Sunday, 11 August 2024

মানকর খাণ্ডারী

।।  মানকর  -  খাণ্ডারী ।। 
 
" জীবন আমার নাম, মানকরে মোর ধাম, জিলা - বর্ধমান। "
 ' মানই যার কর - সেই গ্রাম মানকর '
 ' পরে তসর খায় ঘি, তার আবার অভাব কি ' 
 ' কদমার ভিতরে ভরা কনের বিয়ের লাল চেলি টি '
 " কেমন কারিগর, থাকেন মানকর, 
  লাল চেলি ভরা থাকে কদমার ভিতর। "
 

 ' আছেন যেথা মানিকেশ্বর, নামটি তাহার মানকর '

 প্রাচীন এক জনপদ মানকর। কত প্রাচীন?  
 জনশ্রুতি অজ্ঞাতবাসের সময় পঞ্চ পাণ্ডব না কি এখানে এসেছিলেন। অবস্থান করেছিলেন। পৌষমুনির ডাঙ্গা বা পাণ্ডব ক্ষেত্র তলার ঐতিহাসিক প্রাচীনত্ব নির্ণীত হয়নি। 
 ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সার্ভেয়ার জেনারেল রেনেল সাহেবের ম্যাপে  মানকর ( Mankur)  উল্লেখিত। প্রাচীন এক রাস্তা বর্ধমান থেকে বেরিয়ে মানকর হয়ে চলে যাচ্ছে উত্তর পশ্চিমে 
 আদুরিয়া গ্রামকে পাশে রেখে সেনপাহাড়ী পরগনার ভিতর দিয়ে অজয় পার হয়ে আরও উত্তরে রাজনগর পর্যন্ত। 
 কনৌজ ব্রাহ্মণ রাই মানকরের প্রকৃত জমিদার। 
 বর্ধমানের রাজা দের কাছ থেকে তাঁরা ব্রহ্মোত্তর হিসাবে মানকরের রাইপুর এলাকা টি পান। পরবর্তী সময়ে সেখানেই 
 নির্মান করেন জমিদার বাড়ি  ' রঙ মহল '। 
 আদিতে এঁদের পদবি দুবে। মথুরায় বৈষ্ণব রাধাবল্লভ সম্প্রদায়ের  কাছে দীক্ষা নিয়ে তারা গোস্বামী হন। 
 মূলত সংস্কৃত শিক্ষা প্রদান এবং গুরুগিরি করার উদ্দেশ্যে ই 
 তাঁদের বাঙ্গলায় আগমন। প্রথমে মেদিনীপুর এর চন্দ্রকোনা। 
 পরে  এখানে আসেন। 
  এঁরা কিন্তু মানকর থেকে  উত্তর পশ্চিমে সামান্য দূরত্বের 
 খাণ্ডারী গ্রাম টিকে বেছে নেন নিজেদের বসবাসের জন্য। 
  নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্যই কি এই সিদ্ধান্ত। 
  যে ভূমি খণ্ডে তাঁরা বসবাস স্থাপন করলেন - তাই হল খাণ্ডারী। অনুমান মাত্র। 
 মূল মানকরে তারা প্রথমে বাসা বাঁধেন নি। পরে রাইপুর এর
 জমিদারি পাবার পর মানকরে প্রাসাদ নির্মান করেন। 
 মানকর ছাড়াও ভরতপুর, খাণ্ডারী তেও ভূসম্পত্তি লাভ করেছিলেন। 
 গুরুদীক্ষা এবং গুরুদক্ষিণা ঃ  বর্ধমানের রাজা জগৎরাম এবং রাণীমা ব্রজকিশোরী দেবী কে দীক্ষা দেন পণ্ডিত শ্যামসুন্দর গোস্বামী। 
 তাঁর পুত্র ভক্তলাল গোস্বামী দীক্ষা দেন রাজা কীর্তি চাঁদ এবং তাঁর পুত্র রাজা চিত্রসেন কে। 
 গুরুদক্ষিণা স্বরূপ ১৭২২ সালে রাইপুর এলাকার জমিদারী সত্ত্ব লাভ করেন ব্রহ্মোত্তর সম্পত্তি হিসাবে। 
 রাধাবল্লভ মন্দির এবং সিংহবাহিনী মন্দির নির্মান করেন 
 ১৭২৯ সাল নাগাদ। 
 ভক্তলাল পরবর্তী বংশধর গন হলেন অজিতলাল, ব্রজলাল, 
 সেতাবলাল। 
 অজিতলালের দৌহিত্র  হিতলাল মিশ্র। এঁকে মানকরের অন্যতম রূপকার হিসাবে গণ্য করা হয়। নানা জনহিতকর কাজ তিনি করেছিলেন। আজকের হাটতলা তাঁরই পরিকল্পনা য় গড়ে ওঠে। মানকর থেকে বুদবুদ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার করেন। 
 সৌন্দর্যায়নের জন্য রাস্তার দুই পাশে তালগাছ লাগানোর ব্যবস্থা করেন। বারোটি বাঁধানো ঘাট সমেত এক বিশাল দিঘী  যার নাম  ' কৃষ্ণগঙ্গা ' খণন  করান। সেই সময় ভীষণ খাদ্যাভাব এবং জলাভাব দেখা দিয়েছিল। কৃষ্ণগঙ্গা খণনের মাধ্যমে অনেক শ্রমজীবী মানুষ কাজ পেয়েছিলেন। 
বিদ্যানুরাগী এই মানুষ টি  পুঁথি সংরক্ষণের জন্য  " ভাগবতালয় " নামে এক গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন। কয়েকটি টোল স্থাপন করেন। তাঁর সময়ের বিশিষ্ট পণ্ডিত দের মধ্যে 
গদাধর শিরোমণি, নারায়ণ চূড়ামণি, যাদবেন্দ্র সার্বভৌম, 
 প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। 
তিনি গীতা র টীকা রচনা করেছিলেন। যার প্রশংসা করেছিলেন সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র। 
 হিতলাল মিশ্র র ব্যবসায়িক বুদ্ধি ছিল প্রখর। তিনি নীলকুঠি র
  ও  মালিক ছিলেন। 
 
 অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের হিতলাল এবং তাঁর পূর্বজ ভক্তলাল গোস্বামী মুসলমানদের জন্য মসজিদ এবং খ্রিস্টান দের জন্য চার্চ নির্মান করিয়েছিলেন। 
  হিতলালের পুত্রের অকালমৃত্যু তে  দৌহিত্র রাজকৃষ্ণ দীক্ষিত, 
 জমিদার হন। তিনিই তৎকালীন সময়ের বাংলার জমিদার দের মধ্যে প্রথম, যিনি স্বদেশী আন্দোলনে (১৯০৫)  অংশগ্রহন করে 
কারারুদ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর সময়ে  রঙমহলে অনেক স্বদেশী 
 গোপনে আসতেন। আলোচনা হত। তাঁরা আর্থিক সাহায্য লাভ করতেন। 
 রাজকৃষ্ণ পুত্র রাধাকান্ত। তিনিও অকালপ্রয়াত। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী শক্তিবালা দেবী কাঞ্চন কুমার দীক্ষিত কে উত্তরাধিকারী হিসাবে গ্রহণ করেন। তিনিই ' রঙমহলের ' শেষ 
 জমিদার। 
 ------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ------------ 
 খাণ্ডারী গ্রামে এখনও কয়েকঘর কনৌজ ব্রাহ্মণ বাস করেন।
 ' অগ্নিহোত্রী ' পদবী। এই গ্রামের পঞ্চরত্ন, টেরাকোটা অলংকরণ শোভিত রাধাগোবিন্দ  মন্দির টি নির্মান করিয়েছিলেন  
 শান্তিময় তেওয়ারি র পূর্ব পুরুষ গন। আনুমানিক ১৮৫০ নাগাদ নির্মিত। 
 পাশের অষ্টকোনাকৃতি  গৌরীশ্বর শিবমন্দির টি অগ্নিহোত্রী পরিবারের। সৌগত অগ্নিহোত্রী জানালেন। 
মানকরে প্রায় ৪০-৪২ টি মন্দির। প্রায় সমসময়ে নির্মিত। 
 এই সব মন্দির কে নিয়ে আলাদা প্রবন্ধ পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত হবে। 
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ 
অতি সংক্ষেপে মানকর বা মানকরের কনৌজ ব্রাহ্মণ দের
 সম্পর্কে  এই প্রবন্ধে বলা হল।  মানকর এক প্রাচীণ জনপদ। 
 এবং যথেষ্টই বিস্তৃত। আকারে প্রকারে। অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবার। অনেক ভগ্নাবশেষ। সংরক্ষণের অভাবে ভেঙে পড়েছে। যেমন ' রঙমহল '  ' কবিরাজবাড়ি ' ইত্যাদি। 
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ------------ 
©   প্রণব ভট্টাচার্য। 
------------ ------------ ------------ ------------ ------------ ------------

Friday, 2 August 2024

সামান্য আমি। আমার কিছু কথা।

আমার যে ধারাবাহিক চলছে 
" কুঠি বাড়ি ভিত্তিক ব্যবসা বানিজ্য। সে টা থামিয়ে আজ একটু অন্য রকম কথা বলি 
 কথা তো লতার মতো। 
 আমি এর আগে আপনাদের কাছে বারবার বলেছি এই সকল কথা 
দেখুন আমি খুব সাধারণ মানুষ। লেখাপড়া তেমন হয়নি। যেমন টা হলে মনে করা যেত কিছু একটা বটি। 
 নিজের লেখা বই নাই। 
ISSN  কোন পত্রিকা র সম্পাদক ও নই 
অতি সামান্য এক সাধারণ আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী মাত্র। 
এই চর্চা আমার অনেক দিনের 
 বলতে পারেন সেই কোন বালক বেলায় আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল  অঞ্জনা নদী তীরে চন্দনীগাঁয়ে    পোড়ো মন্দির খানা গঞ্জের বাঁয়ে 
 জীর্ণ ফাটল ধরা  এককোনে তারি 
অন্ধ নিয়েছে বাসা কুঞ্জবিহারী 
আমার মন কেমন করত      ঐ ভাঙ্গা মন্দির 
 অন্ধ ভিখারি ৷    লেজ কাটা কুকুর  ---
ঐ ভাঙ্গা মন্দির টা আমার বুকে গেঁথে গেছে সেই কবে কার  বালকবেলায় 
ভাঙ্গা মন্দির দেখলে দাঁড়িয়ে পড়ি। 
 এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ছুটে যাই এখনও 
 খুঁজি তার গড়ে ওঠার ইতিহাস 
আবার আজকের করুন দশা 
 আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি টাকে বোঝার চেষ্টা করি 
পত্তন আর পতনের মাঝে তো একটি মহামুল্যবান "ত"।
তার খোঁজ পণ্ডিতেরা জানেন 
 আমি কোন পণ্ডিত নই। একাডেমিক লোক ই নই 
 গবেষক। কোন ভাবেই নই। 
 আমি চেয়েছি আমার চারপাশ টা বুঝতে
 মানুষ । মানুষ ই তো সব। 
 চাই মানুষ তার মাটির কথা জানুক। চিনুক নিজের শিকড়। শিকড় বিচ্ছিন্ন এই জাত 
 যদি সামান্যও পারি। 
কাঠবিড়ালি র মতো 
 মোটা মোটা দামী বই কোথায় পাব। 
 কেনার সামর্থ্য ছিলনা 
অনেক দামী বই  পুরনো মাটির বাড়িতে নষ্ট হয়ে গেছে 
যা গেছে তা গেছে 
আমার এই এলাকা কাঁকসা আউসগ্রাম এর জঙ্গল মহল  ইছাইঘোষ এর দেউল  অজয়ের এপার ওপার নিয়ে কুড়ি কিলোমিটার ব্যাসার্ধের জায়গায় আমার ঘোরাঘুরি 
 এখানেই এখন লিখি৷ এই ফেসবুকে র পাতায় 
কেউ আমন্ত্রণ না জানালে কোথাও লিখিনা 
আমার কোন উচ্চাশা নাই 
অনেক সময় ফেলে এসেছি। মনকে ই বলি " তুই ফেলে এসেছিস কারে - মন মন রে আমার 
 তবু আমার লেখা আপনাদের ভালো লাগে 
 চমৎকার সব মন্তব্য লিখে আমাকে প্রাণিত করেন 
 আপনাদের ধন্যবাদ 
 কি করব বলুন গবেষক এর মতো প্রতিটি বাক্যের তথ্য সূত্র দিতে পারিনা 
ভুলে গেছি কোথায় পড়েছি যেন 
রেফারেন্স বই এর খোঁজে কোথায় যাব বলুন 
 কে দেবে আমাকে বই 
এখন দিচ্ছে এই মাধ্যম। পাচ্ছি নানা পি ডি এফ 
 একবার সাময়িক সদস্য হয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের 
 সেণ্ট্রাল লাইব্রেরি তে গিয়েছিলাম দিন কতক 
 আমার দরকার ছিল  মাৎস্য ন্যায় পর্ব 
 একান্তে শুনলাম যে দামী দামী সব বই অধ্যাপক দের দখলে ই থাকে। তাই থাক 
 কোন পণ্ডিত তো আর উপেক্ষিত  অবজ্ঞাত গ্রামের ভাঙ্গা মন্দির টির কথা আপনাদের শোনাবেন না। না কোন গবেষক 
   আমি চেষ্টা করি 
আমি চেষ্টা করেছিলাম একটা পুকুরের নাম কেন 
" সন্ধান "। খুঁজে ছিলাম তার কথা কাহিনী 
 অনেক পণ্ডিত আমার লেখা পড়েন। 
লাইক ও দেননা। মন্তব্য তো দূরের কথা। ভাবি সত্যিই তো তাঁরা ওজনদার। আমার পোষ্ট তো নূতন কিছু নয়। তাতে লাইক দিয়ে নিজের ওজন কমাবেন কেন - 
 এই আপনারা এখানে যাঁরা আছেন তাঁদের ভালোবাসাই আমার পাথেয় 

কেউ কাউকে মনে রাখেনা 
 আমি চেষ্টা করেছিলাম মাত্র
এই কথাটি কাকে বলব     মনে রেখো

রয়ে গেল আরও কিছু কথা     বাকি 
 আমি যেন  সেই  বাতি ওয়ালা 
 মাটির প্রদীপ হাতে দাঁড়াই    ঘন অন্ধকারে
পথের বাঁকে

গঞ্জ ইলামবাজার।

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=pfbid036CeXoPnTHkm1MPkrEVf4sJFsAWKBbR28Mc9kvPssBZVdPovY9S8m9ouBUm45RufUl&id=100003636821328

ঐ তো তোমার ঘর। কথা - সাতকাহন

।। ঐ তো তোমার ঘর।।  কথা সাতকাহন।

-  কি  ব্যাটা কে নিয়ে এলি না কি রে! 
- কই, দেখি, দেখি 
 
রাস্তার পাশেই উঁচু ভিতের পাকা বৈঠক খানা ঘরের দাওয়ায় বসে আছেন এক বড়সড় চেহারার মধ্যবয়সী মহিলা।

- হ্যাঁ। 
বলেই একটা সরু গলির মতো প্রবেশ পথে ঘরে প্রবেশ।
এ ঘর বাবার নয়। জ্যাঠা দের। পাশেই কাকার পাকা বাড়ি।
তার পিছনে একেবারে পিছনে একধারে বাবার ঘর।
তাকে সবাই দেখছে। জ্যাঠাইমা তাকে তার মায়ের গল্প শোনালো। সে মানুষ গুলো কে দেখছিল।
সমবয়সী জ্যাঠতুতো দাদা র সাথে সহজেই বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
পরদিন ঘরের সামনের রাস্তা দিয়ে গ্রামের পশ্চিম দিকে।
এদিক টাই এসে তার খুব ভালো লাগলো। বিশাল দিঘী। সায়র। তার উত্তর দিকটা পাথর বাঁধানো। রাজাদের আমলের।
পাশাপাশি বেশ কয়েকটা পুকুর। লাল মোরামের রাস্তা চলে গেছে আর ও পশ্চিমে। দক্ষিণ দিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একটা
পাহাড়। পরে জেনেছে পঞ্চকোট। পশ্চিম দিকে বেশ কয়েকটি
ছোট পাহাড়। একটা পাহাড়ের মাথায় মন্দির দেখা যাচ্ছে।
ফুলবেড়িয়া। ওখানে না কি মেলা বসে পূজার সময়।
রাস্তার ধারে এক অশ্বত্থ গাছ। সেই গাছের নীচে দাঁড়িয়ে সে চারপাশ দেখতে লাগলো। এই দিকটা তার খুব ভালো লেগে গেল। মনে হল ঐ যে রাস্তা চলে গেছে উঁচু নীচু হয়ে - সেটা দিয়ে হেঁটে যায়। উঁচু চাতালের উপরে সাঁওতাল পাড়া।
সাইকেল নিয়ে একজন নেমে আসছে ঐ রাস্তা দিয়ে।
  পশ্চিম দিকে  শুঁড়ি পাড়া। তারা না কি  বড়লোক। পাশেই ধোপা পাড়া। সেই পাড়াতে একটা কুয়ো। একজন  মহিলা জল তুলছিল।হাতমুখ ধুয়ে , তার জল খেতে ইচ্ছে হল।
সঙ্গে আছে জ্যাঠতুতো দাদাভাই সাধন।  তাকে তো চেনে। আমি কে জিজ্ঞেস করল। সে বলল আমার ভাই। কাকার ছেলে। প্রথম এসেছে।
- না ঠাকুর আমি জল দিতে পারবনা। আমার পাপ হবে।
সে ভাবতে লাগলো     কিসের পাপ! 
একটু জল দেবে মাত্র।
- চল ঘরে যাই। ঘরে গিয়ে খাবি।
রাতে বিছানায় শুয়ে সে ভাবতে লাগলো সেই যে এক চণ্ডালিনী বৌদ্ধ সাধুকে জল দিতে চায়নি,নীচু জাতের মেয়ে বলে,  সেই 
সেই মেয়ের হাত থেকেই তিনি জল খেয়েছিলেন। প্রথাও  ভেঙেছিলেন। 

 তাহলে কি সেইসব পুরনো প্রথা রয়েই  যাবে -
 চিত্র ঋণ ঃ  বিকাশ ভট্টাচার্য

আমার কিছু কথা।

সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
আমার আগের পোষ্ট টির প্রেক্ষিতে। এত চমৎকার সব মন্তব্য আপনারা করেছেন। আমি কৃতজ্ঞ। 
আমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলেন। 
বেশ ভারী মন নিয়েই লেখাটি লিখেছিলাম। কিছুটা আবেগতাড়িতভাবে। 
অবশ্য আমার লুকানোর কিছু নাই। আমি এত সামান্য যে আমার আর কি আড়াল!  
এক বিশিষ্ট মানুষের মন্তব্য আমাকে এই লেখা লিখিয়েছে। 
তাঁকে ধন্যবাদ। নমস্কার। 
আবার শুরু করব। 
গল্প বলিয়ে মানুষ। আঞ্চলিক ইতিহাসের। বন্ধুরা ভালোবেসে ডাকেন সেনপাহাড়ী র কথক ঠাকুর বলে। 
কতজনকে কত কথা ও কাহিনী শুনালাম আজ পর্যন্ত। 
কত বিশিষ্ট মানুষ এলেন গেলেন থাকলেন " তেপান্তর নাট্য গ্রামে "। তাঁদের জন্য আঞ্চলিক ইতিহাস এর গল্প শোনানোর একটা সেশন থাকে। 
কত জনকে নিয়ে ঘুরলাম। তাঁদের এই এলাকার মানে আমার " সেনপাহাড়ী পরগণা " র গল্প শোনালাম। এক বন্ধু এই মাত্র জিজ্ঞেস করলেন সেনপাহাড়ী কি!  স্বাভাবিক প্রশ্ন। 
বাঙ্গলার বিখ্যাত সেন রাজা দের পূর্বপুরুষ রা কর্ণাট দেশ থেকে এসে প্রথমে এই " গড় জঙ্গল " এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। নাম তাই সেনপাহাড়ী পরগণা। 
আমার কথা নয়। পণ্ডিত প্রবর সুকুমার সেনের কথা। এখনও চালু আছে রাজস্ব দপ্তরে। বলতে পারেন মোটামুটি এখনকার কাঁকসা থানা এলাকাই 
পরগণা সেনপাহাড়ী। এই নিয়ে আমার লেখা কত জায়গায় যে আছে। 
 আমার " মাটির প্রদীপ। আঞ্চলিক ইতিহাস। প্রণব ভট্টাচার্য এর লেখালেখি। এই ফেসবুক পেজ খুলে দেখতে পারেন। 
 মাত্র দশ টাকা দামে অনেকগুলি পুস্তিকা লিখে ছাপিয়ে ছিলাম। সাধারণ মানুষের জন্য। আমি পণ্ডিত নই। পণ্ডিতদের জন্যও নই। যদিও আজকাল পি এইচ ডি  করছেন এমন অনেকে আসেন আমার কাছে। আমি বলি ভাই আমি পথে হাঁটা মেঠো মানুষ। এই জঙ্গল দেশের মানুষ। আমার কাছে!  
আমি এই ভাবেই গুণী জন সমাবেশেও  বলি। 
অধ্যাপক তমাল দাশগুপ্ত তাঁর সপ্তডিঙা ফাউন্ডেশনের পক্ষে মহাবোধি সোসাইটি হলে বক্তা হিসাবে ডেকেছেন। গেছি - বলেছি সেই আমার এই এলাকার কথা। ইছাই ঘোষের দেউল সংক্রান্ত নানা কথা। তাঁদের কে ধন্যবাদ জানাই এই অবসরে।
 বাঙ্গালী শিকড় বিচ্ছিন্ন জাত। বাঙ্গালী কে তাঁর শিকড়ে ফিরতে হবে। জানতে হবে তার গৌরবোজ্জ্বল অতীত। আজকের অনেক বাঙ্গালী কে ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর জানেন না।বাঙ্গালী নিজেকেই চেনে না।  বাংলাদেশেও দেখেছি একই অবস্থা। আমি অতীত বিলাসী নই। বা শুধু অতীত যাপন করতে চাইনা। কিন্তু আমার ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য এর প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল।  আমার অতীত কে আমি জানবনা। তমাল বাবু ভালো গবেষক। বাঙ্গালী র অতীত নিয়ে খুব ভালো  কাজ করছেন। আশার কথা এলাকার ইতিহাস নিয়ে এখন অনেকে ভালো কাজ করছেন। 
ডকুমেন্টটেশনের কাজ ভালো হচ্ছে। 
চাই মানুষ তার মাটির কথা জানুক। তার লক্ষ্যে যেখানে যে আমাকে ডাকেন আমি যাই। বলি আমার এলাকার কথা। তার প্রতিবেশী এলাকার কথা। নদীর ওপারে বীরভূম। আমাদের এক পা ওপারে আর এক পা এপারে। সীমান্ত এলাকা। 
সীমান্ত এলাকা। তাই নিত্য যাতায়াত। পারাপার। 
 আপনারা অনেকে ই জানেন গ্রামে গ্রামে ঘুরি। 
গ্রাম তো উপেক্ষিত অবজ্ঞাত। কেন্দ্র থেকে দূরে। 
 সেই গ্রামের একটা ভাঙ্গা মন্দির নিয়ে কার ই বা
আগ্রহ থাকতে পারে। 
 কিন্তু আমাকে টানে। কখন গড়ে উঠল। সেই সময় আর ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে গেল। এই সময়কাল। 
 বোঝার চেষ্টা করি তার আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি। 
 আর এখানে ছবি দিয়ে সেই গ্রামটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আপনাদের শোনাই। ধন্যবাদ জানাই এই মাধ্যম কে। এই ফেসবুকে আমার অনেক লেখা। 
 সেই ২০১২ থেকে। কত ভালো ছবি হারিয়েছি। 
 টেকনিক্যালি অতটা দক্ষ নই। নিজে নিজে শিখেছি। ছাত্রদের কাছে শিখেছি। ওরা বার বার বলে স্যার ল্যাপটপ নেন। আমি বলি আর শিখে উঠতে বোধহয় পারবনা রে। এই ভালো - 
 সব সময় সকলকে সঙ্গ দিতে পারিনা। এই যেমন সেদিন একজন  বিশিষ্ট মানুষ গেলেন অন্য আরেক জনের সঙ্গে। বললাম ইলামবাজারের দু টি মন্দির দেখে যান ঘুড়িষা। সেখানের দু টি মন্দিরের কাজ দেখুন। তারপর যান জয়দেব  কেন্দুলী। দেখুন রাধাবিনোদ মন্দিরের কাজ। 
 এবার তুলনামূলক আলোচনা করুন। 
 আমাকে অনেকে সঙ্গে চান। পারিনা। সবসময়। 
আবার সুখ্যাত ট্যুর অপারেটর অভিজিৎ বাবু (ধর চৌধুরী ঐতিহাসিক গাইড হিসাবে ডেকে নেন। 
 এই এলাকায় এলেই। 
 মৌখিরা কালিকাপুর  কত মানুষ কে নিয়ে গেছি। 
আমার নিজের খুব প্রিয় জায়গা। মন্দির আর প্রাসাদ নগরী। হেরিটেজ ভিলেজে র দাবী এখানে বারবার লিখে সরকারের নজরে আনতে চেয়েছি। 
 অযোধ্যা বনকাটি তেমনই মন্দির ময়।
 অতি বিখ্যাত অপূর্ব টেরাকোটা অলংকরণ সজ্জিত গোপালেশ্বর শিব মন্দির। ১৭৫৪ শকাব্দে নির্মিত। 
বিখ্যাত এখানকার  পিতলের রথ। তার অলংকরণ নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।। 
 ইছাই ঘোষের দেউল  যাবার পথের উপরে। 
অথচ অনেকে না জানার জন্য মিস করেন। 
হেরিটেজ ট্যুর এখন বিদেশে খুবই জনপ্রিয়। 
 সরকার একটু  ভাবুন। 
আসবেন। এই এলাকায়। যদি হাতে সময় নিয়ে আসেন বা তেপান্তর নাট্য গ্রামে থেকে ঘুরতে চান 
 হয়তো বা আমাকে সাথে পেতে পারেন। 
 না পেলে গল্পের সেশন তো থাকবেই। 
এখানে থাকা খাওয়ার খরচ শান্তিনিকেতনের আশেপাশের রিসর্ট থেকে অনেক কম। 

আসবেন। করোনা ভীতি দূর হোক। এখন সাবধান থাকাই ভালো। এখানের শান্ত পরিবেশে অবশ্য তেমন ভয় নেই। 
 বনবিভাগের উদ্যোগে গড় জঙ্গল এলাকায় ট্রেকিং এবং দিনের বেলায় থাকার ব্যবস্থা হচ্ছে। ভালো। 
আমার সব পুস্তিকা শেষ হয়ে গেছে। বারবার ছাপা হয়েছে।। ইছাইঘোষের দেউল। গড় জঙ্গল এবং দেবী শ্যামারূপা। পরগণা সেনপাহাড়ী ঃ কাঁকসা থানার সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত। 
অযোধ্যা বনকাটি সাতকাহনিয়া গ্রামের ইতিকথা। 
এই সব। 
সাধারণ মানুষ তার মাটির কথা জানুক। 
এই ছিল আমার লক্ষ্য। 
ভেবেছিলাম একটা  সিরিজ করব। 
 কি জানি আর কতটা পারব।
 #Illambazar   ইলামবাজার কে কেন্দ্র করে, মূলত কুঠিবাড়ি ভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্য কে কেন্দ্র করে একটা ছোট বই প্রকাশ পেয়েছে। 
  " এলেমবাজার নিলামবাজার ইলামবাজার "
সংগ্রহ করতে পারেন। দাম ২০০/ টাকা। 
অক্ষর যাত্রা প্রকাশনীর আনন্দগোপাল হালদার কে ফোনে অর্ডার দিলেই বাড়িতে বসে বই পেয়ে যাবেন। ওঁর নং 9474907307

- * ফেসবুক লেখাটি ফিরিয়ে দিল। আর আমিও দিলাম আপনাদের দরবারে। এর মধ্যে অনেক কিছু বদলে গেছে। 
 পণ্ডিত মানুষ তমাল বাবু আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। আরও কেউ কেউ করেছেন। খুব স্বাভাবিক। আবার কত বিদগ্ধ পাঠক দের বন্ধু হিসাবে পেয়েছি।