে রাঢ় বঙ্গে ' দ্বাদশ ভূমের ' উল্লেখ পাওয়া যায়।
এই দ্বাদশ ভূম হচ্ছে  ১) বীরভূম  ২) সেনভূম ৩) শিখরভূম
৪) গোপভূম  ৫) ব্রাহ্মণ ভূম ৬) মানভূম ৭) বরাভূম ৮)  ধলভূম
৯) সিংভূম ১০) তূণভূম ১১) মল্লভূম ( মাল ভূম)  ১২) ভঞ্জ ভূম।
এই সব ভূমের সামন্ত বা ভৌমিক রাজারা প্রায় স্বাধীন ভাবেই নিজ নিজ এলাকা শাসন করতেন। কেন্দ্রীয় পাল বা সেন রাজাদের কর প্রদানকারী অধীনস্থ সামন্ত। পাল রাজাদের আমলে এঁদের কে বা এঁদের মতো অন্যান্য ভৌমিক রাজাদের
' অনন্ত সামন্তচক্র ' বলা হয়েছে। আবার এঁদের উপরেই অনেকাংশে  নির্ভর করতে হত কেন্দ্রীয় শাসক দের।
উত্তরে র কৈবর্ত বিদ্রোহের সময় রামপাল কে এই সামন্তবর্গ
সহায়তা করেছিলেন। পশ্চিমের  এই সীমান্ত এলাকা প্রহরার
ব্যবস্থা এঁরাই করতেন,  নিজেদের শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ী।
কিন্তু তেমন যুদ্ধ প্রস্তুতি এঁদের ছিল বলে মনে হয়না। রাজেন্দ্র চোল বা ধঙ্গদেব বা লক্ষ্মীকর্ণ রাঢ়দেশ জয় করে আরও উত্তরে
অনেক টা অগ্রসর হয়েছিলেন।
রাজেন্দ্র চোল এর তিরুমালাই গিরিলিপি তেই উত্তররাঢ় এবং দক্ষিণ রাঢ়ের উল্লেখ রয়েছে। তিনি রাঢ় দেশ জয় করেছিলেন।
ধঙ্গদেব রাঢ়াধিপতিকে পরাজিত এবং নিহত করে রাঢ়ের মহিষী সহ রমনী দের বন্দী করে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর খর্জুরবাহক লিপি তে তার উল্লেখ আছে। তবে  চোল বা
ধঙ্গদেবের  লিপিতে রাঢ়ের অধিপতি কে ছিলেন তার কোন উল্লেখ নাই। উল্লেখ আছে দক্ষিণ রাঢ়ের রাজা রণশূর বা এক
ধর্মপালের। এই ধর্মপাল কিন্তু গৌড়াধিপতি ধর্মপাল নন।
লক্ষ্মীকর্ণ বীরভূম পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিলেন। পরে তাঁর সাথে
  গৌড়াধিপতি র সন্ধি হয়। এই সন্ধির মধ্যস্থতা করেছিলেন
অতীশ দীপংকর।
   ইছাই ঘোষের সময়কাল নিয়ে নানা মতভেদ আছে। বা তাঁর পূর্ব পুরুষ দের। বাঙ্গলা দেশের রামগঞ্জ নামক স্থানে প্রাপ্ত
তাম্রশাসনের শুরুতে ই লিখিত " বভুব রাঢ়াধীপ লব্ধজন্মা "
তিনি রাঢ়াধিপ ; মহামাণ্ডলিক। তিনি ত্রিষষ্টিগড়ের অধিপতি।
এই " ত্রিষষ্টিগড় " কি ছোট বড় মিলিয়ে ৬৩ টি গড়!
তাঁর অধীনস্হ রাজকর্মচারী দের নাম দেখে মনে হয় তিনি
রাঢ়দেশর এক জন ক্ষমতাশালী মহামাণ্ডলিক। এই মহামাণ্ডলিক উপাধি পাল রাজাদের আমলে প্রদান করা হত।
  তিনি নিশ্চিত ভাবেই রাজেন্দ্র চোল বা ধঙ্গদেবের আক্রমণের পূর্ব বর্তী বংশের ব্যক্তি। সম্ভাবনা বেশী রাজা দেবপালের সময়কালের মানুষ তিনি।
আবার এক প্রশ্ন কোথায় রাঢ়দেশ আর কোথায় রামগঞ্জ!
সেখানে কিভাবে গেল তাঁর প্রচারিত তাম্রশাসন? 
ইছাই ছিলেন তান্ত্রিক। তন্ত্রের মহা পীঠস্থান কামাখ্যা যাওয়ার পথে তিনি এই তাম্রশাসন প্রচার করেছিলেন এমন অনুমান
খুব অসঙ্গত নয় বোধহয়।
  ৬ ষষ্ঠ শতকের এক রাজা গোপচন্দ্রের উল্লেখ আমরা পাই
গলসীর নিকট বর্তী মল্লসারুল গ্রামে প্রাপ্ত তাম্রলিপি থেকে।
সেটি মল্ল সারুল লিপি হিসাবেই বিখ্যাত। রাজা গোপচন্দ্রের
  অধীনস্থ মহাসামন্ত বিজয় সেন স্বাধীন ভাবেই এই এলাকা য়
রাজত্ব করতেন। এক ব্রাহ্মন নির্বোক শর্মাকে জমি ক্রয় করে
তাঁকে দান করা হচ্ছে।
  এই গোপচন্দ্রের নামের সাথে গোপভূম এর নামের বেশ সাযুজ্য রয়েছে।
অজয় দামোদর উপত্যকা ভূমির বিস্তৃত চারণভূমি র জন্য
পশুপালক ; কৃষিজীবি ; গোপ বা সদগোপ দের বসতির
প্রাধান্যের জন্য এলাকার নাম  " গোপ ভূম "। এমন মত খুবই প্রচলিত। সদগোপ রা বাঙ্গলার অন্যতম প্রধান প্রাচীন জাত।
কর্ম অনুযায়ী জাতের পরিচয়। গোপ দের সাথে সদগোপ দের
একটা সম্পর্ক অবশ্যই ছিল। গোপ অর্থে গোয়ালা। সদগোপ্ রা মূলত কৃষি কর্মে দক্ষ। এবং তাঁরা কৃষিজীবি। উদ্বৃত্ত ফসল বা শস্য তাঁরা বিক্র‍য় ও করেন। অনেকে নিজেদের বর্ণ হিসাবে
বৈশ্য বলেন। সদগোপ দের মধ্যে কৌলীন্য প্রথা বা থাক ; ঘর এসব চালু করেছিলেন বিখ্যাত সদগোপ রাজা মহেন্দ্র।
অমরারগড়ে ছিল যাঁর রাজধানী।
স্থানীয় গোপদের পাশাপাশি বাইরে থেকেও অনেক এই পেশার
মানুষ এখানে এসে বসবাস স্থাপন করেন। পর্যাপ্ত চারণভূমি র
লোভেই তাঁরা এখানে আসেন। এঁদের ও তাই কয়েকটি থাক।
  স্থানীয় রা পশুপালনাদি সহ চাষাবাদ ও করেন। কিন্তু আহীর গোপ বা পল্লব গোপেরা সাধারণত কৃষি কর্মে যুক্ত নন।
সম্ভবত বহিরাগত দের সাথে একদল গোপেদের মিলন মিশ্রণ
থেকে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে সদগোপ রা পৃথক হয়ে যান। রাজা ভল্লুপাদ থেকে রাজা মহেন্দ্র কে সদগোপ রা নিজেদের নায়ক বলেই মনে করেন।
অপর দিকে গোপ রা  তথা কিছু সদগোপ রা ও ইছাই ঘোষ কে
তাঁদের নায়ক হিরো বলেই মনে করেন।
  রাজা ভল্লুপাদের কথা কাহিনী আলাদা করে বলা দরকার যদিও বহুশ্রুত।
  এই ভল্লুপাদ রাজার ( ভালকী যাঁর রাজধানী ছিল)  পুত্র
গোপাল। গোপালের পুত্র শতক্রতু। শতক্রতু পুত্র মহেন্দ্র এবং
অমরেন্দ্র। তারপর এগারো জনের নাম কীটদষ্ট পুঁথি র জন্য
না পাওয়া যাওয়ায়  শেষ রাজা বৈদ্যনাথ। তিনিই বহিরাক্রমনের র  জন্য রাজ্যচ্যুত হন। এবং বংশের অন্যান্য রা
নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন।
ভালকী বংশ জাতরা  " রায় " পদবী গ্রহন করেন।
রাজা মহেন্দ্রের রাজধানী ছিল অমরারগড়। তাঁর স্ত্রীর নামে এই নাম। অমরাবতী  মল্ল রাজ বংশের মেয়ে ছিলেন।
রাজা মহেন্দ্র ছিলেন নানা গূণবিশিষ্ট একজন প্রকৃত রাজা।
পুকুর দিঘি খণন সহ নানা জনহিতকর কাজ তিনি করেছিলেন। আজকের সমগ্র এলাকা দেখলে তা প্রতীয়মান হবে। এই জলাশয়। পুকুর দিঘি।
পরবর্তী প্রজন্মে  শক্তিশালী রাজপুরুষ এর কথা মাথায় রেখে
রাজপুতনা বা পশ্চিম দেশ থেকে তিনি তাঁর দুই জামাতাকে
আনয়ন করেছিলেন। বড়মেয়ে যমুনার সাথে বিবাহ হয়
শিবাদিত্য এর। আর কালিন্দি র সাথে বিবাহ হয় প্রতাপাদিত্যর। উভয় জামাতাই বহিরাগত। রাজপুত রক্ত আমদানি করার জন্যই তাঁর এই পরিকল্পনা। তিনি এই অনুভব করেছিলেন রাজ্য শাসনে শৌর্য বীর্য সম্পন্ন শক্তি শালী মানুষ চাই।
সিহুড় বা কাঁকসা রাজবংশের সাথে রাজা ভল্লুপাদের প্রত্যক্ষ যোগ নাই। তাঁরা রাজা মহেন্দ্রর দুই জামাতা। জামাতা ভ্রাতারা
বা তাঁদের বংশের সন্তানেরা নিজেদের কুমার বা কুঙার বলে
পরিচয় দেন।
আগেই যাঁর পরিচয় দেওয়া হয়েছে তিনি 
ভল্লুপাদ পুত্র গোপাল। যাঁর নামে  নাম হয়েছে  " গোপভূম "।
এমন মত ও যথেষ্ট মনোযোগ এর দাবী করে।
এবং সম্ভাবনা প্রবল বলেই আমরা মনে করি।
রাজা মহেন্দ্র র আরাধ্যা দেবী শিবাক্ষ্যা। দশভুজা এই প্রস্তর
মূর্তি রাজা মহেন্দ্র খাজুরডিহি র এক বাড়ি থেকে আনয়ন করেন। শিবাক্ষ্যা সমগ্র গ্রামের গ্রামদেবী। এই শিবাক্ষ্যা দেবীর মন্দিরে যে পুঁথি ছিল( যা এখন আর দেখা যাবেনা। হয় বিনষ্ট নয়তো লুণ্ঠিত) সেখানে যে   গাথাবলী ছিল সেখানের তথ্যেই
স্বাভাবিক ভাবেই অনেকে বিশ্বাস স্থাপন করেন।
------------ ------------ ------------ ------------ ১ পাতা শেষ।
আগামীকাল বা পরশু পরবর্তী অংশ টি দেব। 
অনেক পুরনো লেখা। 
বিস্তৃত আছে আমার  এলেমবাজার নিলামবাজার ইলামবাজার  বই টি তে। প্রকাশিত ২০২৩ কলিকাতা বই মেলা
অক্ষর যাত্রা প্রকাশনীর আনন্দগোপাল হালদার কে ফোনে অর্ডার দিলেই বাড়িতে বসে বই টি সংগ্রহ করতে পারেন। নং 9474907307

গোপভূম কথা

।। গোপভূম ঃ  কাঁকসা রাজবংশ ঃ  কথা ও কাহিনী।।  ১ ম পাতা।  ------------  প্রণব ভট্টাচার্য
প্রাচীণ  ' গোপভূম '।  অজয় দামোদর উপত্যকা ভূমির  বিস্তীর্ন
ভূভাগ   গোপভূম  নামেই প্রাচীণকাল থেকেই পরিচিত।
প্রাচীণ। কিন্তু কত প্রাচীণ এই নাম। অন্তত বাঙ্গলার পাল - সেন রাজাদের সময়কাল থেকে। না কি তার ও আগে।
পাল - সেন যুগে রাঢ় বঙ্গে ' দ্বাদশ ভূমের ' উল্লেখ পাওয়া যায়।
এই দ্বাদশ ভূম হচ্ছে  ১) বীরভূম  ২) সেনভূম ৩) শিখরভূম
৪) গোপভূম  ৫) ব্রাহ্মণ ভূম ৬) মানভূম ৭) বরাভূম ৮)  ধলভূম
৯) সিংভূম ১০) তূণভূম ১১) মল্লভূম ( মাল ভূম)  ১২) ভঞ্জ ভূম।
এই সব ভূমের সামন্ত বা ভৌমিক রাজারা প্রায় স্বাধীন ভাবেই নিজ নিজ এলাকা শাসন করতেন। কেন্দ্রীয় পাল বা সেন রাজাদের কর প্রদানকারী অধীনস্থ সামন্ত। পাল রাজাদের আমলে এঁদের কে বা এঁদের মতো অন্যান্য ভৌমিক রাজাদের
' অনন্ত সামন্তচক্র ' বলা হয়েছে। আবার এঁদের উপরেই অনেকাংশে  নির্ভর করতে হত কেন্দ্রীয় শাসক দের।
উত্তরে র কৈবর্ত বিদ্রোহের সময় রামপাল কে এই সামন্তবর্গ
সহায়তা করেছিলেন। পশ্চিমের  এই সীমান্ত এলাকা প্রহরার
ব্যবস্থা এঁরাই করতেন,  নিজেদের শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ী।
কিন্তু তেমন যুদ্ধ প্রস্তুতি এঁদের ছিল বলে মনে হয়না। রাজেন্দ্র চোল বা ধঙ্গদেব বা লক্ষ্মীকর্ণ রাঢ়দেশ জয় করে আরও উত্তরে
অনেক টা অগ্রসর হয়েছিলেন।
রাজেন্দ্র চোল এর তিরুমালাই গিরিলিপি তেই উত্তররাঢ় এবং দক্ষিণ রাঢ়ের উল্লেখ রয়েছে। তিনি রাঢ় দেশ জয় করেছিলেন।
ধঙ্গদেব রাঢ়াধিপতিকে পরাজিত এবং নিহত করে রাঢ়ের মহিষী সহ রমনী দের বন্দী করে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর খর্জুরবাহক লিপি তে তার উল্লেখ আছে। তবে  চোল বা
ধঙ্গদেবের  লিপিতে রাঢ়ের অধিপতি কে ছিলেন তার কোন উল্লেখ নাই। উল্লেখ আছে দক্ষিণ রাঢ়ের রাজা রণশূর বা এক
ধর্মপালের। এই ধর্মপাল কিন্তু গৌড়াধিপতি ধর্মপাল নন।
লক্ষ্মীকর্ণ বীরভূম পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিলেন। পরে তাঁর সাথে
  গৌড়াধিপতি র সন্ধি হয়। এই সন্ধির মধ্যস্থতা করেছিলেন
অতীশ দীপংকর।
   ইছাই ঘোষের সময়কাল নিয়ে নানা মতভেদ আছে। বা তাঁর পূর্ব পুরুষ দের। বাঙ্গলা দেশের রামগঞ্জ নামক স্থানে প্রাপ্ত
তাম্রশাসনের শুরুতে ই লিখিত " বভুব রাঢ়াধীপ লব্ধজন্মা "
তিনি রাঢ়াধিপ ; মহামাণ্ডলিক। তিনি ত্রিষষ্টিগড়ের অধিপতি।
এই " ত্রিষষ্টিগড় " কি ছোট বড় মিলিয়ে ৬৩ টি গড়!
তাঁর অধীনস্হ রাজকর্মচারী দের নাম দেখে মনে হয় তিনি
রাঢ়দেশর এক জন ক্ষমতাশালী মহামাণ্ডলিক। এই মহামাণ্ডলিক উপাধি পাল রাজাদের আমলে প্রদান করা হত।
  তিনি নিশ্চিত ভাবেই রাজেন্দ্র চোল বা ধঙ্গদেবের আক্রমণের পূর্ব বর্তী বংশের ব্যক্তি। সম্ভাবনা বেশী রাজা দেবপালের সময়কালের মানুষ তিনি।
আবার এক প্রশ্ন কোথায় রাঢ়দেশ আর কোথায় রামগঞ্জ!
সেখানে কিভাবে গেল তাঁর প্রচারিত তাম্রশাসন? 
ইছাই ছিলেন তান্ত্রিক। তন্ত্রের মহা পীঠস্থান কামাখ্যা যাওয়ার পথে তিনি এই তাম্রশাসন প্রচার করেছিলেন এমন অনুমান
খুব অসঙ্গত নয় বোধহয়।
  ৬ ষষ্ঠ শতকের এক রাজা গোপচন্দ্রের উল্লেখ আমরা পাই
গলসীর নিকট বর্তী মল্লসারুল গ্রামে প্রাপ্ত তাম্রলিপি থেকে।
সেটি মল্ল সারুল লিপি হিসাবেই বিখ্যাত। রাজা গোপচন্দ্রের
  অধীনস্থ মহাসামন্ত বিজয় সেন স্বাধীন ভাবেই এই এলাকা য়
রাজত্ব করতেন। এক ব্রাহ্মন নির্বোক শর্মাকে জমি ক্রয় করে
তাঁকে দান করা হচ্ছে।
  এই গোপচন্দ্রের নামের সাথে গোপভূম এর নামের বেশ সাযুজ্য রয়েছে।
অজয় দামোদর উপত্যকা ভূমির বিস্তৃত চারণভূমি র জন্য
পশুপালক ; কৃষিজীবি ; গোপ বা সদগোপ দের বসতির
প্রাধান্যের জন্য এলাকার নাম  " গোপ ভূম "। এমন মত খুবই প্রচলিত। সদগোপ রা বাঙ্গলার অন্যতম প্রধান প্রাচীন জাত।
কর্ম অনুযায়ী জাতের পরিচয়। গোপ দের সাথে সদগোপ দের
একটা সম্পর্ক অবশ্যই ছিল। গোপ অর্থে গোয়ালা। সদগোপ্ রা মূলত কৃষি কর্মে দক্ষ। এবং তাঁরা কৃষিজীবি। উদ্বৃত্ত ফসল বা শস্য তাঁরা বিক্র‍য় ও করেন। অনেকে নিজেদের বর্ণ হিসাবে
বৈশ্য বলেন। সদগোপ দের মধ্যে কৌলীন্য প্রথা বা থাক ; ঘর এসব চালু করেছিলেন বিখ্যাত সদগোপ রাজা মহেন্দ্র।
অমরারগড়ে ছিল যাঁর রাজধানী।
স্থানীয় গোপদের পাশাপাশি বাইরে থেকেও অনেক এই পেশার
মানুষ এখানে এসে বসবাস স্থাপন করেন। পর্যাপ্ত চারণভূমি র
লোভেই তাঁরা এখানে আসেন। এঁদের ও তাই কয়েকটি থাক।
  স্থানীয় রা পশুপালনাদি সহ চাষাবাদ ও করেন। কিন্তু আহীর গোপ বা পল্লব গোপেরা সাধারণত কৃষি কর্মে যুক্ত নন।
সম্ভবত বহিরাগত দের সাথে একদল গোপেদের মিলন মিশ্রণ
থেকে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে সদগোপ রা পৃথক হয়ে যান। রাজা ভল্লুপাদ থেকে রাজা মহেন্দ্র কে সদগোপ রা নিজেদের নায়ক বলেই মনে করেন।
অপর দিকে গোপ রা  তথা কিছু সদগোপ রা ও ইছাই ঘোষ কে
তাঁদের নায়ক হিরো বলেই মনে করেন।
  রাজা ভল্লুপাদের কথা কাহিনী আলাদা করে বলা দরকার যদিও বহুশ্রুত।
  এই ভল্লুপাদ রাজার ( ভালকী যাঁর রাজধানী ছিল)  পুত্র
গোপাল। গোপালের পুত্র শতক্রতু। শতক্রতু পুত্র মহেন্দ্র এবং
অমরেন্দ্র। তারপর এগারো জনের নাম কীটদষ্ট পুঁথি র জন্য
না পাওয়া যাওয়ায়  শেষ রাজা বৈদ্যনাথ। তিনিই বহিরাক্রমনের র  জন্য রাজ্যচ্যুত হন। এবং বংশের অন্যান্য রা
নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন।
ভালকী বংশ জাতরা  " রায় " পদবী গ্রহন করেন।
রাজা মহেন্দ্রের রাজধানী ছিল অমরারগড়। তাঁর স্ত্রীর নামে এই নাম। অমরাবতী  মল্ল রাজ বংশের মেয়ে ছিলেন।
রাজা মহেন্দ্র ছিলেন নানা গূণবিশিষ্ট একজন প্রকৃত রাজা।
পুকুর দিঘি খণন সহ নানা জনহিতকর কাজ তিনি করেছিলেন। আজকের সমগ্র এলাকা দেখলে তা প্রতীয়মান হবে। এই জলাশয়। পুকুর দিঘি।
পরবর্তী প্রজন্মে  শক্তিশালী রাজপুরুষ এর কথা মাথায় রেখে
রাজপুতনা বা পশ্চিম দেশ থেকে তিনি তাঁর দুই জামাতাকে
আনয়ন করেছিলেন। বড়মেয়ে যমুনার সাথে বিবাহ হয়
শিবাদিত্য এর। আর কালিন্দি র সাথে বিবাহ হয় প্রতাপাদিত্যর। উভয় জামাতাই বহিরাগত। রাজপুত রক্ত আমদানি করার জন্যই তাঁর এই পরিকল্পনা। তিনি এই অনুভব করেছিলেন রাজ্য শাসনে শৌর্য বীর্য সম্পন্ন শক্তি শালী মানুষ চাই।
সিহুড় বা কাঁকসা রাজবংশের সাথে রাজা ভল্লুপাদের প্রত্যক্ষ যোগ নাই। তাঁরা রাজা মহেন্দ্রর দুই জামাতা। জামাতা ভ্রাতারা
বা তাঁদের বংশের সন্তানেরা নিজেদের কুমার বা কুঙার বলে
পরিচয় দেন।
আগেই যাঁর পরিচয় দেওয়া হয়েছে তিনি 
ভল্লুপাদ পুত্র গোপাল। যাঁর নামে  নাম হয়েছে  " গোপভূম "।
এমন মত ও যথেষ্ট মনোযোগ এর দাবী করে।
এবং সম্ভাবনা প্রবল বলেই আমরা মনে করি।
রাজা মহেন্দ্র র আরাধ্যা দেবী শিবাক্ষ্যা। দশভুজা এই প্রস্তর
মূর্তি রাজা মহেন্দ্র খাজুরডিহি র এক বাড়ি থেকে আনয়ন করেন। শিবাক্ষ্যা সমগ্র গ্রামের গ্রামদেবী। এই শিবাক্ষ্যা দেবীর মন্দিরে যে পুঁথি ছিল( যা এখন আর দেখা যাবেনা। হয় বিনষ্ট নয়তো লুণ্ঠিত) সেখানে যে   গাথাবলী ছিল সেখানের তথ্যেই
স্বাভাবিক ভাবেই অনেকে বিশ্বাস স্থাপন করেন।
------------ ------------ ------------ ------------ ১ পাতা শেষ।
আগামীকাল বা পরশু পরবর্তী অংশ টি দেব। 
অনেক পুরনো লেখা। 
বিস্তৃত আছে আমার  এলেমবাজার নিলামবাজার ইলামবাজার  বই টি তে। প্রকাশিত ২০২৩ কলিকাতা বই মেলা
অক্ষর যাত্রা প্রকাশনীর আনন্দগোপাল হালদার কে ফোনে অর্ডার দিলেই বাড়িতে বসে বই টি সংগ্রহ করতে পারেন। নং 9474907307

Saturday, 8 February 2025

বীরভূমের বৈচিত্র্যময় মন্দির

বীরভূম কে বলা হয় ' ধর্মসাধনার জাদুঘর "। নানা ধর্মীয় আন্দোলনের স্রোত বীরভূমের উপর দিয়ে বয়ে গেছে।  
 তৈরি হয়েছে নানা মন্দির মসজিদ। 
 সমগ্র রাঢ়বঙ্গ তো দূর গোটা বীরভূম কে আলোচনায় ধরা সম্ভব নয়। সংক্ষিপ্ত এক রূপরেখা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। 
 জৈন ধর্ম বীরভূমের উপর নেমে এসেছে। কোন জৈন মন্দির এখানে যদিও নাই কিন্তু ছিল। ঘুড়িষা গ্রামে জৈন তীর্থঙ্কর সর্পছত্রধারী পার্শ্বনাথ জীর মূর্তি পথের ধারে পড়ে আছে। 
 গ্রামে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা নানা জৈন মূর্তি ছোট বেলায় দেখেছি। ভগ্ন। ভাঙ্গা যে হয়েছে কঠিন আঘাতে তা পরিষ্কার বোঝা যায়। 
 জাতক কাহিনীতে সত্যতা যদি কিছু মাত্র থাকে তাহলে বলা যায় বুদ্ধদেব বীরভূমের উপর দিয়ে হেঁটে পুণ্ড্রবর্ধনে গিয়েছিলেন। ইলামবাজার নিকট বর্তী দেবীপুর গ্রামে 
 দেবী সুহ্মেশ্বরী র ভগ্ন মূর্তির পাদদেশে খোদিত ছিল 
 " যে ধর্মের  হেতু হইতে উৎপত্তি, ------------  " যে ধর্ম্মা  হেতু 
 প্রভবা হেতুং তেষাং তথাগতহ্যবদৎ। তেষাঞ্চ যো নিরোধঃ
এবং বাদি মহাশ্রমণঃ " 
এখানের ধর্মরাজের নাম " সুহ্মরায় "। সুহ্ম অতি প্রাচীণ শব্দ। 
 রাঢ়দেশের প্রাচীণ নাম ই " সুহ্ম "। মহাভারতের টীকাকার নীলকন্ঠ বলেছেন " সুহ্মঃ  রাঢ়া " 

 তাছাড়া ' বুদ্ধরায় ' বা বুধোরায় বা বুদ্ধেশ্বর শিবের নামে বেঁচে আছে বুদ্ধের স্মৃতি। কোন বৌদ্ধ স্তুপ বা মন্দিরের নিদর্শন নাই। 
 হয়তো ছিল। বা হয়ত এখনও মাটির নীচে। 
 বাঙ্গলার ইতিহাস তো অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাটির নীচে ই। 
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ 

 বৈচিত্রময় বীরভূম ঃ  বৈচিত্র্য এর ভূ প্রকৃতি তে। মাটিই তো কথা বলে। মানুষের রক্তে। তার শরীরে, মনে। 
 বিচিত্র এই বীরভূম। মননের বৈচিত্র্য। সেই বৈচিত্র্য থেকেই 
 মন্দির স্থাপত্য রীতি র এত বিচিত্রতা বীরভূম ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায়না। বীরভূম কে বলা হয় " ধর্মসাধনার জাদুঘর "। নানা ধর্মীয় আন্দোলনের স্রোত বয়ে গেছে বীরভূমের উপর দিয়ে। 
জৈন, সহজিয়া বৌদ্ধ, শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণবীয় এবং ইসলাম। সুফীবাদের প্রভাব। নানা ধর্মীয় স্রোত। মানুষের মনোজগতে এর সুগভীর প্রভাব আছে। 
 চালা, রত্ন, শিখর, দেউল সহ ভিত্তিভূমি থেকে কৌণিক ভাবে 
 উপরে উঠে যাওয়া রীতি  সহ নানা রীতির সমাবেশ বীরভূমে। 
 প্রস্তর নির্মিত, ল্যাটেরাইট বোল্ডার ( কামানো পাথর ও বলা হয়) । ছাড়া বাকী সব মন্দির ই ইঁটের তৈরী। নিকট বর্তী 
ছোট নাগপুর মালভূমি থেকে পাথর এনে তাকে নির্দিষ্ট রূপ দেওয়ার জন্য যে অর্থ বিনিয়োগ দরকার তা এখানে খুব কমই হয়েছে। স্থানীয় ভূস্বামী বা ধনী ব্যবসায়ী বা রাজকর্মচারী রাই বা পণ্ডিত রা 
মন্দির গুলি নির্মান করিয়েছিলেন। 

বীরভূমের মন্দির স্থাপত্য এবং তার অলংকরণ বাঙ্গলার মন্দির স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। 
বাঙ্গলার সমাজ বিবর্তনের ও বাঙালির মনস্বিতার ও ভাবপ্রবনতা র চিত্র এই মন্দির ভাস্কর্যের মধ্যে প্রতিফলিত। 
মঙ্গলকাব্য সমূহের সমাজ চিত্রণের কথাকে মাথায় রেখেও বলতে হচ্ছে " পটভূমির প্রসারে, কল্পনার বিস্তারে, এবং শিল্প সৃষ্টির দক্ষতায় বাঙ্গলার মন্দির শিল্পকে সমসাময়িক যুগের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম দলিল বলে অভিহিত করা চলে। "
 " বাঙ্গলার মন্দির বাঙ্গালীর জাতীয় তীর্থ। "
বাঙ্গালী র আন্তরহৃদয়ের পরিচয় দিতে, তার স্পর্শশীলতার, তার আনন্দ বেদনার এবং সর্বোপরি তার আধাত্মিক অনুভূতির ইঙ্গিতে বাংলার দেবদেউল গুলি একান্তই অপ্রতিদ্বন্দ্বী। " ( কল্যাণ কুমার গাঙ্গুলি)  
  
প্রস্তর নির্মিত দেউল ঃ রসা বড়রা,  কবিলাসপুর, পাঁচড়া, মহুলা, রসা, পারশুণ্ডি । নাগর রীতি র 
 ল্যাটেরাইট বোল্ডার নির্মিত, ভিত্তি  ঃ দুবরাজপুর, মল্লারপুর, বক্রেশ্বর  ইত্যাদি। এখন সিমেন্ট প্লাষ্টার পড়ায় আর ঠিক বোঝা যায়না। 
 কোথাও ভিত্তি  ল্যাটেরাইটের,  উপরিভাগ ইঁটের। চূণ সুরকির গাঁথনি। এবং চূনের প্লাষ্টার।।
রসার প্রস্তর নির্মিত দেউল খুবই বিখ্যাত। সংস্কার হয়েছে। কিন্তু আমলকের কাজ করা যায়নি। 
শৈব এবং শাক্ত সাধনার স্থল। এখানের বিশাল বটবৃক্ষের বাহু বন্ধনে রয়েছে আরও কয়েকটি ছোট মন্দিরের ধংসাবশে্ষ। শোনা যায় বর্ধমানের সর্পি গ্রামের জমিদার অর্জুন রায় চৌধুরী এই মন্দির গুলির নির্মাতা। 
 উচ্চতার দিক দিয়ে ঃ ভাণ্ডীরবন। ( এখানে বিতর্ক আছে 
 পুরাতত্ত্ব বিভাগ বলেছেন প্রস্তর নির্মিত কিন্তু অন্য বিশেষজ্ঞ রা ম্যাককাচ্চন সাহেব সহ বলেছেন ইঁট নির্মিত) 
 প্রাচীন মন্দিরের ভিতের উপরে দেওয়ান রামনাথ ভাদুড়ি কর্তৃক নির্মিত। সংস্কারে সংস্কারে মূল চেহারায় পরিবর্তন যা আসা স্বাভাবিক তাই হয়েছে। 
 ১৭৫৪ খ্রীস্টাব্দে নির্মিত। প্রায় ৪৫ ফুট উচ্চ। 
* কলেশ্বর।  ঢেকার রামজীবন রায় কর্তৃক নির্মিত শিবমন্দির। 
* ডাবুক। ডাবুকেশ্বর শিবমন্দির। সর্বোচ্চ শিখর দেউল।
** অসামান্য ফুলপাথরের অলংকরণ সমন্বিত। 
গণপুর। গণপুর কে বলা হয় এখানে ফুলপাথরের মহাকাব্য রচিত হয়েছে। অসাধারণ এখানের মন্দিরের কাল। মণ্ডল বাড়ি সহ কালীতলার  মন্দির গুচ্ছ । আসামান্য অলংকৃত এখানের দোলমঞ্চ টি। 
মুলুটি, মাসড়া, গণপুরের মন্দিররের অন্যতম  বৈশিষ্ট্য এখানে চালা রীতি র মন্দিরের আর্চের  উপরে মন্দিরলিপি সমূহ। যা নিয়ে আলাদা কাজ করা যায়। 
** অনুপম ফুলপাথরের অলংকরণ সমন্বিত মন্দিরের অন্যতম সিউড়ি সোনাতোড় পাড়ার চালা রীতি র রঘুনাথ জীর মন্দির। অসামান্য এর অলংকরণ। শোনা যায় এক ঘণশ্যাম দাস বাবাজী ভিক্ষালব্ধ অর্থে এই মন্দির নির্মান করিয়েছিলেন। 
বিগ্রহ হীন। চুরি হয়ে গেছে। 
* দুবরাজপুর এর মন্দির। নায়ক পাড়ার মন্দিরে চমৎকার জ্যামিতিক ডিজাইন এর কাজ আছে। 
এছাড়া ওঝা পাড়ার মন্দিরদুটি র কাজ চমৎকার। 
* হেতমপুর এর চন্দ্রনাথ মন্দির। একটি ব্যতিক্রমী মন্দির। এখানের টেরাকোটা কাজের মাধ্যমে বিদেশি জীবন চিত্রের ছবি আছে। 
*বিশালাকৃতি। নবরত্ন মন্দির। ৮০ ফুট উচ্চ। ২৫ ফুট বর্গের বিশাল মন্দির। সামনের অংশের টেরাকোটার অলংকরণ, মূলতঃ রামায়ণ কাহিনী র 
রাম রাবণ এর যুদ্ধ।বানর সেনাদের ভূমিকা চমৎকার ফুটেছে। এছাড়াও আছে সামাজিক চিত্রন। বর্ধমানের রাজা কীর্তিচাঁদ জননী ব্রজকিশোরী দেবী এই মন্দির নির্মান করিয়েছিলেন 
 জেলা গেজেটিয়ার অনুযায়ী - 
* ঘূড়িষা রঘুনাথ জীর মন্দির। ১৬৩৩ সাঃ অব্দে। নির্মিত। জেলার  প্রাচীণতম।! অসাধারণ সুক্ষ্ম এর টেরাকোটা অলংকরণ।স্বর্ণালংকারের সৌন্দর্য এর দেওয়াল জুড়ে। পণ্ডিত রঘুত্তম আচার্য এর নির্মাতা। অতি প্রাচীণ শিলালেখ আছে। 
* ঘুড়িষা বেণেপাড়ার ক্ষেত্রনাথ দত্ত কর্তৃক নির্মিত 
লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির। হাই রিলিফের অতি চমৎকার কাজ এখানে রয়েছে। চৈতন্য লীলা, ত্রিপুরাসুন্দরীর অসাধারণ প্যানেল। মধ্য অষ্টাদশ শতকের নির্মান। 
* ইলামবাজারের তিনটি বিখ্যাত মন্দির। 
অষ্টকোনাকৃতি গৌরাঙ্গ মন্দির। হাটতলায়। আসামান্য এর জ্যামিতিক ডিজাইন। নকল দরজা। 
এবং ফুলপাতার নক্সা। 
* ব্রাহ্মণ পাড়ার  বিষ্ণু দালান। উচ্চ বেদীর উপরে  বৃহদাকৃতির পঞ্চরত্ন মন্দির। অসাধারণ এর টেরাকোটা র কাজ। রাসমণ্ডল, দুর্গাপ্যানেল, চৈতন্য লীলা এর কাজ। হাই রিলিফের কাজ ভাস্কর্যটি দিকে গেছে। ক্ষুদিরাম বন্দ্যোপাধ্যায় এর নির্মাতা। নির্মানকাল মধ্য অষ্টাদশ শতক। 
* রামেশ্বর শিবমন্দির।  রামধন চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শিবমন্দির। ছোট্ট ফলকে আসামান্য বিভঙ্গে রাধাকৃষ্ণ।হাইরিলিফে জগদ্ধাত্রী এবং দুর্গামূর্তি এর অন্যতম প্রধান কাজ। 
* সুরুলের মন্দির। জমিদার সরকার বাড়ির ছোট তরফের শিবমন্দির এর টেরাকোটা অলংকরণ ছিল অসাধারণ। যথাযথ ভাবেই সংস্কার হয়েছে। 
* সুপুরের জোড়া মন্দির।  অষ্টকোনাকৃতি মন্দির এবং দেউল রীতি র মন্দির এবং তার টেরাকোটার কাজ চমৎকার। 
* বীরভূমের অন্যতম জোড়বাংলো মন্দির রীতি র মন্দির রয়েছে ইটাণ্ডা য়। এই মন্দির এবং সাধুখান পাড়ার শিবমন্দিরের টেরাকোটা কাজ দৃষ্টি নন্দন। 

**
ঘুড়িষা রঘুনাথ জী র মন্দির। জেলার প্রাচীণতম মন্দির বলে কথিত। এটির স্থাপনাকাল ১৫৫৫ শকাব্দ। ১৬৩৩ খ্রীস্টাব্দে। অসামান্য এর টেরাকোটা অলংকরণ। 
কিন্তু রামপুরহাট থানা অন্তর্গত  মাসড়া গ্রামের শিবমন্দির টি ১৫৩৩ শকাব্দে অর্থাৎ ১৬৩১ খ্রীস্টাব্দে নির্মিত। 
মাসড়া তখন মুলুটির রাজাদের অধীনস্থ। 
মন্দির টি ' রাজলোহাপাল ' সিতবদাস তাঁর মা সিদ্ধেশ্বরী র নামে প্রতিষ্ঠা করেন। 
 এই মন্দিরের অলংকরণ ছিল ফুলপাথরের। 
 সংস্কারের নামে সিন্থেটিক রঙের প্রলেপে ঢেকে গেছে প্রাচীণ কারুকার্যের সৌন্দর্য। 
 এই মন্দিরের প্রাচীণ প্রতিষ্ঠা লিপি টি এইরূপ - 
 শ্রী শ্রী রামাই ১৫৫৩ সেবক রাজলোহাপাল। ৪২৩ ××× সিতবদাস কর্মকারের মাতা শ্রী মতী সিদ্ধর শ্রী ঈশ্বর শিব স্থাপনাকারি ×××   ×××  
 মুলুটি নিকট বর্তী এই মাসড়া গ্রাম ছিল লোহা কেনাবেচা র এক কেন্দ্র। প্রাচীণ পদ্ধতিতে লোহা গলানো হত। কর্মকার রা প্রভূত ধনী হয়ে উঠেছিলেন। 
 পরবর্তী তে এই সকল এলাকা ' লোহামহল ' নামে  ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর ইজারার মধ্যে আসে। 
 গ্রামে ঝামার স্তুপে এখনও অনেক লোহামল বা slag পাওয়া যায়। 
 মাসড়া গ্রামের এই ছোট্ট শিবমন্দির টি প্রতিষ্ঠাকালীন হিসাব অনুযায়ী বীরভূম জেলার প্রাচীন তম মন্দির। 
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ 
অনেক বন্ধুর সেদিনের আমার কথিকা,আকাশবাণী  শান্তিনিকেতনে শোনা হয়নি। 
অনেকে শুনেছেন। 
সঞ্চালক ছিলেন কমলেশ্বর চট্টোপাধ্যায় 
তাঁদের জন্যই এই লেখা। মোটামুটি এই লেখার ভিত্তিতে।

আমার বর্ধমান ঃ আমার বীরভূম

আমি থাকি অজয়ের দক্ষিণে। পশ্চিম বর্দ্ধমান জেলায়।  অজয়ই প্রাকৃতিক  সীমারেখা। উত্তরে বীরভূম। দক্ষিণে বর্ধমান। সেই কবেকার এই সীমারেখা। অজয়ের উত্তরে উত্তর রাঢ়। বজ্রভূমি, বীরভূমি - বীরভূম। ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ১৮০৬ সালে অজয় কে  প্রাকৃতিক সীমারেখা হিসাবে গ্রহণ করে। 
ওপারে ইলামবাজার। বীরভূমের প্রবেশ দ্বার। 
আমাদের নিকটতম গঞ্জ। এপার ওপারের  নিত্য যাতায়াত। সীমান্তের এই অংশের মানুষ দের বরাবরের টান ওপারের প্রতি। পানাগড়, দুর্গাপুর
যাওয়া অপেক্ষা বোলপুর যাওয়ার প্রতি একটা প্রবণতা কাজ করে। এই এলাকার অনেক সম্পন্ন
মানুষ ওপারে চলে গেছেন। ইলামবাজার বা বোলপুরে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন। 
আমারও ইচ্ছা ছিল।কিন্তু নানা কারণে হয়নি।  ইলামবাজার হাইস্কুলে পড়েছি। 
কিছুদিন পড়িয়েছি। বোলপুর কলেজে পড়েছি। 
সামাজিক, সাংস্কৃতিক নানা কর্মকাণ্ডে বীরভূমে
অনেক গুলি বছর কাটিয়েছি। বীরভূমের প্রতি 
আলাদা এক ভালোবাসা কাজ করে। সেই ভালোবাসা থেকে ই আমার সামান্য বীরভূম চর্চা। 
আমার লেখালেখির বড় অংশ জুড়েই বীরভূম। 
তাই প্রথম বই টি করতে পেরেছি ইলামবাজার কে কেন্দ্র করেই।  কুঠিবাড়ি ভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্য। 
এবং ইলামবাজারের কথা ও কাহিনী। 
অন্যান্য যে সব লেখা এই সমাজমাধ্যমে, ফেসবুক পেজে বা ব্লগে রয়েছে বা নানা পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেই সব লেখা একত্রিত করার ইচ্ছা  আছে। ইচ্ছা ই - বুক করার ও। আমি চাই আমার সব লেখা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে। 
কিনে বই খুব কম জনেই পড়ে। আমার ধারণা আগামী তে মানুষ এখানেই পড়ে নিতে চাইবে। 
 কিন্তু বইমেলায় বেশ ভিড় হয়। বই এর একটা আলাদা মূল্য আছে অস্বীকার করিনা। বই, বই ই। 
তবু অনেক কথা আছে। আমার যা অভিজ্ঞতা সে না হয় আরেক দিন বলা যাবে। 
আজ বীরভূম বিষয়ক লেখালেখির একটা  তালিকা। 
**বীরভূমের লোহা মহল 
**মুলুটির মন্দির রাজি, 
**গণপুরের মন্দির, ' ফুলপাথরের মহাকাব্য'
**মল্লারপুর 
**রাজনগর কথা 
**রসা - বড়রা র প্রস্তর দেউল 
**বীরভূমের বৈচিত্র্যময় মন্দির 
**দুবরাজপুর কথা ও কাহিনী 
**দুবরাজপুরের মন্দির 
**হেতমপুর কাহিনী। চন্দ্রনাথ মন্দির। রাজবাড়ি 
**কোটা - শীর্ষা 
**টিকরবেতার পিতল শিল্পের কথা 
**জয়দেব কেন্দুলী নিয়ে নানা লেখা 
**রাধাবিনোদ মন্দির। মোহান্ত অস্থল এর পিতলের রথ, গীতগোবিন্দম এর জয়দেব 
মানুষ জয়দেবের খোঁজে 
**ধর্মমঙ্গলের অন্যতম কবি নরসিংহ বসুএবং তাঁর  রাজনগর যোগ। 
**১৬৩৩ সালে নির্মিত ঘুড়িষার রঘুনাথজীর মন্দির এবং ১৬৩১ সালে মাসড়া গ্রামে তৈরি মন্দির। একটি তুলনামূলক আলোচনা। 
**ঘুড়িষা গ্রামের দুই বিখ্যাত মন্দির 
**ইলামবাজার। গঞ্জ ইলামবাজার কথা। 
**ইলামবাজারের মন্দির 
**ইলামবাজার কেন্দ্রিক নানা বিধ লেখা। 
**'তুলাপট্টিতে আর বসেনা নীলামের হাট '
**আনন্দবাজার পত্রিকায় বড় প্রবন্ধ। 
**সুরুল, রাইপুর, আদমপুর, চন্দনপুর, মির্জাপুর, সুপুর, ইটাণ্ডা নিয়ে নানা লেখা এবং ছবি। 
**এছাড়াও যেখানের সম্বন্ধে হয়তো লেখা হয়নি সেখানের মন্দির টেরাকোটার ছবি। 
** জয়দেব কেন্দুলী কে নিয়ে এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে আকাশবাণী কলকাতায় তিনবার বলেছি। 
** ইলামবাজার এবং এপার ওপার এর দুই টি পিতলের রথ নিয়ে আকাশবাণী শান্তিনিকেতনে কয়েকবার বলেছি। 
মনে হতে পারে নিজের ঢাক নিজেই পেটাচ্ছি। কিন্তু না। এই লেখাএক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই লিখেছি। 
বীরভূমের বিশিষ্ট বন্ধুদের ট্যাগ করেছি। 

** আপনারা জানেন মন্দির টেরাকোটা আমার অন্যতম প্রিয় বিষয়। বনকাটির মন্দির এবং ইলামবাজারের মন্দির দেখেই সেই বালক বয়সেই এই ভালোবাসার উন্মেষ। 
যেমন ইলামবাজারের আরস্কাইন সাহেবের কুঠিবাড়ির ভগ্নাবশেষ বা তাঁদের পরিবারের সমাধি ক্ষেত্র থেকেই,নীল ও গালা শিল্পের একদা বিখ্যাত কেন্দ্র সেই প্রাচীণ ইলামবাজার কে খোঁজা। **ইলামবাজারের চারপাশ কে খোঁজা। যেমন ঊষহর, ধল্লা, দ্বারোন্দা, দেউলী, ইত্যাদি স্থান সম্পর্কে লেখা। 
এখনকার এই মাধ্যমের সুবিধা হচ্ছে 
দৃশ্য শ্রাব্য মাধ্যম। এখানে আছি দীর্ঘদিন। কয়েক হাজার ছবি নষ্ট হয়ে গেলেও, এখনও আছে কয়েক হাজার। 
বিরাট বিস্তৃত ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে আমার সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখেই আমি নির্দিষ্ট একটা ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখতে চেয়েছি। 
**প্রাচীণ গোপভূমের অন্তর্ভুক্ত পরগণা সেনপাহাড়ী এবং বীরভূমের সেনভূম তথা 
অজয় তীরের দুপারের মানুষের জীবন কথা। 
আমার সীমিত সামর্থে এই কাজটুকুই মাত্র করতে পেরেছি। 
**আমার কোন উচ্চাভিলাষ নাই। আমি সামান্য এক আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী। ক্ষেত্রসমীক্ষক। কোন স্থান নিজের চোখে না দেখে, আমি কোন লেখা লিখিনা। 
আমি কোন 'মুখ' নই। যেমন " বীরভূমের মুখ "। কি "পুরুলিয়ার মুখ " বা "বাঁকুড়ার মুখ "। সে সামর্থ্য নেই। অনেক জ্ঞানী, পণ্ডিত, বিদগ্ধ লেখক  জনেরা আছেন। 
আমি আঞ্চলিক ইতিহাসের  গল্পকার, কথাকার। সমাজমাধ্যমের বন্ধুরা বলেছেন " সেনপাহাড়ীর কথাকার"
কেউ " সেনপাহাড়ীর কথক ঠাকুর " 
কেউ " জঙ্গলমহলের কথাকার "
এই রকম নানা অভিধা। যথেষ্ট। 
বাইরের বন্ধুরা জানেন আমি বীরভূমের। 
বীরভূম কি জানে কি জানি! 

যে সব সংকলন গ্রন্থে আমার বীরভূম বিষয়ক প্রবন্ধ গুলি প্রকাশিত হয়েছে 
তার একটা তালিকা যদি পারি, দেব। 
আপনাদের জ্ঞাতার্থে।  কিছু কাজ তো করেছি। ভবিষ্যৎ ই বলবে। 
অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার। 
বীরভূমের অনেক বন্ধুকে ট্যাগ করেছিলাম। 
কেউ কোন সাড়াশব্দ দেননি। 
------------ ------------ ------------ ------------ ©  প্রণব ভট্টাচার্য। 
** ইলামবাজার কেন্দ্রিক আমার ছোট্ট বই টি র 
 নাম " এলেমবাজার নিলামবাজার ইলামবাজার "
দাম মাত্র ২০০/ টাকা। বন্ধুরা ঘরে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন। পরিবেশক অক্ষরযাত্রা প্রকাশনী র আনন্দ গোপাল হালদার। ফোন নং 9474907307. ফোনে অর্ডার দিলেই হল। 
------------ ------------ ------------ ------------ 
আমাকে ফেসবুকে ই পাবেন। অনুরোধ না জানালে কোথাও লিখিনা। ফেসবুক পেজে শুধু রিলের ভীড়। ওখানে লেখা কেউ পড়েননা। 
বাংলা ব্লগের তেমন চাহিদা নাই। তবুও একটা ব্লগ আছে। 
https:// matirpradip.blogspot.com 
ফেসবুক পেজ। Pranab's canvas 
ইউ টিউব চ্যানেল খুলেছিলাম। চালাতে পারিনি। 
এই। 
------------ ------------ ------------ ------------ ----
" ভ্রমি বীরভূমের পথে  - এই রকমের নাম দিয়ে শুধু বীরভূম নিয়ে একটা বই করার ইচ্ছা। 
কোন প্রকাশক এগিয়ে আসবেন! 
------------ ------------ ------------ ------------ ------------

Friday, 7 February 2025

তেপান্তর। পছন্দের গন্তব্য

তেপান্তর। 
তেপান্তর নাট্য গ্রাম। এক সৃষ্টি। 
" সৃষ্টি সুখে, সৃজন আনন্দে " গড়া এই নাট্যগ্রাম। 
দলগত প্রচেষ্টা। দীর্ঘ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রম। 
   তেপান্তর তার  ফসল।"
আমাদের আনন্দ নিকেতন। 
আপনারাও আসুন। উপভোগ করুন। 

যদি এখনও এখানে না এসে থাকেন 
অবশ্যই এই শীতে একবার আসুন। 
তারপর তো দোল মেলা আছেই। 
যাঁরা হৈ হট্টগোল এড়িয়ে একটু নিরিবিলি তে 
নিজের সময় কাটাতে চান তাঁদের জন্য চমৎকার এক জায়গা। 
আসুন। থাকুন এখানে। চারপাশ ঘুরে দেখুন। 
আর যদি আমার কাছ থেকে চারপাশের গল্প ইতিহাস টা শুনে নিয়ে বের হন বেড়ানো টা অন্যরকম হয়ে যাবে। 
আসুন। ভালো লাগবেই।
** পশ্চিম বর্দ্ধমান এর কাঁকসা থানার, অযোধ্যা বনকাটি এলাকা র সাতকাহনিয়া গ্রামে এই তেপান্তর নাট্য গ্রাম। নিকট বর্তী বাসস্টপ পানাগড় মোরগ্রাম হাইওয়ে র উপর এগারো মাইল। 
গুগুল ম্যাপে দেখুন।
যোগাযোগ, বুকিং। তাপস চ্যাটার্জি। নং 95630 14447

** বন্ধুরা পোষ্ট টি শেয়ার করুন। এই অনুরোধ। 
আজকের আনন্দবাজার পত্রিকার জেলার পাতার কড়চা য় তেপান্তর কে নিয়ে লেখা। 
ধন্যবাদ আনন্দবাজার। 
সামান্য ত্রুটি।  রঘুনাথপুরের সাতকাহনিয়া নয়। 
অযোধ্যা বনকাটি এলাকা য় সাতকাহনিয়া গ্রামের পূর্ব অংশে এই তেপান্তর নাট্য গ্রাম।

নরসিংহ বসুর ধর্মমঙ্গল ঃ সমাজ চিত্রণ

নরসিংহ বসু এবং তাঁর ধর্মমঙ্গল কাব্য ঃ সমাজচিত্রন।  প্রণব ভট্টাচার্য 

 মঙ্গল কাব্য গুলির মধ্যে অনেকে ধর্মমঙ্গল কাব্য কে রাঢ়ের জাতীয় মহাকাব্য বলেছেন। 
 যদিও আমরা অনেকে মনে করি অবশ্যই মধ্যমনি ধর্মমঙ্গল। কিন্তু অন্যান্য মঙ্গল কাব্য গুলির ভূমিকা মোটেই নগন্য নয়। বিশেষত 
 মনসা মঙ্গল, চণ্ডী মঙ্গল। এই তিন একত্রে এক মহাকাব্যিক পরিমণ্ডল সৃষ্টি করে। তবে নিশ্চয়ই ধর্মমঙ্গল,  অপর মঙ্গল কাব্য গুলির থেকে পৃথক। 

অনেক কবিই ধর্মমঙ্গল কাব্য রচনা করেছেন। ঘণরাম চক্রবর্তী কে শ্রেষ্ঠ বলা হয়। আমাদের আলোচ্য কবি নরসিংহ বসু এবং বিশিষ্টতায় অনন্য তাঁর কাব্য।  এই নরসিংহ বসুর
পূর্ব পুরুষ দের আদি বাসস্থান ছিল এখনকার পশ্চিম বর্দ্ধমান জেলার কাঁকসা ব্লকের ' বসুধা ' গ্রামে। কবি ছিলেন রাজনগর এর রাজাদের উকিল, মুর্শিদাবাদ নবাব দরবারের প্রতিনিধি।
রাজনগরের রাজারা নিজেরা কর জমা দিতে যেতেন না। তা নিয়ে যেতেন বসু মহাশয়। স্বাভাবিক ভাবেই রাজনগর এবং
মুর্শিদাবাদ উভয় দরবারের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সংযোগ ছিল।
তৎকালীন সময় এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি
যথেষ্ট অবহিত ছিলেন।
এই বসুধা থেকে বসবাস তুলে কবির পিতামহ মথুরা বসু চলে যান  দক্ষিণ দামোদর এলাকার শাঁখারী গ্রামে।
আমরা কবির কথন ই শুনি

 
" শুন ভাই সভাজন করি নিবেদন।
যে রূপে ধর্মের গীত হইল রচন।।
বসুধা - মিরাস ভূমি ছিল পূর্বাপর।
মথুরা বসুজা কৈল শাঁখারি তে ঘর।।
সেই সময় বর্ধমানের অধিপতি ছিলেন মহারাজ কীর্তিচন্দ্র রায়। " অধিকারী সে দেশে কীর্তি চন্দ্র রায়। জগজনে যাহার যশের গুণ গায়।। "
আত্মপরিচয়ে ফিরেছেন কবি।
  গৌতম গোত্রীয় দক্ষিণ রাঢ়ী য় কায়স্থ দশরথ বসু বংশের আদি পুরুষ। ১৬ শ পুরুষ মথুরা বসু।
জন্ম তাঁর ষোড়শ শতাব্দী তে। ষোড়শ - সপ্তদশ শতাব্দী তে বসুধা থেকে শাঁখারী তে আসেন।
মথুরা বসুর তিন পুত্র। ঘনশ্যাম ; রাধিকাবল্লভ ; রামকৃষ্ণ বসু।
ঘণশ্যামের পুত্র নরসিংহ বসু। (১৮ শ পুরুষ)।
১৭১৪ খ্রীঃ তে যিনি ধর্মমঙ্গল কাব্য রচনা করেন।
এবং মৃন্ময়ী কালীমাতার প্রতিষ্ঠা করেন।
যে পূজা আজও শাঁখারী তে আজও অনুষ্ঠিত হয়।
  ঘনশ্যাম এবং নবমল্লিকা র পুত্র নরসিংহ নিজেই বলেছেন
" পুরুষে পুরুষে মসীজীবী পূর্বাপর "
কবির খুব অল্প বয়সে ই পিতৃবিয়োগ হয়।
কিন্তু পিতামহী প্রবল শোকের মধ্যেও কবিকে পরম যত্নে মানুষ করেন। তাঁকে সংস্কৃত ; বাংলা ; আরবি ; ফারসি ; উড়িয়া প্রভৃতি ভাষায় শিক্ষিত করে তোলেন। আজ থেকে প্রায় তিনশো বছর আগে কেমন করে তা সম্ভব হল - সে বড় সহজ কথা নয়।
এই শিক্ষার গুণে নানা জায়গায় রোজগারের সুযোগ পেলেও ফারসি ভাষায় দক্ষতার জন্য তিনি রাজনগর এর পাঠান রাজা বাহাদুর আসাদুল্লাহ খানের পক্ষে মুর্শিদাবাদের নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ র দরবারে উকিল হিসাবে নিযুক্ত হন এবং একাদিক্রমে আঠারো বৎসর তিনি এই পদে নিযুক্ত ছিলেন।
রাজকার্য এবং রাজ দরবার কে তিনি চিনেছিলেন গভীর ভাবে।
" বাঙ্গলায় বীরভূম বিখ্যাত অবণী। শ্রী আসফুল্লা খান রাজা শিরোমণি "।।
" কৃপা করি নৃপমণি রাখিল চাকর। ওকালতি একক্রমে আঠারো বৎসর "।।
পরে আরও কিছুদিন এই রাজবংশের সাথে তাঁর যোগ ছিল।  

নরসিংহ বসুর ধর্মমঙ্গল ঃ সমাজ চিত্রন  তৃতীয় পর্ব
 
  রাজা মানেই রাজকর বা রাজস্ব।
  মুর্শিদাবাদের নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে খুবই ' বুঝে নেওয়া লোক '।
রাজনগর এর পাঠান রাজা আসাদুল্লাহ খানের কাছে খবর পাঠানো হল যে তাঁর সাত লক্ষ টাকা খাজনা বাকী। অবিলম্বে মেটাও।
রাজার মতে কোন বাকী নাই। সময়কাল টাকে মাথায় রাখতে হবে। নিদারুণ অনাবৃষ্টি। চাষই হয়নি। প্রজারা দেবে কোথা থেকে। রাজা প্রজা হিতৈষী।
একে তো নিজেদের মর্যাদা বোধে এঁরা  কখনও মুর্শিদাবাদ দরবারে রাজস্ব বা নজরানা নিয়ে যাননা। যান তাঁদের প্রতিনিধি। প্রতিনিধি নরসিংহ বসু।
রাজনগর জানাল যা বকেয়া বলা হচ্ছে তা কিছুতেই নয়।
ঠিক করলেন মেটাবেন না কর।
নবাব ছাড়বার পাত্র নন।
গোলমালের আশংকা করলেন নরসিংহ।
  না। না। বড়ো গোলযোগ দেখা দিতে আ। রাজাকে বোঝালেন ।রাজা বড় জোর এক লক্ষ টাকা দিতে রাজি হলেন।  বেশ দেখা যাক। নরসিংহ ভাবলেন।
রাজা নরসিংহকে জোড়া ; পাগড়ি ; ইত্যাদি রাজকীয় পোষাক দিলেন। আবার যেতে হবে মুর্শিদাবাদ।
অনেক দিন বাস্তুগৃহে যাওয়া হয়নি। অধিকাংশ সময় তো কাটে নবাব দরবারে মুর্শিদাবাদে।
ঠিক করলেন একবার শাঁখারী ঘুরে যাবেন।
পালকি চলল শাঁখারী অভিমুখে। পথে পড়ল আউসগ্রাম।
কোন পথে গেলেন?  পথ তো এই ই। ইলামবাজার থেকে অজয় পার হয়ে বসুধা ভায়া আদুরিয়া ; ভাতকুণ্ডা  আউসগ্রাম।
এইখানে আমার মনে প্রশ্ন জাগে ' বসুধা ' র কথা কি একবারও মনে পড়েনি নরসিংহের। বসুধা তাঁর দাদু ত্যাগ করে গিয়েছিলেন। কেমন ছিল সে পিতৃপুরুষ এর গ্রাম। বা পোড়ো বাস্তুভিটা। না তার কোন কথা নেই। পথযাত্রার বিবরণ নাই।
ঝড় বৃষ্টি র জন্য আউসগ্রামে রাত্রিযাপন। পরের দিন ঝিকিমারি গ্রামে তাঁর যশোদা পিসির বাড়িতে স্নান পূজা সারলেন। পিসির ছেলে নারায়ণ তাঁদের উপযুক্ত আপ্যায়ন করলেন।
তারপর ওখান থেকে দামোদরের কাছে জুঝুটি গ্রামের পথে আবার জল বৃষ্টি পেলেন। গ্রামের পথে কাদা।
তবে এদিকে ঐ সময় জুঝুটি গ্রামে  এক খেজুর গাছের তলায়
খুব পরিপাটি করে ধর্মের পুজা হচ্ছি
 
"জুঝুটি গ্রামে খেজুর গাছ তলায় পরিপাটি করে ধর্মরাজ পুজো।
পালকি দূরে রেখে ; পায়ে হেঁটে  ধর্মরাজ পুজোর ওখানে গেলেন নরসিংহ।ভক্তি ভরে দেখতে লাগলেন।
" নয়ন ভরিয়া তথা দেখে মায়াধর।
খেজুর তলায় উপস্থিত তারপর।।
কতদূরে লোকজন রাখিয়া বাহন।
একেলা গেলাম ধর্ম করিতে দর্শন।।
সেই সময় ' অপূর্ব সন্ন্যাসী এক আসি উপস্থিত '।
আশীর্বাদ দিয়া কন গাও কিছু গীত।।
কবি সন্ন্যাসী কে দুহাত জোড় করে প্রণাম করে উঠে দেখেন
সন্ন্যাসী অদৃশ্য।
এই রকম একটা অলৌকিক ঘটনায় কবি স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা বিহ্বল। নানা চিন্তা মনে। যাই হোক শাঁখারী র বাড়িতে পৌঁছালেন। কিন্তু মনে তার সেই একই চিন্তা। মনকে আলোড়িত করে। আত্মীয় বন্ধুদের সাথে আলোচনা করেন।

বাড়িতে দুদিন থাকলেন। তারপর আবার মুর্শিদাবাদ এর পথে।
যাক। নবাব দরবারে ঐ এক লক্ষ টাকাতেই মিটমাট হয়ে গেল। কবির জয় হল।
কিন্তু মনে সবসময় ধর্মরাজের গীতের কথা। মনে উথলে ওঠে গীত। তাই অবশেষে কবি হাত দিলেন তাঁর ধর্মমঙ্গল কাব্য রচনায়।
কাব্য রচনার সাল তারিখ বলেছেন সেই সময়ের কাব্য রীতি মেনেই 
" শশ শশী পিঠে ঋতু ভুবনেতে রস।
কবিত্ব আরম্ভ কর্কটের দিনে দশ।।
  সঙ্কেত কে বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায়  শশী মানে চাঁদ বা ১ ; ঋতু =৬ অর্থাৎ একের পিঠে ছয় ; তারপর ভুবন = ৩ এবং রস =৬
দাঁড়াল ১৬৩৬ (শকাব্দ)। আর কর্কট মাস মানে ভাদ্র মাস।
কর্কটের দিনে দশ। ১০ ই ভাদ্র।
১৬৩৬ শকাব্দের ১০ ই ভাদ্র।
এই বিশ্লেষণ ডক্টর সুকুমার মাইতি র।
ডঃ সুকুমার সেন এবং ঐতিহাসিক রজতকান্ত রায় ও কবির কাব্য রচনা র কাল বলেছেন ১৭১৪ খ্রীঃ।
এই ভাবে কাব্যরচনা র কাজ একদিন পূর্ণাঙ্গ রূপ পেল।
' দিনে দরবার করি রাতে রচি গীত।
ধর্মের কৃপায় পূর্ণ হইত সঙ্গীত "।।
---------
বসু মশাই এর ভয় কিন্তু যায়না।
বসুধা ছেড়ে তাঁর পিতামহ বর্ধমানের নিকটবর্তী দক্ষিণ দামোদর এলাকার শাঁখারী গ্রামে বসতি স্থাপন করেছেন।
বর্ধমান রাজ কীর্তিচন্দ্র। তাঁর কাছাকাছি থাকা যাবে।
কখন কোন সুযোগ আসে বলা যায়না।
আবার সেখানে দেবী অষ্টভুজা শঙ্করী। তাঁর পদছায়ায় থাকা যাবে। বসুধার চেয়ে উন্নত গ্রাম।
নরসিংহ তাঁর ধর্মমঙ্গল কাব্য লিখছেন ১৭১৪ সাল নাগাদ।
  এলাকায় সদগোপ প্রাধান্য। তাঁরা নিজেদের ইছাইঘোষ এর বংশধর বলেন। এখানের সদগোপ দের মধ্যে একধরনের আভিজাত্য এবং তেজ আছে। সেটা এখনও লক্ষ্য করা যায়।
চেহারা বা গাত্রবর্ণ বৈশিষ্ট্য পূর্ণ।
সেই সদগোপ প্রাধান্য কে কবি ভয় করছেন। তার ইঙ্গিত তাঁর কাব্যে রয়েছে।
যেমন তিনি তুলনা করছেন
" ইছাই বসিল পাটে  না জানি কখন কাটে
  পরিবার সহিত আমাকে।
যদি বা দেশেতে থাকি   কার বাপে মোকে রাখি
গোয়ালাতে যদি প্রাণ লয়।।
করি এই অনুমান   ছেড়ে ঘর ধনধান
রাজ্যপাট রতন মন্দির।
পরিজন সঙ্গে নিয়া   দেশভূম পরে দিয়া
পলাইলা পরাণে অস্থির।।
ইছাই এর ভয়ে রাজ্যপাট ছেড়ে কর্ণসেন গৌড় দেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
আর এই লেখার পর ই তিনি লিখছেন
বসুধা - মিরাস ছাড়ি    শাঁখারি তে ঘরবাড়ি
করিলেন মথুরা বসুজা।
সত্যবাদী সদাচার   সদাই সাপক্ষ যার
আপনি শঙ্করী অষ্টভুজা

  কখন ; কতকাল আগে ইছাই - কর্ণসেন এর ঘটনা।
তবু যেন কবি কোথাও মিল পাচ্ছেন।
হতে পারে ইছাই এর মতো কোন ব্যক্তি র ভয়।
  অন্যান্য কারণ তো রয়েছেই।
কিন্তু নরসিংহ যখন তাঁর কাব্য লেখায় মন দিয়েছেন তিনি তো তখন রাজনগর এর রাজা আসাদুল্লাহ খানের রাজকর্মচারী।
স্বাভাবিক প্রভাবশালী। মুর্শিদাবাদেই তাঁর বেশী সময় কাটে।
  নিজেই বলেছেন বংশানুক্রমিক ভাবে তাঁরা মসীজীবী।
  কে জানে তাঁর ই কোন পূর্বপুরুষ ই ছিলেন বা কোন কায়স্থ ই গৌড়েশ্বর কে ইছাই এর খাজনা বাকী র হিসাব দিয়েছিলেন।
কর প্রদান কে কেন্দ্র করেই তো লড়াই।
ইছাই স্বতন্তর রাজা হয়েছেন।
গৌড়েশ্বর কে কর দেওয়া বন্ধ করেছেন। অধীনতা অস্বীকার করেছেন।
নরসিংহ এর কাছ থেকে আমরা পেয়েছি বিরাট এক ধর্মমঙ্গল কাব্য। কিন্তু তিনি ও দেবী পূজক।
  তাঁর ধর্মমঙ্গল কাব্য সহজ সরল। অকারণ কবি সুলভ কাব্য ভারাক্রান্ত নয়।
আমার আক্ষেপ তাঁর কাছ থেকে আমরা সেই সময়ের রাজনগর ; মুর্শিদাবাদ বা এই এলাকার এক চমৎকার ঐতিহাসিক বিবরণী পেতে পারতাম।
এলাকা তাঁর পরিচিত। রাজকার্য ; হিসাব নিকাশ দক্ষ।
মুর্শিদাবাদে মুর্শিদকুলী র রাজত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞাত।
সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর পরিচিত জনেরা আছেন।
তাঁদের মাধ্যমে ও নানা খবর তাঁর কাছে থাকা খুব স্বাভাবিক।
রাজনগর থেকে মুর্শিদাবাদ যাতায়াত করেন নিয়মিত।
রাজনগরের প্রতিনিধি হিসাবেই তিনি ' হুজুরে চালান ' অর্থাৎ রাজকর জমা দেন। রাজনগর এর রাজাদের অত্যন্ত বিশ্বস্ত।
দীর্ঘ আঠারো বছর সেখানে কাজ করেছেন।
আসাদুল্লাহ বা বর্দ্ধমান রাজ কীর্তিচাঁদের গুণগান করেই ছেড়ে দিয়েছেন। আবার মুর্শিদকুলী যে রাজ কর আদায়ের ব্যপারে যথেষ্ট কড়া - এটুকু ই মাত্র।
  পেতে আমরা পারতাম কবি আপনার কাছ থেকে এক অত্যন্ত
দামী ঐতিহাসিক বিবরণী। যা হতে পারত তাঁর ধর্মমঙ্গল কাব্যের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।
  অবশ্য যা পেয়েছি তার মূল্যই বা কম কি।
---------------- ---------------- ----------------  © প্রণব ভট্টাচার্য।  আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী 
** চণ্ডীদাস পত্রিকার শারদ সংখ্যায় প্রকাশিত 

গ্রন্থ সহায়তা।  নরসিংহ বসুর ধর্মমঙ্গল ঃ তারাপদ বসু। 
 নরসিংহ বসুর ধর্মমঙ্গল ঃ ডক্টর সুকুমার মাইতি। 
লেখকের নিজের লেখা  এই বিষয়ক নান প্রবন্ধ। 
বর্ধমান ঃ ইতিহাস ও সংস্কৃতি। যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী 

** ছবি।  অন্য জায়গার। সেখানেও ধর্মরাজ পূজা হচ্ছে।

রেডিও ঃ স্মৃতিচারণ

।।  রেডিও  ঃ  স্মৃতিচারণ।।     প্রণব ভট্টাচার্য

ভোর    ভোর হয়ে জেগে ওঠে  বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কণ্ঠে
পবিত্র সকাল   শুদ্ধ স্মরণ  তর্পণ। 
তাহার নামটি রঞ্জনা  সেই মায়াময় দুই কণ্ঠ। 
অজিতেশের  মধুসূদন  গোপাল অতি সুবোধ বালক
জীবনকে ভরিয়ে দিত  শান্তি বারি সিঞ্চনে। 
রেডিও নাটকের স্বর্ণ সম্ভারে ধনী  আকাশবাণী কলকাতা। 
  ভোলা অসম্ভব তাই ভোলা যায়নি। 
মুক্তিযুদ্ধে  ওপার বাংলার মরণপণ লড়াই
এপার থেকে প্রেরণা জোগায় দেবদুলালের ভাষ্য। 
  আমি ইডেন থেকে বলছি   যেন হাইকোর্ট প্রান্ত দৃষ্টি পথে
   ভেসে ওঠে  অজয় বসু    কমল বাবু দের  ধারাবিবরণী তে। 
   গানের ভুবন ভরা  রাগে অনুরাগে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাতে। 
   প্রকৃত পরিবেশনে  সংবাদে ছিল সিদ্ধ সার্থকতা। 
    এখানেই ছিল মানুষের আস্থা। রেডিও।
   আকাশবাণী। আকাশবীণার ঝংকার
   ছিল তো সবই  ভবন টি ও দণ্ডায়মান। 
    কিন্তু আর আমাদের ঘরে ঘরে
  মারফি ; ফিলিপস ; বুশ  দের সেট কবেই আবর্জনা
   আর কত ছিল  সন্তোষ  ইত্যাদি
   আমাদেরও বাড়িতেও অবশেষে একটা সেট এসেছিল। 
   সে টা দাদু কিছুতেই অন্যকে হাত দিতেই দিতনা। 
   একটা অবলম্বন হয়ে উঠেছিল কবে যেন
   ভালো যা কিছু শোনা   ভালোকে চিনতে শেখা
   শ্রবণ আনন্দ প্রক্রিয়া   তার প্রসাদ গুনের আস্বাদন
   যদিও তা ব্যক্তিগত অনুভব সঞ্জাত
   গরমের উঠোনে আমরা সবাই চাটাই পেতে বসে
   একসাথেই শুনতাম। 

বোলপুরের স্টেশন রোড ধরে হেঁটে যাওয়া কলেজ ছেলেরা
এক দোকান থেকে আর এক দোকানে  টেস্ট ম্যাচের স্কোর
জানতে জানতে কলেজ পৌঁছানো
কেউ স্কোর জানাতে বিরক্ত হতনা কিন্তু সে সময়

  আমাদের এই পাড়া গাঁয়ে রেডিও সে তো এক বিরাট ব্যাপার। 
বটূ কোঁড়া কি করে যে অসাধ্য সাধন করেছিল
  ফিলিপসের একটা টাইগার সেট কিনে
  কাঁধে ক্রশ করে ঝোলানো বাজাতে বাজাতে
  গ্রাম ঘুরতে বেরুত      -  'শোন হে সবে
  দ্যাখো কিনেছি আমি ' । এই ই আমার সব।
  সবাই জানে সে একা। বৌ মরে গেছে। ছেলেপুলে নাই
  সারাদিন রাত বাজত তার উঠোনের 
নারকেল গাছে পোঁতা  পেরেকের আঁংটা থেকে
  - এই নে শোন গোটা পাড়া '
কোন কিছু তার বাদ নাই কৃষি কথা কি আদিবাসী গান
দিন শুরু হত তার রেডিও তে  
রাতের আকাশের তারা দেখতে দেখতে
ঘুম না আসা পর্যন্ত ।  ঘুম আসা তো সহজ নয়
পেট পুরে তাল তাড়ি খেলে তবে কিছুটা হয়। 

নিজেকে শেষ করবই  বললে তো আর কিছু
করার থাকেনা। প্রণোদিত আত্মহত্যা করেছে
আমাদের রেডিও   আকাশবাণী কলকাতা কে
ধরা আমাদের সম্ভব নয়     না হয় দেড়শ  মাইল দূর
আকাশবাণী শান্তিনিকেতন  এই সেদিন ও কি সুন্দর
আনন্দধারায় গান শোনাতো   সে হারানো সুখস্মৃতি
বাঙলা গানের ক্রমবিবর্তন টা কে গান দিয়েই ধরুন না
জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ বা বিমান মুখোপাধ্যায় 
এর মতো মাপের 

সঙ্গীত গুণী মানুষেরা যদি বুঝিয়ে দেন
শেখা হত  জানা হত   ঋদ্ধ হতাম
একবার এক আলাপচারিতায় বলেছিলাম
  এক আধিকারিক কে। সাথে ছিল সঞ্চালিকা অপরাজিতা।
  নিজেরও  সুখস্মৃতি  - এই আকাশ বাণী শান্তিনিকেতন
  থেকেই আঞ্চলিক ইতিহাস এর এক চর্চাকারী হিসাবে
  যখন বলেছি  আর পরিচিত জনেরা বলেছেন
আপনাকে শুনলাম রেডিও তে
সে এক অন্যরকম ভালোলাগা
চমৎকার বিষয় বাছেন সঞ্চালিকা অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়।
  সে দিন বুঝি হারালো! হায়!
কিন্তু মানুষ যে আবার রেডিও তে ফিরতে চাইছেন
সারা পৃথিবী জুড়ে ই। 
দুর্যোগ বিপর্যয় মোকাবিলা য় রেডিও ই তো ভরসা।
  টিভি আজ দীন। প্রকট তার দৈনতা।
এতবড় বাংলাসাহিত্য। ব্রাত্য বাঙলা টিভি সিরিয়ালে।
সেখানে চলছে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম নামক       অপকর্ম।
বাঙালী  রুচির নিম্নগামিতা ঘটানো হচ্ছে সুকৌশলে।
ভদ্রলোকেরা মুখ ফিরিয়েছেন অনেক দিনই
ঘরের মেয়ে বৌ রা আর কি করে! চোখ মেলে থাকে
  দেখে একটা মেয়েই রবিনহুড। একা সম্পূর্ণ একাই
সব সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছে বাহান্ন জনের এক পরিবারের।
আবাসন গুলো তে বৃদ্ধ এক আর বৃদ্ধা। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

রেডিও কি আবার স্বমহিমায় ফিরতে চায়
প্রশ্ন তো নিজেকেই করতে হবে রেডিও কে
এখনও যাঁরা রেডিও কে ছাড়েন নি  বরং জড়িয়ে ধরে আছেন
তাঁদের কে তো আপনারা চেনেন না
তাঁদের কে চিনুন।
তাঁদের কথা শুনুন।
আকাশবাণী আবার বেজে উঠুক আমাদের ঘরে ঘরে।
কর্তারা ভাবুন রেডিও কে কি করে জনপ্রিয় করা যায় আবার। মতামত নিন গুণী জনদের। 
আমার ধারণা রেডিও বাঁচতে পারে তার পুরনো দিনকে অবলম্বন করেই। 
রেডিও শুনেই বড় হয়েছি। নিজের একটা ছোট সেট ছিল মার্ফি মিনি। বালিশের পাশে নিয়ে শুনেছি। 
ছোটবেলায় কলকাতা গেলে, আকাশবাণী ভবন টা আমাকে খুব টানত। যদি ভিতর টা ঘুরে দেখা যায়। কি ভাবে সব হচ্ছে! প্রবল কৌতুহল। 
কখনও ভাবিনি এই ভবনের ভিতরে যাব। 
এই বয়সে এসে আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী হিসেবে ডাক পেয়ে বড় আনন্দিত হয়েছি। 
ধন্যবাদ জানাই মাননীয় শ্রী সিদ্ধার্থ মাইতি বাবুকে। 
কয়েক বার ডাক পেয়েছি। হোক না ন মিনিটের কথিকা। বুঝেছি ন মিনিট সময় কম নয়।
আমার মনে হয় রেডিও কে আরও জনপ্রিয় করে তোলা যায়। ভাবতে হবে। হয়তো অনেকে মোবাইলেই শোনেন। আবার অনেকে পারেন না
অনেক বয়স্ক স্মৃতিকাতর মানুষ আছেন। 
তাঁদের জন্যই শোনান না যা কিছু আমাদের সম্পদ। আপনাদের ভাণ্ডারে আছে বিবিধ রতন। 

------------ ------------ ------------ ------------ ------------  সমাপ্ত।
লেখক। প্রণব ভট্টাচার্য। আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক। ক্ষেত্রসমীক্ষক। প্রাবন্ধিক।
গ্রাম। সাতকাহনিয়া। পোষ্ট। বনকাটি। ৭১৩১৪৮। থানা। কাঁকসা। জেলা। পশ্চিম বর্দ্ধমান। ফোন। ৮২৫০৭৬৭৫০৭।
#akashbanishantiniketan 
#akashbanikolokata
#akashbanimoitri
#prasarbharti